ভালোবাসার তৃষ্ণাতে তুমি পর্ব -১৫

#ভালোবাসার_তৃষ্ণাতে_তুমি
#পর্বঃ১৫
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
*অর্পা অধরার দিকে কয়েক পা এগিয়ে আসতেই অধরা অর্পাকে উদ্দেশ্য করে চিৎকার করে বলে উঠলো

— স্টপ। ওখানেই দাঁড়িয়ে যান। আপনাকে বললাম না এখান থেকে চলে যেতে? কথা কানে যায় না? গেইট আউট।

— ম্যাম, আমার সাথে রুডলি বিহ্যাভ করছেন কেনো? আমি কি কোনো অপরাধ করেছি? আমি স্বাধীন ভাবে চাকরি করতে পারবো না কেনো? আপনার স্বামী আমাকে ধর্ষণ করেছে। এই কারনে আমায় নিয়ে লোকে হাজারটা কথা বলছে। আমি কাউকে মুখ দেখাতে পারছি না। এখানে আমার ভূল টা কোথায়?

অর্পার কান্না ভেজা কন্ঠেস্বর আর চোখের কোনে জমে থাকা নোনা জল যে কারো মন গলে যাবে। অধরা অর্পার দিকে নিম্ন দৃষ্টিতে তাকিয়ে মৃদু কন্ঠে বলল

— অর্পা, আমার স্বামী তোমার সাথে যা করেছে সত্যি তা খুব খারাপ করেছে। কিন্তু একটা কথা আমার স্বামী কিন্তু অফিসের মধ্যে তোমার সাথে বাজে ব্যবহার করেনি।‌ কোথায় তোমাকে ধর্ষণ করেছে তা তুমি ভালো যানো। আমি প্রশ্ন করলে অনেক কিছু বলতে পারি। কিন্তু না। সেটা আইন সিদ্ধান্ত নিবে। তুমি এখন যেতে পারো।

অধরার মৃদু কন্ঠে বলা কথাটি শেষ হতেই অভ্র কেবিনের সামনে এসে দাঁড়ায়। অধরাকে উদ্দেশ্য করে হাঁপাতে হাঁপাতে বলতে লাগলো

— ম্যাম, পরিচিত হবার জন্য বসাই মিটিং রুমে অপেক্ষা করছে। আপনি আসুন।

অভ্রর কথাটা শেষ হতেই অধরা হনহন করে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়। অধরা এতো কিছু বলার পরেও অর্পা নিশ্চুপ হয়ে আছে। কোনো কথা বলছে না। অভ্রর দিকে তাকিয়ে অর্পা মুখ ঝামটা মেরে কেবিন‌ থেকে বেরিয়ে যায়।

— অয়ন এই শরীরে কোথায় যাচ্ছিস?

রাজের বিচলিত কন্ঠকে উপেক্ষা করে অয়ন মুচকি হেসে রাজকে উদ্দেশ্য করে বলল

— এই একটু বাহির থেকে ঘুরে আসছি। মনটা ফ্রেশ করে নিতে হবে তো নাকি।

— হুম। কিন্তু একটু সুস্থ হয়ে তারপর না হয়!

— আরে ভাই আমি ঠিক আছি। অনেক কিছু জানা বাকি আছে। খবর নেয়ার জন্য আমাকে যেতেই হবে।

* কথাটা শেষ করতেই অয়ন রাজের বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। রাজ অয়নের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এসব কি বলে গেলো অয়ন? কিছুই তার বোধগম্য হচ্ছে না। রাজ পকেট থেকে ফোনটা বের করে কল করলো কোনো‌ একজনকে। অয়ন বাড়ি থেকে বেরিয়ে একটা গাড়ি করে বেরিয়ে পরে অজানা গন্তব্যেহীন‌ পথে। অর্পার এই নোংরা খেলার পিছনের মাস্টার মাইন্ডটা কে? তা জানতেই হবে। অর্পা আসলে কি চায়? আমায় না আমার প্রপার্টি? অর্পা আসলে কে? কি জন্য এসেছে? সব প্রশ্নের উত্তর চাই আমার। আর চাই মানে চাই। অয়নের মাথায় প্রশ্ন গুলো ঘোরপাক খাচ্ছে। কোথা থেকে শুরু করবে তা বুঝতে পারছে না অয়ন।

