#ভালোবাসাটা_ঘৃণার
#Love_OR_Revenge
লেখিকা : আনিশা সাবিহা
পর্ব ৫
আয়াশ খানিকটা অবাক চোখে সবার দিকে তাকালো। হেঁটে হেঁটে ঘুরে ঘুরে সবাইকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে নিলেন উনি। অতঃপর হেসে দিয়ে বলে উঠলেন,,,,,
–“এরেস্ট আর আমাকে কিন্তু কিসের দায়ে? কি করেছি আমি? আমার দোষটা কি?”
পুলিশ অফিসারদের চুপ থাকতে দেখে নিজেই বলে উঠলাম,,,,
–” আপনি একজন গ্যাংস্টার। শুধু তাই নয় আপনি সেদিন সবার চোখের আড়ালে পার্টির ডিস্কে গ্যারেজের দিকে একজন লোকের থেকে রিভলবার নিয়েছেন। যেটা বেআইনি। সেকারণেই আমি পুলিশে কমপ্লেইন করেছি।”
–“ওহো! তাহলে তুমি কালকে আমাদের কথা শুনছিলে।” (ভ্রু কুঁচকে)
আমি শক্ত গলায় বলে উঠলাম……
–“শুধু শুনেছি সেটাই নয়। তার সাথে ভিডিও করে রেখেছি আপনার কুকীর্তি সবার সামনে আনার জন্য।”
আমার কথায় কিছুটা ভাবুক হয়ে পড়লেন আয়াশ। আমি অফিসার দের দিকে তাকিয়ে বললাম….
–“এরেস্ট হিম।”
অফিসার আমার কথাতেও নড়লেন না। ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকলেন। আমি বিরক্তির দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকালাম। কিছু একটা বলার আগেই আয়াশ এগিয়ে এসে নিজের দু হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে উঠলেন……
–“কি হলো? কথা কানে যায় না আপনাদের? এরেস্ট মি!!”
আয়াশের কথায় খানিকটা বিষম খেলাম বটে। কখনো শুনিনি অপরাধী নিজে থেকে ধরা দেয়। আজ পর্যন্ত যত অপরাধী ধরা পড়েছে সবাই শুধু নিজেকে ছাড়ানোর টালবাহানা খুঁজেছে। কিন্তু এই লোকটা পুরোটাই উল্টো আচরণ করছেন। উনি কি সত্যিই ধরা দিতে চাইছেন নিজে থেকে নাকি এটা উনার কোন নতুন ফন্দি? আমাদের স্থির ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আয়াশ উত্তপ্ত গলায় বলে উঠলেন….
–“কি হলো সবাই এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? আমি তো এরেস্ট করতে বললাম! হাজার হলেও আমার নিশাপাখি আমার বিরুদ্ধে প্রমাণ দিয়েছে। কত সাহস তার! এমনি এমনি তো তোমাকে আমি বাঘিনী বলে ডাকি না নিশাপাখি। ওয়েট এ মিনিট! এটাই কি আমার সর্বনাশ ছিল নিশাপাখি?” (আমার দিকে হেলে)
–“ঠিকই ধরেছেন এটাই আপনার সর্বনাশ। আমার হাতের প্রমাণ আজকে আপনাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলবে।”
আমার কথায় হা হা করে হেসে দিলেন আয়াশ। আমি সন্দেহি চোখে তার দিকে তাকালাম। উনি পুলিশ অফিসারের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে উঠলেন….
–“এটাই যদি তোমার করা আমার জন্য সর্বনাশ হয়ে থাকে তাহলে তো বলতে হয় তুমি আমার কিছুই করতে পারলে না। আমার কিঞ্চিৎ ক্ষতিও করতে পারলে না তুমি। যাই হোক। অনেক কথাবার্তা হলো এখন কাজের পালা। অফিসার, আমাকে এরেস্ট করুন।”
অফিসার কাঁপা কাঁপা হাতে আয়াশের কাছে হাতকড়া আনতেই আয়াশ ধমক দিয়ে বলে উঠলেন…
–“আরে অফিসার! আপনি না আইনের রক্ষাকারী? আপনার হাত এতো কাঁপবে কেন হ্যাঁ? দেখি দেখি সাহসীকতার সাথে হাতকড়া পরিয়ে দেন তো দেখি!”
অফিসার এবার খানিকটা সাহস নিয়ে এলেন মনে। শরীর ঝাড়া দিয়ে আয়াশের হাতে হাতকড়া পরিয়ে দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে আয়াশ হাত উঠিয়ে নিজের দুইহাত দেখতে লাগল। আমি এই সাইডে অন্যদিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমাকে অবাক করে দিয়ে অফিসার সহ টানতে টানতে আমার সামনে হাজির হলেন আয়াশ। দুধাপ পেছনে সরে গেলাম আচমকা। একনজরে আমার দিকে তাকিয়ে দৃঢ় কন্ঠে উনি যথাসম্ভব ধীরে বললেন….
–“২৫ দিন! শুধুমাত্র ২৫ দিনের দিন তোমার সাথে আমার বিয়ে হতে চলেছে সুইটহার্ট। সো বি রেডি।”
কথাটা বলে ঘুরে অফিসারের দিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বলে উঠলেন….
