ভালোবাসার প্রজাপতি পর্ব -৩৫+৩৬

#ভালোবাসার_প্রজাপতি
#পর্বঃ৩৫ (বোনাস + ধামাকা)
#মাহিয়া_মুন (লেখনীতে)

চৌধুরী বাড়ির ড্রয়িং রুমে বসে আছে পুরো চৌধুরী পরিবার। এই মূহুর্তে যে যার অফিস বা অন্য কোনো কাজে থাকার কথা থাকলেও আজিজ চৌধুরীর কথায় তা আর হয়ে উঠে নি। সকালে ব্রেকফাস্ট করার সময় আজিজ চৌধুরী জানিয়ে দিয়েছেন যাতে কেউ আজ বাড়ির বাহিরে না যায়।
আদ্রিজ অনেক্ষন পর্যন্ত আজিজ চৌধুরীকে পর্যবেক্ষণ করেও কিছু বুঝতে পারলো না। তবুও তার মন বলছে এই লোক আজ কিছু একটা করবে।
নীরবতা ভেঙে আদি বলে উঠলো,
“বাবা আমার আজকে স্কুলে ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস ছিল। তুমি বড়দের ব্যাপারে আমাকে কেন রাখলে?”
“কারণ ছাড়া রাখি নি। চুপচাপ বসে থাকো।”
আদ্রিজ ভ্রু কুচকে বলে উঠলো,
“কিন্তু কারণটা কি সেটাই তো বলছোনা। চুপচাপ এভাবে বসিয়ে রেখেছো কেন?”
আজিজ চৌধুরী কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনি সদর দরজা দিয়ে কালো কোর্ট পরিহিত একজন লোককে আসতে দেখে দুজন ব্যাক্তির মুখে হাসি ফুটে উঠলো। বাকিরা ভ্রু কুচকে সেদিকটায় তাকিয়ে রইলো।
আজিজ চৌধুরী হেসে লোকটির নিকট গিয়ে কোলাকোলি করলেন।
সকলের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,
“এ হচ্ছে আমার বন্ধু মিস্টার হামিদ। বর্তমানে একজন লয়ার।”
সবাই জোরপূর্বক হেসে কুশলাদি বিনিময় করলো।
আদ্রিজ আজিজ চৌধুরীর উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
“কিন্তু তুমি হটাৎ উকিল কেন আনলে বাসায়?”
আজিজ চৌধুরী কিছুক্ষণ আদ্রিজের দিকে তাঁকিয়ে জোরে হেসে উঠলেন।
হাসতে হাসতে বলে উঠলেন,
“রাইট বেটা। উকিল কেন আনলাম। তুমি কি এখনো বুঝতে পারছো না বেটা।”
আদ্রিজ বলে উঠলো,
“না কি বুঝার কথা বলছো?”
আদ্রিজ চৌধুরী দাতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,
“আমার এতদিন অপেক্ষা করার ফল এতো সহজেই নিহা খান তোমার নামে করে দিল আর সেটা আমি চুপচাপ দেখে নিব ভাবলে কি করে? তুমি কি ভেবেছো বেটা আমি জানিনা যে নিহা খান এই পুরো চৌধুরী বাড়ির অর্ধেক প্রপার্টি তোমার নামে করে দিয়েছে। সবটাই জানি আমি। আর এখন তুমি চুপচাপ সাইন করে দিবে। এই চৌধুরী প্রপার্টি পাওয়ার জন্য আমি কি না করেছি আর তুমি কিছু না করে এতো সহজে সবটা পেয়ে গেলে। আমি কিছুতেই সেটা হতে দিবো না।”
সবাই অবাক চোখে আজিজ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে রইলো। আজিজ চৌধুরী কিসব বলছে কিছুই যেন কারো মাথায় ঢুকছে না।
আদ্রিজ ভাবছে অন্য কথা। এই প্রপার্টি পেপার্স তো সে লুকিয়ে সিপারেট জায়গায় রেখেছে। তাহলে আজিজ চৌধুরী এসব কি বলছে। আর জানলই বা কিভাবে।
আজিজ চৌধুরী আদ্রিজের মুখের দিকে তাকিয়ে পুনরায় হেসে উঠলো। আজ যেন হাসির দিন।
হাসতে হাসতে বলে উঠলো,
“কি ভাবছো বেটা আমি কি করে জানলাম তাইতো। খুব সিম্পল। তোমাকে আমার আগেই সন্দেহ হয়েছে। আর গতকাল রাতে নিহা খানের ছবির দিকে তাঁকিয়ে তুমি অজান্তেই সবটা বলেছো। আর বলার পর তুমি পেপার্স গুলো রেখে দিয়েছিলে। আর তখনি দেখে নিয়েছিলাম। সরি আমি দেখি নি। দেখেছে অন্য একজন। আর এভাবেই প্রপার্টি পেপার্স আমার হাতে চলে এসেছে।”
আদ্রিজের রাতের কথা মনে পড়লো।
রেগে আজিজ চৌধুরীর কলার চেপে ধরে বলে উঠলো,
“আপনি এসব কেন করছেন? আপনি আমাকে কেন মারতে চেয়েছেন? আপনার জন্য আজ নিহা বেঁচে নেই। আপনি খুন করেছেন তাকে। গাড়িতে আপনি বোম রাখিয়েছেন। আপনি বাবা হয়ে কি করে আমায় মারতে চাইলেন?”
