#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২২
আরিশা ছাদে দাঁড়িয়ে এখনো ইয়াদের কথা ভেবে চলেছে।ইরহাম ফোনে কথা বলতে বলতে ছাদে আসে।কল কেটে দেখে আরিশা একা একা দাঁড়িয়ে গভীর ভবনায় ঢুবে আছে।ইরহাম ভ্রু কুচকে তাকায়।
—“তুমি এখানে একা একা কি করছো আরিশা?”
আরিশা চমকে উঠে।ভয়ও পেয়েছে বেশ।ইরহামের দিকে তাকিয়ে বোকা বোকা হাসি দিয়ে বলে,,,
—“আসলে ঘুরে দেখছিলাম জিজু”
—“আচ্ছা নিচে যাও”
আরিশা দৌড়ে নিচে নেমে গেলো।ইরহামও নিচে নামলো।ড্রয়িংরুমে আসতেই তার চোখ পরলো রাঙা বউয়ের দিকে।দুপুর হয়েছে।সবাই খেতে এসেছে।বড়রা আগে খাচ্ছে ছোটরা পরে খাবে বলে বসে আছে।গল্প করছে সবাই।অর্ষা হাসছিলো সবার সাথে।ইরহামকে দেখেই হাসি উধাও হয়ে যায় অর্ষা।ইরহাম বসে নিজের মতো ফোন দেখছে।অর্ষাও জোরপূর্বক হেসে হেসে কথা বলছে সবার সাথে।
ইয়াদ তাকিয়ে আছে অর্ষার দিকে।আজকে অর্ষাকে আসলেই বউ বউ লাগছে।হ্যা ইরহামের বউ।আজকে নাকে ছোট নাকফুলও পড়া অর্ষা।ইয়াদের দিকে আরিশা তাকিয়ে ছিলো।ইয়াদকে অর্ষার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আরিশা ভ্রু আপনা আপনি কুচকে যায়।ইয়াদের দৃষ্টিতে মুগ্ধতা আছে তা বেশ বুঝতে পারছে।আরিশার খারাপ লাগে।তার বয়স কম না।১৭ এখন জানুয়ারিতে ১৮ হবে।সে মোটেও ছোট না।ক্লাসে ছোট বলেই ইয়াদ তাকে ছোট বলে কিন্তু সে মোটেও ছোট না।
দুই ক্লাস গ্যাপ গিয়েছে তার।তখন ইয়াদের কথা মাথায় না ঢুকলেও এখন ঢুকেছে।ইয়াদ তার আপিকে ভালোবাসে।আরিশার মনে ভয় ঢুকে যায় এক ইয়াদকে হারানোর আর তার আপির ক্ষতি যদি করে দেয় ইয়াদ তাহলে, তখন কি হবে।সে তো খুব ভালোবাসে তার আপিকে।আরিশার মাথা কাজ করছে না।
৪৭.
—“আপনি অর্ষা আপিকে ভালোবাসেন ইয়াদ ভাইয়া”
ইয়াদ থমকায়।পেছনে ফিরে আরিশাকে দেখে হতভম্ব হয়ে যায়।মেয়েটা বুঝলো কিভাবে।এই কথা তো সে আর মামনি ছাড়া কেউ জানে না।তাহলে এই ছোট বাচ্চা মেয়েটা জানলো কিভাবে!
