#ভালোবাসার_হাতছানি
#লেখিকা-সানজিদা সেতু
#পর্ব-০৮
আজ এক সপ্তাহ হলো আরহাম দেশের বাইরে,সেদিন ভাইয়া আমাকে বাসায় নিয়ে গিয়েছিল।সবাই চাইছিল উনি দেশে না ফেরা পর্যন্ত যেন আমি ওখানেই থাকি কিন্তু কেন জানি আমার ওখানে কিছুতেই মন বসছিল না তাই দুদিন থেকেই আবারও এখানে চলে এসেছি।একা একা বোরিং লাগছিল তাই ভাবলাম ফোনের গ্যালারিতে একটু ঢু মারা যাক,গ্যালারি ওপেন করতেই একটা ছবিতে চোখ আটকে গেল।আমি আর উনি কফিমগ হাতে নিয়ে কটেজের বারান্দায় বসে আছি।এবারের শেরপুর ভ্রমণে এটাই উনার আর আমার একসাথে তোলা একমাত্র ছবি।ছবির কথা ভাবতেই মনে পড়ে গেল উনি বলেছিলেন ছবি তোলাটা উনার শখ আর বিজনেসে উনার বিন্দুমাত্রও ইন্টারেস্ট নেই তাহলে এখন কেন…
ছয়মাস আগে যখন উনাকে দেখেছিলাম তখন ক্যামেরাটা সবসময় উনার সাথে ছায়ার মত লেগে থাকতো,যতবারই উনাকে দেখেছি ক্যামেরাটা উনার গলায়ই ঝুলিয়ে রাখতেন আর যখনই ভালো কিছু দেখতেন মুহূর্তেই ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দী করে ফেলতেন কিন্তু বিয়ের পর থেকে ক্যামেরাতো দূরে থাক,ফোনেও উনাকে ছবি তুলতে দেখিনি।এমনকি এবার শেরপুরে গিয়েও উনি ছবি তোলেননি বললেই চলে।খটকা লাগছে মনের মধ্যে,আচ্ছা ভাবিকে একবার জিজ্ঞেস করলে হয় না?যেই ভাবা সেই কাজ ভাবীর রুমে চলে গেলাম
– ভাবী আসবো?
– আরে তুমি!আসো আসো,পারমিশন নেওয়ার কি আছে?
– তোমার কাছে একটু দরকার ছিল
– সেসব পরে হবে,আগে ছোটসাহেবের খবর বলো।কথা হয়েছে তোমার সাথে?কবে আসবে কিছু বলেছে?
– উহু
– মানেটা কি!দাঁড়াও একবার আসুক পাঁজিটা তারপর ওর ক্লাস নিচ্ছি।আচ্ছা এবার বল কি দরকার
– আসলে ভাবি আমার যতদূর মনে পড়ে তোমার দেবরের খুব পছন্দের একটা জিনিস ছিল ক্যামেরা,সবসময় ওটা সাথে নিয়ে ঘুরতেন
– সে আবার বলতে?সারাদিন শুধু ওটা নিয়ে ঘুরতো আর যা দেখতো ক্যামেরাবন্দী করতো
– ক্যামেরাটা কোথায় তুমি জানো?এ বাড়িতে এসে পর্যন্ত ওটাকেতো আর দেখতে পাচ্ছি না
– এক মিনিট দাঁড়াও,আলমারি থেকে ব্যাগটা বের করে শ্রেয়ার হাতে দিয়ে দিলাম।এই নাও ধরো
– এটা কি?
– তোমার সব প্রশ্নের উত্তর,মাস ছয়েক আগে শেরপুর থেকে ফিরেই ব্যাগটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়েছিল,বলেছিল ডাস্টবিনে ফেলে দিতে কিন্তু আমি পারিনি ওর এত্ত পছন্দের জিনিসটাকে এভাবে ছুড়ে ফেলতে তাই লুকিয়ে রেখেছিলাম।দেখো এগুলোর মধ্যে তোমার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাও কিনা…
।
ব্যাগটা নিয়ে রুমে চলে আসলাম,শুধু ক্যামেরা না ব্যাগে আরও কয়েকটা জিনিস আছে।একটা ডায়েরি,কয়েকটা ভাঁজ করে রাখা আর্ট পেপার,একটা নূপুর,কানের দুল আর একটা শুকিয়ে যাওয়া গাঁদাফুলের মালা যেগুলোর মালিক আমি।সেবার শ্রুতি আপুর গায়ে হলুদের দিন এগুলোর সবই আমি পরেছিলাম,কানের ঝুমকো আর নূপুরটা সেদিনই হারিয়ে ফেলেছিলান।ওগুলো থেকে চোখ সরিয়ে এবার ক্যামেরাটা হাতে তুলে নিলাম,স্ক্রিনে চোখ পড়তেই থমকে গেলান,এ আমি কি দেখছি!
