ভালোবাসার রং মিছিল পর্ব -৩২+৩৩

#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা_ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৩২

—“কিরে তুই এমন হাবলার মতো তাকিয়ে আছিস কেনো”

অর্ষার কথায় রুশান লাফিয়ে উঠলো।ইলমা আরিশা ফিক করে হেসে দিলো।রুশান লজ্জা পায়।অর্ষার দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,,,,

—“এতো লেট কেউ করে।আটা ময়দা তো দিছিস একশো কেজি।ভাবতেছি তোকে দেখে ইরহাম ভাইয়া না ভুত ভেবে পালিয়ে যায়।তোকে পেত্নীর থেকেও বাজে লাগছে দেখতে অর্ষা”

অর্ষা রুশানের কথা শুনে রেগে মেগে ফায়ার।রুশানকে মারতে থাকে অর্ষা।রুশান বেচারা ছাড়াতে ব্যস্ত।ইলমা আর আরিশা দাঁড়িয়ে মজা নিচ্ছে।অর্ষা কোনো কথা না বলে গাল ফুলিয়ে গাড়িতে বসে পরে।আরিশা ইলমাও বসে পরে।রুশান ও হেসে গাড়িতে বসে পরে।পরে না হয় তার বেস্টুর রাগ ভাঙিয়ে নেবে।

বাড়িতে আসতেই অনুষ্ঠান শুরু হয়।অর্ষার কাজিনরা নাচছে।কেউ কেউ মেহেদী পরছে।অর্ষাকে মেহেদী দিয়ে দিচ্ছে ওর কাজিন।যে খুব সুন্দর করে দিয়ে দিচ্ছে।ইলমা আরিশা মজা করছে সবার সাথে।রুশান অর্ষার পিক তুলছে।অর্ষার হাতে তার কাজিন খুব সুন্দর করেন ইরহামের নাম লিখে দিয়েছে।অনুষ্ঠান চলে রাত ১২ টা পর্যন্ত।ইলমাকে রুশান দিয়ে এসেছে।রুশান কি এই সুযোগ ছাড়ে কখনো।প্রেয়সীর সাথে কিছু সময় কাটাতে পারাটাও অনেক আনন্দের।

অর্ষা মাত্র রুমে এসেছে।সবাই এখনো ছাড়তেই চাইছিলো না।অর্ষা আয়নার সামনে বসে চুল ছাড়িয়ে নেয়।মেকাপ ধুয়ে এসে মুখ মুছতেছিলো।তখনই উন্মুক্ত পেটে কারো গভীর স্পর্শ পায়।শিউরে ওঠে অর্ষা।লোকটা পেছন থেকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে।অর্ষার খোলা চুলে মুখ গুঁজে আছে।অর্ষা চেনে লোকটা কে!তার প্রেমিক পুরুষ একান্তই তার।

—“বউ আমি থাকতে পারছি না তোমাকে ছাড়া এখনো আগামী কালকের দিনটা আছে।ইশ সময় যাচ্ছে না কেনো বলতো?”

ইরহাম অর্ষার চুলে মুগ গুঁজেই কথাটা বলল।অর্ষা কেঁপে উঠে।অর্ষা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে,,,

—“কি করছেন ইরহাম ছাড়ুন”

ইরহাম অর্ষাকে ছেড়ে দেয়।অর্ষা জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে তাকায় ইরহামের দিকে।ইরহামের ঠোঁটে দুষ্ট হাসি।ইরহামকে দেখে এক দফা ক্রাশ খায় অর্ষা।ইরহামের পরনে সবুজ পাঞ্জাবি।বুকের উপরের বোতাম দুটো খোলা।চুলগুলো বাতাসে এলোমেলো হয়ে কপালে লেপ্টে আছে।চোখে চশমা তো আছেই।ইরহাম অর্ষার দিকে ঝুঁকে কানের কাছে ফিসফিস করে বললো,,,,

—‘এখন ছাড়ছি তবে বাসর রাতে ছাড়াছাড়ি নেই বউ।সেদিন আমি তোমাতে মিশে যাবো আর তুমি আমাতে”

অর্ষার কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে।গালগুলো লজ্জায় লালরঙা হয়েছে।চোখ নিচের দিকে।ইরহামের দিকে তাকানোর সাহস নেই।ইরহাম অর্ষার অবস্থা দেখে হাসে।অর্ষা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে বলে,,,,

—“আপনি এতো রাতে এখানে কি করছেন বলুন তো?”

