ভালোবাসার লুকোচুরি পর্ব -০৪

#ভালোবাসার_লুকোচুরি
#লেখনী_আলো_ইসলাম

” ৪ ”

–” কোমড় ধরে বিসানার উপর বসে পড়ে রুহি। আজ যে ধকল গেছে তার উপর সারাজীবনেও ভুলবে না। এত জামা কাপড় কখনো ধোয়নি রুহি। ইনফ্যাক্ট কোনো কাজই কখনো করেনি ৷ কিন্তু তার দুস্টামির জন্য আজ তাকে এত কাজ করতে হলো।

– উফফ বাবা কোমড় ব্যথা করছে। কোমড়টা একপাশে হেলিয়ে বলে রুহি। তারপর দুইহাতের দিকে তাকিয়ে কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে আমার এত সুন্দর হাত কেমন খড়খড়ে হয়ে গেছে। সব দোষ ওই ডেভিলটার। খারুস ডেভিল একটা বলে ভেংচি কাটে রুহি। রুহি রোহানের সকল ড্রেস ধুয়ে শুকিয়ে জায়গা মতো রেখে তবে এসেছে৷ আর এই সব করতে পুরোদিন পার করে দিয়েছে রুহি।

– এর মাঝে রুহির ফোন বেজে ওঠে। বিসানার একপাশে পড়ে আছে ফোনটা। রুহি ফোন বাজতে দেখে ভ্রু কুচকে বলে এখন আবার কে ফোন করলো বলেই বিরক্ত নিয়ে উঠতে গেলে আউচ বলে বসে পড়ে কোমড়ে হাত দিয়ে। অনেক ব্যথা করছে রুহির কোমড়।

– অনেক কষ্টে উঠে ফোন হাতে নিয়ে দেখে পায়েলের ফোন। রুহি দেরি না করে ফোনটা রিসিভ করে।

– কি রে তোর যে কোনো খোঁজ নেই সারাদিন। কতবার ফোন দিয়েছি দেখতো।

– পায়েলের কথায় রুহি আফসোসের নিশ্বাস ত্যাগ করে বলে আর বলিস না দোস্ত। বেঁচে যে আছি এই অনেক। কিন্তু আধা মরা হয়ে।
– রুহির কথায় পায়েল উৎসুক হয়ে বলে মানে?
– তারপর রুহি সব খুলে বলে পায়েলকে। সব শুনে পায়েলের হাসি আসে আবার রুহির জন্য খারাপও লাগে৷ পায়েল অনেক কষ্টে হাসি ঠেকিয়ে রেখে বলে আচ্ছা তুই রেস্ট কর তাহলে পরে কথা হবে কেমন বলে ফোন কেটে দেয় পায়েল। রুহি ফোনটা বিসানায় ছুড়ে মেরে চিতপটাং হয়ে শুয়ে পড়ে হাত পা ছড়িয়ে।

–” রাত ১১ টা বাজে। রুহি একটা বালিশ কোলের উপর নিয়ে মনের আনন্দে ফোন স্ক্রল করছে। রাতের খাবার শেষ করে এসেছে অনেক আগেই। এই বাড়িতে রাতের খাবার ১০ টার মধ্যে শেষ করা হয়। এটা হলো রোহানের রুলস। যদি ১০ টার ৫ মিনিট পরে কেউ যায় তাহলে তার জন্য খাবার বন্ধ সেরাতে। অনিয়ম একদম পছন্দ করে না রোহান। বিশেষ করে রুহির উপর বেশি বর্তায় সেটা। তাই যত কাজ থাকুক সে সময় রুহি আগে আগে গিয়ে বসে থাকে ডিনারটেবিলে।

— মেসেঞ্জারে নোটিফিকেশনের শব্দে চমকে উঠে রুহি । ফোন সাইলেন্ট করতে ভুলে গেছে। এতখন গেম খেলতে ছিলো বসে। রুহি মেসেঞ্জারে ঢুকে দেখে একটা অচেনা আইডি থেকে মেসেজ এসেছে “হেই বিউটিফুল হোয়াটস আপ।

