ভালোবাসাকে দিলাম ছুটি 💔 পর্ব ৩

# ভালোবাসাকে_দিলাম_ছুটি
# Ariful_Islam_Akash
# ৩য় পর্ব……

বিকালে আমি আর তুলি সবার সাথে রওনা দিলাম তুলিদের বাসার উদ্দেশ্যে। তুলিদের বাসায় পৌছাতে ৭ টা বেজে গেলো। গাড়ি থেকে নামতেই ছোট বড় সব ধরনের মানুষ এসে ভীর করলো আমাদের ঘিরে। তুলি একটা মহিলাকে জরিয়ে ধরে আবারো কান্না শুরু করলো। আমি খেয়াল করে দেখলাম এটা আন্টি মানে তুলির আম্মু। চারদিকে হৈইচৈই পড়ে গেলো। আমি শিহরিত নয়নে দেখতে লাগলাম তুলির কান্না। কিছুতেই আমার মাথায় এলো না, মেয়েরা হঠাৎ করেই কান্না করে কি ভাবে। স্কুলে স্যার যখন আমাদের মেরে বেত ভেঙে ফেলতো তবুও আমরা কান্না করা তো দূরের কথা একটু শব্দও করতাম না। আর যখন মেয়েদের একটা বেতের বারি দিত তখন কেউ কেউ হাউমাউ করে কেদে উঠতো। মেয়েদের কান্না করা দেখেই আমরা আমাদের ব্যথা ভুলে যেতাম। তুলির কান্না শেষ হলে আমি আন্টিকে সালাম করলাম। তারপর সবাই আমাদের বাসার ভিতরে নিয়ে এলো।

আমি আর তুলি ডয়িংরুমে সোফায় বসে ছিলাম তখন একটা
মেয়ে এসে আপু বলে তুলিকে জরিয়ে ধরলো। তুলি বললো,
— কখন এসেছি, আর এতক্ষনে আপুর কথা মনে হলো তোর।

মেয়েটি বললো,
— মনে তো অনেক আগেই হয়েছে। কিন্ত সবাই যেভাবে ভীর করে রাখছিলো তখন তো আমাকে খুজেই পেতে না। তাই ভাবলাম যখন ফ্রি হবে আমি তখনই এন্টি নিবো।

তুলি মেয়েটাকে দেখিয়ে বললো,
— এ হলো তিশা আমার মোজ চাচ্চুর মেয়ে। নবম শ্রেণীতে পড়ছে।

তিশা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
—ভাইয়া, ছবির থেকে সামনা সামনি তুমি আরো বেশি সুন্দর।

— তুমি কি আমার ছবি দেখেছো?
— হ্যাঁ, আমি***

তিশা বলছিলো তখন তুলি তিশার মুখ চেপে ধরে বললো,
— অয়ন আব্বু।

তিশা থেমে গেলো। আমি ওদের কথাবার্তা কিছুই বুঝতে পারলাম না। তিশা বললো,
— ইশ আমার কপালে যদি এমন একটা বর থাকতো।

তুলি বললো,
— কেনো অয়ন কি ভেগে গেছে?
তিশা বললো,
— ভেগে যাবে মানে? মেরে হাড্ডি ভেঙে দিবো।

আমি বললাম,
— আমি কিন্ত কিছু শুনি নি।

তিশা লজ্জা পেয়ে গেলো। তারপর একদৌড়ে উঠে চলে গেলো।

একটু পর আন্টি এসে বললো,
— কিরে এখনো বসে আছিস কেনো? আকাশ কি নিয়ে রুমে যা। এতদূর থেকে আসছিস, ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়। আমি খাবার দিচ্ছি।

