ভালোবাসবে_তুমিও পর্ব ১৩+১৪

#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__১৩
#অদ্রিতা_জান্নাত

পিছন থেকে অরূপের মা মায়াকে এভাবে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিজে সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন ৷ মায়াকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিতেই ওর হুশ ফিরলো ৷ একটা ঢোক গিলে ওই ব্যক্তিটির দিকে আবার তাকালো ও ৷ অরূপের মা বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ভিতরে আয় না!”

বলেই তাকে ভিতরে এনে সোফায় বসালো ৷ অরূপের মা তার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,

“আকাশ তুই একা এলি কেন? আপুকে আর ভাইকে নিয়ে আসতে পারতি ৷”

আকাশ বলে উঠলো,,,,,,,,

“দুদিন আগেই তো গেলো ৷ আজ মম আর আসতে চায় নি তাই ৷ আর আব্বুর তো কাজ আছে তাই আসতে পারে নি ৷ আমিই এলাম তোমাদের সাথে দেখা করতে৷”

“এই রাতের বেলাও ভাইয়ের কি কাজ রে?”

“আরে বড়মা তুমি তো জানোই আব্বুর কাজের জন্য সকাল অর রাতের দরকার হয় না ৷ যখন ইচ্ছা তখন করে ৷ শোনো না এক গ্লাস পানি দাও তো ৷”

“এবাবা ভুলে গেছি একদম ৷ বস আমি এক্ষুনি আনছি৷”

বলেই মায়ার দিকে একবার তাকিয়ে চলে যান তিনি ৷ আকাশ পকেট থেকে ফোন বের করে টিপতে লাগলো ৷ মায়া যে ওর দিকে তাকিয়ে আছে সেটা দেখেও না দেখার ভান করে রয়েছে ৷ মায়া ওর সামনে গিয়ে চাপা স্বরে বলে উঠলো,,,,,,,

“তুমি এখানে কি করছো?”

আকাশ একবার ওর দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল ৷ ও কিছু বললো না দেখে মায়ার আবার বলে উঠলো,,,,,,,

“আমি তোমাকে কিছু বলছি ৷ তুমি এখানে কেন এসেছো? কি চাও তুমি?”

আকাশ এবারেও কিছু বললো না ৷ মায়া রেগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অরূপের মা হাতে ট্রে নিয়ে ওর পাশে এসে বসলো ৷ আকাশ সেখান থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“খাবারের দরকার নেই ৷ খেয়ে নিয়েছি রাস্তায় আমি ৷ এখন আর খাবো না ৷ তোমরা খেয়েছো?”

তিনি একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,,,,,,,,,

“হুম ৷ তুই খেয়ে নে না ৷”

“নট পসিবল ৷ সত্যি পেট পুরো ভরা আমার ৷”

“আচ্ছা যা তাহলে রেস্ট নে রুমে গিয়ে ৷”

আকাশ মাথা নাড়িয়ে মায়ার দিকে একপলক তাকিয়ে উপরে চলে গেল ৷ বিদেশ যাওয়ার আগে ও এ বাড়ি প্রায়ই আসতো ৷ তাই ওর আলাদা রুমও আছে এখানে ৷ আশেপাশে তাকিয়ে রুমে ভিতরে ঢুকে দরজা লাগাতে গেলেই মায়া ওকে ঠেলে ভিতরে ঢুকে গেল ৷ আকাশ চোখ মুখ কুচকে তাকালো ওর দিকে ৷ মায়া আশেপাশে তাকাতে তাকাতে বলে উঠলো,,,,,,,,,

“আমার প্রশ্নের উত্তর দাও ৷”

“বের হও এখান থেকে ৷”

মায়া খানিকটা অবাক হয়ে তাকালো ৷ আকাশ তাচ্ছিল্য স্বরে বলতে লাগলো,,,,,,,

“কি? অবাক হচ্ছো?”

“না এটা বলো তুমি এখানে কেন এসেছো? কি সম্পর্ক এই বাড়ির সাথে তোমার?”

“এখন আমি যদি বলি তুমি কেন থাকছো এখানে? কি সম্পর্ক এখানকার সবার সাথে তোমার?”

“এটা আমার প্রশ্নের উত্তর না ৷”

“আমি বাধ্য নই তোমাকে উত্তর দেয়ার ৷”

“আকাশ আমাকে একটু শান্তি দিবে প্লিজ? কেন এরকম করছো তুমি?”

“কারনটা কি আবার নতুন করে বলতে হবে? আমাকে অশান্তিতে রেখে তুমি শান্তিতে থাকবে সেটা কি করে হয় সুইটহার্ট ৷”

মায়া আকাশের দিকে কিছুটা চমকে তাকালো ৷ তারপর কাঁপাকাঁপা গলায় বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“আকাশ ততুমি আমাকে কিডন্যাপ করেছিলে না?”

