ভালোবাসার স্পর্শানুভুতি পর্ব ২৯+শেষ

#ভালোবাসার_স্পর্শানুভূতি
#রাইমা_মিমি
#পর্ব_২৯

বর্তমানে,

প্রকৃতির লিলা খেলায় মুখরিত গোটা পরিবেশ। কখনো মেঘের গর্জন তো কখনো মুশলধারা বৃষ্টি। প্রকৃতিও হয়ত আজ তারার অসহায়ত্বতা দেখে মন খারাপ করে বৃষ্টি ঝড়াচ্ছে। বা রাতের খুশিতে নিজেদের খুশি জানান দিতে বৃষ্টি ঝাড়াচ্ছে। এ যেন এক অপরুপ রুপের বাহার। রাতের আকাশে বৃষ্টি বিন্দু না দেখা গেলেও এর রিমিঝিমি শব্দ ঠিকি জানান দিচ্ছে সে ঝড়ে যাচ্ছে অবিরামভাবে।

রুমের সাথে সংযোগকৃত বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে তারা। আর চোখ দিয়ে পড়ছে তার অশ্রুকণা। অশ্রুকণাও যে শপথ করেছে বৃষ্টিকণাকে হার মানানোর। কারণ সেও বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে সমানতালে ঝড়ে যাচ্ছে বিরতিহীনভাবে।

তারা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সামনে থাকা পাহাড়টার দিকে। যা রাতের অন্ধকারে কালোরুপ ধারণ করেছে ঠি তার জীবনের মতো।

হুট করেই দুইহাত গলিয়ে পেটে কারো হাতের ছোয়া পেয়ে ধ্যান ভাঙল তার। সে জানে এটা কার হাতের ছোয়া। কিন্তু তার মধ্যে কোনো অনুভূতি নেই। অনুভূতিরা যেন তার কাছে মৃত। ঘন্টাক্ষানেক আগেও যদি এমন ছোয়া পেত তাহলে ঘুরেই ব্যক্তিটাকে কষে কয়েক ঘা লাগিয়ে দিত গালে। কিন্তু এখন আর পারছে কিছুতেই পারছে।

রাত- কেমন লাগল বেবি আমার সারপ্রাইজ? বিউটিফুল না? আমি জানি তোমার অনেক ভালো লেগেছে। কারণ এটা তোমার ড্রিম প্ল্যাজ রাঙামাটি। এখানে আসার তোমার অনেক ইচ্ছা ছিল কিন্তু পারছিলে না। নাও আমি তোমার ইচ্ছা পূরণ করে দিলাম।(বাকা হেসে আরো গভীরভাবে জড়িয়ে ধরে কাধে থুতনি রেখে)

তারার অনুভূতিরা আজ পণ করেছে তারা তারার মাঝে জাগ্রত হবে না। তাই তারা এখনো চুপ।

হ্যা রাত তারাকে রাঙামাটি নিয়ে এসেছে। আর তারার অপরাধের শাস্তি স্বরূপ দিয়েছে ম্যারিজ রেজিস্ট্রির কাগজ। যাতে বাধ্য হয়ে সই করতে হয়েছে তারার।

তারা ছোট থাকায় তাদের বিয়ের কথা তারার খুব একটা মনে নেই। আর রাত মোটামুটি কিছুটা হলেও বড় হওয়ায় তার সবটাই মনে আছে। তবে তখন সেটা না বুঝতে পারলেও এখন ঠিকি বুঝতে পারে। আর যখন বুঝতে পেরেছে তখন থেকেই শুরু করেছে তারাকে পাওয়ার মিশন। সে চাইছিল তারার মনে তার জন্য ভালোবাসার জন্য দিয়ে তারাকে নিজের করে নিতে। কিন্তু পরিস্থিতি আবার তাদের আলাদা করে দিল। কিন্তু এবার আর সে কোনো প্রকার রিস্ক নিতে প্রস্তুত নয়। তাদের বিয়েটা যে আইনি না আর তার জুড়ে যে মানুষ অনেক কিছু করতে পারবে তা সে ঠিকি বুঝেছি। আর এখন আইনি প্রক্রিয়া করে তাদের বিয়েটাকে স্বীকৃতি দিয়েই দিল।

রাত যখন তারাকে তাদের বিয়ের কথা বলল। তারা তখন আকাশ থেকে পড়ল। তার বিয়ে হয়েছে আর সে জানেই না। এতো বছর নিজেকে অবিবাহিত ভেবে এসেছে আর এখন জানতে পারছে সে আজ থেকে নয় বহু বছর আগে থেকেই বিবাহিতদের জায়গায় নাম লিখিয়েছে। যা তার একদমি অজানা। রাতের কথা প্রথমে মানতে নারাজ হলেও পরে যখন রাতের কথা শুনে ছোটবেলার কিছু স্মৃতি মাথায় আসল তখন তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল।

যাকে সে এতোদিন ভালোবেসে আসছে সে তারই স্বামী! আর তারই স্বামী তাকে ধোকাও দিয়েছে। ভেবেই কান্নায় ভেঙে পড়ে তারা।

আবার শুরু করল পাগলামি। সে বাসায় যাবে বাবা মাকে জিজ্ঞেস করবে। হ্যান ত্যান।

রাত কোনোভাবে সামলাল তারাকে।

রাত- স্টপ তারা। কি করছো তুমি? লেগে যাবে তো। স্টপ।(তারাকে ধরে)

তারা- লিভ মি। আমি বাসা যাবো। মা বাপি কে আমার জিজ্ঞেস করতে হবে তারা আমার সাথে এমন কেন করল। লিভ মি প্লিজ।(পাগলামো করে)

রাত- দেখো তারা পাগলামি করো না। প্লিজ শান্ত হও।

তারা- কিছুতেই না ছাড়ুন আমাকে। আমি ওই বিয়ে মানি না। তাছাড়া আমাদের রেজিস্ট্রি হয় নি। তাই আমাদের ওই বিয়ে আইনগত না। ছাড়ুন আমাকে।(ছাড়ানোর চেষ্টা করে)

