ভালোবাসার ভেজা সন্ধ্যে পর্ব ৩১

#ভালোবাসায়_ভেজা_সন্ধ্যে
#রোকসানা_রাহমান

পর্ব (৩১)

এতো গুলো মাস পেটের মধ্যে লুকিয়ে রাখা গুপ্তধনটা অন্যের হাতে দিতেই রিপ্তির বুকে শূন্যতার ঝড় উঠেছে। কখনো কি ভেবেছিলো এমন একটা দিনও তার সামনে আসবে? ভাবার সময় পেয়েছিলো কি? মেয়েরা শিশুকাল থেকেই একটু একটু করে স্বপ্ন সাজাতে সাজাতে বড় হয়,কিন্তু রিপ্তি? সে তো স্বপ্ন সাজানোর সময়টাই পেলো না। সবকিছুই সময়ের আগেই চলে এলো। প্রেম কি বুঝার আগেই প্রেম চলে এলো,বিয়ে কি বুঝার আগেই বাচ্চা চলে এলো। আর এখন? সংসার কি বুঝার আগেই সম্পর্কহীন একটা মানুষের সাথে সংসার করছে। তার জীবনটা কেন এমন ছন্নছাড়া হলো? কেন? সেও তো অন্যসব মেয়েদের মতো স্বপ্ন সাজাতে পারতো! শুয়ে শুয়ে চোখ বুঝে কল্পনার জগতে স্বপ্নপুরুষকে নিয়ে হাজারও রোমাঞ্চকর ভাবনায় ডুবে একটু পর পর লাজুক কাঁপুনিতে কেঁপে উঠতে পারতো। কেন হলো না এমন? এই জটিলতা ভরপুর জীবনটাকে কি করে স্বাভাবিকে ফিরিয়ে আনবে? এমন অগোছালো জীবনটা কি আবার গুছিয়ে নিতে পারবে? তারজন্য যে তাকে অনেক কিছু ভুলতে হবে। জীবনের সবচেয়ে কঠিন নির্মম কালো বাস্তবটাকে ভুলতে হবে। কিন্তু চাইলেই কি সব ভুলে যাওয়া যায়?

কলিংবেল বাজাতে গিয়েও বাজালো না রিপ্তি। ঘাড় বাকিয়ে মহসীনের দিকে তাকায়। দ্রুত দু’হাতে মুখটা মুছে নিয়ে বললো,,

“”কান্না করেছি যে বুঝা যাচ্ছে?””

প্রশ্ন করতে করতেই আবারও চোখজোড়া ভিজে গেলো কষ্টের নোনাজলে। মহসীন এগিয়ে আসে রিপ্তির সান্নিধ্যে। নিজের হাতে ভেজা চোখ মুছে দিয়ে বললো,,

“” এই কাজটা করা কি খুব প্রয়োজন ছিলো?””

রিপ্তি উত্তর দিতে পারেনা। তার চোখ আবারও অশ্রুতে পরিপূর্ণ। না চাইতেও টপটপ করে পানি পড়ছে গাল বেয়ে। কষ্টে তার বুক ফেঁটে যাচ্ছে। মা হারা মেয়েটা এবার সন্তান হারাও হলো। তার মতো যে তার সন্তানও মা হারা হলো। কিভাবে পারলো এমন নির্দয় হয়ে ঘৃন্য কাজটা করতে? এমন কোনো পরিকল্পনাতো তার ছিলো না। হঠাৎ করে কি হয়েছিলো তার? তবে কি সে প্রতিশোধ নিয়েছে? এতোদিন যে যন্ত্রণার আগুনে পুড়েছে তার ক্ষতিপূরণ করতে এই ঘৃন্য কাজটা করেছে? কিন্তু এ কেমন প্রতিশোধ? যার বিনিময়ে তার বুকটাও জ্বলে পুড়ে ছারখার!

কান্নার বুকে নিজেকে সমর্থন করে দেয় রিপ্তি। দরজার সামনেই বসে পড়ে। নিঃশব্দে আর কতক্ষণ? কিছু সেকেন্ড যেতেই হাউমাউ কান্না জুড়ে দেয়। নখ দিয়ে খামচে ধরে নরম মাটি!

