ভালোবাসাকে দিলাম ছুটি 💔 পর্ব ২

#ভালোবাসাকে_দিলাম_ছুটি
#Ariful_Islam_Akash
#২য় পর্ব……..

তুলি আমাকে জোর করে বাথরুমে ঢুকিয়ে দিলো। আমি দরজা বন্ধ করতে করতে দেখি তুলি আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। আমার একবারের জন্য মনে হলো ওই হাসির মাঝে হারিয়ে যাই।

বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখি তুলি বিছানার উপর বসে মোবাইল টিপছে। আমাকে দেখে বললো,
— তারাতাড়ি রেডি হয়ে নিন তো, খুব খুদা লেগেছে নাস্তা করতে হবে।

আমি আয়নার সামনে দাড়িয়ে মাখায় চিরুনী করতে করতে বললাম,
— তো তুমি যেয়ে নাস্ত করে নিলেই পারতে, আমার জন্য কে অপেক্ষা করতে বলেছে?

তুলি আয়নার দিকে তাকিয়ে বললো,
— যার জন্য করলাম চুরি সেই বলে চোর?
— এই বিয়ে হতে না হতেই তুমি কার কি চুরি করছো? এক্ষুনি ফিরিয়ে দিয়ে এসো বলছি । যানাযানি হয়ে গেলে কিন্ত মানসম্মান কিছুই থাকবে মান।
— আমি বুঝতে পারছি না, আপনি কি বোকা? না বোকা সাজার অভিনয় করছেন?

আমি তুলির দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিয়ে বললাম,
— যে টা মনে হয় ভাবতে পারো।
— এখন ভাবা- ভাবির সময় নেই। চলুন তো।

তুলি বিছানা থেকে উঠে এসে আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। যখন সিড়ি দিয়ে নিচে নামতে ছিলাম সবাই হা করে আমাদের দিকে তাকিয়ে ছিলো। আমি আর তুলি একটা সোফায় গিয়ে বসতেই তিন্নি এসে আমার পাশে বসে বললো,
— ভাইয়া কয়টা বাজে? সারারাত ঘুমাও নি নাকি? সকালে ঘুম ভাঙতেই চাইছিলো না।

তিন্নির কথা আমি বুঝতে পারলাম না তুলির দিকে তাকিয়ে দেখি মেয়েটা বেশ লজ্জা পাচ্ছে। তখন আমি বুঝতে পারলাম তিন্নির কথা। আমি তিন্নিকে বললাম,
— আবারো পাকনামী হচ্ছে না? এটকা থাপ্পরে সব গুলো দাত ফেলে দিবো।
— ধুর, ভাইয়া তুমি কি চর থাপ্পর ছাড়া অন্য কথা বলতে পারো না?

এক তিন্নির জ্বালায়ই মরে যাওয়ার মত অবস্থা তার উপরে আবার কয়টা ভাবি এসে যোগ হলো। ভাবিদের কথা আমি এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করে দিলেও তুলির দিকে তাকিয়ে দেখি মেয়েটা লজ্জায় একবার বেগুন, আরেকবার টমেটোর রং ধারন করছে।

আমরা বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। তখন আম্মু সবাইকে নাস্তা করার জন্য ডাক দিলো। নাস্তার টেবিলে আব্বু আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
— আকাশ, খাওয়া শেষ হলে তুমি একবার আমার রুমে এসো।

আমি বুঝতে পারলাম আব্বু জরুরী কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলবো। আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলাম। নাস্তা শেষ করে আব্বুর রুমে যেয়ে দেখি বিছানার উপর বসে আছে, আম্মু কাপর ভাজ করে আলমারিতে রাখছিলো। আমি বললাম,
— আব্বু কিছু বলবে?
— হ্যাঁ, এখানে এসো বসো।