—“কি হলো উত্তর দিচ্ছেন না কেনো”
আরিশার কন্ঠে মলিনতার ছাপ।ইয়াদ ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়ে আসে।ইয়াদ আরিশার দিকে তাকায়।মেয়েটার চোখের কোনে পানি চিকচিক করছে।ইয়াদ মলিন হাসলো।যে ব্যাপারটা সবার কাছে লুকিয়ে রেখেছিলো আরিশা সেটা জেনে ফেলেছে।
—“মিথ্যা বলবো না তোমাকে জেনে যখন গিয়েছো তখন সত্যি বলি ভালোবাসি আমি অর্ষাকে।”
আরিশার বুক ধক করে ওঠে।পছন্দের মানুষের মুখে অন্য কারো নাম শুনলে বুঝি এমন জঘন্য অনূভুতি হয়।হৃদয় পুড়ছে।এমন অনুভূতির সাথে সে আর কখনো পরিচিত হতে চায় না।আরিশা গাল বেয়ে কয়েক ফোঁটা পানি গরিয়ে পরে।ইয়াদ দেখার আগেই মুছে ফেলে।কিন্তু ইয়াদ দেখেছে,দেখেও না দেখের ভান করছে।
—“আ…..পনি কিভাবে কখন থেকে ভালোবাসেন আপুকে”
—“আমি এগুলো নিয়ে কথা বলতে চাইছি না আরিশা।”
—“আমাকে কি একবার সুযোগ দেওয়া যাবে ইয়াদ ভাইয়া।আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে আপনায় ভুলিয়ে দেবো।আপনার সুখপাখি হতে চাই আমি”
ইয়াদ মলিন হাসে।মেয়েটা আবেগের জোয়ারে ভাসছে।কিছুদিন গেলেই মায়া মোহ আবেগ কেটে যাবে তখন আর ভালো লাগবে না তাকে।
—“তুমি ছোট আরিশা এটা আবেগ মোহ কিছুদিন পর কেটে যাবে”
—“এটা আবেগ বা মোহ না ইয়াদ ভাইয়া আমি আপনাকে ভালোবাসি ভীষণ ভালোবাসি।দয়া করে একবার সুযোগ দিন আমায়”
—“আমি একজনকেই ভালোবাসি আরিশা তাকে ভোলা সম্ভব না।গত তিনটা বছর ধরে ভালোবাসি তাকে।সহজে ভোলা সম্ভব না”
—“আচ্ছা ঠিক আছে আপনি আমায় প্রমিস করুন বিয়ে যদি কখনো করতে পারেন তাহলে তা আমাকেই করতে হবে।আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করবো”
ইয়াদ বুঝতে পারে আরিশা তাকে ছাড়বে না কিছুতেই।সে জানে মোহ কোটে গেলে সব ঠিক হয়ে যায়।তাই দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,,
—“আমি চেষ্টা করবো।আর তুমি যদি ভালোবেসে অপেক্ষা করতে পারো করো”
ইয়াদ চলে আরিশা এতেই খুশি।এতটুকু তো সে ইয়াদের মুখ থেকে শুনতে পেরেছে এই ঢের।এর থেকে বেশি কিছু আশা করলেও ইয়াদ তার আশায় এক বালতি পানি ঢেলে দিবে।
৪৮.
উশা নাইমের রিসিপশন আজকে।অর্ষা একটা কালো রঙের থ্রি পিস পরে নেয়।তার দুই বন্ধুর রিসিপশন।হালকা করে সেজেও নেয়।রুশানের সাথে বেরিয়ে পরে।যদিও নাইমের বাবা ইরহামকে নিয়ে যেতে বলেছিলেন কিন্তু অর্ষা তো অর্ষা।সেদিনের পর এখন অব্দি না ইরহামের কথা বলেছে না সেভাবে তাকিয়েছে।ইলমার জন্মদিনেও ইগনোর করেছে।