আজিজ চৌধুরী হেসে আদ্রিজের হাত কলার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে উঠলো,
“কুল বেটা। জেনে ফেলেছো বুঝি এতো কিছু। যাক ভালোই করেছো। কেন করেছি বলবো তো। তবে তার আগে যে তোমাকে ছোট্ট একটা কাজ করতে হবে।”
এই বলে আজিজ চৌধুরী মিস্টার হামিদকে ইশারা করতেই মিস্টার হামিদ ফাইল থেকে কিছু পেপার্স বের করে আজিজ চৌধুরীর হাতে দিলেন।
আজিজ চৌধুরী পেপার্স গুলো আদ্রিজের সামনে ধরে বলে উঠলো,
“সাইন করে দেও এখানে বেটা।”
“কিসের পেপার্স এইগুলা?”
“চৌধুরী বাড়ির প্রপার্টি পেপার্স। যেটা নিহা খান তোমার নামে করে দিয়েছে।”
আদ্রিজের ভ্রু কুচকে গেল।
“আপনি বারবার নিহা খান কেন বলছেন নিহাকে?”
আজিজ চৌধুরী হাসতে হাসতে বলে উঠলেন,
“কামন মাই সন। হাসালে আমায়। তুমি জানোনা কিছু। তোমার বউ খান ইন্ডাস্ট্রির মালিক। খান পরিবারের এক মাত্র মেয়ে। S.H.O মিষ্টার নোমান খানের একমাত্র মেয়ে মিস নিহা খান।”
আদ্রিজ চমকে আজিজ চৌধুরীর দিকে তাকালো। S.H.O মিষ্টার নোমান খানের ব্যাপারে সে কিছুটা শুনেছিল প্রায় কয়েক বছর আগে। খুবই ভালো একজন লোক ছিল। তবে সে যতটুকু জানে লোকটা প্রায় বহু বছর আগেই মারা গেছে। নাহ্ খুন হয়েছে। তবে কে বা কারা এমন করেছে জানতে পারে নি পুলিশ। তার মেয়ে নিহা। সব যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে আদ্রিজের মাথায়।
আজিজ চৌধুরীকে কেউ একজন ইশারা করতেই আজিজ চৌধুরী বলে উঠলেন,
“অনেক হয়েছে বেটা এবার সাইন করে দেও।”
আদ্রিজ রেগে বলে উঠলো,
“কিছুতেই নাহ।”
“ঘারত্যারামি করো নাহ আদ্রিজ। আগে পরে সাইন তোমাকে করাই লাগবে। So সাইন টা করে ফেল।”
“কিছুতেই নাহ।”
“তুমি সাইন না করলে একজন নিরীহ মানুষের প্রাণ চলে যাবে। ওহ্ সরি একজন নয় তার গর্ভে আরো একজন আছে। এই দুজনের জীবন এখন তোমার হাতে।”
আদ্রিজ দ্রুত পাশে তাকাতেই চোখ বড় বড় হয়ে গেল। এ সে কি দেখছে। মা……
আশা চৌধুরী বাঁকা হেসে মেঘার মাথায় বন্দুক ধরে রেখেছে।
মেঘা ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো। সবাই অবাক হয়ে আশা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে রইলো।
আদ্রিজ অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলো,
“মা…..”