আমি আব্বুর সামনে বসে পড়লাম। আব্বু বললো,
— তৌফিক মানে তুলির বাবা আমারা স্কুল জিবন থেকে একে অপরের বন্ধু। তৌফিক আমার খুব ভালো বন্ধু, আর তুলিও অনেক ভালো লক্ষী একটা মেয়ে। অনেক আগে থেকেই আমাদের ইচ্ছা ছিলো বন্ধত্বর সম্পর্কটাকে আত্নীয়তায় রুপান্তর করা। এবং সেই আশা পূণ্য হয়েছে। তুলি ওর বাবা মায়ের কাছে খুব আদরে বড় হয়েছে, আমি তৌফিককে কথা দিয়েছি তুলি আমাদের কাছে একদম মেয়ের মত থাকবে।আমি আশা করছি আমার বন্ধুকে দেওয়া কথা রাখতে তুমি আমাকে সাহায্য করবে। আমি চাইবো মন খারাপের হাওয়া যেনো কখনোই তুলির বারান্দায় না আসে। কখনো যেনো তুলির চোঁখ থেকে এক ফোটা জল না ঝরে। তুলির যেনো কখনো মনে না হয় সে শশুড় বাড়িতে আছে। আমরা শশুর – শাশুড়ি হতে চাই না, বাবা মা হতে চাই। বুঝতে পারছো?

— জি।

— একটু পর তুলিদের বাড়ি থেকে লোকজন আসবে। সবার সাথে কথা বলবে, সব সময় হাসি খুশি থাকবে। আর তৌফিক বলেছিলো আজ তোমাকে আর তুলিকে নিয়ে যাবে। ওখানে তিনদিন থাকাবে তারপর বাড়িতে আসলেই আমরা ঢাকা চলে যাবো। তো রেডি হয়ে নিও।

আমা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিলাম। আব্বু বললো,
— ঠিক আছে এখন নিচে যাও। রান্নার ওখানে তোমার চাচ্চু, মামা আছে তাদের একটু সাহায্য করো।

আমি আব্বুর রুম থেকে বের হবার সময় একবার আম্মুর দিকে তাকালাম। আম্মু মুচকি মুচকি হাসছে। আমার মনে হলো আম্মু মনে মনে বলছে,
— এবার তো ঠিকি সোজা হয়ে গেছিস, দেখি বাবার সামনে লাফালাফি কর না একটু ।

রাতে মশাদের ভালোবাসায় একটুও আরামের ঘুমাতে পারি নি। এখন ঘুমাবো এই আশা নিয়ে নিজের রুমে আসতেই বাংলা সিনেমার বাপ্পারাজের মত একটা ছ্যকা খেয়ে উঠলাম। তুলি বিছানায় বসে আছে আর তাকে ঘিরে বসে আছে খালাতো,চাচাতো, মামাতো,ফুফাতো যত বোন আর ভাবি আছে সব গুলো। আমার মনে হলো রুমের মধ্যেই যেনো এবারের বৈশাখি মেলা বসেছে। আমার দিকে তাকিয়ে সায়মা ভাবি বললো,
— কি ছোট বর, বউ কে ছাড়া থাকতে পারছো না, না কি। কই আমাদের প্রতি তো এর এক ভাগ ভালোবাসাও ছিলো না। এক রাতে কি এমন যাদু করলো?

— ভাবি ফাজলামো করো না তো, সোজা রুম থেকে বের হও। সারারাত ঘুমাতে পারি নি, এখন একটু ঘুমাবো।

আমার কথা শুনে সব গুলো একসাথে হেসে উঠলো। মনে হয় আমি কোনো জোকস বলেছি। রিমা ভাবি বললো,
— আহারে আমার বাচ্চা বড়টা সারা রাত ঘুমাতে পারে নি। তো কি এমন করলে সারারাত যে একটুও ঘুমাতে পারো নি?

এক এক জন একেক ধরনের কথা বলতে শুরু কললো। আমার মনে হলো এখানে থাকলে মান সম্মান কিছু থাকবে বলে মনে হয় না। আমি ডেসিনটেবিলের উপর থেকে মোবাইলটা নিয়ে এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। বাসার সামনে উঠানের এক কোনো রান্নার কাজ চলছে। মাংস রান্নার ঘ্রান নাকে আসতেই জিবে জল চলে এলো। আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম মাংসোর পাতিলের দিকে। চোঁখ দিয়ে দেখছিলাম আর মন দিয়ে খাচ্ছিলাম। আমাকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মেজ চাচ্চু বললো,
— এমন হা করে তাকিয়ে আছিস কেনো?
— খাওয়ার জিনিসের দিকে তাকিয়ে থাকবো না তো কিসের দিকে তাকিয়ে থাকবো।
— তাকিয়ে থাকতে হবে না, খেতে চাইলে বল এনে দেই।
— এটা আবার বলতে হয়? যাও নিয়ে এসো।

