ভালোবাসবে_তুমিও পর্ব ১৯+২০

#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__১৯
#অদ্রিতা_জান্নাত

রুমের মধ্যে বিছানায় জ্ঞানহীন অবস্থায় পরে আছে শ্রেয়া ৷ বাড়ির সবাই চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে ৷ ডাক্তার ওর পাশে বসে ওর চেকআপ করছে ৷ কিছুক্ষন শ্রেয়াকে চেকআপ করে গম্ভীর মুখে বসে রইলেন তিনি ৷ তুহিন ওনার কাছে গিয়ে চিন্তিত স্বরে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“আঙ্কেল শ্রেয়ার কি হয়েছে? ওর হঠাৎ করে কি হলো?”

লোকটি কিছুক্ষন গম্ভীরমুখে বসে রইল ৷ তারপর কিছু একটা ভেবে তুহিনের দিকে তাকিয়ে বললেন,,,,,,,,,,

“আমি ঠিক বুঝতে পারছি না ৷ তুমি আমার থেকেও ভালো একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলে দেখো ৷”

“মানে?”

“শ্রেয়াকে একজন ভালো ডাক্তার দেখাও ৷ যত দ্রুত সম্ভব ৷ একজন ভালো ডাক্তার দিয়ে ওর চিকিৎসা করাও ৷ শ্রেয়ার লক্ষন মোটেও ভালো লাগছে না আমার৷”

তুহিন একবার শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,,

“কি হয়েছে ওর? যে ওকে চিকিৎসা করাতে হবে?”

“আমি যেটা ধরেছি সেটা নাও হতে পারে ৷ তাই বলছি ভালো কাউকে দিয়ে ওর চেকআপ করাও ৷ আমারটা ভুল হলে শুধু শুধু তোমরা চিন্তা করবে ৷ তাই বলছি ভালো কোনো ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওর চিকিৎসা করাও ৷ ভালো রিপোর্ট আসতেও পারে ৷ চিন্তা না করে মনকে শক্ত করো ৷ আজ আমি আসি ৷ দরকার হলো আবার বলো ৷”

বলেই চলে গেলেন তিনি ৷ বাড়ির সবাই একপলক শ্রেয়াকে দেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷ তুহিন একদৃষ্টিতে শ্রেয়ার শুকিয়ে যাওয়া মুখটার দিকে তাকিয়ে রইল ৷ চৈতি তুহিনের কাঁধে হাত রেখে বললো,,,,,,,,

“সব ঠিক যাবে ৷ তুমি যাও ভাইয়া ৷ আমি শ্রেয়ার পাশে আছি ৷ ওকে দেখে রাখবো ৷ কোনো চিন্তা করো না ৷”

তুহিন শ্রেয়ার দিক থেকে চোখ সরিয়ে চৈতির দিকে তাকিয়ে বললো,,,,,,,,,

“ওর জ্ঞান ফিরলে বলিস আমাকে ৷”

আর এক মূহুর্তও দাঁড়ালো না ও ৷ রুম থেকে বাহিরে বেরিয়ে গেল ৷ চৈতি তুহিনের দিকে একটু তাকিয়ে থেকে শ্রেয়ার পাশে গিয়ে বসলো ৷ শ্রেয়ার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে উঠলো,,,,,,,,,

“আমার আগেই সন্দেহ হয়েছিল ৷ কিন্তু তুমি তো ভাইয়াকে বলতে দিলে না ৷ ভেবেছো নিজে নিজেই ঠিক হয়ে যাবে ৷ অসুখ কি কখনো নিজে নিজে সাড়ে? আমিও যে কেন আগে বুঝলাম না ৷”

_________________________________

বাড়ির কলিংবেল বেজে উঠার শব্দে চৈতি নিচে নেমে দরজা খুলে দিল ৷ বাহিরে অরূপকে দেখে অবাক হলো ও ৷ অরূপ বাহির থেকে ভিতরে একবার উঁকি দিতে দিতে বলে উঠলো,,,,,,,,

“সরো সামনে থেকে ৷ এরকম খাম্বার মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন?”

চৈতি রেগে গিয়ে বললো,,,,,,,,

“কি বললেন আপনি? আমার বাড়িতে এসে আমাকেই ইনসাল্ট করছেন? কে আপনি? সরবো না আমি ৷ ভিতরেও যেতে দিবো না ৷ চলে যান ৷”

বলেই দরজা লাগাতে নিলে অরূপ ঠেলে ভিতরে ঢুকলো ৷ আশেপাশে তাকাতে তাকাতে সোজা উপরে চলে গেল ৷ চৈতি হা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ৷ চেনা নেই জানা নেই এভাবে বাড়ির ভিতর ঢুকে পরলো? ওর বিষয়টা একটুও ভালো লাগলো না ৷

