ভালোবাসার রং মিছিল পর্ব -০৬+৭

#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৬

সবাই গ্রুপ ফটো তুলে আশেপাশের সৌন্দর্য উপভোগ করছে।রুশান আর অর্ষা ভিডিও করছে আশেপাশের সব কিছু।উশা এসে রুশান আর অর্ষার পাশে বসে।রুশান উশাকে দেখে হেসে বলে,,

—“কিরে তুই আজ চুপচাপ যে,অন্য সময় হলে তো মাথা খেয়ে ফেলিস বকবক করে।আজকে কি হলো”

—“নারে তেমন কিছু না।বাড়িতে একটু চাপ দিচ্ছে বিয়ে করার জন্য তাই আরকি”

অর্ষার উশার বিয়ের কথা শুনে ভ্রু কুচকে যায়।উশা যে নাইমকে ভালোবাসে তা কমবেশি সবাই জানে।নাইম ও হয়তো ভালোবাসে উশাকে।রুশান উশাকে বলল,,,

—“প্যারা নিস না আমরা তোকে নাইমের সাথেই বিয়ে দিবো।জোর করলে তুলে নিয়ে নাইমের ঘাড়ে ঝুলিয়ে দেবো।”

অর্ষা আর উশা হেসে ফেলে রুশানের কথায়।রুশান সিরিয়াস মুহুর্তেও হাসাতে পারে।সবাই নৌকায় অনেক ক্ষণ ঘুরে নেমে পরলো।পাশ থেকে সবাই ফুসকা খেয়ে যার যার বাড়ির দিকে রওনা হলো।

১০.

—“ইরহাম তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই”

ইরহাম খেতে খেতে বলল,,,
—“হ্যা মামনিবলো কি বলবে”
—“আমরা চাইছি তোমার আর অর্ষা মামনির এনগেজমেন্টটা সামনের শুক্রবার সেরে ফেলতে।”

—“আমি ওই মেয়েকে বিয়ে করতে পারবো না আম্মু”

—“কেনো সমস্যা কোথায় ইরহাম।মেয়েটা খারাপ কোথায় সব দিক দিয়ে পারর্ফেক্ট তোমার জন্য।মেয়ে যেমন সুন্দরী পড়ালেখায় ভালো।তাহলে সমস্যা কোথায়”

—“আমি একজনকে পছন্দ করি আর তাকেই বিয়ে করবো।”

আয়রা ভীষণ চমকালেন কথাটা শুনে।ইরহাম যে কাউকে পছন্দ করতে পারে তা তার ধারনার বাইরে ছিলো।অবাক হয়ে বলল,,,
—“কে সেই মেয়ে”[লেখিকা ইশা আহমেদ]

—“জানি নাহ বাট খুব তাড়াতাড়ি তাকে খুঁজে বের করবো।”

—“হুয়াট!তুমি নাম ঠিকানা জানো না সেই মেয়ের পিছে পরেছো।কি শুরু করেছো ইরহাম তুমি।আমি বলছি অর্ষা মেয়েটা ভীষণ ভালো বিয়ে করে নাও ওকে সুখী হবে”

ইরহাম উঠে যেতে যেতে বলে,,,”আমি তাকেই বিয়ে করবো মামনি”

—“ধরো সে যদি বিবাহিত হয় তাহলে কি করবে তুমি”

—“ওকে ডান আমি যদি তাকে শুক্রবারের আগে খুঁজে বের না করতে পারি তাহলে অর্ষাকেই বিয়ে করবো,আই প্রমিজ”

ইরহাম চলে যেতেই আয়রা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।কে জানে আবার কোন মেয়ের প্রেমে পরলো তার ছেলে।অর্ষার কথা মাথায় আসতেই খারাপ লাগলো।মেয়েটাকে তার ভীষণ পছন্দ হয়েছিলো।দেখা যাক কি হয়।আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।

ইরহাম রুমে এসে ভাবতে লাগলো বলে তো আসলো সে যে শুক্রবারের আগে না পেলে অর্ষাকেই বিয়ে করবে।কিন্তু ওই ঝগড়ুটে মেয়ের সাথে থাকবে কি করে সে।এটা ভাবতেই প্রচন্ড বিরক্ত এসে ভর করলো।ইরহাম কফি নিয়ে ছাদে চলে আসে মাথাটা ভীষণ ধরেছে।আকাশে চাঁদ উঠেছে।সেও যে তার চাঁদকে খুঁজছে।

