ভালোবাসার স্পর্শানুভুতি পর্ব ২৫+২৬

#ভালোবাসার_স্পর্শানুভূতি
#রাইমা_মিমি
#পর্ব_২৫

একটা অন্ধকার ঘরে হাত পা বাধা অবস্থায় চেয়ারে বসে আছে তারা। আস্তে আস্তে জ্ঞান ফিরছে তার। চোখ খুলে সবকিছু অন্ধকার দেখে ঘাবড়ে যায় সে। হুট করেই অজ্ঞান হওয়ার আগের কথা মনে পড়ে তার।

সবার সাথে ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও পার্লারে গিয়েছিল তারা। মনটা তার ভিষণ উদাস। কারণ আজকে তার মেহেন্দি অনুষ্ঠান, কাল গায়ে হলুদ আর পরশু বিয়ে। আর বিয়ে মানেই সে হয়ে যাবে অন্য কারোর। ভুলে যেতে হবে রাতকে। তার ভালোবাসাকে। বাচতে হবে একটা যান্ত্রিক রোবট হয়ে।

(অনেক মেয়ে আছে যারা নানা কারণে তাদের ভালোবাসার মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পায় না। কারণ বাবা মা আর মানসম্মানের দিকে চেয়ে চুপচাপ অন্যকে বিয়ে করে নিতে হয়। সমাজে যারা আমাদের মতো মধ্যবিত্ত তাদের সাথে সচরাচর এই ঘটনাটা বেশিই ঘটে। আর একবুক ভরা কষ্ট নিয়ে বিয়ে করে নেয় অন্য একজনকে। আর পরিনত হয় একটা যান্ত্রিক রোবটে। যার মধ্যে নিজের জন্য চাওয়ার মতো কিছুই থাকে না। যাকে বলে দেবদাস বা দেবদাসী আর কি🥴)

সাজানোর পর যখন বের হতে নেয় তখন ঘটে এক বিপত্তি। তারা বের হয়ে তার সাথে আসা কাউকেই খুজে পাচ্ছে না।

তারা- গেল কোথায় সব?(চিন্তিত সুরে)

তারা- এক্সকিউজ মি! এখানে যে কয়েকজন মহিলা বসেছিলে তারা কোথায়?(রিসেপশনিস্ট কে)

মেয়েটি- স্যরি ম্যাম বলতে পারছি না। হবেন হয়ত এখানেও কোথাও। আপনি বরং একটা কল করে দেখুন।

তারা- ইয়াহ রাইট।

তারা সবাইকে কল করল কিন্তু কেউ ফোন ধরল না। অনেক বার ট্রাই করল কিন্তু প্রত্যেকবারই একই কথা- “আপনি যে নাম্বারটিতে ফোন করেছেন তা এই মুহুর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। একটু পর আবার চেষ্টা করুন। ধন্যবাদ।”

এই মধুর সুরী কণ্ঠ তারার কাছে ভিষণ পরিমাণ বিরক্ত লাগছে। তাকে একলা ফেলে সবাই গেলটা কোথায়?

এদিকে, সবাই এতোক্ষণ রিসেশনে বসে বসে এক এক জন এক এক জনের ফোন গুতাচ্ছিল। হুট করেই একটা কথা শুনে সবাই সবার মনযোগ ফোন থেকে সরিয়ে যে ব্যক্তি কথাটা বলেছে সেই ব্যক্তির দিকে তাকালো। আকস্মিক এমন তাকানোতে আনিকা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। সে চিন্তা করতে লাগল সে কি এমন বলেছে যে সবাই এমন রিয়েকশন দিচ্ছে। সে তো শুধু বলেছে-

আনিকা- “দেশ সেরা নাম্বার ওয়ান বিজনেসম্যাস মিস্টার রাত আহমেদ দেশে ফিরেছেন আর আজ তিনি ********রেস্টুরেন্টে যাবেন মিটিং এর জন্য। তারপর তার কিছু ফ্যান-ফলোয়ারের সাথে দেখা করবেন। যারা তার সাথে দেখা করতে চান এটা তাদের জন্য বিশাল বড় সুযোগ। তাই দেরি না করে সবাই ঠিক ৫টার সময় ******রেস্টুরেন্টের সামনে থাকবে। উনি শুধু মাএ ৩০মিনিটই থাকবেন।”

ব্যাস এইটুকুই বলেছিল সে। তাহলে?