পুরো বাড়ি সার্চ করেও অরূপ শ্রেয়াকে খুঁজে পেল না ৷ এক প্রকার হতাশ হয়ে নিচে নেমে এলো ৷ বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে নিতেই পিছন থেকে চৈতি বলে উঠলো,,,,,,,,,,,

“আপনি কে হ্যাঁ? এভাবে বাড়িতে ঢুকে পুরো বাড়ি সার্চ করে গেলেন ৷”

অরূপ চৈতির দিকে ঘুরে তাকালো ৷ ওর এখন কথা বলতে বিরক্ত লাগছে ৷ তাই কোনো প্রকার কথা না বলে চুপচাপ বাড়ির বাহিরে চলে গেল ৷ এদিকে চৈতি রাগে দাঁত কিড়মিড় করে বিড়বিড় করতে করতে উপরে চলে গেল ৷




একজন ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হলো শ্রেয়া ৷ সোজা নিচে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো ও ৷ ওর মাথায় খালি কালকের ঘটনাগুলো ঘুরছে ৷ হঠাৎ করে কাল ওর কি হলো সেটাই বুঝতে পারছে না ৷ অরূপ কেন আসবে ওর কাছে তাও এতোদিন পর? আসার হলে তো আরো আগেই আসতে পারতো ৷ ওটা হয়তো ওর মনের কোনো ভুল ছিল ৷

কিছুক্ষন পর তুহিন এসে ড্রাইভিং সিটে বসলেন ৷ আমি একবার ওনার দিকে তাকিয়ে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকালাম ৷ তুহিন কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট দিলেন ৷ কিছুদূর যেতেই একটা গাড়ির দিকে চোখ আটকে গেল ৷ কালকের মতো সেই গাড়িটা ৷ গাড়িটাকে দেখে তুহিনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি থামাতে বললাম ৷ উনি অবাক হয়ে বলে উঠলেন,,,,,,,,,

“হঠাৎ করে কি হলো? গাড়ি কেন থামাতে বললে?”

আমি কিছু বললাম না ৷ তুহিন গাড়ি ব্রেক করলে সাথে সাথে কিছু না বলেই নেমে গেলাম ৷ রাস্তা পাড় হয়ে ওই গাড়িটার কাছে গেলাম ৷ গাড়ির জানালা দিয়ে উঁকি দিলেও ভিতরে কাউকে দেখতে পেলাম না ৷ আশেপাশে একটু তাকাতেই তুহিন আমার সামনে এসে বলতে লাগলেন,,,,,,,,,,,,,,,

“এসব কি শ্রেয়া? তুমি এভাবে গাড়ি থেকে নেমে চলে এলে কেন? চলো তাড়াতাড়ি ৷”

বলেই আমাকে গাড়ির দিকে নিয়ে যেতে লাগলেন ৷ আমি আশেপাশে তাকাতে তাকাতে গাড়িতে উঠে বসলাম ৷ পুরোটাই মনের ভুল ৷ কেন ওনার কথা বারবার ভাবছি আমি ৷ যে যাওয়ার সে চলেই যাবে ৷ তাহলে আবার তার কথা কেন ভাবছি আমি? উনি আসেন নি আর আসবেনও না কখনো ৷ শুধু শুধু তার জন্য তুহিনকে কষ্ট দিতে পারবো না ৷




বেশ কিছুক্ষন পর বাড়িতে এসে পৌঁছালাম ৷ বাড়িতে এসে সোজা নিজের রুমে চলে গেলাম ৷ ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসতেই চৈতি এলো ৷ আমার পাশে বসে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“এখন কেমন আছো?”

কপাল হালকা কুচকে বলে উঠলাম,,,,,,,,,,,,,

“আমার আবার কি হবে?”

“না কিছু না ৷ তোমার কোথাও খারাপ লাগছে নাকি সেটাই জিজ্ঞেস করছিলাম ৷”

“আচ্ছা তুহিন হঠাৎ ডাক্তার দেখাতে নিয়ে গেলেন আমাকে ৷ কিন্তু কেন?”

“ওওওই যে তোমার মাথা ব্যাথা হয় কেন সেটা জানার জন্য ৷”

“কেন হয়?”

“উফ রিপোর্ট অাসলে বুঝতে পারবো ৷ তুমি এতো চাপ নিও না তো ৷ সব ঠিকঠাকই আসবে দেখো ৷”

“হুম ৷ আচ্ছা বাড়ির সবাই কোথায়? দেখতে পেলাম না তো কাউকে ৷”

“পাপার অফিসে গেছে সবাই ৷ এক্ষুনি চলে আসবে ৷ তুমি একটু রেস্ট নাও ৷ মাথায় চাপ দিও না একদম ৷ আমি আসছি এখন ৷”

আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই কাশি উঠে গেল ৷ মুখে হাত দিয়ে কাশতে লাগলাম ৷ চৈতি আমাকে পানির গ্লাস এগিয়ে দিল ৷ আমি পুরোটা পানি খেয়ে নিলাম ৷ হাতের দিকে তাকাতেই দেখি হাতে রক্ত লেগে রয়েছে ৷ সেটা দেখে চৈতি বলে উঠলো,,,,,,,,,,,

“রক্ত?”

