ভালোবাসার স্পর্শানুভুতি পর্ব ১০

#ভালোবাসার_স্পর্শানুভূতি
#রাইমা_মিমি
#পর্ব_১০

তারা- ওমা এর আবার কি হলো? যাই হোক তাতে আমার বাপির কি? হুহ। আল্লাহ এইবার যেন সামনে আর কেউ না পড়ে। একবার বকুল তলায় যাই। পরে হবে তোদের। কে বলেছি ঢেং ঢেং করে বকুল তলায় চলে যেতে। সবগুলোর পা ভেঙে দিব আমি। হুহ।(বলেই এক রাশ বিরক্তি আর রাগ নিয়ে আবার হাটা দেয়।)

তারা যা ভেবেছিল তাই। সবাই গাল ফুলিয়ে বসে আছে বকুল গাছের নিচে। তারা তাদের কাছে গিয়ে ধপ করে বসে পড়ল।

তারা- কি হলো? ওখান থেকে এভাবে চলে এসেছিস কেন? তাও আমাকে না নিয়ে?

তারা জানে কেন তারা এমন করেছে। তাও জিজ্ঞেস করল আর কি।

কিন্তু কারো কোনো রিয়েকশন নেই। কেউ যেন তারার কথা শুনতেই পাচ্ছে না।

তারা- আরে কি হলো তোদের? কথা বলছিস না কেন? রাগ করেছিস আমার উপর?

তন্নিমা- না না মেম আপনি কি বলছেন এসব। আপনার সাথে কি আমরা রাগ করতে পারি? আমাদের এতো বড় সাহস নেই মেম।

তন্নিমার কথায় তারা তো অবাক।

তারা- ওই কি মেম মেম করছিস হ্যা? কি হয়েছে বলবি তো?

আনিকা- কি বলব? তুই কি বলেছিলি আমাদের?

তারা- মানে?

রবিন- দেখ তারা আমরা এইটা অন্তত তোর থেকে আশা করি নি।

তারা- মানে? আরে ক্লিয়ার করে বল।

রিমা- ওরে কচি খুকি সেই কিছুই বুঝতে পারছে না। হুহ।

অনিক- আমাদের মিথ্যা না বললেও পারতি।

তারা- বাই এনি চান্স, তোরা কি আমার পরিচয় নিয়ে কথা বলছিস।

সবাই- অবিয়াসলি।

তারা- আচ্ছা ঠিক আছে আমি সবটা ক্লিয়ার করছি।

আনিকা- কি বলবি তুই? কি বলার আছে তোর? এই তুই আমাদের বন্ধু ভাবিস? ধুর আমারি ভুল তুই আমাদের বন্ধু কি করে ভাববি? তোর সাথে কি আমাদের যায়?

তারা- ঠাস করে একটা থাপ্পড় দিব বেয়াদব।

আনিকা- কেন মারবি কেন? ও তো ঠিকি বলেছে। তুই কই আর আমরা কই।

তারা- আরে আজব আমাকে তো বলতে দিবি।

রিমা- কি বল…………………….

রিমাকে থামিয়ে রবিন বলল।

রবিন- ওয়েট। ওকেও কিছু বলতে দে। তো তুই বল। তোর কি বলার আছে।(আমাকে উদ্দেশ্য করে)