–“চলুন। নিয়ে চলুন আমাকে।”
অফিসার মাথা নাড়িয়ে উনার বাকি সঙ্গী সহ একে একে বেরিয়ে গেলেন।
আয়াশ তো চলে গেলেন। তবে আমার মনে ঢুকিয়ে দিয়ে গেলেন ভয়। আমি এখনো গেটের পানে তাকিয়ে আছি। আয়াশকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। প্রথমে হয়ত পুলিশ কাস্টারি তে রাখবে। আমার কাছে যে ইভিডেন্স আছে সেসবে নিঃসন্দেহে কোর্টে প্রমাণ হয়ে যাবে যে লোকটা ভয়ানক মাপের অপরাধী! তারপর না হলেও প্রায় ৫-১০ বছরের জেল খাটতে হবে উনাকে। এরপরেও এতোটা জোর গলায় কি করে বলে গেলেন উনি যে আজ থেকে ২৫ দিন পর উনার সাথে আমার বিয়ে হবে? হাউ? মাথা ফেটে যাচ্ছে চিন্তায়। তাই ভাবনা জিনিসটা মাথা থেকে বের করে দিলাম। হেলেদুলে বাইরে বেরিয়ে এলাম। আমার চোখে সামনে দিয়ে পুলিশ গাড়ি নিয়ে চলে গেলো। গাড়ি চলে যাওয়ার পর বাতাস আমার চুল উড়িয়ে দিয়ে মুখের সামনে এনে ফেলল। চুলগুলোর ফাঁক দিয়ে দেখতে পেলাম আয়াশের সেই ভয়াবহ লাল টকটকে চোখ। সেই চোখে রয়েছে পাগলামো সেই সাথে ভয়ঙ্কর রাগ। মাথা নাড়িয়ে চোখ বন্ধ করলাম। ভয় পেলে চলবে না! নিজে নিজেকে শান্তনা দিলাম। যে ওই লোকটা আমার আর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আমাকে ছুঁতে পর্যন্ত পারবে না। কথাগুলো ভেবে চোখ খুললাম। একটা অটো ধরে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে অটোতে উঠে পড়লাম। পড়ল স্বস্তির শ্বাস!
বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে মনে পড়ল আয়াশের সঙ্গে প্রথম দেখা। সেদিন ছিল পূর্ণিমার রাত। অন্যরকম পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। চারিদিকে মানুষ হৈ-হুল্লোড়ে মেতে উঠেছিল। সবার মুখে মুখে ছিল হাসি। বিয়ে বাড়িতে চারিপাশটা আলোতে ঝলমলে করছিল। আমিও সবার কাজের সঙ্গে তালে তাল মেলাচ্ছিলাম। হঠাৎ করে কোথা থেকে কি হয়ে গেল! তাও কয়েক মূহুর্তের মাঝে ঘটে গেল সবটা। আয়াশ চৌধুরী এন্ট্রি নিল জায়গাটায়। তা সঙ্গে এন্ট্রি নিল আমার জীবনে। আমার চোখের সামনে কোনোরকম কারণ ছাড়ায় শুট করে দিল নববধূর বরকে। চারপাশে হাহাকারে ছড়িয়ে পড়ল। সবার অবস্থা যখন বড্ড খারাপ তখন আয়াশের চোখ পড়ল আমার দিকে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমার আশেপাশে ঘুরতে থাকলেন উনি। সেদিন উনাকে খুব করে কথা শুনিয়েছিলাম। অবাক করা বিষয় উনি আমার সাথে একটা কথাও বলেননি। বিমোহিত তাকিয়ে ছিলেন। মুখ থেকে একটা শব্দই বেরিছিলাম উনার। সেটা হলো ‘মায়াবিনী’। সেদিন ভয়ে ভয়ে চলে এসেছিলাম ওই ঘটনার পর বেশ কয়েকটা দিন ট্রমার মাঝে ছিলাম। জীবনে প্রথম চোখের সামনে কাউকে নির্মম ভাবে মারতে দেখলাম। কথাগুলো ভাবলেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠত। বাবা আর ভাইয়ার মক্তব্য ছিল আমি ভুল দেখেছি। ওটা আয়াশ চৌধুরী ছিলই না। অন্যকেউ ছিল। কিন্তু আমি জানি আয়াশ চৌধুরীই ছিল।
হঠাৎ কেউ আমার নাম ধরে চিৎকার দিয়ে উঠল। সাথে সাথে হকচকিয়ে নিজের ভাবনার রাজ্য থেকে বেরিয়ে এলাম। সামনে থাকা মানুষটাকে দেখে চোখটা চকচক করে উঠল আনন্দে এবং এক্সাইটমেন্টে! আমার বিষাদ মুখে ফুটে উঠল রাজ্যের হাসি। হাত মেলিয়ে দৌড়ে যেতে যেতে বলে উঠলাম….
–“রিদ্ধি আপু!”
কথাটা বলে আপুকে চেপে জড়িয়ে ধরলাম। সেই সাথে আপু আমার ভার সইতে না পেরে পিছিয়ে গেল। অতঃপর শব্দ করে হেসে আমাকেও জড়িয়ে ধরল। আমি আনন্দের ছন্দে বলে উঠলাম….
–“রিদ্ধি আপু, রিদ্ধি আপু, রিদ্ধি আপু। আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে!”
–“আরে বাবা হয়েছে থাম। আমার এই শুটকি মাছ মার্কা শরীরে আর চাপ দিস না।” (হেসে দিয়ে)
আমি রিদ্ধি আপুকে ছেড়ে দাঁড়ালাম। কিছুটা অভিমানী গলায় বললাম….
–“কত বছর পর তুমি আমার বাড়ি এলে বলো তো! সেই ৩ বছর আগে দেখা হয়েছিল। এর মাঝে আমাকে আর মনে পড়েনি তাই না? বড় বড় হতে সেলফিশ হয়ে গেছো।”
রিদ্ধি আপু আমার গাল টেনে বলে উঠল…
–“মোটেও না। আই এম দ্যা গ্রেট মহান রিদ্ধিশা রাহমান। আমি মহান ছিলাম মহান আছি এবং থাকব। আসলে কি বল তো বিয়ের এতো এতো প্যারা দেয় না ফ্যামিলি থেকে বিদেশ শেষ হওয়ার পর। তাই না পেরে ভাবলাম এখানে চলে আসি। যেমন ভাবা তেমন কাজ। চলে এলাম তোর কাছে।”
–“আহা রিদ্ধি আপু! তোমাকে দেখলে আমার পরাণ খানা জুড়ায়ে যায়। দিন যাচ্ছো এক্সট্রা সুন্দর হয়ে যাচ্ছো। না জানি কত গুলো প্রপোজাল পেয়ে গেছো। আর হ্যাঁ আমার গ্রেট শান্তশিষ্ট মি. ভদ্র কোথায়? আসেনি?”
