ভালোবাসাটা_ঘৃণার পর্ব ১৯+২০

#ভালোবাসাটা_ঘৃণার (সিজন ২)
#Only_Love
#Anisha_Sabiha
পর্ব ১৯
কেটে গিয়েছে ১ দিন। রিদ্ধি বার বার নিজের মুখটা ঢাকছে হাত দিয়ে। গালের দুপাশটাই গোলাপী আভা স্পষ্ট। গত কালকের ঘটনার পর লজ্জায় কুকিয়ে উঠেছে সে। বার বার নিশ্বাস ছাড়ছে বড় বড়। আবারও মনে করতে থাকে গতকাল ঘটা ঘটনাটি।

গতকাল রিদ্ধি গিয়েছিল ওপরে আনিশার সঙ্গে কথা বলতে। একা একা ঘরে মোটেই ভালো লাগছিল না তার। তিন তলায় আনিশার রুমে গিয়ে নক করে ঘরে ঢুকতেই হতাশ হয় সে। আনিশা রুমে নেই। পা টিপে টিপে ভেতরে ঢোকে রিদ্ধি। আশপাশটায় চোখ বুলিয়ে নেয় সে। নাহ আনিশা সত্যিই রুমে নেই। বেডে আয়েশে বসতেই হঠাৎ একটা শব্দ হয়। ফিট হয়ে যায় রিদ্ধি। ঢক গিলে কাঁদো কাঁদো মুখ করে বসে সে। পেছনে পিঠের দিকে হাতাতেই বুঝতে পারে ওর ড্রেসের চেইন নষ্ট হয়ে খুলে গিয়েছে। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে যায় রিদ্ধি। এই অবস্থায় নিচে যেতে পারবে না সে। বাড়ি ভর্তি লোক। দ্রুত গিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ায় সে। পেছন ঘুরে চেইন ঠিক করার চেষ্টা করে কিন্তু হাত সেই পর্যন্ত পৌঁছায় না।

বিরক্তিকর শব্দ অনবরত বের করে মুখ দিয়ে। মিনিট দুয়েক চেষ্টা করার পর খটখট আওয়াজের চোরের মতো তাকায় ওয়াশরুমের দরজার দিকে। চোখ উল্টে ফেলে সে আকাশকে দেখে। বিদ্যুৎ এর গতিতে ঘুরে যায় অন্যদিকে। শুকনো ঢক গিলে আকাশের দিকে ঠিকঠাক পর্যবেক্ষণ করে সে। মানুষটাকে সে চিনে। আনিশা বলেছিল তার ব্যাপারে। তার ব্যাপারে শোনার পরেই অসম্ভব ভালো লাগা কাজ করছিল তার মাঝে। কয়জন পারে একজন গর্ভবতী অসহায় মেয়েকে সাহায্য করতে?
আকাশ ভূত দেখার মতো চমকে ওঠে। এসময় আনিশা থাকে সেকারণেই শাওয়ার নেয় সে। এই মূহুর্তে আকাশের পরণে শুধুমাত্র টাওজার। গায়ে কিছু নেই। বুকের ছোট ছোট লোম বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে ফোঁটা ফোঁটা। রিদ্ধি লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়।

–“কিছু লাগবে আপনার? আই মিন কিছু বলতে এসেছেন? মায়া তো নেই এখানে।”
আকাশের আচমকা কথায় থতমত খায় রিদ্ধি। ইতস্তত বোধ করে বলে….
–“হ…হ্যাঁ উনার সঙ্গেই ক…কথা বলতে এসেছিলাম। উনি নেই তাই চলেই যাচ্ছিলাম।”
–“ওহ।”
আকাশ ছোট্ট করে উত্তর দেয়। আকাশও বিব্রতবোধ করছে। খালি গায়ে অচেনা মেয়ের সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না ও। তাই বলে…..
–“আর কিছু বলার আছে?”
রিদ্ধি নাবোধক মাথা নাড়ায়। কিন্তু বাইরে যায় না। যাবে কি করে? ওর পেছনে চেইন খোলা। আকাশ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। অদ্ভুত মেয়ে তো! সে কি বুঝতে পারছে না? আকাশের প্রবলেম হচ্ছে?

আকাশ কিছু না বলে রিদ্ধির পাশ কাটাতেই রিদ্ধি ভয়ে সামনে ঘুরে যায়। আকাশের ভ্রু কুঁচকানোর সঙ্গে সঙ্গে কপালেও ভাঁজ পড়ে। ভালোভাবে লক্ষ্য করে রিদ্ধির ঈষৎ ফর্সা চেহারায় অসহায়তার ছাপ। তবে কিছু বলে না আকাশ। কাবার্ডের দিকে এগিয়ে গিয়ে নিজের একটা টিশার্ট বের করে ঘোরে আকাশ। চোখ যায় আয়নায়। সেখানে রিদ্ধির খোলা পিঠ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আকাশের চোখে নেমে আসে রাজ্যের অস্বস্তি। দ্রুত চোখ নামিয়ে ফেলে সে। ভালোভাবে বুঝতে পারে রিদ্ধির ঘর থেকে বের না হওয়ার কারণ। মেয়েটাকে সাহায্য করা দরকার। আকাশ অন্যদিকে তাকিয়ে বলে….
–“এক্সকিউজ মি! আপনাকে আমি সাহায্য করতে পারি?”
জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকায় রিদ্ধি। আকাশ কিছু বলতে পারছে না। চোখ বন্ধ করে বলল….
–“আ…আপনার পিঠ দেখা যাচ্ছে আয়নায়।”

লজ্জায় কান লাল হতে শুরু করে রিদ্ধির। শেষমেশ আকাশের চোখ এড়ালো না। এই মূহুর্তে এই ফ্লোর কি দুইভাগে ভাগ হতে পারত না? একটু ফাঁক হলেই ঢুকে যেত সে। কেঁপে উঠে আয়না থেকে সরিয়ে দাঁড়ায় সে। কাঁদো কাঁদো গলায় বলে….
–“আমার সত্যি হেল্প দরকার! কিন্তু কিভাবে কি করব বুঝে উঠতে পারছি না।”
–“একটু দাঁড়ান। আমি আপনাকে একটা চাদর বের করে দিই। সেটা গায়ে দিয়ে রুমে যান।”,
শত লজ্জায় মাঝেও জড়ো হাসি দিয়ে কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিতে তাকায় রিদ্ধি। আকাশ চাদর বের করে রিদ্ধির হাতে দিতেই নিজের গায়ে জড়িয়ে নেয় ও। এই লজ্জা নিয়ে আর থাকা সম্ভব নয়। দ্রুত পায়ে একপ্রকার দৌড়েই রুম থেকে বেরিয়ে যায় সে। আকাশ না চাইতেও কিভাবে যেন মুচকি হাসি দেয়।

বর্তমানে আবার লজ্জায় চাদর খামচে ধরে রিদ্ধি। পায়ের আঙ্গুল দিয়েও চাদর খামছে ধরার চেষ্টা করে। আবার হঠাৎ হাসেও। কালকের পর মানুষটার প্রতি যতটু্ুকু ভালো লাগা ছিল তা আরো গাঢ় ও তীব্র হয়েছে। মেয়েদের প্রতি সম্মানের খামতি নেই উনার। অন্য ছেলে হলে কি করত কে জানে?

