#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা_ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৩৬
৭৯.
অর্ষা লাফ দিয়ে উঠে।অন্ধকার চারপাশ।গভীর রাত এখন।ঘামছে প্রচন্ড।কি দেখলো সে এতো সময়।স্বপ্ন,এ কেমন স্বপ্ন ছিলো।তাহলে কি অর্থৈ আর তিশাম তার ক্ষতি করতে চায়।ইরহামও জেগে গিয়েছে।অর্ষাকে অস্থির হতে দেখে ওকে বুকে আগলে নেয়।অর্ষা প্রেগনেন্ট ৯ মাসের।এই সময় এমন হয়।হয়তো কোনো খারাপ স্বপ্ন দেখেছে।অর্ষা ইরহামকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে।যেনো ছাড়লেই দু’জন একে অপরের থেকে দূরে সরে যাবে।ইরহাম অর্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।শান্ত করার চেষ্টা করে।কিন্তু অর্ষা শান্ত হচ্ছে না।এতে ভয়ংকর স্বপ্ন কেনো দেখলো।ইরহাম পাগল হয়ে গিয়েছে।সে নেই।রুশানের অবস্থা ভালো না।এ কেমন সপ্ন।
—“কি হয়েছে জান তোমার এমন করছো কেনো?”
ইরহামের শার্ট খামচে ধরে অর্ষা।প্রচন্ড ভয় পেয়েছে সে।এমন যদি হয়ে যায়।ইরহামকে ছাড়া সে থাকতে পারবে না।কিছুতেই না।ইরহাম ছাড়াতে চাইলো অর্ষাকে।অর্ষা চেপে ধরলো গভীর ভাবে।ইরহাম বুঝতে পারলো হয়তো খারাপ সপ্ন দেখেছে।তার জন্য এমন করছে।
—“জান শান্ত হও আমি আছি পাশে।কিছু হয়নি।”
অর্ষা ইরহামের বুক থেকে মুখ উঠিয়ে ইরহামের গালে হাত দিয়ে সারা মুখে চুমু খেয়ে আবারও জড়িয়ে ধরে।কাঁপছে অর্ষা।চোখের কোনে পানি জমা হয়েছে।কান্নারত গলায় বলে,,,
—“আমি খুব খারাপ স্বপ্ন দেখেছি।আপনি প্লিজ দূরে যাবেন না আমার থেকে।যদি অথৈ ফিরে আসে।আমাদের ক্ষতি করতে চায় তাহলে”
—“জান কিছু হবে না।তুমি ঘুমানোর চেষ্টা করো।আমি আছি তো তোমার সাথে।কিছু হবে না কেউ কিছু করতে পারবে না আমার অর্ষার।”
অর্ষা চোখ বুঁজে ঘুমানোর জন্য।তবুও স্বপ্নের কথা মনে পরছে।অর্ষা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ইরহামকে।ইরহামও মুচকি হেসে জড়িয়ে ধরে।ইরহাম হাসে প্রেয়সীর মুখের দিকে তাকিয়ে।প্রেগনেন্ট হওয়ার পর থেকে অর্ষা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে ইরহামকে প্রায়ই বলে সে মোটা হয়ে যাচ্ছে।চেহায়া কেমন কেমন হয়ে যাচ্ছে।ইরহাম তাকে আর ভালোবাসবে না এমন অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলে।ইরহাম কি করে বোঝাবে এইভাবে অর্ষাকে দেখলে সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।আদর করতে মন চায়।কিন্তু এই মেয়ে উল্টাপাল্টা ভেবে বসে আছে।
৮০.