রিদ্ধি আপু আমার কথায় হেসে দিল। সে কিছু বলার আগেই পেছন থেকে মি. ভদ্রের আওয়াজ পেয়ে বেশ এক্সাইমেন্ট নিয়ে তাকালাম। পকেটে হাত দিয়ে বেশ শান্তভাবে নামছেন মি. ভদ্র। আমি কোমড়ে হাত দিয়ে এগিয়ে যেতেই সে সিঁড়ি দিয়ে নেমে বলে উঠল…
–“আমাকে খোঁজাখুঁজি চলছিল বুঝি?”
–“তোমাকে খোঁজার কি আছে বলো তো। আই নো হাউ মাচ মিস ইউ ইউর সুইট সিস্টার (নিজেকে দেখিয়ে) তাই তুমি চলে এসেছো। না এলে কলার ধরে টানতে টানতে নিয়ে আসতাম।”
আমার কথায় শান্ত ভঙ্গিতে নিঃশব্দে হাসল মি. ভদ্র।
এই হলো মি. ভদ্র। তার আসল নাম আসিফ রাহমান। আমার একমাত্র খালামনির ছেলে এবং মেয়ে রিদ্ধি আপু আর মি. ভদ্র। তাহাকে মি. ভদ্র বলার যথেষ্ট কারণ এবং লজিক আমার কাছে উপস্থিত আছে। ছোট বেলা থেকে দেখে আসছি আসিফ ভাইয়াকে। আমার মনে হয় যদি কখনো কোথাও শান্তশিষ্ট ছেলেদের নিয়ে কম্পিটিশন হয় তাহলে আমি একশো পার্সেন্ট সিউর এই মি. ভদ্রই জিতবে। অলওয়েজ মুখচোখে একটা শান্তভাব লেগেই থাকবে। কখনো জোরে কথা বলতে বা জোরে শব্দ করে হাসতে পর্যন্ত দেখিনি আমি। এইসব গুন মিলিয়ে মি. ভদ্র!
দেরি না করে আসিফ ভাইয়া আর রিদ্ধি আপু হাত ধরে খুশি খুশি হয়ে বলে উঠলাম….
–“আই এম সো হ্যাপি। এতো কিছুর মাঝে তোমরা দুজনে খুশির মেলা হয়ে আসবে বুঝতেই পারিনি।”
আমার কথায় আপু আর ভাইয়া স্বস্তির হাসি দিল। পরমুহূর্তেই আমার সব আনন্দ বিলীন হয়ে গেল বাবার কথায়। বাবা রেগে মেগে আমার সামনে এসে দাঁড়াল। পিছু পিছু আমার নিজের ভাইয়া অর্থাৎ রিক ভাইয়ারও আগমন ঘটল। তারও চোখমুখ বেশ গম্ভীর। আমার সামনে এসে দাঁড়াতেই ভ্রু কুঁচকে তাকালাম আমি। উনার দৃষ্টি বলে দিচ্ছে আমি যেন কোনো বড় অপরাধ করে ফেলেছি। এবার বাবা রাগের সাথে বলেই উঠলেন….
–“আনিশা! কেন করেছিস তুই? বল। এসব করার কি কোনো দরকার ছিল?”
বাবারও কথায় খানিকটা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম। বাবা কি বলতে চাইছে কিছুই বুঝতে পারছি না আমি। শান্ত হয়ে বলে উঠলাম….
–“বাবা তুমি কি বলছো? কিছুই বুঝতে পারছি না।”
–“সত্যিই কি বুঝতে পারছিস না? বাকি বুঝতে চাইছিস না? আয়াশ চৌধুরীর সাথে কি করেছিস তুই?”
বাবার কথায় আবারও আরেকদফা ভ্যাবাচেকা খেলাম। সঙ্গে সঙ্গে স্বাভাবিক হয়ে প্রকোট গলায় বললাম…
–“ওই লোকটার সাথে যা হওয়া উচিত ঠিক তাই হয়েছে। যা করেছি বেশ করে…”
আমার কথা শেষ হওয়ার আগেরই থামিয়ে দিল ভাইয়া। আসিফ ভাইয়া আর রিদ্ধি আপু হা হয়ে দেখছে। আসলে ওরা বুঝতে পারছে না আসল বিষয়টা কি!
ভাইয়া ধমক দিয়ে বলে উঠল….
–“তোর কথার মানে কি? চিনিস তুই আয়াশ চৌধুরী কে? তোর জন্য আমাদের কি হতে পারে জানিস তুই? শেষমেশ পুলিশের হাতে আয়াশ চৌধুরীকে তুলে দিলি।”
ভাইয়ার ধমকানি সহ্য হলো না আমার। আমি তেতে বলে উঠলাম…
–“হ্যাঁ দিয়েছি। না দিয়ে কি করতাম? তোমাদের ওই লোকের সত্যিটা প্রতিনিয়ত বলার চেষ্টা করেছি। বোঝার চেষ্টা করেছো কেউ? আমার মধ্যে দিয়ে কি মেন্টাল প্রেশার ক্রিয়েট করত ওই লোকটা জানার চেষ্টা করেছো? করোনি। তাই আমি নিজের প্রমাণ জোগাড় করেছি।”
আমার কথায় বাবা রেগেমেগে কিছু একটা বলতে নিলেও ভাইয়া ইশারায় বাবাকে থামিয়ে দিল। ভাইয়া নিজের রাগকে যথাসম্ভব দমিয়ে বলে উঠল…
–“কিসের প্রমাণের কথা বলছিস তুই? আমাদের সবটা খুলে বল।”
বড় শ্বাস নিয়ে সবাইকে কালকে রাতের ব্যাপারটা খুলে বললাম। বাবা আর ভাইয়া কথাটা শুনে খানিকটা শান্ত হলেও ভাইয়া আবারও খানিকটা কড়া গলায় বলে উঠল….