আশা চৌধুরী হেসে বলে উঠলেন,
“সব বলবো সাইন করো আগে বেটা। নাহলে এই মুহূর্তেই এখানে রক্তের বন্যা বইয়ে দিব।”
মেঘ বলে উঠলো,
“বড়আম্মু তু…তুমি। মেঘাকে ছেড়ে দেও প্লীজ।”
“ছাড়বো তো আগে বলো তোমার ভাইকে সাইন করতে।”
“আমি সাইন করছি।”
এই বলে আদ্রিজ কলমটা হাতে নিতেই একটা বুলেট এসে টেবিলে রাখা পেপার্স এ আদ্রিজের সাইন করা জায়গা বরাবর লাগল।
সবাই চমকে টেবিলে তাকালো। একদম আদ্রিজের সাইন করা জায়গা বরাবরই ছিদ্র হয়ে আছে। স্পস্ট বুঝা যাচ্ছে এখানে গুলি লেগেছে। তবে গুলিটা করলো কে?
ওতি বার বেরো না……
ঝরে পড়ে যাবে…
ওতি খাটো হয়না……
ছাগলে খেয়ে ফেলবে…

মেয়েলি কণ্ঠস্বর পেয়ে সবাই সদর দরজার দিকে তাকালো। আর তাকিয়ে যা দেখলো তাতে যেন সবার জ্ঞানহারিয়ে ফেলার উপক্রম।
ব্ল্যাক শার্ট, ব্ল্যাক লেগিন্স, ব্ল্যাক কেটস, লম্বা চুলগুলো মাথায় জুটি করা, হাতে ব্ল্যাক ব্র্যান্ডেড ওয়াচ পরিহিত সেই পরিচিত মুখ। যার বাম হাত প্যান্ট এর পকেটে ঢুকানো আর ডান হাতে বন্দুক। বাম পাশে দাঁড়ানো জার্মানির বিখ্যাত সুপার সিঙ্গার মিস্টার নিহান খান আর ডান পাশে দাঁড়ানো তার ফিয়ন্সি।
সবাই অবাক চোখে তাঁকিয়ে আছে।
আদ্রিজের মুখ দিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বেড়িয়ে আসলো,
“এলোকেশী…..”
নিহা আজিজ চৌধুরী এবং আশা চৌধুরীর দিকে তাঁকিয়ে হেসে উঠলো। আশা চৌধুরীর অবস্থান বুঝে আশা চৌধুরীর হাত বরাবর পরপর দুটি গুলি করলো।
পুনরায় আজিজ চৌধুরীর দিকে তাঁকিয়ে তার দু পায়ে পরপর দুটি গুলি করলো।
সবাই ভয়ে স্থির হয়ে গেল।
আশা চৌধুরী হাত চেপে ধরে মেঝেতে বসে পড়লো। আজিজ চৌধুরী মেঝেতে পরে ব্যথায় কাতরাতে লাগলো। তাদের মাথায় আসছে না নিহা খান বেঁচে আছে কি করে।
নিহা বন্দুকটি নিহানের হাতে দিয়ে আশা চৌধুরীর কাছে এসে আশা চৌধুরীর গুলিবিদ্ধ হাতটি চেপে ধরলো। আশা চৌধুরী ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠলো।
“ভাবলেন কি করে মিসেস আশা চৌধুরী। এই নিহা খানের চোখকে ফাঁকি দিবেন। বলেছিলাম নাহ এই খেলার সমাপ্তি আমি টানবো। আপনাদের মতো কোনো কাঁচা খেলারি নয় আমি।”
এই বলে নিহা আশা চৌধুরীর পাশ থেকে বন্দুকটি উঠিয়ে সোজা হয়ে দাড়াল। একে একে সবার দিকে তাকিয়ে হাত উচু করে হায় জানালো।
সবাই যেন এতে আরো অবাক হলো। কারো মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না।
আদ্রিজ পলকহীন তাকিয়ে রইলো নিহার দিকে। একি তার সেই শাড়ি পরিহিত এলোকেশী মায়াবতী।

*

#চলবে

(😌😌😌😌😌কেমন হইছে গো, কমেন্ট বক্স এ জানাতে ভুইলো না কেউ 😒😌)#ভালোবাসার_প্রজাপতি
#পর্বঃ৩৬ (রহস্য উন্মোচন)