মায়ার এক হাত ধরে নিজের কাছে টেনে এনে খানিকটা হেসে আকাশ বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“এতোটা বোকা তুমি সেটাতো জানতাম না আমি ৷ সবজায়গায় আমাকে খোঁজার জন্য লোক লাগিয়েছো? কিন্তু খোঁজ পেয়েছো? না পাও নি ৷ আমি নিজে থেকেই ধরা দিয়েছি তোমায় ৷ তাই পেলে এতোক্ষনে ৷”

“ছাড়ো আমাকে ৷ তুমি এইটা কি করলে? কেন এরকম করলে বলো? কেন আমার বিয়ের দিনই এরকম একটা কাজ করলে ৷”

আকাশ মায়াকে আরো চেপে ধরে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“মাঝপথে আমাকে ছেড়ে দিয়ে তুমি সুখে থাকবে ভেবেছো? কিন্তু আমি এতোটাও ভালো নই ৷ ভালোবেসেছি দেখে এই নয় যে যা ইচ্ছা তাই করবে ৷”

আকাশ মায়াকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দিয়ে আবার বলতে লাগলো,,,,,,,

“তোমার মতো মেয়ে না আসলেই ভালোবাসার যোগ্য নয় ৷ টাকা দেখে হিসাব করো? ভালোবাসাটা টাকায় হয় না দুটো পবিত্র মনের হয় ৷ অরূপের লাইফ থেকে তো তোমার মতো জঘন্য মেয়েকে সরাবোই আমি ৷ তার সঙ্গে আমার লাইফ থেকেও ৷”

বলেই ঠাসস করে ওর মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিলো আকাশ ৷ মায়া রেগে সেখান থেকে চলে গেল ৷

____________________________

সকাল ১০ টা ১০ বাজে ৷
একটা ক্লাবের পিছন দিক দিয়ে তুহিন দাঁড়িয়ে আছে ওর সঙ্গে আছে কালকের সেই মাতাল ছেলেটা যার নাম রকি ৷ কিছুক্ষন পর সেখানে মায়া এসে হাজির হলো ৷ ওকে এই জায়গায় ডেকে আনা হয়েছে ৷ তুহিন রকিকে সব বুঝিয়ে দিলে ছেলেটা মায়ার কাছে চলে গেল ৷ আর এদিকে তুহিন এসব কিছু ভিডিও করতে লাগলো ৷ রকি মায়ার কাছে আসলে মায়া বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“কি বলবে তাড়াতাড়ি বলো যেতে হবে আমাকে আবার৷”

ছেলেটা একটা ঢোক গিলে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“ইইয়ে মমানে ম্যাম আপনার সঙ্গে আমার দরকারি কিছু কথা আছে ৷”

মায়া ভ্রু কুচকে বললো,,,,,, “কি?”

“আব আসলে আমি কিছু জানতে চাই ৷”

মায়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো রকির দিকে ৷ ছেলেটা আবার বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“না মানে জানা দরকার ৷ আসলে আপনি ওই ভিডিও দিয়ে কি করেছেন সেটাই জানতে চাচ্ছি আমি ৷”

“সে সব কথা তোমাকে কেন বলবো?”

সন্দেহ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মায়া কথাগুলাে বললো ৷ মায়ার কথা শুনে রকি কিছুক্ষন চুপ থেকে কিছু একটা ভেবেই বলে উঠলো,,,,,,,,,,

“নাহলে কেউ জানতে আসলে বলবো কীভাবে?”

মায়া চমকে উঠে বললো,,,,,,,,,, “মানে?”

“আসলে যদি কেউ এই ভিডিও গুলোর খোঁজ নিতে আসে তাহলে আমি কীভাবে কি বলবো?”

“মানে? কেউ এসেছিল?”

রকি হালকা ভাবার ভান করে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“হ্যাঁ হ্যাঁ এসেছিল তো ৷”

“কে এসেছিল? কি বলেছো তুমি তাকে?”

“শ্রেয়া নামের একটা মেয়ে এসে জিজ্ঞেস করেছিল যে মায়া নামের কেউ অরূপকে কোনো কিছুর মাধ্যমে ভুল বুঝিয়েছে কিনা আমি না বলে দিয়েছি ৷”

“তুমি না বলেছো আর ও মেনে নিয়েছে?”