মিন্মি আর রাসেল মহসীনের বাড়ীতেই উঠেছিলো। হাসপাতাল থেকে সরাসরি এখানে চলে আসে। অপেক্ষায় ছিলো রিপ্তি আর মহসীনের জন্য। মিন্মি চটপট গোসল সেরে রান্না করে রেখেছিলো। ডাইনিংয়ে খাবার সাজানো প্রায় শেষের দিকে তখনি রিপ্তির কান্নার শব্দ পায় সে। দৌড়ে দরজা খোলে দাড়ায়। রিপ্তিকে মাটিতে হাত-পা ছুড়ে কান্না করতে দেখেই তার পিল চমকে উঠে!

~~~
“” আমাদের সাথে চল না,মা!””

মিন্মির আদুরী অনুরোধে রিপ্তি দুর্বল চোখে তাকালো। সোফায় বসে টিভি দেখছে সে। তার পেছনে মহসীন দাড়ানো। রাসেলের জোড়াজুড়ি কাজ হয়নি দেখে মিন্মি এগিয়ে এসেছে। রিপ্তি টিভির চ্যানেল পাল্টাতে পাল্টাতে বললো,,

“” এমন অবুঝের মতো অনুরোধ করো না তো ভাবী। নানি আমার পেটের দিকে তাকালেই সব বুঝে ফেলবে। তার তো এখন মাথা ঠিক নেই। বয়সটা কি কম হলো? কথায় কথায় কাকে রেখে কাকে কি বলবে,শেষে আমার এতো শ্রম সব পন্ডশ্রম হবে। কয়েকটা মাস যাক। আমি নিজেই যাবো। তাছাড়া আমার মন বলছে,অনুভব এতো সহজে সব মেনে নিবেনা। যেকোনো সময় বাড়ীতে গিয়ে উঠবে। তখন? আমি ঐ বিশ্বাসঘাতকের মুখোমুখি হতে চাইনা। কিছুতেই না!””

মহসীন এতক্ষণ চুপচাপ সবটা দেখছিলো। এবার এগিয়ে এসে তীক্ষ্ণ কন্ঠে বললো,,

“”এতো যখন অবিশ্বাস তাহলে তার কাছে বাচ্চাটা রেখে আসলে কেন? যদি..””
“” খারাপ মানুষরা কি সবসময় খারাপ কাজ করে,মহসীন?””

মহসীন ভ্রূজোড়া কুঁচকিয়ে নিলে রিপ্তি সোফা ছাড়ে। টিভিটা বন্ধ করে মহসীনের দিকে এগিয়ে এসে বললো,,

“” খারাপ মানুষও মাঝে মাঝে ভালো কাজ করে। ধরে নিচ্ছি,অনুভবের সকল খারাপকাজ শেষে একটা ভালো কাজ হবে,নিজের সন্তানকে মানুষ করা। বাকিটা আল্লাহর ইচ্ছে!””
“”এমন নির্বোধের মতো কথা বলছো কেন?””
“” জানিনা।””

রিপ্তি মহসীনকে পাশ কাটিয়ে রুমে যেতে চাইলে মহসীন অস্পষ্ট করে বললো,,

“” আমাকে দিয়ে দিতে পারতে। আমি নাহয়..””
“” অন্যের ভুল তোমার কাঁধে দিবো কেন?””
“” কেমন ভুল,কার ভুল সেটা এখানে আসছেনা।””
“” তাহলে কি আসছে?””
“” একটা নিষ্পাপ শিশু!””

রিপ্তি কিছু বলতে চেয়েও চুপ করে গেলো। ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বললো,,

“” তোমাদের এখন বেরোনো উচিত,ভাইয়া নাহলে ট্রেণ মিস করবে।””

~~~
বিষন্নতায় কেটে গেলো প্রায় চারমাস। বাড়ী যাবে যাবে করেও যাওয়া হচ্ছেনা রিপ্তির। পড়াশোনার ভীষণ চাপ। তারমধ্যে মনের ভেতর থেকেও কোনো সায় পাচ্ছেনা। কিন্তু এভাবে আর কত? আর কত পালিয়ে বেড়াবে সে? আর কত লুকিয়ে থাকবে? তার পালানো কি শেষ হবে না?

রিপ্তি যাচ্ছেনা দেখে মিন্মিই ট্রেণ ধরে চলে এসেছে। শক্তগলায় বললো,,

“” অনেক হয়েছে আর নয়। নানির শরীরটাও ভালো নয়। ভোরে চোখ খুলেই আগে জিজ্ঞেস করে,আমার পাগল নাতনিটা আইছে? উনাকে না বলতে এখন আমার ঠোঁট কাঁপে? ছোটবেলা থেকে উনার হাতে মানুষ হয়েছিস,একটু তো মায়া কর!””

