#ভালোবাসার_তৃষ্ণাতে_তুমি
#পর্বঃ১৪
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*অফিসার রুল তুলে অয়নের ভাঙ্গা পা এ আঘাত করতেই অফিসারের পিছন থেকে রাজ চিৎকার করে বলে উঠলো
— স্টপ অফিসার। আর একটাও আঘাত অয়নকে করবেন না। অয়নের বেল হয়ে গেছে।
রাজের কথা শুনতেই অফিসার বেশ চমকে যায়। হাতে থাকা দুলটা ফেলে দিয়ে অফিসার বেল নোটিশটা হাতে নিয়ে পড়তে লাগলো। অয়ন ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়িয়ে রাজের দিকে দৃষ্টিপাত করতেই রাজ দৌড়ে ছুটে আসতে লাগলো অয়নের দিকে। অয়ন রাজকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো
— ওখানেই দাঁড়িয়ে যা। আজ হঠাৎ করে এখানে কেনো এলি?
— বন্ধুর বিপদের দিনে আমি আসবো না তো কে আসবে?
— তা ঠিক আছে। আবার সময় মতো বন্ধুকে ছেড়ে যেতেও তোদের সময় লাগে না।
— খারাপ কাজ থেকে তোকে দূরে রাখতে গিয়ে যদি তোর থেকে কিছু সময়ের জন্য আমাকে আড়াল হয়ে থাকতে হয়। তবে আমি রাজি।
— হুম।
অফিসার বেল নোটিশটা পড়ে বেল পেপারে সাইন করে অয়নকে কাস্টরি থেকে বের করে আনলো। অয়ন কালো রং এর সুটটা পড়তে পড়তে অফিসারকে উদ্দেশ্য করে বলল
— অফিসার আমি অয়ন চৌধুরী। ইচ্ছে করলে তোমার মতো হাজারটা আইনের লোককে আমি আমার পকেটে রাখতে পারি। তবে আমি তা করি নাই। ভেবেছিলাম তুমি হয়তো অধরার মতো ভূল করেছো। কিন্তু না। তুমি তো বিক্রি হয়ে গেছো। এখন আমি বাহিরে বলে তোমাকে ঢপ দিচ্ছি না। কিছুক্ষণ পরেই তোমার চাকরিটা তোমায় হারাতে হবে। আমার শরীরের আঘাতের মাশুল শুধু তুমি না। তোমার স্ত্রী, বাচ্চা সবাইকে দিতে হবে। আসছি।
অয়ন কথাটা শেষ করতেই থানা থেকে বেরিয়ে আসতে লাগলো। অফিসার দৌড়ে অয়নের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পরলো। হাত জোড় করে অনুরোধ করছে অয়নের সামনে
— প্লিজ স্যার। এমনটা করিয়েন না। আমি আমার ভূল বুঝতে পেরেছি। প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দিন।
— সরি অফিসার আমি ক্ষমা করতে পারলাম না।
রাজের কাঁধের উপর ভর করে অয়ন গাড়িতে গিয়ে বসলো। গাড়িতে বসতেই রাজ অয়নকে উদ্দেশ্য করে মৃদু কন্ঠে বলতে লাগলো
— অয়ন হসপিটালের যাবি?
