ভালোবাসবে_তুমিও পর্ব ১৫+১৬

#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__১৫ (বোনাস)
#অদ্রিতা_জান্নাত

আকাশের কথা শুনে সবাই অবাক হয়ে তাকালো ওর দিকে ৷ আকাশ নিচে নেমে মায়ার সামনে এসে দাঁড়ালো ৷ মায়াকে একপলক দেখে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে অরূপকে বলতে লাগলো,,,,,,,,

“তোর ভালোবাসা এতোটা ঠুনকো ৷ সেটা আমার জানা ছিল না ৷ নিজের ভালোবাসার মানুষের প্রতি কোনো বিশ্বাস না থাকলে সেটা কেমন ভালোবাসা? মায়ার ফাঁদে পা দিলি তুই? একবার তো শ্রেয়ার সাথে কথা বলে দেখতে পারতিস ৷ কিন্তু তুই তো সামান্য কিছু জেনে শ্রেয়াকে কষ্ট দিয়ে গিয়েছিস ৷ ইভেন তুই শ্রেয়াকে আমার সাথে দেখেও সন্দেহ করেছিলিস ৷ শ্রেয়াকে তো আমি নিজের বোনের মতো ভাবি ৷ তো একটা ভাই কি তার বোনকে কোলে নিতে পারে না? যখন তার বোন অসুস্থ হয়ে যায়? তুই তো সেটাকেও একটা বড় ইস্যু তৈরি করেছিস ৷ শ্রেয়ার কথাগুলো বিশ্বাসই করিস নি ৷ এই তোর ভালোবাসা? হাহ হাসালি!”

তারপর মায়ার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,

“নিজের বোন না অন্তত একটা মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের সাথে এতো জঘন্য একটা কাজ করার আগে দুবার ভাবতে পারতে ৷ কিন্তু তুমি ভাবো নি ৷ তোমার মতো মেয়েদের এভাবে ছেড়ে দেয়ার সাহসও নেই আমার ৷”

বলেই কয়েকটা মহিলা পুলিশকে ভিতরে ডাকলো আকাশ ৷ শ্রেয়ার বলা সব কথাই আকাশ উপর থেকে শুনেছে ৷ তখনি পুলিশকে ফোন করে আসতে বলে দিয়েছিল ও ৷ মায়াকে তারা নিয়ে গেল ৷ যদিও মায়া ছাড়ানোর জন্য ছোটাছুটি করছিল আর চেঁচাচ্ছিল ৷ তবুও কাজ হয় নি ৷

(০৬ বছর আগে আকাশ দেশের বাইরে পড়ালেখা করতে গিয়েছিল ঠিকই ৷ কিন্তু তার ০১ বছর পর ও আবার দেশে এসেছিল কিছু জরুরি কাজের জন্য ৷ তখনি আচমকা ওর মায়ার সাথে দেখা হয়ে যায় ৷ প্রথম দেখায় ভালো লেগে যায় ওর ৷ আস্তে আস্তে ওরা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকে ৷ কিন্তু আকাশের আবার বিদেশ চলে যেতে হবে দেখে ও মায়াকে ওর মনের কথাগুলো জানিয়ে দেয় ৷ মায়া খুশি হয়ে এক্সেপ্ট করে নেয় ৷ দুই বছর ওরা নিজেদের মধ্যে ফোনে কথা বলে ৷ আকাশ ওর স্টাডির জন্য চাইলেই মায়ার সাথে দেখা করতে দেশে আসতে পারতো না ৷ দুই বছর রিলেশনের পর মায়া হুট করেই বলে ব্রেকআপ করবে ৷ আকাশ সেদিন রাগ করে কিছু বলে নি ৷ তখন থেকেই ওদের মধ্যে ভালোভাবে কোনো কথা হতো না ৷ তার বছরখানিক পর কাউকে কিছু না বলে দেশে ফিরে আকাশ ৷ তখনি জানতে পারে যে অরূপের বিয়ে হবে তাও মায়ার সাথে ৷ ঠিক এই কারনেই ও মায়াকে কিডন্যাপ করায় ৷ এমন একটা জায়গায় ওকে রেখেছিল যে ওকে যেন খুঁজে না পাওয়া যায় ৷ তারপর ও নিজেও অন্য কোনো জায়গায় লুকিয়ে থাকতো ৷ প্রত্যেকদিন সকালবেলা অরূপ নিজে মায়ার খোঁজ করতে বের হতো ৷ কিন্তু প্রতিদিনই নিরাশ হতে হতো ওকে ৷ একদিন কোনো ভাবে জানতে পেরে যায় যে মায়াকে কোথায় আটকে রাখা হয়েছে ৷ অরূপ মায়াকে খুঁজতে যায় কিন্তু আকাশ আর শ্রেয়াকে একসঙ্গে দেখে ওর মাথায় রক্ত উঠে যায় ৷ তাই আর খোঁজাখুঁজি না করে চলে গিয়েছিল ও ৷ ঐ দিনের অনেক দিন পর হঠাৎ অরূপ মায়ার খোঁজ পেয়ে ওই পুরাতন বাড়িটাতে গিয়ে মায়াকে উদ্ধার করে আনে এই বাড়িতে ৷ আর তার সব দোষটা পরে শ্রেয়ার ঘাড়ে ৷)