রাত- কে বলেছে আমাদের বিয়ে আইনগত নয়? তুমি আমার ধর্মীয় আর আইগত দুইভাবেই বিয়ে করা বউ।

রাতের কথা শুনে তারা আকাশ থেকে পড়ল। এবং একনিমিষেই শান্ত হয়ে গেল।

তারা- ম মানে?(অবাক হয়ে)

রাত- হ্যা তুমি আমার দুইভাবেই বিয়ে করা বউ।

তারা- না কিছুতেই না। কি করে আমি আপনার বউ হলাম? আমি তো কখনোই রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করে নি। তাহলে?(সন্দেহ দৃষ্টি দিয়ে)

রাত তারাকে ছেড়ে দিয়ে একটু দূরে দাড়িয়ে কপালে আংগুল দিয়ে একটু স্লাইড করে বলল।

রাত- একদিন তোমাকে আমি একটা কাগজ দিয়েছিলাম এসাইনমেন্ট এর জন্য মনে আছে তোমার?

তারা- হ্যা। কিন্তু তার সাথে এর সম্পর্ক কোথায়?

রাত- বলছি। তারপর আমি তোমাকে সাথে কিছু কাগজ দিয়েছিলাম যাতে বলেছিলাম সই করতে?

তারা- হ্যা।

রাত- তুমি কাগজগুলো পড়ে দেখতে চেয়েছিলে……

তারা- কিন্তু আপনি দেন নি। বলেছিলেন আপনার উপর বিশ্বাস আছে কিনা। আমিও তাই আর দেখি নি।

রাত- হ্যা। আর ওই কাগজ গুলোই ছিল আমাদের রেজিস্ট্রি পেপার।

রাতের কথা শুনে তারা মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। কি বলছে কি রাত? পাগল হয়ে গেছে নাকি সে? কি করে পারল রাত এটা করতে? কি করে পারল? তাকে একবার জানানোর প্রয়োজন মনে করল না? এতো বড় ধোকা দিল? আর সে মেনে নিবে? কিছুতেই না। না সে মানবে না। এখনি চলে যাবে এখান থেকে। বাসায় গিয়ে মা বাপির সাথে হবে। তাকে যেতে হবে। যেতেই হবে।

মনে মনে ভেবেই উঠে দাড়াল। আর এগিয়ে গেল দরজা দিকে।

রাত- চলে যাবে বেবি?(শয়তানি হেসে)

তারা- আমাকে যেতে দিন প্লিজ।

রাত- তো যাও। তুমি যদি এখান থেকে যেতে পারো তো যাও।

তারা- কেন যেতে পারবো না? অবশ্যই পারবো। আমি আমার বাসার রাস্তা চিনি। অবশ্যই যেতে পারবো আমি।

রাত- তাই? কিন্তু তুমি কি জানো তুমি এখন কোথায় আছো?

তারা- মানে?

রাত- হ্যা। তুমি জানো তুমি এখন কোথায়?

তারা- ক কোথায় আমি? বলুন কোথায় এটা? কি হলো বলুন।

রাত কিছু না বলে দাঁড়িয়ে শয়তানি হাসি হাসছে। রাতের হাসি দেখে তারার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। ইচ্ছা করছে কিছু একটা দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিতে। সে দৌড়ে গিয়ে রাতের কলার চেপে ধরে রেগে গর্জে উঠলো।

তারা- কি হলো বলছে না কেন? বলুন কোথায় নিয়ে এসেছেন আমাকে? বলুন।(কলার ধরে ঝাকিয়ে)

রাত তারার কোমড়ে হাত রেখে একটা টান দিল। আর তারা তাল সামলাতে না পেরে হুমড়ি খেয়ে পড়ল রাতের উপর।

রাত- আমরা এখন আছি ঢাকা থেকে প্রায় অনেকটা দূরে পাহাড়ি আর ঝুলন্ত বিজের এলাকায়। যার নাম রাঙামাটি।

রাঙামাটি শুনে তারা চমকে গেল। এটা তার ড্রিম প্ল্যাজ। যেখানে সে অনেকবার আসার চেষ্টা করেছে কিন্তু কোনো না কোনো ভাবে আর আসা হয় নি। অন্যসময় হলে সে খুশিতে লাফিয়ে উঠত। কিন্তু এখন তার একদম ভালো লাগছে না।

সে রাতের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে লাগল।

রাত- হুম। আমরা এখানে হানিমুন করে একটা বাচ্চার জন্ম দিয়ে তারপর যাবো। তাহলে আর তোমার বাবা কিছু করতে পারবে না। আইডিয়াটা ভালো না?(তারাকে লজ্জা দিতে)

না চাইতেও রাতের কথায় ভিষণ লজ্জা লাগছে তারার। সে আরো ছোটাছুটি শুরু করল ছাড়া পেতে।

রাত তারাকে ছেড়ে দিয়ে চলে গেল বাইরে।

হুট করেই আবার রাতের কথায় ধ্যান ভাঙে তারার।

রাত- কি হলো? কোথায় হারিয়ে যাও তুমি বলো তো?

তারা- একটা কথা জিজ্ঞেস করব?(শান্ত সুরে)

রাত- একটা কেন একশোটা জিজ্ঞেস করো।(তারার কাধে মুখ ডুবিয়ে)

রাতের স্পর্শ পেয়ে তারা বারবার কেপে উঠছে কিন্তু তাও নিজের মনকে শান্ত করার জন্য এখন মনের প্রশ্নগুলোর উত্তর জানা খুব জরুরী।

তারা- এতোকিছু কেন করলেন?

রাত- মানে?

তারা- এই যে এতোকিছু। আমাকে বিয়ে করা, কিডন্যাপ করা।

রাত- তো কি করব? নিজের বউয়ের বিয়ে দেখবো?

তারা- কিন্তু কেন করলেন?

রাত- ভালোবাসি তাই।

তারা একটা তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলল।

তারা- ভালোবাসেন? আমাকে?

