ভালোবাসার প্রজাপতি পর্ব -৩৭+৩৮

#ভালোবাসার_প্রজাপতি
#পর্বঃ৩৭
#মাহিয়া_মুন (লেখনীতে)

সকাল পেড়িয়ে বিকেলের লাল আভা ছড়িয়ে পড়েছে চারদিকে। নিহা সকালে আসবে বললেও সকাল পেড়িয়ে বিকেল হয়ে গেছে, তবুও নিহার দেখা মিলছে না। এমনকি মিস্টার রাশেদ এবং আশা চৌধুরীকে নিয়ে কোথায় গেছে তা নিহান এবং ঊর্মিও বলতে পারছে না।
সবাই যেন চাতকপাখির মত অপেক্ষা করছে।
চৌধুরী বাড়িতে আজ নতুন একজন ব্যাক্তি সবার মাঝে উপস্থিত আছে। সকালেই নিহান তাকে এখানে নিয়ে এসেছে।তবে সেই ব্যাক্তি যাকে দেখার জন্য এসেছে তারই খবর নেই।
ড্রয়িং রুমে জড়ো হয়ে বসে আছে সবাই। অনুপমা চৌধুরী সবার হাতে কফির মগ দিয়ে মাত্রই বসলেন। কালকের দিন টাতে কি থেকে কি হয়ে গেল।
কিছু একটা মাথায় আসতেই নিহানের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,
“আচ্ছা নিহান বাবা তুমিতো আমাদের বললে না নিহা এতদিন কোথায় ছিল?”
নিহান কফিতে চুমুক দিয়ে বলে উঠলো,
“যদিও আমায় বলতে মানা করেছে নিহা তাও বলছি। আনন্দপুর নামের একটি গ্রামে ছিল।”
সবাই ভ্রূ কুচকে নিহানের দিকে তাকালো।
নিহান হেসে একে একে সবটাই বললো সবাইকে।
সকালে নিহানের আনা ব্যাক্তিটি অর্থাৎ মিসেস প্রার্থনা
খান বলে উঠলেন,
“সে এখন কোথায় একটু খোঁজ নেও। এখনো আস……..”
বলতে বলতে দরজার দিকে তাকিয়ে থেমে গেলেন। প্রার্থনা খানের থেমে যাওয়ায় সবাই তার দৃষ্টি অনুসরণ করে দরজার দিকে তাকালো। সাথে সাথেই সবাই বসা থেকে দাড়িয়ে গেল।
একটি অপরিচিত মেয়ে নিহাকে ধরে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করছে । নিহার মাথায় ব্যান্ডেজ করা, হাতে ব্যান্ডেজ করা, পা খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে।
নিহাও সামনে তাকাতেই স্থীর হয়ে দাড়িয়ে গেল। এতো বড় সারপ্রাইজ পাবে ভাবতেও পারে নি।
প্রার্থনা খান নিজের মেয়েকে এই অবস্থায় দেখে দৌঁড়ে মেয়ের কাছে গেলেন।
নিহাও নিজের মাকে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল। হাতে পায়ের ব্যাথা যেন এক নিমিষেই ভুলে গেল। জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠলো।
প্রার্থনা খান ও নিজের মেয়েকে পেয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারলেন না। নিহার সারামুখে অসংখ্য চুমুতে ভরিয়ে দিতে লাগলেন।
সবাই দেখতে লাগলো মা মেয়ের মিলন দৃশ্য।
কিছু মুহূর্ত এভাবে কেটে যেতেই নিহান নিহার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
” বোন তোর এই অবস্থা কেন?”