ছয়মাস আগের আমাকে দেখে চিনে নিতে একটুও কষ্ট হয়নি আমার।একটার পর একটা ছবি দেখছি আর অবাকের চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছি,পুরো ক্যামেরা জুড়ে শুধু আমার ছবি,সেবারের মহুয়া রিসোর্টে আপুর বিয়ের ওই কটা দিনের ছবিতে পুরো ক্যামেরা ভর্তি।অদ্ভূত ব্যাপার হচ্ছে ছবিগুলোর একটাও আমাকে বলে উঠানো হয়নি আর অ্যাঙ্গেল দেখে মনে হচ্ছে সবগুলো ছবিই লুকিয়ে তোলা হয়েছে।এসবের মানে কি?আচ্ছা আমার কোথাও কোন ভুল হচ্ছে নাতো?
হঠাৎ ডায়েরিটার কথা মনে পড়লো,আমার মত উনারও তাহলে ডায়েরি লেখার অভ্যাস আছে কিন্তু এটা ফেলে দিতে কেন বললেন?কাঁপা কাঁপা হাতে ডায়েরিটা তুলে নিলাম,পাতা উল্টাতেই আমার মাথাটা চক্কর দিয়ে উঠলো,এটা কিভাবে সম্ভব!
“Love at first sight”
আর দশটা ইয়াং জেনারেশনের মত আমিও এটাতে একদমই বিশ্বাস করতাম না,ভাবতাম এগুলো শুধু গল্প উপন্যাসেই হয় বাস্তবে এর কোন অস্তিত্বই নেই।সব বানানো গুজব আর যারা এটাতে বিশ্বাস করে তারা জাস্ট পাগল ছাড়া আর কিছুই না।অথচ আমার সাথেই কিনা এমন একটা ঘটনা ঘটে গেল!হ্যাঁ আজ থেকে আমি বিশ্বাস করি যে “Love at first sight” বলেও একটা জিনিস আছে আর সেটা ঘটেছে শুধুমাত্র শ্রেয়ার জন্য।
হ্যাঁ ওর নাম শ্রেয়া,নামটা যেমন সুন্দর দেখতেই ঠিক তেমনই সুন্দর।এখনও ওর সাথে আমার কথা হয়নি,কিন্তু এক পলকের দেখাতেই আমি ঘায়েল হয়ে গেছি।এসেতো ছিলাম আকাশের বিয়ে খেতে কিন্তু এখনতো মনে হচ্ছে…
এখন প্রায় মাঝরাত,আশেপাশে সবাই ঘুমে কাঁদা,এমনকি আমার পাশে যে শুয়ে আছে সেও।শুনেছিলাম বিয়ের আগে নাকি বর কনে দুজনেরই ঘুম গায়েব হয়ে যায় সেটা এক্সাইটমেন্টেই হোক বা টেনশনে কিন্তু এই শালা আকাশ!কে বলবে যে ওই বর,একেবারে নাক ডেকে ডেকে মহিষের মতো ঘুমাচ্ছে!অথচ আমার চোখে ঘুম,সবাইতো ভাববে ও না আমিই বর।ডায়েরি লেখাটা আমার নিয়মিত কোন অভ্যাস না তবে কোথাও ঘুরতে গেলে বা কোনকিছু খুব বেশি পছন্দ হয়ে গেলে একটু আধটু লেখালেখির অভ্যাস আছে।আজকেও তার ব্যতিক্রম না,ঘুম যেহেতু আসছেই না তাই ভাবলাম আজকের ঘটনাগুলো লিখে ফেলা যাক তাই উঠে সোজা বারান্দায় চলে আসলাম,চাঁদের হালকা আলো আর নিয়ন বাতির কৃত্রিম আলো একসাথে মিশে অদ্ভূত মায়াময় একটা পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।এমন আবহাওয়ায় যদি একবার তার দেখা পাইতাম…”
ডায়েরির এই একটা পাতা পড়েই আমার চোখ কপালে উঠে গেছে,কাঁপা কাঁপা হাতের পরের পাতাগুলো উল্টাতে লাগলাম।হিজিবিজি করে অনেক কিছুই লেখা আছে আর তারসাথে মাঝে পেন্সিলে আঁকা কিছু ছবি এই যেমন একটা ছেলে আর একটা মেয়ে হাতে হাত ধরে সন্ধ্যা আকাশে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে বা ছেলেটার কাঁধে মাথা রেখে মেয়েটা পাহাড়ের মাঝে হারিয়ে গেছে এসব আর কি।শেষের পাতাটা উল্টাতেই আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল,পেন্সিলে আঁকা আমার একটা স্কেচ।আমি বধূবেশে বসে আছি,দুচোখে পানি টলমল করছে ঠিক যেমনটা সেদিন করছিল,আর কিছু না ভেবেই ছবির উল্টোপাশের লেখাটা পড়া শুরু করলাম…