—“কেনো আমার বউকে দেখতে এসেছি।বউয়ের হাতে আমার নামটা কেমন লাগছে সেইটা দেখতে এসেছি।দেখাবে না?”

অর্ষা মুচকি হেসে ইরহামের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়।ইরহাম নিজের নাম কিছুক্ষণ খোঁজার পর পেয়ে যায়।মেহেদীর রঙ হয়েছে অনেক।ইরহাম হাতদুটোয় চুমু খায়।এরপর অর্ষার কোমড় টেনে কাছে এনে কপালে কপাল ঠেকায়।ইরহামের নিঃশ্বাস আছড়ে পরছে অর্ষার মুখের উপর।অর্ষা চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে।ইরহাম নেশালো কন্ঠে বলল,,,

—“আই ক্যান্ট লিভ উইথ আউট ইউ বউ”

৭১.

সবাই সকাল সকাল উঠেছে।হলুদ আজ অর্ষার।অর্ষাকে কিছুতেই ঘুম থেকে উঠাতে পারছে না কেউ।উঠছেই না।এদিকে সকাল বেলা হলুদ দিয়ে গোসল করাবে সবাই অর্ষাকে।ইরহামকে ফোন করে রুশান বললে।ইরহাম ফোন দেয়।ইরহামের কল পেয়ে অর্ষা লাফিয়ে উঠে।এরপর রিসিভ করে বলে,,,

—“হুম বলুন প্রেমিক পুরুষ”

—“উঠছো না কেনো?তুমি কি বিয়ে করতে চাইছো না”

—“বাজে লোক কাল সারা রাত ঘুমাতে দেইনি নিজে আমায় আর এখন আমি একটু ঘুমিয়েছি বলে রাগ দেখাচ্ছে,আমি বিয়ে করবো না কে বলেছে আপনাকে?”

—“আচ্ছা সরি উঠে ফ্রেশ হয়ে হলুদের অনুষ্ঠানে জন্য রেডি হও সবাই অপেক্ষা করছে”

অর্ষা ফ্রেশ হয়ে হলুদের অনুষ্ঠানের জন্য রেডি হয়।হলুদ রাঙা শাড়ি,তাজা ফুলের গহনায় নিজেকে সজ্জিত করেছে অর্ষা।ভীষণ সুন্দর লাগছে।সাধারণ সাজসজ্জা মুখে।রুশান ছবি তুলে তুলে সেইগুলো ইরহামকে পাঠাচ্ছে।এটা তার কাজ।ইরহাম ফোন দিয়ে ছবি তুলে পাঠাতে বলেছে।ছাদে সবাই চলে আসে।অর্ষাকেও নিয়ে আসা হয়।সবাই মিলে হলুদ ছোঁয়ায় অর্ষাকে।এরপর গোসল করে নেয়।

দুপুরে সাজাতে এসেছে অর্ষাকে পার্লার থেকে।পার্লারের মেয়েরা সাজিয়ে চলেছে তাকে।আজকেও অসম্ভব সুন্দর লাগছে অর্ষাকে।অর্ষাকে নিয়ে স্টেজে যাওয়া হয়।আত্নীয় স্বজন সবাই আসছে হলুদ দিচ্ছে অর্ষাকে।কিছুক্ষণ পর সব লাইট অফ হয়ে যায় আর গান বাজতে থাকে।লাইট ফেকাস করা হয় ইরহামের দিকে।ইরহাম গানের তালে তালে নেচে অর্ষার কাছে আসে।অর্ষা অবাক হয়ে যায়।ইরহাম এভাবে এন্ট্রি নেবে ভাবতেও পারিনি সে।ইরহাম অর্ষার কাছে এসে হেসে ওর সাথে নাচে।