নিহা প্রার্থনা খানের সাহায্যে সোফায় বসে বলে উঠলো,
“তেমন মেজর কিছুনা। ঐতো বেখেয়ালি গাড়ি চালাতে গিয়ে ছোট খাটো একটা অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে। আর এই মেয়েটা হসপিটাল নিয়ে গেছে যার কারনে সকালে আসবো বললেও আসতে পারি নি।”
এই বলে নিহা সেই অপরিচিত মেয়েটির দিকে তাকাতেই দেখলো মেয়েটি অবাক চোখে নিহানের দিকে তাকিয়ে আছে।
আসল কারণ বুঝতে পেরে নিহা নিহানের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো। এই মেয়ে যে তার ভাই এর বিগ পাঙ্খা তা আর বুঝতে বাকি নেই নিহার।
নিহা মেয়েটির দিকে তাকিয়ে গলা খাঁকারি দিতেই মেয়েটির ধ্যান ভাঙলো।
মেয়েটি অবাক হয়ে বলে উঠলো,
“সিঙ্গার নিহান খান।”
আর তাতেই সবাই হেসে উঠলো।

রাত প্রায় গভীর। সবাই শুয়ে পড়েছে যে যার মত।
নিহা চোখ খুলে পাশে তাকিয়ে দেখলো আদ্রিজ নেই। সে লক্ষ্য করেছে আদ্রিজ তার সাথে ঠিক ভাবে কথা বলছে না। কেমন যেন ইগনোর করছে।
নিহা উঠে ব্যালকনিতে তাকিয়ে দেখলো আদ্রিজ আকাশের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে।
নিহা আসতে আসতে হেঁটে আদ্রিজের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।
আদ্রিজ দেখেও কিছু বললো না। তার হটাৎ কেন যেন নিহার উপর ভীষন অভিমান হচ্ছে। এতো কিছু হলো অথচ নিহা তাকে কখনোই কিছু বুঝতে দিল না।
নিহা কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে বলে উঠলো,
“আমি আসাতে কি আপনি খুশি হন নি?”
আদ্রিজ কিছু বললো না। এই মেয়েটা তার অভিমানও বুঝতে পারে না। পাথর দিয়ে তৈরি নাকি এই মেয়ের মন।
নিহা কিছুটা আন্দাজ করেছে আদ্রিজের চুপ করে থাকার কারণ। তবে সেও নিহা খান।
হাঁসি আটকে মুখ গম্ভীর করে বলে উঠলো,
“ঠিক আছে আমি চলে যাবো। আপনি হয়তো লাইফে নতুন কাউকে আনতে চাইছেন। ভাবছেন আমি চলে আসায় তা সম্ভব হবে না। অবশ্যই সম্ভব হবে। আমি কালই চলে যাবো।”
এই বলে নিহা পিছে ফিরে চলে আসতে নিলেই আদ্রিজ হাত ধরে টান দিল।
নিহা তাল সামলাতে না পেরে আদ্রিজের বুকে গিয়ে পড়ল। যদিও জানত এমন কিছুই হবে। অনুভব করলো তার কাধ ভিজে যাচ্ছে। বুঝতে বাকি রইলো না যে আদ্রিজ কাদঁছে। এক হাত আদ্রিজের পিঠের উপর রেখে বলে উঠলো,
“আপনি কাদছেন কেন? আরেহ আমি কোথাও যাব না। এমনিই বলেছি।”
আদ্রিজ কাদতে কাদতেই বললো,
“তুমি আমায় কখনোই বুঝতে চাও না। এতো কিছু হয়ে গেল আমায় জানালে কি হতো। আমিও তোমায় সাহায্য করতাম। দুইটা বছর তোমাকে ছাড়া কতটা কষ্ট হয়েছে আমার সেটা তুমি বুঝবে না। তোমার তো কিছুই মনে ছিল না। তু…তুমি…..”
কান্নার ফলে আর কিছুই বলতে পারলো না আদ্রিজ।
নিহার নিজেরও চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। আসলেই তো সে চাইলেও বুঝবে না আদ্রিজের কষ্ট। লোকটা তাকে পাগলের মত ভালোবাসে।
“আচ্ছা সরি। এখন কান্না থামান। ভাগ্যে যা থাকে তাতো হবেই।”
আদ্রিজ অনেক্ষন পর কান্না থামালো। তবে নিহাকে ছাড়লো না। নিহাকে জরিয়ে ধরেই দোলনায় গিয়ে বসলো। নিহা আদ্রিজের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। মাথা ভীষণ ব্যাথা করছে।
“মাথার চুলগুলো টেনে দিনতো। মাথা ব্যাথা করছে।”
আদ্রিজ চুপচাপ নিহার মাথায় হাত বুলাতে লাগলো।
নিহা ভেবে দেখলো গ্রাম থেকে এসেছে প্রায় সপ্তাহ খানেক হয়ে গেছে। কোথায় থাকবে, কোথায় যাবে কিছুই মাথায় আসছে না নিহার।
“একটা কথা বলবো?”