#মাহিয়া_মুন (লেখনীতে)

“যাচ্ছে দিন খারাপ তো আসবে দিন ভালো। আবার যাচ্ছে দিন ভালো তো আসবে দিন খারাপ। এটাই আমাদের জীবনচক্র। সময় সাপেক্ষে সুখ-দুঃখ দুটোই অনুভব করা লাগে। সময় সবটা ফিরিয়ে দেয়। ভালো কাজ করবে তো এর বিনিময়ে ভাল ফলাফল পাবে আর যদি খারাপ কাজ করো তো এর বিনিময়ে ও ফলাফল পাবে।”
এই বলে নিহা সবার দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো। নিহান এবং ঊর্মির হাত ধরে তাদের সোফায় বসালো।
সকলের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
“আমাকে তো চিনোয়। আমি তোমাদের সেই নিহাই। তবে তাঁর সাথে আরো একটা পরিচয় আছে। আর এই দুজনকে নিশ্চয়ই চিনো। টিভি পর্দায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় তো এদেরকে দেখায় যায়। জার্মানী সুপার সিঙ্গার মিস্টার নিহান খান এবং তাঁর ফিয়ন্সী মিস ঊর্মিলা ঊর্মি। কথা হলো এরা এখানে কেন তাও বা আমার সাথে কি করে? S.H.O মিষ্টার নোমান খানের কথা আশা করি সবাই শুনেছ। তার মৃত্যুর একুশ বছর পার হয়ে গেছে। এটাও জানো নিশ্চয়ই যে তাঁকে খুন করা হয়েছে। খান ইন্ডাস্ট্রি এর কথাও অনেকেই জানো তাইনা।”
খান ইন্ডাস্ট্রি এর কথা শুনতেই মিস্টার মেহরাব চৌধুরী মাথা নাড়ালেন।
নিহা হেসে পূনরায় বলে উঠলো,
“S.H.O মিস্টার নিহান খানের একমাত্র মেয়ে আমি মিস নিহা খান এবং একমাত্র ছেলে মিস্টার নিহান খান। He is my Brother.”
সবাই চমকে নিহার দিকে তাকালো। তাদের জন্য যেন আজ একের পর এক চমক অপেক্ষা করছে।
“এতো তাড়াতাড়ি চমকে যেও না কেউ। আমার বাবা খুন হয়েছে এটা জানো তোমরা। কে খুন করেছে আজ পর্যন্ত কেউ জানেনা। তবে আমি তার মেয়ে। আমার শরীলে তার রক্তই বইছে। চলো প্রথমে তোমাদের আমি আমার জীবন কাহিনী শুনায়।”
এই বলে নিহা পূর্ববর্তী করা সকল কাজের কথা বর্ণনা করলো।
সবাই স্থির চোখে নিহার দিকে তাঁকিয়ে রইলো। এতো কিছু তাদের অজান্তে হয়ে গেল অথচ তারা জানাতো দূর উপলব্ধি পর্যন্ত করতে পারলো না। এই নিহা কিনা ভিতরে ভিতরে এতো ভয়ংকর অথচ তারা বুঝতেও পারলো না।
নিহা চোখের কোনে জমা হাওয়া পানি টুকু মুছে নিয়ে পুনরায় বলে উঠলো,
“কি বুঝতে পারলে তো। এখন কথা হলো আমিতো বাবার খুনি দের মেরেই ফেললাম তাহলে আজিজ চৌধুরী আর আশা চৌধুরীর সাথে কি সম্পর্ক? ওয়েট পানি খেয়ে নেই গলা শুকিয়ে গেছে এতো কিছু বলতে গিয়ে।”
এই বলে নিহা টেবিলে রাখা গ্লাস থেকে পানি খেয়ে নিল। জোরে নিঃশ্বাস ফেলে সকলের দিকে তাকালো। কারণ এখন যেটা বলতে যাচ্ছে তাতে তাঁর থেকেও বেশি কষ্ট হবে আদ্রিজের।
নিহা কিছু বলতে যাবে তার আগে হটাৎ করে ঘটে গেল সবার জন্য অনাকাঙ্ক্ষিত একটি ঘটনা।