এরপর বসানো হয় দুজনকে।আসলে আয়রা ইসফাক,আহিন,আসিফ মিলে দুজনের হলুদ এক সাথে করবে ঠিক করেছেন।কিন্তু অর্ষা জানতো না।তাই এতো অবাক হয়েছে।অর্ষা ইরহামের দিকে তাকায় হলুদ পাঞ্জাবি আর কটিতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।ইরহামও তার প্রেয়সীকে দেখে পরনে হলুদ লেহেঙ্গা গহনা সাজ দিয়ে অসম্ভব সুন্দরী লাগছে দেখতে।ইরহাম কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থাকে তার প্রেয়সীর দিকে।সবাই এসে হলুদ দিচ্ছে সবাইকে আর প্রশংসা করছে।কাজিনরা সব নাচানাচি করছে।

ইরহাম সবার আড়ালে অর্ষার কানে ফিসফিস করে বলে,,,,

—“কেমন দিলাম বউ”

—“আপনি বলেন নি কেনো আমাকে আজকে আসবেন,হলুদ একসাথে হবে”

—“বললে তো আর তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে পারতাম না তাই না বউ”

হলুদ সন্ধ্যা শেষ হওয়ার পর ইরহাম অর্ষাকে নিয়ে অর্ষার রুমে আসে।অর্ষাকে দেওয়ালের সাথে আটকে বলে,,,,

—“আমার বউ আর আমিই এখনো হলুদ দিতে পারলাম না এটা ঠিক বলো”

—“আপনি কেনো হলুদ দিবেন আমায়?”

—“আমার বউ তুমি আমি দেবো না মানে ওয়েট”

ইরহাম নিজের মুখ এগিয়ে নিয়ে অর্ষার গালে নিজের গাল মিশিয়ে হলুদ মাখিয়ে দেয়।এরপর সরে এসে বাঁকা হেসে বলে,,,

—“আগামী কালকের জন্য রেডি হয়ে নাও বউ।কালকে তোমার প্রেমিক পুরুষের অন্যরূপ দেখবে প্রেয়সী।”

অর্ষা লজ্জায় কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।ইরহাম হেসে অর্ষাকে জড়িয়ে ধরে।এরপর ছেড়ে দিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বাই বলে চলে যায়।অর্ষা এখনো আগের ন্যায় দাঁড়িয়ে।ইরহামের কথাগুলো ভেবে চলেছে।ইশশ লোকটা এতো রোমান্টিক কখনো ভাবে নি।কালকে যে তার কপালে শনি রবি সব ঘুরবে তা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে।

#চলবে…!#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা_ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৩৩

৭২.
আজকে বিয়ে।বাড়ির সবাই অনেক ব্যস্ত।অর্ষার মনটা ভীষণ খারাপ।আজকে সবাইকে ছেড়ে যেতে হবে।রুশানকে ছেড়ে যেতে হবে।কথাটা ভাবলেই তার কেমন লাগছে।সাজানো শেষ।নিজের রুমে বসে আছে অর্ষা।অর্ষার সব কাজিন রা মজা করছে এটা ওটা নিয়ে।অর্ষা ও তাদের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।রুশান বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে অর্ষাকে দেখছে।চোখটা ভিজে যাচ্ছে তার বার বার।এতোগুলো বছর একসাথে থেকেছে বড় হয়েছে আর কালকে থেকে নাকি সেই মেয়েটাকে আর সে দেখতে পাবে না।প্রতিদিন সকালেও কেও আর জ্বালাতে যাবে না তাকে।

