ভালবেসে অবশেষে পর্ব -০৯

#ভালবেসে_অবশেষে
#নুশরাত_জেরিন
পর্ব: ৯

সিয়ামের কাজিনের বিয়ে ঠিক করা হয়েছিলো এ মাসের শেষে, পঁচিশ তারিখ। সিয়ামও সে মতে অফিসের কাজগুলো সব গুছিয়ে রাখছিলো। মা খুব করে বলে দিয়েছে এবার বিয়েতে তাকে যেতেই হবে৷ কোন আত্মীয় স্বজনের কোনো রকম অনুষ্ঠানে সিয়ামের দেখা মেলে না, এ নিয়ে সবার কত আফসোস। সিয়াম নিজেও ঠিক করেছিল সে যাবে।
কিন্তু ঝামেলা বাধলো অন্য জায়গা। বরপক্ষের আমেরিকা প্রবাসী মামার ছুটি প্রায় শেষ, বিয়ে অবদি থাকতে পারবে না। ছেলেও মামাকে ছাড়া বিয়ে করবে না। অনেক তর্ক বির্তক, ঝামেলার পর ঠিক হলো বিয়ে হবে সামনের সপ্তাহে। কনে পক্ষ একটু মনক্ষুন্ন হলেও কিছুই করার নেই, ছেলে মেয়ের বহু বছরের সম্পর্কের বিয়ে। ভাঙার উপায় নেই।
বিয়ে দিতে না চাওয়ায় এর আগেও কনে একবার সুসাইডের চেষ্টা করেছিলো।
সিয়াম বেঁকে বসতেই রেনু বেগম বাধ সাধলেন। সিয়াম ও কথা শোনার পাত্র নয়। একসপ্তাহ তার খুব কাজের চাপ। এর মাঝে একটা দিনও ছুটি নিতে পারবে না।
রেনু বেগম ব্যর্থ হয়ে মিলিকে ঘরে পাঠালো।
সিয়াম তাকে দেখেই বলল,
“একদম আমায় জোর করবে না মিলি, আমি কিছুতেই যাবো না।”

মিলি ভাবলেশহীনভাবে বলল,
“আপনাকে জোর করবো কেনো? আপনি কী ছোট বাচ্চা? ”

সিয়াম অবাক হলেও কিচ্ছু বলল না। মা মিলিকে এ ঘরে সিয়ামকে রাজী করাতেই পাঠিয়েছে, সিয়াম স্পষ্ঠ শুনেছে সে কথা। তবে হুট করে মেয়েটার উল্টো গান গাওয়ার মানে কী!

সিয়াম অফিস থেকে ফিরল বিকেল বেলা। যদিও দুপুরেই আসার কথা ছিলো, তবে পথিমধ্যে শপিংমলের কাচে ঘেরা দোকনাগুলোর দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে হলো।
বাড়ি ফিরে মিলিকে কোথাও দেখতে পেলো না। এই হয়েছে আরেক জ্বালা। সেদিন নিষেধ করার পর থেকে মিলি পারলে যেন সিয়ামের সামনেই আসে না, লুকিয়ে চুপিয়ে ঘুরে বেড়ায়। কথাও বলে না।
সিয়াম দু’একটা বললে সে জেনো আরও কম বলে। কদাচিত দেখা সাক্ষাৎ হলেও মুখটা বেলুনের মতো ফুলিয়ে রাখে।
হাতের ব্যাগটা বিছানার ওপর ফেলে ওয়াশরুমে ঢুকতে গিয়ে দেখলো ভেতর থেকে বন্ধ। ভেতরে মিলি আছে। এত বেলা করে গোছল করে কেনো কে জানে! মেয়েটার তো আবার ঠান্ডার ধাচ, এই ভয়ে আইসক্রিম পর্যন্ত খায় না। অসুখ বিসুখ করলে তখন কী হবে!
সে গায়ের ঘামে ভেজা শার্টটা খুলে তোয়ালে গলায় পেচালো। অফিস থেকে ফিরে গোছল না করলে তার ভালো লাগে না, অভ্যাস হয়ে গেছে।
মিলি বেরুলো আরেকটু পর। সিয়ামকে সম্পূর্ন ইগনোর করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে কিছু খুঁজতে লাগলো।
চুল থেকে টপাটপ পানি পরছে তার, জামার পেছন সাইড পুরো ভিজে গেছে। ভেজা জামা ভেদ করে ভেতরের অন্তর্বাসের অস্তিত্ব বোঝা যাচ্ছে।
সিয়াম দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নিলো। তবে বেহায়া চোখ….
ওয়াশরুমে ঢোকার আগে আরও কয়েকবার আড়চোখে তাকালো।
বেরিয়ে দেখলো মিলি হাওয়া। বিছানার ওপর ব্যাগটা তেমন ভাবেই পরে আছে। সিয়াম বিরক্তিতে লম্বা শ্বাস নিলো।


রাতে খাবার সময় সিয়ামকে না দেখতে পেয়ে রেনু বেগম বললেন,
“সিয়াম আসছে না কেনো? খাবে না?”

মিলি গোমড়া মুখেই বলল,
“জানি না।”

সোরভ পাশে বসে খাবার চিবাতে চিবাতে বলল,
“বাহ, আজকাল বোন ভাবীর ওপর দেখি ভাইয়ের ভূত ভর করেছে, কথার স্টাইলও সেম। বাহ্ বাহ্!”