আমি গলাটা হালকা ঝেড়ে বলতে লাগলাম।

তারা- হ্যা মানছি আমি তোদের মিথ্যা বলেছি। তোদের থেকে আমি আমার আসল পরিচয় গোপন করেছি। কিন্তু বিশ্বাস কর আমি সত্যি তোদের মন থেকে আমার ফ্রেন্ড ভাবি। হ্যা আমার বাপি দেশের নাম্বার ওয়ান বিজনেসম্যান। উনার অনেক নাম ডাক। আমি চাইলেই এখানে আমার নিজের একটা দাপট সৃষ্টি করতে পারতাম। আমিও চাইলে আলিশান ভাবে চলাফেরা করতে পারতাম। বিলাসিতা করতে পারতাম। কিন্তু এগুলো আমার মোটেও পছন্দ নয়। ছোট থেকে এসব আলিশন ভাবে বড় হয়ে এখন আর আমার ওইভাবে জীবন চালাতে ভালো লাগে না। স্কুল কলেজ সব জায়গায় আমি একি পরিচয়ে বড় হয়েছি মিস্টার মাহমুদের মেয়ে। স্কুল কলেজে কেউ আমায় দেখে ফ্রেন্ড হতে আসে নি। এসেছে আমি মিস্টার মাহমুদের মেয়ে তাই। সবসময় বাপির কথা আর স্ট্যাটাসের কথা শুনে আমি ফিড আপ হয়ে গেছি। আমি একটা মুক্ত জীবন চেয়েছিলাম। যেখানে সবাই আমাকে চিনবে আমার নিজের পরিচয়ে বাপির পরিচয়ে নয়। তাই মা বাপিকে বলেছিলাম ভার্সিটিতে কেউ যেন আমাকে মিস্টার মাহমুদের মেয়ে বলে না জানে। আমি সাধারণ মেয়ের মতো চলতে চাই। মা বাপি প্রথমে আপত্তি করলেও আমার জোরাজুরিতে রাজি হয়ে যায়। কিন্তু আজ বাপি তার প্রমিস ব্রেক করেছে।

আনিকা- সিরিয়াসলি!? তুই এমন ভালো কমফোর্টেবল আর আলিশন লাইফ ছেড়ে আমাদের মতো মিডিলক্লাসদের মতো চলতে চাস? সিরিয়াসলি?

তারা- হ্যা। চাই। তাই আমি আমার ওয়ারড্রব ভরা দামী ড্রেস সোজ থাকতেও নরমাল ড্রেস আপ করি। আমার দামী দামী গাড়ি থাকতেও আমি রিকশা দিয়ে আসা যাওয়া করি। এতেই মনে হয় আমি মুক্ত। আমি স্বাধীন।

রিমা- কিন্তু তাই বলে তুই আমাদের মতো মিডিলক্লাসদের সাথে ফ্রেন্ডশিপ করবি? যেখানে কত বড়লোক ফেমিলির ছেলেমেয়েরা এখানে আছে।

তারা- দেখ আমরা সবাই মানুষ। আমার মতো মনটাই আসল। এসব স্ট্যাটাসে আমি বিশ্বাসী নই। তোরা মন থেকে ভালো তাই আমি তোদের ফ্রেন্ড হিসেবে নিয়েছি। আর এই বিষয়ে আমি আর কথা বলতে চাই না। আমরা আগে যেমন ছিলাম তেমনি থাকবো। সো সবাই ভুলে যাও আমি মিস্টার মাহমুদের মেয়ে। ওকে?

তারার কথা শুনে সবার মন ভালো হয়ে গেল। সবার মুখেই একটা প্রশান্তির হাসি ফুটে উঠল। তারা যেন তাদের প্রাণ ফিরে পেয়েছে।

আসলে তারা পরিচয় যেনে হুট করেই তাদের মনে হয়েছিল তারা তাদের সাথে ডিজার্ভ করে না। তারা তার স্ট্যাটাসের ছেলেমেয়েদের সাথে থাকাই ডিজার্ভ করে। আর তাছাড়া তারা পরিচয় জানার পর সবাই তারার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করতে চাইবে। তারাও হয়ত ওদের ফ্রেন্ড হয়ে তাদেরকে ভুলে যাবে। তাই তারা মন খারাপ করে বসে ছিল। কিন্তু তারার কথা যেন তাদের মন থেকে সব বোঝা হালকা করে দিয়ে।

আনিকা- ওকে তাহলে চল ফ্রেন্ডশিপ না ভাঙার খুশিতে সেলফি তুলি।(হেসে)