সে যে ওই চোখের মায়ায় ডুবছে।কি করবে,কীভাবে খুঁজে পাবে তাকে।মুখটাও তো দেখেনি দেখেছে শুধু চোখ জোড়া।তাও কয়েক সেকেন্ডের জন্য।ইশশ কেনো যে সে মেয়েটাকে সম্পূর্ণ ভাবে দেখতে পেলো না।

ইরহাম আবারও রুমে চলে আসলো।রুমে এসে রং তুলি নিয়ে বসলো।রং তুলিতে সে হৃদহরনীর চোখটা একে ফেললো।ছবিটার দিকে কিছুক্ষণ তাকানোর পর মনে হলো এই চোখ সে একবার নয় তার বেশি দেখেছে।কিন্তু মনে করতে পারলো না।ভাবলো হয়তো চোখটাকে নিয়ে বেশি ভাবার ফলে মনে হচ্ছে আগেও দেখেছে।

—❝আমি ডুবেছি তোমার ওই মাতাল করা চোখের অনন্ত মায়ায় হৃদহরনী❞

১১.

শুক্রুবার ছুটির দিনের সকালে উঠেই এমন একটা খবর শুনবে তা অর্ষা কখনো কল্পনাও করতে পারিনি।আজকে তার এনগেজমেন্ট তাও ইরহামের সাথে।অর্ষা তো চোখের পানি নাকের পানি একাকার করে কেঁদেেই যাচ্ছে।রুশান পাশে বসে মজা নিচ্ছে।অনেক জ্বালিয়েছে অর্ষা রুশানকে এখন তার পালা।

—“কিরে পেত্নীর রানী তুই তো তোর রাজা পেয়ে গেলি।দেখতে শুনতে ভালো হলেও মনটা মোটেও ভালো না।আমাকে দেখলেও শুধু বকে।একবার বিয়েটা হোক সব শোধ তুলে নিবো”

অর্ষা রুশানকে এলোপাতাড়ি মারতে মারতে বলে,,,

—“তুই….তুই বেস্টফ্রেন্ড নামের কলঙ্ক।তোর বেস্ট ফ্রেন্ড কাঁদছে আর তুই হাসছিস।কথা বলবি না আমার সাথে বের হ রুম থেকে”

রুশান হাসতে হাসতে বের হয়ে যায়।পুরো বাড়ি খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।এইতো কিছুক্ষণ আগের ঘটনা,ঘুম থেকে উঠে অর্ষা ফ্রেশ হয়ে বের হতেই দেখে সারাবাড়ি ফুল দিয়ে সাজানো।রুশানের কাছে জিজ্ঞেস করতেই ও বলল আজকে নাকি অর্ষার এনগেজমেন্ট ইরহামের সাথে।কথাটা শোনার পর থেকেই অর্ষা রুমে বসে কেঁদে যাচ্ছে।
মাঝে অর্ষা দৌড়ে বাবার কাছে যায়।আসিফ আহমেদ সব কিছু দেখাশোনা করছিলেন।অর্ষা তার আব্বুর কাছে এসে নাক টেনে বলে,,,

—“তুমি আমায় না জানিয়ে এনগেজমেন্ট ঠিক করে ফেললে আব্বু।একবারও আমার মত নিলে না।এতো পচা কিভাবে হয়ে গেলে।”

আসিফ আহমেদ হাসেন মেয়ের অভিমানী কন্ঠ শুনে।কালকে সন্ধ্যায় আয়রা ফোন করে জানিয়েছে আজকে এনগেজমেন্ট হবে।আসিফ আহমেদ অবাক হলেও রিয়াক্ট করেনি।সে তো নিজেও চাইছিলো কখন আয়রা ফোন করে বলবেন এনগেজমেন্টের তারিখ।কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি বলবে ভাবেনি।
অর্ষাকে টেনে পাশে বসিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,,,