আকাশ পুরো ঘটনাটা খুলে বলে সবাইকে ৷ সবাই চুপচাপ সব শুনেছে ৷ হঠাৎ করেই অরূপ বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল ৷ গাড়ি নিয়ে সোজা শ্রেয়ার বাসায় আসলো ৷ কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে ওর বাড়ির দরজায় তালা ঝুলছে ৷ সেটা দেখে অরূপ অবাক হয়ে গেলো ৷ শ্রেয়ার ফোনে ফোন দিয়েও ফোন বন্ধ পেল ৷ শ্রেয়া বলা ওই কথাটা এখন ওর মাথায় বাজছে যখন শ্রেয়া বলেছিল ‘নিজের ভুল বুঝতে পেরে আবার এই থার্ড ক্লাস চরিত্রহীন মেয়ের কাছে যেন কখনো ফিরে আসতে নাহয়’ ৷ এখন কি করে জানবে শ্রেয়ার খবর? কোথায় আছে ও? সেটা জানা নেই ওর ৷

__________________________________

একটা ক্লাবে বসে এলোমেলোভাবে ড্রিংক করছে অরূপ ৷ ক্লাবের মধ্যে জোরে জোরে গান বাজছে আর একেকজন নাচানাচি করছে ৷ কিন্তু অরূপ বসে বসে একের পর এক গ্লাস খালি করে যাচ্ছে ৷ হঠাৎ ওর ফোন বেজে উঠলো ৷ ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে আকাশের নাম্বার ৷ রিসিভ করে কানে দিতেই আকাশ বলে উঠলো,,,,,,,,,

“অরূপ? তুই কই? আবার ক্লাবে গিয়েছিস? বাড়ি আয় তাড়াতাড়ি ৷”

অরূপ কিছু না বলে ফোন কেটে দিলো ৷ আরো কয়েকটা গ্লাস খালি করে ঢুলতে ঢুলতে গাড়িতে উঠে বসলো ৷ তারপর সোজা বাড়িতে চলে গেল ৷ অরূপের বাবা মা ওর অপেক্ষাতেই বসে ছিল ৷ অরূপ এসেছে ঠিকই কিন্তু কোনো কথা না বলে সোজা উপরে চলে গেল ৷ এটা এখন ওর কাছে রোজকার রুটিন ৷ এই একবছর এভাবেই কেটেছে ৷ হ্যাঁ শ্রেয়া চলে গেছে এক বছর হয়ে গিয়েছে ৷ কিন্তু অরূপ এখনো জানেনা শ্রেয়া কোথায়? শ্রেয়ার মা বাবা কিছুই বলে নি ওকে ৷ আশা এক গ্লাস লেবুর শরবত নিয়ে গিয়ে অরূপকে খাইয়ে দিল ৷ এলোমেলো করে বিছানায় শুয়ে পরায় ওকে ঠিক করে শুইয়ে দিয়ে চলে গেল ও ৷ ঘুমের মধ্যেই বিড়বিড় করে বলে উঠলো,,,,,,,,,,,,,,