সকাল সকাল উঠে ইরহামকে জড়িয়ে ধরে বসে আছে অর্ষা।ভার্সিটিতেও যেতে দিচ্ছে না।অর্ষা এখন ভার্সিটিতে যাচ্ছে না।শুধু এক্সাম দিয়ে আসে গিয়ে।সকাল সকাল ফোন দিয়ে রুশান আরিশাকেও আসতে বলেছে।মুহিব নাইম উশাকেও।ইরহামকে আজকে সে কোথাও যেতে দিবে না।কাছ ছাড়া করবে না।দরজায় টোকা দিয়ে ইলমা বাইরে থেকে বলে,,,,
—” দা ভাই ভাবিকে নিয়ে আসো,সকালের নাস্তা করবে না নাকি”
ইরহাম ভেতর থেকে চিল্লিয়ে বলল,,”আসছি যা তুই”
—“বউ উঠো চলো খেতে হবে।তুমি না খেয়ে থেকে কিন্তু আমার রাজকন্যাকেও কষ্ট দিচ্ছো”
ইরহাম কোনো মতে ছাড়িয়ে নেয় অর্ষাকে নিজের কাছ থেকে।এরপর কোলে তুলে নেয়।ওরা এখন নিচের গেস্টরুমে থাকে।উপর থেকে অর্ষার উঠানামা করতে কষ্ট হতে পারে এর জন্য ইরহাম নিচের রুমে সিফট হয়েছে।কোলে নিয়ে ড্রয়িংরুমে আসে।ইয়াদও এখন এখানে থাকে।পড়াশোনা শেষ তার।ইসরাককে ব্যবসায় সাহায্য করছে।অর্ষা যে তাকে ভাইয়ের মতো ভালোবাসে তা খুব ভালো করেই জানে ইয়াদ।যাক মেয়েটা তাকে ভালোবাসে তো,হোক না ভাই হিসাবে।তবুও ভালো তো বাসে।
ইরহাম অর্ষাকে বসিয়ে দেয় সোফায়।ইসরাক বেরিয়ে গিয়েছে।ইলমা কলেজে যাবে না আজ।ভালো লাগছে না তার।আয়রা এসে খাবার দিয়ে গেলো।ইরহাম জোর করে খাওয়াচ্ছে অর্ষা।অর্ষা খেতে ইচ্ছে করছে না মোটেও।তবুও খেতে হচ্ছে ইরহামের চাপে পরে।লোকটা একটা বদ লোক।এভাবে ঠেসে ঠুসে কেউ খাওয়ায় কিছু।তার ভেতর রুশান,উশা,নাইম,মুহিব,অর্না,আরিশা বাড়িতে ঢুকলো।সবাই এসে বসলো সোফায়।অর্ষা খুশি হয়ে গিয়েছে সবাইকে দেখে।রুশানকে দেখে অনেক খুশি হয়েছে।রুশানকে ডেকে বলে,,,
—“রুশাইন্না আমার পাশে এসে বোস”
রুশান হেসে অর্ষার অন্যপাশে বসে।ইরহাম একপাশে বসা।আরিশা ইয়াদের পাশে বসে।ইরহাম রুশানকে উদ্দেশ্য করে বলে,,,
—“এই যে তোমার আদরের দুলালি বোন কাল রাতে সবাইকে নিয়ে খারাপ স্বপ্ন দেখেছে তাই একসাথে সবাইকে ডেকেছে।”
রুশান এক হাতে জড়িয়ে ধরে বোনকে।অর্ষা যে তাকে অনেক ভালোবাসে বুঝতে পারছে।মেয়েটাকে সেও বড্ড ভালোবাসে।রুশান অর্ষার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,,,
—‘টেনশন করিস না গাধী তাহলে আমার মামুই পাখিটার কষ্ট হবে।আর তোর জন্য যদি আমার মামুই পাখিটার কষ্ট হয় তাহলে তোকে আস্ত রাখবো না আমি”
—“তুই কি ভাবিস তোর মামুইপাখিকে আমি কষ্ট দিতে পারবো।তার বাবা থাকতে সে আশা আর পূরন হবে না।দেখলি তো কিভাবে আমাকে এতো খাবার খাওয়ালো”
উশা পাশ থেকে বলে উঠলো,,,,
—“তোর এখন খেতে হবে।দেখ অর্ষা যদি আমার ছেলের বউয়ের কিছু হয় তো তোর একদিন কি আমার একদিন”
অর্ষা অবাক হয়ে বলে,,,”ছেলের বউ মানে তোর তো ছেলেই হয়নি তাহলে আমার মেয়ে কি করে তোর ছেলের বউ হয়?”