আশা চৌধুরী কোমড়ে গুঁজে রাখা বন্দুক বের করে আদ্রিজের মাথায় ধরলো।
হাসতে হাসতে বলে উঠলো,
“তুই কি ভেবেছিস এতো সহজে আমি হার মেনে নিবো। কখনোই নাহ। খেলা শুরু করেছি আমি আর শেষটাও আমিই করবো। আমাকে এখান থেকে বের হতে দে নাহলে তোর প্যায়ারা আদ্রিজকে আমি এখানেই শেষ করে দিবো।”
সবাই ভয়ে স্থির হয়ে গেল।
নিহা ভ্রু কুচকে আদ্রিজের দিকে তাঁকিয়ে হাতে থাকা বন্দুকটি দিয়ে কপালে ঘষতে ঘষতে বলে উঠলো,
“তোর ছেলে তুই গুলি কর নয়তো যা ইচ্ছে কর। এইযে আমি বন্দুক রেখে দিয়েছি। শুট কর।”
এই বলে নিহা বন্দুকটি হাত থেকে রেখে দিয়ে বুকে হাত গুঁজে আদ্রিজের চোখের দিকে তাঁকিয়ে রইলো। আদ্রিজও পলকহীন নিহার দিকে তাঁকিয়ে রইলো।
“আমি কিন্তু সত্যি শুট করে দিবো বলছি।”
নিহা আদ্রিজের চোখের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে উঠলো,
“কর আমি কি মানা করেছি নাকি।”
আশা চৌধুরী এবার ভয়ে ঘামতে লাগলো। চোখ বন্ধ করে বন্দুকটি নিহার দিকে ধরে চালিয়ে দিল। কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে চোখ খুলে সামনে তাকাতেই চমকে গেল।
নিহা ঠিক আগের মতোই আদ্রিজের দিকে তাঁকিয়ে আছে। হেসে বলে উঠলো,
“বলেছিলাম না আমি কোনো কাঁচা খেলারি নয়। বুলেটবিহীন বন্দুক নিয়ে ঘুরছিস।তোর বন্দুকে তো কোনো বুলেট ই ছিলো না।”
আশা চৌধুরী ভয় পেয়ে গেলেন। তার স্পষ্ট মনে আছে সে বন্দুক চেক করেই রেখেছিল রাতে।
নিহার দিকে তাকিয়ে দেখলো তার দিকেই তাকিয়ে বাঁকা হাসছে। আসা চৌধুরীর আর বুঝতে বাকি নেই যে নিহাই বন্দুক চেঞ্জ করে দিয়েছে।
ভয়ে সুযোগ বুঝে সদর দরজার দিকে দৌড় দিতে গেলেই নিহা আশা চৌধুরীর পায়ে শুট করে দিল।
আশা চৌধুরী মেঝেতে পড়ে ব্যাথায় কাতরাতে লাগলো।
নিহা বাঁকা হেসে বলে উঠলো,
“বেশি ছটফট করবি না। যা বলবো তা শুনবি শুধু। আর যদি কোনো ভুল হয় তাহলে সমাধান করে দিবি।
আমার বাবার মৃত্যুর সাথে এদের কি সম্পর্ক? এইযে এই লোকটা মিস্টার আজিজ চৌধুরী। ইনি তো আজিজ চৌধুরী ই নন। এই চৌধুরী বংশের কেউ নয় ইনি। ইনি হচ্ছেন একসময়ের S.H.O মিষ্টার রাশেদ। যিনি আমার বাবার আগে S.H.O পদে ছিলেন। কিন্তু নিজের কুকীর্তির জন্য সম্মানিত পদটা হারালেন। আর তা নিজের সততার মাধ্যমে অর্জন করে নিল আমার বাবা। কিন্তু ইনি ভেবে নিলেন আমার বাবার কারণেই ইনি পদ টা হারিয়েছেন। যার ফলে যুক্ত হলেন আদিল এহসানের বাবার সাথে। তার মৃত্যুর পর আদিল এহসানের সাথে। আর তারপর নজর গেল খান ইন্ডাস্ট্রি এর দিকে। যাঁর কারণে এরা সবাই মিলে মেরে ফেললো আমার বাবাকে। তবে খেলা এখানেই শেষ করেন নি ইনি। শুরু তো করেছিলেন এখান থেকে। আচ্ছা আদ্রিজ বাবু আপনি কি জানেন যে আশা চৌধুরী আপনার মা নয়।”