“হ্যাঁ নিয়েছে তো ৷ এখন যদি আপনি আমাকে না বলেন যে আপনি এই ভিডিও গুলো দিয়ে কাকে কীভাবে ভুল বুঝিয়েছেন তাহলে তো অামি জানতেই পারবো না যে আপনি কীভাবে ভুল বুঝিয়েছেন তাকে ৷ কেউ জিজ্ঞেস করলে সত্যিটা না জানলে তো আমি কিছুই বলতে পারবো না ৷ এই ধরুন যাকে আপনি ভুল বুঝিয়েছেন সে যদি এসে বলে সব সত্যি কিনা? আমি তো আর জানিনা আপনি তাকে কি বুঝিয়েছেন ৷ যদি বলি যে ওসব মিথ্যা ৷ তাহলে তো সে সব জেনে যাবে না? তাই জানতে চেয়েছি আমি ৷”

মায়া কিছুক্ষন চুপ করে ভাবতে লাগলো যে ও কিছু বলবে কিনা? বলা কি ঠিক হবে ওর? রকি অাবার বলে উঠলো,,,,,,,,,,,,,

“কি হলো ম্যাম বলুন না ৷ আচ্ছা থাক বলে দিব আমি যে সব মিথ্যা এটাই হয়তো ঠিক হবে ৷”

মায়া গর্জে উঠে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,

“না ৷ আমি বলবো আজ সব তোমায় ৷ কিন্তু তুমি কাউকে বলতে পারবে না বুঝেছো?”

ছেলেটা মাথা নাড়ালে মায়া একটা দম নিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,,,

“আমি যখন কলেজে ফার্স্ট ভর্তি হই তখন অরূপকে প্রথম দেখে ভালো লেগে যায় আমার ৷ বিভিন্ন কিছুর হেল্প চাইতে ওর কাছে যেতাম আমি ৷ আমাদের কলেজের একটা নিয়ম ছিল যে সব কাজে জুনিয়ররা সিনিয়র দের কাছে হেল্প চাইতে পারবে ৷ সিনিয়ররাও তাদের যথাসাধ্য হেল্প করবে ৷ অরূপ আমার সিনিয়র ছিল তাই সবসময় ওর কাছেই সাহায্য চাইতাম আমি ৷ একসময় আমাদের মধ্যের সম্পর্কটা অনেকটা মজবুত হয় ৷ বন্ধুত্ব করি আমরা ৷ কিন্তু আমার অরূপ অনেক ভালো লাগতো ৷ এতোই ভালো লাগতো যে সারাদিন ওর কথাই মাথায় আসতো ৷ আমি যখন ২য় বর্ষে পরি তখন শ্রেয়া ১ম বর্ষের জন্য এডমিশান নেয় এই কলেজে ৷ তখন থেকেই অরূপ আর শ্রেয়া দুজন দুজনার মধ্যে কথা বলতে থাকে ৷ হাসি, মজা আর আড্ডার মাধ্যমে অরূপ আর শ্রেয়া নিজেদের মধ্যে ফ্রি হয়ে যায় ৷ অরূপকে দেখে প্রায়ই মনে হতো ও হয়তো শ্রেয়াকে পচ্ছন্দ করে ৷ কিন্তু আমার অরূপকে ভালো লেগে গিয়েছিল ৷ ভালোও বেসেছিলাম ওকে ৷ কিন্তু যখন জানলাম অরূপ শ্রেয়াকে ভালোবাসে ওকে আমার সামনে প্রোপোজ করবে তখন রাগ হয়েছিল খুব ৷ অরূপের সাথে তো আমার পরিচয় শ্রেয়ার পরিচয় হবার আগেই ৷ তাহলে ও কেন আমাকে রেখে অন্য কাউকে ভালোবাসবে ৷ এই বিষয়টা মোটেও ভালো লাগে নি আমার কাছে ৷”

কথাগুলো একনাগাড়ে বলে থামলো মায়া ৷ রকি উত্তেজিত হয়ে জানতে চাইলো,,,,,,,,, “তারপর?”

মায়া আবার বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,

“তারপর আমি তোমাদের দিয়ে বেশ কয়েকটা ফেইক ভিডিও আর ছবি গুলা রেডি করাই ৷ আমি একটা নতুন সিমের নাম্বার দিয়ে নিজের পরিচয় না দিয়ে অরূপকে কল করে শ্রেয়ার সম্পর্কে অনেক বাজে বাজে কথা বলি ৷ প্রথমে অরূপ আমার একটা কথাও বিশ্বাস করলো না ৷ বেশ কয়েকটা নাম্বার দিয়ে এভাবে বলেও কাজ হয়নি ৷ ও উল্টা আমার নাম্বার ব্লক করে দিয়েছিল ৷ তাই কোনো উপায় না পেয়ে আবার নতুন নাম্বার দিয়ে ভিডিও আর ছবি গুলা দেখাই ওকে ৷ ভিডিও গুলা ফেইক হলেও কিন্তু সেগুলা রিয়েল মনে হয়েছিল ৷ কখনোই কেউ ধরতে পারবে না যে ওগুলা আসলে ফেইক ৷ অরূপ বিশ্বাস করে নিয়েছিল সেগুলা কিন্তু তবুও ওর মন মানছিল না ৷ তাই আমি এবার ওকে নিজের চোখে দেখাই আমি ৷”

“কীভাবে?” (রকি)