চাচ্চু একটা প্লেটে করে মাংস নিয়ে এলো। আমি একটা চেয়ারে বসে খাওয়া শুরু করলাম। আহ এর মত সুখ বোধহয় পৃথিবিতে নাই। মনের সুখে খাচ্ছিলাম তখন আব্বু কোথা থেকে এসে সামনে দাড়িয়ে বললো,
— তোমাকে পাঠালাম কাজে সাহায্য করার জন্য। আর তুমি এসে খেতে বসে গেলে?

আমি কিছু বলার আগেই চাচ্চু বললো,
— ভাইজান এত কাজের লোক থাকতে ও কি সাহায্য করবে। তারচেয়ে খাচ্ছে খাক।

আব্বু চলে যেতেই আমি আবারো খাওয়া শুরু করলাম। হঠাৎ খাওয়ার মাঝখানে ফোনটা বেজে উঠলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখি কথা ফোন করেছে। আমি একটরো মাংস মুখে দিয়ে ফোন রিসিভ করলাম। আমি হ্যালো বলতেই, ওপাশ থেকে কথা বললো,
— কি হয়েছে আকাশ, তুমি কোথায়? এতবার ফোন করলাম তুমি ফোন রিসিভ করো না কেনো? সেদিন ফোন করে কোনো কথা না বলে শুধু কান্না করলে। তারপর এতবার ফোন করলাম আমি তুমি রিসিভ করো নি কেনো? কি হয়েছে বলবে প্লিজ।
— কি হয়েছে সেটা পড়ে বলবো, এখন তুমি বলো মাংস খাবে। গরম গরম গরুর মাংস। আহ কি স্বাদ।

— মাথা ঠিক আছে তোমার? কি সব বলছো, গরুর মাংস, স্বাদ। এসব কি হ্যা?

— আমি তো বিয়ে খাচ্ছি তাই বললাম।

— সেটা বললেই তো হয়। কার বিয়ে?

— আমার বিয়ে।

— মানে? তুমি কি আমার সাথে ফাজলামো করছো? একে তো দুদিন ফোন করো নি। আমি এতবার ফোন করেছি রিসিভ করো নি। যানো কতটা টেনশনে ছিলাম আমি। তারপর আবার ফাজলামী করছো?

— আমি মোটেও ফাজলামি করছি না। সত্য কথাই বলছি। যানো বাবা আমাকে জোর করে একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। আমার খুব কষ্ট হচ্ছিলো। তোমার কথা মনে পড়ছিলো বারবার। কিন্ত এখন খুব ভালো লাগছে। গরম গরম গরুর মাংসোর থেকে তো আর প্রেমের বিরেহ বড় নায়। তাই না।

— আকাশ তোমার মাথা ঠিক নেই। কি সব আবল তাবল বকছো। মাথা ঠিক করে আমাকে ফোন দিবে। অসহ্য।

কথাটি বলেই কথা ফোন কেটে দিলো। আমি আবারো খাওয়াতে মনোযোগ দিলাম। একটু পর আব্বু এসে একটা হুংকার ছাড়লো,
— তুমি এখনো খাচ্ছো? কোনো কান্ডজ্ঞান নেই তোমার? একটু পর তুলিদের বাসা থেকে লোকজন চলে আসবে। যাও গিয়ে রেডি হও।