– মেসেজটা দেখে রুহি বিরক্তর সহিত ভ্রু কুচকে একটু ভাবে কে হতে পারে। নাম দেওয়া আছে আসিফ খান। রুহি একটু ভাবার পর মনে মনে বলে এই নামে তো আমার কোনো ফ্রেন্ড নেই। তাহলে এই ছেলে আবার কে। চেনা নেই জানা নেই এই ভাবে কথা বলে।

– হু আর ইউ? রুহি রিপ্লাই করে। তারপর ছেলেটার আইডিতে যায়। অনেক ছবি দেওয়া আছে ছেলেটার আইডিতে। ছেলেটাকে দেখে ভালোই লাগে রুহির। আইডিটা একটু ঘুরে দেখার পর মনে মনে হেসে বলে দেখতে মন্দ নয়। নিজের করা ভাবনাতে নিজেই অবাক হয় রুহি। ছি ছি এই সব কি ভাবছি আমি।

– দেখা শেষ? ছেলেটির হঠাৎ এমন মেসেজ দেখে চমকে উঠে রুহি। সাথে সাথে উত্তর দিয়ে বলে ঠিক বুঝলাম না?

– এই যে আমার আইডি ঘুরে দেখা শেষ নাকি তাই জিজ্ঞেস করলাম। চেনা লাগলো নাকি এখনো অচেনায় থেকে গেলাম?

– ছেলেটার কথা গুলো বেশ ভালো লাগে রুহির। বেশ ইন্টারেস্টিং কথা বলে ছেলেটি। কিন্তু রুহির এখন একটা ভাবনা চলছে মাথায়। সে জানলো কি করে যে রুহি তার আইডিতে গিয়েছিলো।

– রুহি সব ভাবনা ছেড়ে ভাব নিয়ে বলে আমার বয়ে গেছে আপনার এলাকা ঘুরে দেখতে। আমি জাস্ট এমনই দেখছিলাম আর কি।
– রুহির কথায় আসিফ হেসে বলে তাহলে আমার মিস্টেক। এইভাবে কথা চলতে থাকে রুহির আর আসিফের।

– রোহান ল্যাপটপে বসে কাজ করছিলো। হঠাৎ দেখে রুহি মিটিমিটি হাসছে আর ফোন স্ক্রল করছে। তাই দেখে রোহান ল্যাপটপটা আরো একটু কাছে নিয়ে এসে দেখার চেষ্টা করে। রুহি কি করছে বোঝার চেষ্টা করে রোহান। রোহান রুহির উপর সব সময় নজর রাখে যেটা রুহি কখনো বুঝতে পারেনি। রুহির রুমেও সিসি ক্যামেরা লাগানো আছে রুহির অজান্তে। যেটা দিয়ে রোহান সব সময় রুহির সব কাজ কর্মের উপর লক্ষ্য রাখে। রাতে যখন অফিসের কাজ করে তখন রুহির ঘরের ফুটেজ অন রেখে কাজ করে রোহান। রুহি মাঝে মাঝে যে পাগলামি গুলো করে একা একা তার ঘরে সেগুলো দেখে রোহান বেশ মজা পায়।.