হুট করেই সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ল আনিকার উপর। আর জিজ্ঞেস করতে লাগল কোথায় আর কখন আসবে রাত।

আনিকা আহাম্মকের মতো কিছুক্ষণ সবার দিকে তাকিয়ে বলে দিল। সবাই ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল রাইট ৫টা বাজে। আর এখান থেকে ****রেস্টুরেন্ট যেতে ১০মিনিট লাগবে। তাও কি সামনে থেকে দেখতে তো পাবে। ভেবেই সবাই দিল ছুট।

আনিকা আহাম্মকের মতো আবারও তাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকল। যখন হুশ ফিরল সেও লাগাল ছুট।

সবাই গিয়ে পৌছাল ****রেস্টুরেন্টের সামনে। সামনে তাকিয়ে দেখে সেই পরিমাণে ভীড়। তারা সবাই একবার একে অপরের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে লাগালো ছুট। যে যেমনে পেরেছে ওমনেই কিছুটা সামনে গিয়েছে।

রিমা, তন্নিমা আর আনিকা তো রাতকে দেখে মহা অবাক। কারণ এই রাতের সাথে আগের রাতের চেহারা ছাড়া আর কোনো কিছুরই মিল নেই। আগের থেকেও অনেক হ্যান্ডসাম, গুডলুকিং, এটিটিউডওয়ালা হয়ে গেছে। সাথে কতগুলো গার্ডস। এককথায় একটা সাহেব সাহেব ভাব ফুটে উঠেছে তার মধ্যে।

তন্নিমা, রিমা আর আনিকা এক জন আরেকজনের কাছে না হওয়ায় তৎক্ষণাৎ তাদের মনোভাব একে অপরের কাছে প্রকাশ করতে পারল না।

এদিকে রাত তারার সাথে আসা সবাইকে এখানে একটা বাকা হাসি দিল। এই হাসির রহস্য কেউ বুঝতে না পারলেও ঘায়েল হয়ে গেছে এই হাসিতে অনেক মেয়ে। যা তাদের দেওয়া ফেস রিয়েকশন দেখেই বুঝা যাচ্ছে।

এদিকে বসে থাকতে থাকতে তারার কোমড় ধরে গেছে। তাই কখনো উঠে হাটাহাটি করছে তো কখনো একে ওকে ফোন দেওয়ার চেষ্টা করছে। একা একা যেতেও পারছে না। কারণ তার ব্যাগ ওদের কাছে তাই তার কাছে টাকা নেই। আর গাড়িটাও নিয়ে গেছে।

হুট করেই তার মাথায় চিন্তা এলো বাসায় ফোন করলেই হয়। কিন্তু পরক্ষণেই আবার চিন্তা করল শুধু তার জন্য সবাই বকা খাবে। তার থেকে বরং আরেকটু অপেক্ষা করা যাক।

দেখতে দেখতে ৩০মিনিট চলে গেল। কিন্তু এখনো কারোর আসার খবর নেই। পার্লারের লোকদের টাকা আগেই দিয়ে দিয়েছে বলে রক্ষা। নাহলে হয়ত এখন তাকে বেধে রাখত।

তারার ভিষণ পানি পিপাসা পেয়েছে। গলা যেন শুকিয়ে মরুভূমি হয়ে গেছে। আর এই মরুভূমিতে এখন একফোঁটা হলেও পানি পড়া দরকার নাহলে সে এই মরুভূমিতেই মরে যাবে। তাই উঠে দাড়িয়ে হাটা দিল পানির পানের উদ্দেশ্যে।

কিছুক্ষণ পর,

পানি পান করে যেই না গ্লাসটা রাখতে যাবে ওমনি তার হাতে পিপড়ার কামড়ের মতো কিছু একটা লাগে। তারা গ্লাসটা রেখে জায়গাটাতে চুলকাতে থাকে।

তারা- ধুর বাবা কি কামড়াল। কেমন করে কামড়াল মনে হচ্ছে যেন কোনো সুচ ডুকিয়ে দিয়েছে। উফ।(বলেই হাটা ধরল।)