রাত- অবশ্যই। কোনো সন্দেহ আছে?

তারা- তাহলে এনি আপু কি?

রাত- মানে? এখানে এনি কোথা থেকে আসছে?

তারা- এনিই তো ছিলেন। আমিই তো উড়ে এসে জুড়ে বসেছিলাম।

রাত- কি বলছো কি তারা আমি কিছু বুঝতে পারছি না।

তারা- তাই! কিছু বুঝতে পারছেন না? (তাচ্ছিল্য হেসে)

রাত- প্লিজ ক্লিয়ার করে বলো কি বলছো?

তারা- বাদ দিন।

রাত- বাদ দিব কেন? প্লিজ ক্লিয়ার করে বলো।

তারা- বলছি তো কিছু না।

রাত- দেখো তারা এবার কিন্তু আমার রাগ উঠছে। বলো কি বলতে চেয়েছিলে? আমার সাথে কেন এমন করছো? কি করেছি আমি? স্পিক আপ ডেম ইট। স্পিক আপ।(রেগে)

তারা- কি বলবো আমি হ্যা? কি বলবো? আপনার আর এনি আপুর রাসলীলা বলবো? (দ্বিগুণ রেগে)

রাত- মানে? কিসের রাসলীলা?(অবাক হয়ে)

তারা- ওহ তাই? কিসের রাসলীলা? আপনি বুঝতে পারছেন না না? আচ্ছা তাহলে শুনুন। আপনার আর এনি আপুর রাসলীলা। আর আমি তা নিজের চোখে দেখেছি আপনার বার্থডে পার্টির দিন। কি করে কিস করছিলেন, তারপর জড়িয়ে ধরছিলেন আর শেষে আই লাভ ইউ বলছিলেন।

রাত- মানে? কি বলছো তুমি এসব? মাথা কি খারাপ হয়ে গেছে তোমার? পাগল হয়ে গেছো তুমি? আর ইউ আউট অফ ইউর মাইড?(রেগে)

তারা- আমি ঠিকি বলছি। যা দেখেছি তাই বলছি। অস্বীকার করতে পারেন আপনি আপনার বার্থডে পার্টির দিন হোটেলের গার্ডেনে……(তারার গলা ধরে এলো।)

রাত- বিশ্বাস করো তারা ওইদিন এমন কিছুই হয় নি। তুমি ভুল দেখেছো। আমার কথাটা শুনো। আমাকে এক্সপ্লেইন করতে দাও। (অশান্ত গলায়)

তারা- আমি আর কিছু শুনতে চাই না। না শুনার তা আমি শুনেছি আর যা দেখার তাও আমি নিজের চোখেই দেখেছি। ছাড়ুন আমাকে। যেতে দিন।

রাত- নো। তোমাকে আমার কথা শুনতেই হবে। তুমি একটা ভুল ধারণা নিয়ে বসে থাকবে তা তো হবে না। তার উপর আমার ক্যারেক্টরে আংগুল তুলবে তা আমি কিছুতেই মেনে নিব না। জাস্ট ওয়েট এ মিনিট।(বলেই তারাকে ছেড়ে কিছুটা দূরে গেল। আর কাকে যেন ফোন দিয়ে কি পাঠাতে বলল।)

আবার তারার কাছে এসে তারাকে কোলে তুলে নিল।

তারা- কি করছে আপনি কোলে নিলেন কেন? নামান আমাকে। নামান বলছি।(ছোটাছুটি করে)

রাত- একটা কথা বললে এখনি ছেড়ে দিব। (বলেই হাতটা একটু আগলা করতেই তারা তাড়াতাড়ি ভয়ে চোখ বলেন বন্ধ করে রাতের গলা জড়িয়ে ধরল।)

তারার অবস্থা দেখে রাত বাকা হেসে আবার হাটা শুরু করল। তারপর তারাকে খাটে বসিয়ে দিয়ে সে নিচে ফ্লোরে বসে তারার হাত দুটো মুঠোর মধ্যে নিয়ে নিল।

রাত- বিশ্বাস করো তারা তুমি যা দেখেছো সব ভুল। ওই দিন যখন তোমাকে আমি দাড় করিয়ে রেখে সবাইকে বিদায় জানাতে গিয়েছিলাম তখন তোমার কাছে ফিরে আসার সময় এনির সাথে দেখা হয়। এনি ভিষণ জোরাজোরি করছিল তার নাকি কি বলার আছে। আর সে বেশি সময় নিবে না। আমিও তাই তাকে বলতে বললাম। সে বলল ওখানে অনেক শব্দ বাগানে গিয়ে বলবে। আমি রাজি না হলে ও কান্না কাটি শুরু করে দেয়। উপায় না পেয়ে গেছিলাম ওর সাথে। কিন্তু কিছু বলছি না দেখে চলে আসতে নিলেই ও আটকে দেয়। আর বলে ওর চোখ কি যেন পড়েছে আর প্রচন্ড জ্বালা করছে। আমি পানি এনে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু ও না করে দিয়ে বলল ফু দিতে। আমিও উপায় না পেয়ে তাই করলাম আর তুমি……….থাক বাকিটা না হয় তুমি নিজের চোখেই দেখে নাও।(বলেই নিজের ফোনটা এগিয়ে দিল তারার দিকে)

তারা ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে একটা ভিডিও। ভিডিওটা প্লে করতেই ওইদিনের সবকিছু সে দেখতে পেলো। আসলে ভিডিওটা বাগানের সিসিটিভি ফুটেজ।

তারা নিজের ভুল বুঝতে পেরে কান্নায় ভেঙে পড়ল। সে কি করে পারল রাতকে ভুল বুঝতে। কি করে? সে একবার জিজ্ঞেস করলেই তো পারতো রাতকে। কিন্তু সে তা না করে উল্টো রাগ করে নিজেও কষ্ট পেল আর রাতকেও কষ্ট দিল। ভেবেই আরো কান্নায় ভেঙে পড়ে।

রাত তারার কান্না সহ্য করতে না পেরে তারাকে নিজের সাথে জড়িয়ে নিল। তারাও রাতকে আঁকড়ে ধরল।