“আই ট্রাস্ট ইউ শ্রেয়া অ্যান্ড আই এম সরি! প্লিজ ফিরে এসো ৷ আর কখনো এরকম ভুল করবো না ৷ তুমি না বলেছিলে যে ভুল করে তাকে একটা সুযোগ দিতে হয় ৷ আমি চাই সেই সুযোগটা ৷ আর কখনো এরকম ভু..ল হবে না…”






এপ্রিল মাস ৷ মূলত বাংলাদেশে এই সময়টা গ্রীষ্মকাল ৷ কিন্তু কানাডাতে এই সময়টা বসন্তকাল ৷ গাছে গাছে নতুন নতুন রঙ বেরঙের ফুলে চারপাশটা সেজে উঠেছে ৷ দূর থেকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে শহরটাকে ৷ রাস্তাঘাট বেশ পরিষ্কার ৷ মানুষজন তাদের একেক জনের কাজের উদ্দেশ্যে হেঁটে যাচ্ছে ৷
কানাডার একটা সুনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে ‘টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়’ ৷ এই বিশ্ববিদ্যালয়টি বাহির থেকে দেখতে একদম রাজপ্রাসাদের মতো ৷ বিশ্ববিদ্যালয়টির আশপাশ জুড়ে রয়েছে সবুজে ঘেরা বিশাল মাঠ ৷

এই ভার্সিটির রাস্তা দিয়ে হেঁটে চলেছে তুহিন ৷ চোখের চশমাটা ঠিক করে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে ভিতরে ঢুকে সোজা দোতলায় চলে গেল ৷ তুহিন এখানে ইংরেজির টিচার ৷ বেশ ভালোই পারে ও সবাইকে পরাতে তাই এই পেশাকেই বেছে নিয়েছে এখানে এসে ৷ আরেকটু সামনে আগাতেই দুইটা মেয়েকে একসাথে দেখতে পেল ও ৷ ওরা ঘুরে দাঁড়িয়ে একে অপরের সাথে কথা বলছে পড়া নিয়ে ৷ তুহিন হালকা হেসে ওদের সামনে গিয়ে হাতে হাত ভাজ করে দাঁড়ালো ৷

মেয়ে দুইটা তুহিনের দিকে তাকিয়ে তারপর দুজন দুজনার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো ৷ তুহিন মুচকি হেসে বলতে লাগলো,,,,,,,

“দুজন এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আবার পড়াশুনা শুরু করে দিয়েছো?”

ওরা কিছু বললো না ৷ হাতের বইগুলো ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে কপাল কুচকে আবার তুহিনের দিকে তাকালো ৷ তুহিন আবার বলে উঠলো,,,,,,

“তো শ্রেয়া ম্যাডাম আর চৈতি ম্যাডাম আজ কি বাসায় যাবেন? নাকি এখানেই থেকে যাওয়ার চিন্তা করছেন হুমম?”
#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__১৬
#অদ্রিতা_জান্নাত

“তো শ্রেয়া ম্যাডাম আর চৈতি ম্যাডাম আজ কি বাসায় যাবেন? নাকি এখানেই থেকে যাওয়ার চিন্তা করছেন হুমম?”

তুহিনের কথা শুনে আমি বলে উঠলাম,,,,,,,

“আপনি সামনে এগোন ৷ আমরা আসছি ৷”

উনি হালকা হেসে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন ৷ আমি চৈতির দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,

“বাকিটুকু বাসায় গিয়ে বোঝানো যাবে ৷ এখন চলো তাড়াতাড়ি ৷ নাহলে দেখা যাবে তোমার ভাই আমাদের রেখেই চলে যাবে ৷”