সারা রুম জুড়ে পায়চারি করছি আমি। মনটা অস্বস্তিতে ছেয়ে গেছে। আয়াশের পাগলাটে ইচ্ছের সামনে টিকতে পারছি না আমি। উনার উদ্দেশ্য যেন সবার সামনে আমাকে আনিশা প্রমাণিত করা। গতকাল রাতে আমাকে নিজের ঘরে ডেকেছিলেন উনি। আমি যেতে পারিনি। কারণ আমার ঘরে পুনরায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে ব্যাপারটায় নিশ্চিত। রিক আর মাহতাব রায়জাদাকে এই ব্যাপারে আলোচনা করতে শুনেছি আমি। তাই উনার রুমে যাইনি। উনার রুমে যাইনি সেটা নিয়েই উনি অসম্ভব রেগে আছেন। আমার কথা শুনতেই চাইছেন না একবারো। উনার বুদ্ধি যেন লোপ পাচ্ছে ধীরে ধীরে। এমনকি উনি আমার রুমে এলে বার বার দূরে ঠেলে দিয়েছি। এসব কারণে আমার সঙ্গে একবারো কথা বলেননি উনি।

এসব নিয়েই চিন্তা করছিলাম। আজ আয়াশের বিয়ে। চারিদিকে মানুষের ভরপুর। সবই কেমন জানি অচেনা মানুষ। যেটাই হোক না কেন, এই বাড়িতে বড় হয়েছি আমি। এই বাড়ির সমস্ত আত্মীয় স্বজন, চেনাজানা মানুষ সবাইকে চেনা। অথচ তারা নেই। থাকলেও কম সংখ্যক। প্রায় বেশির ভাগ ছেলে মানুষে ভর্তি। ব্যাপারটা আমার চিন্তা আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। সব চিন্তা আমার মাথায় গিজগিজ করছে। উফফ….!!
–“এই ছোট্ট মাথায় এতো প্রেশার না দিলেই তো পারো নিশাপাখি।”
চেনা কন্ঠে ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকালাম আমি। একদিকে আয়াশ দরজায় ঠেস দিয়ে দুটো হাত বুকে জড়িয়ে নিজের চমৎকার হাসি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন উনি। উনার হাঁটাচলা, কথা বলা, দাঁড়িয়ে থাকা সব কিছুই আলাদা আর অন্যরকম। বেশ স্টাইলিশ যাকে বলে। এখন দাঁড়িয়ে আছেন সেটাও সুন্দর ভাবে।

পুরো একদিন কর উনার মুখে কথা শুনে মন ভরে গেল আমার। ‘নিশাপাখি’ শব্দটা যেন উনার মুখে মানায়। এই শব্দটা যেন উনার জন্যই তৈরি! তবুও নিজেকে সামলে নিলাম। ভুলে গেলে চলবে না অন্য চোখ সবসময় আমাদের নজরে রাখছে। তাই গলা খাঁকারি দিয়ে বললাম….
–“আপনি এখন এখানে?”
–“কাম অন! এই এক্টিং জাস্ট ভালো লাগছে না। স্টপ ইট।”
গটগট করে এগিয়ে এলেন আয়াশ। আমার হাত ধরে ফেললেন উনি। আমি বড় বড় চোখ করে তাকালাম। হাত ছাড়িয়ে নিলাম। আমাকে ঘুরিয়ে নিয়ে জড়িয়ে ধরলেন উনি। অতঃপর বললেন….
–“বর বউ এতো দূরে থাকলে চলে না। আমার ঘরে চলো।”
–“আপনি সরুন নয়ত….”
আমার কথা শেষ হবার আগেই আমার হাতের কনুইয়ের দিকে ধরলেন আয়াশ। সঙ্গে সঙ্গে ব্যাথায় মৃদু চিৎকার দিয়ে সরে আসলাম।

আয়াশ ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন। আমার কি হলো সেটা বোঝার চেষ্টা করতেই মূহুর্তেই কাছে টেনে নিলেন উনি। উনার ছোঁয়ায় আমি ভুলে গেলাম আশেপাশের সব কিছু। মূহুর্তেই উনার চোখজোড়া অস্থির হয়ে উঠল। আমার হাত ধরে খুঁজতে লাগলেন কনুইয়ের দিকে কিছু একটা। আহত কন্ঠে বললেন….
–“কি হয়েছে তোমার? কোথাও ব্যাথা পেয়েছো? দেখি?”
আমি কিছু বলবার আগেই আমার কনুইয়ের দিকে ক্ষত স্থান আবিষ্কার করলেন আয়াশ। তা দেখেই অধৈর্য হয়ে পড়লেন উনি। কপালে চিন্তার রেখা দেখতে পেলাম। আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে বললেন….
–“কখন হলো এটা নিশাপাখি? ক্ষত বেশ তাজা। কোনো মেডিসিন লাগাওনি মনে হচ্ছে! এতো কেয়ারলেস তুমি? হাউ?”
–“তেমন কিছু না। ওই সেদিন সেন্টারে আগুন লেগে গিয়েছিল। দুজনে দরজার কাছে এসে ছিটকে পড়লাম। তখনই লেগেছে।”

আয়াশের চোখজোড়া আরো শক্ত হয়ে উঠল। আমাকে বড়সড় ধমক দিয়ে বললেন….
–“এই ক্ষতকে কিছুই করোনি তুমি। সিরিয়াসলি?”
কথাটা বলে আমাকে ছেড়ে কিছু একটা খুঁজতে লাগলেন। এদিক-সেদিক খুঁজে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে আমার হাত ধরে বসালেন। আমি দূরে সরতে নিলেই কটমট করে তাকালেন উনি। আমি ফিসফিস করে বললাম…..
–“আয়াশ, বোঝার চেষ্টা করুন। ঘরে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে।”
–“সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। কিন্তু ওই জানোয়ারের দল ক্যামেরা সেই ডিভাইসে কানেক্ট করে রেখেছে সেটা নেই।”
ব্যস্ত ভঙ্গিতে কথাগুলো বললেন আয়াশ। তারপর ধীরে ধীরে তুলোর সাহায্যে আমার ক্ষত স্থান নিয়ে ডুবে গেলেন উনি। আমি তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। আয়াশের কথা একটু আন্দাজ করতে পারছি। তবে কিছু বললাম না।

আয়াশ বিরবির করে বললেন….
–“আমার জন্য আঘাতটা পেলে। সরি নিশাপাখি। আমি যদি আগুন লাগানোর নির্দেশ না দিতাম এমন কিছুই হতো না তোমার লাগতোও না।”
স্তব্ধ হয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। এক্ষুনি কি বললেন উনি? স্তব্ধতা কাটিয়ে হম্বিতম্বি করে বললাম….
–“এই এই একটু আগে কি বললেন আপনি? আপনি আগুন লাগানোর নির্দেশ…”
আয়াশ নিচু হয়ে আমার কনুইয়ে ওয়ান টাইম ব্যান্ডেজ করছিলেন। আমায় কথায় সোজা হয়ে বসলেন উনি। বড় শ্বাস নিয়ে বললেন….
–“হ্যাঁ। আমিই দিয়েছি। ওই পার্টি ইরিটেট করছিল আমায়। মূহুর্তেই মনে হচ্ছিল সব ভেঙেচুরে গুঁড়ো গুঁড়ো করে দিই। আমি মানতে পারছিলাম না ওসব। তাই আমি….”
উনাকে থামিয়ে আমি নিজেই বলে উঠলাম….
–“আপনি নিজেই আগুন লাগানোর নির্দেশ দিলেন দাদাভাইয়ের লোককে তাই তো?”