—“আরে হয় হয় আমার ছেলে ছোট হলেও তোর মেয়েই আমার ছেলের বউ হবে”
অর্ষা ভেংচি কেটে বলে,,,
—“জীবনেও নাইম আবালের ছেলের সাথে আমার মেয়ে বিয়ে দেবো নাহ”
রুশান ওদের চুপ করানোর জন্য বলে,,,
—“আচ্ছা থাম তোরা এখন।অনেক ঝগড়া করেছিস।”
সবাই থেমে যায়।গল্প করতে বসে সব।আজকে অর্ষা কিছুতেই কাউকে ছাড়বে না।ইলমাও এসে যোগ দিয়েছে।সবাই ফ্লোরে গোল হয়ে বসেছে।শুধু অর্ষা আর ইরহাম সোফায় বসা।লুডু খেলছে সব।অর্ষা ইরহাম বসে বসে দেখছে।অর্ষা সেই ইরহামকে যেতেই দিলো না আজ ভার্সিটিতে।ইরহামও বউয়ের জন্য আর যাইনি।হাসিঠাট্টা করে দিনটা পার করলো সবাই।
৮১.
ছাদে দাঁড়িয়ে আছে রুশান একা।আজও বলতে পারলো না ইলমাকে নিজের মনের কথা।এখনো বলেনি সে।ভালোবেসে চলেছে এক তরফা।অর্ষা রাতেও কাউকে যেতে দেয়নি।এখন হয়তো ১১ টার মতো বাজে।এতো সময় তাদের সাথে বসে গল্প করছিলো।এই একটু আগে ইরহাম আর রুশানসহ ঠেলে ঠুলে রুমে পাঠিয়েছে।সামনের মাসে অর্ষার ডেলিভারি।রুশান ইরহাম সবাই এখন ভয়ে আছে।টেনশন হচ্ছে প্রচন্ড।
—“রুশান ভাইয়া এখন এখানে যে আপনি?”
রুশান পেছনে ঘুরে ইলমাকে দেখে মৃদু হেসে আকাশের দিকে তাকালো।আকাশে চাঁদ তারার মেলা বসেছে।চাঁদ মামাকে ভীষণ রকম সুন্দর লাগছে।সাথে তর পাশে থাকা চাঁদকেও।রুশান নরম কন্ঠে বলল,,,
—“ভালো লাগছিলো না ইলমা তাই এখানে একটু হাওয়া খেতে এসেছি”
—“তা ভাইয়া দিনকাল কেমন চলছে”
–“এইতো কোনো মতে যাচ্ছে আরকি”
রুশান ভাবলো আজ সাহস করেই বলে দিক সে প্রিয়তমাকে তার মনের কথা।ভালোবাসে সে ভীষণ ইলমাকে।না আর নাহ অনেক হয়েছে।এখন বলবেই সে।নিজেকে প্রস্তুত করে নিলো রুশান।ইলমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে বলল,,,
—“আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই ইলমা”
—“হ্যাঁ ভাইয়া বলুন”
—“আমি তোমাকে ভালোবাসি ইলমা।ভীষণ ভালোবাসি।অর্ষার বিয়ের সময় যখন দেখেছি তোমাকে তখন থেকে ভালোবেসে আসছি তোমায়।তুমি কি আমাকে তোমাকে ভালোবাসার অধিকার দিবে ইলমা”
রুশানের কথা শুনে ইলমার চোখে পানি চলে আসলো।এই দিনটার জন্য সে এতোদিন অপেক্ষা করেছে।খুব ভালোবাসে সে নিজেও রুশানকে।রুশানের মুখ থেকে শোনার জন্য অপেক্ষা করেছিলো।শেষ পর্যন্ত বললো রুশান তাহলে।ইলমা কান্নাভেজা গলায় বললো,,,
—“এতো দেরি কেনো করলেন রুশান।আরো আগে বলতে পারতেন।আমি কতো অপেক্ষা করেছি।ভেবেছি এই বুঝি বলবেন কিন্তু আপনি বলেননি”
—‘এখন বলছি ইলমা ভালোবাসি তোমায় আমি”
—“আমিও আপনাকে ভালোবাসি রুশান”
যাক ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো।সুখে থাকুক দু’জন।দুজন ছাদে বসে পরে।ইলমা তার প্রিয় মানুষের কাঁধে মাথা রেখে বসে আকাশ দেখছে।যাক তার বোকাসোকা রুশান বললো তো শেষ পর্যন্ত এটাই অনেক।রুশান ভাবছে,সে সাহস করে বলেই ফেললো তার মনের কথা।ইলমা তাকে ভালোবাসে তবুও সে বুঝতে পারলো না।অর্ষা কি সাধে তাকে বোকা বলে।সে তো আসলেই একটা বোকা।নাহলে ভালোবাসার মানুষ ভালোবাসে এটাও বুঝতে পারলো না।
#চলবে..!