–“সে না হয় ঠিক আছে। আয়াশ ভালো লোক নয় বুঝলাম। কিন্তু এটা কি জানিস? আয়াশ চৌধুরীকে পুলিশ নিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে প্রেস মিডিয়া সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছে? খবরের হেডলাইনে এখন একটাই নিউজ ‘বিশাল ডিস্কের ব্যবসায়ী আয়াশ চৌধুরী লাইসেন্স ছাড়া রিভলবার ব্যবহারের জন্য গ্রেফতার! শুধু তাই নয় তার বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেছেন মাহতাব রায়জাদার মেয়ে আনিশা রায়জাদা।’ এই নিউজ এখন চ্যানেলে চ্যানেলে। সেটা জানিস!”
ভাইয়ার কথা শুনে খানিকটা অবাক হলাম। কয়েক সেকেন্ড ভাবুক হওয়ার পর। মুখ প্রসারিত করে হেসে হাত তালি দিয়ে বলে উঠলাম…
–“গ্রেট নিউজ। ভাইয়া-বাবা, তোমরা এই নিউজের জন্য এতো রিয়েক্ট করছো কেন? ওরা তো সত্যিটা বলেছে। ভালো হয়েছে নিউজ বেরিয়েছে। আয়াশ চৌধুরীর আসল রুপ জানুক সবাই। তাতে এতো রিয়েক্ট করছো কেন?”
বাবা খানিকটা দম ফেলে বলে উঠল…
–” দেখ আনিশা। আমি বুঝতে পারছি আয়াশ চৌধুরীর ওপর অনেক ক্ষেপে উঠেছিস তুই। কিন্তু কি বল তো। এমন নিউজ আর বিস্তারিত জানার জন্য বাড়িতে প্রেস মিডিয়ার লোক তো ভীর করবে তাই না? ওদের সামলানো তো একপ্রকার বড় ঝামেলা।”
–“আমি জানি বাবা। কিন্তু আমি দোষটা তোমাদেরকেই দিতে চাই। তোমরা যদি আমার কথা বিশ্বাস করতে তাহলে এমন হত না। শুধু ওই আয়াশ নয় তোমাদের ওপরেও বেশ রেগে আছি আমি।”
কথাটা বলে আর সেখানে থাকলাম না। দৌড়ে নিজের ঘরে এসে গেট টা লাগিয়ে দিলাম। রাগ হচ্ছে ভীষণ। রিদ্ধি আপু আমার পিছু পিছু এসে দরজায় নক করে অনেক কয়েকবার ডাকল। আমি সাড়া দিলাম না। একা থাকতে চাই। জীবনে কিছু কিছু মূহুর্ত একা থাকতেই ভালো লাগে। নিঃসঙ্গতার সাথে বন্ধুত্ব করতে খুব একটা খারাপ লাগে না বরণ ভালোই লাগে!
বিকেলে….
ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছি। রেলিংয়ের ওপর ভর দিয়ে দেখছি নিচ দিকে। মিডিয়ার লোকেরা হুরমুরি খেয়ে পড়ছে বাড়ির সামনে। বাবার কথাগুলো ভুল ছিল না। ঠিকই বলেছিল। ব্যাপারটা পুরোপুরি ঝামেলার। উফফ…!! নিচে হয়ত বাবা আর ভাইয়া ব্যাপারটা সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। আমাকে ছাঁদে আসতে বলেছে বাবা। তাই বাধ্য হয়ে ছাঁদে এই ফুরফুরে হাওয়ায় সব লোকদের ভীর দেখছি ওপর থেকে। মিডিয়ার লোকেরা পারেও বটে। কোনো একটা ছোট্ট ইস্যু পেলেও কোনোরকম বেতন বা পুরস্কার ছাড়াই বিষয়টা বড় করে ফেলার দায়িত্ব তারা পালন করে। আর এমন কোনো খবর পেলে তো কথায় নেই। জানি না কখন তারা যাবে। অশান্তির একশেষ।
মুখ ফুলিয়ে দোলনায় বসে পড়লাম। সন্ধ্যার আগে বিকেলের আকাশে নানানরঙের ছোঁয়া। কত সুন্দর লাগছে আকাশটাকে। পায়ের ধুপধাপ আওয়াজ শুনে বাঁকা চোখে তাকালাম। রিদ্ধি আপু আসছে। এসেই দুম করে বসে পড়ল আমার পাশে দোলনায়। সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন ছুঁড়ল।
–“এই আয়াশ চৌধুরী কে রে?”
–“নাম নিও না তো আপু। লোকটার নাম নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফ্রেশ মনটাও বিরক্তি তে তেঁতো হয়ে যায়।”
রিদ্ধি আপু আমার গায়ে ঢলে পড়ল। আবারও নরম সুরে বলল…
–“বল না। যখন এসেছি এই আয়াশ চৌধুরীকে নিয়ে ঝামেলা দেখছি। লোকটার নাম তো শুনেছি। তবে ভালো করে চিনি না।”
আমি চোখমুখ কাঁচুমাচু করে বললাম…
–“একটা এক নম্বর অসভ্য, নোংরা আর বিরক্তিকর লোক।”
–“আরে এভাবে বললে কি করে হবে? পুরোটা ডিটেইলসলি বল।”
আমি মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে রিদ্ধি আপুকে একে একে সব ঘটনা বলতে শুরু করলাম। একটু একটু করে রিদ্ধি আপুর মুখ খুলতে থাকল। অবশেষ হা হয়ে বলে উঠল…
–“হাউ রোমান্টিক রে ছেলেটা। দেখতে কেমন ছিল?”
আমি আপুর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালাম। অবিশ্বাস কন্ঠে বললাম…
–“রিদ্ধি আপু তুমি না সুন্দর নয় লুচুও হয়ে যাচ্ছো। শেষমেশ কি না ওই ঘৃণ্য লোকটার সম্বন্ধে জানার সাধ জাগল তোমার?”
–“আরে জানব না? দেখ ছেলেটা হয়ত তোকে সত্যিই ভালোবাসে! এভাবে ধরিয়ে দিয়ে কি ঠিক করলি?”