কিন্তু আর যেতে পারল। মাথাটা কেমন যেন ভারী হয়ে আসছে তার। ভিষণ ঘুম পাচ্ছে সাথে। চোখটা যেন খুলে রাখা ভিষণ দায় হয়ে পড়ছে। আর সাথেই সাথেই তলিয়ে গেল ঘুমে। আর পড়ে যেতে নেয়। সাথে সাথে কেউ ধরে ফেলে। ধরে থাকা ব্যক্তিটার মুখে বাকা হাসি। এই হাসিটুকুই দেখার ভাগ্য হলো তারার। আর কিছু দেখতে পারল না।

লোকটি হাসির রেখে আরো ভালো করে টানল। তারপর তারাকে কোলে তুলে হাটা দিল বাইরের উদ্দেশ্যে।

তারাকে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই সবাই এসে উপস্থিত হলো পার্লারে। খুজ নিয়ে জানতে পারল তারার সাজ শেষ। আর সে এতোক্ষণ তাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। তারপর কোথায় যেন গেল আর দেখে নি।

সবাই কথাটা শুনে চিন্তায় পড়ে গেল। সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়ে তারাকে খুজতে লাগল। কিন্তু কেউ পেল না। এদিকে এহসান বারবার সবাইকে ফোন দিয়ে যাচ্ছে। ভয়ে কেউ তুলার সাহস পাচ্ছে না। কিন্তু ধরা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। শেষে অনেক ভেবে ওদের মধ্যে একজন ধরে বলল তারাকে কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না।

হুট করেই দরজা খুলার শব্দের হুশ ফিরে তারার। অন্ধকারে তারা ভয় পায় কিন্তু ভাবনায় থাকার কারণে সে অনুভবই করে নি অন্ধকারকে। হুট করেই অন্ধকার ঘরে দরজা খুলার পরে দরজা দিয়ে একচিলতে করে আলোকরশ্মি ঘরে প্রবেশ করতে থাকে। আস্তে আস্তে তা আরো বৃদ্ধি পেতে থাকা। দরজা পুরোটাই খুলার পরে ঘর অনেকটাই আলোময় হয়ে ওঠে। আবার সাথেই সাথেই দরজাটা অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যায়। সাথে সাথে আবার নেমে আসে অন্ধকার। এই অন্ধকার যেন তারার ভিষণ ভয় করছে। অন্ধকার একটা ঘরে সে একা আছে সাথে অচেনা একটা মানুষ।

তারা- ক ক কে? ক ক কে ও ওখানে? ক কি হ হলো ব বলছেন ন না কেন? আ আর আমাকেই বা এ এখানে আ আনা হ হয়েছে কেন? ক কি হলো?(ভয়ে ভয়ে)

হুট করেই ঘরে আলো জ্বলে উঠল। আর তারা সামনে তাকিয়ে যা দেখল তাতে সে অবাকের শীর্ষএ, সাথে প্রচন্ডভাবে ভয়েও আছে।

কারণ সামনে একটা চেয়ারে বেশ আরাম করে বসে আছে রাত। চেয়ারে সুন্দর করে হেলান দিয়ে পায়ের উপর পা তুলে কপালে এক আংগুল দিয়ে স্লাইড করছে সে। যারা রাতকে চিনে তারা এ অবস্থায় রাতকে দেখলে নির্গাত এতোক্ষণে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যেত।

রাত- ওয়েলকাম টু মাই হেল।(গম্ভীর সুরে চোখ এখনো বন্ধ রেখে)

কথাটা শুনে তারার ভয়ে হাত পা জমে যাওয়ার মতো অবস্থা। তার হাত পা অটোমেটিক কাপতে শুরু করেছে। দেখে কোনো খিচুনি রোগের রোগী মনে হচ্ছে।

রাত- কেমন লাগল আমার নতুন অবতার?নাইচ না?(শান্ত স্বরে)

তারা- আ আ আপ প পনি ন।(তুতলে)

রাত- আ আ আমি ম।(ভ্যাঙ্গ করে)

তারা তো চুপ হয়ে আছে। সে কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। এই লোককে সে দেখবে তাও এভাবে কখনো ভাবে নি সে।

রাত- কি হলো আটকে গেল কথা? কথা নেই মুখে? আহারে এমন কি করে হলো? আজ না তোমার মেহেন্দি? মেহেন্দিতে যদি মানুষ শুনে যে মেয়ে বোবা হয়ে গেছে তাহলে কি হবে? আহ হয়ত বিয়ে ভেঙে দিব।(ঠাট্টার সুরে)

