ভালোবাসার প্রজাপতি পর্ব -৩৩+৩৪

#ভালোবাসার_প্রজাপতি
#পর্বঃ৩৩
#মাহিয়া_মুন

জগৎ জীবন থেকে পেড়িয়ে গেছে প্রায় সপ্তাহ খানেক।
এই সপ্তাহ খানেক মেহু বাড়িতেই ছিল। অসুস্থতার অজুহাত দেখিয়ে রানি বেগম মেহুকে কোথাও যেতে দেয় নি। আর মেহুও কোনও অমত পোষণ করে নি। মেয়েটা যেন দিন দিন চুপচাপ হয়ে যাচ্ছে। রানি বেগম প্রায় লক্ষ্য করে দেখেন যে তার মেয়ে যখনি একাকি থাকে কোনো বিষয় নিয়ে গভীর ভাবনায় ডুবে থাকে। কাগজে কলমে যেন কোনো হিসাব মিলানোর চেষ্টায় থাকে। আবার কখনো দেখা যায় একাকী কাদতে। রাতে মেয়ে ঘুমানোর পর রানি বেগম মেয়ের কাছে গিয়ে দেখে মেয়ের চোখের কোনে এখনো পানি জমে আছে। তবে কি তাঁর মেয়ের সব মনে পরে যাচ্ছে?
সোহায়েব মুন্সী বাড়ীর সামনে বড় উঠোনের শেষ প্রান্তে মাদুর বিছিয়ে তাতে চুপচাপ বসে আছে। মেয়ের চুপচাপ পরিবর্তন তিনিও লক্ষ্য করছেন।
রানি বেগম সোহায়েব মুন্সীর পাশে এসে বসলেন। স্বামীকে চুপচাপ দেখে তিনিই বলে উঠলেন,
“কিগো মেহুর বাপ চুপ করি এই অবেলায় এইহানে বৈ রইছেন ক্যন?”
সোহায়েব মুন্সী চুপচাপ রানি বেগমের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন।
সংসার জীবনে খুব একটা কষ্ট হয় নি তাদের দুজনের। সোহায়েব মুন্সী বছর দুয়েক আগেও নদীতে মাছ ধরতেন। মাছ ধরাই তার কাজ ছিল।
বিয়ে হওয়ার পর দুজনেরই ইচ্ছে ছিল খুব দ্রুতই সন্তানের মুখ দেখার। তবে তা আর হয়ে উঠে নি। বিয়ের অনেক বছর পরও যখন সন্তান হয়নি তখন দুজনেই শহরে গিয়ে ডক্টর দেখায়। আর তাতে জানতে পারে সোহায়েব মুন্সী কখনোই বাবা হতে পারবে না। এতে অনেকটাই ভেঙ্গে পড়েন তিনি। ভেবেছিলেন রানি বেগম বুঝি তাকে ছেড়ে চলে যাবেন। কারণ রানি বেগম যথেষ্ট রূপবতী একজন নারী। অন্য কেউ বিয়ে করতে সহজেই রাজি হয়ে যাবে। এমনকি রানি বেগমের পরিবারও যখন জানতে পারলেন সোহায়েব মুন্সী বাবা হতে পারবেন না তখন তাদের সম্পর্ক ভেঙ্গে রানি বেগমকে অন্য কারো সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিল।
কিন্তু এতো কিছুর মাঝেও রানি বেগম কখনোই সোহায়েব মুন্সীর বিরুদ্ধে কিছু বলে নি। পরিবারের অমতে গিয়ে আজ পর্যন্ত সোহায়েব মুন্সীর সাথেই সংসার করে আসছেন।
বছর দুয়েক আগে সোহায়েব মুন্সী রোজকার মতোই সাতসকালে মাছ ধরতে নদীতে জাল ফেলে। তবে জালে মাছ না আটকে একজন মেয়ের শরীল আটকে যায়। জাল টেনে যখন তীরে আনে তখন তিনিসহ ওখানে উপস্থিত গ্রামের সকলেই ভয় পেয়ে যায়।
সবাই যখন মেয়েটিকে মৃত ভাবে তখন সেখানে উপস্থিতি একজন গ্রামের ডক্টর মেয়েটির নাকের কাছে হাত দিয়ে বুঝতে পেরেছিল যে মেয়েটি জীবিত আছে।
মেয়েটির শরীলের বিভিন্ন স্থান থেকে রক্ত বের হচ্ছিল।
তখন সবাই মিলে শহরে হসপিটালে নিয়ে যায় মেয়েটিকে। আর সেখানেই ডক্টর জানায় মেয়েটি তার পূর্ববর্তী সব ভুলে গেছে। অর্থাৎ স্মৃতি হারিয়ে গেছে। মেয়েটিকে জোর করে যাতে কিছু মনে না করানো হয়। আপনাআপনি যদি মনে আসে। আর নিজে থেকে মনে আসার সময়কাল দিয়েছিলো ডক্টর দু বছর পর। সেদিন যখন মেয়েটির জ্ঞান ফিরে তখন মেয়েটি মা মা করছিল। তখন রানি বেগম মা হয়ে মেয়েটির হাত ধরে। আর সেদিন থেকেই সোহায়েব মুন্সী এবং রানি বেগম মেয়েটির বাবা মা হয়ে দাঁড়ায়।