অনিক- তোর তো সারাদিনি সেলফি আর সেলফি।

আনিকা- দেখ একদম বাজে কথা বলবি না। না হলে মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলব। হুহ।

অনিক- হুহ।

রবিন- হয়েছে হয়েছে চল। তোল।

রিমা- ওয়েট আমি একটু মেকআপটা ঠিক করে নেই।

রিমার কথা শুনে সবাই জুড়ে হেসে দিল।

রিমা- ওয়াট? আমি হাসার মতো কি বলেছি।(মেকআপ ঠিক করতে করতে)

তন্নিমা- কিছু না তাড়াতাড়ি ঠিক করব।

রিমা- শেষ।

সবাই একসাথে সেলফি তুলল।

তারা- চল রেস্টুরেন্ট এ আমি ট্রিট দিব।

তন্নিমা- উম না। আমরা রেস্টুরেন্ট এ ট্রিট নিব না।

তারা- তো কোথায় নিবি?

রিমা- আমরা……..

রিমাকে আর বলতে না দিয়ে আনিকা বলল।

আনিকা- আমি বলছি। আমরা ফুচকা, আর আইসক্রিম ট্রিট নিব। তাই গেটের সামনের মামার থেকে।

অনিক- হ্যা এটাই পারিস তুই খালি ফুচকা আর আইসক্রিম খেতে।

আনিকা- এই তুই চুপ কর।

তারা- হয়েছে হয়েছে। তোদের টম এন্ড জেরি শো বন্ধ কর।

রবিন- তো চল আজকে ফুচকা আর আইসক্রিম ট্রিট তারার পক্ষ থেকে।

তারা- হুম চল।

গেটে সামনের ফুচকাওয়ালা মামার দেয়া বেঞ্চে সবাই বসে আছে।

তারা- মামা ৬ প্লেট ফুচকা দেন। ঝাল কেমন দিবে?(সবার উদ্দেশ্যে)

রিমা- আমার টায় ঝাল বেশি।

আনিকা- আমারটা তেও। আর অনিকের টাতে ঝাল কম। অনিক বেশি ঝাল খেতে পারে না।

অনিক- হুম।

রবিন- কম ঝাল।

তন্নিমা- সেইম। কম ঝাল।

তারা- ওকে। মামা ৩প্লেট ঝাল বেশি আর ৩প্লেট ঝাল কম দিয়ে বানান।

মামা ঝাল ৩টা তারা, রিমা আর আনিকাকে দিল আর ঝাল কম ৩টা তন্নিমা, রবিন আর অনিককে দিল।

ঝাল তারা খেতে পারে কিন্তু খুব বেশি না। আর আজকের ফুচকা তো সেই পরিমাণে ঝাল হইছে।

সবাই নিজেদের মতো খাচ্ছে। এতো ঝালের পরেও রিমা আর আনিকার কিছু হলো না। কিন্তু তারা অবস্থা দফারফা। ঝালে সে হু হা করছে। নাক মুখ লাল হয়ে গেছে। চোখ দিয়ে টুপটুপ পানি পড়ছে। তাও হাসি মুখে খাচ্ছে। তারা অবস্থা দেখে সবাই চমকে গেল। মুখ আর ঠোট লাল রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। তারা আর খেতে পারছে না আর সবাই খেতে নাও করছে।

রবিন- ঝাল খেতে পারিস না তো ঝাল নিয়েছিস কেন। (ধমক দিয়ে)

তন্নিমা- আহ। ধমকাছিস কেন? না ধমকিয়ে যা পানি নিয়ে আয়।

তারা রাস্তার সাইডের পানি খেতে পারে না খেলেই বমি হয় তা সবাই জানে। তাই রাস্তার ওইপার থেকে পানি আনতে গেল রবিন। আর এদিকে তারার জান যায় যায় অবস্থা।

কিন্তু হুট করেই কেউ তারাকে সবার সামনে থেকে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। ঝালে তারার হুশ নেই। সে ভাবছে রবিন। তাই বলছে।