রিপ্তি নিরব। কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। নানিকে দেখে না প্রায় দেড় বছর। মিন্মি নিজ থেকেই ব্যাগ গুছাচ্ছে। রিপ্তির জামাকাপড় সব ব্যাগে ঢুকাতে ঢুকাতে বললো,,

“” মানুষটা কবরে যাওয়ার আগে দেখা দে। এমন হা-হুতাসে মারিস না। নাহলে পরে আফসোস করবি।””

রিপ্তি মাথা নিচু করে বললো,,

“” সাথে করে নিয়ে আসলেই পারতে।””
“” আর একটা কথা বলবি তো আমার হাতে থাপ্পড় খাবি। এতোদিন মুখ বুঝে সবকিছু সহ্য করেছি বলে এখনো করবো? ভালোবাসতে পারলে শাসনও করতে পারবো।””

মিন্মি ব্যাগের চেইন লাগালো। নীল রঙের একটা জামা রিপ্তির হাতে ধরিয়ে বললো,,

“” জলদি পড়ে নে। আমি মহসীন ভাইয়ার সাথে কথা বলে আসছি।””

মিন্মি যেতে পারেনা তার আগেই রিপ্তি ঝাপটে ধরেছে তাকে। নরমসুরে বললো,,

“” আর এক সপ্তাহ পর আমার দ্বিতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা। তুমি তো জানো পড়াশোনাটা এখন আমার প্রথম জরুরী কাজ। শাসনটা কয়েকদিন পড়ে করলে হয়না? আচ্ছা,আমি কথা দিচ্ছি পরীক্ষা শেষ হতেই বাড়িতে চলে যাবো।””
“”ঠিক তো?””
“” হুম!””

মিন্মি সামান্য হাসে,রিপ্তিও হাসে।

“” এবার ছাড়,তুই যাবিনা দেখে কি আমিও যাবোনা?””

রিপ্তি আরো গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে। মনে হচ্ছে কত জনম পর কোনো আপন মানুষের ছোয়া পেলো,নিজের শূন্য বুকটায়। গভীর নিশ্বাস টেনে আহ্লাদীসুর নিয়ে বললো,,

“” আজ থেকে যাওনা,মা। তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতে ইচ্ছে করছে।””

মুহুর্তেই মিন্মির চোখজোড়ায় নরমপানির উপস্থিতি। মা ডাকটা শুনলে তার বুকটা এতো প্রশান্তিতে ছেয়ে যায় কেন? এই প্রশান্তিটা কি ‘মা’ ডাকটিতে পায় নাকি যে ডাকছে তার গভীর ভালোবাসার ছোয়া পায় বলে?

“”কি হলো? থাকবে না?””

মিন্মি কান্নামিশ্রিত হাসি নিয়ে বললো,,

“” তোর ভাই? তাকে দেখবে কে? দু’মাস হলো চাকরীতে জয়েন করেছে। প্রতিদিন ঢাকা যাওয়া-আসা করতে করতে তার চেহারায় বদলে যাচ্ছে। অমন কর্মঠ স্বামীটাকে না খেয়ে যেতে হবে। আমার হাতের খাবার ছাড়া নাকি অন্যকিছু পেটে সয়না!””

রিপ্তি ভাবীকে ছেড়ে দেয়। উৎসাহ নিয়ে বললো,,

“” ভাইয়াকে বলি অফিস থেকে এখানে চলে আসতে?””
“” এখানে এসে কি করবে?””
“” আজকে আমরা সবাই একসাথে খাবো। রাতে ভাইয়া আর তুমি এখানেই থাকবে। কাল নাহয়..””
“” এমনভাবে বলছিস যেন,এটা তোর নিজের বাড়ি। নিজেতো থাকছিস আবার পুরো গুষ্টিকেও নিয়ে আসতে চাচ্ছিস। এতো আধিপত্য কিসের? না এটা তোর নিজের বাড়ি,না স্বামীর বাড়ি!””

রিপ্তির উজ্জ্বল মুখটা কৃষ্ণারঙে ছেয়ে গেলো। মুখের আমেজটা পুরোপুরি শুকিয়ে যাওয়ার আগেই মিন্মি বললো,,

“” বিয়ে করে নিলেইতো পারিস!””