আদ্রিজের কথায় নিহা মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতেই আদ্রিজ বলে উঠলো,
“তাদের দুজনকে কি করেছো?”
নিহা হেসে উঠলো। যাকে বলে ভয়ংকর হাসি।
“করেছি কিছু একটা। এমন কিছু করেছি যে আর কখনোই তাদের ছায়াও কেউ দেখতে পাবে না।”
আদ্রিজ বুঝতে পারলো যে আদিল এহসানের মতই কিছু একটা ঘটেছে তাদের সাথে। তার বউটা আসলেই ভয়ংকর।
আদ্রিজ কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠলো,
” তুমি কি গ্রামে যাবে?”
নিহা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
“এখানে থাকবে না?”
নিহা মাথা নেড়ে না জানালো।
“কেন?”
নিহা কিছুক্ষন চুপ থেকে বলে উঠলো,
“ভাই এর থেকে সবটাই জেনেছেন। সত্যি বলতে ওখানে বাবা আর মার থেকে যেই ভালোবাসা আমি পেয়েছি তার ঋণ আমি কখনোই সোধ করতে পারবোনা। তাদেরকে ছেড়ে আমি থাকতেও পারবনা। আনন্দপুর গ্রামের মানুষগুলো আমায় যে ভালোবাসা দিয়েছে তা ছেড়ে কি করে আমি থাকি। সত্যি বলতে আমিও বুঝতে পারছিনা আমি কোথায় থাকবো। আচ্ছা সেটা পরে ভেবে দেখবো। এখন ঘুমাবো।”
আদ্রিজ সরু চোখে তাকিয়ে বললো,
“তুমি ভাবলে কি করে আমি তোমাকে ঘুমাতে দিবো।”
“মানে?”
আদ্রিজ নিহাকে কোলে তুলে বলে উঠলো,
“তুমি এতগুলো অন্যায় করেছো আর তার শাস্তি পাবে না ভাবলে কি করে।”
“এই একদম না। আমি কিন্তু চেচাবো।”
“চিল্লাও কে মানা করেছে। আমার ছোট ভাই বাবা হয়ে যাচ্ছে দেখলে আর আমি কিনা বসে থাকবো।”
“আপনার ঠোঁটকাটা স্বভাব এখনো যায় নি।”
“নাহ্ আর যাবেও নাহ। বউ এর সামনে ঠোঁটকাটা নির্লজ্জ থাকবনা তো কি পাশের বাড়ির ভাবীর সামনে থাকবো।”
নিহা সরু চোখে তাকাতেই আদ্রিজ হেসে নিহার ঠোঁটে হালকা চুমু খেয়ে নিহাকে নিয়ে রুমে ঢুকে গেল।
*
*
গ্রামের একাবাকা পথ দিয়ে চলছে পাঁচটি বাইক। গ্রামের সবাই অবাক চোখে বাইকগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। এতদিনে গ্রামের সবাই তাদের শিক্ষিকা আপার ব্যাপারে জেনে গেছে।
শিক্ষিকা আপাকে কালো বাইক চালাতে দেখে তাদের বুঝতে বাকি নেই যে তাদের শিক্ষিকা আপা ফিরে এসেছে। গ্রামে হইহুল্লোড় পরে গেল শিক্ষিকা আপার পুরো পরিবারকে আসতে দেখে।

রানি বেগম তার হাতে থাকা বাটন ফোনটির দিকে তাঁকিয়ে আছে। বিকেল পেড়িয়ে যাচ্ছে এখনো মেয়ে ফোন দিচ্ছে না। সেই সকালে কথা হয়েছে।