আয়াশ মাথা দুলালেন। আমি এক পাহাড় সমান বিরক্তি নিয়ে তাকালাম। এতে যে রিক রায়জাদা আর মাহতাব রায়জাদার বেশ সন্দেহ হয়েছে সেটা আমার অজানা নয়। কিন্তু উনি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে নিজের কাজগুলো করেই চলেছেন। আমার কনুইয়ে ক্ষত স্থানের ওপরে ঠোঁটের ছোঁয়া পাওয়াতে ভাবনার সুতো এক টানে ছিঁড়ে যায়। আয়াশ নিজের গভীর ঠোঁটের স্পর্শ আমার ক্ষত স্থানের ব্যান্ডেজের ওপরে দিয়ে চলেছেন বারংবার। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে হাসলাম আমি। এই লোককে বুঝতে পারা সত্যিই দায়! এক রহস্যে ভরা বইয়ের মতো উনি। আর সেই বইটা অনেক মোটা। সারাজীবনেও বোধহয় পড়ে শেষ করা যাবে না। আমার দিকে আয়াশ শীতল দৃষ্টিতে তাকাতেই আমি উনাকে উঠিয়ে বললাম….
–“এবার চলুন, আপনার রেডি হওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। আমি আজ আপনাকে নিজহাতে রেডি করাবো। আপনি আমার বিয়ের সময় যেভাবে করিয়েছিলেন।”

আয়াশ ঘাড় বাঁকিয়ে তাকান। ভ্রুযুগল উঁচু করে সরু গলায় বলেন….
–“সতিনের সঙ্গে ঘর করার খুব শখ দেখি তোমার।”
–“শাট আপ। বিয়ে শেষমেশ এই শ্যামলা কন্যাকেই করতে হবে। মাইন্ড ইট। অন্য কোনো কন্যা নয়। আর ধলা কন্যা আপনার জন্য নিষিদ্ধ। ” (কঠোর গলায়)
–“আর আমি তোমাতেই আবদ্ধ।”
উনার এই এক বাক্যতে বয়ে গেল প্রশান্তির সুখ। কেঁপে উঠলাম আমি। আমার কানের পিঠে আলতো চুমু খেতেই আমিও আচানক কাজ করে বসলাম। উনার খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি ভর্তি গালে চুমু খেয়ে উনার গোলাপি ঠোঁটেও চুমু খেলাম আমি। আয়াশ বোধহয় আমার কাছ থেকে এমন কিছু আশা করেননি। তাই মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে গেলেন উনি। বড় বড় নিশ্বাস ফেলে নিজের বুকে হাত দিয়ে বললেন….
–“উফফ….মেরে ফেলার ফন্দি!”
আমি উনার কাঁধে ধাক্কা দিয়ে বললাম….
–“যত্তসব আজেবাজে কথা। চলুন আমার সাথে!”

ফোনটা একবার দেখছে আবার বেডে রেখে দিচ্ছে অহনা। পাশেই গাল ফুলিয়ে ছোট্ট আদ্রিতা নিজের আঙ্গুলে থাকা আংটি বার বার করে দেখছে আর চোখটা চকচক করে উঠছে ওর। আজকে অনেক কাজ আছে আয়াশ আর আনিশার। আজকেই ঘটাবে সব কিছুর অন্তিম! মাঝে মাঝে খিলখিল করে হেসে উঠছে আদ্রিতা। মুখ বেজার থাকা সত্ত্বেও আদ্রিতার হাসিতে বেশ ভালো লাগছে ওর। ছোট্ট বাচ্চাদের হাসি দেখলে সবারই মন ভালো হয়ে যায়। কিন্তু অহনা ভাবছে অন্য কথা। আচ্ছা ওই মানুষটা কেমন আছেন? একবার জানতে বেশ ইচ্ছে করে অহনার। সেদিন সেন্স ফেরার পর বাড়িতে আসার পর একবারও দেখা হয়নি লোকটার সঙ্গে। একবার জানতে ইচ্ছে করে আবার দেখতেও ইচ্ছে করে। উনাকে দেখবার আকাঙ্খা আবার উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে আগের মতো অহনার মাঝে। আনিশার কাছ থেকে আমতা আমতা করে ফোন নম্বর নিতে পারলেও কল করে উঠতে পারেনি অহনা।

শেষমেশ অহনা সিদ্ধান্ত নেয় একবার ফোন করেই ছাড়বে। লোকটা তো বাঘ বা ভাল্লুক না। কথায় তো বলবে। এর চেয়ে বেশি কিছু না। ফোনটা হাতে নিয়ে আস্তে আস্তে নম্বর ডায়াল করে সে। নিচের ঠোঁট কামড়ে ফোনটা কানে ধরে অহনা। কিছুক্ষণ রিং হতে থাকে ফোন। শেষ সময় ওপাশ থেকে ভেসে আসে গম্ভীর এক কন্ঠ।
–“হ্যালো, ইমনাত সায়োরী বলছি। হুস দিস?”
ইমনাতের এই শুকনো আর গম্ভীর কন্ঠই অহনার কাছে ভালো লাগে। তাতেই মানুষটাকে মানায়। চুপ থাকে অহনা। এবার ওপাশ থেকে খানিকটা কঠোর গলা ভেসে আসে।
–“হ্যালো, হ্যালো? আই এম বিজি। কোনো কথা না থাকলে ফোন দি…”
এতোটুকু বলেই থেমে যায় ইমনাত। কারো গভীর নিশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে সে। সে কি ঠিক শুনছে আর বুঝছে?
–“অহনা?”

অহনা চকিতে তাকায় ফোনের দিকে। উনি চিনলেন কি করে? কানে ধরে বলে….
–“আ…আপনি চিনলেন কি করে?”
–“জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা মানুষকে আপনা-আপনি চিনা যায়। বলতে হয় না।”
অহনার মাঝে কম্পন চলে আসে। কত সুন্দর কথাটা! কি মিষ্টি! কিছু বলতে গেলেও এলোমেলো হয়ে যায় সবটা।
–“তা কিছু বলবে? নাকি এমনি ফোন করেছো? আসলে ড্রাইভ করছি তো!”
–“সেকি? আগে বলবেন না? গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে ফোন কানে নিয়ে কথা বলা ঠিক নয়। আপনি বরং ফোনটা রাখুন।”
–“কেন কথা বলবে না?”
অহনা আমতা আমতা করতে থাকে। তুতলিয়ে বলে…..
–“ফোনটা রাখুন প্লিজ! যদি কথা বলতেই হয় সামনাসামনি বলব।”
ইমনাত হেসে ফোন কেটে দেয়। অহনা ওকে নিয়ে চিন্তা করছে ভাবতেই তো সারা শরীরে শিহরণ জাগে!