—“আমি জানি মা তুই অভিমান করেছিস কিন্তু কি জানিস বড় সব সময় ছোটদের ভালো চায়।দেখবি একদিন তুই আমায় নিজে বলবি বিয়েটা দিয়ে তুমি ঠিক করেছিলে আব্বু”

অর্ষা গাল ফুলিয়ে চলে আসে।দুপুরের দিকে পার্লারের থেকে লোক এসে অর্ষাকে সাজিয়ে দিয়ে যায়।অর্ষার পরনে লাল টুকটুকে লেহেঙ্গা,গা ভর্তি গয়না।অর্ষার মনে হচ্ছে আজকেই তাকে বিয়ে দিয়ে দিবে।যে পরিমাণ সাজিয়েছে তাকে সব দিক দিয়েই মনে হচ্ছে আজকে তার বিয়ে।একদম রাঙা বউ লাগছে।

সন্ধ্যা হতেই সবাই আসতে লাগলো।সব বন্ধুরাও এসেছে অথৈ বাদে।অর্ষা মন খারাপ করে বসে আছে।ভালো লাগছে না তার।সব থেকে অপছন্দের মানুষটার সাথেই সারাজীবন থাকতে হবে তার।অর্ষার মন খারাপ দেখে রুশানেরও ভালো লাগছে না।

—“অর্ষা কি হলো বইন তোর।তোর না বিয়ে নিয়ে অনেক সপ্ন ছিলো তাহলে আজকে কেনো এমন মরা মানুষের মতো আছিস,এভাবে থাকলেও কি তুই এনগেজমেন্ট টা আটকাতে পারবি”

উশার কথায় অর্ষা ভেবে দেখলো আসলেই কেনো সে এমন মরা হয়ে আছে।সে মরা মানুষের মতো থাকলেও বিয়েটা হবে এমনিতেও বিয়েটা হবে।তার থেকে নেচে গেয়ে বিয়ে করলেই হয়।আর মন খারাপ করে বসে থাকবে না।

—“তুই ঠিকই বলেছিস উশা মরা মানুষের মতো না একেবারে নেচে গেয়েই বিয়ে করবো।”

সবাই হেসে ফেলে।এবার তারা শান্তি পেলো।অর্ষা মন খারাপ করে থাকলে কারোরই ভালো লাগে না।অথৈ আসেনি শুনে রুশানের ভেতরে ভালো লাগা কাজ করলো।কেনো জানি পছন্দ না তার অথৈকে।

১২.

ইরহাম আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে।মুড একেবারেই ঠিক নেই।বিরক্তিকর বাচাল একটা মেয়েকে তার বিয়ে করতে হচ্ছে।হ্যা ইরহাম পায়নি তার হৃদহরনীকে।যার চোখের মায়ায় পরেছে ইরহাম তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

জীবনে প্রথম কারো প্রেমে পরলো ইরহাম।তাকে তো পেলোই না একটা ঝামেলা গলায় ঝুলতে যাচ্ছে এখন।এনগেজমেন্ট করতেই হবে তার।কথা দিয়েছিলো যে সে।চারপাশের সব কিছুই অসয্য লাগছে ইরহামের।ইলমা দৌড়ে ইরহামের রুমে আসলো।লাল পাঞ্জাবিতে দারুন লাগছে ইরহামকে।ইলমা ভাইয়ের কাছে এসে বলল,,,

—“দা ভাই তুমি এতো সুন্দর কেনো!ইশ আজকে তো অর্ষা ভাবি তোমায় দেখে ক্রাশ খেয়ে যাবে।”

ইরহাম কথাগুলো ইগনোর করে বলে,,,
—“ইয়াদ এসেছে ইলমা”

—“হ্যা দা ভাই ছোট ভাইয়া তো অনেকক্ষণ আগে এসেছে নিচে বাবা আম্মুর সাথে কথা বলছে হয়তো”

ইরহাম ইলমাকে নিয়ে নিচে নামে।আয়রা ছেলের কাছে আসেন ভালো করে দেখে বলেন,,
—“মাশাআল্লাহ আমার ছেলেকে তো রাজপুত্রের চেয়ে কম লাগছে না”