রানি বেগমের ভাবনার মাঝেই বাড়ির সামনে থেকে গাড়ির আওয়াজ ভেসে আসলো।
এমন অদ্ভুত আওয়াজ পেয়ে রানি বেগমের ভ্রু কুচকে গেল। দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে সদর দরজা খুলে সামনে তাকাতেই চমকে গেলেন। এতো শহুরে মানুষ দেখে কিছুটা ভয়ও পেয়ে গেলেন।
সবার পিছন থেকে নিহা মা বলে দৌঁড়ে এসে রানি বেগম কে জড়িয়ে ধরলেন।
এই দু বছরে মেয়েকে ছেড়ে একবিন্দুও সময় পার করেন নি রানি বেগম। আজ এত দিন পর মেয়েকে দেখে কেঁদে উঠলেন।
নিহা অনেক্ষন পর রানি বেগমকে ছেড়ে বলে উঠলো,
“মা আর কেঁদো না। আমি চলে আসছি তো। সাথে পুরো পরিবার নিয়ে আসছি। তোমার মেয়ে জামাইকেও নিয়ে এসেছি। এদের ঘরে তুলবে না।”
রানি বেগম বিচলিত হয়ে বলে উঠলো,
“মা তুই এদের নিয়া একটু দাঁড়া। আমি বরণ ডালা নিয়ে আসি।”
এই বলে রানি বেগম দ্রুত ভিতরে চলে গেলেন।
সবাই নিহার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই নিহা হেসে বলে উঠলো,
“এটা আমাদের গ্রামের নিয়ম। মেয়ে জামাই বা মেয়ের শশুর বাড়ির লোকজন প্রথমবার আসলে বরণ করেই ঘরে তুলা হয়।”
নিহার কথা শুনে মেঘ বলে উঠলো,
“আরেহ বাহ্ ইন্টারেস্টিং তো।”
নিহা হেসে সামনে তাকাতেই দেখলো রানি বেগম বরণ ডালা নিয়ে আসছে।
রানি বেগম আদ্রিজ এবং নিহাকে বরণ করে একে একে সবাইকে বরণ করে নিল। সবার সাথে কুশলাদি বিনিময় করে সবাইকে নিয়ে বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলো।

#চলবে#ভালোবাসার_প্রজাপতি
#পর্বঃ৩৮
#মাহিয়া_মুন

সময়টা নভেম্বর এর মাঝামাঝি। এই সময়টাতে শীত প্রায় আগত। ভোরে চারদিক কুয়াশায় ঢেকে থাকে।
এই সময়টাতে গায়ে চাদর জড়িয়ে পরিবেশ উপভোগ করার মাঝে এক অন্যরকম অনুভূতি মিশে থাকে।
এই মূহুর্তে এই অনুভুতির সাক্ষী স্বরূপ আদ্রিজ এবং নিহা। গ্রামের আঁকাবাঁকা কুয়াশায় ঢেকে থাকা পথে গায়ে চাদর জড়িয়ে দুজন হাঁটছে।
হাঁটতে হাঁটতে একসময় নিহা আদ্রিজকে নিয়ে একটি চায়ের দোকানে আসলো।
নিহাকে দেখেই বয়স্ক একজন লোক চায়ের কাপে চা ঢালতে ঢালতে বলে উঠলো,
“কিগো মেহু মা মগরে থুইয়া কেমনে রইলা এতদিন। পরিবার পাইয়া মগোরে ভুইল্যা গেছো নি।”
নিহা হাসতে হাসতে বলে উঠলো,
“তোয়াগরে যদি ভুইল্যাই যাইতাম তয় এহন কি তোয়ার সামনে থাকতাম। তয়াগরে মুই কোনোদিনই ভুলতে পারুম না।”
“হেতে মোগো জামাই নি?”