আসসালামু আলাইকুম।আপনাদের কমেন্ট দেখে বিশ্বাস করুন ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছি আমি।যাই হোক খুশি তো ইরহাম অর্ষাকে পেয়ে সবাই।#ভালোবাসার_রং_মিছিল💚
#লেখিকা_ইশা_আহমেদ
#অন্তিম_পর্ব
৮১.
অর্ষার চোখে ঘুম নেই।ইরহাম তাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে।অর্ষার মনে পরে সেদিনের কথা যদিন সে ইয়াদের ডাইরিটা পেয়েছিলো।অর্ষা ইয়াদের পুরোনো জিনিসগুলো ফেলে দেওয়ার কথা বলেছিলো।ইয়াদ একটা ব্যাগে পুরোনো জিনিসগুলো গুছিয়ে দিয়েছিল অর্ষাকে ফেলে দিতে।অর্ষা চেক করতে গেলে ডাইরিটা খুঁজে পায়।তাকে নিয়ে ইয়াদের অনুভূতি লেখা।ইয়াদ বিভিন্ন ভাবে নিজের অনুভূতি গুলো প্রকাশ করেছে লিখে।অর্ষা বুঝতে পারে ইয়াদ তাকে ভালোবাসে কিন্তু সে তো ইয়াদকে বড় ভাইয়ের চোখে দেখে ভালোবাসে।ইয়াদ তাকে অনেক আগে থেকে চিনতো।তবে ইয়াদ এখন নিজেকে স্বাভাবিক করেছে।অর্ষার সাথে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলে।
সে নিজেও ইয়াদের সাথে স্বাভাবিক আচরণ করার চেষ্টা করে।যদিও আগের মতো কথা বলতে পারে না।তবুও ইয়াদ ভেবেছে প্রেগনেন্সির সময় এমন হয় তাই কিছু বলেনি সন্দেহও করেনি।এই তো দুই তিন মাসের বেশি হলো হয়তো সে জেনেছে।অর্ষা টুস করে ইরহামের কপালে নিজের অধর ছুঁইয়ে দেয়।না জানি কখন আবার অথৈ কোনো ক্ষতি করে বসে।অবশ্য ক্ষমা চেয়েছিলো।মনে হয় না আর ক্ষতি করবে।তবুও মন মানতে চায় না।অর্ষার মনে পরে তখনকার কথা যখন তিশাম জেনেছিলো তার বিয়ে হয়েছে।
কিছুদিন পরই অথৈ এর সাথে মিলে তাকে কিডন্যাপ করার প্লান করেছিলো।ইরহাম কোনোভাবে আগে থেকে জানতে পেরেছিলো রক্ষা পেয়েছিলো সে।অবশ্য এর জন্য তিশাম অথৈকে ভোগ করতে হয়েছে।পরে ক্ষমা চেয়ে অথৈ অর্ষার কাছে।রুশান এগুলো জানার পর ভীষণ রেগে গিয়েছিলো অথৈয়ের উপর।অর্ষা অনেক কষ্টে থামিয়ে রুশানকে।
—“আমি জানি নাহ প্রেমিক পুরুষ আমি ডেলিভারির পর আবার আপনার কাছে ফিরতে পারবো কিনা কিন্তু আমি চাই অর্নিশাকে নিয়ে আপনার সাথে সারাজীবন কাটাতে।”
৮২.