তারা এতোদিন পরে রাতকে দেখে অবাক হলেও মুহূর্তেই তার অতীতের দেওয়া ধোকার কথা মনে পড়ে গেল। সাথে এতোদিনের অভিমানও। তাই সে রাগে অভিমানে মুখ ঘুড়িয়ে রাখল।

রাত- আহ হা আনার কালি মুখ ঘুড়িয়ে নিল। খুব খারাপ খুব খারাপ। আনার কালির এমনটা করা একদম উচিত হয় নি। বিশাল বড় ভুল করেছে সে। এতো বড় ভুল করেছে তো শাস্তি হওয়া তো দরকার। তাই না?(সাইকো টাইপ কথা)

তারা চুপ। কারণ তারা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে রাত তার মুখ ঘুড়িয়ে নেওয়া নিয়ে নয় বরং তার বিয়ে করা নিয়ে কথা বলছে। তারার বুঝতে পারার আরেকটা সহজ কারণ হলো রাতের দেওয়া তাকে শেষ ম্যাসেজ। যা খুব স্পষ্ট ভাষায় তাকে হুমকি স্বরূপ ধমকি দেওয়া হয়েছিল।

“ম্যাসেজ- চলে যাচ্ছি দূরে। নয়কো মনেরও দূরে। থাকছি না পাশে শারীরিক ভাবে। তবে থাকবো সবসময় তোমার পাশে। চাইলেও পারবে নাকো ভুলে। দেব নাকো ভুলে যেতে। ফিরে এসবো একদিন যা হবে তোমার শেষ দিন। মরণে নয় প্রেম বিরহে। যদি ভাবো করবে বিয়ে অন্যকে মনে রেখো ছাড়বো নাকো তোমাকে। আকাশ পাতাল সব চিরে বের করে প্রথমে শেষ করবো তোমাকে তারপর নিজেকে। চলে যাচ্ছি কলি ভেবো না একদম ছেড়ে যাচ্ছি। ফিরবো আমি ফিরবো। ঠিক তোমার কাছেই ফিরব”

এই ছিল ছোট করে একটা হুমকিওয়ালা ধমকি ম্যাসেজ। যআ ভেবেই অন্তর আত্মা কেপে উঠছে তারার। তাও একটা লম্বা শ্বাস নিল। যাতে রাতকে কিছু বলতে পারে। সে চায় না সে রাতের সামনে দুর্বল হয়ে পড়ুক। তাই একটা লম্বা করে শ্বাস নিল। আর রাত তখনো বলছিল।

রাত- কি শাস্তি দেওয়া যায় কি শাস্তি দেওয়া……….

আর শেষ করতে পারল না তার আগেই তারা তাকে থামিয়ে বলতে শুরু করল।

তারা- আমাকে কেন এখানে এনেছেন হ্যা? কেন এনেছেন? জানেন না আজ আমার মেহেন্দি অনুষ্ঠান। সবাই হয়ত চিন্তা করছে আমার জন্য। আমাকে যেতে দিন। সবাই হয়তো খুজচ্ছে আমাকে। লিভ মি। (হাত পা মুচড়ামুচড়ি করে খুলতে চেয়ে)

রাত- চিন্তা করছে?ও হ্যা। চিন্তা তো করছেই। কারণ কলি তো আবার তার বাপি প্রিন্সেস, মায়ের দুলালি আর সামিরের জানননন না?(সামিরের টুকু বলতেই আরো রেগে গেল।)

তারা- দেখুন……

আর বলতে না দিয়ে।

রাত- আচ্ছা? কি দেখবো?

তারা- উফ। আমাকে যেতে দিননন।

রাত- এতো সহজে? তাহলে এতো কষ্ট করে তোলে আনলাম যে? আমার বুঝি কষ্ট হয় না? আগে কষ্টের ফলের ওসল তুলি তার পর ভেবে দেখবো।

তারা- ম মানে?(ভয়ে)

রাত- আরে ভয় পাচ্ছো কেন?

তারা- ক কে ভ ভয় পাচ্ছে? ক কাকে ভয় পাচ্ছে?