“হয়। হেতে তমগো জামাই।”
“আগে কবি না জামাই আইনছোছ। আমার তো খেয়াল হইলো না। জামাই বাজান বও তুমি।”
আদ্রিজ হেসে ছোটো টুলে বসে পড়লো।
লোকটি আদ্রিজ এবং নিহাকে চায়ের কাপ দিয়ে নিজেও একটি চায়ের কাপ হাতে নিলেন। চায়ে চুমুক দিয়ে বলে উঠলেন,
“বাবাজি আর যা করো না করো মোগো মেহু মারে গ্রাম থেইক্যা নিবা না। মোগো মেহু মা এই গ্রামের শিক্ষিকা আপা। মোগো গ্রামের গর্ব।”
আদ্রিজ কিছু না বলে হাসলো। আসলে সে বুঝতে পারছে না তার এই মুহূর্তে কি বলা উচিত।
“চাচা তুমি ভাইবো না এতো। তোমগো মেহু তোমগো লগেই থাকবো।”
এভাবেই নানান কথা বার্তায় জমে উঠলো চায়ের দোকানে একটি শীতের সকাল।
*
*
প্রায় রোদ ঊঠে গেছে। আদ্রিজ এবং নিহা বাড়ির পথে হাঁটতে লাগলো।
নিহা মন খারাপ করে বলে উঠলো,
“মেঘা থাকলে ভালো হতো খুব এই সময়টাতে। তবে ওর যা অবস্হা তাতে এই সময় হাঁটতেও আনা যেত না। ওকে গ্রামে না আনাই উচিত ছিল। দেখলেন কালকে আসার পর কতবার বমি হয়েছে। সময় ও প্রায় চলে এসেছে।”
আদ্রিজ গ্রামের সুন্দর্য উপভোগ করতে করতেই বলে উঠলো,
“পরে আবার নিয়ে এসে পুরো গ্রাম ঘুরিয়ে দেখিও। আসলেই গ্রাম টা খুব সুন্দর। আর এই গ্রামের সম্মানিত শিক্ষিকা আপাই আমার বউ।”
নিহা সরু চোখে তাকিয়ে কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেল। কানে ভেসে আসলো সেই কণ্ঠে গাওয়া সেই একি গান।
ঘুম আসেনা…. ঘুমের সময়
……….. তোমায় মনে পরে
তোমায় মনে পরলে প্রিয়
……… ঘুমাই কেমন করে
তোমায়….. ভাবিয়া আপন
….. মিছামিছি স্বপ্ন বুনে
……. আমার বোকা মন

নিহা আদ্রিজ দুজনেই পিছনে তাকালো। পিছে তাকিয়ে ছোটো একটি ছেলের মুখে এরকম গান শুনে আদ্রিজের ভ্রু কুঁচকে গেলেও নিহা ছেলেটির দিকে তাঁকিয়ে হেসে উঠলো।
“কি ব্যাপার হুম। শুনলাম আমি যাওয়ার পর ঠিক মত পড়ালেখা করছিস নাহ। আর আজও এই গান কেন গাওয়া হচ্ছে শুনি?”
“আপা আজ আমি মন থেকেই এই গান গাইছি।”
“তাই তো কেন গাওয়া হলো মন থেকে এই গান?”
“এইযে আপনার বিয়ে হয়ে গেল। আপনার পাশে দাড়িয়ে থাকা এই সুন্দর লোকটা আপনার জামাই। আমিও এনার মত বড় হলে আপনাকে বিয়ে করে ফেলতাম।”
এই ছেলের মুখে এমন কথা শুনে আদ্রিজের চোখ বড় বড় হয়ে গেল। তার সামনে তার বউকে এইটুকু ছেলে এসব কি বলছে ভেবেই অবাক হয়ে যাচ্ছে।
“এখন তো আমায় এই সুন্দর লোকটা বিয়ে করে নিল। তুই তো চাইলেই এখন পারবিনা।”
এই বলে নিহা ছেলেটির কাছে গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে পূনরায় বলে উঠলো,
“আচ্ছা তুই আমায় কেন বিয়ে করতে চাইছিস?”
“আপনিতো এলোকেশী তাই।”
“কিন্তু এখন তো আমার বিয়ে হয়ে গেছে। কিন্তু তোর জন্য আমি এলোকেশী নিয়ে আসবো যাকে তুই ওই সামনে দাড়িয়ে থাকা সুন্দর লোকটার মত বড় হয়ে বিয়ে করতে পারবি।”
“সত্যি?”