রিপ্তি চোখ তুলে তাকায়। খানিকটা চমকেছে। চমকটা খুবই নিম্নমানের হওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে নিজেকে সামলে নিলো। আনমনে বিছানায় বসে। ভাবীর কাছে এমন কিছু আশা করেনি সে। মিন্মিও রিপ্তির পাশে বসে। মোলায়েমকন্ঠে বললো,,

“” কোনো সম্পর্কের দোহায় ছাড়াই মানুষটা তোকে এতো আগলে রাখছে,সম্পর্কের বাধনে পড়লে তোকে রাজরানি করে রাখবে। ভালোবাসার শেষ স্পর্শটাও তোকেই দিবে। সুখের পায়রাটা চোখের সামনে ছটফট করছে বন্দী হওয়ার জন্য। করে নিচ্ছিস না কেন? এখনো এতো দ্বিধা কিসের? তুই কি উনার ভালোবাসা উপলব্ধি করতে পারছিস না?””

রিপ্তি ভাবীর কাধে মাথা রেখে মৃদুকন্ঠে বললো,,

“” পারি ভাবি। কিন্তু আমি ওকে বিয়ে করতে চায়না!””

মিন্মি শক্ত হয়ে বসে। রিপ্তির মাথাটা কাধ থেকে সরিয়ে নেয়। নিজের দু’হাতে রিপ্তির গোলগাল মুখটা বন্দী করে বললো,,

“” কেন? কেন বিয়ে করতে চাসনা?””
“”কারণ ওর প্রয়োজনটা আমার থেকেও অন্য কারো কাছে আরো বেশি।””
“” কার কাছে?””

রিপ্তি উঠে দাড়ালো। হঠাৎই অস্থির হয়ে গেলো। ঘনঘন পা ফেলে এদিক ওদিক হাঁটছে। কিছু একটা মনে করার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা এমন ভাবভঙ্গি! অস্থিরতা নিয়েই বললো,,

“” সেইটাই তো মনে করতে পারছিনা,ভাবী। সেজন্যইতো এখনো এখানে পড়ে আছি।””

মিন্মিও বসা থেকে উঠে পড়লো। রিপ্তির অস্থিরতায় চলা পা’দুটোকে থামিয়ে বললো,,

“” তোর মাথার সব তার ছিড়ে গেছে। সাথে মহসীন ভাইয়ারও। উনি ভালোবাসে তোকে,তুই ভালোবাসিস তাকে,অথচ দুজনের কেউ দুজনকে বিয়ে করতে চাচ্ছিসনা।””

রিপ্তি আগ্রহ নিয়ে বললো,,

“”মহসীনও এমন বলেছে?””
“” না।””
“” তাহলে দুজন দিয়ে কাকে বুঝালে?””