ইরহাম বিরক্ত হয়।বিরক্ত হওয়ারই কথা পছন্দের মানুষটাকে পেলো না আবার সব থেকে অপছন্দের মেয়েটাকেই বিয়ে করতে হচ্ছে।ইয়াদ ইরহামের কাছে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,

—“কেমন আছো ভাইয়া।তোমার তো আমার কথা মনেই পরে না এন্ড কংগ্রেস ফর ইউর ফিউচার লাইফ।”

—“আমার মনে পরে না কে বলেছে তোকে।কিন্তু তোরই আমায় মনে পরে না যা দেখা যাচ্ছে।”

—“উফ ভাইয়া দেরি হয়ে যাচ্ছে চলো।আমার অর্ষা ভাবিকে না দেখা পর্যন্ত শান্তি হবে না।চলো চলো”

১৩.

অর্ষা নেচে গেয়ে হৈ-হুল্লোড় করে বেড়াচ্ছে।রুশান তো সেই লেভেলের খুশি।বেস্টফ্রেন্ডের এনগেজমেন্ট এনগেজমেন্ট বলে সারা বাড়ি লাফাচ্ছে।মৌয়ের কাছে অবশ্য বেশ বকাও খেয়েছে।রুশান রুহানকে নিয়ে বরকে দেখবে বলে গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।রুশানের কাঁধে কেউ হাত রাখলে সে পেছনে ফিরে অর্ষাকে দেখে চিৎকার দিয়ে লাফিয়ে সরে দাড়ায়।
বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে নিশ্বাস নিয়ে বলে,,,,,

—“তুই আসলেই শাক চুন্নি নাহলে এইভাবে ভয় দেখাস নাকি।কিন্তু তুই এইখানে কেনো পাত্রী কি কখনো এইখানে থাকে নাকি”

রুশান ভ্রু কুচকে কথাটা বলল।অর্ষা উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখতে দেখতে বলল,,

—“কেনো থাকতে পারবে না আমি তো আমার হবু বর আই মিন ইরহাম স্যারকে দেখতে এসেছি”

—“তুই না সকালে এনগেজমেন্ট করবি না করবি না বলে হাত পা ছড়িয়ে কাঁদছিলি।এখন আবার ইরহাম স্যার মানে যার সাথে তোর সাপে নেউলের সম্পর্ক তাকে দেখতে এসেছিস”

—“ভালো হইছে আমার ইচ্ছে হলে আমি কাঁদবো আবার আমার ইচ্ছে হলে আমি আমার বরকে নাচতে নাচতে দেখতেও আসবো তোর কি তাতে”

—“বইন মাফ কর আমার কিছুই না সত্যি আর কিছু কমু না তোরে।তোর যা ইচ্ছে হয় তাই করিস।”

ওদের কথার মাঝেই চারটা গাড়ি এসে থামে বাড়ির সামনে থেকে।একটা থেকে ইরহাম ইয়াদ আর ইলমা বেরিয়ে আসে।আরেকটা থেকে আয়রা আর ইসফাক চৌধুরী।অর্ষা আজকে ভালো করে ইরহামের দিকে তাকালো।তার লেহেঙ্গার সাথে মিলিয়ে একটা লাল রঙা পাঞ্জাবি পড়া।
ফর্সা গায়ে অনেক মানিয়েছে।লম্বাও অনেক।অর্ষা হয়তো তার কাঁধ সমান।অর্ষা আগে কখনো ইরহামকে ভালো করে দেখেনি।আজকেই দেখছে।ও রুশানকে বলে,,,

—“রুশাইন্না এই অসভ্য স্যার দেহি হেব্বি সুন্দর।দেখতে তো অস্থির আমি ক্রাশ নামক বাশ খেয়ে গেলাম ভাই”

—“তুই কি আগে স্যাররে দেখোস নাই মনে হচ্ছে জীবনে প্রথমবার স্যারকে দেখছিস।”

—“আরে ভাই আগে তো দেখছি কিন্তু এতো ভালো তো লাগেনি।”

কথাটা বলেই অর্ষা মনে মনে বিড়বিড় করলো,,,
—“না না অর্ষা তোর এই ব্যাডার উপর ক্রাশ খাইলে চলবে না।ব্যাডা এক নাম্বারের অসভ্য শুধু তোর সাথে ঝগড়া করে।”