এইসব ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে।নিজের কাজে চলে যায় রুশান।অনেক কাজ।আসিফ আহমেদ আহিন আহমেদ,মৌ ইরিনা বেগম সবাই ভীষণ ব্যস্ত।বর হয়তো এখনই চলে আসবে।অর্ষার কান্না পাচ্ছে এখন।রুশানকেও পাচ্ছে না।সবাই হাসি ঠাট্টা করছে।কিন্তু ভালো লাগছে না তার।কিছুক্ষণ পর সবাই বর এসেছে বর এসেছে বলে চিল্লাতে লাগলো।অর্ষা রুম থেকে বসে শুনতে পারছে।

তখনই রুমে রুশান উশা,নাইম,মুহিব সবাই প্রবেশ করে।ওদেরকে দেখেই অর্ষার চোখ ছলছল করে উঠে।মনে হচ্ছে ওদের থেকে দূরে চলে যাচ্ছে অর্ষা।উশা বুঝতে পারে অর্ষার মনের অবস্থা ও গিয়ে অর্ষার পাশে বসে।মুহিব নাইম অর্ষার কাছো হাঁটু মুড়ে বসে।রুশান দূরে দাঁড়িয়ে আছে।অর্ষা ফুপিয়ে ওঠে।নাইম অর্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,,,

—“পাগলি কাঁদছিস কেনো?তুই কি আমাদের ছেড়ে একেবারে চলে যাচ্ছিস নাকি তার উপর ভার্সিটিতে প্রতিদিন দেখা হবে তাহলে কাঁদছিস কেনো?”

মুহিব ও বলে উঠলো,,,”হ্যাঁ কাঁদছিস কেনো তুই।তোর সাথে প্রতিদিনই দেখা হব”

অর্ষা শব্দ করে কেঁদে দেয়।ফোপাতে ফোপাতে বললল,,,,

—“আমাকে কাঁদতে মানা করে নিজেরাই কাঁদছে তোদের চোখে পানি কেনো?”

নাইম মুহিব চোখের পানি মুছে হাসার চেষ্টা করে বলে,,,,

—“কাঁদছি না তো চোখে যেনো কি পরেছে বুঝেছিস তুই কাঁদিস না মেকাপ নষ্ট হয়ে যাবে।এখনও ছবি তোলা বাকি”

মুহিব নাইম ছোটবেলা থেকে অর্ষাকে নিজের বোনের মতো দেখে।আগলে রাখছে তাকে।দেখা হলেও তো অর্ষা আর তাদের আগের মতো সময় দিতে পারবে না।অর্ষা উঠে রুশানের সামনে এসে বলে,,,

—“কিরে এখানে দাঁড়িয়ে কাঁদছিস কেনো একা একা আমি চলে গেলে তো তোরই ভালো খুশি হবি তুই তাহলে চোখে পানি কেনো তোর”

রুশান আর না পেরে অর্ষাকে জড়িয়ে হাউমাউ করে ছোট বাচ্চাদের মতো কাঁদতে থাকে।অর্ষাও কাঁদতে থাকে।কি করে থাকবে সে এদের ছাড়া।ইরহাম তাকে ভীষন ভালোবাসে তবুও কেনো এদের ছেড়ে যেতে কষ্ট হচ্ছে।রুশান অর্ষার ভাই বোনের ভালোবাসা দেখে বন্ধুমহলের সবার চোখে পানি।সবাই কাঁদছে।রুশান কান্না থামিয়ে অর্ষাকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে চোখের পানি টিস্যু দিয়ে মুছে দিয়ে বলল,,,,

—“কাঁদিস না পেত্নী এতো টাকা দিয়ে মেকাপ করেছিস যদি জামাইকেই না দেখাতে পারিস তাহলে মেকাপ করে লাভ কি হলো বল তো”

অর্ষা রুশানকে মারতে মারতে বলল,,,

—“তুই জীবনেও ভালো হবি না তাই না।এখনো আমার পিছনে লাগছে সয়তান পোলা”