রাত- কেন তুমি ভয় পাচ্ছো। আমাকে ভয় পাচ্ছো। দেখো তোমার কপাল দিয়ে ঘাম পড়ছে।( তারার কপালে হাত দিয়ে)

তারা মাথা সরিয়ে নিতে চায় কিন্তু বাধা থাকা অবস্থায় সরতে পারে না।

বাধা অবস্থায় এতো মোচড়ামুচড়ি মানে হুদাই এনার্জি লস। যা এখন তুমি করছো।

তারা- প্লিজ লিভ মি। যেতে দিন আমাকে। সবাই চিন্তা করছে আমার জন্য। মা বাপি চিন্তা করছে। হয়ত আমাকে না পেয়ে পাগল হয়ে গেছে তারা।

রাত- শুধু মা বাপি?

তারা- মানে?

রাত- মানে শুধু মা বাপি টেনশন করছে? আর কেউ না?

তারা- আর কেউ মানে?

রাত- আহ তুমি এতো বোকা নও যেমনটা তুমি প্রিটেন্ড করো। আই নো ইউ আর এন ইন্টেলিজেন্ট গার্ল। সো আমি জানি তুমি জানো আমি কার কথা বলছি।

তারার আর বুঝতে বাকি নেই রাত কার কথা বলছে। রাত যে তাকে বারবার ঠেস দিয়ে কথা বলছে তা তারা বুঝতে আর একবিন্দুও বাকি নেই।

রাত- কি হলো?চুপ কেন? হুম?

তারা- দেখুন আপনি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছেন। আর কেন করছেন এমন? যেতে দিন আমাকে। কেন নিয়ে এসেছেন আমাকে এখানে?

রাত- এখানে! মানে তুমি জানো আমরা কোথায় আছি?

তারা- মানে? কোথায় আছি আমরা?

রাত- ওহ থেংক গড। তুমি জানো না। নাহলে তো আমার পুরো প্ল্যানটাই নষ্ট হয়ে যেত।

তারা- মানে?

রাত- উফ তুমি বেশি প্রশ্ন করো। এতো প্রশ্ন করার দরকার নেই। আমি তোমাকে খুলে দিচ্ছি তুমি নিজেই দেখে নাও।

রাত আলতো করে তারার হাত পায়ের বাধন খুলে দিল। তারা হুট করে উঠে দাড়াতে চাইতেই ধপ করে পড়ে যেতে নেয়। অনেকক্ষণ যাবত একভাবে বসে থাকায় হাত পা অসার হয়ে গেছে। যা অবশ্য কিছুক্ষণ হাটা চলা করলেই ঠিক হয়ে যাবে।

তারা পড়ে যেতে নেয় দেখেই রাত দৌড় দিয়ে এসে তারাকে ধরে ফেলে। এ যাএায় বেচে গেছে তারা। নাহলে এখন পড়লে এতো বেশিই ব্যথা পেত যে কয়েকমাস বিছানা ছাড়তে পারত না।

রাত দিল একটা ধমক।

রাত- কি সমস্যা কি তোমার হ্যা? এমন বাদরের মতো লাফালাফি করছো কেন? এখনি তো পড়ে যেতে। তারপর ২০৬টা হাড় ভেঙে বিছানায় পড়ে থাকতে।(ধমক দিয়ে)

তারা আহাম্মকের মতো তাকিয়ে আছে। সে জীবনের প্রথম শুনছে এভাবে পড়ে গিয়ে শরীরের ২০৬টা হাড়ই ভেঙে যায়।

রাত- কি হলো আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছো কেন? আমার মুখে কি কমেডি সো চলছে যে তাকিয়ে আছো?

তারা- অনেকটা এমনই। (অনমনে বলে ফেলল।)

রাত- ওয়াট?

তারা- ন না কিছু না। ছাড়ুন আমাকে। ধরেছেন কেন আমাকে? ছাড়ুন বলছি। ছাড়ুন।

রাত- হুহ না ধরলে শরীরের হাড্ডি-গুড্ডি আস্ত থাকতো না।

তারা- তাতে আপনার কি?

রাত- আমারি তো সব।

তারা- মানে?(চোখ ছোট করে)

রাত- উফ আবার শুরু হয়ে গেছে টেপ রেকর্ড।

তারা- কি বললেন আপনি আমাকে?

রাত- আমি তোমাকে কখনো বললাম?

তারা- মাএই তো বললেন।

রাত- তুমি কি দেখবে বাইরে কি আছে?

তারা- কি আছে?

রাত- গিয়েই দেখ না আমার বউ।

তারা- এই কাকে বউ বলছেন হ্যা? কে আপনার বউ?