চৈতি নিঃশব্দে হাসলো ৷ তারপর আমরা দুজন নিচে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম ৷ বেশ কিছুক্ষন পর গাড়ি এসে থামলো একটা বড় বাড়ির সামনে ৷ ভিতরে যেতেই দেখি আঙ্কেল ঘড়ি দেখছে আর অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য ৷ এটা তার প্রতিদিনের কাজ ৷ আমরা বাড়িতে না থাকলে এভাবে ঘড়ি দেখে অপেক্ষা করে আমাদের জন্য ৷ আমাদের বাড়িতে ঢুকতে দেখে আমাদের কাছে এগিয়ে এসে বলতে লাগলো,,,,,,,,

“ভার্সিটিতে কোনো সমস্যা হয়নি তো আবার? তোদের নিয়ে কিন্তু আমার অনেক চিন্তা হয় ৷”

চৈতি আঙ্কেলের একহাত জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“পাপা এতোটা চিন্তা কেন করো? শ্রেয়া তো আছে আমার সাথে না?”

“তবুও চিন্তা হয় রে মা ৷”

“এতোটা চিন্তা করা কিন্তু ভালো না তোমার শরীরের জন্য ৷ আমি আছি তো আঙ্কেল ৷ সবসময় দুজন দুজনকে ঠিক সামলে নিব ৷”

আঙ্কেল আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,

“তাই তো তোর উপর আমার এতো ভরসা ৷ এখন যা দুজন একটু ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নে গিয়ে ৷”

ওরা দুজন মাথা নাড়িয়ে উপরে চলে গেল ৷ তুহিন চৈতির বাবার পাশে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“কি ভাবছো তুমি মামা?”

সে তুহিনের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,

“কি আর ভাববো বল ৷ মেয়ে দুটোকে নিয়ে চিন্তা হয় আমার ৷ যদিও শ্রেয়া আমার নিজের মেয়ে না ৷ তবুও ওকে তো আর আমি আলাদা চোখে দেখি না ৷”

“শ্রেয়া সম্পর্কে সব তো জানো তুমি ৷”

চৈতির বাবা মুচকি হেসে বলতে লাগলেন,,,,,,

“হুম জানি তো ৷ তুই যেভাবে ওর পাশে সবসময় থেকেছিস তাতে আমার মনে হয় সারাজীবন তুইই পারবি ওর পাশে থেকে ওর খেয়াল রাখতে ৷”

তুহিন মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,

“সেটা হয় না মামা ৷”

“কেন হয় না? শ্রেয়া কি কখনো বলেছে তোকে যে ও তোকে পচ্ছন্দ করে না? তুই যদি বলিস তো আমি আপুর সাথে কথা বলতে পারি ৷”

“তার কোনো প্রয়োজন নেই ৷ আমি চাই না এই কারনে শ্রেয়া আমাকে ভুল বুঝে দূরে সরে যাক ৷ এখন অন্তত ওকে নিজের চোখে দেখতে পারি ৷ কিন্তু তখন সেটাও হবে না ৷ ভুল বুঝাবুঝি নিয়ে আমি বেঁচে থাকতে পারবো না ৷ তাই আম্মুকে এসব বিষয় জানানোর কোনো প্রয়োজন নেই ৷ আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি ৷”

বলেই তুহিন উপরে চলে গেল ৷ চৈতির বাবা একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলে উঠলেন,,,,,,,,

“তোর মতো ছেলে আমি খুব কম দেখেছি রে ৷ যে কিনা নিজের কথা না ভেবে নিঃস্বার্থভাবে অন্যের কথা ভেবে চলেছে সারাক্ষন ৷ কখনো সম্ভব হলে আমি নিজ হাতে তোকে শ্রেয়ার সাথে মিলিয়ে দিব ৷”