তারা- রবিন ছাড় আর পানি দে।

কিন্তু সামনের ব্যক্তির কোনো হুশ নেই। হুট করেই একটা গাড়ির দরজা খুলে যায় আর কেউ ধাক্কা দিয়ে তারাকে সিটে ফেলে দেয়। তারা এতক্ষণ রবিন ভাবলেও এখন আর সন্দেহ হচ্ছে। তাই সে মাথা উঁচু করে দেখে। আর মাথা উঁচু করে যা দেখে তাতে সে অবাকের চরমে। সাথে ভয় সীমা ছাড়া।

কারণ সামনে আর কেউ না রাত দাঁড়িয়ে আছে। আর চোখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে। সেই আগুনে যেন সে জ্বলসে দিবে তারাকে। তারা বেচারি তো ভয়ে শেষ।

তারা- ক করছেন ক কি?(ঝালে কথা বলতে পারছে না)

রাত ড্রাইভিং সিটে বসে পানির বোতল এগিয়ে দেয় তারার দিকে। প্রচুর ঝাল লাগায় তারা কিছু না বলে বোতল টা নিয়ে গটগট করে সবটুকু পানি শেষ করে দেয়। কিন্তু এতেও যেন ঝাল কমছে না।

তারা- আহ।(ঝালে)

রাত বুঝতে পারছে না। পার্কিং এরিয়াতে মিষ্টি জাতীয় জিনিস কোথায় পাবে। আর এদিকে তারা ঝালে ছটফট করছে। রাতের ইচ্ছা করছে দুইটা দিতে তারার কানের নিচে। কে বলেছিল এতো ঝাল খেতে। রাগে রাতের মাথা ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু এখন তার রাগার সময় নয়। আগে তারার ঝাল কমাতে হবে। তাই সে হাত মুঠ করে নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করে নিল। তারপর হুট করেই এমন কাজ করল যে তারার অবাকের শীর্ষতে পৌছে গেল।

রাত হুট করে তারাকে কাছে টেনে নিল। তারপর তারার ঠোঁট নিজের ঠোঁটের ভিরত নিয়ে নিল। তারপর পরম আবেশে তারার ঠোঁট শুষে নিতে থাকল।

তারা তো রাতের এই কাজে ভীষণ অবাক। সে ভাবতেই পারছে না কিছু। তার যেন হুশই নেই। সে যেন বরফে পরিণত হয়েছে। তার সাথে কি হচ্ছে সে কিছুই বুঝতে পারছে। রাতের কাজ বুঝতে তারার ৩০ সেকেন্ড সময়। যখন সে বুঝতে পারল রাত তার ঠোঁট জোড়া শুষে নিচ্ছে তখনি সে মোচড়ামুচড়ি শুরু করে দেয়। আর উম উম করতে থাকে। তারা বার বার রাতকে ঠেলে দূরে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু বডিওয়ালা রাতকে সে একবিন্দুও সরাতে পারছে না। যখনি সে সারাতে যাচ্ছে রাত তাকে আরো আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিচ্ছে। তারা রাতের পিঠে ইচ্ছা মতো খামচি আর কিল ঘুষি দিচ্ছে। কিন্তু তা রাতের কাছে কিছু লাগছে না। বরং আরো অনুভূতির সৃষ্টি করছে।

একটু আগে,

রাত সব কাজ শেষ করে মাএ অফিস থেকে বের হচ্ছিল। তখনি দেখে তারা সামিরের সাথে কথা বলছে। যা দেখে রাতের মাথায় ধপ করে আগুন জ্বলে উঠে।

রাত- এই মেয়েকে কতবার না করেছি এই সামিরের সাথে কথা বলতে। তাও বলছে। একে তো আমি………

আকাশ- রাত রাত।

রাত- হ্যা।(হাত মুঠ করে রাগটাকে কন্ট্রোল করে)