“তুমি একটু যাবে প্লিজ ৷ আমি একটু একা থাকবো ৷”

চৈতি কিছু না বলেই দৌঁড়ে বাহিরে চলে গেল ৷ আমি হাত মুখ ধুয়ে এসে বিছানায় বসতেই আমার উপর একটা মোড়ানো কাগজ এসে পরলো ৷ জানালা দিয়ে বাহিরে উঁকি দিলাম কিন্তু কাউকে পেলাম না ৷ চোখ সরিয়ে অন্যদিকে তাকাতেই আবার আরেকটা কাগজ এসে পরলো ৷ সবগুলা সাদা কাগজ ৷ কিছুই লিখা নেই এতে ৷ তো কাগজ গুলো এভাবে দিচ্ছে কে? জানালার কাছে দাঁড়িয়ে দেখার চেষ্টা করলাম কে আছে ৷ কিন্তু এবারো কাউকে পেলাম না ৷ অন্যদিকে তাকাতেই আরেকটা কাগজ আমার উপর এসে পরলো ৷ রেগে জানালা লাগিয়ে দিয়ে বিছানায় গিয়ে বসে পরলাম ৷

এবার পাথর ছোঁড়ার আওয়াজ পাচ্ছি ৷ মানে কেউ পাথর ছুড়ছে আর সেটা জানালার গ্লাসের সাথে লেগে শব্দ হচ্ছে কিন্তু রুমের ভিতরে আসছে না ৷ আমি রুম থেকে বেরিয়ে সোজা বাড়ির বাহিরে চলে গেলাম ৷ যেদিক থেকে কাগজ ছোঁড়া হচ্ছিল সেদিকে গেলাম ৷ কিন্তু কাউকেই দেখতে পেলাম না ৷ আরেকটু সামনে এগিয়ে যেতেই হঠাৎ হাতে টান পরলো ৷ ভয়ে আমার হাত পা কেঁপে উঠলো ৷ কেউ আমার হাত ধরে টেনে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো ৷ আমি চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ফেললাম ৷ কোনো পরিচিত গলার আওয়াজ পেয়ে চোখ খুললাম ৷

অরূপকে আমার সামনে দেখতে পেয়ে অবাক হয়ে গেলাম ৷ পুরো এক বছর পর ওনার গলার আওয়াজ শুনতে পেলাম ৷ কষ্টটা যেন আরো বের হয়ে আসতে চাইছে ৷ এতোদিন পর কেন আজ আসলেন উনি? চাইলে তো আগেই আসতে পারতেন ৷ সেসব ভেবেই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম ওনাকে ৷ উনি কিছু কদম পিছিয়ে গেলেন ৷ আমি হালকা চেঁচিয়ে বলে উঠলাম,,,,,,,,,,

“এখানে কেন এসেছেন? চলে যান আপনি ৷ আর ঝামেলা করতে আসবেন না প্লিজ চলে যান ৷”

বলেই আমি চলে যেতে নিলে অরূপ আমার হাত চেপে ধরে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলেন ৷ আমি ছাড়ানোর চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারলাম না ৷ অরূপ বলতে লাগলেন,,,,,,,,,,

“এই একবছর আমাকে দূরে রেখেও শান্তি পাও নি?”

আমি কিছু বললাম না ৷ উনি আবার বলতে লাগলেন,,,,,,,,

“এই একবছর তো দূরে থেকেছো আমার থেকে ৷ বুঝেছি রাগ করে দূরে রয়েছিলে ৷ তাই বলে তুহিনকে বিয়ে করতেও রাজি হয়ে যাবে? এটা কীভাবে করলে?”

“আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই আমি রাজি হয়েছি ৷ আপনি বলার কে? আপনি কোন অধিকারে বলবেন আমাকে এসব?”

“ভালোবাসার অধিকার নিয়ে বলবো ৷”

তাচ্ছিল্য হেসে বললাম,,,,,,,,

“ভালোবাসা? আপনি না মায়া আপুকে ভালোবাসতেন ৷ তো আমাকে কেন টানছেন আবার? মায়া আপুকে এখন আর ভালো লাগে না তার জন্য?”

অরূপ চোখ বন্ধ করে জোরে একটা শ্বাস নিয়ে বলে উঠলেন,,,,,,,,,,

“হ্যাঁ ওকে আমার ভালো লাগে না ৷ ও আমাকে মিথ্যা বলেছে তোমার নামে ৷”

“আপনি নাকি ভালোবাসতেন আমাকে? তো আপনার ভালোবাসা এতোটা সস্তা? কারো একটু মিথ্যা জালে নিজেকে জড়িয়ে ফেললেন?”