রাত- কেন? তুমি।
#ভালোবাসার_স্পর্শানুভূতি
#রাইমা_মিমি
#পর্ব_২৬

রাত- গিয়েই দেখ না আমার বউ।

তারা- এই কাকে বউ বলছেন হ্যা? কে আপনার বউ?

রাত- কেন? তুমি।

তারা- ফাইজলামি করছেন আমার সাথে? যেতে দিন বলছি আমাকে। যেতে দিন।(রেগে)

কপাট রাগ উঠে গেল তারার। এতোক্ষণ নিজের রাগটাকে কন্ট্রোল করে তারার সাথে একটু হাসি তামাশা করলেও রাগ তার ঠিকিই ছিল। আর এখন তারার দেখানো রাগ রাতের রাগের উপর আগুন ঘি ঢালার কাজ করেছে। যা তার চোখ মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে।

রাত- শান্তভাবে কথা বলছিলাম ভালো লাগল না না? আমার রাগটাই ভালোলাগে তোমার? দ্যান ওকে ফাইন, এখন থেকে রেগেই বলব। আর ভেবেছিলাম শাস্তিটা একটু পরে দিব। তোমাকে আগে একটু সময় দিয়ে নিব। কিন্তু না তোমাকে সময় দেওয়ার কোনো মানেই হয় না।

তারা- ক কি শ শাস্তি দিবেন আ আপনি? আর কিসের জন্য শাস্তি দিবেন আপনি হ্যা? কিসের জন্য? আর আমাকে শাস্তি দেওয়ার আপনি কে? হু দা হেল আর ইউ?(ভয় মিশ্রিত রাগ নিয়ে)

রাত- হু দা হেল আই এম না? ওকে তাহলে আমি কে আগে তাই ক্লিয়ার করে নেই।(কথাটা বলে রেগে চলে গেল)

তারা- আব আরে কোথায় যাচ্ছেন আমাকে ফেলে? নিয়ে যান আমাকে। আমি বাসায় যাবো। যেতে দিনন।(জুড়ে চিল্লিয়ে)

তারা- যাহ চলে গেল। এখন কি হবে? কি করে যাবো আমি? মা বাপি নিশ্চয় চিন্তায় পাগল হয়ে গেছে হয়ত। উফ সব জ্বালা আমার কপালে।(অশ্রুসিক্ত নয়নে)

মাহমুদ ভিলা,

তানিয়া মেয়ের শোকে কয়েকবার জ্ঞান হারিয়ে নেতিয়ে গেছেন। এহসান এখনো মেয়ের খবর না পেয়ে পাগলে মতো এখানে সময় সেখানে দৌড়াদৌড়ি করে হাপিয়ে উঠেছেন কিন্তু তাও মেয়ের কোনো খবর পাচ্ছেন না।

সামির মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। আর কি করবে সে তারাকে খুজতে কিছুই ভাবতে পারছে না। তারার টেনশনে মাথা কাজ করছে না তার।

এদিকে সবাই নানারকম বাজে কথা বলছে তারাকে নিয়ে। সমালোচকরা যা করে আর কি। কেউ কেউ বলছে “মেয়েকে জোর করে বিয়ে দিতে চেয়েছিল মনে হয় তাই মেয়ে পালিয়ে গেছে।” আবার কেউ কেউ বলছে “দেখো গিয়ে কার সাথে চক্কর ছিল মনে হয়। তার সাথেই পালিয়ে গেছে হয়ত। হুহ আজকালকার মেয়েরা বাবা মায়ের কষ্ট কোথায় বুঝে।” কেউ কেউ আবার শান্তনার সুরে নানারকম বিদ্রুপ করছে।

সবার এমন কথা শুনে তানিয়ার অবস্থা আরো খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সে বারবার বলছে “তার মেয়ে এমন নয়। তার মেয়ে এমন কিছুতেই করতে পারে না কিছুতেই না।”

আহমেদ ভিলা,

রায়হান- তোমার ছেলে কোথায় বলো তো?(অনিমাকে উদ্দেশ্য করে)

অনিমা- কি বললে? কি বললে তুমি? শুধু আমার ছেলে? শুধু আমার ছেলে ও? ওকে কি আমি আকাশ থেকে টুপ করে নিয়ে এসেছি নাকি? ও কি তোমার ছেলে নয়?হুহ।(কপাট রাগ দেখিয়ে)

অনিমার এমন আচমকা কথার প্যাচে জাপটে ধরায় রায়হান ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। সে তো শুধু কথার কথা বলেছে। তাতে এমন রিয়েক্ট করার কি আছে বুঝতে পারছে না সে। আর সে কখনই বা বলল যে রাত তার ছেলে নয়? এই মহিলার ভালো করেই কথাই বলতে পারে না বলে তার মনে হয়।

রায়হান- আব আমি কখন বললাম যে ও আমার ছেলে নয়?