“খন্দকার আঙ্কেলের একটা ডিসিশনে আমার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল,সবার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে চেয়েও পারিনি তাই নিরবে সবকিছু সয়ে যাচ্ছি।ভেবেছিলাম সবকিছু ছেড়ে চলে যাব কিন্তু তোমাকে একবার বধূবেশে দেখার খুব শখ ছিল তাই আর যেতে পারলাম না।তবে তোমার সামনে গিয়ে দাঁড়াবো সেই সাহসও যে আমার নেই তাই দূর থেকেই তোমায় দেখছি।বউয়ের সাজে যে তোমাকে এতো বেশি সুন্দর লাগবে ভাবতেও পারিনি তাই লোভটা আর সামলাতে পারলাম না,পেন্সিলের আঁচড়ে ডায়েরির পাতায় তোমার এই রূপটাকে বন্দী করে ফেললাম।অবশ্য এটাতো নতুন কিছু না,তোমার অজান্তেই এর আগে তোমার আরও কয়েকটা স্কেচ আমি এঁকেছি,ভেবেছিলাম সারপ্রাইজ দিব কিন্তু আমি নিজেই যে এভাবে সারপ্রাইজড হয়ে যাবো ভাবিনি।
যাই হোক তোমাকে অন্যের হতে আমি দেখতে পারব না তাই চলে যাচ্ছি,শুধু এখান থেকেই না দেশ ছেড়েই চলে যাবো ভাবছি।বাবা অনেকদিন থেকেই ব্যবসার হাল ধরতে বলছিলেন তাই ভাবছি সবকিছুই আবার নতুন করে শুরু করব,কাজের মাঝে থাকলে হয়তো তোমাকে ভোলাটা অনেক সহজ হবে।ভালো থেকো সবসময় আর আমাকে মনে রাখারও কোন দরকার নেই,অবশ্যমনে রাখার মত কিছু হয়ওনি।সেটাই হয়তো সবার জন্য ভালো
চলে যাচ্ছি সবকিছু ছেড়ে,সব মায়া কাটিয়ে তবে জীবনে একটা আফসোস রয়েই যাবে,কখনও বলতে পারব না তোমায়,
” ভালোবাসি শ্রেয়া,অনেক অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি তোমাকে”
।
ডায়েরিটা বন্ধ করে আর্টপেপারে আঁকা স্কেচগুলো হাতে নিয়ে বসে আছি,সবগুলো স্কেচই আমার কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না এসব উনি কখন করলেন!কারো অজান্তে তার স্কেচ যে এত নিখুঁতভাবে কেউ আঁকতে পারে আমার জানা ছিল না,ভাবতেই অবাকের চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছি।
আজকে আমার সব কনফিউশান দূর হয়ে গেছে,উনি আমাকে করুণা করেন না বরং অনেক অনেক অনেক বেশি ভালোবাসেন আর সেটা আমাদের বিয়ের পরে নয় আগে থেকেই।আমারতো খুশি হওয়ার কথা কিন্তু পারছি না,উনার এই বদলে যাওয়া,সব স্বপ্ন সব ইচ্ছেকে জলাঞ্জলী দিয়ে সবার থেকে দূরে সরে যাওয়া সবকিছুর জন্য দায়ী যে আমি!এতো ভালোবেসেন কেন উনি আমাকে?উনার ভালোবাসা পাওয়ার একটু যোগ্যতাও যে আমার নেই…
(কয়েকদিন পর)
গভীর রাত,আমি ঘুমে নিমগ্ন,হঠাৎই কপালে কারো কোমল স্পর্শ অনুভব করলাম!প্রথমে স্বপ্ন ভেবে উড়িয়ে দিলেও একটু পরেই রুমের মধ্যে কারো আনাগোনা টের পেলাম।লাফ দিয়ে উঠে বসলাম,আশেপাশে তাকাতেই চমকে উঠলাম
– আ..আপনি!