আকাশ- বাবা ডাকছে তোকে তার কেবিনে।

রাত- যা তুই আমি আসছি। (বলেই তারার দিকে এগুতে নেই।)

আকাশ- আরে এখনি যেতে বলেছে আমার সাথে। চল তাড়াতাড়ি। (বলেই হাত ধরে টেনে নিয়ে যাওয়া শুরু করল।)

প্রিন্সিপ্যালের কাজ থেকে কাজ শেষ করে বেড়িয়ে এসে দেখে তারা নেই। রাত ভেবেছে তারা হয়ত চলে গেছে। তাই সেও বাসায় চলে যাওয়া ধরে। কিন্তু যখনি গাড়িতে উঠতে যাবে তখনি কিছু একটা দেখে আটকে যায়। দৃশ্যটা অত্যন্ত সুন্দর হলেও রাতের ভালো লাগছে বরং রাগ লাগছে।

আসলে তারা যখন ফুচকা খাচ্ছিল তখন রাত তারাকে দেখতে পায়। কারণ পার্কিং থেকে গেটের বাইরে দেখা যায়। তার তারার ফুচকা খাওয়া রাতের একদমি পছন্দ হচ্ছে না।

রাত সবসময় স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন। তাই সে বাইরের খাবার খায় না। সেখানে সে তারাকে খেতে দেখছে যেখানে তারার বাইরের খাবারে সমস্যা হয়।

হ্যা ছোট থেকেই তারা বাইরের খাবার খেতে পারে না। তার অনেক সমস্যা হয়। সেখানে তারা পুরো এক প্লেট ফুচকা খাচ্ছে।

খাওয়ার এক পর্যায়ে তারা ঝালে হু হা আর লাফানো শুরু করে। রাত তারাকে দেখেই বুঝতে পেরেছে যে তারার ঝাল লেগেছে। তারা বাইরের পানি খায় না আর সেখানে পানিও নেই যা দেখে রাতের আরো রাগ উঠে।

প্রচণ্ড রাগ নিয়ে সে তারার দিকে হাটা দেয়। তারপর তারার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে থাকে। বাকিটা তো জানেনি।

বর্তমান,

তারা যখন না পেরে ক্লান্ত হয়ে হাল ছেড়ে দিল। তখন রাতও তাকে ছেড়ে দিল। তারার চোখ দিয়ে অশ্রু নির্গত হচ্ছে। রাত তারাকে ওভাবেই জড়িয়ে ধরে তারার সামনে এসে পড়া কাটা চুল গুলো কানের পিছনে গুঁজে দেয়। আর চোখের পানি মুছে দেয়।

রাত আর তারা দুজনেই হাপাচ্ছে তার সাথে তারার কান্না তো আছেই। তারা এখন হিচকি তুলে তুলে কাঁদছে। অতিরিক্ত কান্নার ফলে কথা বলতে পারছে না।

রাত- এইটা তুমি একদম ঠিক করো নি কলি। আমি বার বার না করেছিলাম তোমাকে। কিন্তু আমার কথা তুমি শুনো নি। দিস ইজ নট ডান না বেবি। হুম।(দাঁতে দাঁত চেপে।)

রাতের কথা শুনে কলি কাঁপছে। রাতের লাল চোখ দেখে কলি এমনিতেই ভয় পেয়ে আছে। তারপর কিছুক্ষণ আগের কাজ। আবার এখন দাঁত চাপা কথা। সব যেন তারার প্রাণ নেয়ার অবস্থা।

তারা- ভ ভাইয়া।

তারার কথা শুনে রাত এমন ভাবে তাকালো যে এখনি এখানে বসেই তাকে চিবিয়ে খেয়ে ফেলবে। রাতের তাকানো দেখে তারা আবার চুপসে গেল। তাও তারা সাহস নিয়ে বলল।

তারা- র রাত ভ ভাইয়া।(কাপা কাপা গলায়)