“আচ্ছা আমি ভুল করেছি ৷ হ্যাঁ এটাকে ভুল না অন্যায় বলে ৷ কিন্তু এর জন্য কি তুমি আমার থেকে দুরে চলে যাওয়ার চেষ্টা করবে? একটা কি সুযোগ দিবে না? স্বামী স্ত্রীর মাঝে তো কতই ঝগড়া হয় ৷ তাই বলে কি তারা আলাদা হয়ে যায়?”

“ঝগড়া আর কারো উপর মিথ্যা অপবাদ দেয়া এক না ৷ এতোই যখন আমাকে নিজের বউ মনে করতেন তাহলে বিয়ের পর অন্তত সেই মিথ্যা কথাগুলো বিশ্বাস না করে আমাকে মেনে নিতে পারতেন ৷ কিন্তু আপনার মধ্যে কোনো বিশ্বাস নেই ৷ এক ভুল তো আবারো করতে পারেন ৷ তখন?”

“তখন নাহয় নিজের হাতে মেরে ফেলো ৷”

অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম আমি ৷ চোখ ভিজে আসছে বারবার ৷ অরূপ আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলতে লাগলেন,,,,,,,

“চলে যাওয়ার একটু আগে যদি একবার পিছনে ঘুরে দাঁড়াতে, পিছনে তাকিয়ে দেখতে তাহলে আজ এক বছর হয়তো আমরা একসাথেই থাকতাম ৷”

অামি অরূপের দিকে তাকালাম ৷ উনি আবার বলতে লাগলেন,,,,,,,,,,,,,,,,,

“হুম হয়তো আমার ভালোবাসাটা অবিশ্বাসের ছিল ৷ কিন্তু কি বলো তো আমি তোমাকে তখন মাত্র ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম ৷ সম্পূর্ণ ভালোবাসার আগেই মায়া আমাকে ভুল বুঝিয়ে দিল ৷ আমি তখন জানতাম না যে মায়া ছিল এসবের পিছনে ৷ কে এরকম করেছিল তাকে আমি খোঁজার চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু পাই নি ৷ তুমি চলে যাওয়ার পর তোমার শুন্যতা আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে কাকে কতটা ভালোবাসি আমি ৷ কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল ৷ তুমি তো আমাকে ফেলেই চলে গিয়েছিলে ৷ কোথায় খুঁজি নি তোমাকে? সব জায়গায় তোমাকে খুঁজে বেরিয়েছি ৷ জায়গায় জায়গায় লোক লাগিয়েছি ৷ দেশের বাইরেও লোক পাঠিয়েছি ৷ নিজেও সব জায়গায় হন্ন হয়ে খুঁজেছি ৷ কিন্তু কোত্থাও পায় নি তোমায় ৷ তোমাদের বাড়িতেও গিয়েছিলাম ৷ তোমার মা বাবাকে বারবার বলতে বলেছিলাম তুমি কোথায় আছো? কিন্তু তারা কিছুই বলে নি আমাকে ৷ কত কাকুতি মিনতি করেছি তবুও বলেন নি তারা ৷ তাদের পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়েছি ৷ হাত জোড় করে তোমার খবর দিতে বলেছিলাম ৷ কিন্তু তারা একটা টু শব্দও মুখ থেকে বের করেন নি ৷ ওই বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল তারা ৷ আমি আমার নিজের মতো খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে গেছি কিন্তু পাই নি কোত্থাও ৷”

ধরা গলায় বলে উঠলাম,,,,,,,,,

“তো এখন কীভাবে জানলেন?”

“তোমার আব্বুর মোবাইল থেকে তোমার নাম্বারের লোকেশান পেয়েছিলাম ৷ আচ্ছা শ্রেয়া অতীতকে ভুলে কি আমার কাছে আসতে পারবে না?”

অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বলে উঠলাম,,,,,,,,,

“অতীত আমি ভুলতে পারবো না ৷ অতীত অতীতই ৷ আপনি আসতে অনেক দেরি করে ফেলেছেন ৷ আমার তুহিনের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে ৷ আমি তুহিনকে কষ্ট দিতে পারবো না ৷ এখন আমি চাইলেও আপনার কাছে ফিরতে পারবো না ৷ আমি চাই না আমার জন্য তুহিনের মন ভেঙ্গে যাক ৷ উনি তো কোনো দোষ করেন নি ৷ আমাকে সবসময় সাহায্য করেছেন ৷ সবসময় আমার পাশে ছিলেন ৷ তো আমি কীভাবে তাকে কষ্ট দিব? তাও আমার জন্য?”