রাত- কাদছো কেন? এখানে কাদার কি আছে? তুমি যদি আগেই আমাকে এ বিষয়ে বলতে তাহলে এতোকিছু হতোই না। প্লিজ এখন কেদো না। আমার কষ্ট হচ্ছে প্লিজ।(তারার চোখ মুছে কপালে একটা ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে)

তারা- আ আমি ক কি করে প পারলাম এ এমনটা ক করতে? ক কি করে প পারলাম? কতটা ক কষ্ট দ দিয়েছি আমি আ আপনাকে।(কেদে কেটে ফুপিয়ে)

রাত- এখন তো সব ঠিক হয়ে গেছে না? তাহলে? তাহলে কাদছো কেন? তোমার না রাঙামাটি আসার খুব শখ ছিল? তাহলে ইঞ্জয় করো। আর কান্না করবে না প্লিজ। তাহলে কিন্তু আমিও কেদে দিব।(বাচ্চা ফেস করে)

রাতের রিয়েকশন দেখে তারা হেসে দিল। তারপর চোখ মুছে নিল।

রাত- যাক বাচ্চা বউ হেসেছে তাহলে।(হেসে)

তারা আবার রাতকে জড়িয়ে ধরল।
#ভালোবাসার_স্পর্শানুভূতি
#রাইমা_মিমি
#পর্ব_৩০(শেষ)

বাইরে রিমিঝিমি বৃষ্টির ধ্বনি। যা পরিবেশকে এক অন্যরকম রুপের সজ্জিত করছে। কারো কাছে এটা বিরক্তির অনুভূতি তো কারো কাছে এটা রোমান্টিক অনুভূতি ছন্দ। তার মতো মধ্যে এই একজোড়া স্বামী স্ত্রী মিশে আছে তাদের #ভালোবাসার_স্পর্শানুভূতি তে। এমনভাবে জড়িয়ে আছে একজন আরেকজনের সাথে যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবে।

এদিকে ক্রমাগত যে কারো ফোন বেজেই চলেছে সেদিকে কারো খেয়াল নেই। তারা তো তাদের অনুভূতিকে অনুভব করায় ব্যস্ত।

তারা- এই ফোন বাজচ্ছে আপনার।(রাতকে ডেকে)

রাত- বাজুক।(ভাবলেশহীন হয়ে)

তারা- এতোবার ফোন করছে হয়ত কোনো দরকারী হবে। দেখুন না ধরে।

রাত- দিলে তো মুডটা নষ্ট করে! আর এই ফোন বাজার আর সময় পেল না। হুহ।(বলেই তারাকে ছেড়ে উঠে দাড়াল।)

রাত ফোনটা হাতে নিতে নিতেই কেটে গেছে। রাত ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে ১৫টা মিসকল। তাও তার বাবার ফোন থেকে। এতোগুলো ফোন দেখে রাত ঘাবড়ে গেল।

রাত- এতোগুলো কল! কারো কিছু হয় নি তো? মা মা ঠিক আছে তো?(মনে মনে)

তারা- যাহ কেটে গেল? তা কে ফোন করেছে?

রাত- বাবা।

তারা- ওহ আচ্ছা। কিহ! আংকেল? এতোরাতে? কেন? কারো কি কিছু হয়েছে? কি হলো বলছেন না কেন?

রাত- কি করে বলব তারা? তুমি যেখানে আমিও তো সেখানেই তাই না? তাহলে আমি কি করে জানব।

তারা- একদম মূর্খের মতো কথা বলবেন না। হাতে ফোন আছে। ফোন করে জেনে নিন। তাহলেই তো হয়।

রাত- হ্যা তুমি বললে আমি জানলাম। না হলে তো আমি জানতামই না।(ব্যাঙ্গ করে)

তারা- হুহ। (রেগে)

রাত তারার দিকে খেয়াল না দিয়ে ফোন দিল তার বাবাকে। রিং হওয়ার সাথে সাথেই ফোন রিসিভ হলো।

রাত- হ্যালো বাবা। কি হয়েছে? এতো বার কল দিচ্ছিলে কেন? কি হয়েছে? সব ঠিক আছে তো? মা ঠিক আছে? কি হলো বলছো না কেন?(উত্তেজিত হয়ে)

বাবা- আমাকে বলতে তো দিবি।

রাত- হ্যা বলো।

বাবা- তারা মামুনিকে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা এখন এহসানদের বাড়িতে আছি। তুমি কোথায় আছো? তাড়াতাড়ি চলে এসো এখানে। তোমার তানিয়া আন্টি মেয়ের চিন্তায় বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। অনেক দুর্বল হয়ে গেছে। এহসান উপর থেকে স্টং দেখালেও আমি জানি ও ভিতরে ভিতরে চিন্তায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। তুমি তাড়াতাড়ি এখানে চলে এসো। আমাদের এখন তাদের পাশে দাড়াতে হবে। তারা মামুনিকে খুজে বের করতে হবে। ওরা পুলিশকে জানিয়েছে। তুমি বরং তোমার সোর্স লাগাও।

তানিয়া আর এহসানের কথা শুনে রাতের খারাপ লাগছে। সে নিজের জন্য তারার বাবা মা কে কষ্ট দিচ্ছে। তাদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। মেয়ের চিন্তায় তারা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। ভেবেই রাতের অনুতাপ হতে লাগল। কারণ এহসানই একসময় তাকে কাধে নিয়ে ঘুরে বেড়াত। চকলেট, আইসক্রিম কিনে দিত। তানিয়া তাকে খাইয়ে দিত। মায়ের থেকেও বেশি আদর করত। আর আজ তাদেরই সে কষ্ট দিচ্ছে। ভেবেই বুকটা ফেটে যাচ্ছে তার। তাই সে ঠিক করল সবটা সবাইকে জানাবে। এতে টেনশন কিছুটা হলেও কমবে। আর কালকেই তারা ফিরে যাবে। তারপর তানিয়া আর এহসানের থেকে সম্মতি নিয়ে তারাকে ঘরে তুলবে।