অনেকদিন পরে তারা মুখে নিজের নাম শুনে রাতের মনে যেন এক প্রশান্তি বয়ে গেল। তার সব রাগ যেন গলে পানি হয়ে গেল। হয়ত ভালোবাসার মানুষের সবকিছুই স্পেশাল। ডাকটাও।
#ভালোবাসার_স্পর্শানুভূতি
#রাইমা_মিমি
#বোনাস_পর্ব

অনেকদিন পরে তারা মুখে নিজের নাম শুনে রাতের মনে যেন এক প্রশান্তি বয়ে গেল। তার সব রাগ যেন গলে পানি হয়ে গেল। হয়ত ভালোবাসার মানুষের সবকিছুই স্পেশাল। ডাকটাও।

কিন্তু তারার পরের কথা শুনে রাতের মাথায় আবার ধপ করে আগুন জ্বলে উঠল।

তারা একটু মনে সাহস জুগিয়ে বলেছিল।

তারা- আ আমাকে কেন এখানে এনেছে? ম মেরে ফেলার জন্য? তাহলে মেরে ফেলুন তারপরও দয়া করে ওমন অত্যাচার আমাকে করবেন না। আ আমি আ আর নিতে পারছি না। বিশ্বাস করুন আর নিতে পারছি না আমি।(কেঁদে কেঁদে)

রাত তারার কথা শুনে রাগে জুড়ে তারার গাল চেপে ধরে। তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বলে।

রাত- এতোক্ষণ চুপ ছিলাম ভালো লাগে নি না? আমার রাগ না উঠালে তোর ভালো লাগে না না? বল ভালো লাগে না?(রেগে)

এদিকে রাতের এতো জুড়ে চেপে ধরায় তারা ব্যথায় মরে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে যেন দাঁত ভেঙে মাড়ি ভেদ করে ভিতরে ডুকে যাচ্ছে। যার জন্য প্রচণ্ড ব্যথা হচ্ছে। ব্যথায় তারার চোখ দিয়ে আরো অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। অশ্রুরা যেন আজ পণ করেছে তারা আজকে আর থামবে না। বিনা বিরতিতে পড়েই যাবে।

তারা- আহ। ল লাগছে আ আমার ছ ছাড়ুন।(ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে।)

কিন্তু সে দিকে রাতের কোনো খেয়াল নেই। রাগ যে তার আজ বার বার মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে।

রাত- লাগছে না? আমারও লাগে। যখন কোনো ছেলে তোর সাথে কথা বলে। যখন কেউ তোকে নিয়ে বাজে কথা বলে। আর ওই সামিরের থেকে দূরে থাকতে বলেছিলাম না তোকে? শুনিস নি কেন আমার কথা? বল। জবাব দে।(রাগে জুড়ে চিল্লিয়ে)

রাতের এমন চিল্লানিতে তারা ভয় পেয়ে যায়। সামনে সিংহ গর্জন করলে কেই বা ঠিক থাকতে পারে?

তারা- ব বিশ্বাস করুন। আমি কথা বলি নি সামিরের সাথে উনিই এসে গাঁয়ে পড়ে কথা বলছিলেন।

রাত- তাও তুই কেন ওকে তোর সাথে কথা বলার সু্যোগ দিবি? কেন?

তারা- আ আমি দ দেই নি তো। আমি তো উনাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেছি।

রাত- আচ্ছা মানলাম সামিরের সাথে কথা বলায় তোর দোষ নেই। কিন্তু তুই বাইরের খাবার খেতে গিয়েছিলিস কেন? তার উপর আবার ঝাল। জানিস না তোর সমস্যা। কেন খেয়েছিস বল। এখন কিন্তু এইটা বলিস না যে তোর বন্ধুরা জোর করে খাইয়েছে। কারণ আমি দেখেছি তুই নিজে খেয়েছিস।

তারা- এখন কি বলি? হুম? যে করেই হোক আমাকে এর থেকে ছাড়াতেই হবে। আল্লাহ রক্ষা করো এই মাসুমকে। আমি কি দোষ করেছি যে এই মাসুমের সাথে এমন করছো। এই জাল্লাদ কেন সবসময় শুধু আমার সাথেই লাগে।(মনে মনে)

রাত- বলছিস না কেন?