অরূপ আমাকে ওনার দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে বলতে লাগলেন,,,,,,,,,,,

“তাহলে তুমি আমাকে মেরে ফেলো ৷ এই এক বছর তো আমাকে কষ্ট দিয়েছো তাতে কি তুমি ভালো ছিলে? প্রত্যেকটা মূহুর্ত আমি জ্যান্ত লাশ হয়ে বেঁচে ছিলাম ৷ বারবার মাথায় আত্মহত্যার চিন্তা জেকে বসতো ৷ কিন্তু মনের মধ্যে একটা ছোট্ট আশা নিয়ে তোমার জন্য অপেক্ষা করতাম রোজ ৷ কিন্তু প্রতিদিনই নিরাশ হতে হতো আমাকে ৷ যখন তোমার খবর পেয়েছিলাম তখন কতটা খুশি হয়েছিলাম জানো? কিন্তু সেই খুশির থেকেও বেশি কষ্ট হয়েছে তখন যখন তোমার আর তুহিনের বিয়ের কথা শুনেছি আমি ৷ আচ্ছা আমার একটা ভুলের জন্য এতো বড় শাস্তি দিচ্ছো আমাকে? তাহলে নাও মেরে ফেলো আমাকে এক্ষুনি ৷ আমাকে নিজের হাতে মেরে যা ইচ্ছা করো তবুও আমার চোখের সামনে তুহিনকে বিয়ে করো না শ্রেয়া ৷ সহ্য করতে পারবো না আমি ৷ মরে যাবো আমি ৷”

বলতে বলতেই দুই হাঁটু গেড়ে মাটিতে বসে পরলো অরূপ ৷ #ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__২০
#অদ্রিতা_জান্নাত

শ্রেয়া অন্যদিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে নিজের কান্নাটাকে আটকে রাখার চেষ্টা করছে ৷ কিন্তু পারছে না ৷ অরূপের চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়েছে ৷ আর কোনো কষ্টই ওদের সহ্য হচ্ছে না ৷ শ্রেয়ার মাথায় চাপ পরছে আবার ৷ মাথায় হাত দিয়ে মাটিতে বসে পরলো ৷ অরূপ শ্রেয়ার দিকে মুখ তুলে তাকাতেই শ্রেয়াকে এভাবে দেখে বলতে লাগলো,,,,,,,,

“শ্রেয়া তোমার কি হলো? এরকম করছো কেন তুমি?”

বেশকিছুক্ষন এভাবে মাথায় হাত দিয়ে বসে রইল শ্রেয়া ৷ বাহ্যিক ব্যাথাটা নিজে নিজেই চলে গেল ৷ কিন্তু মনের ব্যাথাটা কাটিয়ে উঠতে পারলো না ৷ আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো ৷ অরূপ শ্রেয়াকে সাহায্য করলো ৷ শ্রেয়া অরূপের হাত সরিয়ে দিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“আপনি যান এখন ৷ কেউ দেখে ফেললে সমস্যা হবে ৷”

অরূপ অবাক হয়ে বললো,,,,,,,,

“তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছো?”

“একটু সময় দিন আমাকে ৷ আমি জানি না আমি কি করবো ৷ কিন্তু যেটাই করি না কেন সবার ভালোর জন্যই করবো ৷ তাতে কেউ কষ্ট পেলে আমার যে কিছুই করার নেই ৷”

“তাহলে তুমি তুহিনকে বিয়ে করবে?”

“এসব কথা তো পরেও বলা যেতে পারে ৷ আমার ভালো লাগছে না ৷ মাথা ব্যথা করছে ৷ আমাকে রুমে যেতে হবে ৷ আপনি চলে যান প্লিজ ৷”

বলেই শ্রেয়া আর না দাঁড়িয়ে বাড়ির ভিতরে চলে গেল ৷ অরূপ ওর যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে পিছনে ঘুরে চলে গেল ৷

___________________________

মাঝখানে কেটে গেল আরো দুইটা দিন ৷ শ্রেয়া আর অরূপের এই দুদিনে একবারো দেখা হয়নি ৷ শ্রেয়া তো রুম থেকে বেরই হয় নি ৷ এই দুইদিন নিজেকে রুমের মধ্যে বন্দি করে রেখেছিল ৷ কারো সাথে বেশি একটা কথাও বলে নি ৷ তুহিন হাসপাতালে গিয়েছে শ্রেয়ার রিপোর্ট আনতে ৷ ড্রয়িং রুমে সবাই গোল হয়ে বলে আছে ৷ আজকে তারা শ্রেয়া আর তুহিনের বিয়ের তারিখ ঠিক করবে ৷

কিছুক্ষনপর তুহিন বাড়িতে ফিরলো ৷ সবাই ওর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালো ৷ কিন্তু ও কাউকে কিছু না বলে সোজা উপরে নিজের রুমে চলে গেল ৷ তুহিনকে কি রকম এলোমেলো লাগলো সবার কাছে ৷ সবাই একসাথে তুহিনের রুমের দিকে চলে গেল ৷ রুমের মধ্যে তুহিন হাত দিয়ে চোখ মুখ চেপে ধরে বসে আছে ৷ তখনি ওর রুমে সবাই এলো ৷ সবাই ওকে বিভিন্ন কথা জিজ্ঞেস করছে কিন্তু ও কিছু বলছে না ৷ পাথরের মতো চুপচাপ বসে আছে ৷ শ্রেয়ার মা মিনতির সুরে বলতে লাগলো,,,,,,