–“ভালোবাসুক বা না বাসুক। আমার তাতে কিচ্ছু যায় আসে না। হি ইজ এ ক্রিমিনাল। উনার ভালোবাসা আমার কাছে ঘৃণার। হ্যাঁ #ভালোবাসাটা_ঘৃণার!”
আমার রেগে যাওয়া দেখে ঠোঁট ভিজিয়ে আমার কাঁধে হাত রেখে বলল…
–“রিলাক্স সাবি। যা করেছিস ভালোই করেছিস। তোর ওপর বিশ্বাস আছে আমার।”
আপুর কথায় মুচকি হাসলাম আমি।
পরেরদিন….
সকাল সকাল শাড়ি পড়ে সং সাজছি। রাগে আমার লাল আর নাক লাল হয়ে আছে। রিদ্ধি আপু আমার চুলে খোঁপা করে দিতে ব্যস্ত। আমার মুখ দেখে আপু বলে উঠল…
–“মুখটা এমন করে রেখেছিস কেন রে?”
–“তো কেমন করব? হাসাহাসির মুডে মোটেও নেই আমি। খুব কি প্রয়োজন ছিল পাত্রের সামনে আমাকে সং সেজে হাজির করানোর?”
রিদ্ধি আপু কিছু না বলে হাসল। তখনি ভাইয়া আমার ঘরে তাড়াতাড়ি করে ঢুকে বলে উঠল…
–“কিরে হলো তোদের? রোশন রা চলে এসেছে?”
আমি টুল থেকে উঠে শাড়ি ধরে ভাইয়ার সামনে গিয়ে রেগে বললাম…
–“আসছে বসতে বল ভাইয়াদের। এতো তাড়াহুড়ো করার কিছু নেই।”
–“সেকি রে! ভাইয়া বলছিস কেন? দেখ ওরা এখন পাত্রপক্ষ।”
আমি চোখজোড়া ছোট ছোট করে বললাম…
–“পাত্রপক্ষ হক আর পাত্রীপক্ষ। ছেলে তো সেই বড় আব্বুর ছেলে। সেক্ষেত্রে ও আমার ভাইয়া! এখন ওই ছেলের সাথে বিয়ে হক আর না হক ভাইয়াই ডাকব। এতোবছর খবর নেই কোথা থেকে হুট করে এসে বিয়ে করবে হুহ! শখ কত।”
–“তোর আজেবাজে কথা শোনার সময় নেই আমার। আমি যাচ্ছি। রিদ্ধি ওকে ৫ মিনিটের মাঝে নিচে নিয়ে আয়।”
রিদ্ধি আপু মাথা নাড়ালো। আরো মিনিট দশেক পড় আপু আমাকে সং আর ভূত সব একসাথে সাজিয়ে নিচে নিয়ে এলো ধরে ধরে। নিচে এসে বড় আব্বু আর বড় আম্মুকে দেখে হাসিমুখে সালাম দিলাম। ওরা হেসে সালাম নিতেই রোশন ভাইয়াকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে নিলাম। আকাশী শার্ট, সাদা প্যান্ট, হাতে কালো বেল্টের ঘড়ি, মাথায় কোঁকড়ানো চুল আর চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা। বাহ বাহ বেশ জ্ঞানী মানুষ লাগছে। কিন্তু আদোও কতটা জ্ঞানী কে জানে? তারপর কোনোরকম ভঙ্গিমা না করে সোজাসুজি বলে উঠলাম….
–“কেমন আছো রোশন ভাইয়া?”
আমার কথায় যেন আকাশ থেকে পড়লেন বড় আব্বু আর বড় আম্মু। রিদ্ধি আপু হা হয়ে তাকাল। বাবা তো বিস্ফোরিত চোখে তাকাল। আসিফ ভাইয়া মিটিমিট হাসতে থাকল। ওদের রিয়েকশন দেখে নিজেও ভাবতে লাগলাম। আসলে আমি কি কোনো ভুল কিছু বলে ফেললাম?
রিদ্ধি আপু আমাকে ধাক্কা দিয়ে আমার হাতে ফলমূলের ট্রে ধরিয়ে দিল। ফিসফিসিয়ে বলল…
–“এটা উনাদের পরিবেশন করে আয়।”
আমি সম্মতি জানিয়ে এগিয়ে গেলাম। ট্রে টা টেবিলে রাখতেই কারো ছায়া পড়ল টেবিলে। এই সময় কে এলো? ঠিক সামনে মেইন দরজা। কৌতুহল দিয়ে দেখার আগেই পেছন থেকে সেই ভয়ানক কন্ঠ ভেসে এলো।
–“নিশাপাখি! মাই সুইটহার্ট….!”
#ভালোবাসাটা_ঘৃণার
#Love_OR_Revenge
লেখিকা : আনিশা সাবিহা
পর্ব ৬
পেছনে ঘুরতে ইচ্ছে হলো না আর। তরতর করে ঘামতে শুরু করলাম। নিজের কপাল চাপড়ানোর ইচ্ছেটা জাগল। বাঁকা চোখে তাকালাম সবার দিকে। রোশন ভাইয়া সহ তার ফ্যামিলির রিয়েকশন কিছুটা হতভম্ব রকমের। বাবা দৃষ্টিটা অবাক। আর বাকি সবাই বিস্মিত দৃষ্টিতে দেখছে। ছায়াটা আস্তে আস্তে এগিয়ে আসছে। বুঝতে দেরি হলো না আয়াশ এগিয়ে আসছেন। দম ফেলে অবশেষে পেছন ঘুরে তাকাতেই উনাকে এতো কাছে দেখে দু ধাপ পিছিয়ে যেতেই কাঁচের টেবিলের সাথে পায়ে লাগল। সঙ্গে সঙ্গে আয়াশ আমার হাত ধরে টেনে সোজা করে দাঁড়িয়ে সুন্দর হাসি দিয়ে বললেন….