আয়াশ আমাদের বিয়ের কালো শেরওয়ানিই পড়েছেন। আমি যত্ন সহকারে উনার শেরওয়ানিতে মুক্তোর মালার মতো ব্রুজ টা লাগিয়ে দিচ্ছি। উনি চুপচাপ বসে বসে আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আমি ঝুঁকে আছি উনার দিকে। একটু পর পর ফুঁ দিয়ে আমাকে বিরক্ত করার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। আমি বিরক্ত হচ্ছিও। এবারের বিয়েটা অন্যরকম। এবার কনেপক্ষরা বিয়ের জন্য আসবে এই বাড়িতে। কেন আসবে সেটাও ভালোভাবে জানা। যাতে সবকিছু রিক রায়জাদা আর মাহতাব রায়জাদার হাতের মুঠোয় থাকে সেই কারণেই এই ব্যবস্থা অবলম্বন করেছে। তাতে কি? আমাদের কাজটাও সহজ হয়ে গিয়েছে। কনেপক্ষরা হাজিরও হয়েছে শুনলাম।
আয়াশের মাথায় পাগড়ি পড়াতেই আমার কোমড় পেঁচিয়ে ধরলেন উনি। আমার পেটে মুখ গুঁজে ধীর গলায় বললেন….
–“সবকিছু আমাদের প্লান মতো হওয়া চাই।”
আমি র্নিদ্বিধায় উত্তর দিলাম….
–“সব হবে।”
–“আই নো। হতেই হবে।”

নিজের ঘরে চলে এলাম আয়াশকে নিচে পাঠিয়ে। এসেই দেখি অধরা বসে আছে আমার ঘরে। আমাকে দেখে জোর করে হাসল সে। তারপর বলল….
–“ওয়াশরুমের নাম করে এখানে এসেছি। যা করার তাড়াতাড়ি করো প্লিজ।”
আমি মাথা ঝাঁকালাম। অধরাকে পাঠিয়ে দিলাম রিদ্ধি আপুর ঘরে। সেখানে বর্তমানে রিদ্ধি আপু নেই সেটা আমার জানা। ও বিয়ে হওয়া পর্যন্ত সেখানেই থাকবে। ওর চোখমুখ কেমন একটা ঠেকছে আমার কাছে। দুই একদিনের ব্যবধানে শুকিয়ে গেছে ওর চেহারা। অধরার মতো একই বিয়ের লেহেঙ্গা বের করে রেডি হতে শুরু করলাম আমি। আজই আমার মা-বাবা আর আয়াশের মা-বাবার খুনির শেষ দেখেই ছাড়ব। ওদের চেয়েও বেশি নিকৃষ্ট হব। নিকৃষ্ট থেকে নিকৃষ্টতর হবো। আজ ওরা বুঝবে নারী মনে আঘাত দিলে, নারীর সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকা করলে ঠিক কি কি হয়। সামনে ভাসতে লাগল নিজের মায়ের বিকৃত দেহ। যেই দেহতে দুই নরপশুর ছোঁয়ার দাগ ছিল। ভেসে উঠল বাবার গলা কাটা লাশ। নিজের কোমড়ে ছুরি গুঁজতেই খটখট আওয়াজ এলো।

আমার ঘরের দরজা তাড়াহুড়ায় লক করিনি ঠিক করে। সেই দরজাটাই খুলে গেল। পেছন ফিরে তাকালাম আমি। দরজা দিয়ে ঢুকে এলো দুজন পুরুষ। একজন মারহাব রায়জাদা আরেকজন রিক রায়জাদা। খানিকটা ভড়কে গেলাম আমি। তবুও সামলে নিলাম। কারণ এই মূহুর্তে রাগটা চড়ে বসেছে মাথায়। আগের সব ঘটনা একে একে মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। রিক রায়জাদা আমার দিকে তালি দিয়ে এগিয়ে আসতে থাকল। আমি দুই ধাপ পিছিয়ে গেলাম।
–“বাহ বাহ! প্লানটা অসাধারণ ছিল আনিশা। কিন্তু তুই হয়ত ভুলে যাচ্ছিস এসব ছলচাতুরী, প্লানিং এসবে ছোট থেকে অভ্যস্ত আর পারদর্শী আমি। তাই তোদের এই প্লানিং আগে থেকেই আন্দাজ করেছিলাম। আর আমার ধারণাই ঠিক বের হলো।”
–“আমার রাস্তা থেকে সরে যাও রিক রায়জাদা। নয়ত ভালো হবে না।”
রাগে হিসহিসিয়ে বললাম আমি।

রিক রায়জাদাসহ মারহাব রায়জাদা বিশ্রি হাসিতে ফেটে পড়ল। আমার রাগ ক্রমশ বাড়ছে। হাসি থামিয়েই আমার দিকে তেড়ে এসে আমার হাত ধরে বলল….
–“সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করে লাভ নেই। এই বিয়েটা তো হবেই। অধরার সাথেই হবে। আর জাস্ট বিয়ের ঝামেলা মিটতে দে। আজ রাতেই তোর, তোর পেয়ারের বর আর তোর ওই ছোট্ট মেয়ের শরীর থেকে গলা আলাদা করে দেব আমি।”
আমি হাত মোচড়াতে শুরু করলাম আমি। মারহাব রায়জাদা কিটকিটিয়ে বলে উঠল….
–“তোমাকে এতো কষ্ট করতে হবে না। ওকে আমি সামলে নেব। তুমি যাও। নিচে অনেক কাজ।”
নিজের লোলুপ দৃষ্টি দিয়ে আমাকে আগামাথা পর্যবেক্ষণ করল মারহাব রায়জাদা।
#ভালোবাসাটা_ঘৃণার (সিজন ২)
#Only_Love
#Anisha_Sabiha
পর্ব ২০
–“খুব তেজ তোর না? আজকে তোর অবস্থা তোর মায়ের মতোই করব।”
আগুনের ন্যায় দপ করে জ্বলে উঠল আমার প্রতিটা শিরা। রিক রায়জাদা আগেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেছে। রুমের দরজার লক আটকিয়ে দেওয়া। রাগে থরথর করে কাঁপছি আমি। হুংকার ছেড়ে বলে উঠলাম….
–“দুনিয়ার সব থেকে নিকৃষ্ট জীব তোরা। তোদের শুধু পুরুষের মতো শারীরিক গঠন টু্কুই আছে। কিন্তু তোরা পুরুষ নস। কলঙ্ক। কলঙ্ক তোরা। তোর ওই নোংরা মুখে আমার মায়ের কথা বলবি না। কেটে ফেলব তোর ওই মুখ। কেটে ফেলব তোর ওই হাত যেই হাতে আমার মাকে তোরা নোংরা স্পর্শ করেছিলি। এই সমাজে কলঙ্ক রাখব না আমি।”

আমার কথায় এগিয়ে এলো এই বিকৃত মস্তিষ্কের জানোয়ার। আমার হাত ধরতেই সরে গেলাম আমি।
–“ডোন্ট টাচ মি। তোদের স্পর্শ পাওয়া মানে অপবিত্র হয়ে যাওয়া।”
চোখ বড় বড় করে তাকায় মারহাব রায়জাদা। রাগে জ্বলসে সে তা মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। অতঃপরই বিশ্রি হাসি দিয়ে আমাকে আবারও ভালো ভাবে দেখতেই সারা শরীরে ঘৃণা বইতে শুরু করল। এখন এই ঘরে কেউ আসবে না। সবাই কাজে ব্যস্ত। তাই যা করার আমাকেই করতে হবে। মারহাব রায়জাদা আয়েশি ভঙ্গিতে বলল….
–“বিয়ের পোশাকে ভালোই লাগছে তোকে। যদিও ইচ্ছে ছিল আমার ছেলের মাধ্যমে বিয়ে করিয়ে আমি আর আমার ছেলে দুজনেই তোকে ভোগ করব কিন্তু সেটা তো হতে দিলি না তুই আর ওই আয়াশ। মেরে ফেললি আমার ছেলেকে।”