তারা- আইডিয়া।(মনে মনে)

তারা- ভ্যা ভ্যা ভ্যা।(করেই ছোট বাচ্চাদের মতো কান্না জুড়ে দিল।)

তারার কান্নাদের রাতের কষ্টা হলো।

রাত- একটু বেশিই করে ফেলেছি তারার সাথে। ও তো আমার এই ব্যবহারের সাথে পরিচিত নয়। বেচারি বেশিই ভয় পেয়ে গেছে। কিন্তু কি করব ও কাজ গুলো করে এমন যে রাগ উঠে যায়। যাই হোক আগে ওকে সামলাই। আহারে আমার জানু কান্না করে মুখের কি অবস্থা করেছে। বড্ড মায়া হচ্ছে।(মনে মনে)

রাত- ওয়াট হেপেন্ড কলি? ব্যথা পেয়েছো? বলো কোথায় ব্যথা পেয়েছো?

তারা- উহ। ঢং। জুতো মেরে গরু দান করতে এসেছে। যতসব আজাইরা পাব্লিক। হুহ।(মনে মনে)

কিন্তু এরপর রাত যে কাজটা করল তাতে তারা……………..

এদিকে,

আহমেদ ভিলা,

রায়হান আহমেদ(রাতের বাবা)- অনি অনি কোথায় তুমি? অনি?

অনিমা জাহান(রাতের মা)- আহ কি হয়েছে হ্যা? এমন ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছ কেন হ্যা?(বিরক্তি নিয়ে)

রায়হান- কি বললে তুমি? আমি ষাঁড়?

অনিমা- এ মা আমি কখন বললাম তুমিই তো মাএ নিজেকে নিজে ষাঁড় বললে।(ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)

রায়হান- আমি যদি ষাঁড় হই তাহলে তুমি তুমি…………..তুমি গাভী।

অনিমা- কিহ? কি বললে তুমি? ও মা গো ও বাবা গো এ তোমরা আমাকে কোথায় বিয়ে দিয়েছিলে গো। এখানে আমার কোনো দাম নাই গো।

জরিনা- আব্বা আপনে এইডা কি কইলেন? আপনে এইডা কইতারলেন আম্মা রে? আম্মা আপনে কাইন্দইন না যে। আজকা ভাই আহোক। আমি ভাইয়ের টাইন আব্বার নামে বিচার দিয়াম।(রাতের মাকে শান্তনা দিয়ে)

জরিনা হলো রাতদের কাজের মেয়ে। বছর ২ হলো রাতদের বাসায় কাজ করে। বয়স ১২ বছর। বয়স কম হলে কি হবে পাকা পাকা কথা জানে। সবসময় অনিমা জাহানের আগে পিছে থাকে। আর সাহায্য করে। সবসময় তার মুখে যেন খই ফুটে। আগে জরিনার মা কুলসুম রাতদের বাড়িতে কাজ করত। কিন্তু ২বছর আগে কুলসুম রাস্তার এক্সিডেন্ট এ মারা যায়। জরিনার বাবা আগেই মারা গেছে। তাই অনিমা জাহান জরিনাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। একা একটা মেয়ে কোথায় থাকবে ভেবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। তবে থেকে জরিনা রাতদের বাড়িতে থাকে। জরিনাকে অনিমা জাহান অনেক ভালোবাসেন আর স্নেহ করেন তাই তিনি জরিনাকে পড়াশুনা করাতে চান। কিন্তু জরিনা পড়বে না। এক প্রকার জোর করেই তাকে স্কুলে ক্লাস ১ এ ভর্তি করানো হয়।

রায়হান- আল্লাহ বন্ধ করবে তোমাদের মেলোড্রামা? আমার কথাটা একটু শুনবে দয়া করে?