মেয়েটি এখন তাদের নয়নের মনি। সেই সাথে এই গ্রামের সকলের শিক্ষিকা আপা।
“কিগো মেহুর বাপ কি ভাবতাছেন? কহন থেইক্যা ডাকতাছি।”
রানি বেগমের কথায় সোহায়েব মুন্সী ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলেন।
“অমন কিছুনা গো রানি। মাইয়াডার ব্যাপারেই ভাবতাছিলাম।”
রানি বেগম মিইয়ে যাওয়া কণ্ঠে বলে উঠলেন,
“মাইয়াডা হটাৎ কইরা কেমন চুপচাপ হইয়া গেল।”
“এইরহম ইত্তো হনের কথা ছিল রানি।”
“তাইলে কি হাছাই মাইয়াডার সব মনে পইড়া যাইতাছে।”
“হ। হুনো মগো মাইয়া অনেক বড়লোক বংশের মাইয়্যা মনে হয়। আর একখান কথা, মোগো মাইয়া বিবাহিতা। জামাই এর নাম আদ্রিজ।”
রানি বেগম চমকে সোহায়েব মুন্সীর দিকে তাকালেন। অবাক হয়ে বলে উঠলেন,
“আপনে জানেন কেমনে।”
“সপ্তাহ খানেক আগে মোহু কইছে আমারে। আমি কইছি এডি তোমার স্বপ্ন মা। শহুরে ডাক্তার কি কইছিলো মনে নাই তোমার। এহন দুই বছর হইয়া গেছে। মোগো মাইয়ার সব মনে পড়তাছে। মাইয়া চুপচাপ হওয়ার কারণ বুঝলা এবার।”
রানি বেগমের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগলো। তিনি কিছু না বলে সেখান থেকে ঊঠে চলে গেলেন।
দূর থেকে দাড়িয়ে সবটাই দেখছিল মেহু।
রানি বেগম চলে যেতেই মেহু চোখের পানি মুছে ফেলে বলে উঠলো,
“তোমাদের মাধ্যমেই আল্লাহ্ আমায় নতুন জীবন দিয়েছে। তোমাদের আমি কখনোই ছেড়ে যাবো নাহ।”
*
*
সময়টা পড়ন্ত বিকেল ।
মেহু তার সকল ছাত্রছাত্রীদের ছুটি দিয়ে মাত্রই স্কুল ঘর থেকে বের হয়েছে।
দূর থেকে দাড়িয়ে তিন জন ব্যাক্তি অবাক চোখে সেদিকটায় তাকিয়ে আছে। এর মধ্যে দুজন ব্যাক্তির চোখে যেন অশ্রুর বন্যা বইছে। তারা যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না।
নিহান পলকহীন নিজের বোনের দিকে তাঁকিয়ে আছে। তার বোনটা বেঁচে আছে। এইতো তার থেকে কিছুটা দূরে। পাঁচ দিন আগেই সে এবং ঊর্মি এই গ্রামে এসে পৌঁছেছে। অপেক্ষায় ছিল কখন তার বোনটা বাড়ি থেকে বের হবে। সে চেয়েছিল বাড়িতে গিয়েই বোনকে দেখবে। তবে তাতে ঊর্মি বাঁধ সাদে। যদি এতে তার বোনের কোনো ক্ষতি হয়। আগে অপরিচিতদের মতই গিয়ে বোনের সাথে কথা বলবে। দেখতে হবে বোনের সব মনে আছে কিনা।
মেহু বাকি দিনের মতোই নিজমনে বাড়ির পথে হেঁটে যাচ্ছে। হটাৎ কারো ডেকে উঠায় হাঁটা থামিয়ে দিল। পিছনে তাকিয়ে অপরিচিতদের দেখে স্বাভাবিক ভাবেই সালাম জানালো।
নিহানের গলা ধরে আসছে। এতদিন পর নিজের বোনের কণ্ঠ পেয়ে কিছুতেই নিজেকে সংযত করতে পারছে না।
তবে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটিকে এতোটা স্বাভাবিক দেখে নিহান ভেবেই নিল তার বোনের কিছুই মনে নেই। ঊর্মি নিহানের হাত ধরে ইশারা করতেই নিহান নিজেকে সংযত করে সালামের উত্তর দিয়ে বলে উঠলো,
“কেমন আছেন শিক্ষিকা আপা?”