— জোরে গান বাজিয়ে অনেক সময় উড়াধুরা নাচো করে রুহি। কিন্তু সেটা যে রোহান তার ঘরে বসে দেখে সেটা রুহির অজানাই থেকে যায়।

– রোহান এবার ফোন হাতে নিয়ে কিছু একটা করতে থাকে।

– আসিফের সাথে বেশ ভাব জমে গেছে রুহির এইটুকু সময়ে। আসিফ অনেক মজার মজার কথা বলে ইমপ্রেস করে রুহিকে৷ আর রুহি আসিফের মেসেজ দেখে মুচকি হাসে শুধু।

– আচ্ছা এখন তো আমরা প্রায় চেনা জানা হয়ে গেছি৷ তো এখন কি আমরা ফ্রেন্ড হতে পারি? আসিফের কথায় ভাবান্তর হয়ে যায় রুহি৷ হ্যাঁ বলবে নাকি না বলবে ভাবতে থাকে। আর আসিফ রুহির উত্তরের অপেক্ষা করতে থাকে।

– রুহি অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেয় সে হ্যাঁ বলবে। একটা ফ্রেন্ড বেশি হলে সমস্যা হবে না তার। রুহি মুচকি হেসে ফোনটা নিয়ে উত্তর দিতে গিয়ে অবাক। আউট অফ মেসেঞ্জার দেখাচ্ছে। রুহি চিন্তিত হয়ে বারবার ট্রাই করে কিন্তু মেসেঞ্জারে আর যেতে পারে না। পাসওয়ার্ড নাম্বার নিয়েও কাজ হয়না। রুহি হতাশ হয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বসে থাকে। মনে তার ভীষণ আফসোস।

– একবার হ্যাঁ টা বলার সুযোগও দিলো না। উনি কি ভাববে এবার। নিশ্চয় মনে করছে আমি বন্ধুত্ব করতে চাইনা বলে অফ লাইন চলে এসেছি। ধুর ভালো লাগে না বলে ফোনটা দূরে ছুড়ে মেরে চাদর টেনে শুয়ে পড়ে রুহি।

– রুহির মুখোশ্রী দেখে রোহান ডেভিল হাসি দেয় একটা। রোহানই রুহির এফবি পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে দিয়েছে। রুহির সকল তথ্য, গোপনীয়তা সবই যে রোহানের জানা এটা রুহি জানে না।

– খুব কষ্ট লাগছে বুঝি রুহি সোনা। বন্ধুত্বের হাত টা বাড়ানোর আগেই কাট বলে মুচকি হাসে রোহান। তুমি চলো ডালে ডালে আর এই শেখ রোহান চলে পাতায় পাতায় সেটা হয়ত তোমার জানা নেই রুহি সোনা। কিন্তু এই ছেলেটা কে? ভাবান্তর হয়ে বলে রোহান। রুহির আশেপাশে আমি কোনো ছেলেকে দেখতে চাই না। সেখানে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। সাহস আছে বলতে হবে ছেলেটার।

–” রোহান কাজ শেষ করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত প্রায় ২ টা বাজে। ল্যাপটপে তাকিয়ে দেখে রুহি বাচ্চাদের মতো গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে। রুহির এমন শুয়ে থাকা দেখে রোহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ল্যাপটপ বন্ধ করে রুহির ঘরের দিকে হাঁটা দেয়।

– রুহির ঘরের ডুবলিকেট একটা চাবি সব সময় থাকে রোহানের কাছে। যেটা বাড়ির কেউ এ জানে না। এমনকি রুহিও না। যেটা দিয়ে রোহান অনায়াসে রুহির ঘরে যাওয়া আসা করতে পারে।।

– রোহান রুহির ঘরে গিয়ে রুহির পাশে বসে তাকিয়ে থাকে কিছুখন অপলক ভাবে। রুহিকে এইভাবে দেখতে বড্ড ভালো লাগে রোহানের। অদ্ভুত এক মায়া কাজ করে যেনো তার মধ্যে। ড্রিম লাইটের মৃদু আলোয় রুহিকে মায়াবী দেখাচ্ছে ভীষণ। রোহান রুহির এলোমেলো চুল গুলো সরিয়ে ঠিক করে দিয়ে কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একেঁ দেয় আর তাতে হাল্কা ভ্রু কুচকে নড়ে উঠে রুহি। তাই দেখে রোহান মুচকি হেসে বলে –