দেখতে দেখতে ১মাস কেটে গেলো।অর্ষার ডেলিভারির ডেট ১০ দিন পর।এখন সবাই প্রায় অর্ষার কাছে থাকে।কেউ সরে না ওর কাছ থেকে।আয়রা তো পারলে রাতেও থাকে অর্ষার কাছে কিন্তু ছেলের কথা ভেবে রাতটা শুধু ছেড়ে দেয় দু’জনকে।তাছাড়া বাকি সব সময় রুশান ইলমা আরিশা আয়রা কেউ না কেউ অর্ষার সাথেই থাকে।আজকে ছুটি নেওয়ার জন্য গিয়েছে ইরহাম।অর্ষা যেতে দিতে চাইছিলো না কিন্তু কিছু করার ও ছিলো না তাই যেতে দিয়েছে।বাড়িতে ইলমা ইয়াদ আর আয়রা আছে।
অর্ষা রুমে বসে উপন্যাসের বই পরছে।ইরহামের আসতে দেরি হবে হয়তো।হঠাৎ করে পেতে পেইন হতে শুরু করে অর্ষার।অর্ষা সহ্য করতে না পেরে চেঁচিয়ে উঠে।আয়রা ইলমা দৌড়ে অর্ষার রুমে আসে।অর্ষাকে ব্যাথায় ছটফট করতে দেখে।ইয়াদও ছুটে আসে।অর্ষাকে দেখে আয়রা বুঝে যায় লেবার পেইন উঠেছে।ইয়াদ দিক বেদিক হারিয়ে ফেলে।ইরহামও নেই বাড়িতে।কি করবে ভেবে পাচ্ছে না।আয়রা ইয়াদকে বলে উঠে,,,
—“ইয়াদ অর্ষাকে কোলে তুলে নে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যেতে হবে আমি ইরহামসহ বাকি সবাইকে ফোন দিচ্ছি”
ইয়াদের অস্থতি হচ্ছে।ভয় করছে।হাত কাঁপছে,সে পারবে না কিছুতেই।ইরহামও তখনি বাড়িতে ঢোকে।নিজের রুম থেকে চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ শুনে দ্রুত রুমে আসে।রুমে এসে ওমন দৃশ্য দেখে ইরহামের আত্মা কেঁপে ওঠে।তার প্রেয়সী কষ্ট পাচ্ছে।দৌড়ে অর্ষার কাছে আসে।অর্ষা ইরহামকে দেখে ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে।ইরহাম দ্রুত কোলে তুলে নেয় অর্ষাকে ইয়াদকে গাড়ি বের করতে বলে।ইয়াদ গাড়ি বের করতেই ইরহাম অর্ষাকে নিয়ে বসে পরে।ইয়াদ গাড়ি চালানো শুরু করে।ইলমা আট আয়রা পরের গাড়িতে যাবে।রুশান শোনা মাত্র রওনা দিয়েছে।
হাসপাতালের সামনে এসে ইয়াদ গাড়ি থামাতেই ইরহাম নেমে পরে।প্রেয়সীর এই যন্ত্রণা সে সহ্য করতে পারছে না।ইরহাম দ্রুত ডক্তারের কাছে যায়।ইরহামের পাগল পাগল অবস্থা।ডাক্তার বলেন এখনই সিজার করতে হবে।ইরহাম রাজি হয়।ওটিতে ঢোকার আগে ইরহামকে অর্ষা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,,,
—“ভীষণ ভালোবাসি আপনায় প্রেমিক পুরুষ।জানি না ফিরে আসতে পারবো কিনা!আমি চাই আপনার সাথে সারাটা জীবন পার করতে”
—“তোমার কিছু হবে না অর্ষা।সব ঠিক হয়ে যাবে।তুমি এবং আমার রাজকন্যা ঠিক থাকবে”
—“আপনার চোখে পানি কেনো ইরহাম আপনায় কাঁদলে মানায় না বিশ্বাস করুন।আপনি অপেক্ষা করুন আমার জন্য ইরহাম।ভালোবাসি”