আন্টি চলে গেলো। আমি তুলির সাথে ওর রুমে চলে এলাম। রুমে এসে তুলি বললো,
— আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি আপনার কাপর বের করে রাখছি ব্যগ থেকে।
— তার আগে তুমি আমাকে একটা কথা বলো তো? আমাদের বাসায় কি তোমাকে দিয়ে ছাই তুলানো হয়েছে? অথবা, গরুর গোবর ফেলানো হয়েছে?
— বুঝলাম না, হঠাৎ এধরনের কথা বলছেন কেনো?
— যথেষ্ট কারন আছে। তুমি আগে আমার প্রশ্নর উত্তর তাও।
— না
— তাহলে বাবা,মাকে জরিয়ে ধরে এমন মরা কান্না কাদলে কেনো? আমার তো মনে হলো তোমাকে কেউ মেরেছে, তুমি এখন বিচার দিবে।
— আপনি কি বাথরুমে যাবেন না আমি যাবো? আমি গেলে কিন্ত ২ ঘন্টার আগে বের হবো না।
— ঠিক আছে আমিই যাচ্ছি।

ফ্রেশ হয়ে এসে বিছানায় বসে ছিলাম। তুলি ব্যগ থেকে কাপর গুলো বের করে আলমারিতে রাখছিলো। তখনই আন্টি এসে খাবারের জন্য ডেকে গেলো। আমি আর তুলি নিচে যেয়ে দেখি সবাই আগে থেকেই বসে আছে। খাবারের আইটেম দেখেই তো আমার হার্ডবিট বেরে গেলো। আমি বসতেই আমার সামনে খাবারের পাহাড় এনে দার করালো। জিবনের প্রথমবার নিজেকে রামায়ণের রাক্ষস বলে মনে হতে লাগলো। তবুও ইচ্ছা করলে সব গুলোই পেটে চালান করে দিতে পারি কিন্ত ভদ্রতা বলে একটা কথা আছে। তারপর আবার নতুন জামাই বলে কথা। শশুড় বাড়িতে যেমন সুবিধা তেমনি বেশ কয়টি অসুবিধাও আছে। তারমধ্যে বড় একটি অসুবিধা হলো ইচ্ছা হলেই মন খুলে খাওয়া যায় না। সামনে শতরকমের খাবার থাকার শর্তেও পেটে খুদা নিয়ে বলতে হয় ” আর পারবো না, “। অব্যশ আমার পেট ততটা খালিও নেই। বাসাতেই একদম গুদাম ভরে ফেলছি। তারপর ও ভদ্রতা বজায় রেখে সবর থেকে বেশি খেয়ে ফেললাম। খাওয়া শেষ করে তুলির বাবা যদিও শশুড় হয় আমি আগে থেকে আংকেল বলে ডাকি তাই এখনো সেই নীতিই প্রচলন আছে। আংকেলের সাথে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে
রুমে আসতেই তিশা এলো,
— কি ব্যপার বউয়ের বোন? কিছু খুজছো?
— একটা বর।
— খুব জরুরি না কি?
— হয়ত।
— আচ্ছা বসে বসে বোরিং হবার চেয়ে বরং গল্পকরি।
— হুমম দারুন আইডিয়া।
— তাহলে শুরু করো।
— আমি কেনো? প্রথমে তুমি।
— লেডি ফাষ্ট বলে একটা কথা আছে। তাছাড়া আমি তোমার কাছে স্পেশাল একটা গল্প শুনতে চাইছি?
— সেটা আবার কি?
— অয়নের ব্যপারটা।

আমার কথা শুনে তিশা লজ্জা পেয়ে গেলো। আমি বললাম,
— এই যে লজ্জা পেয়ে যাচ্ছো। তারমানে কাহীনিটা বেশ মজার, বলো শুনি। আর কখনো সমস্যা হলে তো আমাকেই লাগবে। নিজের বাবাকে তো বলতে পারবে না, বাবা আমি একটা ছেলেকে ভালোবাসি । তখন ব্যবস্থাটা আমাকেই করতে হবে। তাই আমাকে পর ভাবার কোনো কারনই নেই।
— ঠিক আছে বলছি। এই বিষয়টা শুধু আপু যানে। আর তোমাকে বলছি কারন আমার তোমাকে বেশ ভালো লেগেছে।