মিলি রাগ করতে গিয়েও পারলো না। বলল,
“আমি রাগ করে আছি সৌরভ ভাই।”

“ওরে বাবা, রাগ করেছো কেনো? আমি কিন্তু কিছু করিনি।”

সৌরভের বলার ভঙ্গি দেখে নীরা তার পিঠে হালকা গুতো দিলো। মিলির মন সত্যিই খারাপ। সে নিজেও কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করেছে।

নীরা বলল,
“ভাইয়ের ওপর রাগ করেছিস বোন, সে কিছু করেছে?”

রেনু বেগমও সায় জানালেন,
“আমায় বল মা, সিয়াম কোনো কারণে বকেছে তোকে?”

মিলি উত্তর না দিয়ে মাথা নাড়লো।

নীরা বলল,
“তবে?”

“সে বিয়ে বাড়ি কেনো যাবে না? বল? আমার একা যেতে খারাপ লাগবে না? আমি জোর করার আগেই বলে, আমায় কিন্তু একদম জোর করবে না। শয়তান লোক”

নীরা, সৌরভ দুজনেই হাসলো।
সৌরভ তো পিন্ঞ্চ ও মারলো,
“এত প্রেম!”

মিলি তার কথা শুনলো কিনা বোঝা গেলো না।
বলল,
“উনি না গেলে আমিও যাবো না।”

নীরা বলল,
“সে কথা ভাইকে বলেছিস? ”

“কেনো? কেনো বলবো? সে কেনো বুঝবে না?”

“হ্যাঁ আমি তো মন বোঝার অলৌকিক ক্ষমতা পেয়েছি তাই না? না বললেই বুঝে ফেলবো।”

সিয়াম কখন পেছনে এসে দাড়িয়েছে কেউ বুঝতেই পারেনি। তার কথা শুনে সবাই নড়েচড়ে বসলো। মিলি নিজেও চুপচাপ খাবারে মনোযোগ দিলো। লোকটা কতটুকু শুনেছে কে জানে! তাকে যে মিলি শয়তান বলেছে সে কথা কী শুনে নিয়েছে? এই নিয়ে আবার রাগ করবে নাতো?

খাওয়া শেষে ঘরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়িয়ে আবার পিছু ঘুরে সিয়াম বলল,
“কাল আমিও বিয়ে বাড়ি যাবো, মুখটা এবার স্বাভাবিক করো নয়তো যেকোনো সময় ফেটে যাবে।”

সৌরভ সাথে সাথে হু হা করে হেসে উঠলো। মিলি মনে মনে খুশি হলেও বেশ লজ্জা পেলো। ইদানীং তার কী হয়েছে কে জানে! নিশ্চয়ই মাথা খারাপ হয়ে গেছে। নয়তো এমন অধিকার খাটালো কেনো!


রাতে সিয়াম নিজেই বলল,
“বিছানার ওপর ব্যাগ রেখেছিলাম, দেখোনি?”

মিলি বিছানার একপাশে উঠে বসলো। তার ঘুম পেয়েছে।
“হু দেখেছি।”

“খোলোনি কেনো?”

মিলি সোজা হয়ে চোখে চোখ রাখলো।
“আপনার উপর রেগে ছিলাম তখন।”

সিয়াম সামান্য হাসলো। পাশের টেবিলের ওপর থেকে ব্যাগটা তুলে মিলির কোলের উপর রাখলো।
“এখন খোলো।”

মিলি ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে বলল,
“কাল দেখি? রাত হয়েছে কত দেখেছেন?”

“উহু, এক্ষুনি দেখতে হবে।”

অনিচ্ছা সত্বেও ব্যাগটা খুলতেই মিলির ঘুম উড়ে গেলো। শাড়ি? সিয়াম শাড়ি এনেছে তার জন্য? হালকা গোলাপি রঙের জামদানী শাড়ি। মিলির অপছন্দের রং। সে বরাবরই সাদা কালো পছন্দ করে। তবু সে বেশ খুশি মনেই বলল,
“আমার জন্য?”

সিয়াম মাথা নাড়লো।
“পছন্দ হয়েছে?”

“খুব!”

মিলির পছন্দ হয়েছে শুনে সিয়াম নিজেও বেশ খুশি হলো। সে কখনও কারো জন্য শপিং করেনি, তার পছন্দ খুব বাজে। আরিয়া তো কখনও তাকে শপিং মলেও নিতে চাইতো না। কী না কী পছন্দ করে ফেলবে।
তবে আজ কেনো যেনো শাড়িটা দেখে সিয়ামের মনে হলো এটা একমাত্র মিলির গায়েই মানাবে। নিজের মতো করে একটা প্রতিচ্ছবিও তৈরি করে ফেলেছে সে।

বলল,
“কাল বিয়েতে শাড়িটা পরব?”

“আপনি না বললেও পরবো।”

সিয়ামের হাসি বিস্তৃত হলো। মিলির নিজেরও ভালো লাগলো। অপছন্দের মানুষটা যদি ধীরে ধীরে পছন্দের তালিকায় জায়গা করে নিতে পারে। তবে রং আর কী! এটুকু সে করতেই পারবে।

,

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here