“কি এমন হয়েছে বাবা আমার মেয়েটার? তুমি বলছো না কেন? আমার অনেক ভয় করছে ৷ বলো প্লিজ ৷”

তুহিন এবারও কিছু বললো না ৷ শ্রেয়ার মায়ের চোখ যায় একটা ফাইলের দিকে যেটা হাতে নিয়ে তুহিন বাড়িতে ঢুকেছিল ৷ শ্রেয়ার মা ছুটে সেদিকে চলে গেলেন ৷ কাঁপাকাঁপা হাতে ফাইলের ভিতরের সব কাগজ পত্র দেখে আৎকে উঠলেন ৷ ধপ করে বিছানায় বসে পরলেন ৷ ফাইলটাও পরে গেল ওনার হাত থেকে ৷ সবাই অবাক হয়ে তাকালেন ওনার দিকে ৷ একে একে সবাই শ্রেয়ার রিপোর্ট দেখে গেল ৷ কারো যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না ৷

এদিকে রুমের মধ্যে শ্রেয়া শুয়ে আছে ৷ ওর পাশে বসে চৈতি ওর মাথা টিপে দিচ্ছে ৷ তবুও ওর যন্ত্রনা কমছে না ৷ আশেপাশের সব শব্দ ওকে আরো বিরক্ত করছে ৷ হালকা চেঁচিয়ে চৈতিকে বলে উঠলো,,,,,,,,,,,,,

“কাদের আওয়াজ আসছে বারবার? কারা কান্না করছে? সবাইকে চুপ করতে বলো প্লিজ ৷ আমার মাথাটা ফেটে যাচ্ছে ৷ যন্ত্রনা হচ্ছে প্রচুর ৷ ওদের সবাইকে কিছু বলো ৷ থামতে বলো ওদের ৷”

বলেই ও নিজের মাথাটা আবার চেপে ধরলো ৷ চৈতি রুমের দরজা জানালা সব বন্ধ করে দিয়ে শ্রেয়ার পাশে বসে ওর মাথায় যত্ন সহকারে আস্তে আস্তে টিপে দিতে লাগলো ৷




পরেরদিন ৷
তুহিন আমাকে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলেন ৷ সিটবেল্ট লাগিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিবেন তখনি ওনার মনে হলো উনি কিছু একটা ফেলে এসেছেন ৷ আমাকে বসতে বলে গাড়ি থেকে নেমে ভিতরে চলে গেলেন ৷ আমি আশেপাশে তাকাতেই হঠাৎ আমার চোখ পরলো গাড়ির ফ্রন্ট গ্লাস দিয়ে ব্যাক সিটের দিকে ৷ মাথা ঘুরিয়ে পিছনে তাকিয়ে দেখি একটা ফাইল রাখা আছে ৷ হাত বাড়িয়ে সেটা হাতে নিলাম ৷ হাসপাতালের নাম দেখে কপাল কুচকে ফেললাম ৷ বাড়ির দরজার দিকে একবার তাকিয়ে আবার ফাইলটার দিকে তাকালাম ৷

ফাইলটা খুলে একের পর এক পেইজ উল্টে উল্টে দেখতে লাগলাম ৷ তখনি তুহিন এসে আমার পাশে এসে বসলেন ৷ আমার হাতে ফাইলটা দেখে রেগে হাত থেকে টেনে নিয়ে বলে উঠলেন,,,,,,,,,,,

“একটু শান্ত থাকতে পারো না? কেন সবকিছু ধরে ধরে দেখতে হবে?”

বলেই গাড়ি স্টার্ট দিলেন ৷ আমি হালকা হেসে বললাম,,,,,,,,,,,

“আমি কিন্তু সবটা দেখে নিয়েছি ৷”

তুহিন কিছু বললেন না ৷ তার চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট ৷ আমি আবারো বলে উঠলাম,,,,,,,,,

“যা হয় ভালোর জন্যই হয় ৷ আমার না বেঁচে থাকার ইচ্ছাটাই মরে গেছে ৷”

তুহিন অবাক হয়ে তাকালেন আমার দিকে ৷ আমি জানালা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকালাম ৷ উনি চোখ সরিয়ে ড্রাইভিংয়ে মনোযোগ দিলেন ৷ বেশকিছুক্ষন পর গাড়ি থামিয়ে আমাকে নিয়ে হাসপাতালের ভিতরে গেলেন ৷ ডাক্তার আমার চেকআপ করে বাইরে দাঁড়াতে বললেন ৷ আর তিনি নাকি তুহিনের সাথে আলাদা কথা বলবেন তাই তুহিনকে নিয়ে ভিতরে চলে গেলেন ৷ আমার এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে মোটেই ভালো লাগছে না ৷ তাই আমি নিচে নেমে বাহিরে চলে গেলাম ৷