– ওহ তুমি উঠে পড়েছো?সরি তোমার ঘুমটা ভেঙ্গে দিলাম
– আপনি..কখন আসলেন?
– ঘণ্টাখানেক হবে,তুমি ঘুমোচ্ছিলে তাই ডাকিনি,ভেবেছিলাম সকালেই কথা বলব বাট লাভ কি হল?সেই তোমার ঘুমটাতো ভেঙ্গেই গেল
– It’s okay.ভোর হতে চললো,আমার মনে হয় আপনারও এখন ঘুমানো দরকার আর আপনি জার্নি করে এসেছেন তাই আজকে আপনি বিছানায় ঘুমান আমি নাহয় সোফায়…
– No way.যার জায়গা যেটা সে সেখানেই থাকবে
– কিন্তু আপনি…
– এমনিতেও আজকে আমার ঘুম হবে না,জেটলেগ জিনিসটা কি জানো নিশ্চয় সো বেটার হয় তুমি তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড় আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না
– আচ্ছা গুড নাইট
– শ্রেয়া….
– জ্বি?কিছু বলবেন?
– এক মিনিট,প্যাকেটটা ওর হাতে ধরিয়ে দিলাম
– কি এটা?
– তোমার গিফট,পছন্দ হয় কিনা দেখো
– বক্সটা খুলতেই বড় রকমের টাশকি খেলাম।এ..এটাতো…এতো এক্সপেন্সিভ একটা গিফট আপনি আমার জন্য?
– তাছাড়া আর কাকে দিব,আমার কি আর কোন বউ আছে নাকি?
– উনার কথা শুনে লজ্জায় পড়ে গেছি,আসলেই এমন বোকার মত একটা প্রশ্ন আমি কিভাবে করতে পারলাম!
– ওকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ওর দিকে এগিয়ে গেলাম।নেকলেসটা বক্স থেকে বের করে ওর গলায় পরিয়ে দিচ্ছি
– উনি একদম আমার পেছনেই দাঁড়িয়ে আছেন,কেমন যেন অদ্ভূত একটা ফিলিংস হচ্ছে।নিশ্বাস ভারী হয়ে যাচ্ছে,উনার প্রতিটা স্পর্শ যেন আমাকে চুম্বকের মত টানছে…
– নেকলেসের হুকটা লাগানোর জন্য ওর চুলগুলো সামনের দিকে সরিয়ে দিতেই ওর উন্মুক্ত স্কন্ধদেশ দেখতে পেলাম।নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না আলতো করে ঠোঁটটা ছুইয়ে দিয়েই দূরে সরে আসলাম
– মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি,কিছুতেই উনার দিকে তাকাতে পারছি না
– অনেক রাত হয়ে গেছে,এবার ঘুমিয়ে পড়ো
– উনার কথায় যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম,পড়ি কি মরি করে বিছানার দিকে ছুটলাম তারপর চোখমুখ।ঢেকে শুয়ে পড়লাম।এখন আর কোন ভয় নেই,উনার যা ইচ্ছে হয় উনি করুক আমিতো আর কিছু দেখতে পারছি না…
।
এর মাঝে কেটে গেছে আরও কয়েকটা মাস,আমাদের সম্পর্কটা আরও একটু স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।উনি সিঙ্গাপুর থেকে আসার পরদিনই উনার প্রিয় ক্যামেরা আর ডায়েরিটা উনাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।উনি এতটাই অবাক হয়েছিলেন যে আমি ওগুলো দেখেছি কি দেখিনি এই প্রশ্নটা পর্যন্তও করার কথা ভুলে গিয়েছিলেন।তবে ভাবি যে এগুলো ফেলে দেন নি তাতে যে উনি যারপরনাই খুশিই হয়েছিলেন সেটা আর আমার বুঝতে বাঁকি নেই।আমাদের সম্পর্কটা স্বাভাবিক হওয়ার সাথে সাথে উনিও আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছেন,যেই ক্যামেরাটাকে ফেলে দিতে চেয়েছিলেন সেটাই এখন উনার সবচেয়ে প্রিয় দোসরে পরিণত হয়েছে,যেখানেই যাচ্ছেন সাথে নিয়ে ঘুরছেন আর যাই দেখছেন ক্যামেরায় বন্দী করে ফেলছেন।