ব্যালকনিতে বসে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছি ৷ চোখের পলকে একবছর চলে গেছে নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে পাড়ি জমিয়েছি ৷ আব্বু আম্মুর থেকে দূরে রয়েছি পুরো বছর খানিক সময় ৷ অবশ্য তাদের সাথে আমার প্রতিদিন কথা হয় ৷ কিন্তু সেটাতো আর সামনাসামনি না ৷ প্রথম যখন এই বাড়িতে এসে উঠেছিলাম তখন অনেক ভয় লেগেছিল মনে মনে ৷ কিন্তু এই বাড়ির সবাই আসলেই অনেক ভালো ৷ সবাই বলতে এখানে আছে শুধু চৈতি আর ওর বাবা ৷ চৈতির মা অনেক আগেই মারা গেছে ৷ চৈতির বাবাই ওকে বাবা আর মায়ের আদর একসাথে দিয়ে বড় করে তুলেছে ৷ চৈতিকে দেখে বোঝাই যায় না যে ওর মা নেই ৷ ওর বাবাই ওর সব ৷ মেয়েটা বড্ড হাসিখুশি ৷ প্রথমদিন থেকেই আমার সঙ্গে খুব ভালো ভাবে কথা বলেছে যেন ও আগে থেকেই চিনতো আমাকে ৷ চৈতি হচ্ছে তুহিনের মামাতো বোন ৷

পাশে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে পাশে তাকিয়ে দেখি চৈতি দাঁড়িয়ে আছে ৷ দুই হাতে দু কাপ কফি ৷ একটা কাপ আমার দিকে এগিয়ে দিলো ৷ আমি কাপটা হাতে নিয়ে আবার সামনের দিকে চোখ রাখলাম ৷ চৈতি বলে উঠলো,,,,,,,,,

“আবার কি ভাবছো?”

“তেমন কিছু না ৷”

“প্রতিদিন এতো গভীরভাবে কি ভাবো বলো তো?”

আমি হাসলাম কিছু বললাম না ৷ কফিটা শেষ করলে কাপ দুটো হাতে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ও ৷ আমি আবার বাহিরের দিকে তাকালাম ৷ বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হচ্ছে ৷ চারপাশে সূর্য ডোবার পূর্বাভাশ ফুটে উঠেছে ৷ এখান সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য হচ্ছে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত ৷ পাশের চেয়ারে বসে প্রকৃতির এই দৃশ্যটা উপভোগ করতে লাগলাম আমি ৷

___________________________________

বাংলাদেশে এখন সকাল সাড়ে আটটা বাজে ৷ অরূপের বাবা ডাইনিং টেবিলে বসে আছে ৷ অরূপের মা তাকে খাবার সার্ভ করে দিল ৷ তিনি ভাত মাখতে মাখতে বলে উঠলেন,,,,,,,,

“কাল রাতে ছেলেটা কিছু খায় নি ৷ এখন তাড়াতাড়ি ডেকে নিয়ে আসো ৷ একসাথে বসে খাই নাহয় ৷”

“তোমার ছেলে এখন খাবে? সেটা মনে হয় তোমার? সারাদিন ওসব খেয়েই তো কাটিয়ে দেয় ৷ আমার একটা কথাও যদি শুনতো ৷”

অরূপের বাবা কিছু না বলে চুপচাপ খাওয়ায় মন দিলেন ৷ আশা নিজের চোখ কচলাতে কচলাতে রুম থেকে বের হলো ৷ ওর মা ওর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,

“মাত্র উঠলি? আজ না তোর কলেজে কিসের প্রোগ্রাম আছে ৷”

চেয়ার টেনে আশা ওর বাবার পাশে বসে বলতে লাগলো,,,,,,,,

“হুম আছে তো ৷ খেয়ে রেডি হয়ে নি ৷ খুব খিধে পেয়েছে খেতে দাও আগে ৷ আর ভাইয়া কি উঠবে না? ও তো বলেছিল আজ আমায় কলেজে দিয়ে আসবে ৷”

“ওর বলা আর না বলা একই কথা ৷”

বলেই তিনি আশাকে খাবার বেড়ে দিলেন ৷ খাবার শেষ করে ও সোজা চলে গেল অরূপের রুমে ৷ ভাইয়া বলে রুমে ঢুকেই দেখে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আচড়াচ্ছে অরূপ ৷ বাহিরে যাওয়ার জন্য রেডি সে ৷ আশার গলা শুনে অরূপ পিছনে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,

“কি রে? আমাকে বলে তুই নিজেই এখনো রেডি হোস নি?”