মিন্মি খানিকটা ভাব নিয়ে বললো,,

“” আমিও মনে করতে পারছিনা!””

~~~

আজ রান্নাঘর রিপ্তির দখলে। মহসীনের বাড়িতে থাকছে এক বছর পার হয়েছে। কিন্তু কখনো রান্নাঘরের দিকে যাওয়া হয়নি তার। প্রয়োজনই পড়েনি। ক্ষিধে পেয়েছে এই অনুভবটা হওয়ার আগেই মুখের সামনে খাবার তুলে ধরতো মহসীন। কিন্তু আজ সে মহসীনকে কড়া করে বলে দিয়েছে,রাতের খাবার সে রান্না করবে। মহসীন আপত্তি করেনি তা নয়,কিন্তু রিপ্তি সেদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ তুলেনি।

মহসীনের দিকে একে একে সব সাজিয়ে দিয়ে উৎসুক নয়নে চেয়ে আছে। এমন দীর্ঘসময় পার করে রান্নায় হাত লাগিয়েছে কেমন রেধেছে কে জানে!

মহসীন নিজের প্লেটের দিকে তাকিয়ে থাকলেও তার দৃষ্টিশক্তি অন্যকোথাও। মিন্মি সহজগলায় বললো,,

“” খাচ্ছো না যে?””
“”হোস্টেলে উঠছো,একটিবার আমাকে বলতে পারলে না? ভয় পেয়েছিলে?””

রিপ্তি অপ্রস্তুত হয়ে বললো,,

“” ভয়! কিসের ভয়? তোমাকে ভয় পাবো কেন?””

মহসীন ভাতের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রিপ্তির দিকে রাখলো। দরাজ গলায় বললো,,

“” যদি আমি আটকে ফেলি। তোমার হাত ধরে ফেলি। কোনো স্থায়ী আবদার করে ফেলি।””

রিপ্তির মায়াদৃষ্টি মহসীনের অসহায় মুখটার উপর।

“” সেরকম কিছু নয়,মহসীন। এখান থেকে যাওয়ার পর তো বাকি জীবনটা আমাকে একা একাই সামলাতে হবে। তাই প্রথম পদক্ষেপটা তোমার কাছে থেকেই শুরু করেছি। যাতে ব্যর্থ হলে তোমার সাহায্য নিতে পারি।””

মহসীন চেয়ার টেনে উঠে দাড়ালো। নিজেকে যথাসাধ্য স্বাভাবিক করে বললো,,

“” ব্যর্থতো হওনি। তারমানে আমার সাহায্যের দরকারও নেই।””

মহসীন ডাইনিং ছেড়ে হাটা ধরতেই রিপ্তি শঙ্কিত কন্ঠে বললো,,

“” খাবেনা?””
“” কবে যাচ্ছো?””

রিপ্তির আড়ষ্ট কন্ঠ,,

“” কাল সকালে।””

মহসীন আর কিছু বললো না। সোজা নিজের রুমে চলে গেলো। একি ব্যথা দুইবার সহ্য করতে হবে তাকে। পারবে তো? প্রথমবার নিজে বাধ্য হয়েছে এ বাড়ি থেকে রিপ্তিকে ফিরিয়ে দিতে কিন্তু এবার? এবার সে নিজে থেকেই চলে যাচ্ছে!

বিছানার পাশেই পড়ে আছে রজনীগন্ধা ফুল। শুকিয়ে এসেছে। মনে হচ্ছে হাতের ছোয়া পেলেই ঝরে পড়বে। এই ফুলটা কবে এনেছিলো মহসীন? নাহ! মনে করতে পারছেনা। সে কি মনভোলা হয়ে গেলো,এতো অল্পবয়সেই স্মৃতিশক্তি লোপ পেয়েছে? নাকি মনে রাখার প্রয়োজন পড়েনি। পড়বে কি করে. একসময় প্রতিদিন তার বাসায় ফুল আসতো,কিন্তু এখন? এখন আসেনা। কারণ রক্তমাংসে গড়া স্বয়ং ফুলকুমারী নিজেই যে এ বাড়িতে উপস্থিত। যার কন্ঠে রজনীরসুবাস,যার চোখের দৃষ্টিতে রজনীর সুবাস,যার পায়ের চলনে রজনীর সুবাস! এই ফুল থাকতে তার আর কোন ফুলের প্রয়োজন?

মহসীন শুকনো রজনীগন্ধাটার দিকে নাক এগিয়ে নিলো। এতো করে গন্ধটা শুকতে চাইলো কিন্তু..

ফুলদানিটা খালি করে টুকরো কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করছে মহসীন। কাল থেকে যে আবারও এ বাড়িতে তাজা ফুলের গন্ধের আগমন ঘটবে। পরিষ্কার শেষে ফুলদানিটা টেবিলের উপর রাখতে গিয়ে নিচে পড়ে গেলো। তৎক্ষনাৎ মহসীন ব্যস্ত পা চালালো রিপ্তির রুমে। অনেক হয়েছে আর নয়। আর ভালোমানুষি সাজতে পারবে না সে। এই মেয়েটাকে এবার তার চাই-ই চাই। নাহলে সে মারা যাবে রজনীগন্ধা সুবাসের অভাবে মারা যাবে।

রিপ্তি তখন নিজের প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছানোতে ব্যস্ত। তার মধ্যেই মহসীন হাজির। রিপ্তি ব্যস্ত গলায় বললো,,

“” কিছু বলবে,মহসীন?””

মহসীন বিনাবাক্যে রিপ্তির ডান হাতটা টেনে নিলো। বুক পকেট থেকে কলমটা খুলে নিয়েছে। রিপ্তির বৃদ্ধাঙুলে কলমের কালি পড়ার পূর্বেই কলিংবেল বেজে উঠলো। দুজনেই চমকে উঠেছে। রিপ্তির চোখ পড়লো দেয়ালের ঘড়িতে। ১০ টা বেজে ২৫। কপাল কুঁচকে বললো,,

“” এতো রাতে কে এলো?””
“” আমি দেখছি।””

দরজার অপরপাশের মানুষটাকে দেখেই মহসীন হকচকিয়ে গেলো। চকিত কন্ঠে বললো,,

“” অনুভব,তুমি?””

চলবে

4 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here