রাত- বাবা আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।

রায়হান- এখন কথা শুনার সময় নেই। তুমি তাড়াতাড়ি এসো।

রাত- বাবা এটা তারাকে নিয়ে।

রায়হান- ত তারাকে নিয়ে ম মানে?(অবাক হয়ে)

রাত- হ্যা তারাকে নিয়ে। বাবা আসলে তারা আমার সাথে আছে।

রায়হান- ওয়াট? কি বলছো কি তুমি?(অবাকের শীর্ষতে গিয়ে)

রাত- আমি ঠিকি বলছি বাবা। তারা আমার সাথে আছে আর আমরা এখন রাঙারাঙামাটি আছি।

রায়হান- কিন্তু কেন? কেন এমন করেছো তুমি? কেমন আছে তারা? ওর কিছু কর নি তো?(উত্তেজিত হয়ে)

রাত- তারা ঠিক আছে। একদম সুস্থ আছে।

রায়হান- কিন্তু এমনটা করার কারণ কি রাত?(গম্ভীর হয়ে)

রাত- বাবা তুমি কারণ জিজ্ঞেস করছো! সিরিয়ালি! তুমি না ওই বাড়িতে আছো তুমি দেখে বুঝতে পারছো না কি কারণ?

রাতের কথায় রায়হান একটু থতমত খেয়ে গেল। তার মতে রাতের তার আর তারার বিয়ের কথা মনে থাকার কথা নয়। তাহলে? তাহলে কি বলছে রাত?

রায়হান- মানে?

রাত- নাটক করো না আমার সাথে। তখন আমি এতোটাও ছোট ছিলাম না যে আমার বিয়ের কথা আমার মনে থাকবে না। আমার খুব ভালো করেই মনে আছে তারার আর আমার বিয়ের কথা। তাহলে তুমিই বলো আমার বিয়ে করা বউয়ের আবার বিয়ে আমি কি করে হতে দেই। তুমি হলে পারতে?

রায়হান- তোমার সব মনে আছে?

রাত- থাকার কথা ছিল না বুঝি?

রায়হান- সব যখন জানোই তাহলে তো আর কিছু বলার নেই। তবে তুমি যে কাজটা করেছো একদম ঠিক করো নি। তাছাড়া এহসান এখন এ বিয়ে মানে না। কারণ ওই বিয়ের কোনো ভিত্তি নেই। আইনত কোনো কাগজপএ নেই……….

রায়হানকে আর বলতে না দিয়ে রাত বলল।

রাত- কে বলেছে নেই? সব আছে। ভিত্তি আছে তাও আইনত।

রায়হান- মানে?

রাত- এসে বলছি সবার সামনে।

রায়হান- তাড়াতাড়ি এসো।

রাত- আজকে তো অনেক রাত হয়ে গেছে। আজকে আর আসা সম্ভব নয়। কাল ভোরে রওনা দিচ্ছি।

রায়হান- আচ্ছা ঠিক আছে। সাবধানে এসো। (বলেই ফোন রেখে দিল)

তারা- কি বলল? বলুন না কি বলল?(উৎসুক হয়ে)

রাত- বলল বউমার জন্য অপেক্ষা করছি। সাথে করে নাতি নাতনি নিয়ে আসিস।(তারাকে লজ্জা দিতে)

তারা- যাহ বাজে কথা বলে।(লজ্জা পেয়ে)

রাত- বাজে না সত্যি বলছি। চল শুরু করি কাজ।(বাকা হেসে)

তারা- আব চুপ। বাজে কথা বন্ধ করুন আর বলুন।

রাত- কি আর বলবে। ওখানের অবস্থা বলল। মা বাবা এখন তোমাদের বাড়িতে।

তারা- মা বাপি কেমন আছে? আমার জন্য চিন্তা করছে না? মা তো হয়ত অসুস্থ হয়ে গেছে।(উত্তেজিত হয়ে)

রাত- রিলেক্স তারা সব ঠিক আছে। আমি সবটা বাবাকে জানিয়ে দিয়েছি। বাবা সবটা সবাইকে বলবে। হ্যা আন্টি একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছিল কিন্তু বাবা বলেছে এখন ঠিক আছে।

তারা- সব আমার জন্য। সব হয়েছে আমার জন্য। সব দোষ আমার। আমার জন্যই মা বাপি এতোটা কষ্ট পাচ্ছে। শুধু আমার জন্য।(কেদে)

রাত- রিলেক্স তারা কিছু তোমার জন্য হয় নি। তুমি কেন শুধু শুধু নিজেকে দোষ দিচ্ছো? যা করার তো আমি করেছি না? তাহলে দোষ কার? আমার তাই তো? তাহলে কেন তুমি তোমাকে দোষ দিচ্ছি?

তারা- আপনার কোনো দোষ নেই। আমি যদি আপনাকে ভুল না বুঝতাম তাহলে এমন কিছুই হতো না।(কেদে)

রাত- দেখো এখানে কারোর দোষ নেই। তোমার তো না ই। যা হয়েছে সব পরিস্থিতির চাপে পড়ে হয়েছে। তাই নিজেকে দোষ দেওয়া বন্ধ করো।(বলেই তারার চোখের পানি মুছে দিয়ে জড়িয়ে ধরল)

তারা- বাসায় যাবো।

রাত- কালকে সকালে।

তারা- না আমি এখনি যাবো।

রাত- তারা জেদ করো না। এখন অনেক রাত হয়ে গেছে। এখন এতোদূরের জার্নি করাটা সেফ না। তাই কালকে একদম ভোরের দিকে রওনা দিব। এখন শুয়ে পড়ো।(বলেই তারাকে কোলে তুলে নিল)