আশা আমতা আমতা করে বলে উঠলো,,,,,,

“ওওওই আর কি ৷ আমি রেডি হয়ে আসছি তাহলে ৷”

বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,,,,,,,,,

“ভাইয়ার আজ কি হলো? এতো সকালে ঘুম থেকে উঠে রেডিও হয়ে গেল ৷ আমিও রেডি হয়ে নি ৷ নাহলে আবার আমাকে রেখেই চলে যাবে ৷”




আশাকে কলেজে ড্রপ করে দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে কলেজের এক সাইডে দাঁড়িয়ে রইলো অরূপ ৷ হয়তো কারো জন্য অপেক্ষা করছে ৷ কিছুক্ষনপর আকাশ সেখানে অরূপের সামনে এসে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“কি হলো আবার? আজ এভাবে ডাকলি?”

“এতো কথা বলার সময় নেই ৷ এটা ধর ৷”

বলেই আকাশের হাতে একটা ফোন দিল অরূপ ৷ আকাশ কপাল কুচকে তাকালো ৷ অরূপ আশেপাশে তাকাতে তাকাতে বলে উঠলো,,,,,,,,,,,,

“এই ফোনের কললিস্ট চেক করে ৷ প্রত্যেকটা নাম্বারের লোকেশান চেক কর ৷ প্রত্যেকটা নাম্বারের লোকেশন জেনে নাম্বারসহ বলবি আমাকে ৷”

“কার মোবাইল এটা?”

অরূপ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,,,,,,,,,

“তোর শ্বশুড়ের হইছে?”

“এ্যাঁ? কিন্তু এটা দিয়ে কি হবে?”

অরূপ বাঁকা হেসে বললো,,,,,,,,,

“অনেক কিছু হবে ৷ যেরকমটা বলেছি সেরকমটা কর ৷ আজ আমি আসি অফিসে আবার একটা ডিল কম্পিলিট করার জন্য মিটিং আছে ৷ আব্বু আমাকে এই ডিলটার সম্পূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছে ৷ সো আমাকে সেটা করতে হবে ৷ তুই তোর কাজ শেষে আশাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে চলে যাস বরং ৷”

বলেই অরূপ আকাশকে কিছু বলতে না দিয়ে উল্টোদিকে ঘুরে হাঁটতে লাগলো ৷ আকাশ বোকার মতো ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো ৷ অরূপ কি করতে চাইছে সেটা ওর নিজের কাছেই অজানা ৷ তবুও যা করতে বলেছে সবটা ওকে করতেই হবে ৷

_______________________________

রাতের বেলা রুমে একা বসে আছি আমি ৷ প্রচুর বিরক্ত লাগছে ৷ এই বাড়িতে যতক্ষন থাকি সারাক্ষন ফ্রি থাকি ৷ এভাবে বসে থাকতে কি ভালো লাগে সবসময়? বিভিন্ন চিন্তা মাথায় খালি জেকে বসেছে ৷ বারবার ইচ্ছা করছে এখান থেকে ফিরে চলে যাই নিজের দেশে ৷ কিন্তু কোনো একটা কারন আটকে দিচ্ছে আমাকে ৷ কারনটা তো আর আমার কাছে অজানা নয় ৷ মোবাইল হাতে নিয়ে আম্মুর নাম্বারে ভিডিও কল দিলাম ৷ সাথে সাথে রিসিভ হলেই বলতে লাগলাম,,,,,,,,,,,,

“কেমন আছো তোমরা?”

“ভালো আছি রে তুই?”

“হুম আমিও ৷”

“শোন ওখানে কোনো সমস্যা হলে বলিস কিন্তু আমরা তোকে ওখানে আর রাখবো না ৷ আর তোকে না একটু ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছা করে ৷ দেশে এসে একবার আমাদের সাথে দেখা করে যেতে পারিস তো নাকি?”

“টাইম নেই আম্মু ৷ তোমরা আসো না প্লিজ ৷ আব্বুকেও বলে দেখো ৷ আমিও দেখতে চাই তোমাদের ৷ আমার যাওয়া সম্ভব না ৷ তোমরা তো আসতে পারো নাকি?”