সবাই হেসে ফেলে।এরপর গল্প করে কিছুক্ষণ।অর্ষার ইরহামকে দেখার জন্য মন আকুপাকু করছে।অর্ষার হাসফাস বুঝতে পারে রুশান।রুশান দুষ্ট হাসি দিয়ে বলে,,,

—“বরকে দেখার জন্য এতো অস্থির হোস না অর্ষা বেবি দেখবি একটু সবুর কর”

বন্ধুমহল আরেকদফা হেসে নিলো।রুশানের দিকে অর্ষা চোখ গরম করে তাকালো।রুশানও তাকিয়ে দাঁত কেলাতে লাগলো।অর্ষা লজ্জাও পেয়েছে বটে।ইশশ তার প্রমিক পুরুষকে বর রূপে কেমন লাগছে।যদি সে একটু দেখতে পারতো।আগের বার তো তাকিয়ে দেখেইনি সে।তার থেকে বড় কথা তাকে তখন ভালোবাসতো না অর্ষা।কিন্তু এখন সে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে তার প্রেমিক পুরুষকে।

৭৩.

আরিশা ইয়াদের উপর ভীষণ রেগে আছে।ইয়াদ আরিশার কাজিনদের সাথে ফ্লাট করছে।যা দেখে আরিশা জ্বলে পুরে যাচ্ছে।ইয়াদ অবশ্য আরিশাকে রাগাতেই এগুলো করছে।মেয়েটাকে রাগাতে ভালো লাগছে তার কেনো জানি।তাই বলে সে অর্ষাকে ভুলে গিয়েছে তা না।অর্ষা তার বুকের বা পাশটায় রয়ে গিয়েছে।নতুন করে কাউকে আর মনে জায়গা দিতে পারবে না সে।

ইয়াদ আরিশার কাজিন ইফার সাথে কথা বলছিলো।আরিশা তার সামনে থেকেই ইয়াদকে টেনে নিচে বাগানে নিয়ে আসে।এখানে কেউ নেই।সবাই এখন ছাদে।কিছুক্ষণের ভেতরেই বিয়ে পড়ানো শুরু হবে।আরিশা ইয়াদকে এনে কলার চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,,,

—“আআআআপনি আমার সাথে একটা কথা বলেন না আর ওই মেয়েগুলোর সাথে গিয়ে সেধে সেধে ফ্লাট করতেছেন।আপনি ভীষণ খারাপ ইয়াদ”

—“তাতে তোমার কি!আমি অন্য মেয়েদের সাথে কথা বলবো এতে তোমার কিছু যায় আসে না।”

আরিশা কিছুটা চিল্লিয়ে বলল,,,

—“আপনি জানেন না ভালোবাসি আপনাকে ভীষণ কেনো করেন আমার সাথে এমন।আমি তো বলছি না আপুকে ভুলে যান বা আমাকে ভালোবাসুন আমি শুধু আমাকে ভালোবাসতে দিন আপনাকে তাতেই হবে।আর মেয়েদের থেকে দূরে থাকুন”

—“উমম তুমি অনেক ছোট আরিশা”

—“আমি মোটেও ছোট না।ভালোবাসা বয়স দেখে হয় না মিস্টার ইয়াদ।”

—“তুমি বয়সের তুলনায় বড্ড বড় বড় কথা বলো আরিশা।এখন পড়াশোনায় মন দাও।নিজের উদ্দেশ্য শখ পূরণ করো”

—“আমার উদ্দেশ্য আমার শখ সব কিছুই আপনি ইয়াদ”

—“তুমি পাগল হয়েছো মেয়ে সময় থাকতে নিজেকে শুধরে নাও”

—“হ্যা আমি পাগল হয়েছি আপনার প্রেমে ইয়াদ।বেহায়া হয়েছি তাও শুধু আপনার জন্য”

৭৪.