বেখেয়ালিতে রুশান আর অর্ষা ভিমড়ি খেয়ে পরে।অর্ষা না পরলেও রুশান ধপাস করে পরে যায়।যার ফলে সবার দৃষ্টি ওদের দিকে পরে।রুশানকে পরে থাকতে দেখে ইলমা খিলখিল করে হেসে দেয়।অর্ষা সবার দিকে এক নজর তাকিয়ে ছুটে পালায়।

রুশান হা করে ইলমার দিকে তাকিয়ে আছে।হুশ ফিরতেই নিজেও উঠে চলে যায়।লজ্জা লাগছে ভীষণ।একটা অপরিচিত মেয়ের সামনে মান সম্মানের ফালুদা হয়ে গেলো।

চলবে~#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৭

—“দেখেছো ইসফাক মেয়েটা ভীষণ দুষ্টু।কেমন নিজের বরকে দেখতে চলে এসেছে।আমার ওর এই দুষ্টুমিগুলো ভালো লাগে।ছোটবেলার কথা মনে পরে যায়”

—“মেয়ে তো মাশাআল্লাহ ভীষণ সুন্দরী।আমার ছেলেকেও টাইট দিতে পারবে।তুমি একেবারে পারফেক্ট মেয়েকেই সিলেক্ট করেছো”

—“আমি জানি আমার রাগচটা বদমেজাজি ছেলের জন্য অর্ষারই বেস্ট।”

আয়রা ইসফাক নিজেদের ভেতরে কথা বলছিলো।ইয়াদ ফোনে কথা বলছিলো যখন সবাই অর্ষাকে দেখেছিলো।সে শুধু একটা মেয়েকে দৌড়ে যেতে দেখেছে।ইয়াদ ইরহামকে বলল,,,

—“মেয়েটা কে ছিলো দা ভাই”

ইয়াদের কথায় ইরহাম কিছু বলবে তার আগেই ইলমা বলে উঠলো,,,
—“এটা আমাদের ভাবি ছোট ভাইয়া।ইরহাম ভাইয়ের একমাত্র হবু বউ।”

কথার মাঝেই ইসফাক চৌধুরী তাড়া দিলেন ভেতরে ঢোকার জন্য।আসফি আহমেদ আর আহিন আহমেদ ওদের আপ্যায়ন করে ছাদে নিয়ে আসলো।ছাদটা সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।সাদা গোলাপ লাল গোলাপ দিয়ে।ইরহাম একটা জিনিস দেখে ভীষন অবাক হয়।
কারণ ছাদের এক পাশে সুন্দর করে সাজানো।দুইপাশে বসার জন্য জায়গা আর মাঝখানে ফুলের পর্দা দেওয়া।

ইসফাক চৌধুরী ইরহামের কাছে এসে বলল,,,
—“ইরহাম আমার সাথে একটু আসো।”

ইসফাক চৌধুরীর পিছনে পিছনে একটা রুমে আসলো ইরহাম।আয়রা আগে থেকেই বসে ছিলো।ইসফাক চৌধুরী বলেন,,
—“ইরহাম তোমাকে কিছু কথা বলতে চাইছি এখন”

—“জি বাবা বলো কি বলবে।”

—“তোমার মামনি আমি এবং সবাই চাইছি আজকেই তোমার আর অর্ষার বিয়েটা হয়ে যাক।অর্ষাকে আমরা এখন নিয়ে যাাবো না ওর ফাইনাল এক্সামের পরে বড় করে অনুষ্ঠান করে নিয়ে যাবো।”

—“হোয়াট!কি বলছো কি বাবা তুমি।মানলাম আজকে এনগেজমেন্ট করতে চেয়েছি তাই বলে বিয়েও।অসম্ভব আমি আজকে বিয়ে করতে পারবো না”

আয়রা কিছুটা রেগে বলেন,,,

—“কেনো বিয়ে করতে পারবে না,কিছুদিন পরে বিয়ে করাা আর এখন করা তো একি কথা তাহলে সমস্যা কোথায়”
ইরহাম নিজেকে শান্ত করে বলল,,,
—“অর্ষা কি রাজি বিয়েটা করতে।”