আশেপাশে তাকাতে তাকাতে সামনের দিকে যেতে লাগলাম ৷ কোথায় যাচ্ছি জানি না ৷ কিন্তু যেতে ইচ্ছা করছে সব কিছু ছেড়ে দিয়ে ৷ হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ কারো সঙ্গে ধাক্কা খেলাম ৷ সামনে তাকিয়ে দেখি অরূপ দাঁড়িয়ে আছেন ৷ ওনাকে দেখে আমি পিছনে ঘুরে চলে যেতে নিলেই উনি আমার হাত ধরে ফেললেন ৷ কিন্তু আমি ওনার দিকে ঘুরলাম না ৷ অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম ৷ এই চোখের সাথে চোখ মেলাতে পারবো না আমি ৷ আমার অসুস্থতার খবর জানলে কি করবেন উনি? সে যাই করুক ৷ এখন আমার জীবনের সঙ্গে কারো জীবনই জড়ানো যাবে না ৷

অরূপ আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন ৷ আমি মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম ৷ উনি শান্ত স্বরে বলে উঠলেন,,,,,,,,,,,

“গত দুই দিন ধরে এরকম করছো ৷ না যোগাযোগ করতে দিচ্ছো আর না যোগাযোগ করছো ৷ কেন এরকম করছো? এখন আবার কথাও বলতে চাচ্ছো না ৷ কি হয়েছে তোমার বলবে?”

“আমার কিছু হয় নি ৷ আপনি যান এখান থেকে ৷ ভালো লাগছে না আমার কিছু ৷”

অরূপ কিছুক্ষন শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে আচমকা শ্রেয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো কোথাও ৷ শ্রেয়া হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলে উঠলো,,,,,,,,,

“এরকম করছেন কেন? ছাড়ুন ৷ হাতে লাগছে আমার ৷”

অরূপ শুনলেন না ৷ হঠাৎ মাথায় হাত দিয়ে ব্যথায় ‘আহ’ করে উঠলাম ৷ উনি আমার হাত ছেড়ে দিয়ে আমার দিকে ঘুরে তাকালেন ৷ আমাকে মাথায় হাত দিয়ে ধরতে দেখে আমার কাছে এসে বলতে লাগলেন,,,,,,,,,

“এই তোমার মাথায় কি হয়েছে? দেখি ৷”

হাত দিয়ে অরূপকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলে উঠলাম,,,,,,,,,

“যা হবার হয়েছে ৷ আপনি চলে যান এখান থেকে ৷ চলে যান আপনি প্লিজ ৷”

অরূপ অবাক হয়ে বলে উঠলেন,,,,,,,,,

“তুমি কি এখনো রেগে আছো আমার উপর? দেখো আমি ভুল করেছি ৷ সেগুলো শুধরানোর তো একটা সুযোগ দাও ৷”

“তুহিনের সঙ্গে বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে আমার ৷ চলে যান আপনি ৷”

অরূপ রেগে শ্রেয়াকে ঝাকিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,

“কি ভাবো তুমি নিজেকে? এতোবার বলছি তাও শুনছো না? আরে আমাদের তো ডিভোর্সও হয় নি ৷ তুমি কেন বুঝতে পারছো না ৷ কেন বারবার আমাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছো শ্রেয়া? একটা সুযোগ চাই আমি ৷”

শ্রেয়া অরূপের হাত ঝাটা মেরে সরিয়ে দিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,,,,,

“ভালো লাগছে না আমার ৷ কেন বুঝতে পারছেন না? বিরক্ত লাগছে আমার ৷ আপনাকে এখন অসহ্য লাগছে৷”

অরূপ অবাক হয়ে শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে রইল ৷ কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে হঠাৎ পিছনে ঘুরে শ্রেয়াকে রেখেই চলে যেতে লাগলো ৷ শ্রেয়া অরূপের দিকে তাকিয়ে রইল ৷ ও যেতে চেয়েও যেতে পারছে না ৷ কোনো একটা অজানা কারন ওকে আটকে দিচ্ছে ৷ আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে শ্রেয়া বলে উঠলো,,,,,,,,,,,,,

“আমার জীবনের কয়েকটা দিনের সাথে আপনাকে জড়াতে পারবো না আমি ৷ আমার জীবন তো শেষ পুরো ৷ সেই জীবন আপনার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে আপনার জীবনটা নষ্ট করে দিতে পারবো না আর ৷ যতদিন বেঁচে আছি ততদিন আপনাকে নিজের চোখে দেখতে পারলেই হবে ৷ আর কিছুর দরকার নেই ৷”