“একদিন শ্রেয়ার সাথে রাস্তায় তুহিনের দেখা হয় ৷ সেটাই কাজে লাগাই আমি ৷ মাঝরাস্তায় হঠাৎ শ্রেয়ার পা মচকে যায় ৷ আর ও নিচে বসে পরে ৷ তুহিন ওকে ধরে ধরে ওঠায় আর ওকে ধরে ধরে নিয়ে যেতে থাকে ৷ আর এটা অরূপ দেখে ফেলে ৷ ও ভেবেছে হয়তো শ্রেয়াই তুহিনকে ইচ্ছা করে ধরতে বলেছে ৷ মানে অনেকটা দূর থেকে অরূপ এটাই বুঝে ৷ সেদিনের পর থেকেই ও শ্রেয়ার সাথে কথা বলে না ৷ পরেরদিন আচমকা অরূপ আমাকে প্রোপোজ করে ৷ সেটা এমনি এমনি না শ্রেয়াকে দেখানোর জন্য ৷ শ্রেয়াকে দেখিয়েই অরূপ বিয়েতে রাজি হয় আমার সাথে ৷ আর দিনের পর দিন ওকে নানাভাবে কথা শুনাতে থাকতো ৷”

“এসব করে আপনার লাভ কি ম্যাম?”

“লাভ ছাড়া কিছুই করি নি আমি ৷ হ্যাঁ অরূপকে আমি সত্যি ভালোবাসি ৷ তাই ওর থেকে শ্রেয়াকে আলাদা করি ৷ তবুও ওদের বিয়েটা হয়ে গেল শেষমেষ ৷ এখন ডিভোর্সটা তাড়াতাড়ি হলেই হয় ৷ এই শ্রেয়াকে আমার বিশ্বাস নেই ৷ কিন্তু কয়েকদিন ধরে অরূপও যেন কেমন করছে ৷ আচ্ছা তুমি তোমার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়েছো? এখন এসব কিন্তু কাউকে বলবে না একদম৷”

“ওকে ম্যাম কাউকে বলবো না আমি ৷”

“হুম আমি যাই তাহলে দেরি হয়ে গেলে সবাই সন্দেহ করবে আবার ৷”

রকি মাথা নাড়াতেই মায়া চলে গেল ৷ পিছন থেকে তুহিন রকির সামনে এসে ওর হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে বললো,,,,,,,,,,,,

“চলে যাও এই শহর ছেড়ে ৷ মায়া যেন তোমায় আর কখনো খুঁজে না পায় ৷ আর এসব খারাপ কাজ না করে খেটে খাও ৷”

“ধন্যবাদ স্যার আমি এখন থেকে আর এসব করবো না ৷ আপনার কথার মান রাখবো আমি ৷”

বলেই ছেলেটা চলে গেল ৷ তুহিন হালকা হেসে শ্রেয়ার নাম্বারে কল দিল ৷ কিন্তু ফোন বন্ধ ৷ হঠাৎ ফোন বন্ধ কেন ওর? শ্রেয়ার ফোন তো কখনো বন্ধ থাকে না ৷ মাঝেমাঝে বিরক্ত বা রাগে শ্রেয়া ইচ্ছা করে ফোন বন্ধ করে দেয় ৷ কিন্তু এখন বন্ধ কেন? আর কিছু না ভেবে তুহিন গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরলো শ্রেয়ার বাড়ির উদ্দেশ্যে ৷#ভালোবাসবে_তুমিও❤
#পর্ব__১৪
#অদ্রিতা_জান্নাত

রুমের মধ্যে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে শ্রেয়া ৷ পাশেই ওর মা বসে বসে ওর কপালে জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছে ৷ তখনি তুহিন হন্তদন্ত হয়ে রুমের ভিতর ঢুকলো ৷ শ্রেয়ার পাশে এসে বসে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“শ্রেয়া? কি হয়েছে তোমার? আন্টি কি হয়েছে ওর?”

তুহিনের কথা শুনে শ্রেয়া চোখ খুলে তাকালো ৷ শ্রেয়ার মা তুহিনকে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“দেখো না বাবা ৷ কাল রাতে ওর জ্বর এসেছিল কিন্তু আমাদের কাউকেই কিছু বললো না ৷ ভোরের দিকে ওকে ডাকতে এসে দেখি ওর গাঁ গরম ৷ পরে ওর বাবাকে বলে ডাক্তার দেখালাম ৷ এখন জ্বরটা একটু কমেছে ৷”

“এতোটা কেয়ারলেস কেন তুমি?”

আমি আম্মুকে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,,

“তুমি একটু যাও ৷ ওনার জন্য কিছুর ব্যবস্থা করো আম্মু ৷ আমি ঠিক আছি ৷”

বলেই উঠে বসলাম ৷ আম্মু আমাদের দিকে একপলক তাকিয়ে থেকে চলে গেল ৷ আমি তুহিনকে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,

“জানতে পেরেছেন সব?”

তুহিন একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সবটা খুলে বললেন আমাকে ৷ আমি শুধু শুনলাম কিছু বললাম না ৷ ভালোবাসায় কোনো বিশ্বাস না থাকলে সেটাকে ভালোবাসা বলে না ৷ হয়তো অরূপও তাই ৷ তুহিন আমাকে আবার বললেন,,,,,,,,

“তো এখন কি করবে?”