ঊর্মি ভ্রু কুচকে নিহনের দিকে তাকালো। কি কথা বলার ছিল আর এই ছেলে বোনকে দেখে আবেগে কিসব বলছে।
মেহু স্বাভাবিক ভাবেই বলে উঠলো,
“জী আলহামদুলিল্লাহ। আপনাদের তো ঠিক চিনতে পারলাম না।”
নিহান কিছু বলতে যাবে তার আগেই ঊর্মি বলে উঠলো,
“আপু আসলে আমরা গ্রাম ঘুরতে এসেছি। আপনার কথা গ্রামের সবার কাছ থেকে শুনেছিলাম তাই আপনাকে দেখতে এসেছি।”
“ওহ্ আচ্ছা। তো আপনারা কেমন আছেন আর কোথা থেকে আমাদের গ্রাম ঘুরতে আসলেন?”
“আপু আমরা বাংলাদেশী তবে জার্মানি থাকি। আর সেখান থেকেই এসেছি।”
“আচ্ছা আপনাদের অভিনন্দন আমাদের ছোটো এই গ্রামে।”
“ধন্যবাদ আপু আমরা তাহলে এখন আসি।”
নিহান কিছু বলতে যাবে তার আগেই ঊর্মি নিহানের হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো।
মেহু হেসে জোরে ডেকে উঠলো,
“ভাই………….”
ডাকটি শুনেই নিহানের পা থেমে গেল। ঊর্মি এবং সাথে থাকা মেয়েটাও দাড়িয়ে গেল।
মেহু পুনরায় একইভাবে ডেকে উঠলো।
নিহান পিছে তাকিয়ে দেখলো তাদের থেকে কয়েকহাত দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েটি টলমল চোখে তাদের দিকেই তাকিয়ে আছে।
নিহান দৌঁড়ে গিয়ে বোনকে জরিয়ে ধরলো।
মেহু মানে আপনাদের আমাদের সবার প্রিয় নিহা নিজেও ভাইকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠলো। আজ প্রায় চার দিন হলো নিজের ভাইকে মনে পড়েছে তার।
বুকটা ভার হয়ে ছিল এই কয়দিন। কবে ভাইকে দেখবে। সময়টা যে এত তাড়াতাড়ি আসবে বুঝতে পারে নি।
*
*
কালো অন্ধকারে ঘেরা একটি রূম থেকে দুজন ব্যাক্তির উচ্চস্বরে হাসির আওয়াজ ভেসে আসছে।
কিছুক্ষণ যেতেই তাদের মধ্যে থেকে একজন বলে উঠলো,
“আদ্রিজ চলে এসেছে। এবার তাহলে খেলা টা শুরু করা যাক।”
অপর ব্যাক্তি হেসে বলে উঠলো,
“অবশ্যই মিসেস…….”
“হুস ……নাম উচ্চারণ করবে না । দেওয়ালে রো কান আছে।”
“সরি সরি। তো এই আপদটার কি করবে?”