নিজের কোমড়ের কাপড়ের নিচে হাত দিয়ে ছুরি হাতাতে থাকলাম আমি। যদিও আমি একটা মেয়ে। তাই এমন নড়কের কীটের থেকে নিজের সম্মান হানির ভয় লাগছে। দাঁত কটমট করে বললাম….
–“হ্যাঁ মেরেছি। আর এমন কষ্ট দিয়েছি মেরেছি কল্পনাও করতে পারবি না। যদি ওকে জীবিত করতে পারতাম তাহলে বার বার হাজার বার কষ্ট দিয়ে মারতাম। চিন্তা করিস না তোদের একসঙ্গে তোর ছেলের থেকেও ভয়ানক মৃত্যু দে….”
কথাটা বলার আগেই মারহাব রায়জাদা চেপে ধরে আমার গাল। ব্যাথায় কাতরাতে থাকি আমি। গালের দুই অংশ দুইদিকে চলে আসবে যেন। দেরি না করে নিজের হাতের মুঠো শক্ত করে তার নাক বরাবর ঘুষি মারতেই সরে যায় মারহাব রায়জাদা। কয়েকটা বড় বড় নিশ্বাস নিতেই দেখি সে পেছন দিকে ঘুরে আছে। দেরি না করে ছুরি বের করে সরাসরি আক্রমণ করে বসি মারহাব রায়জাদার পিঠে।

কুকিয়ে ওঠে মারহাব রায়জাদা। আমি পাই শান্তি। কাঁপতে কাঁপতে পেছন ফিরে তাকাতে নিলেই আমি অন্য হাতে চেপে ধরি তার চুল। সামনের দিকে যদিও চুল নেই তাই পেছন দিকে চুল টেনে ধরে কাঁত করে ফেলি তাকে। রক্তাক্ত ছুরি মারহাব রায়জাদার গলার ধরি। সবটুকু রাগ নিয়ে বলি….
–“মেয়ে মানে ভোগের জিনিস নয়। এটা তোরা আজ হারে হারে বুঝবি। কি ভেবেছিলি? আমি একা ঘরে আছি বলে আমি অসহায়? তোদের সব থেকে বড় ভুল মেয়েকে অসহায় ভাবা। মেয়েরা কতটা ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে তা হারে হারে টের পাবি। এখুনি তোর গলা কাটব আমি।”
কথাটা বলে যেই গলায় ছুরি টান দিতে নিলাম। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠল মারহাব রায়জাদা। কিন্তু আমি এখনো ছুরি চালাইনি। সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে নিয়ে ভাবতে লাগলাম কিছু!

সোফায় বসে আছে আয়াশ। পরনে বরের পোশাক। ঘর ভর্তি মানুষ। তার পাশে ছোট্ট আদ্রিতা আয়াশের কথা শুনে মিটমিটিয়ে হাসছে। আদ্রিতার পরনে কালো রঙের গাউন। গাউনটা বেশ ফোলা। তার মাথায় কাপড় রাউন্ড করে বাঁধা। ছোটখাটো পরী লাগছে তোকে। আয়াশ নিজেও চোখ সরাতে পারছে না তার মেয়েকে দেখে। তারপর চোখ সরিয়েই ফেলল। নজর লেগে গেলে? আদ্রিতার গালে চুমু খেতেই আদ্রিতা পিটপিট করে তাকায়।
–“আচ্ছা আম্মু, রিং টা তোমার কেমন লেগেছে?”
আদ্রিতা প্রশ্নসূচক চেহারা নিয়ে তাকায়। আয়াশের থুঁতনি নাড়িয়ে আধো আধো কন্ঠে বলে….
–“আ..আম্মু? আমি তোমাল আ…আম্মু?”
আয়াশ এক হাতে দিয়ে জড়িয়ে নেয় আদ্রিতাকে। তারপর হাসোজ্জল গলায় বলে ওঠে….
–“আমার তো আম্মু নেই। তাই তোমাকে ছোট আম্মু বানিয়েছি। পছন্দ হয়নি?”
আদ্রিতা আয়াশের হাতের ঘড়ি নাড়াতে ব্যস্ত। সেভাবেই বলে….
–“তিন্তু তুমি তো বল। এত্তু বল। আমি তোতো।”
আয়াশের কথাগুলো বুঝতে বেশ বেগ পেতে হলো। ভ্রু কুঁচকে বলল…..
–“আমি বড়? আর তুমি ছোট?”
আদ্রিতা মাথা নাড়াতেই আয়াশের হাত থেকে ঘড়ি টান দেয়। ছোট মানুষ কিছু না বুঝে টান দেওয়াতে খুলে যায় হুট করে ঘড়িটা। পড়ে যায় নিচে।

আয়াশ রাগে না আদ্রিতার ওপর। বরণ হাসে। তারপর নিচু হয়ে ঘড়ি হাতে তুলতেই ঘড়ির পাশে একটা চকচক করা জিনিস দেখতে পায় সে। কপাল ভাঁজ হয়ে যায় আয়াশের। একটা চেইন আর লকেট। হাতে তুলে নেয় লকেটসহ চেইন। ভালোভাবে নাড়াতে থাকে সেটা। চোখ ছোট ছোট হয়ে আসে ভাবনায়। এই লকেট টা সে কোথাও দেখেছে। কোথায়? মনে করতে পারে না আয়াশ। মিনিট পাঁচেক পর হাল ছেড়ে দেয় আয়াশ। হাতে নিয়েই বসে থাকে সে। অনেকক্ষণ হয়ে এলো। আনিশা আসবার নাম নেই। একটু একটু করে চিন্তার দানা বাঁধছে।

হামাগুড়ি দিয়ে দিয়ে একটা টেবিলের তলায় কিছু একটা খুঁজে চলেছে অহনা। কিন্তু পাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত জিনিসটা। বিরক্ত আর চিন্তিত লাগছে তাকে। অন্যদিকে কানে ব্লুটুথ লাগিয়ে কথা বলতে বলতে চলছে ইমনাত। আজকে সব কাজ পারফেক্টলি হতে হবে। সেসবেই ডুবে রয়েছে ইমনাত। চলার পথের কিছুর সঙ্গে হোঁচট খায় ইমনাত। পড়তে গিয়েও সামলে নেয় নিজেকে। পেছন ফিরে বিরক্ত নিয়ে তাকায়। একজোড়া পা চোখে পড়ে তার। তখনই টেবিলের নিচ থেকে বেরিয়ে আসে অহনা। চোখ কপালে উঠে যায় ইমনাতের। এই মেয়েটা বিড়ালের মতো টেবিলের নিচে কি করছিল? প্রশ্নটা সে করেই ফেলে….
–“অহনা, তুমি টেবিলের নিচে চোরের মতো কি করছিলে?”
অহনা মাথা তুলে তাকায়। সে ঘেমে একাকার। তার মুখে চিন্তার রেশ। ইমনাতকে দেখার পর আরো লজ্জায় মাথা নুইয়ে নেয় সে।
–“আ…আসলে আমি একটা জিনিস হারিয়ে ফেলেছি।”
–“কি হারিয়ে ফেলেছো? যেটা খুঁজতে তুমি এতো চিন্তিত?”
–“আমার লকেট!”