আমি কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠলাম,,,,,,,,

“ওই বাড়ি যাবো আজ আমি ৷”

“তোমার শরীর খারাপ ৷ আর তুমি এই অবস্থায় যাবে?”

“এতোটাও খারাপ লাগছে না আমার যে আমি যেতে পারবো না ৷ আমি আজ যাবো ৷ আর এসবকিছুর শেষদিনও আজ ৷ আপনি না করবেন না প্লিজ ৷”

তুহিন কিছু বললেন না দেখে আমি আবার বললাম,,,,,,,,,

“রিয়েল ভিডিও গুলা আসছে?”

“হুম একটু আগেই পেয়েছি আমি ৷”

“আচ্ছা আপনি নিচে যান ৷ আমি রেডি হয়ে আসছি ৷”

উনি মাথা নাড়িয়ে নিচে চলে গেলেন ৷ অামিও রেডি হয়ে নিচে গিয়ে অাব্বুর পাশে বসলাম ৷ সে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,

“শরীর কেমন এখন তোর? ভালো লাগছে তো নাকি?”

“হুম আমি একদম ঠিক আছি ৷”

“তো কোথাও বের হবি নাকি?”

“আব্বু তুমি না বলেছিলে অরূপের সাথে আমার ডিভোর্স পেপার রেডি করবে ৷ সেটা কোথায়?”

“হুম বলেছি তো ৷ আজ নিয়ে আসার কথা ৷ আরেকটু অপেক্ষা কর দেখি ৷”

“আমার কানাডা যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট রেডি করেছো?”

আব্বু কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো,,,,,,,,,

“তুই আজই চলে যাবি?”

“হুম ৷ আজই যেতে চাই আমি ৷”

আম্মু দৌঁড়ে চলে এলো আমার কাছে ৷ আমার দুই গালে হাত রেখে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“তুই আজই চলে যাবি আমাদের ছেড়ে? আমরা থাকবো কি করে রে মা?”

আমি কিছু বললাম না ৷ আম্মু আবার বললো,,,,,,,,

“তুই একা সেখানে থাকবি কি করে? তোর কষ্ট হবে অনেক ৷ তুই যাস না মা ৷”

“আম্মু আমি সবটা সামলিয়ে নিব ৷ চিন্তা করো না প্লিজ ৷ দেখো তোমার মেয়ে ওখানে ভালো থাকবে অনেক ৷”

পাশ থেকে আব্বু বলে উঠলো,,,,,,,,,,,

“তোকে একা কীভাবে ছেড়ে দিব বল? আমাদেরও তো টেনশান হয় নাকি?”

তখনি তুহিন বলে উঠলেন,,,,,,,,,

“আমি আছি তো ৷ আমি সবসময় থাকবো ওর সাথে ৷”

তুহিনের কথা শুনে অবাক হলাম আমি ৷ আব্বু বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“তুমি আছো মানে? তুমি কি ওর সাথে যাবে নাকি?”

“হ্যাঁ আঙ্কেল যদি আপনি চান ৷ আমি তো এখানে কোনো কাজ করি না আপাতত ৷ কানাডা যেতেই পারি অন্তত ঘোরার জন্য ৷ তারপর শ্রেয়ারও খেয়াল রাখতে পারবো ৷ আবার আমার মামা সেখানেই থাকে ৷ তাহলে তো বেশি সমস্যা হবে না যদি শ্রেয়া আমার সাথে যায় ৷”

আমি বলতে লাগলাম,,,,,,,

“না না ৷ আপনি অনেক করেছেন ৷ আর করতে হবে না ৷ শুধু শুধু কেন কষ্ট করবেন আমার জন্য?”

“কষ্টের কিছু নেই ৷ আমার যতটুকু সাধ্য ততটুকু করবো আমি ৷ তো আঙ্কেল আপনি কি রাজি?”

আব্বু কিছু একটা ভেবে উঠে নিজের রুমে চলে গেল ৷ কিছুক্ষন পর এসে আমার সামনে বসে আমার হাতে কিছু একটা দিল ৷ আমি তাকিয়ে দেখি পাসপোর্ট ৷ আব্বু আমার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,

“নে পাসপোর্ট ৷ আর শোন তুই কানাডা যাবি আজ কিন্তু একা একা না ৷ তুহিনের সাথে গেলেই আমি রাজি হবো ৷ নাহলে আরো কয়েকদিন পর আমি নিজে তোকে দিয়ে আসবো ৷”

“আমার জন্য কেন ওনাকে টানছো আব্বু?”