বলেই হালকা হাসলো শ্রেয়া আর এক দৃষ্টিতে অরূপের দিকে চেয়ে রইলো ৷ তখনি আচমকা পাশ থেকে একটা গাড়ি এসে শ্রেয়াকে ধাক্কা মেরে দিলো ৷ রাস্তায় ছিটকে পরে গেল ও ৷ চারপাশের লোকজন দৌঁড়ে আসতে লাগলো ওর দিকে ৷ পুরো রাস্তা রক্তে মাখামাখি ৷ গাড়ির ড্রাইভার দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে রাস্তার এরকম অবস্থা দেখে গাড়ি রেখেই উল্টো দিকে ঘুরে দৌঁড়ে পালিয়ে গেল ৷

হঠাৎ কিছু ছিটকে পরার আওয়াজ পেয়ে অরূপ দাঁড়িয়ে গেল ৷ পিছনে ঘুরে তাকাতেই ওর চোখ শান্ত হয়ে এলো ৷ নিবার্ক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শ্রেয়ার দিকে ৷ আশেপাশের মানুষের চেঁচামেচি শুনে অরূপ দৌড়ে শ্রেয়ার কাছে চলে গেল ৷ মাটিতে হাঁটু মুড়ে বসে শ্রেয়ার মাথাটা নিজের কোলে রাখলো ৷ শ্রেয়ার অল্প অল্প জ্ঞান আছে ৷ জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে ও ৷ ওর পেটের বাম সাইডের সামনের দিক থেকে রক্ত গড়িয়ে পরছে তো পরছেই ৷ অরূপ ওর হাত দিয়ে সেখানে চেপে ধরলো ৷ তবুও রক্তের বাঁধ থামছে না ৷ শ্রেয়ার মাথার থেকে আঘাত বেশি লেগেছে পেটে ৷ তাই রক্তও সেখান থেকে বেশি পরছে ৷

অরূপ শ্রেয়ার গালে ওর রক্তে ভেজা হাত দিয়ে শ্রেয়াকে ডাকতে ডাকতে বলে উঠলো,,,,,,,,,,

“এ এটা কি হ হলো? শ্রেয়া? ত তুমি ত তোমার এরকম কি করে হলো? শ্রেয়া কথা বলো প্লিজ ৷ আমার ভ ভয় করছে ৷”

শ্রেয়া জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিলো ৷ কথা বলার শক্তিটুকুও যেন ওর মধ্যে নেই ৷ অরূপের হাত খামচে ধরে জোরে জোরে হাপাতে লাগলো ৷ শ্রেয়ার চোখের কোন বেয়ে বেয়ে পানি পরতে লাগলো ৷ অরূপ ওর হাত দিয়ে শ্রেয়ার চোখের পানি মুছে দিলো ৷ ওকে নিজের বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“তোমার কিছু হবে না ৷ আমি হতে দিব না ৷ তুমি বললেই শুনবো না আমি ৷ তোমাকে আমার জন্য বাঁচতে হবে ৷ নাহলে আমি শেষ হয়ে যাবো যে ৷”

বলেই অরূপ আশেপাশের লোকজনের কাছে চিৎকার করে হেল্প চাইতে লাগলো ৷ কয়েকজন লোক দৌঁড়ে অন্যদিকে চলে গেল গাড়ির ব্যবস্থা করতে ৷


হাসপাতাল থেকে কাগজপত্র ঠিক করতে করতে বের হলো তুহিন ৷ শ্রেয়াকে ভিতরে খুঁজে না পেয়ে বাহিরে খুঁজতে এলো ৷ চারপাশে তাকাতে তাকাতে হঠাৎ থেমে গেল ৷ অরূপের বুকে শ্রেয়াকে এরকম রক্তাত্ত অবস্থায় দেখে আতকে উঠলো ও ৷ হাত থেকে সব কাগজ পত্র গুলো পরে গেল ৷ পলকহীন ভাবে শ্রেয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো তুহিন ৷ ধীর পায়ে সামনে এগিয়ে যেতে লাগলো ৷

শ্রেয়ার কাছে গিয়ে ধপ করে মাটিতে বসে পরলো ও ৷ অরূপকে একপলক দেখে আবার শ্রেয়ার দিকে তাকালো ৷ চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে ওর কিছু মূহুর্তের মধ্যেই ৷ কাঁপাকাঁপা হাতে শ্রেয়ার রক্তাত্ত হাতে হাত রাখলো তুহিন ৷ শ্রেয়া আবছা আবছা চোখে তুহিনের দিকে তাকালো ৷ জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিলো কিছু বলতে যেয়েও বলতে পারলো না ৷ গলা ধরে আসছে ওর ৷ দুজনকেই একবার দেখে চোখ বন্ধ করে নিলো ৷

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

(কাল গল্প দিতেও পারি আবার নাও দিতে পারি)

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here