তারাকে নিয়ে এসে বিছানায় শুয়ে দিল। তারপর সেও তারার পাশে শুয়ে তারাকে নিজের কাছে টেনে নিল। তারা পরম আবেশে মাথা রাখল রাতের বুকে। আর রাত দুহাতে জড়িয়ে নিল তার প্রিয়তমাকে। তারার কাছে এ যেন এক স্বর্গীয় অনুভূতি। রাতের বুক যেন তার পরম শান্তির স্থান। এর থেকে শান্তির স্থান যেন আর কোথাও নেই। এদিকে অবশেষে প্রিয়তমাকে নিজের করে পেয়ে একটা তৃপ্তির হাসি দিল রাত। তারপর আরো আবেশে জড়িয়ে নিয়ে পাড়ি জমাল ঘুমের দেশে।

সকাল ১০টা। তারাদের বাড়ির লিভিংরুমে ছোট খাট একটা আদালত বসেছে। যার আসামী রাত আর বিচারক সবাই।

একপাশে দাড়িয়ে আছে রাত আর রাতের পরিবার আরেরক পাশে তারাকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে আছে তানিয়া আর এহসান। মেয়েকে ফিরে পেয়ে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে তারা। আরেক পাশে দাড়িয়ে সব নিরব দর্শকের মতো দেখছে সামির আর তার পরিবার।

এহসান- তোমার সাহস কি করে হলো আমাকে মেয়েকে কিডন্যাপ করার? হাউ ডেয়ার ইউ?(গর্জে উঠে)

রাত- রিলেক্স শ্বশুরমশাই এতো হাইপার হবেন না। নাহলে আবার ভিপি বেড়ে যাবে।(মজা করে)

এহসান- মজা হচ্ছে আমার সাথে? আর কে শ্বশুর? কোথাকার শ্বশুর?(রেগে)

রাত- কেন আপনি শ্বশুর আমার শ্বশুর।

রায়হান- আহ রাত চুপ করো। দেখ এহসান যা হবার হয়ে গেছে। এতো হাইপার হোস না। তাছাড়া অন্যকেউ তো নেই নি ওর বর ই তো নিয়ে গেছে তাই না?

সামির- ওয়েট ওয়েট ওয়েট বর মানে? কে বর? কার বর?

রাত- কেন? আমাকে কি তোর চোখে পড়ছে না? আমি বর। তারার বর।

সামির- মানে কি বলছিস কি এসব? আংকেল কি বলছে ও এসব? বর মানে?

এহসান- আব…….

এহসান কিছু বলতে যাবে তার আগে রাত বলল।

রাত- উনাকে কি জিজ্ঞেস করছিস? আমি বলছি সব।

পরে রাত সবটা বলল সামিরকে তাদের ছোটবেলার বিয়ের কথা। সবশুনের সামিরের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। সামিরের বাবা চিল্লানি শুরু করে দিল। তাদের এমনভাবে অপমান করার জন্য। সামির নিজেকে সামলে তার বাবাকে সামলে বলে উঠল।

সামির- ওটা ছোটবেলার বিয়ে। ওই বিয়ের কোনো ভিত্তি নেই। কোনো কাবিননামা নেই। এই বিয়ে কেউ মানবে না।

এহসান- হ হ্যা। ওই বিয়ের কিছুই নেই। তাই ওই বিয়ে আমি মানি না। আমি আমার মেয়েকে সামিরের সাথেই বিয়ে দিব।

সব শুনে তারা কেদে দিল। তার বাবা ওই বিয়েটা মানে না। মানে রাতকে মানে না। সামিরের সাথে বিয়ে দিতে চায়। যা সে কিছুতেই মানতে পারবে না। আবার বাবার কথার বিরুদ্ধেও যেতে পারবে না। ভেবেই আরো জুড়ে ফুপিয়ে উঠে।

রাত- আরে সবটা না শুনেই সবাই রায় দিচ্ছে। আরে প্রথমে সবটা শুনুন তো। তারপর না রায় দিবেন।

এহসান- কিছু শুনার নেই আমাদের। যাও বেড়িয়ে যাও।

রাত- তা বললে তো হবে না। আর যেতে হলে তো একা যাবো না। বউ নিয়েই যাবো।

এহসান- কিসের বউ। তোমাদের বিয়ের কোনো কাবিননামা নেই। তাই ওই বিয়েটা কোনো বিয়ে নয়।

রাত- কে বলেছে নেই?

এহসান- ম মানে?(অবাক হয়ে)

রাতের কথা শুনে তারা ছাড়া সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে রাতের দিকে। যেন রাত অবিশ্বাস্য কিছু বলে ফেলেছে।

রাত- হ্যা। কে বলে আমাদের বিয়ের কাবিননামা নেই। আমাদের বিয়ের কাবিননামা আছে। আর তাতে আমাদের সাইনও আছে।

এহসান- এটা কি করে সম্ভব?

রাত- এভ্রিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ এন্ড ওয়ার। তাই আমিও কাবিন করে নিলাম। আমি জানতাম আপনারা এমন করবেন। তাই আগে থাকেই সব করে রেখেছিলাম। নাও সি। রনি।

রনি- জ্বি স্যার?

রাত- পেপারস গুলো দাও উনাদের।

রনি- জ্বি স্যার।

রনি সবাইকে পেপার গুলো দেখালো। পেপার দেখে সবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। তারা মাথা নিচু করে কেদেই যাচ্ছে।

এহসান- এটা। এটা কি করে সম্ভব? কি করে?

রাত- সবই সম্ভব।

এহসান- তুমি। তুমি আমার মেয়েকে ভয় দেখিয়ে সাইন করিয়েছো না? তারা বল। বল মা ও তোকে ভয় দেখিয়ে সাইন করিয়েছে না?

তারা এখনো মাথা নিচু করে আছে। আর চোখ দিয়ে অশ্রুকণা অবিরামভাবে ঝড়ে যাচ্ছে।

রাত- আমি ওকে ভয় দেখাই নি। ও আমাকে ভালোবেসে এখানে সাইন করেছে।

এহসান- চুপ একটা কথাও শুনতে চাই না আমি তোমার মুখ থেকে।(রেগে)

সামির- আংকেল। আংকেল আপনি শান্ত হন আমি দেখছি।

সামির তারার সামনে গিয়ে দাড়াল।

সামির- ভালোবাসো রাতকে তাই না?