—“হ্যা ও তো রাজি।ও কি তোমার মতো নাকি।নিজের বাবা মায়ের কথার গুরুত্ব আছে ওর কাছ।”
—“আমি এই মুহুর্তে অর্ষার সাথে কথা বলতে চাই।”

—“ঠিক আছে আমি তোমার সাথে অর্ষার কথা বলানোর ব্যবস্হা করছি।”

ইসফাক আয়রা বেরিয়ে যায় রুম থেকে।ইরহাম চুল টেনে বসে পরে।আজকেই বিয়ে,সে তো তার হৃদহরনীকে ভুলতেই পারছে না।চোখ বন্ধ করলেই সেই মাতাল করা চোখ দুটো চোখের সামনে ভেসে ওঠে।এই ক’দিন ঘুমাতেও পারেনি ঠিকমতো।

১৪.

আরিশার উপর দিয়ে সব ঝামেলা যাচ্ছে।আপুর বিয়ে বলে কথা আম্মু বলছে এই করো ছোট আম্মু বলছে ওই কর।এতেই আরিশার অবস্হা খারাপ।সব কিছু ভাবতে ভাবতেই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পরে যায়।

—“আউচ আম্মু মরে গেলাম গো আমার কোমড় ভেঙে দিলো।”
আরিশার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে কেউ মিষ্টি কন্ঠে বলল,,,
—“আম সরি মিস। একদমই খেয়াল করিনি দুঃখিত তার জন্য।উঠে আসুন”

আরিশার সামনে একটা সুদর্শন পুরুষ তার দিকে হালকা ঝুঁকে হাত বাড়ি দিয়ে কথাটা বলল।আরিশা মুগ্ধ দৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছে।ছেলেটা আরিশার মুখের সামনে তুড়ি মেরে বলল,,,

—“কি হলো মিস আপনার।আপনি কি এভাবেই বসে থাকার চিন্তা করেছেন”

অর্ষা লোকটার হাত ধরে উঠে দাঁড়ালো।অর্ষা ময়লা ঝাড়তে ঝাড়তে বলল,,,
—“খুবই দুঃখিত আসলে অনেক ঝামেলার মাঝ দিয়ে যাচ্ছি তাই হয়তো খেয়াল করিনি আপনায়।সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ।”

লোকটা আবারও হাসলো।আরিশা আবারও মুগ্ধ হয়।এই বয়সটাই যাকে দেখবে তাকেই ভালো লাগবে।আরিশা ১০ম শ্রেনীতে পরা কিশোরী মেয়ে।আর এই বয়সেই মানুষ ভুল করে,ভুল মানুষর প্রেমে পরে।নিজের অস্তিত্বকে হারায়।আরিশার মনে পরলো তার আপুই এর কথা।তাই সে এইসব ফালতু চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফলল।আরিশার ভাবনার মাঝেই লোকটা বলল,,,

—“আমি ইয়াদ চৌধুরী পাত্রের ছোট ভাই।আপনি কি হন পাত্রীর”[লেখিকা ইশা আহমেদ]

—“ওহ আপনি ইরহাম ভাইয়ার ভাই।আমি অর্ষা আপু মানে আপনার ভাবির ছোট বোন”

ইয়াদ হেসে বলল,,,গ্রেট!আপনি তো আমার বেয়াইন লাগেন তাহলে।তা বেয়াইন কি খবর,কোন ক্লাসে পরছেন”

—“উমম আমি আরিশা দশম শ্রেনীর ছাত্র আর পড়ালেখা যেটাতে আমি ভীষণ খারাপ।আপুর একদম উল্টো বলতে পারেন।”

ইয়াদ হেসে ফেললো আরিশার কথায়।মেয়েটার প্রথম কথাগুলো শুনে মনে হয়েছিলো কলেজে পড়ে হয়তো এখন তো দেখছে মাত্র ১০ম শ্রেনীতে পড়া বাচ্চা মেয়ে।ইয়াদ আরিশার দিকে ঝুঁকে ওর ছোট ছোট চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে বলল,,

—“পড়াশোনায় মন দাও মেয়ে।দেখবে একদিন ভালো কিছু করতে পারবে।পড়াশোনা না করলে কিন্তু ভুগতে তোমাকেই হবে।”

ইয়াদ চলে যায়।আরিশা ইয়াদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে।লোকটা হুট করে এসে আরিশার কিশোরী মনে ঝড় তুলে চলে গেলো।এ ঝড় কি আদেও থামবে নাকি থামাতে হলে ইয়াদ চৌধুরী নামক লোককে লাগবে।

১৫.