রুশান নাইমদের বাড়ির সামনে এসে বাইক থামায়।অর্ষা গাড়ি থেকে নামে।রুশান বাইক পার্ক করতে যায়।অর্ষাদের পুরো ফ্যামিলির দাওয়াত থাকলেও বড়রা ব্যস্ততার জন্য আসতে পারেনি।ইলমা হঠাৎ কোথা থেকে এসে ভাবিমনি বলে জড়িয়ে ধরে।অর্ষা হকচকিয়ে যায়।এরপর মিষ্টি হেসে জড়িয়ে ধরে।ইলমা মেয়েটা বড্ড আদরে আদরে বড় হয়েছে তা অর্ষা খুব ভালো করেই বুঝতে পারে।
—“ভাবিমনি ইউ লুকিং সো বিউটিফুল”
—“থ্যাংকিউ মিষ্টিপাখি।তোমাকেও কিন্তু মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর লাগছে।”
রুশান আসে অর্ষার কাছে।রুশান তব্দা খায় ইলমাকে দেখে।ইলমাও আজকে থ্রি পিস পরেছে নীল সাদার মিশ্রনে।দেখতে ভীষণ মিষ্টি লাগছে।ছোট খাটো বাচ্চা ইলমাকে আজকে থ্রি পিসে অনেকটা বড় দেখাচ্ছে।রুশান মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ইলমার দিকে।অন্যদিকে আরেকজন তো না পারছে কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরতে না পারছে সরাসরি দেখতে।অর্ষার থেকে দূরে থাকাটা বড্ড কষ্টকর হয়ে দাড়াচ্ছে ইরহামের কাছে।
—“ইলমা ভেতরে চল কত সময় এখানে দাঁড়িয়ে থাকবি”
অর্ষা থমকায় ইরহামের গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনে।ইলমা অর্ষার সাথে গল্প করতে করতে বাড়িতে ঢুকে যায়।ইরহাম আর রুশান একে অপরের দিকে তাকায়।রুশানের একবার মনে হয় সেদিনের ব্যবহারের জন্য সরি বলার কথা কিন্তু পর মুহুর্তেই অর্ষার কান্নারত মুখটা ভেসে ওঠে চোখের সামনে তাই আর কথা বলে না।সোজা ঢুকে যায় বাড়িতে।
অর্ষা ইলমাকে নিয়ে সোজা উশা নাইমের কাছে যায়।দুজন স্টেজে বসে আছে।অর্ষাকে দেখে উশা জড়িয়ে ধরে।নাইম অর্ষার মাথায় থাপ্পড় মেরে বলে,,,
—“কিরে পেত্নী জামাই কোথায় তোর একা একা কেনো?অবশ্য তোর কষ্টটা বুঝি আমি বর থাকতেও সিঙ্গেল পরে আছিস এখনো”
—“বেশি বলছিস কিন্তু নাইমের বাচ্চা”
অর্ষা চোখ রাঙিয়ে কথাটা বলে।নাইম হো হো করে হেসে ওঠে।উশা ও হাসে।ইলমা ও হাসছে।উশা ইলমাকে হালকা করে জড়িয়ে ধরে বলে,,
—“কেমন আছো কিউটি”
—“আমি ভালো আছি উশাপু তুমি কেমন আছো”
—“আমিও।আজকে কিন্তু তোমায় অনেক সুন্দর লাগছে।”
—“ধন্যবাদ তোমাকেও কিন্তু বউ সাজে দারুণ লাগছে”
সবাই টুকটাক কথা বললো।ভালো করেই নাইম উশার রিসিপশনটা কেটে গেলো।রুশান তো সারাটা সময় ইলমাকে ইমপ্রেস করতে লেগেছিলো।ইলমাকে এই কয়েকদিননে নিজের মন দিয়ে ফেলেছে।ভালোবেসে ফেলেছে অনেকটা ইলমাকে।ইরহামসহ ভার্সিটির আরো কিছু স্যার ম্যামরা ছিলো।নিহানাও এসেছিলো।ইরহামের গায়ে পরছিলো মেয়েটা।অর্ষার রাগ লাগলেও কিছু বলেনি।ইরহামও অর্ষাকে দেখিয়ে দেখিয়ে নিহানার সাথে কথা বলছিলো।
৪৯.