আদ্রিজ নিস্পলক তাকিয়ে রইলো নিহার দিকে। সে যেন কথা বলতেই ভুলে গেছে। কিসব শুনছে সে।
“থাক বলতে হবে না আমিই বলছি। আপনার মা ছিলেন মিসেস আয়ানা চৌধুরী। আপনার বাবা মিস্টার আজিজ চৌধুরী ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন আপনার মাকে। ভালোই চলছিল সব। কিন্তু এই ভালোর উপর নজর লাগলো কাল সাপের। আর এই কালসাপটা হলো আশা চৌধুরী। ইনি ছিলেন আপনার মায়ের একমাত্র প্রিয় বন্ধু। যার সাথে নির্দ্বিধায় সকল কথা শেয়ার করতেন আপনার মা। আপনার মাকে এতো সুখে থাকতে দেখে সহ্য হয় নি আশা চৌধুরীর। এর মধ্যে খুশির সংবাদ নিয়ে আপনার মায়ের গর্ভে আপনি আসলেন। সব তো ভালোই যাচ্ছিল। কিন্তু বেশীদিন তা আর গেল না। আয়ানা চৌধুরির ডেলিভারি ডেট চলে আসলো। হসপিটাল নিয়ে যাওয়ার পর আপনি জন্মগ্ৰহণ করলেন। তবে মারা গেল আয়ানা চৌধুরী। ডক্টর জানিয়েছে আপনাকে জন্ম দিতে গিয়েই তিনি মারা গেছেন তবে সেটা ছিল মিথ্যে কথা। তার মুখের অক্সিজেন মাস্ক খুলে তাকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিয়েছিলেন এই আশা চৌধুরী।
আয়ানা চৌধুরীর মৃত্যুর পর আপনার উপর আশা চৌধুরীর লোক দেখানো ভালোবাসা তো খুব বেড়ে গেল। এসব দেখে আপনার দাদী জোরপূর্বক আজিজ চৌধুরীর সাথে এনার বিয়ে দিয়ে দিল। আশা চৌধুরীর কার্য সমাধান হল। তবে মিস্টার রাশেদ ছিল আশা চৌধুরীর প্রেমিক। হায়রে ভালোবাসা…….
সবটা আবারো চলছিল ঠিকঠাক মত। আশা চৌধুরী এক সাথে দুই ঘাটের জল খাওয়া শুরু করলো। তার প্রেমিক কেও হাতে রাখলো সেই সাথে আজিজ চৌধুরী কেও। তবে এইভাবে সবটা আর বেশিদিন চললো না।
একদিন এদের ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে ফেললো মিস্টার আজিজ চৌধুরী। তিনি দেখে রেগে চিৎকার দিয়ে উঠেছিলেন। আর এরা দুজন মিলে তখন আজিজ চৌধুরীকে ধরে বেধে গুম করে দিলেন। আর মিস্টার রাশেদ সার্জারী করে আজিজ চৌধুরীর ফেস নিজের উপর বসিয়ে নিলেন। কোয়েন্সিডেন্সলি আজিজ চৌধুরী এবং মিস্টার রাশেদ এর কন্ঠ অনেকটা একি ছিলো। যেটা স্বাভাবিক হয়ে থাকে প্রায়ই। যার কারণে আজ পর্যন্ত কেউই ধরতে পারলো না। আদি মিস্টার রাশেদ এবং আশা চৌধুরীর সন্তান। প্রপার্টি এরা নিজের নামে করতে গিয়ে দেখলো আজিজ চৌধুরী মিস্টার আদ্রিজের নামে উইল করে রেখে দিয়েছেন। যাঁর কারণে এদের প্ল্যান ফল্ট হয়ে গেল। আদ্রিজ বাবুর আঠাশ বছর পূর্ণ হলেই প্রপার্টি তার হবে। যাঁর কারণে অপেক্ষায় ছিল তারা এতদিন। বয়স আঠাশ হওয়ার পরও কোনো ভাবে সুযোগ পাচ্ছিলো না। তবে একদিন সুযোগ পেয়ে নিজের