অর্ষাকে নিয়ে গেলো।ইরহাম হাঁটু মুড়ে বসে পরলো।সবার চোখে পানি।ইরহাম কাঁদছে।হাউমাউ করে কাঁদছে।প্রেয়সীকে হারানোর ভয় তাকে গ্রাস করে ফেলেছে।প্রেয়সীর যন্ত্রণা তাকে ছটফট করাচ্ছে।রুশান পেছন থেকে কাঁধে হাত রাখলে ইরহাম পেছনে ফিরে রুশানের দিকে তাকায়।রুশানকে দেখে ইরহাম জড়িয়ে ধরে তাকে।রুশান ও জড়িয়ে ধরে।এই কয়েক দিনে বেশ ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়েছে ইরহামের সাথে তার।
—“রুশান আমার অর্ষাকে এনে দাও।আগে জানলে কখনোই বাচ্চার কথা মুখেও আনতাম না।আমার প্রেয়সী কতোটা যন্ত্রণা পাচ্ছে।”
—“ভাইয়া আপনি শান্ত হন অর্ষার কিছু হবে না।আপনার রাজকন্যা আর অর্ষা দুজনেই ঠিক হয়ে যাবে”
ইরহামকে ধরে বসায় রুশান।এতো সময় সবাই এসে হাজির।আসিফ আহমেদ,ইসরাক,ইরিনা,মৌ,আহিন,আরিশা।আসিফ অর্ষার প্রতি ইরহামের ভালোবাসা দেখে ভীষণ খুশি।মেয়ে তার সুখে আছে সঠিক মানুষের কাছে আছে।এর থেকে আর কি চাই তার।ইরহামের অবস্থা ভীষণ খারাপ।টেনশন করছে।রুশান যথা সম্ভব ইরহামকে সামলানোর চেষ্টা করে চলেছে।অনেক সময় পর ডাক্তার বের হয়।ভেতর থেকে বাচ্চার কান্নার আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।ইরহাম দৌড়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে বলে,,,
—“আমার অর্ষা ঠিক আছে তো ডক্টর।আমি এখনই দেখা করতে চাই ওর সাথে”
—“আপনার ওয়াইফ এবং বাচ্চা দু’জনেই আল্লাহর রহমতে ভালো আছে”
—“আমি কখন দেখা করতে পারবো ডক্টর”
—“উনাকে কিছুক্ষণ এর ভেতরেই কেভিনে দেওয়া হবে তখনই দেখা করতে পারবেন”
কিছুক্ষণ পর অর্ষাকে কেভিনে সিফট করা হয়।সবাই দেখা করছে অর্ষার সাথে।ইরহাম এখনো ঢোকেনি কেভিনে।বাচ্চাকে কোলে নিয়ে আদর করছে।ইরহাম কেভিনে প্রবেশ করে।সবাই দুজনকে একা ছেড়ে বেরিয়ে যায়।ইরহাম ধীর পায়ে এসে বসে অর্ষার পাশে।অর্ষা হাসে ইরহামের অবস্থা দেখে।লোকটা কি করেছে রুশান তাকে বলেছে।অর্ষা মিহি কন্ঠে বলে,,,
—“এই যে প্রেমিক পুরুষ নিজের মেয়েকে দেখবেন না”
—“হুম দেখবো তো আগে তোমায় দেখেনি।আমার চোখের তৃষ্ণা মিটিয়ে নেই।মনে হচ্ছে কতো জনম দেখিনা তোমায়”
অর্ষা বাবুকে কোলে নিয়ে ইরহামকে দেখায়।ইরহাম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বাবুর দিকে।এই বাচ্চাটা তার আর অর্ষার ভাবতেই কেমন কেমন লাগছে।সে বাবা হয়ে গেলো।অর্ষা বাবুর কপালে অধর ছুঁইয়ে বলল,,,
—“নিন একটু আমার অর্নিশাকে কোলে নিন”
—“উহু না এখন নিবো না দেখো না কতো ছোট যদি হাতের খাঁকা দিয়ে টুস করে পরে যায় আমার মেয়ে তখন।না না দরকার নেই।আরেকটু বড় হোক তারপর না হয় নিবো”
—“পাগল লোক কিছু হবে না নিন আপনি।নিজের মেয়েকে কোলে নিবেন না তাই বলে”
ইরহাম অনেক সাবধানে কোলে নেয় অর্নিশাকে।ইরহাম তো অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।মেয়েটা প্রায় তার মতোই দেখতে হয়েছে।অর্ষা ইরহামের কান্ড দেখে হাসে।নিজের মেয়েকেই কোলে নিতে ভয় পায়।
৮২.