বাবা এটা নিয়ে একটু অসন্তুষ্ট হলেও আমি আর ভাবি কিন্তু ব্যপারটা বেশ উপভোগ করছি।ওহ আরেকটা কথা আমরা কিন্তু এখন আর আলাদা বিছানায় ঘুমাই না,একই বিছানায় পাশাপাশি বালিশে মাথা রেখেই ঘুমাই যদিও আমরা এখনও ফিজিকালি সেভাবে ইনভলভ হইনি তবে একটুও যে এ্যাটাচমেন্টে আসিনি তাও বলা যাবে না,একচুয়ালি বলা যায় আমরা এখন রিলেশনশিপের একদম ইনিশিয়াল স্টেজে আছি তাই কাছাকাছি আসছি ঠিকই কিন্তু পুরোপুরি পারছি না।সকালে অফিসে যাওয়ার আগে আমার কপালে আলতো করে ভালোবাসার একটা পরশ বুলিয়ে যাওয়া,রাতে ফিরে এসেই পেছন থেকে আমার কোমড় পেঁচিয়ে ধরে আমার পছন্দের একটা শিউলি ফুলের মালা নিজ হাতে খোঁপায় পরিয়ে দেওয়া,তারপর চুলের মধ্যে নাক ডুবিয়ে দিয়ে কিছুক্ষণ ওভাবেই দাঁড়িয়ে থাকা আর রাতে ঘুমের ঘোরে আমাকে দুহাতে শক্ত করে জড়িয়ে রাখা এসবই উনার ডেইলি রুটিনে পরিণত হয়েছে।প্রথম প্রথম একটু আনইজি লাগলেও এখন এসব আমার অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।আগেতো শুধু উনিই আমাকে ভালোবাসতেন কিন্তু এখন মনে হয় আমিও…উনার ভালোবাসার কাছে আমি হেরে যেতে বাধ্য হয়েছি তাই শেষমেশ আমিও উনাকে…
যাই হোক আজকে আমি আর সায়নী ভাবি শপিং এ এসেছি,এর পেছনে অবশ্য দুটো কারণ আছে।প্রথমটা হচ্ছে কয়েকদিন পরেই মাহিন বাবুর বার্থডে আমরা যেহেতু ওর বার্থডেতে থাকতে পারছি না তাই এ্যাডভান্স বার্থডে প্রেজেন্ট দিতেই হবে নাহলে আবার পিচ্ছিটা রাগ করে বসে থাকবে।আর দ্বিতীয় কারণটা হচ্ছে আমি আর উনি কাল সকালেই কক্সবাজার যাচ্ছি।না না সেকেণ্ড হানিমুন টুন না,উনি আসলে বিজনেসের কাজেই যাচ্ছেন কিন্তু বাবা আর ভাবির জোরাজুরিতে আমাকেও সাথে যেতে হচ্ছে।অবশ্য একদিক দিয়ে ভালোই হলো এই সুযোগে উনার ব্যাপারে আমার ফিলংসগুলোও আই মিন কনফেশনটাও করে ফেলব ভাবছি।আসলে এমন একজন মানুষ যে আমাকে পাগলের মত ভালোবাসে তাকে আর কতদিনই বা দূরে সরিয়ে রাখা যায়?তাই ভাবছি সবকিছু ভুলে আবার নতুন করে সব শুরু করব আর তার সূচনা হবে এই কক্সবাজারে আমার কনফেশনটা দিয়ে…
সেকেণ্ড ফ্লোরে উঠেই ভাবি গিফটের দোকানের দিকে চলে গেল,আমিও যাচ্ছিলাম হঠাৎ একটা ফোন আসায় একটু দাঁড়িয়ে পড়লাম,আরহামেরই ফোন।রিসিভ করতে যাবো তখনই কেউ পেছন থেকে আমার নাম ধরে ডেকে উঠলো,তাকিয়ে দেখি নিশু,আকাশের মামাতো বোন,ওর সাথে আরও কয়েকজন আছে যাদের সবাইকেই আমি বিয়ের সময় দেখেছি।ওদের দিকে চোখ পড়তেই আমার কেমন যেন আনইজি ফিল হচ্ছে,কিন্তু নিশুর সাথে আর যেই দুজন মানুষকে আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখলাম তাদের দেখে আমার হার্টবিট যেন দ্বিগুণ গতিতে বেড়ে গেল,উনারা আর কেউ নন,আকাশের বাবা-মা….
চলবে…