অর্ষাদের ভার্সিটি থেকে ট্যুরে যাবে।অর্ষা এতে আগ্রহ নেই।অন্য সময় হলে যাওয়ার জন্য লাফাতো।কিন্তু এখন ইচ্ছা মরে গিয়েছে।মূলত ইরহাম যাবে এর জন্যই আগ্রহ নেই।নিহানাও সেখানে থাকবে তা খুব ভালো করেই জানা অর্ষার।অর্ষা রুশান আজ সকাল সকাল ভার্সিটি এসেছে।ভার্সিটিতে এসে দেখে সবাই তাদের প্রিয় কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে আছে।রুশান আর অর্ষাও গিয়ে বসে পরে।
সবাই ট্যুর নিয়েই আলোচনা করছে।সেন্টমার্টিন সমুদ্র সৈকতে নিয়ে যাবে।সবাই তো সেই খুশি শুধু মুহিব ছাড়া অর্নাকে যেতে দিবে না।সেজন্য বেচারা মন খারাপ করে বসে আছে।সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাওয়ার খুব শখ অর্ষার কিন্তু এখন সে যেতে ইচ্ছুক না।কোনো অনুভূতি কাজ করছে না।নাইম লাফিয়ে উঠে বলে,,,
—“দোস্তরা আমি খুব এক্সাইটেড উফ সেন্টমার্টিন যাবো।”
—“আমি যাবো না”
অর্ষার কথায় সবাই অবাক হয়।চোখ বড়বড় করে সব কয়টা অর্ষার দিকে তাকায়।অর্ষার তাতে ভাবান্তর হলো না।সে নির্লিপ্ত,শান্ত লাগছে বেশ অর্ষাকে।রুশান বলে,,,
—“কেনো যাবি কি হয়েছে?”
—“এমনিতেই যাবো না ভালো লাগছে না”
অর্ষার কথায় সবাই উঠে পরে লাগলো অর্ষাকে রাজি করাতে।অর্ষা না গেলে রুশান যেতে পারবে না।কারণ অর্ষা না গেলে সে কার সাথে দুষ্টমি করবে।উশা নাইম মুহিবও রাজি করছে অর্ষাকে।অর্ষা শেষে না পেরে রাজি হয়ে যায়।
—“ঠিক আছে যাবো আমি”
উশা অর্ষাকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,”থ্যাংকু দোস্ত যাওয়ার জন্য।তোকে ছাড়া ভালো লাগতো না”
অর্ষা হাসে।ভাগ্য করে কয়েকটা ফ্রেন্ড আর রুশানকে পেয়েছে।অর্ষার চোখ পরে করিডোরে দাঁড়িয়ে থাকা ইরহামের দিকে।যার দৃষ্টি অর্ষার উপর।চোখাচোখি হয় দুজনের।অর্ষা ইরহাম দুজনেই চোখ ফিরিয়ে নেয়।
#চলবে#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা:ইশা_আহমেদ
#পর্ব_২৩
৫০.
—“কিরে হলো তোদের”
আহিন আহমেদ অর্ষার রুমে প্রবেশ করতে করতে অর্ষা রুশানকে উদ্দেশ্য করে কথাটা বলেন।রুশান বেচারা ধপ করে শুয়ে পরেছে অর্ষার বিছানায়।ঘুমের জন্য চোখ খুলেও রাখতে পারছে না।অর্ষার অবস্থা ও একই।সে ঘুমে ঢুলতে ঢুলতে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে।
—“হ্যা হ্যা ছোট আব্বু হয়েছে আমার। কিন্তু এই রুশাইন্না ফকিন্নি এখন আমার রুমে এসে ঘুমাচ্ছে”
—“এক কাজ করি মা চল তোকে এগিয়ে দিয়ে আসি।ওর যাওয়া লাগবে না”
কথাটা শোনা মাত্রই রুশান ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে।এরপর ঘুম ঘুম চোখে অর্ষা আর আহিন আহমেদের দিকে তাকিয়ে বোকা বোকা হাসি দেয়।এরপর তিনজন মিলে নিচে নামে।অর্ষা তো এতো এতো জামা নিয়েছে জুতো নিয়েছে।রুশান শুধু হা করে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলো।