–“একি! তুমি তো দেখি আমাকে দেখে ভয়ই পেয়ে গেলে নিশাপাখি। আর একটু হলে তো পড়ে যেতে।”
এই মূহুর্তে নিজের চোখজোড়া খুলে পরিস্কার কাপড় দিয়ে মুছতে ইচ্ছে করছে। মনে হচ্ছে এসব আমার কল্পনা। আমি কি হ্যালুছিনেশনে আছি? হতভম্বতা কাটিয়ে বললাম….
–“আ…আপনি? কি ক…করে ছাড়া পে…পেলেন??”
–“সবই তো তোমার মায়া সুইটহার্ট! তোমার জাদু। তুমি আমাকে মনে করলে আর আমি চলে এলাম! তোমাকে আমার কাছে আসা দেখে কি কোনো শক্তি আটকাতে পারে?”
আমি দাঁতে দাঁত চেপে বললাম….
–“শাট আপ। কেন এসেছেন এখানে? সিনক্রিয়েট করতে? নাকি আমাকে মারতে? আমি তো আপনার মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছি। সেকারণে কি রিভেঞ্জ নিতে এসেছেন?”
–“রিলাক্স। এসব কি বলছো তুমি বলো তো? আমি সিনক্রিয়েট করতে আসব কেন? আমি তো বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলাম নিশাপাখি। জাস্ট ফর ইউ।#Love_OR_Revenge এই দুটোর মধ্যে কোনটা সঠিক সেটা না হয় পরেই দেখা যাবে!”
আমি কিছু বলতে নেব তখনই বড় আব্বু বলে ওঠেন…
–“কি হচ্ছে এখানে এসব? আমরা আনিশাকে দেখতে এসেছিলাম আমার ছেলের জন্য। মাহতাব এসব কি হচ্ছে? আমাদের ডেকে এনে অপমান করতে চাইছিস তুই?”
বাবা তাড়াহুড়ো করে আমার কাছে এসে আমার হাত ধরে টেনে উনাদের সামনে নিয়ে গেলেন। বিনয়ী কন্ঠে বলে উঠলেন….
–“একদমই না ভাই। আয়াশ চৌধুরী তো জেলে ছিল। আমার মেয়ে প্রমাণ জোগাড় করে ওকে জেলে পাঠিয়েছিল। সেকারণেই হয়ত সিনক্রিয়েট করতে এসেছে ছেলেটা।”
আয়াশ মাথা নাড়িয়ে ঠোঁট চেপে বলে উঠলেন…
–“নো আঙ্কেল। একদমই না। আমি তো আপনার মেয়ের বাঘিনী রুপকে পছন্দ করে ফেলেছি। তাই জন্য আমি বিয়ের প্রপোজালই এনেছি। তো এখানে কি আগে থেকেই কোনো পাত্রপক্ষ ঠিক করা ছিল নাকি?” (রোশন ভাইয়াদের দিকে তাকিয়ে)
রোশন ভাইয়া একটু ভাবসাব নিয়ে গলায় খাঁকারি দিয়ে বলে উঠল…
–“হ্যাঁ। আনিশার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হতে চলেছে।”
–“চলেছে। বিয়ে ঠিক তো হয়নি। কে বলতে পারে আমার নিশাপাখি তোকে বিয়েই করল না!”
কথাটা বলে রোশন ভাইয়াট পাশে পায়ের ওপর পা তুলে বেশ স্টাইল নিয়ে বসে পড়লেন আয়াশ। আমি চেয়েও কিছু বলতে পারছি না। এখানে বড়দের সামনে কিছু বলতে গেলে খারাপ দেখাবে। তাই এই লোকটার পাগলামো দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করছি। বাবা এবার কিছুটা রাগ নিয়েই বলে উঠল…
–“দেখুন আয়াশ চৌধুরী। আপনি আমার ছোট হবেন। আমার কাছে আপনার রিকুয়েষ্ট যে প্লিজ আপনি আমার মেয়ের হবু বর অর্থাৎ আমার হবু জামাইকে ছোট করবেন না।”
–“বাবা তুমি কেন ওই লোকটাকে রিকুয়েষ্ট করছো? উনি এই বাড়িতে ঝামেলা বাঁধাতে এসেছেন বুঝতে পারছো না?”
তখনি ভাইয়া আমাকে ইশারা করে গম্ভীর ভাবে বলল….
–“তুই চুপ কর আনিশা। প্লিজ। আজ তোর জন্য বড় আব্বুর সামনে বাবার মাথা নিচে নামিয়ে দিস না।”
আমি ভাইয়ার কথায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকলাম। আয়াশ রোশন ভাইয়াকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে ভাইয়াট কাঁধে হাত রেখে বললেন….
–“তো নাম কি তোর?”
–“রোশন রায়জাদা।”
আয়াশ সঙ্গে সঙ্গে নিজের চোখমুখ জড়িয়ে ফেললেন। জ্বিহ্বা বের করে কামড় দিয়ে বললেন…
–“ছি ছি ছি। আরে আনিশা তোর ছোট বোনের মতো। ছোট বোনের মতো না দেখে বউ বউ নজরে দেখিস? এমন তো হওয়া উচিত নয় তাই না?”
ভাইয়া জলদি করে বলে উঠল…
–“দেখুন মি. আয়াশ চৌধুরী রোশন কে আমার বোনের স্বামী হিসেবে আমরা বেছেছি। সো প্লিজ আপনি চলে যান এখন। আমি রিকুয়েষ্ট করছি।”
–“আরে এতো তাড়াতাড়ি যাই কি করে? আপনারা তো মেয়ের সিদ্ধান্ত টাই শুনলেন না। এটা কি করে হয়? এই যুগে দাঁড়িয়ে ছেলে মেয়ে উভয়ের সিদ্ধান্ত থাকা উচিত তাই না? (রোশন ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে) আচ্ছা ভাই শোন। তোর সাথে বাঘিনী আই মিন আনিশার কত দিনের পরিচয়।”
রোশন ভাইয়া কোনো ভঙ্গিমা না করে স্বাভাবিক ভাবেই বলে উঠল…
–“অবশ্যই ছোটবেলা থেকে। তবে মাঝখানে অনেক বছর দেখা হয়নি।”
–“ওহ। এই মাঝখানের কয়েক বছর থেকেই না এই মেয়েটা আর মেয়ে নেই জানিস? এই মেয়েটা একেবারে বাঘিনী হয়ে উঠেছে। যাকে সামলানো তোর কর্ম নয়। তাই বলি কি এই বিয়ে তুই করিস না। আমি তো নিজেই সামলাতে পারি না। তোর মতো একটা ইডিয়েট কেমনে সামলাবে?”