অনিমা- ওই তো একটু আগে আমাকে বললে “তোমার ছেলে”। এমন ভাবে বললে মনে হলো ও তোমার ছেলে নয়, একা আমার ছেলে। হুহ।

রায়হান- তোমার সাথে কথা বলাটাই বৃথা বুঝেছো?

অনিমা- কে বলেছে আমার সাথে কথা বলতে হুহ।(বলেই মুখ বেকিয়ে চলে গেল)

রায়হান- খারুস মহিলা। হুহ।

হুট করেই রায়হানের ফোনে কল এলো।

রায়হান- এখন আবার কার ফোন।(ঘড়ি দেখে)

কারণ ঘড়িতে এখন রাত প্রায় ১০টা বাজে।

রায়হান ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে অচেনা নাম্বার। কপালে একটু চিন্তার ছাপ ফুটে উঠল রায়হানের। এসময় অচেনা নাম্বার কে হতে পারে ভাবেই ফোনটা রিসিভ করল সে।

রায়হান- আসসালামু আলাইকুম। কে?

এহসান- রায়হান রায়হান আমি আমি।(হন্তদন্ত হয়ে)

রায়হান- এ এহসান। তুই?(অবাক হয়ে)

এহসান- র রায়হান।(কেদে)

রায়হান- কি হয়েছে এহসান? তুই ফোন দিয়েছিস আমাকে তাও এতো বছর পরে তাও এতো রাতে। কি হয়েছে?(অবাক হয়ে)

এহসান- রায়হান তুই একটু আসতে পারবি। সবাইকে নিয়ে। মানে সবাইকে নিয়ে। প্লিজ আয় তাড়াতাড়ি। প্লিজ রায়হান তাড়াতাড়ি আয়।(বলেই কেটে দিল)

রায়হান- কিন্তু কে……হ্যালো এহসান হ্যালো হ্যালো। যা কেটে দিল।(ফোনটা হাতে নিয়ে)

রায়হান- কিন্তু এতো রাতে এহসান আমায় কেন ফোন করেছে? আর আমাদের যেতেই কেন বলল?(চিন্তা করতে করতে)

অনিমা- এই খাবার রেডি। খেতে এসো।(হাত মুছতে মুছতে রায়হানের দিকে এগিয়ে এসে)

কিন্তু রায়হানের কোনো জবাব নেই। সে এখনো তার চিন্তায় বিভোর। এহসান কেন এতোবছর পর ফোন দিল তাকে। তাও এতো রাতে। আর তার গলাটাই বা কেন এমন শুনাচ্ছিল? ভেবে পাচ্ছে না রায়হান।

অনিমা- এই কি হলো?(রায়হানকে ধাক্কা দিয়ে)

অনিমার ধাক্কায় রায়হানের হুশ ফিরে।

রায়হান- হ হুম?

অনিমা- কি হয়েছে? ওমন মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছো কেন এখানে? কেউ কি ফোন দিয়েছিল? হাতে ফোন যে?

রায়হান- হ হুম।

অনিমা- কে ফোন করেছিল?

রায়হান- এহসান।

অনিমা- ওহ আচ্ছা……..কিহ! কে ফোন করেছিল?(অবাক হয়ে)

রায়হান- এহসান মাহমুদ।

অনিমা- এহসান ভাই!

রায়হান- হুম।

অনিমা- এতোদিন পরে! কেন গো কিছু বলেছে? কি বলেছে এহসান ভাই? বলো না কি বলেছে?(খুশি হয়ে)

রায়হান- হুম।

অনিমা- কি হুম হুম করছো? বলো না কি বলেছে?(খুশি হয়ে)

রায়হান- আমাদের সবাইকে যেতে বলল এক্ষুণি।

অনিমা- সত্যি! কিন্তু এখন কি করে যাবো? আমরা বরং কাল সকালে যাবো। সবার জন্য কতকিছু কিনে নিয়ে যেতে হবে। আমরা কালকে যাবো।

রায়হান- এহসান এক্ষুনি যেতে বলল। আর ওর কণ্ঠ কেমন যেন শুনা গেল।

এহসান- মানে? কেমন শুনা গেল?