নামে করে নিল কিছু অংশ। বাকি অংশ নিজের নামে করার জন্য সুযোগ পেলো আমাদের বিয়ের দিন টাকে। রেজিস্ট্রি পেপার এর জায়গায় প্রপার্টি পেপার্স রেখে একসাথে খান ইন্ডাস্ট্রি এবং চৌধুরি ইন্ডাষ্ট্রি সবটাই নিজের নামে করতে চেয়েছিল। তবে খেলাটা আমি ঘুরিয়ে দিলাম। যেই প্রপার্টি ওরা নিজের নামে করলো সেটা আমি আমার নামে করে নিলাম। আদ্রিজ বাবুর নামে করলে তার জীবন রিস্ক ছিলো। এটা দেখে মিস্টার রাশেদ এবং আশা চৌধুরীর মাথায় বাঁজ পড়লো। তারা প্ল্যান করে আমার প্রিয় মানুষ পূনরায় আমার থেকে কেড়ে নিতে চাইলো। আর আদ্রিজ বাবুকে বেছে নিলো। আদ্রিজ বাবুর গাড়ির মধ্যে বম রাখলো। তবে ভাগ্য সেদিন সহায় ছিল বলে আদ্রিজ বাবু বেঁচে গেল। গাড়িতে থাকা অবস্থায় প্রপার্টি আমি পূনরায় আদ্রিজ বাবুর নামেই করে দেই।”
এই বলে নিহা জোরে নিঃশ্বাস নিল।
সবার চোখে পানি। কেউ কোনো কথা বলছে না।
আদ্রিজ ধপ করে সোফায় বসে পড়লো। শরীলে যেন কোনো জোর পাচ্ছে নাহ।
মিস্টার মেহরাব চৌধুরী কম্পিত কণ্ঠে বলে উঠলো,
“নি… নিহা মা আমার ভাই তাহলে এখন কোথায়?”
নিহা কিছু বলার আগেই মিস্টার রাশেদ চিল্লিয়ে বলে উঠলো,
“বেঁচে আছে সে। তবে আমাদের এখান থেকে যেতে না দিলে মেরে ফেলবো তাকে।”
“তাই নাকি।”
পুরুষালি কণ্ঠ পেয়ে সবাই দরজার দিকে তাকালো।
আর তাতে যেন মিস্টার রাশেদ এবং আশা চৌধুরীর চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।
আশা চৌধুরী অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলেন,
“আজিজ……”
আজিজ চৌধুরীকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে ঠেলে নিয়ে আসছে ঊর্মি। ঊর্মি কখন এখান থেকে বের হয়ে গেছে কারোই সেদিকে খেয়াল ছিল না।
আজিজ চৌধুরী চারদিকে চোখ ঘুরিয়ে দেখে নিলেন। এইতো তার পরিবার। এইতো তার সেই চৌধুরি বাড়ি।
সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল আজিজ চৌধুরীর দিকে। মিস্টার মেহরাব চৌধুরী দৌঁড়ে গিয়ে ভাইকে জরিয়ে ধরলেন। আজিজ চৌধুরী ও স্নেহমাখা হাতে ভাইকে জড়িয়ে ধরলো।
নিহা চোখের কোনে জমে থাকা পানিটুকু মুছে নিয়ে আদির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। ইস কি নিষ্পাপ মুখ ছেলেটার। অথচ এই ছেলের শরীলে ওই কালসাপ গুলোর রক্ত বইছে।
নিহা আদির চোখের পানি মুছে দিয়ে জড়িয়ে ধরলো আদিকে। আদিও নিহাকে জড়িয়ে ধরে জোরে কেঁদে উঠলো। এখানে কি হয়েছে সবটাই সে বুঝেছে। এইটুকু বুঝার বয়স তার হয়েছে।
নিহা অনেক্ষন পর আদিকে ছেরে আদির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
“আমার কিউট দেবর কে কাদলে একদম মানায় নাহ। কাদেনা…..”