রুশান তখনকার জন্য অর্ষাকে তাড়া করছে সারা রুম জুড়ে।বেচারি অর্ষা ভারি লেহেঙ্গা নিয়ে সেইভাবে দৌড়াতেও পারছে না।কোনো মতে রুশানের ভয়ে লেহেঙ্গা উঁচু করে দৌড়াচ্ছে।আর সব বন্ধুরা মিলে বসে বসে মজা নিচ্ছে।

—“অর্ষার বাচ্চা দাড়া বলছি তোর জন্য আমার সবার সামনে মান সম্মান শেষ।ওই মেয়েটা আমাকে দেখে হাসছিলো কি করে”

অর্ষা দাঁত কেলাতে কেলাতে বলল,,,

—“ঠিক হয়েছে একেবারে জানু তুই আমার মজা নিচ্ছিলি সকালে মনে আছে।তোমার লেগেছে বুঝি জানটুস ইলমাকে হাসতে দেখে।”

কথাটা বলেই খিলখিল করে হেসে দেয় অর্ষা।রুশান তো রেগে ফায়ার।তখনই রুমে ইরহাম প্রবেশ করে।ইরহামকে দেখে মুহিব নাইম উশা দাঁড়িয়ে পরে।ইরহাম হাতের ইশারা করে সবাইকে বের হয়ে যেতে বলে।রুশান অর্ষার দিকে তাকিয়ে চলে যায়।
অর্ষা বেলকনিতে গিয়ে দরজা চাপিয়ে দিয়েছে।অর্ষা সারা শব্দ না পেয়ে দরজা খুলে মাথাটা হালকা উঁচিয়ে দেখে রুশান আছে কিনা।রুশানকে না দেখে খুশি মনে বের হতে হতে বলে,,,

—“যাক এ যাত্রায় রুশাইন্নার হাত থেকে বেঁচে গেলাম।কিন্তু কাহিনী কি ওতো এতো সহজে যাওয়ার লোক না।”

ইরহাম অর্ষাকে টেনে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে।ইরহামের চোখগুলো অসম্ভব লাল।মনে হচ্ছে রেগে আছে ভীষণ।কিন্তু অর্ষা বুঝতে পারলো না ইরহাম রেগে কেনো আছে।ইরহাম দাঁত কিড়িমিড়ি করে বলে,,,

—“তুমি বিয়েতে কেনো রাজি হয়েছো হ্যা।আমি তোমাকে বিয়ে করতে পারবো না।তোমার মতো মেয়ের সাথে এক মুহুর্ত থাকা সম্ভব না”

অর্ষা চেচিয়ে বলল,,,

—“বিয়ে কিসের বিয়ে! আপনার মতো অসভ্য লুচ্চা ব্যাডার লগে আমিও বিয়ে করতে চাই না।খালি আব্বু বলছে তাই।আর আমার সাথে না আপনার মতো লোকের সাথে এক সেকেন্ড ও থাকা সম্ভব না”

অর্ষা নিজেকে ইরহামের কাছ থেকে ছাড়াতে চায়।ইরহাম অর্ষাকে ছেড়ে দেয়।অর্ষা অবাক হয়।এতো সহজে ছেড়ে দিলো।ইরহাম নিজের রাগকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে।ইরহাম অর্ষার কাছে এসে বলে,,

—“প্লিজ তুমি বিয়েটা করো না।না করে দাও।আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি”

অর্ষা অবাক হয়।সে তো ভাবতেও পারছে না এই লোকটা নাকি কাউকে ভালোবাসে।জীবনে কল্পনাও করেনি এই বদমেজাজি লোক কাউকে ভালোবাসবে।অর্ষা ভীষণ খুশি হয়।তাহলে হয়তো ইরহাম তাকে বিয়ে করবে না এই ভেবে পরক্ষণেই মনে পরে ইরহাম তো তাকেই বিয়ে ভাঙতে বলছে।

—“শুনুন আমি কিভাবে বিয়েটা ভাঙবো বলুন আপনিই ভেঙে দিন বিয়েটা কারণ আমি না আপনিই কাউকে ভালোবাসেন।”

—“আমি যদি বিয়েটা ভাঙতে পারতাম তাহলে কি তোমাকে বলতাম আর আমি আমার হৃদহ…..”