“তুহিন তোর সঙ্গে গেলে আমিও নিশ্চিন্ত হবো ৷ তাই বলছি শুধু শুধু টেনশান না বাড়িয়ে রাজি হয়ে যা ৷”

আম্মু আব্বু এরকম করে আরো কিছুক্ষন বুঝালো আমায় ৷ কোনো উপায় না পেয়ে রাজি হলাম অামি ৷ কিছুক্ষন পর একটা লোক এসে আমার আর অরূপের ডিভোর্সের কিছু কাগজ পত্র দিয়ে চলে গেলেন ৷ আমি ডিভোর্স পেপারটা হাতে নিয়ে সোফায় বসলাম ৷ পেপারটা টেবিলের উপর রেখে কলম হাতে নিলাম সাইন করার জন্য ৷ হাত বারবার কেঁপে উঠছে ৷ চোখ ভিজে আসছে ৷ যতই বলি আমি অরূপকে ভালোবাসি না ৷ তবুও মনের এক কোনায় হয়তো ওনার জন্য সবটুকু ভালোবাসা পরে আছে ৷ কিন্তু সেই ভালোবাসাটা চাঁপা পরে আছে রাগ, অভিমান, কষ্ট আর ঘৃনার কারনে ৷

কাঁপাকাঁপা হাতে কোনো রকমে সাইন করে দিলাম ৷ জোরে একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বলতে লাগলাম,,,,,,

“আম্মু আব্বু তোমরা আমার প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে সোজা এয়ারপোর্ট চলে যাও ৷ আমি অরূপের বাসা থেকে সোজা এয়ারপোর্ট চলে যাবো ৷ আর তুহিন আপনি নাহয় বাসায় চলে যান ৷ সবাইকে তো জানতে হবে আপনাকে না?”

“শ্রেয়া আমি ফোন করে জানিয়ে দিব সবাইকে ৷ এখন তোমার সঙ্গে যাওয়া দরকার আমার ৷ সবকিছু তো আমার কাছে না?”

“কিন্তু…”

“কোনো কিন্তু না ৷ আমি যাচ্ছি ৷ তুমি তাড়াতাড়ি এসো৷”

বলেই চলে গেলেন উনি ৷ আমি আম্মু আব্বুকে বিদায় জানিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম ৷ বেশকিছুক্ষন পর গাড়ি এসে থামলো অরূপের বাড়ির সামনে ৷ পুরো বাড়িটাতে একটু চোখ বুলিয়ে নিলাম ৷ তুহিন গাড়ি থেকে নেমে আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন আর চোখের ইশারায় ভিতরে যেতে বললেন ৷ আমি হালকা একটা দম নিয়ে সামনে এগিয়ে গিয়ে বেল বাজালাম ৷ কিছুক্ষন পর নয়না মা এসে দরজা খুলে দিলো ৷ আমাকে দেখে খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগলেন,,,,,,,,,,,,

“এতোদিন পর মনে পরলো আমাদের হ্যাঁ? একটু তো আসতে পারিস নাকি? আমরা কি ভুল করেছি যে আমাদের এইভাবে শাস্তি দিচ্ছিস?”

মাকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম,,,,,,,,,

“ভিতরে গিয়ে কথা বলি?”

“সেটা আর বলতে হবে নাকি? আয় ভিতরে আয় ৷”

তুহিনকে নিয়ে আমি ভিতরে গেলাম ৷ এই বাড়িতে আজ আমার শেষ দিন ৷ আর কখনো হয়তো আসতে পারবো না ৷ ডায়নিং টেবিলে সবাই বসেছিল ৷ আমাকে এখানে দেখে সবাই অবাক হয়ে তাকালো ৷ মা আমার হাত ধরে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“কিছু খেয়েছিস? আয় খাবি ৷”

আমি তার হাত ধরে আমার দিকে ঘুরিয়ে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,,,,

“আজ আমি এখানে খেতে বা থাকতে আসি নি ৷ নিজেকে নির্দোষ প্রমান করতে এসেছি ৷”

মায়া আপু চমকে উঠলো ৷ তার মুখের রিয়্যাকশানটা আমার চোখ এড়ালো না ৷ হালকা হেসে অরূপের দিকে এগিয়ে গেলাম ৷ ওনার সামনে দাঁড়িয়ে ওনার চোখে চোখ রাখলাম ৷ চোখ সরিয়ে নিলেন উনি ৷ এতো কিছুর পরও আমি আবার এসেছি সেটা হয়তো অবিশ্বাস্য ওনার কাছে ৷ মায়া আপুর কাছে গিয়ে বললাম,,,,,,,,,

“তোকে অন্যরকম লাগছে আজ ৷ এতো ভয় পাচ্ছিস কেন?”

মায়া আপু হকচকিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,,,,,,

“কককই ভভয় কেন পপপাবো?”

“তো ভয় পাস নি তুই?”

মায়া আপু কিছু বললো না এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে হাত কচলাতে লাগলো ৷ হয়তো কিছুটা আঁচ করতে পেরেছে ও ৷ অরূপ গম্ভীর সূরে বলে উঠলেন,,,,,,,,

“কি বলবে তুমি?”