এই বলে নিহা হেঁটে গিয়ে আদ্রিজের সামনে দাঁড়ালো। আদ্রিজের সেদিকে খেয়াল নেই। সে তাকিয়ে আছে হুইল চেয়ারে বসে থাকা তার বাবার দিকে।
নিহা হেসে আদ্রিজের বাম হাতে আদ্রিজের হাত ধরে এবং ডান হাতে আদির হাত ধরে টেনে আজিজ চৌধুরীর সামনে নিয়ে ধার করায়।
আজিজ চৌধুরী হেসে সামনে তাকায়।
হাত দুটো বাড়িয়ে বলে উঠলেন,
“বাবার কাছে আসবিনা বুঝি তোরা।”
আদ্রিজ কেঁদে আজিজ চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরলো। আজিজ চৌধুরী ছেলের মাথায় হাত রেখে ওপর হাত দিয়ে আদিকে কাছে ডাকলেন।
নিহা আদিকে চোখ দিয়ে ইশারা করতেই আদিও গিয়ে আজিজ চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরলেন।
আজিজ চৌধুরী দুই ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন,
“আমি আজ পরিপূর্ণ আমার দুই ছেলে আমার কাছে আছে।”
নিহা হেসে বলে উঠলো,
“বাবা, এদেরও কেত চিনো। কাল রাতে সবটা বললাম না তোমায়। এদেরকেও নিজের কাছে ডেকে নেও।”
আজিজ চৌধুরী হেসে মেঘ এবং মেঘাকে নিজের কাছে ডাকলেন। একে একে সবাই আদ্রিজ চৌধুরীর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো।
নিহা সেদিকটায় তাকিয়ে বিষাদময় হাসলো। তার বাবা বেঁচে থাকলেও ঠিক এভাবেই বাবার আদর পেত।
নিহান নিজের বোনের মনোভাব বুঝতে পেরে বোনের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। বোনের কাধে ভরশার হাত রেখে চোখের ইশারায় হাসতে বললো।
নিহাও জোরপূর্বক হেসে সকলের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
“এখন আপনারা বলুন কি করবো এই দুজনের?”
কেউ কিছু না বলে আদির দিকে তাকালো। যতই হক আদির বাবা মা তারা।
আদি সবাইকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে কিছুটা চমকালো।
নিহা আদির উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
“আদি এনারা তোমার বাবা মা। যদিও আজ থেকে তোমার বাবা উনি। সবটাই তুমি শুনেছ। এখন বলো এদের কি করা যায়। তুমি যা বলবে তোমার এই নিহা বউমনি সেটাই করবে। তবে ভেবেচিন্তে বলবে।”
আদি কিছুক্ষণ চুপ থেকে আশা চৌধুরীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
“এনাদের বেঁচে থাকার কোনো প্রশ্নই আসে না বউমনি।”
এই বলে আদি আজিজ চৌধুরীর কোলে মাথা গুঁজে দিল।
আদ্রিজ পলকহীন আশা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে রইল। এই মহিলাকে সে মা ভেবে আসছে আর এই মহিলাই কিনা তার মাকে মেরে ফেললো।
নিহা আদির কথা শুনে আশা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো। সে জানতো আদি এরকম কোনো কথাই বলবে। নিহা নিহানকে চোখের ইশারায় কিছু একটা বুঝাতেই নিহান কাউকে ফোনে টেক্সট করলো। আর সাথে সাথেই পুরো চৌধুরি বাড়ি ও অন্ধকার হয়ে গেল। সবাই এরকম হওয়ায় অনেকটাই অবাক হয়ে গেল। কারণ রোদের এক বিন্দু আলো প্রবেশ করতে পারছে না ড্রয়িং রূমে।
কিছুক্ষণ যেতেই পুরো ড্রয়িং রুম আলোকিত হয়ে উঠলো। হটাৎ আলো আশায় সবাই চোখ বন্ধ করে ফেললো। চোখ খুলে যখন সামনে তাকালো তখন কাউকেই দেখতে পেলো নাহ। নিহা, নিহান, ঊর্মি, মিষ্টার রাশেদ এবং মিসেস আশা চৌধুরী কাউকেই দেখা যাচ্ছে নাহ।
আদ্রিজ সোফার দিকে তাকাতেই একটি কাগজ চোখে পড়লো। গিয়ে কাগজটি হাতে নিয়ে পড়তে লাগলো।
“আমি ওদের নিয়ে যাচ্ছি। এদের ব্যাবস্থা আমি নিজে করবো। আমার আসতে কাল সকাল হবে। বাবার দিকে খেয়াল রাখবেন।”

#চলমান

(বড় করে দিলাম 😒😒)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here