“একে আরো কিছুদিন পৃথিবীর আলো দেখতে দেও। তারপর পুরো খেল খাতাম।”
এই বলে পূনরায় দুজন ব্যাক্তি হেসে উঠলো।

#চলবে#ভালোবাসার_প্রজাপতি
#পর্বঃ৩৪
#মাহিয়া_মুন (লেখনীতে)

রানি বেগম উঠোন ঝাড়ু দিয়ে মাত্রই বসলেন। বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছেন। মেয়ে আসার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে তবুও মেয়েকে দেখতে না পেয়ে চিন্তিত হয়ে আছেন। মেয়েকে নিয়ে তার চিন্তার শেষ নেই।
এসব ভাবতে ভাবতেই পূনরায় সদর দরজার দিকে তাকালেন। আর তাকাতেই রানি বেগমের চোখ আটকে গেলো দরজা দিয়ে ঢুকতে থাকা তার মেয়ের সাথে থাকা ছেলেমেয়েগুলোর দিকে। ওদের পোশাকআশাক দেখে রানি বেগমের বুঝতে বাকি নেই যে তারা শহুরে ছেলেমেয়ে।
নিহা রানি বেগমকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে হেসে উঠলো। এই মহিলাটা তাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালবাসে। এই দুবছরে কখনো বুঝতেই দেয় নি যে সে তাদের মেয়ে নয়।
নিহা হেসে রানি বেগমের নিকট গিয়ে বলে উঠলো,
“রানি সাহেবা আইজ ঘরে অতিথি লই আইলাম। দেহ তো অতিথি গুলারে ভাল লাগছে নি। যদি তোমার ভাল লাগে তাইলে তোমার ধারেই রাইখ্যা দিম।”
রানি বেগম মেয়ের মুখের দিকে তাকালেন। আজ যেন মেয়েকে খুব খুশি দেখাচ্ছে। এর কারণটাও রানি বেগমের বুঝতে বাকি নেই। এই শহুরে ছেলেমেয়ে গুলো নিশ্চয়ই তার মেয়ের পরিচিত কেউ।
রানি বেগম জোরপূর্বক হেসে নিহান দের কাছে গিয়ে দাঁড়ালেন। সবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
“কেমন আছো তোমরা?”
নিহান রানি বেগমের মুখের দিকে তাকালেন। মহিলাটা তাদের দেখে জোরপূর্বক হাসছে তা বুঝতে পারলো নিহান। আর মহিলাটি কেন এমন করছে তাও বুঝতে বাকি নেই নিহানের।
নিহান হেসে রানি বেগমকে জড়িয়ে ধরলো।
হটাৎ এরকম হওয়ায় রানি বেগম কিছুটা বিব্রতবোধ করলেন। যতই হোক তিনি গ্রামের মেয়ে।
নিহান রানি বেগমকে ছেড়ে বলে উঠলো,
“আমরা সবাই ভাল আছি আম্মি। আজ তো আরো বেশি ভাল আছি কারণ ওইযে ওই মেয়েটা সে আমার বোন। আজ তার ভাই তাকে খুঁজে পেয়েছে। সেই সাথে আর একজন আম্মিও পেয়ে গেছি। আজ তো ভীষণ খুশি লাগছে।”
রানি বেগম চমকে তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটির দিকে তাকালেন। এই ছেলেটি তার মেয়ের ভাই।
নিহা পিছন থেকে রানি বেগমকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,
“মা,এদের এখানেই দাড় করিয়ে রাখবে নাকি ঘরে উঠাবে।”
রানি বেগম বিচলিত হয়ে বলে উঠলেন,
“আরেহ নাহ নাহ বাবা তোমরা ভিতরে আসো।”
*
*
রাত প্রায় গভীর। গ্রামে এই সময়টাতে এতক্ষণে সবাই ঘুমে মগ্ন হয়ে থাকে।
তবে আজ ঘুম নেই মুন্সী বাড়ির কারো চোখে। মেহুর থাকা রুমটাতেই এই মুহূর্তে বসে আছে সবাই।
রানি বেগমের চোখে পানি। মেহু রানি বেগমের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে।
নিহান একে একে সবটাই বলেছে তাদের।
সোহায়েব মুন্সীও নিহাকে কিভাবে পেয়েছে তা বিস্তারিত জানিয়েছে নিহানদের। চুপচাপ হয়ে থাকা কক্ষটিতে নীরবতা ভাঙলেন সহায়েব মুন্সী।
“তোমরা এখন কি করতে চাও বাবা?”