—“রুশান বাপ আমার মাকে দেখে রাখিস।আর ইরহাম বাবা তো সাথে আছেই”
—“চিন্তা করো না বড় আব্বু আমি আমার বোনকে আগলে রাখতে জানি”
আসিফ আহমেদ হাসেন।অর্ষা রুশান রাতেই দাদু দাদিমার কাছে বিদায় নিয়ে রেখেছে।এই সকাল বেলা উঠাতে চাইছিলো না তারা।বৃদ্ধ মানুষদের শুধু শুধু কষ্ট দিয়ে লাভ কি।ইরিনা বেগম অনেক জ্ঞান দিয়ে দিয়েছে।মৌ রহমান তো কেঁদেই ফেলেছে।
সবাই সকাল ৬ টায় চলে এসেছে।এখান থেকে প্রথমে টেকনাফে যাওয়া হবে তারপর সেখান থেকে জাহাজে বা ট্রলারে করে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাওয়া হবে।রুশান আর অর্ষা ঘুমে ঢুলছে।আহিন আহমেদ এসে পৌছে দিয়ে গিয়েছেন।
৫ টা বাস যাবে টেকনাফ পর্যন্ত।এটা শুধু অনার্স ১ম বর্ষের ট্যুর।যার যার বাসে বসে পরে সবাই।রুশানের পাশে অর্ষা বসেছে।নাইম উশা বসেছে আর বেচারা মুহিব একা বসেছে।ওর পাশে অন্য ডিপার্টমেন্টের একজন ছেলে বসেছে।রুশান অর্ষা বাসে উঠেই ঘুম।অর্ষার ঘুম ভাঙে বেলা ১০ টায়।গাড়ি থামিয়েছে।সকালের নাস্তা করার জন্য।
একটা রেস্তোরাঁয় বসে সবাই।রুশান অর্ষা কথা বলতে বলতে বাস থেকে নামে।বাস থেকে নামতেই অর্ষার ফুরফুরে মেজাজটা বিগড়ে যায়।নিহানা ইরহামের সাথে চিপকে আছে।এটা দেখে রাগে সে ধুপধাপ করে দ্রুত অল্প কিছু খেয়ে চলে আসে।ইরহাম মনে মনে হাসছিলো অর্ষার কাহিনী দেখে।
টেকনাফ পৌঁছে সেখান থেকে জাহাজে করে রওনা দেয় সেন্টমার্টিন দ্বীপের উদ্দেশ্যে।দীর্ঘ সময় জার্নি করার পর সেন্টমার্টিন দ্বীপে পৌছায় অর্ষারা।আসার পথে মিয়ানমার অপরদিকে বাংলাদেশ ছেড়ে নাফনদে,বঙ্গোপসাগরে গাঙচিলের মেলা বসেছিলো।ঝাঁকে ঝাঁকে গাঙছিল দেখা যাচ্ছিলো।ইশ এতো রোমাঞ্চকর দৃশ্য আগে দেখেনি অর্ষা।
রিসোর্টে এসে সবাই যার যার বরাদ্দ রুমে চলে যায়।প্রচুর ক্লান্ত সবাই।নিজেদের রুমে এসে ঘুমিয়ে পরে।উশা আর অর্ষা একটা রুমে।ওরা দুজন এসেই ফ্রেস না হয়ে শুয়ে পরেছে।
৫১.
সকাল সকাল বের হয় সবাই সমুদ্র সৈকত দেখতে।অর্ষা আর রুশান রিসোর্ট থেকে বেরোতেই আশেপাশের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।যেদিকে চোখ যাচ্ছে সেদিকে নীল আর নীল।আকাশ সমুদ্রের নীল মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে।খোলামেলা আকাশ আর বালুকাময় চারপাশ।অগভীর সমুদ্রতট,সামুদ্রিক প্রবাল,সাগরের নীল জলরাশির ঢেউয়ের ছন্দ সব কিছু অর্ষাকে মুগ্ধ করছে।
নারিকেল গাছের সারি যেন চিরলপাতায় দোলা দিয়ে যায়। নারিকেল জিঞ্জিরা বা সেন্ট মার্টিনের সৌন্দর্য অপার্থিব, তীব্র প্রাকৃতিক। সাগর তীরে বাঁধা মাছ ধারার নৌকা-ট্রলার,সৈকত জুড়ে কাঁকড়া,ঝিনুক এই সব কিছুই সেন্টমার্টিন দ্বীপের সৌন্দর্য।যা ছোট এই দ্বীপকে অনিন্দ্য সুন্দর করে তুলেছে।সচ্ছ নীল পানিতে জেলি ফিশ,হরেক রকমের সামুদ্রিক মাছ এবং প্রবাল সেন্টমার্টিন দ্বীপের অন্যতম আকর্ষন।