কাজি এসেছেন বাইরে হৈ-হুল্লোড়ের হচ্ছে।অর্ষার অনুভূতি হচ্ছে কেমন জেনো।আগেও বিয়ে করেছে।কিন্তু তখন এমন হয়নি।ভালোবাসার মানুষকে পাচ্ছে,পরিবার ছেড়ে যাবে।হয়তো এর জন্যই এই মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে।কাজি ইরহামকে কবুল বলতে বললে ইরহাম দ্রুত কবুল বলে দেয়।অর্ষাকে বলতে বললে বেচারি কেঁদে দেয় রুশান সামলায় বোনকে।এরপর ধীর কন্ঠে কবুল বলে দেয়।

অর্ষা ইরহামকে পাশাপাশি বসানো হয়।ইরহাম অর্ষাকে দেখে চোখের পলক ফেলতে ভুলে গিয়েছে।আজকে বউ বউ লাগছে অর্ষা।তার বউ,একান্ত ব্যক্তিগত সম্পদ।অর্ষাও ইরহামকে দেখে তার পাশে বসে থাকা সুদর্শন পুরুষটা তার বর।ইশ ভাবতেই লজ্জা লাগছে।সবার সাথে ছবি তুলে।বর বউকে বসিয়ে খাওয়ানো হয়।ইয়াদ অর্ষার দিকে তাকিয়ে তার তৃষ্ণা মিটাচ্ছে।ইচ্ছা ছিলো অর্ষা বউ রূপে নিজের পাশে পাওয়ার নিজের পাশে না হয় না পেলো।অর্ষার ভালোবাসার মানুষের পাশেই না হয় দেখে নিলো।

অনেক রাত হয়েছে এখন বিদায়ের পালা।অর্ষা কেঁদে কেটে অস্থির।আসিফ আহমেদকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে অর্ষা।একে একে সবাইকে জড়িয়ে ধরে কাঁদে।শেষে রুশানের বুকে আবার হামলে পরে।রুশান ও কাঁদে বোনকে জড়িয়ে।ইরহাম মুগ্ধ হয় ভাই বোনের ভালোবাসা দেখে।চাচাতো ভাই বোন ও বুঝি আপন ভাই বোনের মতো হয়।সবার চোখে পানি।কেঁদে কেটে অস্থির অবস্থা অর্ষার।আসিফ আহমেদ অর্ষার হাতটা ইরহামের হাতে তুলে দিয়ে বলে,,,,

—“বাবা আমাদের একমাত্র আদরের মেয়ে ও।কখনো বিরক্ত এসে যায় যদি ওর প্রতি তাহলে আমার রাজকন্যাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দিও”

—“আব্বু আপনি কি বলছেন সে আপনার এখানে রাজকন্যা ছিলো আর আমার কাছে রানী হয়ে থাকবে।ইনশাআল্লাহ কখনো কষ্ট পেতে দিবো”

আসিফ আহমেদ স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলেন।মেয়েটাকে সঠিক মানুষের হাতে তুলে দিয়েছে।সঠিক মানুষই তার জীবনে এসেছে।আসিফ আহমেদ এখন কিছুটা চিন্তা মুক্ত।আরেকজনকে একজন ভালো মানুষের হাতে তুলে দিতে পারলেই সে সম্পূর্ণ চিন্তামুক্ত।আরিশা অবশ্য এখনো বেশ ছোট।কিন্তু মেয়ের হাবভাব দেখলে মনে হয় মেয়ে বড় হয়েছে।

গাড়িতে বসেও কেঁদেছে অর্ষা।ইরহাম নিজের বক্ষে প্রেয়সীকে টেনে নিয়েছে।প্রেয়সীর কান্না সহ্য না হলেও কিছু করার নেই মেয়েটা বাড়ি ছেড়ে এসেছে কষ্ট তো হচ্ছেই।বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামে।ইরহাম আগে নেমে অর্ষাকে নামায়।মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে পরেছে।এরপর কোলে তুলে বাড়িতে প্রবেশ করে।এতো মানুষের সামনে কোলে নেওয়ায় বেশ অপ্রস্তুত হয়ে যায় অর্ষা।ইরহামের বক্ষে মুখ লুকিয়ে ফেলে।