— উহু। আমি তোর বাড়ি যাবো।
— সেটা কেনো? অধরা, তোর মা বাবা সবাই চিহ্নিত অবস্থায় আছে আর তুই নিজের বাড়ি না গিয়ে এখন আমার বাড়ি যাবি।
— আগ্গে হ্যাঁ। আমি তোর বাড়ি যাবো। আর তোকে একটা কাজ করে দিতে হবে আমার। এখন আর প্রশ্ন করিস না। এই কয় দিন জামাই আদর পেয়ে ঘুমাতে পারিনি। আমি বাড়ি গিয়ে একটু রেস্ট নিতে চাই।
— হুম।
রাজ গাড়ি স্টার্ট করে গাড়ি নিয়ে থানার সামনে থেকে বেরিয়ে যায়। অয়ন গাড়ির আয়নায় নিজের মুখটা দেখে বাঁকা হাসি দিলো। সব কিছু জবাব দিতে হবে এদের। অয়ন রাজের বাড়ি এসে গেস্ট রুমে গিয়ে রেস্ট নিতে লাগলো
— আজ থেকে অয়নের চেয়ারে আমি বসবো। উফফফফ! কি শান্তি এই চেয়ারে। নিজের ইচ্ছে মতো সব কিছু করতে পারবো। যত খুশি টাকা নিজের করে নিতে পারবো আমি।
অর্পাকে উদ্দেশ্য করে কথা গুলো আনন্দের সহিত বলছে অভ্র। অভ্রর উদ্দেশ্য মৃদু হেসে অর্পা বলল
— তুমি এতোটা লোভী ছেলে সত্যি আমার আগে জানা ছিলো না। অর্থ খরচ করতে হলে আগে আয় করতে জানতে হয়। এই কথাটা নিশ্চই জানো তুমি।
— বাহ! অয়ন জেলে যেতেই অয়নের মতো কথা বলতে শুরু করে দিয়েছো।
— সত্যি বলছি। আচ্ছা ছাড়ো এই সব। নিজের ইচ্ছে মতো সব কিছু বুঝে নাও। তবে আমার একটা শর্ত আছে।
অর্পার শর্তের কথা শুনে অভ্র ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন সূচক দৃষ্টিতে তাকায় অর্পার দিকে
— কি শর্ত?
— অধরাকে সরিয়ে দাও। রাজ্য তোমার হয়ে যাবে। আমাকে রাজা দিয়ে দাও। সব কিছু তোমার। হ্যাঁ শুধু মাত্র তোমার।
— মানে? অধরাকে খুন করতে হবে!
— একদম ঠিক বুঝতে পেরেছো। আমি চাই না অধরা বেঁচে থাকুক। অয়ন কখন ও আমার হবে না। যতদিন ঐ অধরা নামক জীবটা বেঁচে থাকবে। খতম করে দাও ঐ অধরা নামক জীবটাকে। এই প্রপার্টি তোমার হয়ে যাবে।
— সত্যি!
— একদম সত্যি। পারবে তো?
— খুব পারবো।
* অর্পা আর অভ্র অধরাকে খুন করার পরিকল্পনা করতে লাগলো। অভ্র প্রপার্টির কথা শুনে লোভে চোখ জোড়া বড়বড় হয়ে গেলো। টাকার জন্য অভ্রর দ্বারা যে সব সম্ভব তা অর্পার অজানা নয়। অর্পা অভ্রর সাথে কথা বলতেই আচমকা অর্পার ফোনে কল চলে আসে। অর্পা ফোনটা পিক করতেই ওপার থেকে বেশ হাঁপানো কন্ঠে কেউ বলতে লাগলো
— ম্যাম অয়ন জেল থেকে বেরিয়ে গেছে।অফিসারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
— ওয়াট? অয়ন বেরিয়ে গেলো কি করে? ওহহহহ গড! অয়ন এখন কোথায় আছে?