“জানিস তোর বাবা চিন্তা করে সারাক্ষন তোর জন্য ৷ মানুষটা ভালো নেই রে ৷ তোকে যদি এমন কারো হাতে তুলে দিতে পারতাম যে তোকে সারাজীবন আগলে রাখবে ৷ তাহলে হয়তো এসব চিন্তা থেকে মুক্তি পেতাম৷”

“আম্মু প্লিজ চুপ করবে? কি সব কথা বলে যাচ্ছো? আমাকে নিয়ে কেন টেনশান করছো ৷ ঠিক আছি তো আমি নাকি ৷ আর তোমরা যদি সবসময় আমার কাছে আমার পাশে থাকো তো সবসময় ঠিক থাকবো আমি ৷”

“সবসময় কি আর থাকতে পারবো?”

“চুপ করো ৷ কবে আসবে সেটা বলো ৷ দু দিনের মধ্যেই কিন্তু তোমাদের আমার সামনে দেখতে চাই আমি ৷”

“আচ্ছা দেখছি ৷”

আরো কিছুক্ষন কথা বলে ফোন রেখে দিলো শ্রেয়া ৷ চোখ মুখ চেপে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিল ৷ প্রিয় মানুষদের থেকে দূরে থাকার যন্ত্রনা সেই ই বুঝে যে দূরে থাকে ৷ চোখ মুখের থেকে হাত সরিয়ে চোখের পানি মুছে আনমনেই বলে উঠলো,,,,,,,,,,

“কেন আমার সঙ্গে এরকম হলো? আর সব মেয়েদের মতো তো আমিও অামার জীবন নিয়ে অনেক কিছু ভেবেছিলাম ৷ কেন এক দমকা বাতাসে সব স্বপ্ন ভেঙ্গে শেষ হয়ে গেল? কেন হলো এরকম?”

জোরে একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে নিল ৷




দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে শ্রেয়াকে পলকহীন ভাবে দেখে যাচ্ছে তুহিন ৷ শ্রেয়ার চোখের পানিতে ওর মন ক্ষত বিক্ষত হয়ে যাচ্ছে ৷ ভালোবেসেও ভালোবাসা না পাওয়ার কষ্টটা ও বুঝে কারন ও তো নিজেও এর স্বীকার ৷ দেয়ালে হাত দিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,,,,,

“যদি কখনো আমায় বলতে যে তুমি অরূপকে ভালোবাসো আর যেকোনো ভাবেই ওকে তোমার চাই ৷ তো আমি নিজের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করতাম শ্রেয়া ৷ কিন্তু তুমি তো বলো নি আমায় ৷ তাহলে আমি কিভাবে করতাম বলো? এই এক বছর তোমাকে কষ্ট পেতে দেখেছি আমি নানা রকমভাবে ৷ আর প্রত্যেকবার তোমার কষ্ট দেখে নিজের কষ্টটা দ্বিগুন বেড়ে গেছে ৷ কখনো অরূপকে তোমার সামনে আনতে পারবো না কিন্তু তোমার মা বাবাকে এখানে নিয়ে আসবো আমি ৷ আমি জানি তারা আসলে তোমার কষ্টটা একটু হলেও কম হবে ৷”

পেছন থেকে চৈতি ডেকে উঠলে তুহিন দ্রুত ওর চোখ মুছে নিয়ে পিছনে ঘুরে বলে উঠলো,,,,,,,,,,

“কিছু বলবি?”

“এখানে কি করছো ভাইয়া?”

“এই তো এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম তাই শ্রেয়াকে দেখতে এলাম ৷”

“তো ভিতরে চলো ৷ এভাবে কেন দেখছো?”

“এএমনি ৷ আসছি আমি ৷”

বলেই তুহিন চলে গেল ৷ চৈতি শ্রেয়ার দিকে একপলক তাকিয়ে থেকে আবার তুহিনের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“কেউ কাউকে এরকম ভাবে নিঃশব্দে কীভাবে ভালোবাসতে পারে?”

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

(বলেছিলাম আরেকটা পর্ব দিব ৷ তাই না চাইতেও দিতে হলো ৷ ছোট হওয়ার জন্য সরি ৷ এর বেশি লিখার সময় পাই নি)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here