ড্রয়িং রুমের সোফায় বসিয়ে দেয় অর্ষাকে।সবাই বউ দেখে।আয়রা সবাইকে সরিয়ে ইলমাকে বলে অর্ষাকে ইরহামের রুমে দিয়ে আসতে।ইলমাও দিয়ে আসে।ইয়াদ ও কাজিনরা সবাই মিলে দাঁড়িয়ে আছে বাসর ঘরের সামনে।ইরহাম রুমের সামনে এসে এদের দেখতেই বিরক্ত হয়।ইয়াদ দাঁত কেলিয়ে বলে,,,

—“দা ভাই বউয়ের কাছে যাবি তো তাহলে আমাদের পাওনা টাকা দে আর যা”

—“টাকা কিসের?”

ইয়াদ অবাক হয়ে বলে,,,,

—“কেনো দা ভাই এই যে আমরা বাসর ঘর সাজালাম কষ্ট করে টর দাম দিবি না।এটা আমাদের জন্ম গত অধিকার”

সবাই একসাথে হ্যাঁ বলে চিল্লিয়ে।ইরহাম কথা বাড়ায় না।টাকা দিয়ে দেয়।ওরা খুশি হয়ে চলে যায়।ইরহাম রুমে ঢোকে।অর্ষা কেঁপে উঠে।ইরহামের বলা কথাগুলো মনে পরে যায়।ইরহাম এগিয়ে আসে।অর্ষা উঠে সালাম করতে যায়।অর্ষা পা ছোঁয়ার আগেই ইরহাম তাকে তুলে বুকে টেনে নেয়।এরপর ছেড়ে দিয়ে অর্ষাকে বিছানায় বসিয়ে নিজেও বসে।ইরহাম অর্ষার হাত ধরে ওর হাতে ইয়াদের কিনে আনা সেই রিংটা যা এখনো দেয়নি ইরহাম অর্ষাকে।ওটা পরিয়ে দেয়।

—“অর্ষা যাও ফ্রেশ হয়ে আসো”

অর্ষা মাথা নাড়িয়ে একটা শাড়ি নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।ইরহাম নিজের শেরওয়ানি খুলে টিশার্ট ট্রাউজার পরে নেয়।অর্ষা বেরিয়ে আসে ওয়াশরুম থেকে।ইরহাম মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রেয়সীর দিকে।অর্ষার মুখে মেকাপের চিহ্ন নেই।স্নিগ্ধময়ী লাগছে।চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো ঠিক করছিলো অর্ষা।ইরহাম পেছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরে অর্ষাকে।

অর্ষা কেঁপে উঠে।ইরহাম চুলে মুখ ডুবিয়েছে।ইরহাম মাতাল হয়েছে প্রেয়সীর এমন রূপ দেখে।অনেক দিন অপেক্ষা করেছে এই দিনের জন্য।আজকে কোনো বাঁধা দূরত্ব কিছুই রাখবে না সে।ইরহাম নেশাক্ত কন্ঠে বলে,,,,

—“প্রেয়সী আজকে কোনো দূরত্ব রাখবো দু’জনের মাঝে।তোমাকে রাঙিয়ে দেবো আমার ভালোবাসায়।আমার প্রতিটা স্পর্শ তোমাতে ঝংকার তুলবে আজ”

অর্ষা লজ্জায় রাঙা হয়।ঘুরে ইরহামের বুকে মুখ লুকায়।ইরহাম হেসে কোলে তুলে নেয় অর্ষাকে।অধর ছুঁইয়ে দিতে থাকে অর্ষার সর্বাঙ্গে।অর্ষা কেঁপে কেঁপে উঠছে।ইরহাম রাঙিয়ে দিচ্ছে তার প্রেয়সীকে নিজের ভালোবাসায়।দুজন মত্ত হয়েছে দু’জনায়।ভালোবাসার প্রহরে দুজন মানব মানবী একে অপরের সাথে মিশে যাচ্ছে।

#চলবে…!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here