নিহান কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিহা ইশারায় নিহানকে থামিয়ে দিল। মায়ের কোল থেকে মাথা উঠিয়ে বাবার পাশে গিয়ে বসলো। সহায়েব মুন্সীর হাত ধরে বলে উঠলো,
“বাবা আমি এক সপ্তাহের জন্য ওখানে যেতে চাই।”
রানি বেগম দ্রুত বলে উঠলেন,
“নাহ্ মা তোরে আমি ঐহানে যাইতে দিমু না। যদি আবার তোর কিছু কইরা দেয়। নাহ আমি তোরে যাইতে দিমু না।”
সহায়েব মুন্সী রানি বেগমকে থামিয়ে নিহাকে বলে উঠলো,
“মা এই দু বছরে আমরা তোমার চাওয়া পাওয়া যতটুকু পেরেছি পূরণ করার চেষ্টা করছি। আর এটাও জানি আমার মেয়ে আমাদের কখনো ছেড়ে যাবে না। তাই আজও তোমায় না বলবোনা। নিহান বাবার থেকে যা শুনলাম তাতে এটাই বলবো মা, ওই খারাপ লোকগুলোর বেঁচে থাকার কোনো মানেই হয় নাহ। আমি তোমার বাবা হয়ে তোমাকে বললাম, ওদের তুমি কঠিন শাস্তি দিবে। তবে হ্যা মা, আগে নিজের দিকে খেয়াল রাখবে। আর জানত মা , তোমাকে ছাড়া আমরা বেশিদিন থাকতে পারবনা। দোয়া করি তুমি যাতে তোমার কাজ শেষ করে সুষ্ঠ ভাবে আমাদের কাছে ফিরে আসো।”
নিহা জানত সহায়েব মুন্সী কখনো তাকে বাঁধা দিবে না। মায়ের বাঁধা দেওয়ার কারন তো একটাই। তিনি ভয় পাচ্ছেন।
নিহা হেসে বাবাকে জরিয়ে ধরে বলে উঠলো,
“বাবা আমিও তোমাদের ছাড়া থাকতে পারবনা। ইনশা আল্লাহ্ আমার কাজ শেষ করে তোমাদের কাছে ফিরে আসবো।”
*
*
আদ্রিজ তাকিয়ে আছে তার রুমে দেওয়ালে টাঙানো বড় ফ্রেমে বাঁধানো নিহার ছবিটির দিকে। এই ছবিটিতে ব্যালকনিতে দাড়িয়ে আদ্রিজ পিছন থেকে নিহাকে জড়িয়ে ধরে আছে।
এই ছবিটি মেঘ লুকিয়ে তুলেছিল।
আদ্রিজ দেশে এসেছে প্রায় পনেরো দিন পেরিয়ে গেল। তবুও কোনো রকম প্রমাণ পাচ্ছে না আজিজ চৌধুরীর বিরুদ্ধে।
নিহার ছবিটির দিকে তাঁকিয়ে হতাশময় নিঃশ্বাস ফেলে বলে উঠলো,
“তুমি চলে গেলে তবে আমায় কেন নিয়ে গেলে নাহ। তুমি হীনা কিছুই ভালো লাগছে না আমার। পেপার্স গুলো আমার নামে কেন করে দিয়ে গেলে। আইনের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য এখন কোনোভাবেই প্রমাণ জোগাড় করতে পারছি না ওই লোকটার বিরুদ্ধে। কেন যেন মনে হচ্ছে কিছু একটা হবে।”
দরজার আড়ালে থাকা একজন ব্যাক্তি হেসে বলে উঠলো,
“ঠিক বলেছো আদ্রিজ। কিছু একটা হবে। তবে সেটা খুব বড় কিছুই যেটা তোমার ধারণার বাহিরে। প্রস্তুত থাকো আগামি দিনের জন্য।”
এই বলে ব্যাক্তিটি সেখান থেকে চলে গেল।
আর এই সব কিছুই সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখছিল নিহা।
হেসে বলে উঠলো,
“ঠিক বলেছেন মিসেস…….. খুব বড় কিছু হবে যেটা আদ্রিজের ধারণার বাহিরে। সাথে আপনাদেরও ধারণার বাহিরে।”
এই বলেই নিহা কেউ একজনের কাছে ফোন দিয়ে বলে উঠলো,
“নিয়ে আসো ওনাকে আমার কাছে।”

#চলবে

(পার্ট টা ছোটো দিয়েছি। তবে বিকালে ধামাকা পার্ট আসবে 😌😌)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here