তিশা ওর লাভ স্টোরি বলতে শুরু করলো। আমি মনোযোগী শ্রোতার মত শুনতে লাগলাম। তিশার গল্প শেষ হতেই
আমি আর তিশা হেঁসে ফেললাম। তিশা বললো,
— চলো লুডু খেলি।
— লুডু আছে? যাও নিয়ে এসো।
— নিয়ে আসবো মানে? তোমার মোবাইলে লুডু নেই?
— আছে, কিন্ত মোবাইলে খেলবো না। মোবাইলের টায় মজা নেই।
— চিট করতে পারবে না বলে বলছো মজা নেই। ঠিক আছে ফোনটা দাও একটা ফোন করতে হবে।

আমি তিশাকে ফোনটা দিলাম তিশা একটা নামবার তুলে ফোন করলো। একটু পর রিসিভ হতেই তিশা বললো,
— আমি তিশা বলছি, কই আছো তুমি এখন?

ওপাশে কি বললো ঠিক শুনতে পেলাম না, তিশা বললো,
— পাচঁ মিনিটের মধ্যে একটা লুডুর কোড নিয়ে আমার বাসার নিচে আসবে। পাচ মিনিটের যদি বেশি সময় লাগে তাহলে কিন্ত খবর আছে।

কথাটি বলেই তিশা ফোন রেখে দিলো। আমি বললাম,
— বেচারাকে কি সব সময় এমনই প্যরায় রাখো।

— প্যরায় না রাখলে মাথায় উঠে যায়। সেই জন্য সব সময় একটু আতংকে রাখতে হয়। তাছাড়া অয়ন একটু বোকা টাইপের ছেলে। আর এই বিষয়টা আপু ছাড়া আর কেউ যানে না। আগেই বলেছি তোমাকে আমার খুব ভালো লেগেছে তাই তোমাকে বললাম।

আমি আর তিশা আবারো হেসে উঠলাম। তখন তুলি রুমে এসে বললো,
— কি ব্যপার খুব হাসা- হাসি হচ্ছে দেখি। আমাকেই একটু বলুন শুনি, কি নিয়ে এত হাসা হাসি।

তিশা বললো,
— তোমাকে বলা যাবে না। পাইবেট কথাবার্তা।

তুলি বললো,
— বাবা একদিনেই আমি পর হয়ে গেলাম?

তখনই ফোনটা বেজে উঠলো, তিশা বললো
— আমি লুডু নিয়ে আসছি।

একটু পর তিশা লুডুর কোড নিয়ে ফিরে এলো। আমি বললাম,
— আর একজন হলে ভালো হত। অয়ন কি চলে গেছে?

আমার কথা শুনে তুলি অবাক হয়ে গেলো আর তিশা লজ্জা পেয়ে গেলো। আমি বললাম,
— দুই বোন তো দেখি অবাক আর লজ্জার প্রতিযোগিতা করছো।

একজন মানুষের অভাবে জোরা জোরা না খেলে একা একাই খেলতে হলো। ৯ বার খেলেও প্রতিবার আমিই প্রথম হলাম। অব্যশই সেটা সৎ ভাবে না, আমি এমন ভাবে চিটিং করেছি ওরা ধরতেই পারে নি। যখন ছক্কা পড়ার পর আবারো পাচ পড়লো আমার ১১ ঘর টানার কথা কিন্ত আমি ১৫ ঘর টানলেও কেউ ববুঝতে পারলো না। প্রতিবারই তিশা আর তুলির গুটি আমার কাছে মারা পড়েছে। অবশেষে তিশা রাগ করে উঠে চলে গেলো। তুলি বললো ঘুম পাচ্ছে। কিন্ত তখনই বাধলো একটা বিপত্তি। তুলির রুমে সোফা নেই। আমি আর তুলি মিটিংয়ে বসলাম কি করা যায়। অবশেষে সিদ্ধান্ত হলো বিছানায় ঘুমানোর। দুজনেই বিছানার দু পাশে দু দিক হয়ে শুয়ে পড়লাম।