অনিমা- হুহ। বলো তাড়াতাড়ি। আমার কাছে তোমার ফালতু কথা শুনার জন্য বেশি সময় নেই।

রায়হান- ফালতু না। যে কথা বলব। তা শুনলে তোমার মাথায় ঠিক থাকবে না।

অনিমা- তাই? কি কথা?(আগ্রহ নিয়ে)

রায়হান- আজকে এহসানের সাথে দেখা হয়েছিল।

অনিমা- কিহ? ও ওই এ এহসান মাহমুদ?

রায়হান- হ্যা। আর তারা মাকেও দেখেছি।

অনিমা- তারা? তারাকে কোথায় দেখলে? আরে ক্লিয়ার করে বলো না। আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।

তারপর মিস্টার রায়হান আহমেদ তার স্ত্রী মিসেস অনিমা জাহানকে ভার্সিটির সব কথা বললেন।

অনিমা- কি বলছো কি? আমার রাত তো একি ভার্সিটিতে পড়ে। আর ওই সময় হয়ত তারাকে দেখেও নিয়েছে। এখন কি হবে?

রায়হান- জানি না। তবে আমি চাই না আগের কাহিনী আবার পুনরায় ঘটোক। যে কারণে আজ এতো বছর ধরে আমাদের দুই বন্ধুর ঝামেলা আমি চাই না তা আবার নতুন করে আরো কোনো বড় আকার নেক।

অনিমা- কিন্তু রাত?

রায়হান- আমিও তাই চিন্তা করছি।

অনিমা জাহান এবার একটু অন্যরকমম হয়ে বললেন।

অনিমা- আচ্ছা তারা মামুনি দেখতে কেমন হয়েছে গো?

রায়হান- মামুনি? জানো মামুনি না আগের থেকে আরো অনেক সুন্দর হয়ে গেছে। আগে তো ছোট কিউট মামুনি ছিল। এখন বড় কিউট মামুনি হয়ে গেছে। তুমি না দেখলে বিশ্বাস করবে না। আর আমি এখন তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না।

অনিমা- বলতে হবে না তুমি ছবি দেখাও।

রায়হান- যাহ। আমি শকে ছবি তুলতে একদম ভুলে গেছি।

অনিমা- এইটা কোনো কাজ করলা? ব্যাডা আবুলের সাথে বিয়ে দিছে আমার বাবা আমারে। হুহ।

রায়হান- আরে আরে অনি…..

এতোক্ষণের অনিমা জাহান চলে গেছেন।

এদিকে,

রাতের কাজে তারা অবাক হলেও অনেক নয়।

আসলে রাত তারা কান্না সহ্য করতে না পেরে তারাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নেয়। তারপর তারার কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দেয়।

রাত- আমার ফুলের কলি কাদে না। আমি বকেছি বলে কাদছো? আচ্ছা সরি আর বকবো না ঠিক আছে? কিন্তু তোমাকেও আমার কথা শুনতে হবে। তুমি তো জানোই আমার রাগটা একটু বেশি। তাহলে কেন রাগ উঠাও হুম? আর কাদে না। চোখ মুছো।(বলেই নিজেই হাত দিয়ে মুছে দিলেন।)

তারা অবাক হয়ে রাতের কথা শুনছে আর কাজ দেখছে। তারার ছোট বেলার কথা মনে পড়ছে। তারা যখন ছোট ছিল। তখন যদি রাত তারাকে বকতো তাহলে তারা এভাবে কান্না করত আর রাত তাকে এভাবে আদর কে আর আদুরে কথা বলে তার কান্না থামাতো। কখনো কখনো তো তারা ইচ্ছা করেও কান্না করত রাতের আদরের জন্য।

ভেবেই অজান্তেই তারার মুখে হাসি ফুটে উঠে। এ যেন এক অন্য রকম হাসি। এক মনোমুগ্ধকর হাসি। যাতে আছে প্রশান্তি।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here