ইরহাম থেমে যায়।অর্ষা শেষের কথাটুকু ঠিকমতো শুনতে পারিনি।অর্ষা ধপ করে বিছানায় বসে বলে,,,

—“স্যার সমস্যা নেই এখন তো এনগেজমেন্ট হচ্ছে আপনি না হয় বিয়ের আগে ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে পালিয়ে যাইয়েন।তাহলে সমস্যা নেই”

—“আমাদের বিয়েটা একটু পর অর্ষা তুমি কি জানো না।তোমার আব্বু সবাই বলেছে তুমি রাজি তাহলে নাটক কেনো করছো।হুয়াই!”

অর্ষা কেঁপে ওঠে।স্তব্দ হয়ে যায় অর্ষা।আজকে ওর বিয়ে তাহলে সকাল থেকে হওয়া সন্দেহটাই ঠিক।অর্ষা মনটা খারাপ হয়ে যায়।তবুও নিজেকে স্বাভাবিক রাখে।আসিফ আহমেদকে ইরহামের কাছে ছোট হতে না দেওয়ার জন্য বলে,,,

—“সরি ভুলে গিয়েছিলাম।আর হ্যা আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি।আমার এতে কোনো সমস্যা নেই।আপনার সমস্যা থাকলে আপনি বিয়ে ভাঙেন”

ইরহাম রাগে দিক বেদিক হারিয়ে ফেলে।অর্ষার বাহু শক্ত করে চেপে ধরে।ইরহামকে আজকে কেমন অন্যরকম লাগছে অর্ষার।অসম্ভব রেগে থাকাটাও ভালো লাগছে অর্ষার কাছে।চোখগুলো লাল টকটকে মেয়েদের মতো নাকও লাল হয়ে আছে রাগের কারণে।

—“ঠিক আছে বিয়ে করছো না আমিও তোমাকে দেখে নিবো মিস অর্ষা।”

—“দেখেন না দেখেন কত সুন্দর করে সেজেছি।ভালো করে দেখেন একটু পর আপনারই বউ হয়ে যাবো।সারাজীবন দেখতে পারবেন আর সাথে তো জ্বালানো ফ্রি”

ইরহামের রাগের থেকে বিরক্তিকর লাগছে এই মেয়েকে।কথা বলছে রেগে আর এই মেয়ে সেইগুলোকে হাওয়ায় উড়িয়ে দিচ্ছে।যেনো তার কিছুই যায় আসে না।গায়ে কিছুই মাখে না।ইরহাম অর্ষাকে ছেড়ে দিয়ে দরজা খুলে হনহন করে বেরিয়ে যায়।অর্ষার এবার কান্না পায় তার বাবাই তাকে আজকেই বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে।তখনই রুমে আসিফ আহমেদ ঢোকেন।

আসিফ আহমেদ মেয়ের পাশে এসে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে।অর্ষা টলমল চোখে তাকালো আসিফের দিকে।আসিফ আহমেদ হালকা হেসে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,

—“মা আমি তোর খারাপ চাই না।ইরহামের সাথে খুব ভালো থাকবি তুই।আজকে বিয়েটা হয়ে যাক মা তুই না করিস না”

—“আমি রাজি বাবা।আমার কোনো সমস্যা নেই বিয়েটা করতে”

—“তুই মন থেকে রাজি তো মা বিয়েটা করতে।”

অর্ষা বাবার বুক থেকে মাথা উঠিয়ে চোখ মুছে বলে,,,

—“হ্যা আব্বু আমি রাজি। তোমার জামাইয়ের যে আমি কি অবস্থা করি সেটা শুধু দেখতে থাকো।”

চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here