” তোমাতেই আবদ্ধ প্রিয় , তোমাতেই বাস
তাইতো ভালোবেসে তোমাতেই হারায়,
আমার নিশ্বাসের প্রতিটি ভাঁজে
তোমার নামের মৃদু আচঁ ”
ভালোবাসি যে ভীষণ, যা হয়নি করা প্রকাশ।

– কলেজ ক্যানটিনে বসে আছে রুহিরা। পায়েল মন খারাপ করে বসে আছে। রুহি গভীর মনোযোগ দিয়ে পায়েলের দিকে তাকিয়ে আছে ভ্রু কুচকে। অনিতা একবার রুহি আরেকবার পায়েলের দিকে তাকাচ্ছে।
– তোরা দুজন কি শুরু করেছিস বলতো নিরবতা ভেঙে বলে উঠে অনিতা। অনিতার কথায় পায়েল একটা আফসোস শ্বাস ছেড়ে বলে আমার কিছু ভালো লাগছে না দোস্ত । আমার এই প্রেমটাও টিকলো না। আমাদের ব্রেকাপ হয়ে গেছে দোস্ত নেকা কান্না করে বলে পায়েল। রুহি এবার বিরক্তি নিয়ে বলে চুপ করবি তুই। সেই এক কাহিনি এক ঘ্যানঘ্যান।

– রুহির কথায় পায়েল অসহায় ফেস করে বলে তুই তো এখন এইটাই বলবি। আমার যে কত কষ্ট হচ্ছে আমি জানি। তুই তো বুঝবি না।
– সে আমি বুঝতেও চাই না। তোর কাজে বিরক্ত জাস্ট আমরা বুঝেছিস। রোজ একটা করে প্রেম করবে। ২৪ ঘন্টায় ২৬ বার ব্রেকাপ এতে কার প্রেম থাকে বল আমায়?
– আরে রুহি আমাদের পায়েল তার রিলেশনে কতটা উন্নিত করেছে একবার দেখ। এবারের রিলেশন এক মাস গেছে ওর উল্লাসের সাথে বলে অনিতা।
– চুপ কর। নিহাতই বলদ পাইছে একটা তাই এতদিন সব সহ্য করে এসেছে। যখনই ডোজ বেশি হয়ে গেছে দেখ কেমন পালিয়ে গেলো। এত প্যারা নিয়ে প্রেম করতে বয়ে গেছে কারো মুখ বাকিয়ে বলে রুহি।

– তুই আমার বেস্টু নাকি ওই বলদটার উকিল রে রুহি। কোথায় আমাকে শান্তনা দিবি ব্রেকাপ হয়েছে তাই৷ তা না করে তুই ওর সাফাই করছিস মুখটা মলিন করে বলে পায়েল।

– রুহি কিছু বলতে যাবে তার আগে একজন বলে উঠে হেউ মিস বিউটিফুল। হঠাৎ এমন কথায় রুহি চমকে পিছে তাকায়। অনিতা পায়েলও একই কাজ করে।
– আসিফকে দেখে রুহির মুখে প্রশস্ত হাসি। আসিফ ঠোঁটে গাঢ় হাসি ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে। আসিফকে দেখে রুহি প্রায় সারপ্রাইজড। অবাক হয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে আপনি এখানে। আমি কি স্বপ্ন দেখছি নাকি সত্যি?

– তুমি একদম বাস্তব জীবনে আপন চক্ষুদ্বয়ে সত্যি একটা স্বপ্ন দেখছো বিউটিফুল গার্ল।
– আসিফের কথায় রুহি লজ্জা মিশ্রিত হাসি দেয় এবার।
– আসিফ রুহির কাছে এগিয়ে আসে। অনিতা আর পায়েল কিছুই বুঝে না। তাই ওরা অবাক পাবলিক হয়ে দেখছে বসে বসে।

— চলবে..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here