কথাগুলো আয়াশ ফিসফিসিয়ে বললেও পুরো কথা আমার আর রিদ্ধি আপুর কানে এলো। রিদ্ধি আপু চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বুঝতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল আসলেই কি আমি বাঘিনীর রুপ ধারণ করেছি? আসলে এই মহিলাকে এখন কে বোঝাবে আমি একজন ভোলাভালা মেয়ে? সে যাক গে ওকে না বোঝালেও চলবে এখন এই লোকটাকে দেখলে গা ঘিনঘিন করছে তাই উনাকে এই বাড়ি থেকে বের করাটা প্রয়োজন। আমি সবে আয়াশকে বলার মতো কথাগুলো মনে মনে তৈরি করছি। তার আগেই বাবা অতি ভদ্র ভাবে বলে উঠল….
–“আয়াশ চৌধুরি, দেখো আমি জেনেছি আপনি আমার মেয়েকে পছন্দ করেন। কিন্তু আমি দুঃখিত আপনার সাথে আমি আমার মেয়েকে বিয়ে দিতে পারব না। ওর জন্য ছেলে ঠিক করা হয়ে গেছে। আপনি নিশ্চয় বিষয়টা বুঝবেন।”
আয়াশ সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকালেন আমার দিকে। তারপর সবার দিকে তাকিয়ে কিছুটা ভাবুক হয়ে পড়লেন উনি। কয়েক সেকেন্ড কিছু একটা ভেবে আবারও আগের মতো হাসোজ্জল গলায় বলে উঠলেন….
–“বাট আই হ্যাভ সাম কুয়েশ্চনস! হেই ইডিয়েট আই মিন রোশন না কি যেন নাম। তুই কি রাজি বিয়েতে?”
রোশন ভাইয়া আয়াশের কথায় কিছুটা আপত্তিকর দৃষ্টিতে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। সঙ্গে সঙ্গে আয়াশ চোখ বড়বড় করে বলে উঠলেন….
–“এতো কিছু জানার পরেও রাজি তুই? কিভাবে সম্ভব? হাউ?”
–“কি জানার কথা বলছেন আপনি?”
রোশন ভাইয়া সন্দেহি গলায় কথাটা বলতেই আয়াশ আশেপাশে তাকিয়ে রোশন ভাইয়ার কানের কাছে গিয়ে কিছুটা একটা বলতে লাগলেন। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। আমিও এগিয়ে গেলাম শোনার জন্য। সেই সাথে এগিয়ে এলো রিদ্ধি আপু।
–“দেখ। আনিশা আর আমার দেখা হয়েছে প্রায় ১ মাস হবে। এরই মাঝে এই মেয়েটা আমার উপর এতো জাদু করেছে যে ওকে আমি ঘুম থেকে উঠতে বসতে, ঘুমোতে, খেতে, হাঁটতে, গাড়ি ড্রাইভ করতে সব জায়গায় দেখতে পাই। একদিন তো গাড়ি নিয়ে এক্সিডেন্ট করতে বসেছিলাম। কি সাংঘাতিক ব্যাপার ভাবতে পারছিস?”
রোশন ভাইয়া চোখ বড় বড় করে তাকালো। আমি বেশ কড়া চোখে উনার দিকে তাকালাম। এতো উল্টোপাল্টা কথা উনি কোথায় পেয়েছে সেটাই ভাবনার বিষয়। আবারও আয়াশ বলে উঠলেন…
–“নিশ্চয় জাদু মানে বুঝিসনি? (রোশন ভাইয়া না বোধক মাথা নাড়াতেই) আরে এই জাদু সেই জাদু নয় রে। এই জাদু অন্য জাদু। মেয়েটা ওইযে ইয়ে দেয় না? মানে লাভ বাইট? তোর বিশ্বাস হচ্ছে না? সেদিন বান্দরবানের জঙ্গলেই তো ও আমাকে লাভ বাইট দিয়ে দিয়েছিল। ওইটাই তো ভুলতে পারিনি। প্রমাণও আছে আমার কাছে। দেখ আমার বাম গালে। লাল দাগ আছে না?”
রোশন ভাইয়া হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়াল। তৎক্ষনাৎ এতো নোংরা কথাবার্তা সহ্য করতে না পেরে জোরে চিৎকার করে বলে উঠলাম….
–“স্টপ দিস।”
আয়াশের হাত ধরে সোফা থেকে উঠিয়ে টেনে দাঁড় করালাম। আয়াশ টলতে টলতে দাঁড়িয়ে পড়লেন। উনার হাত চেপে ধরেই রাগের সাথে বললাম….
–“অনেক হয়েছে আপনার নোংরা আর বাজে কথাবার্তা বলা। কি মনে হয় আপনার? আপনি আমার নামে যা ইচ্ছা তাই বলবেন আর সবাই তাই বিশ্বাস করবে?”
–“বিশ্বাস করবে কি? অলরেডি বিশ্বাস করে গেছে নিশাপাখি।”
রোশন ভাইয়া দাঁড়িয়ে পড়ল। আয়াশের উদ্দেশ্যে স্ট্রেটকাট বলে উঠলেন….