ইমনাত কিছু না বলে হাত বাড়িয়ে একটু নিচু হয়। জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকায় অহনা। ইমনাত গম্ভীর গলায় বলে….
–“উঠে পড়ো। এভাবে এতো লোকের মাঝে ফ্লোরে বসে থেকো না।”
অহনা কয়েক সেকেন্ড পরই হাতটা বাড়িয়ে দেয়। পছন্দের মানুষের ছোঁয়া পেয়ে শিউরে ওঠে। সামলিয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে শ্বাস ফেলে সে। ইমনাত ব্লুটুথ থেকে কল কেটে দিয়ে মনোযোগী হয় অহনার দিকে।
–“মনে হচ্ছে লকেট টা বেশ প্রিয় ছিল তোমার কাছে। তাই এতো চিন্তিত।”
–“হু। অনেক প্রিয় ছিল। আশ্রমের যেই দাদীজান ছিল যে বলেছিল ওটা নাকি ছোট থেকে আমার গলায় ছিল। মানে আমাকে যখন পেয়েছে তখন থেকেই। তার মানে নিশ্চয় আমার মা নয়ত বাবা পড়িয়ে দিয়েছিল। লকেট টা অনেক বড় ছিল। ছোট বেলায় গলায় হতো না। বড় হয়েছি তাও গলায় ঠিকঠাক হয় না। ঢাকা থাকে সবসময়। কিন্তু আজ হঠাৎ হারিয়ে গেল। ওটাই তো স্মৃতি ছিল আমার কাছে।”

কথাটা বলতে বলতে অহনা প্রায় কেঁদেই দেবে এমন অবস্থা। এমতাবস্থায় অস্থির হয়ে পড়ল ইমনাত। অহনার এমন চেহারা একটুও ভালো লাগছে না তার কাছে। বুকে অস্থিরতায় ছেয়ে গেছে। তবুও অহনাকে শান্ত করে বলল….
–“ইটস ওকে। আমরা খুঁজলেই পেয়ে যাব। আশেপাশেই আছে। মন খারাপ করো না। তুমি এই বিষাদ চেহারা আমার বুকে চিনচিন ব্যাথা ধরায়।”
কথাটা বলে হঠাৎ নিস্তব্ধ হয়ে গেল ইমনাত। কি বলে চলেছে সে? অহনা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল। ভালো লাগায় ছেয়ে গেল তার মন। বিব্রত হয়ে হালকা কাশি দেয় ইমনাত। অহনা মুখ টিপে হাসে। তার ভালো লাগছে। ইমনাতের কথা বেশ ভালো লাগছে!

অনেকক্ষণ হয়ে গেছে। আনিশা এখনো আসছে না। বুক ধড়ফড় করছে আয়াশের। কেমন যেন লাগছে। ফোন বের করে আয়াশ। এই মেয়েটা অলওয়েজ ওকে টেনশনে ফেলে দেয়। হুয়াই? ফোনের লক খুলে নম্বরের লিস্টে ঢুকতে যায় তখনই কেউ ফোনটা ছোঁ মেরে নিয়ে নেয়। রেগেমেগে তাকায় আয়াশ। রিক দাঁত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে। আয়াশ গম্ভীর গলায় বলে…..
–“ফোন দে।”
রিক তর্জনী আঙ্গুল নাড়াতে নাড়াতে বলে….
–“নো। তোর বিয়ে। তুই কি না ফোন নিয়ে ব্যস্ত? দ্যাটস নট ফেয়ার। বিয়ে ইনজয় করার সময় তোর। এখন ফোন পাচ্ছিস না।”
কথাটা বলে চলে যায় রিক। আয়াশ কিছু বলতে গিয়েও পারে না। দাঁতে দাঁত চেপে বসে থাকে। মিনিট পাঁচেক পর কাজি সাহেব কনে কে আনতে বলেন। ডাকতে পাঠানো হয় কনে কে।

একটু পরেই সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসে কনে। কনের মুখ দেখা যাচ্ছে না। পুরো মুখ কাপড় দিয়েই ঢাকা। তাকে নিয়ে আসছে অধরার ভাবি। আয়াশের মুখে হাসি ফুটলেও কয়েক মূহুর্তেই তা গায়েব হয়ে যায়। কটাক্ষ করে তাকায় কনের দিকে। নাহ। এটা তার নিশাপাখি নয়। আনিশার চলার ধরন থেকে শুরু করে তার অঙ্গের প্রত্যেকটা ভাঁজ জানা আয়াশের। এ আনিশা হতেই পারে না। আনিশা আরেকটু লম্বা আর চিকন। কনের হাতের রঙ বলে দিচ্ছে সে আয়াশের নিশাপাখি নয়। আর শান্ত হয়ে বসে থাকতে পারে না সে। উঠে দাঁড়ায়। চিৎকার করে বলে….
–“এটা আসল কনে নয়।”
সবাই হতবাক হয়ে তাকায়। শুরু হয় ফিসফিসানি। কেউ এটা ওটা বলছে। মাহতাব রায়জাদা হতভম্ব হয়ে বলে….
–“এটা কেমন কথা আয়াশ?”
অগ্নিঝরা দৃষ্টিতে নিক্ষেপ করে আয়াশ। সঙ্গে সঙ্গে মাহতাব রায়জাদা মুখে কুলুপ এঁটে দেয়।

আয়াশ ওপরে তাকায়। করিডোর লক্ষ্য করে সে। দেখতে পায় তার কাঙ্ক্ষিত মানুষটিকে। তিন তলার করিডরে নিজের বাঘিনী রুপ নিয়ে হাঁটছে সে। স্বস্তি পায় আয়াশ। ইমনাত ভীর ঠেলে এসে আয়াশের কানে কানে কিছু একটা বলে। আয়াশ বাঁকা হাসে। তার হাসি নিঃশব্দ হলেও ছিল ভয়ানক। আদ্রিতাকে তুলে ইমনাতের কাছে দেয় আয়াশ। ইমনাতের কানে কানে সেও কিছু একটা বলে। ইমনাত মাথা দুলিয়ে দ্রুত পায়ে আদ্রিতাকে নিয়ে বেরিয়ে যায় সে।