আমি তুহিনের কাছ থেকে ওনার মোবাইলটা হাতে নিলাম ৷ তারপর রেকর্ড করে রাখা মায়া আর রকির সব কথা গুলা শুনালাম সবাইকে ৷ মায়া আপু ঘামছে ক্রমশ ৷ ও নিজেই জানেনা আজ কি হবে ওর ৷ তবুও সাহস নিয়ে হালকা চেচিঁয়ে বলে উঠলো,,,,,,,,,,

“মিথ্যা সব মিথ্যা ৷ শ্রেয়ার সাজানো এসব ৷ এখন আমাকে ফাসাতে চাইছে ও ৷”

“তোর কথাগুলোও কি মিথ্যা?”

“হহহ্যাঁ আমার মতো কারো সেইম ভয়েস দিয়ে আমাকে ফাসাতে চাইছিস তুই ৷”

“ও তাই নাকি? নিজের দোষ এখনো আমাকে দিবি? ওকে ওয়েট ৷”

বলেই ভিডিও আর ছবি গুলাে অরূপের হাতে দিয়ে বললাম,,,,,,,,,,

“কোনটা সত্যি অর মিথ্যা সেটা যাচাই করার দরকার ছিল আপনার ৷ এভাবে মিথ্যা অপবাদ না দিলেও পারতেন ৷ এই ভিডিও আর ছবিগুলো কিন্তু রিয়েল লাগলে চেক করে নিতে পারেন আপনি ৷ ফেইক কিছু তথ্যের জন্য আমাকে কথা শুনাতে একটুও বাঁধলো না আপনার?”

অরূপ হাতের মোবাইলটা ছুড়ে ফেলে দিলেন ৷ রাগে ওনার চোখ মুখ লাল হয়ে গিয়েছে ৷ মায়ার একহাত ধরে টেনে সামনে এনে ঠাস করে একটা থাপ্পর দিয়ে দিল ওর গালে ৷ মায়া ঠোঁট কেঁটে যাওয়ার ব্যাথায় আহ করে উঠলো ৷ অরূপের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগবো,,,,,,,,,

“বববিশ্বাস করো এসব মিথ্যা ৷ আমি জানি এগুলা কিছুই…”

ধাক্কা দিয়ে মায়াকে সরিয়ে দিল অরূপ ৷ চেঁচিয়ে বলে উঠলো,,,,,,,,,,,,,

“তোমার গলা মিথ্যা কীভাবে হতে পারে? এখনো নিজের দোষটা স্বীকার করছো না? এতোটা স্বার্থপর তুমি কি করে হতে পারলে?”

মায়া কিছু বললো না ৷ চুপচাপ মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো ৷ অরূপ আমার কাছে এসে আমাকে একপলক দেখে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,,,

“শ্রেয়া…”

ওনাকে বলতে না দিয়ে আমি বলে উঠলাম,,,,,,,,,,

“কৈফিয়ত দেয়ার দরকার নেই কোনো ৷ আমার ভাগ্যটাই এরকম ৷ কিন্তু আমার এই ভাগ্যের জন্য আপনার লাইফটা নষ্ট করতে পারবো না আমি ৷ আপনি ভালো থাকিয়েন মায়া আপুর সাথে ৷ কখনো বাঁধা হয়ে দাঁড়াবো না অামি আর ৷ কিন্তু এতো অপবাদ না দিলেও পারতেন ৷”

“শ্রেয়া আমি…”

“বললাম না আমার মতো একটা মেয়ের কাছে কোনো কৈফিয়তের দরকার নেই ৷ শুধু আমার জন্য কেন নিজের সম্মানটা নষ্ট করবেন?”

হাতের ডিভোর্স পেপারটা ওনার হাতে দিলাম ৷ উনি কপাল কুচকে তাকালেন আমার দিকে ৷ অামি তাচ্ছিল্য হেসে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,,

“ডিভোর্স পেপার ৷ আপনার আর আমার ৷ আপনি একদিন বলেছিলেন না? আপনি নিজে আমায় ডিভোর্স দিবেন ৷ আজ আমি বলছি আপনি নন ৷ আমি নিজে আপনাকে ডিভোর্স দিলাম স্ব ইচ্ছায় ৷ সাইন করে দিয়েছি আমি দয়া করে আপনিও সাইনটা করে দিবেন ৷ মুক্তি দিবেন আমায় ৷”

অরূপ বাকরূদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো ৷ আমি মায়া আপুর দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলাম,,,,,,,