বাড়ির আসতে আসতে অর্পার প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসে। অর্পা নিজের ফ্লাটের দরজার লকটা খুলতেই দেখতে পেলো রুমটা ভিশন অন্ধকার। এতোটা আঁধার কালো হয়ে আছে যে রুমের মধ্যে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। অর্পা ফোনের টর্চটা অন করে রুমের মধ্যে প্রবেশ করলো। রুমের মধ্যে একটু হালকা বাতাস বয়ে যাচ্ছে। অর্পা একটু একটু করে ভয় পাচ্ছ। অর্পা মেন সুইচের দিকে এগিয়ে এসে দেখে লোডসেটিং হয়েছে। কিন্তু অর্পার মাথায় আসছে না লোডসেটিং হলেও তো তার রুমে আলো থাকবে। কিন্তু আলো নেই কেনো? অর্পা নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যায়। ইলেকট্রিসিয়ানকে কল করার জন্য। অর্পা নিজের রুমে গিয়ে টেবিলের উপর ডায়রীটা খোঁজ করতে লাগলো। ডায়রীর মধ্যে ইলেকট্রিসিয়ানের নাম্বার আছে। অর্পা মনোযোগ দিয়ে ডায়রীটা চেক করছে। আচমকা অর্পা অনুভব করলো তাকে পিছন থেকে কেউ জাপটে ধরে জড়িয়ে ধরেছে। অর্পা ষিজের পেটের উপর কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করছে। অর্পা ভয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলো

— কে!?

অর্পা কোনো জবাব পেলো না। অর্পার ভয় আরো কয়েক গুণ বেড়ে যায়। অর্পা ফোনের টর্চটা নিজের পেটের উপর ধরতেই ভয়ে চিৎকার করে উঠল। হ্যাঁ এক জোড়া হাত তার পেটের উপর রয়েছে। অর্পা পিছন ফিরে তাকাতেই বিদ্যুৎ চলে আসে। অর্পা পিছন ফিরে তাকিয়ে চমকে উঠে। অর্পা দেখতে পেলো তার পিছনে অয়ন দাঁড়িয়ে আছে। তার মানে অয়ন তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ছিলো। অর্পা বিষ্ময় সূচক দৃষ্টিতে অয়নের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। অয়নের মুখটা একদম শুকিয়ে আছে। অয়নকে দেখে বেশ বোঝা যাচ্ছে তার মনের মধ্যে হাজারটা অভিযোগ লুকিয়ে আছে। অর্পা আপন মনে ভাবছে “হঠাৎ করে অয়ন এমন ভাবে তার রুমে কেনো উপস্থিত হলো? অয়নের সাথে যা করেছি তার সাজা দিতেই কি অয়ন এখানে এসেছে? অয়ন কি কিছু করবে? অর্পা ভয় মিশ্রিত কন্ঠস্বর নিয়ে অয়নকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো

— অয়ন তুমি এখানে? এমন ভাবে এলো! কি হয়েছে? জেল থেকে ছাড়া পেলে কি করে?

অর্পার প্রশ্ন শুনে অয়ন সোফার উপর ধপাস করে বসে পরলো। অর্পার চোখ বরাবর দৃষ্টিপাত করে একদম মৃদু কন্ঠে অয়ন বলে উঠলো

— আমাকে দেখে তুমি খুশি হওনি? তুমি কি চাইতে আমি জেলে পচে মরি? আমি তো কোনো অপরাধ করিনি অর্পা তবে কেনো আমায় সাজা দিলে? কেনো আমায় কষ্ট দিলে? তুমি তো আমায় ভালোবাসো তবে কেনো এমনটা করলে?

অয়নের কথা গুলো অর্পাকে ভিশন রকম চমকে দিলো। আসলে কি অয়ন তার সামনে বসে আছে? নাকি অন্য কেউ? এই অয়নকে বেশ অচেনা লাগছে তার। আগের অয়ন তার সামনে বসে নেই তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এতোটা শান্ত ভাবে অয়ন কথা বলতে পারে না। অর্পা একটু চমকে গিয়ে অয়নকে আবার প্রশ্ন করে উঠলো

— অয়ন তুমি ঠিক আছো? তোমাকে দেখে কেমন যেনো অদ্ভুত লাগছে। কি হয়েছে?