“হুম সত্যি। তবে সেটা এখন নয়। তোকে তো আগে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটার মত বড় হতে হবে। তারপর আমি তোকে এলোকেশী এনে দিবো।”
“আচ্ছা তাহলে আমি আগে ওনার মত বড় হবো তবে আমাকে তোমার মত এলোকেশী এনে দিতে হবে।”
“হ্যা দিবো এখন বাসায় যা। আজ বিকালে স্কুলে চলে আসবি সঠিক সময়ে।”
ছেলেটি সম্মতিসূচক মাথা নাড়িয়ে সেই স্থান থেকে চলে গেল।
আদ্রিজ অবাক হয়ে বলে উঠলো,
“এই পচ্চি ছেলে তোমাকে এসব কি বলে গেল । তাও আবার আমার দেওয়া নামে এই ছেলে তোমায় ডাকে।”
“হ্যা চলুন বাসায় যেতে যেতে বলি।”
*
*
দুপুর গড়িয়ে বিকেল। সূর্য প্রায় অস্ত যাওয়ার সময়।
মুন্সি বাড়ির বড় বারান্দায় পাটি বিছিয়ে তার উপর বসে আছে সবাই। আর তাদের এই আড্ডাকে আরো জমিয়ে দেওয়ার জন্য রানি বেগম নিয়ে আসলেন তার হাতে বানানো পাটিসাপটা পিঠা।
রানি বেগমের হাতে বানানো পাটিসাপটা খেয়ে সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
রানি বেগম সকলের দিকে তাকিয়ে ভেবে দেখলেন যে তার মেয়ের পরিবারের মানুষগুলো আসলেই খুব ভালো। তাদের কে এতো অল্প সময়ের ব্যবধানে কতটা আপন করে নিয়েছে।
নিহা সহায়েব মুন্সীর কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। ইদানিং সে লক্ষ্য করছে খনে খনে মাথা ব্যাথা করছে। সব কিছু মনে পরার পর থেকে এখনো একবারও ডক্টর দেখানো হয় নি।
সহায়েব মুন্সী নিহার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে সকলের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,
“আদ্রিজ আর মেঘ বাবা তোমরা আমার সাথে কাল সকালে বাজারে বের হতে পারবে?”
নিহা বলে উঠলো,
“কেন পারবে না বাবা অবশ্যই পারবে।”
সহায়েব মুন্সী মেয়েকে ইশারায় থামিয়ে বলে উঠলেন,
“সকালে বেয়াই, আমি আদ্রিজ আর মেঘ বাবা বের হবো। আসলে আমাদের গ্রামের নিয়ম। মেয়ের শশুর বাড়ির পুরুষদের নিয়ে বাজার করতে যাওয়া।”
আদ্রিজ বলে উঠলো,
“সমস্যা নেই বাবা আমরা যাবো।”
আজিজ চৌধুরী মন খারাপ করে বলে উঠলো,
“কিন্তু আমিতো হাঁটতে পারছি না।”
সহায়েব মুন্সী হেসে বলে উঠলো,
“বেয়াই সাহেব। আমি আছিত। হুইল চেয়ারে করে আপনাকে নিয়ে যাওয়ার শক্তিটুকু আছে আমার। আর ইনশা আল্লাহ্ আপনি খুব দ্রুতই হাঁটতে পারবেন। এতো মন খারাপ করার কিছু হয় নাই।”
মিসেস প্রার্থনা খান রানি বেগমের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,
“আপা আর কি নিয়ম পালন করতে হয় মেয়েদের বাপের বাড়ির লোকজনদের।”
“কাল সকালে যখন ওরা বাজার করে নিয়ে আসবে সেই সকল কিছু আমাদের সবাই মিলে রান্না করতে হবে। তারপর গ্রামের সবাইকে খাওয়াতে হবে একে একে। কালকে আপনাদের সবার ওপরে একটু খাটাখাটনি যাবে।”
মিসেস অনুপমা চৌধুরী বলে উঠলেন,
“সমস্যা নাই আপা। এইগুলা আমরা আনন্দের সাথে করবো।”
নিহা হুট করে সহায়েব মুন্সীকে বলে উঠলো,
“বাবা আজ সন্ধায় চলো আমরা সবাই বের হই।”
“কোথায় যাবে আজ বিকেলেই তো সবাইকে নিয়ে সব দেখে আসলি মা।”
“হ্যা তবে ওই নদীর তীরে এখনো কাউকে নেওয়া হয় নি।”
রানি বেগম গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলেন,
“নাহ্ সেখানে যাওয়ার দরকার নেই। ওই নদী তোমাদের থেকে বারংবার কিছু না কিছু কেরে নেয়।”
সবাই ভ্রু কুচকে তাকাতেই নিহা বলে উঠলো,
“এটা সেই নদী। যেখানে এই গল্পে ঘটে যাওয়া নদীভিত্তিক সকল ঘটনার শুরু হয়েছে।”
*
*
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here