সবেমাত্র করিডোর দিয়ে নিচে নামাতে চাইছিলাম আমি। নিচে চোখ যেতেই দেখি সবাই চলে যাচ্ছে। চোখ বড় বড় করে তাকালাম আমি। সবাই চলে যাচ্ছে কেন? অদ্ভুত তো! তবে কি আয়াশ আমাকে না পেয়ে পাগলামো শুরু করলেন? আমি নামতে নামতে প্রায় সবাই চলে গেল। রয়ে গেলাম আমি, আয়াশ, মাহতাব রায়জাদা, রিক রায়জাদা আর অধরার পরিবার।
অধরা নিজের ঘোমটা তুলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ক্ষীণ দৃষ্টিতে তাকালাম আমি। আশেপাশে আরো কয়েকজন রয়েছে। যারা সবাই পুরুষ। মাহতাব আর রিক রায়জাদা বারবার আয়াশের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে যাচ্ছে। কেন বিয়েটা হলো না?
আয়াশ নিরুত্তর। চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টায় মগ্ন উনি। কিন্তু ব্যর্থ হওয়ায় এগিয়ে গেলেন রিক রায়জাদার দিকে। নিজের সর্বশক্তি দিয়ে কষিয়ে দিলেন দুটো চড়।

রিক রায়জাদা রেগে আগুন। সরাসরি আয়াশের শেরওয়ানির কলার ধরে ঝাঁকাতে লাগল।
–“আমাকে মারছিস তুই? তোর সাহস তো কম না! আমারই বাড়িতে আমাকে মারছিস। তোকে আজ মেরেই ফেলব।”
কথাটা বলে আয়াশকে মারার আগেই তার পেছন দিকে আঘাত পড়ে। চিৎকার করার সময় পায় না সে। পড়ে যায় ছটফট করতে করতে। আয়াশ সিংহের মতো গর্জন দিয়ে বলে ওঠে…..
–“গেম ইজ ওভার। নাউ মাই টার্ন।”
মাহতাব রায়জাদা শুকনো ঢক গিলে। ভয়ার্ত সুরে বলে ওঠে….
–“আ…আয়াশ, তুই এটা ঠিক করছিস না। তুই জানিসও না আমি কি করতে পারি। মেরে ফেলব তোকে। এই বাড়ির আশেপাশে সব লোক আমার কথামতো চলে। তোকে এখুনি শেষ করে দেবে। এই কে কো…কোথায় আছিস? ধর একে।”
কেউ এগিয়ে এলো না। আয়াশ ভ্রু নাচিয়ে বলল….
–“কি ভেবেছিস মাহতাব রায়জাদা? শুধু তোরই পৌষমাস আসবে? আর সবার সর্বনাশ করবি? আজ আমাদের পৌষমাস তোদের সর্বনাশ!”

কথাটুকু শেষ হতে না হতেই নিজের মাথার পাগড়ি খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে পা তুলে মাহতাব রায়জাদার বুকে সজোরে লাথি মারেন আয়াশ। আমি বড় বড় শ্বাস নিচ্ছি। আমিও চাই আজ ওদের মেরে ফেলতে। চোয়াল শক্ত করে অধরার উদ্দেশ্যে বললাম….
–“বেরিয়ে যাও এখন এখান থেকে। তোমার পরিবার বেরিয়ে যাও। নয়ত বিপদ আছে। এই রায়জাদা ভালো নয়। অধরা তুমি ভালো করে জানো।”
অধরা এক পলক আয়াশকে দেখে তার পরিবারকে নিয়ে জোর করে বেরিয়ে গেল। আমার মাথায় আসছে না এসব হলো কি করে? এই রায়জাদা কাঁত হয়ে পড়ল কি করে?
মাহতাব রায়জাদার হাতে রিভলবার দেখে ভড়কে গেলাম আমি। সেটা আয়াশের দিকে তাক করে আছে। আয়াশ ভাবলেশহীন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

–“কি ভাবিস নিজেকে? আমার কাছে যা আছে তা দিয়ে তোকে ঝাঁঝরা করে দিতে পারি।”
আয়াশকে কটাক্ষ করে কথাটা বলে মাহতাব রায়জাদা। আয়াশ বুকে হাত জড়িয়ে ঘাড় কাঁত করে বলে ওঠেন….
–“রিয়েলি? ওকে। আই এম রেডি। শুট মি!”
হাত-পা কাঁপছে আমার। গলা থেকে আওয়াজ বের করার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না। হাঁটাও যেন ভুলে গেছি। মাহতাব রায়জাদা রিভলবারের ট্রিগার টিপতেই চোখ বন্ধ করে ফেললাম আমি। কিন্তু কিছুই হলো না। কয়েক সেকেন্ড পর চোখ খুললাম। আয়াশ আগের মতো করেই দাঁড়িয়ে আছেন। ঘাড় কাঁত করে। ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠেন আয়াশ। তারপর চোয়াল শক্ত করে মাহতাব রায়জাদার গলা টিপে ধরেন উনি।
–“কি ভেবেছিলি? আমাকে কাঁচা খেলোয়াড় মনে হয় তোর? তোর রিভলবারে একটা গুলিও নেই। আজ তুই অসহায়। আজ হিসেব একে একে মেটাবো।”
মাহতাব রায়জাদার চোখ উল্টে উঠছে। দ্রুত এগিয়ে গেলাম। এমন করলে তো সে মারা যাবে। এতো সহজে কি করে মুক্তি পাবে ওরা? আমি মুক্তি দেব না। আয়াশের হাত ধরে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেই ছেড়ে আমার দিকে চোখ রাঙালেন উনি।

চিৎকার করে বললেন…
–“কাকে বাঁচাচ্ছ তুমি?”
–“শান্ত হন আপনি। আমি স্বপ্নেও এই লোককে ছেড়ে দেওয়ার কথা ভাবতেই পারি না। ওকে মারার জন্য বাঁচিয়ে রাখছি। সবাইকে তড়পে তড়পে মারতে চাই আমি।”
আয়াশ ক্ষ্যান্ত হন। সামনের লোকগুলোকে ইশারা করেন দুজনকে ধরে নিয়ে যেতে। জোর করে নিয়ে যাওয়া হয় ওদেরকে। আয়াশ পেছন থেকে বলে ওঠেন….
–“ওদের এমন ভাবে বেঁধে রাখবে যাতে নড়াচড়া অবধি না করতে পারে।”
মূহুর্তেই সব কিছু শান্ত হয়ে যায়। ফোঁস ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়েন আয়াশ। আমি উনাকে জাপ্টে ধরি। হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করি। সবকিছু এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল এই কয় বছরে। আয়াশের শূন্যতা আমাকে কাঁদিয়েছে। আজকে সেসব কান্না উগলে দিতে চাই।

আয়াশ আমার কাঁধে হাত দিতেই অশ্রুসিক্ত হয়ে তাকালাম আমি। আমার চোখের পানি বৃদ্ধা পানি বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে মুছিয়ে দিয়ে কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে নম্র গলায় বলেন….
–“ডোন্ট ক্রাই নিশাপাখি।”
আমি আবারও উনার বুকে মাথা রাখলাম। অস্পষ্ট গলায় বললাম….
–“ভালোবেসেছি আপনাকে। আপনার #ভালোবাসাটা_ঘৃণার ছিল আমার কাছে। সেই ভালোবাসাতেই ডুবে গিয়েছি আমি। আপনার কাছে যখন আমি ছিলাম না তখন আরো গভীর ভাবে অনুভব করেছি আপনার অস্তিত্ব। আমার মন প্রতিটা সেকেন্ড আপনাকে ভেবে কাটিয়ে দিত। আপনি ছাড়া আমি অসম্পূর্ণ।”
–“তোমাকে ছাড়া আমিও অসম্পূর্ণ। জীবনের এই তিনটে বছর থমকে ছিল আমার কাছে। কতটা যন্ত্রণার ছিল স্বপ্নে তোমার বিচরণ। স্বপ্নে তোমাকে দেখে যখন বাস্তবে দেখতে পেতাম না যখন যন্ত্রণা প্রতিটা রগে রগে ঢুকে যেতো। তুমি আমার হৃদপিণ্ডের প্রতিটা স্পন্দন!”