–“না আয়াশ চৌধুরী। আপনার কথা বিন্দুমাত্র আমি বিশ্বাস করিনি। আমি আমার হবু বউকে বিশ্বাস না করলে কে করবে বলুন তো? সবাই আপনার মতো নয়। আমি আনিশাকে বিয়ে করতে রাজি।”
আয়াশ চোখ লাল করে তাকালেন রোশন ভাইয়ার দিকে। ভাইয়ার একটা কথাও পছন্দ হয়নি সেটা বুঝতেই পারছি। গত এক মাসে উনার রাগ সম্মন্ধে বেশ ভালোই ধারণা হয়েছে আমার। হঠাৎ আমার হাত ঝটকা মেরে রোশন ভাইয়ার কলার ধরে বসলেন আয়াশ। কড়া মেজাজ নিয়ে বলে উঠলেন….
–“এই, আমার মতো সবাই না মানে? (আমার দিকে ইশারা করে) ওকে বিয়ের করার কথা মুখেও আনবি না।”
রোশন ভাইয়া নিজের কলার ছাড়াতে চেষ্টা করছে। আমি সহ ভাইয়া আর আসিফ ভাইয়া এগিয়ে গেলাম। আয়াশের হাত কলারের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম। আয়াশ বেশ শক্ত ভাবে কলার ধরে রেখেছেন। অবশেষে সবাই মিলে ছাড়িয়ে নিলাম। আয়াশ আমার দিকে কড়া নজরে তাকিয়ে আমাকে ঝটকা মেরে দূরে সরিয়ে দিলেন। দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে আগের মতো স্বাভাবিক হাসলেন উনি। শুধু হাসলেন না হু হা করে হাসলেন। আমরা রীতিমতো ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম সবাই। উনার এসব ব্যবহারের কারণ বুঝার গবেষণা চালাচ্ছি। সেকেন্ডের মাঝে কত সুন্দর নিজের মুড চেঞ্জ করার ক্ষমতা রাখেন।
বাবা কিছু বলার আগেই তাকে ইশারা করে থামিয়ে দেন আয়াশ। আমার কাছে এসে আমার দিকে ঝুঁকে বলে ওঠেন…
–“সো মিস. আনিশা তুমি কি বিয়েতে রাজি?”
–“হ্যাঁ আমি রাজি। এই বিয়েতে রাজি আমি।”
উনি এবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বাঁকা হাসি দিয়ে বলে উঠলেন….
–“একটু তাড়াহুড়ো করে ডিসিশন নিয়ে ফেলছো না? ভেবে দেখো রাজি তো? পরে যেন এই ডিসিশনের জন্য তোমাকে যেন পস্তাতে না হয়।”
–“থ্রেট দিচ্ছেন আমাকে?”
উনি মুখে হাত দিলেন। যেন আমি কোনো পাপ কিছু বলেছি। না জানার ভান করে বললেন…
–“একদমই নয়। আমি শুধু তোমাকে সাবধান করলাম মিস. আনিশা। বাই দ্যা ওয়ে (বাবার উদ্দেশ্যে) আঙ্কেল সো ছেলে মেয়ে দুজনেই তো রাজি দেখি বিয়ের জন্য। বিয়ের তোড়জোড় শুরু করুন।”
বাবা তৃপ্তির হাসি হেসে মাথা নাড়াল। তখনি আয়াশ আবারও বলে উঠলেন….
–“আমি দাওয়াত পাচ্ছি তো? দেখুন আমি কোনো কথা শুনতে চাই না। আপনারা দাওয়াত দিলেও আসব না দিলেও আসব। একেবারে সঙ্গীত আর মেহেন্দি থেকে শুরু করে সব ইভেন্টে থাকব।”
ভাইয়া এসে আয়াশের সঙ্গে হাত মেলালো।
–“অবশ্যই মি. আয়াশ চৌধুরী। আপনাকে সবার আগে ইনভাইটেশন কার্ড পাঠানো হবে। আর আমি বুঝতে পারছি আপনার রুড ব্যবহারের কারণ। আমার বোন আপনার মাথা হিট করে দিয়েছে সবার সামনে। তাই আপনি এমন ব্যবহার করেছেন রাইট?”
–“ঠিক বলেছেন। আমার মনের কথাগুলো ধরতে পেরেছেন তাহলে। তাহলে আজকে আসি? টা টা।”
কথাটা বলে সদর দরজার দিকে যেতে লাগলেন আয়াশ। সামনে গিয়েও হুট করে কয়েকধাপ পিছিয়ে আমার সামনে এলেন। আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালাম উনার চোখের দিকে। আসলে উনি কোন গেম খেলতে চাইছেন এবার সেটা বোঝার ব্যর্থ চেষ্টা করছি চোখের দিকে তাকিয়ে। উনি আমার কানে ফিসফিস করে বললেন….
–“এভাবে তাকিও না। আমার চোখের যা ভাসছে যা তোমার ঘৃণাকে জাস্ট এক সেকেন্ডে ভালোবাসায় পরিণত করে দিতে পারে।”
–“এটা অসম্ভবের চেয়েও বড়কিছু আয়াশ চৌধুরী।”
আয়াশ নিঃশব্দে হাসলেন।
–“বি কেয়ারফুল নিশাপাখি। বাই বাই।” (আমার চোখমুখ ফু দিয়ে)
নিজের জ্যাকেটের কলার ঠিক করতে করতে দ্রুত বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন। আমি ঠাঁই সেখানে দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকলাম আসলেই কি উনি চলে গেলেন? সত্যিই চলে গেলেন?
চলবে….🍂🍂
বি.দ্র. অনেকেই বিশেষ দ্রষ্টব্য টা পড়েন না। আমার সামনে পরিক্ষা। তাই পড়াশোনাতে ডুবে থাকতে হয়। সেকারণে পার্টগুলো ছোট হয়ে যাচ্ছে। গল্প ঠিকঠাক রিচেক ও করতে পারিনা। আশা করি সবাই আমার সমস্যা বুঝবেন। আমি প্রতিদিন গল্প দিব তবে ছোট হতে পারে। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
চলবে…..🍂🍂
বি.দ্র. জানি না কেমন লিখেছি। তাড়াহুড়ো করে লিখতে গিয়ে অগোছালো হয়ে পড়েছে লিখাগুলো। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।