— সেটা জানি না। তবে অয়ন জেলে নেই। আমি দেখছি অয়ন কোথায় আছে।
— হ্যাঁ। খোঁজ নে। দেখ অয়ন কোথায় আছে।
কলটা কাট করতেই অর্পা মাথায় হাত রেখে সোফার উপর ধপাস পরৈ বসে পরলো। বিড়বিড় করে অর্পা বলতে লাগলো “এই অয়ন আমায় একটু শান্তিতে থাকতে দিবে না। নিশ্চই বাড়ি ফিরে গেছে। অপহৃত লাগছে সব কিছু। এখন আমি অয়নকে কি করে নিজের করে পাবো? এই অফিসেও তো আর আশা হবে না। উফফফ! পুরো খেলাটা আমার হাতের বাহিরে চলে গেলো”।
অর্পার বিড়বিড় করে কথা বলার মাঝেই কেউ একজন দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অর্পা আর অভ্রকে উদ্দেশ্য করে ভিশন কর্কশ গলায় বলে উঠলো
— কোনো খেলাই হাতের বাহিরে চলে যায় নি। অয়নের অবর্তমানে আমি অয়নের বিজনেস সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।
কথাটা কানে ভেসে আসতেই অর্পার টনক নড়ে। অর্পা আর অভ্র অবাক হয়ে দরজার দিকে তাকাতেই থ হয়ে যায়। অধরা অফিসে। অভ্র অধরাকে দেখে অয়নের চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। অধরা অয়নের চেয়ারে অভ্রকে দেখতে পেয়ে রেগে আগুন হয়ে যায়। রাগে গজগজ করতে করতে অধরা অভ্রকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো
— এই মিস্টার তোমার সাহস হয় কি করে বসের চেয়ারে বসার?
অধরার রাগি কন্ঠস্বর শুনে অভ্র ভেবে পাচ্ছে না কি বলবে? অভ্র আমতো আমতো করে বলতে লাগলো
— সরি ম্যাম। আমি ভেবেছি স্যার নেই তা হলে স্যারের কাজ গুলো তো কাউকে সামলাতে হবে। তাই এখানে বসেছি। আমায় ক্ষমা করে দিবেন।
— স্যার এর মিসেস আছে। সো এই নিয়ে তোমায় চিন্তা করতে হবে না। এখন যাও মিটিং এরেঞ্জ করো। আমি সকলের সাথে পরিচিত হতে চাই।
— সিওর ম্যাম।
অভ্র অধরার কথা শেষ হতেই দৌড়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। অধরা অয়নের চেয়ারে বসে অর্পার দিকে দৃষ্টিপাত করে। অর্পাকে দেখে মনে হচ্ছে ভিশন সকের মধ্যে আছে সে। অধরা অর্পাকে উদ্দেশ্য করে একটু কড়া কন্ঠে বলে উঠলো
— মিস অর্পা আপনি এই অফিসে কি করছেন? এতো কিছু হয়ে যাবার পরেও আপনি এখানে আসলেন কি করে?
অর্পা একদম নিশ্চুপ হয়ে আছে। মুখ কোনো ভাষা নেই। অবাক চোখ জোড়া এক দৃষ্টিতে অধরার দিকে তাকিয়ে আছে। অর্পার কোনো জবাব না পেয়ে অধরা আবার চিৎকার করে বলতে লাগলো
— মিস অর্পা আমি আপনাকে বলছি। এখানে এতো কিছু হয়ে যাবার পরেও কেনো এসেছেন?
অধরার চিৎকারে অর্পার ঘোর কাটলো। অর্পা আমতো আমতো করে বলতে লাগলো
— আসলে ম্যাম আমার এই জবটা না থাকলে না খেতৈ পেয়ে মরতে হবে। তাই মানসম্মানে্য কথা না ভেবে আমি এখানে কাজের জন্য চলে আসি।
— ওহহহ। কিন্তু আপনার এই সময়ে অফিসে না আসাই ভালো। আসার সময় শুনতে পেলাম কিছু লোক আপনাকে আর আপনার চরিত্র নিয়ে বাজে মন্তব্য করছে। আপনি বাড়িতে থাকুন। সময় মতো আপনার বেতন পৌঁছে যাবে।
— না ম্যাম। একদম না। আমি অফিসে আসবো কাজ করবো তারপর বেতন নিবো। এমনি এমনি টাকা আমি নিবো না।
— তা হলে সরি। আপনাকে অফিসে রাখতে পারলাম না। আপনি আসতে পারেন।
* অধরার বিরক্তি কর কন্ঠস্বর অর্পাকে অবাক করে দিলো। অর্পা অধরার দিকে কয়েক পা এগিয়ে আসতেই অধরা অর্পাকে……………………
#চলবে……………………..