তারা এখনো মাথা নিচু করে কেদে যাচ্ছে।

সামির- বলো। বাকিটা আমি দেখে নিচ্ছি।

তারা অবাক হয়ে সামিরের দিকে তাকালো। দেখলো সামির অশ্রুসিক্ত নয়নে মুচকি হেসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। এ হাসিতে নেই কোনো অন্যায়।

সামির- বলো। ভালোবাসো রাতকে?

তারা মাথা নেড়ে হ্যা জানালো।

এহসান আর তানিয়া অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তারার দিকে।

সামির- ব্যাস আর কিছু বলতে হবে না।

সামির এহসানের সামনে এসে দাড়াল।

সামির- আংকেল বিয়েটা আপনারাই দিয়েছিলেন ওদের সেটা ছোটবেলা হোক আর বড়বেলা। তখন ওরা কিছুই বুঝতো না। তবে আপনারা তো বুঝতেন। তাও দিয়েছিলেন। আর এখন ওরা একে অপরকে ভালোবাসে। আর এ ভালোবাসা অন্যায় নয় বরং স্বামী স্ত্রীর পবিএ ভালোবাসা। তাই বলছি কি আংকেল এখন যখন আইনি ভাবেও বিয়েটা হয়ে গেছে ওদের বরং মেনে নিল। তাছাড়া আপনারাও তো ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। ভালোবাসার মানুষকে ছাড়া থাকা কেমন কষ্ট আপনারা ঠিকি জানেন। তাছাড়া তারার ভালোর জন্যই না হয় মেনে নিন। অন্য কোথাও বিয়ে দিলে ও যে জীবন্ত লাশ হয়ে যাবে। আর ভালোবাসার মানুষের কাছে থাকলে সারাদিন জীবন হাসিখুশি থাকবে। আমি জানি আপনি আপনার মেয়ের খুশির জন্য সব করতে পারেন। আশা করি ওদের মেনেও নিবেন।(বলেই এহসানের সামনে থেকে চলে এলো)

সামির রাতের সামনে এসে বলল।

সামির- সবকিছুই তুই আগে নিয়ে নিস আমার থেকে। মেয়েটাকেও ছাড়লি না? যাই হোক ভালো থাকিস আর তারাকে ভালো রাখিস।(হেসে)

তারার সামনে এসে।

সামির- এই যে পাপার প্রিন্সেস। ভালো থেকো ভালোবাসার মানুষটার সাথে। শুভ কামনা দুজনের জন্যই।(অশ্রুসিক্ত নয়নে হেসে)

বলেই সামির তার পুরো পরিবার নিয়ে চলে গেল।

রায়হান- দেখ এহসান। যা করার আমরাই তো করেছিলাম। মেনে নে ওদের।

অনিমা- ভাই আমি আমার আমানত নিয়ে যেতে চাই ভাই। না করবেন না।

তানিয়া- দেখো দোষ ওদের নয়। ওরা ভালোবাসে একে অপরকে। আমরাও তো ওদের একসাথে দেখতে চেয়েছিলাম তাই না? এখন যখন সময় এসেছে তখন আর না করো না। রাজি হয়ে যাও।

সবার কথা শুনে এহসান উঠে দাড়াল তারপর তারার কাছে গিয়ে তারার হাতটা ধরে রাতের সামনে নিয়ে এলো।

এহসান- একটা মাএ মেয়ে আমার। কখনো কোনো অভাব বা কষ্ট বুঝতে দেই নি। কি চাওয়ার আগেই তা এনে দিয়েছি সব। ছোটবেলায় তোমাদের ববন্ধুত্ব দেখে বিয়ে দিয়ে ছিলাম তোমাদের। চেয়েছিলাম আমাদের সম্পর্কটাও আরেক সম্পর্কে যুক্ত হোক। সব ভালোই ছিল কিন্তু তারার তোমাকে ভয় পাওয়া আর তোমার অসীম রাগ দেখে ভয়ে তারাকে তোমার থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিলাম। এখন যখন আমার তারাই তোমাকে চায়। তাহলে আমার আর কোনো আপত্তি নেই। শুধু একটা কথাই বলব এই হাত কখনো ছেড়ো না।(তারার হাত রাতের হাতে দিয়ে)

রাত- শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত ছাড়ব না। কথা দিচ্ছি।

তারা ঝাপটে ধরে তার বাপিকে। কতটা ভালোবাসে তার বাপি তাকে ভেবেই খুশির অশ্রু ছেড়ে দেয় চোখ দিয়ে।

রায়হান- বিয়ের আমেজ তো আছেই বাড়িতে তাহলে বরং আমরা আজকেই বউ ঘরে নিয়ে যাই। কি বলিস তুই?(হেসে)

এহসান- অবশ্যই।(হেসে)

অবশেষে সব বাধা পেরিয়ে আহমেদ ভিলার বউ হয়ে এলো তারা। সারাটা রাস্তা কেদে কেদে এসেছে মা বাপি জন্য।

অনিমা সুন্দর করে নতুন বউ বরণ করে ঘরে তুলে।

বাড়ির নিয়ম অনুযায়ী বউকে কোলে তুলে নিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে রাত। তারপর তারাকে সোফায় বসিয়ে দেয় রাত।

হুট করেই কেউ পিছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরে রাতকে। আকস্মিক ঘটনায় চমকে গেল সবাই।

এনি- ফাইনালি ইউ আর বেক রাত বেইবি।(ন্যাকামি করে)

এনিকে দেখে সবার মাথায় আগুন ধরে গেল। কারণ এনির কাজ রাত সবাইকে জানিয়েছে।

তারা নিজের স্বামীর সাথে অন্যমেয়ের জড়িয়ে থাকা সহ্য করতে না পেরে কেউ কিছু বলার আগেই উঠে গিয়ে এনিকে রাতের থেকে ছাড়িয়ে ঠাস করে একটা চড় মারল।

এমন কাজে সবাই ভ্যাবাচেকা খেয়ে তারার দিকে তাকিয়ে রইল। রাতের তো মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়ে। তবে মনে মনে খুশিও হয়েছে।

অনিমা- একদম ঠিক হয়েছে। আরো একটা দে।

এনি- হু আর দা হেল ……..(সামনে তাকিয়ে দেখে তারা তাও বধু সাজে)

এনি- একি তারা তুমি এখানে? তাও এই সাজে? আর আমাকে চড় মারলে কেন?(রেগে)

তারা- তোকে চড়ের সাথে সাথে গোবরে গোসল করানোও উচিত। (রেগে)

এনি- মানে? এসব কি বলছো তুমি? আর এখানে কি করছো?