“নিজের হাতে শাস্তি দিব না তোকে ৷ আসলে আমি না এতো মনুষ্যত্বহীন মানুষ না ৷ যে নিজের বোনকে শাস্তি দিব ৷ তুই হয়তো বোন ভাবিস না আমাকে তবে আমি তো ভাবি ৷ নিজেকে শুধরে নে ৷ সব মানুষ যেমন ভুল করে তেমন ভুলটা শুধরে নেওয়ার সুযোগও পায় ৷ তুইও নিজেকে শুধরে নিস ৷ যদি না শুনিস তাহলে তোর প্রাপ্য শাস্তি প্রকৃতিই তোকে দিবে ৷ তার জন্য আমায় আর পরিশ্রম করতে হবে না ৷ আমি ক্ষমা করে দিয়েছি তোকে একজন মেয়ে হিসেবে ৷ অন্য মেয়ের চরিত্রে দাগ লাগাতে গেলে সেখানে আগে তুই নিজেকে বিবেচনা করে নিস ৷ দেখিস কেমন লাগে ৷”

চোখের পানিটা মুছে নিয়ে আবার বলতে লাগলাম,,,,,,,,

“আপনাকেও মাফ করে দিয়েছি আমি অরূপ ৷ তাই এতোটা অনুতপ্ত হবারও কোনো দরকার নেই ৷ ডিভোর্স পেপারে সাইন করে আমাদের মধ্যকার সম্পর্কটা শেষ করে দিবেন ৷ খুশি হবো ৷ ভালো থাকবেন ৷ আজ আসি আমি ৷ নিজের প্রমিস রেখেছি আমি ৷”

বলেই বাড়ি থেকে বের হতে গেলেই নয়না মা আমাকে আটকে দিয়ে বলতে লাগলো,,,,,,,,,,

“যাস না কোথাও আমাদের ছেড়ে ৷”

মাকে ছাড়িয়ে নিলাম ৷ আশার হাতে মায়ের হাত ধরিয়ে দিয়ে বলতে লাগলাম,,,,,,,,,,,

“নিজের মা বাবার খেয়াল রাখবে ৷ তাদের সুরক্ষিত রাখবে ৷ আমি বলেছি তোমায় ৷ শুনবে না আমার কথা?”

আশা মাথা নাড়ালো ৷ আমি একপলক সবার দিকে তাকালাম ৷ সবার চোখে পানি ৷ এক মূহুর্তও দাঁড়ালাম না আর দৌঁড়ে বাহিরে চলে এলাম ৷ আশ্চর্য ভাবে আজ অরূপের চোখেও পানি দেখেছি আমি ৷ কিন্তু এটা করুনা ছাড়া আর কিছুই না ৷ আমি গাড়িতে উঠে বসলাম ৷ কিছুক্ষনপর তুহিন গাড়িতে বসে এয়ারপোর্টের দিকে গাড়ি নিয়ে যেতে লাগলেন ৷





শ্রেয়া বাড়ি থেকে চলে যাবার পর অরূপের মা মায়ার গালে একেকটা থাপ্পর মারতে লাগলো ৷ অরূপের বাবা তাকে মায়ার কাছ থেকে সরিয়ে নিলেন ৷ অরূপ চিৎকার করে বলে উঠলো,,,,,,,,,,,,

“বেরিয়ে যাও এই বাড়ি থেকে ৷”

মায়া অবাক হয়ে তাকালো অরূপের দিকে ৷ অরূপ মায়ার হাত ধরে বাড়ি থেকে বের করে দরজা লাগাতে গেলেই উপর থেকে অাকাশ বলে উঠলো,,,,,,,,,,

“সবটা না জেনেই ওকে এভাবে ছেড়ে দিবি? এভাবে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার আগে সবার তো আরো একটা হিসটোরি জানা প্রয়োজন না? এই ভাবে একে ছেড়ে দিলে তো ও আরো অনেকের জিবন নষ্ট করে দিতে পারে ৷ তাই না?”

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

(অরূপ আর শ্রেয়ার কিন্তু বিয়ে হয়েছে ৷ শ্রেয়া ডিভোর্স দিলেও অরূপ কিন্তু এখনো দেয় নি ৷ আবার তুহিন শ্রেয়াকে পচ্ছন্দ করলেও শ্রেয়া কিন্তু তুহিনকে শুধু বন্ধু ভাবে ৷ অরূপ ভুল করেছে ভুলের শাস্তিও পাবে ৷ এখন আপনারা বলুন বিয়ের মতো পবিত্র সম্পর্কটা ভেঙ্গে দিয়ে শ্রেয়ার সাথে তুহিনকে মিলিয়ে দিব? একটা সম্পর্ক জোড়া যত সহজ ভাঙ্গা কিন্তু ততোটাও সহজ না ৷ গল্পের ইন্ডিংটা আপনাদের মতামতের উপর ভিত্তি করে করবো ৷ যদিও আমি ভেবে রেখেছি যে কি করবো ৷ তবুও সবাই বলবেন যে আপনারা কি চান?)

চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

(অনেকটুকু ক্লিয়ার করেছি আজ বাকিটুকু আবার আগামীকাল ৷ ফোনের স্ক্রিনের দিকে বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকতে পারি না আবার বেশিক্ষন ফোন দেখলে মাথা ব্যাথা করে তাই এর থেকে বড় করে দেওয়া সম্ভব হলো না ৷ কাল দুটো পর্ব দেয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here