বড় বড় নিশ্বাস ফেললাম। আজ হয়ত আমার সুখের দিন। অনেকক্ষণ কেটে গেল। কিছু একটা ভেবে সন্দেহি দৃষ্টিতে তাকালাম আয়াশের দিকে। উনার দিকে একগাদা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলাম।
–“আমার আদ্রিতা কোথায় আয়াশ? তারপর অহনা, আকাশ ভাইয়া, রিদ্ধি আপু, আসিফ ভাইয়া, সেঁজুতি মা কাউকেই তো দেখতে পাচ্ছি না। আপনি কি করে করলেন এতোসব? কখন করলেন?”
আয়াশ আমার কাঁধে দুহাত রেখে চোখে চোখ রেখে বললেন….
–“রিলাক্স নিশাপাখি। সবাই নিরাপদে সেফ জায়গায় আছে। বড় ভাইয়ের বাড়িতে আছে। ওরা কেউ থাকলে ওদের ক্ষতি হতে পারত। তাই পাঠিয়ে দিয়েছি। আর কি করে সব করেছি শুনতে চাও?”

আমি মাথা নাড়াতেই আয়াশ বলা শুরু করলেন….
–“সব কিছু মনে পড়তেই সব প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে লাগলাম আমি। শুধু মনে হচ্ছিল কি করে ওদের ধ্বংস করব? কিন্তু মাথায় আসছিল না। এমন সময় বড় ভাইয়ের খোঁজ নিই। দেখা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্লানিং শুরু করি আমরা। রিক রায়জাদা আর মাহতাব রায়জাদা যে এতোদিনে আরো শক্তিশালী আর চালাক হয়ে উঠেছে সেটা জানতাম। তাই তাদের দুর্বল করতে তাদের লোকজন সরাতে হবে। যারা রায়জাদা দের ধরে নিয়ে গেল তারা ছিল বড় ভাইয়ের লোক। এই বিয়ে বাড়িতে ওরাই একে একে রিক রায়জাদার সমস্ত লোক সরিয়ে ফেলেছে। এই বাড়িতে এতো পুরুষমানুষ কেন ছিল জানো? সব ছিল রিক রায়জাদার লোক। তাই ওদের সরানো প্রয়োজন ছিল। তাই জন্যই বিয়ে বড় করে করতে বলেছিলাম আমি। যাতে এর মাঝে বড় ভাইয়ের লোকজন ঢুকে নিজের কাজ সারতে পারে। তোমার প্লানিং নিজের প্লানিং সাজিয়েছি আমি।”

হা করে চেয়ে থাকলাম। আয়াশ আমার হা বন্ধ করে দিতেই থতমত খেয়ে উনার দিকে তাকালাম।
–“ওয়েট! সবাই আছে। মারহাব রায়জাদাকে দেখতে পাচ্ছি না তো। ও তো এখানেই ছিল কোথায় গেল?”
কিছুক্ষণ আগের ঘটনা মনে পড়ল আমার। আয়াশকে গড় গড় করে বলে দিলাম সবটা। আয়াশের রাগ বেড়ে পাহাড়ের আকার ধারণ করল। রাগে ফুঁসে উঠেন উনি।
–“কোথায় আছে ওই ব্লাডি মারহাব রায়জাদা? ওর মুখ আমি ছিঁড়ে ফেলব। ও তোমাকে নোংরা কথা বলেছে। ওর শেষ দেখে ছাড়ব আমি। আমার হাতেই ওর মৃত্যু লিখা আছে।”
আমি এবারও আঁটকে দিলাম। বুঝিয়ে শুনিয়ে শান্ত করলাম। তবুও সিংহের মতো নিঃশ্বাস ছাড়ছেন উনি। উনার রাগ কমাতে আমি উনার হাত ধরে চুমু খেলাম। আস্তে আস্তে কমে আসছে সেই ফোঁস ফোঁস নিঃশ্বাস। শীতল হয়ে আসছে উনার চাহনি।

রাত তখন প্রায় ১০ টা। ড্রয়িং রুমে এপাশ-ওপাশ পায়চারি করছি আমি। কারো অপেক্ষা করছি সত্যি বলতে গেলে। আয়াশ আমাকে পায়চারি করতে দেখছেন আর বিরক্ত হচ্ছেন। অবশেষে না পেরে সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আমার হাত চেপে ধরলেন উনি। হাঁটা বন্ধ হয়ে গেল আমার। অস্থির হয়ে বললেন….
–“তখন থেকে বলছ কারো জন্য অপেক্ষা করছো। কিন্তু কার অপেক্ষা করছো তুমি নিশাপাখি? ওই জানোয়ারদের আজ হাতে পেয়েও ছাড় দিচ্ছি কেন?”
–“আপনি বুঝতে পারছেন না কেন? আপনি তো সবই জানেন না? আমার মায়ের সঙ্গে কি হয়েছিল? বাবার সঙ্গে কি হয়েছিল? আপনার ফ্যামিলির সঙ্গে কি হয়েছিল? সবই জানেন। ওরা ভয়ানক কষ্ট দিয়েছে আমাদের ফ্যামিলিকে। ওদের কষ্ট ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই কিছু আয়োজন করেছি আমি।”

–“কি আয়োজন করেছো?”
কিছু না বলে রহস্যময় হাসি দিলাম। তখনই বেজে ওঠে কলিং বেল। হাসি আরো প্রশস্ত হয়। হন্তদন্ত হয়ে গেলাম দরজার কাছে। খুলে দিলাম দরজা। আয়াশ বেশ কৌতুহল নিয়ে এগিয়ে এলেন। আমাদের সামনে তিনজন মানুষ। তারা ছেলে বা মেয়ে নয়। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। নিজেরদের শাড়ি ঠিক করে দাঁড়ালেন উনারা। আয়াশ আমার কাঁধে হাত রেখে ইশারা করলেন। আমি কিছু না বলতেই উনাদের মাঝে একজন বললেন….
–“আরে ভেতরে আইতে দিতা না? আমাগো কাম তো ভিতরেই। কারে কি করতে হইব কও।”
আমি দরজার কাছ থেকে সরে যেতেই আয়াশ ফিসফিস করে বললেন….
–“গ্রেট প্লান নিশাপাখি। আমি বুঝতে পারছি কি করতে চলেছো তুমি।”
আমি হেসে বললাম….
–“হ্যাঁ আমি এমন কিছু চলেছি যেটাতে পুরুষ হয়েও ওই তিনজনের মাথা লজ্জায় নুইয়ে যাবে। ক্ষণে ক্ষণে নিজের মৃত্যু কামনা করবে। যেটা সবসময় মেয়েদের সঙ্গে হয়।”

চলবে…..🍂🍂
বি.দ্র. ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর দেরিতে দেওয়ার জন্য দুঃখিত।
চলবে…..🍂🍂
বি.দ্র. খুব শীঘ্রই এই গল্পের অন্তিম ঘটবে। ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here