তারা- এখানে থাকবো না তো কই থাকবো তোর মাথায়?

এনি- মানে? কি যা তা বলছো?

তারা- আমার বাড়িতে ঢুকে আমাকেই বলছিস আমি যা তা বলছি। তোকে তো….(বলেই এনির দিকে তেড়ে যেতে নেয়।)

এনি ভয় পেয়ে কিছুটা দূরে সরে যায়।

এনি- ত তোমার বাড়ি মানে?

তারা- এই তুই মানে মানে বন্ধ করবি? না তোর চুল আমি সবগুলো ছিড়বো কোনটা? এটা আমার বাড়ি আমার স্বামীর বাড়ি। আমি মিসেস তারা রাত আহমেদ বুঝেছিস? এই এই তুই আমার স্বামীর পিছনে কি করিস? বের হ বের হ বলছি।

এনি- মানে? মিসেস তারা রাত আহমেদ মানে? ও কি বলছে রাত এসব?

রাত- ও ঠিকি বলছে। ও আমার বউ।

এনি- ননননা এ হতে পারে না। তুমি এমন কিছুতেই করতে পারো না। তোমার বিয়ে আমার সাথে হওয়ার কথা চলছে। তুমি ওকে কি করে বিয়ে করতে পারো না। না কিছুতেই পারো না তুমি কিছুতেই না।

রাত- কথা চলছে মানে? কবে থেকে? আর ও আমার আজকে বিয়ে করা বউ নয়। ১৪ বছর আগের বিয়ে করা বউ।

এনি- মানে? কি বলছো এসব? না তুমি এমনটা করতে পারো না রাত। আমি তোমাকে ভালোবাসি। প্লিজ এমনটা করো না আমার সাথে।(রাতকে ধরে)

তারা- এই ছাড় আমার স্বামীকে। তোকে তো আমি….(তেড়ে এসে)

রাত- দেখ এনি তারা আমাকে সব বলেছে আর তুমি যা করেছো তার জন্য তোমাকে আমার পুলিশে দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু আংকেলের কথা ভেবে আমি কিছু করছি না। আশা করি এরপর থেকে আমাদের জীবনে আর আসবে না। এখন বেড়িয়ে যাও আমার বাসা থেকে।

এনি- না প্লিজ রাত এমন করো না। আমি মানছি আমি যা করেছি ভুল করেছি। কিন্তু যা করেছি সব তোমাকে পাওয়া জন্যই করেছি তাই না বলো। প্লিজ আমাকে তাড়িয়ে দিও না।

তারা- এ সহজে মানবে না। দাড়া তুই। (বলেই এদিক সেদিক খুজে একটা ঝাটা নিয়ে আসল)

এনি- এটা এনেছো কেন? ফেলো এটাকে এটা অনেক ময়লা। ফেলো বলছি।

তারা- এটা দিয়ে আজকে তোকে বিদায় করব। দাড়া তুই।(বলেই দৌড় দিল এনির পিছনে)

এনি তারার এমন রুপ দেখে রাতকে ছেড়ে দৌড়ে বেড়িয়ে গেল বাড়ি থেকে। সরম থাকলে আর এমুখো হবে না।

এতোক্ষণ সবাই অবাক হয়ে দেখছিল তারাকে। নতুন বউয়ের এমন অবতার মনে হয় আগে কেউ কখনো দেখে নি।

তারা- কি হলো সবাই এমন করে তাকিয়ে আছো কেন?

সাথে সাথেই হাসির রোল পড়ে গেল চারপাশে। সাথ্ব তারাও হেসে দিল।

রাতে,

ফুলে সজ্জিত রাতের বিছানায় বসে আছে তারা। যা এখন থেকে তারও বিছানা।

কিছুক্ষণ পরে দরজা ঠেলে ঘরে প্রবেশ করে রাত। তারা বিছানা থেকে মেনে পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে যায় রাতকে। রাত তারাকে থামিয়ে বুকে জড়িয়ে নেয়।

রাত- তোমার স্থান আমার পায়ে নয়, বুকে। যাও ফেস হয়ে ওযু করে এসো নতুন জীবনের শুরুটা আল্লাহকে ধন্যবাদ জানিয়ে করি।

তারপর তারা ফেস হয়ে ওযু করে সালাত আদায় করে নেয়।

রাত তারার হাত ধরে বিছানায় বসায়।

রাত- পূর্ণতা চাই আজ রাতের। পেতে চাই তোমায় পুরোটা। জানি অধিকার আছে আমার। তাও সম্মতি চাই তোমার পুরোটা। বলো পাবো কি আমি আমার অধিকার?

রাতের কথায় তারা লজ্জা পেয়ে রাতের বুকে মুখ লুকায়। রাত তার জবাব পেয়ে গেছে। সে তারাকে শুয়ে দেয়। আর তাদের ভালোবাসাকে পূর্ণ করার খেলায় মেতে উঠে। বাইরে বৃষ্টি পড়ছে। এ বৃষ্টি যেন আড়াল করে নিচ্ছে তাদের। প্রকৃতিও যেন তাদের মিলনে লজ্জা পেয়ে বৃষ্টি ভেজা আধার ডেকে দিচ্ছে। এমন করে বেচে থাকুক প্রতিটি ভালোবাসা। বেচে থাকুক ভালোবাসা, বেচে থাকুক আজীবন।

(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here