রায়হান- কেমন যেন ঘাবড়ে আছে মনে হলো।

অনিমা- কি বলছো! কারো কিছু হলো না তো। চল চল তাড়াতাড়ি চল আমরা এক্ষুনি যাবো। চল।

রায়হান- হুম আমি ড্রাইভারকে বলছি গাড়ি বের করতে। তুমি রেডি হয়ে আসো।

অনিমা- এক্ষুনি যাচ্ছি। তুমি তাড়াতাড়ি ড্রাইভারকে আসতে বলো।(বলেই চলে গেল)

আর রায়হান ফোন দিয়ে তাদের ড্রাইভারকে আসতে বলল তাড়াতাড়ি।

কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা দুজন মাহমুদ ভিলায় পৌছে গেল।

মাহমুদ ভিলায় এসে নামতে তারা থমকে গেল। কারণ মাহমুদ ভিলা একদম জাকজমকভাবে সাজানো। দেখেই বুঝা যাচ্ছে কারো বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। সাথে কিছু মানুষ আসছে। আবার কিছু মানুষ নানারকম কথা বলে বেড়িয়ে যাচ্ছে।

অনিমা- এখানে আবার কার বিয়ে হচ্ছে?(অবাক হয়ে)

রায়হান- আমিও তো কিছুই বুঝতে পারছি না। চল ভিতরে চল।(বলেই এগুতে নেয়।)

কিন্তু অনিমা রায়হানের হাত ধরে থামিয়ে দেয়।

রায়হান- কি হলো?চল।

অনিমা- তারার বিয়ের আয়োজন করা হয় নি তো?

রায়হান- কি যা তা বলছো এটা কি করে সম্ভব? এটা কিছুতেই সম্ভব নয়।

অনিমা- কিন্তু তাছাড়া আর কার বিয়ে হবে এখানে?

রায়হান- তা তো ভিতরে গিয়েই জানতে পারবো। চল।

অনিমা- হ হুম। চল।

তারা দুজন ভিতরে প্রবেশ করল।

তারা সেই কখন থেকে বসে বসে কেদে যাচ্ছে। রাত যে তাকে রেখে সেই কখন গেছে এখনো আসার খবর নেই। ঘরের দরজা জানালাও বন্ধ করে গেছে। তারা চাইলেও কিছু করতে পারছে না। একসময় কাদতে কাদতে তারা ঘুমিয়ে পড়ল।

হুট করেই ঘুমের মধ্যে তারা অনুভব করল কারো গরম নিশ্বাস বারবার তার মুখের উপর এসে বাড়ি খাচ্ছে। যা সাধারণত কেউ একদম কাছে থাকলে অনুভব হয়। তারারও তাই মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ তার খুব কাছে আছে।

তারার ঘুমের মধ্যেই অসস্তি লাগছে। তার চোখ বারবার টিপটিপ করছে। সে চোখ খুলে তাকে চাইছে। কিন্তু ঘুমের জন্য আর প্রচুর কাদার ফলে মাথা ব্যথার জন্য তাকাতে পারছে না। সে জোরে জোরে শ্বাস নিতে থাকে। তাকে দেখে তখন যে কেউ বলবে সে হাপানির রোগী।

হুট করেই সে আবার অনুভব করল তার চোখে মুখে কেউ ফু দিচ্ছে। আর হাত দিয়ে সারা মুখে স্লাইড করছে। এবার আর তারা নিজেকে আটকে রাখতে পারল না। চোখ বন্ধ করেই সামনে থাকা ব্যক্তিটাকে দিল এক ধাক্কা। সাথেই ব্যক্তিটা ছিটকে কিছুটা দূরে সরে গেল। আর তারা সাথে সাথেই উঠে বসে মাথা চেপে ধরে বসে থাকে। তারপর আস্তে আস্তে সামনে তাকিয়ে দেখে সামনে থাকা ব্যক্তিটাকে।

সামনে থাকা ব্যক্তিটা দেখেই চমকে গেল তারা। সামনে আর কেউ নেই। সামনে একহাতে হেলান দিয়ে খাটে আধশোয়া হয়ে বাকা হাসছে রাত।

চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here