অর্নিশার দুই মাস চলে এখন।অর্ষা এখন অনেক সুস্থ।সবার সাথে ভীষণ খুশিতেই দিন কাটে।ছোট্ট অর্নিশাও বাবা ছাড়া কিছু চেনে না।সে এতো কষ্ট করল আর এই মেয়ে বাবা ছাড়া কিছু চিনে না।অবশ্য এটাই হয়।প্রতিটা মেয়ে তার বাবার কাছে রাজকন্যা।বাবাকে ভীষণ ভালোবাসে।রুশান ইলমার কথাটা সে এখন তুলতে চায়।ইরহামকে আজকে জানাতে চাইছে।এনগেজমেন্ট এখন করে রেখে বিয়েটা না হয় পরে হবে।ইরহাম আসতেই অর্ষা বলল,,,
—“শুনুন কিছু কথা ছিলো আপনার সাথে”
—“হুম বউ বলো”
—“আপনার রু…শানকে কেমন লাগে?”
—“হঠাৎ এই প্রশ্ন করছো যে!”
—“বলুন না”
—“রুশান অনেক ভালো একটা ছেলে।দায়িত্ববান,সচেতন,নিজের পরিবারকে কিভাবে আগলে রাখতে পারে সবই বোঝে।এক কথায় একজন ভালো মানুষ।সুন্দর মনের অধিকারী”
অর্ষা খুশি হয়।যাক তাহলে ইরহাম তার ভাইয়ের প্রশংসা তো করলো।অর্ষা ভয়ে ভয়ে বলল,,,
—“আসলে রুশান আর ইলমা দুজন একে অপরকে ভালোবাসে।আমি চাইছিলাম যদি ওদের এনগেজমেন্টটা এখন করা যেতো?”
অর্ষা কথাটা বলেই চোখ বন্ধ করে ফেলে।ও ভেবেছিলো ইরহাম ওকে বকা দিবে।কথা শোনাবে।কিন্তু হলো তার উল্টো ইরহাম ওকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,
—“এতো ভয় পাওয়ার কি আছে বউ।আমি জানি ওরা দুজন একে অপরকে ভালোবাসে।আর এতে আমার সম্পূর্ণ মত আছে।তুমি কালকে ওদের আসতে বলো”
—“আপনি সত্যি মেনে নিয়েছেন”
—“হুম বউ।মেনে নিয়েছি”
৮৩.
আহমেদ পরিবার হাজির চৌধুরী বাড়িতে।বাড়িতে আনন্দের আমেজ চলছে।ইলমা তো ভীষণ খুশি।তার ভালোবাসা তবে তার হলো।অর্ষা অবশ্য কিছু বিষয় নিয়ে বেশ চিন্তিত।আরিশা যে ইয়াদকে পছন্দ করে তা খুব ভালো করেহ জানে সে।কিন্তু ইয়াদ এখনো তার বোনকে কোনো রেসপন্স দেয়নি।কি করবে সে!ইয়াদকে বলতেও পারবে না।সবাই কথা বলছে ড্রয়িং রুমে বসে।অর্ষা ইরহাম ইয়াদও আছে।সবাই মেনে নিয়েছে।রুশানের পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর বিয়ে হবে।রুশান ইলমার দিকে তাকিয়ে হাসে।ইলমাও উত্তরে মিষ্টি করে হাসে।
বিয়ের কথাবার্তা শেষ।সবাই এখন গল্প করছে।ইয়াদ ছাদে আসে।আরিশাও ছাদে আসে ইয়াদের পিছুপিছু।ছাদের দোলনায় বসে পরে ইয়াদ।আরিশা সামনে এসে দাঁড়ায়।ইয়াদ পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় আরিশার দিকে।মেয়েটার মুখটা শুকনো হয়ে আছে।মলিন এক কথায়।আগের মতো সেই দুষ্টমি নেই।
—“আর কতো ইয়াদ!আর কতো অপেক্ষা করাবেন?”
—“আমি তোমায় বলেছিলাম আরিশা অপেক্ষা করো না।তুমি অপেক্ষা করে আছো।এতে কি দো’ষ আমার।”
—“আপনি এখনো ভালোবাসেন তাকে?”