সমুদ্রের পাথরের ভাঁজে ভাঁজে লুকিয়ে আছে বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ।সেন্টমার্টিন যেন প্রকৃতির লীলা।দ্বীপের সৌন্দর্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় অর্ষার।এই দ্বীপের মানুষের সব থেকে প্রিয় একটি জিনিস ডাব।সবাই এখন এই ডাব খাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে।অর্ষা রুশান ডাবের পানি নেয়।অর্ষা ডাব খেতেই বোঝে এর স্বাদ আর এটি কেনো এখানে এতো জনপ্রিয়।ডাবের পানি যেমন মিষ্টি তেমনি সুস্বাদু।
—“অর্ষা ডাবটা তো সেই আমার তো আরো একটা খেতে ইচ্ছে করছে”
—“আমারও চল দুজন আরেকটা করে খাই”
দুজন আরো একটা ডাব খেলো।সবাই সকালের নাস্তা করতে একটা রেস্তোরাঁয় গেলো সবাই।দ্বীপের সৌন্দর্য দেখে অর্ষার মনটা নিমেষেই ভালো হয়ে গিয়েছে।সবাই টেবিলে বসে পরে।এখানকার মাছভাজাও ভীষণ জনপ্রিয়। অর্ষা বিভিন্ন প্রকারের মাছভাজা খায়।ইরহামের দিকে চোখ পরতেই দেখতে পায় নিহানার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।
ও স্বাভাবিক ভাবে খেতে থাকে।এমন ভাব করে যেন অর্ষা কাউকে দেখেনি।ইরহাম অবাক হয়।অর্ষা মনে মনে হেসে বলে
–“মিস্টার ইরহাম চৌধুরী আমি এখন বুঝেছি আপনি আমায় জ্বালানোর জন্যই নিহানার সাথে চিপকে আছেন তো থাকুন আমার কিছু না তাতে।”
খেয়ে দেয়ে সবাই দুপুরের দিকে সৈকতে নামে গোসল করার জন্য।পানিতে ভেজার ফলে জামা অর্ষার শরীরের সাথে লেপ্টে আছে।একটা ছেলে এসে বলে,,
—“হাই মিস ইউ লুকিং সো হট”
এই একটা কথাই ইরহামের মাথায় আগুন ধরানোর জন্য যথেষ্ট ছিলো।ছেলেটা যখন কথাটা বলেছে তখন ইরহাম পাশেই ছিলো।বিচের একটা ছেলে।অর্ষা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।চেনে না জানে না এসে বাজে কথা বলছে।ইরহাম সোজা এসে ছেলেটাকে মারতে লাগলো।রাগে থরথর করে কাঁপছে।রুশান হা করে তাকিয়ে আছে।ও এখনো কিছু বুঝতে পারিনি।এই সাইডে স্টুডেন্ট বেশি নেই।
—“হাউ ডেয়ার ইউ আমার বউকে এসে বাজে কথা বলছিস।আমার জানের দিকে বাজে নজরে তাকিয়েছিস।আই উইল কিল ইউ।”
ছেলেটাকে আর মারলে হয়তো মরে যাবো।অর্ষা ইরহামের এমন রূপ প্রথমবার দেখছে।রুশান ইরহামকে আটকিয়ে বলে,,,,
—“স্যার আর মারবেন।আর মারলে হয়তো মরে যাবে।”
ছেলেটাকে তার বন্ধুরা এসে নিয়ে যায়।অর্ষা থরথর করে কাঁপছে।ইরহামের রাগ এখনো কমছে না।ইরহাম অর্ষার কাছে এসে ওর বাহু চেপে ধরে বলে,,,
—“ছেলেদের শরীর দেখাতে ভালো লাগে তোর তাই না।তুই কেনো পানিতে নেমেছিস।নামবি যখন তখন মোটা জামা পরে আসতে পারিসনি।”