অর্পার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে অয়ন মৃদু হাসার চেষ্টা করে বলল

— আমি ঠিক আছি। আজ কিছু সত্যের সামনাসামনি হয়েছি। তাই একটু আপসেট আছি।

অয়নের কথায় অর্পার মনে আবারও প্রশ্ন জাগলো কোন সত্যের কথা বলছে অয়ন? অয়ন কি আমার সত্যের কথা বলছে? অর্পা একটু সাহস বুকে সঞ্চয় করে অয়নের দিকে একটু এগিয়ে এসে বলতে লাগলো

— অয়ন কোন সত্যির কথা বলছো তুমি? বিশ্বাস করো আমি এমনটা………

অর্পাকে বাকি কথা বলার সুযোগ অয়ন দিলো না। অর্পার কথার মাঝে অয়ন অর্পার হাত ধরে ফেলে। অর্পার হাত ধরে অয়ন একটানে অর্পাকে নিজের পাশে নিয়ে আসে। অর্পা অয়নের টানের তাল সামলাতে না পেরে অয়নের পাশে বসে পরে। অর্পা আবারও অবাক হয়ে যায়। অয়ন অর্পার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে কান্না ভেজা কন্ঠে বলতে লাগলো

— তুমি আমায় কেনো এই মিথ্যে অভিযোগ দিয়ে জেলে পাঠালে? আজ তোমার জন্য আমি সব সত্যি জানতে পেরেছি।

— বিশ্বাস করো অয়ন আমি তোমাকে অধরার থেকে আলাদা করতেই এই কাজ করেছি। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমার সহ্য হয় না অধরাকে। আমার তোমাকে চাই। তাই এই নোংরা খেলা খেলেছি আমি। অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমায়। শুধু মাত্র তোমাকে আপন করে পাবো বলে। অয়ন আমাকে তুমি শাস্তি দাও। যা শাস্তি দিবে আমি মাথা পেতে নিবো। কিন্তু প্লিজ তোমার পায়ে পরি আমায় ক্ষমা করে দাও।

কথাটা শেষ করতে করতে অর্পা অয়নের পা ছুঁতে যাবে ঠিক এমন সময় অয়ন অর্পাকে নিজের বুকে টেনে নেয়। অর্পার চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। অয়ন আলতো করে অর্পার চোখের পানি মুছে দিয়ে অর্পাকে বুকে নিয়ে বলতে লাগলো

— আমি ভূল করেছি অর্পা। অধরা আমার যোগ্য নয়। আজ জেল থেকে বেরিয়ে আমি জানতে পারি আমার অবর্তমানে অধরা আমার সমস্ত প্রপার্টি নিজের‌ নামে করে নিয়েছে। অর্পা তোমার মিথ্যে অপবাদ যদি আজ না আসতো তবে আমি অধরার আসল সত্যি কখনও জানতে পারতাম না। অধরা আমায় আমার প্রপার্টির জন্য বিয়ে করেছে। ভালোবাসা মিথ্যে অভিনয় করেছে আমার সাথে। ওর জন্য আমি তোমার থেকে দূরে সরে গিয়েছিলাম। তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও প্লিজ। আমার আর কাউকে চাই না। শুধু মাত্র তোমাকে চাই। আমাকে একটা সুযোগ দাও তোমায় ভালোবাসার প্লিজ।

* অয়নের কথা গুলো অর্পার বিশ্বাস হচ্ছে না। আদু এটা স্বপ্ন কিনা তা নিয়ে অর্পার মনের মধ্যে প্রশ্ন সৃষ্টি হয়ে গেছে। অর্পা অয়নের বুকে মাথা রেখে আনন্দে পাগল হয়ে আপন মনে বলছে “যা এদেখি মেঘ না চাইতেই জল। ভেবেছিলাম কি আর হলো কি? সবটা হাতের নাগাল থেকে বেরিয়ে গিয়েও আবার হতে ফিরে আসলো। উফফফফ! গড ইউ আর রিয়েলি গ্রেট। অধরার থেকে অয়নকে আলাদা করার আর কোনো চেষ্টা করতে হলো না আমায়। এখন রাজাও আমার আর রাজত্ব ও”। অর্পা আপনার মনে যখন এসব ভাবছে ঠিক ঐ মুহুর্তে অয়ন অর্পার ভাবনার মাঝে বলে উঠলো

— কি গো ক্ষমা করে আমায় সুযোগ দিবে না?

অর্পা অয়নকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে মৃদু কন্ঠে বলে উঠলো

— দিবো কি? আমি তোমার আছি আর তোমারি থাকবো।

অয়ন আর অর্পা ভালোবাসার পরশ বিনিময়ের সময় হঠাৎ করে দরজার সামনে থেকে কেউ একজন হাত তালি দিতেই অয়ন আর অর্পার টনক নড়ে উঠলো। অর্পা অয়নের বুক থেকে মাথা তুলতেই দেখতে পেলো দরজার সামনে ওপারে দাঁড়িয়ে আছে……………………

#চলবে………………….

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here