—“সে সারাজীবন আমার হৃদয়ের একাংশে থেকে যাবে”
—‘তাহলে অন্যপাশে আমায় থাকতে দিন”
—-“তাহলে তোমায় আরো অপেক্ষা করতে হবে আরিশা”
আরিশা ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বলে,,
—“ঠিক আছে।অপেক্ষা করবো,যদি সারাজীবন তা হয় তাহলে তাই করতে ও রাজি আমি”
ইয়াদ বসে থাকে ছাদের দোলনায়।সে চাইলেও আরিশাকে গ্রহন করতে পারছে না।কোথাও একটা বাঁধা কাজ করছে।যদি সে বিয়ে করে তবে সে আরিশাকেই করবে।মেয়েটা বড্ড পাগল তার জন্য।ভালোবাসে তাকে ভীষণ।কিন্তু তার অনুভূতি,মন প্রান জুড়ে এখনো একজনই বাস করছে।চাইলেই কি এতো তাড়াতাড়ি ভুলে যাওয়া যায়।
৮৪.
রাত অনেক হয়েছে।অর্নিশাকে ঘুম পাড়িয়ে বেলকনিতে এসে বসেছে অর্ষা।আকাশে চাঁদ উঠেছে।চাঁদ জ্বলজ্বল করছে।হঠাৎ একটা শক্তপোক্ত হাত তার কোমড় জড়িয়ে ধরল।অর্ষা ঠোঁট প্রশস্ত করে হাসে।সে জানে এটা তার প্রেমিক পুরুষ।একান্তই তার প্রেমিক পুরুষ।ইরহাম মুখ ডুবিয়েছে অর্ষার চুলে।অর্ষা কেঁপে উঠলো।ইরহাম অর্ষাকে আলতো হাতে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বসায়।অর্ষা হাত ধরে তার হাতে এক ডজন চুড়ি পরিয়ে দেয়।অর্ষা হাসে।
—“এতো ভালোবাসেন কেনো ইরহাম?”
—“তুমি ভালোবাসার মতো মানুষ তাই।”
অর্ষা ইরহামের বুকে মাথা রেখে হেসে বলল,,,
—“আমায় সারাজীবন এভাবে ভালোবাসবেন তো ইরহাম”
—“আমি তোমায় ভালোবাসি বউ।তুমি আমার মন প্রান সব জুড়ে আছো।তোমাকে আমি পরকালেও চাই বউ”
—“ইরহাম আপনার দেওয়া প্রতি মুঠো কাঁচের চুড়ি আমার কাছে #ভালোবাসার_রং_মিছিল।”
ইরহাম অধর ছুঁইয়ে দেয় প্রেয়সীর কপালে।অর্ষা চোখে বন্ধ করে মাথা রাখে তার প্রেমিক পুরুষের বুকে।ইরহাম নিজের ব্যক্তিগত চাঁদকে দেখতে থাকে।দুজন চন্দ্রবিলাস করতে ব্যস্ত।আকাশ তারা,চাঁদও দেখছে দুজন মানব মানবীকে।যারা দুজন দুজনকে অসীম পরিমাণে ভালোবাসে।তারা ভালোবেসে সারাজীবন একসাথে থাকুক।কোনো বিপদ তাদের না ছুঁয়ে দিক।ভালো থাকুক ইরহাম-অর্ষা।
#সমাপ্ত
আসসালামু আলাইকুম।শেষবারের মতো ইরহাম অর্ষা রুশানকে নিয়ে কিছু বলে যাবেন।দীর্ঘ দিনের যাত্রার সমাপ্তি হলো আজ।এতো ভালোবাসা পাবো কখনো ভাবিনি।সবাই অনেক ভালোবাসা দিয়েছেন আশা করবো সামনে দিবেন।
জানি সবাই বলবেন ইয়াদ অর্ষাকে কেনো মিলিয়ে দেইনি।আমার ইচ্ছে ছিলো তাদের শেষটা এমন হবে।বিয়ে দেইনি তবে তার জন্য অর্ষার সপ্নে তাদের বিয়ে দেখিয়েছি।
নতুন গল্প নিয়ে ইনশাআল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি ফিরবো।সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন।ধন্যবাদ🖤