আমি ধমক শুনে উঠে দাড়ালাম। প্লেটে এখনো ৩ পিছ মাংসো বাকি আছে। আমার মনে হলো মাংসোর টুকরো তিনটি আমার দিকে তাকিয়ে বলছে, ” কিরে খাদক, এবার খা দেখি আমাদের। ” আমি বড় টুকরো টা তুলে নিয়ে খেতে খেতে বাড়ির ভিতরে চলে এলাম। পুরো হাতে মাংসোর তেল আর ঝোল লেগে রয়েছে। হাতটা ধোবার জন্য কিচেনে যাবো তখনই দেখি সায়মা ভাবি নতুন শাড়ি পড়ে, সাজগোজ করে এদিকেই আসছে। শয়তান এসে ঠাস করে একটা বুদ্ধি দিয়ে চলে গেলো। সায়মা ভাবি আমার কাছে আসতেই আমি আমার হাতটি ভাবির শাড়িতে মুছে, গালের সাথে ঘসে দিলাম। ভাবি ২ সেকেন্ডের মধ্যে বুঝতে পারলো কি হয়েছে। ভাবির কান দিয়ে গরম ধোয়া বের হতে লাগলো। ভাবি আকাশ বলে চিৎকার দিতেই আমি এক দৌড়ে রুমে এসে বাথরুমে ঢুকে পড়লাম।

বাথরুম থেকে বের হতেই আমার চক্ষু চরকগাছ। মুখটা এমনিতেই হা হয়ে গেলো। তুলি ডেসিন টেবিলের সামনে দাড়িয়ে শাড়ি পড়ছে। এক সেকেন্ডের জন্য আমার চোঁখ চলে গেলো তুলির উনমুক্ত পেটের দিকে। তুলির সাথে চোঁখা-চোখি হতেই আমি বাথরুমে ঢুকে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলাম। না চাইতেও বারবার দৃশ্যটা চোঁখের সামনে ভাসতে লাগলো।

টকটক আওয়াজে ঘোর ভাংলো। বাথরুমের দরজায় কেউ নক করছে। আমি দরজা খুলে বের হতেই তুলি বললো,

— আপনি এখানে লুকিয়ে আছেন কেনো? লুকিয়ে লুকিয়ে আমার শাড়ি পড়া দেখছিলেন কেনো?
— আমি লুকিয়ে থাকবো কেনো? আমি তো বাথরুমেই ছিলাম বের হতেই তো চোঁখ পড়লো।
— চোঁখ পড়লো মানে?
— কিছুনা, যাই হোক এটা আমি ইচ্ছা করে করি নি। একসিডেন্ট।
— মেনে নিলাম এটা একসিডেন্ট। আপনাকে সায়মা ভাবি খুজতেছে। যান দেখা করে আসুন।
— পাগল না কি? এখন ভাবি আমাকে পেলে একদম মেরেই ফেলবে।
— কেনো কি করেছেন?
— পরে বলবো।

একটুপর রুম থেকে বের হতেই সায়মা ভাবি আমার কান ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।আমি বললাম,
— বউ ছেড়ে দাও না,ব্যথা পাচ্ছি তো।
— ছোট বর ব্যথার তো কিছুই করি নি এখনো চলো, এবার আমার কাপর কেচে দিবে। তারপর, নিজে হাতে আমাকে আবার আগের মত করে সাজিয়ে দিবে।
— সেটার জন্য তো ভাইয়া আছে, তাই না?
— তা আছে, তবে আজকের কাজটা ছোট বর করবে।

ভাবির সাথে কথা বলছিলাম, ভাবি আমার কান ধরে ছিলো। তখন কে যেনো চেচিয়ে বললো, মেহমান এসে গেছে। ভাবি আমার কান ছেড়ে দিয়ে বললো,
— যাও মাফ করে দিলাম। তবে হিসাবটা তোলা রইলো।

আমি আর তুলি সোফায় পাশাপাশি বসে আছি। তুলির বাবা আসতেই তুলি আংকেলকে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করলো, যেমন কাল রাতে আমাদের বাসায় আসার সময় কান্না করেছিলো। আমি কান্না করার মত তেমন কোনো বিয়ষ দেখতে পেলাম না। কিন্ত তুলির কান্না করা দেখে মনে হলো কত বছর পর বাবাকে দেখছে। কান্নাকাটি পর্বের পর, খাওয়া দাওয়ার পর্ব শুরু হলো।

বিকাল আমি আর তুলি সবার সাথে রওনা দিলাম তুলিদের বাসার উদ্দেশ্যে।

চলবে…….?

(বিঃদ্রঃ ভুল তুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। যতটুকু লেখতে চেয়ে ছিলাম সময়ের অভাবে লেখা হয়ে উঠেনি। আগামী পর্বে বড় করে দেওয়ার চেষ্টা করবো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here