অর্ষা অতিরিক্ত ভয় পাওয়ায় ইরহামের বুকে ঢলে পরে।ইরহাম চমকে ওঠে।দুইহাতে আগলে নেয় তার প্রেয়সীকে।ইরহাম রাগ পরে যায়।রুশানের রাগ উঠলেও কিছু বলে না।স্যারকে এসব বলা ঠিক না।আরো দুজন স্বামী স্ত্রী।এর ভেতর ররুশানের কথা বলার কোনো অধিকার নেই।এটা ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে রুশান।
ইরহাম নিজের প্রেয়সীর এমন অবস্থা দেখে অস্থির হয়ে পরে।ইরহাম অর্ষাকে কোলে তুলে নেয়।অর্ষাকে নিয়ে রিসোর্টে চলে যায়।রুশানসহ বাকি তিনজনও হতভম্ব।অর্ষার জন্য চিন্তা হচ্ছে।উশা তো কেঁদেই দিয়েছে।সে অর্ষাকে ভীষণ ভালোবাসে।তার ছোট ছোট দুইটা ভাই আছে বোন নেই।অর্ষাকেই নিজের বোন বানিয়েছে।তার এই অবস্থা।নাইম উশাকে সামলাচ্ছে।
মুহিব রুশান বসে পরে বালুর উপর।সবার মুড নষ্ট হয়ে গিয়েছে।সবাই ভেবেছিলো কতো মজা করবে।কিন্তু ওই ছেলেটার জন্য কিছু হলো না।নাইম উশা মুহিব রুশান ফিরে আসলো।
৫২.
ইরহাম অর্ষাকে তার রুমে দিয়ে এসেছে।নিজের রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে।বাইরে এসে দাঁড়াতেই নিহানা ইরহামের কাছে আসলো।নিহানা দূর থেকে খুব ভালো করেই সব লক্ষ্য করেছে।ইরহামকে সে পছন্দ করলেও প্রথমে বিয়ে হওয়ার পর এখন সে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়েছে।
—“ইরহাম স্যার আপনাকে কিছু কথা বলি মন দিয়ে শুনুন”
ইরহাম নিহানার দিকে তাকালো।এক পলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে সমুদ্রের দিকে তাকালো।রাশি রাশি ঢেউ আছড়ে পরছে পাড়ে।ইরহাম ধীর কন্ঠে বলল,,,
—“বলুন মিস নিহানা”
—“জানেন তো ইরহাম স্যার মেয়েরা সব সময় ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে নিজের প্রতি কেয়ার যত্ন একটু সময় পেতে পছন্দ করে।আপনি অর্ষাকে ভালোবাসেন কিন্তু বলছেন না।কেনো?অর্ষা আপনায় ভালোবাসে কি না জানেন না তার জন্য।আমি অর্ষা কয়েকদিন ফলো করেছি।আপনার আশেপাশে কাউকে দেখলে সে জেলাস হয় তার ব্যবহারে তা খুব ভালো করেই বোঝা যায় এবং আপনি নিজেও বর্তমানে জানেন অর্ষা আপনায় ভালোবাসে।মেয়েরা কখনোই নিজের মনের কথা আগে বলতে চায় না।সে চায় ভালোবাসার মানুষটা তাকে আগে বলুক।আপনার এখন উচিত অর্ষাকে নিজের মনের কথা জানানো”
ইরহাম খুব মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনলো।এরপর আপনমনে হেসে উঠলো।সে তার প্রেয়সীকে নিজের মনের কথা জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।
—“ধন্যবাদ আপনাকে মিস নিহানা”
নিহানা হাসে।ইরহাম চলে যায়।ইরহামের যাওয়ার পানে চেয়ে থাকে নিহানা।হয়তো তার ভাগ্যে নেই তাই ইরহাম তার না।ভালোবাসার আগেই সে ইরহামের কাছ থেকে সরে এসেছে।এটাই ভালো।অবশ্য আমরা সব সময় নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতই দুর্বল হই।তবে নিহানা দুর্বল হওয়ার আগেই নিজেকে সামলাতে পেরেছে।
#চলবে