অন্ধকার রুম, একই বিছানায় দুজন বিপরিত লিঙ্গের মানুষ। আমার পাশে একটা মেয়ে শুয়ে আছে যে আমার বউ। সে এখন আমার জন্য হালাল, আমি চাইলেই নিজের ইচ্ছা পূরণ করতে পারি। ডুব দিতে পারি ভালোবাসার সাগরে। কিন্ত তুলির প্রতি কেমন যেনো একটা অসস্তী কাজ করে। তুলি হঠাৎ করে সব কিছু স্বাভাবিক ভাবে নিচ্ছে কি করে আমি এখনো বুঝতে পারছি না। তুলির সাথে আমিও স্বাভাবিক ব্যবহার করলেও কখনোই তুলিকে নিয়ে বেশি কিছু ভাবতে পারি না। তুলি শুধু আমার বাহিরের মানুষটার সাথে রয়েছে। আমার মনের ভিতরটা জুরে রয়েছে শুধুই কথা। আমি সত্যই কথাকে ভালোবাসি, মন থেকে ভালোবাসি। এমনটা নয় যে তুলি মেয়েটা সুন্দর নয়। যথেষ্ট সুন্দরী তুলি, কিন্ত আমার কাছে কথাই হলো শ্রেষ্ঠ। কথার সাথে কখনো কাউকে মিলাতে পারবো না। কথার কথা মনে পড়তেই বুকের ভিতর ব্যথা শুরু হলো। মনের কষ্টটা অনুভব করতে পারলাম। আমি বিছানা থেকে উঠে ফোন নিয়ে বারান্দায় চলে গেলাম। ঘড়িতে রাত ১ টা বাজে আমি কথাকে ফোন দিলাম। দুইবার রিং হতেই কথা ফোন রিসিভ করে বললো

— আকাশ এতক্ষনে তোমার ফোন করার সময় হলো? তুমি কই আছো? কি করছো? সজলের কাছে শুনলাম গ্রামে গেছো। একবার আমাকে বললেও না। পরে ভাবলাম নিশ্চয় কোনো জরুরী কাজে গ্রামে গেছো। কাজ শেষ হলেই আমাকে ফোন করবে। তোমার সাথে কথা না বলতে পেরে একদম অস্থির হয়ে আছে ভিতরটা। আমি অপেক্ষা করছি কখন তুমি ফ্রি হয়ে আমাকে ফোন করবে। কি হয়েছে আকাশ? তুমি ঢাকায় কবে আসবে?

— সামনের সপ্তাহেই চলে আসবো।

— কি হয়েছে? তোমার কন্ঠটা এমন লাগছে কেনো? কোনো সমস্যা হয়েছে? সব কিছু ঠিক আছে তো?

— কোনো কিছুই ঠিক নেই কথা, কিছুই ঠিক নেই। সব কিছু উল্টা পাল্টা হয়ে গেছে। আমার বিয়ে হয়ে গেছে।

— মানে? আকাশ একদম মজা করবে না প্লিজ। আমি অনেক টেনশনে আছি।

— আমি একটুও মজা করছি না, সত্য কথা বলছি।

তারপর আমি সবকিছু খুলে বললাম কথাকে। আমি বুঝতে পারলাম কথা কান্না করছে। হঠাৎ কথা ফোন কেটে দিলো। আমি সাথে সাথে ফোন করলাম ফোনের মধ্যে একটা মেয়েলী কন্ঠ বলেতে লাগলো ” আপনার ডায়াল কৃত নাম্বারে এই মুহুতে সংযোগ প্রদান করা সম্ভব হচ্ছেনা, দয়া করে ** “”

আমি বেশ কয়বার ফোন করলাম কিন্ত কথার ফোন বন্ধ। অজানা একটা ভয় এসে মনে বাসা বাধতে লাগলো। জানিনা কথা কি না কি করে বসে। কথার কিছু হয়ে গেলে আমি বাচঁতে পারবো না। কথা নামের মেয়েটাকে যে আমি বড্ড বেশি ভালোবাসি।

চলবে…..?

( বিঃদ্রঃ ভুল তুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আগামী পর্বে একটা ধামাকা আছে। গল্পটি কেমন লাগছে অব্যশই যানাবেন। আপনাদের অনুপেরণাই আমার আগামী দিনের পথ চলা)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here