ভালোবাসার হাতছানি শেষ পর্ব

#ভালোবাসার_হাতছানি
#লেখিকা-সানজিদা সেতু
#অন্তিমপর্ব
– আমাকে কি একটা সুযোগ দেওয়া যায় না?উত্তরটা কি খুব বেশি কঠিন?
– কি বলব বুঝতে পারছি না,আসলেইতো উত্তরটা কি খুব কঠিন যে আমি দিতে পারছি না?
– It’s okey.সরি তোমাকে বিরক্ত করার জন্য
– উনি চলে যাচ্ছেন,নিজেকে কেমন যেন অপরাধী অপরাধী লাগছে,বুকের বাপাশে তীব্র একটা ব্যথা অনুভব করছি।শু..শুনুন…
– হঠাৎ শ্রেয়ার কণ্ঠ শুনে থমকে দাঁড়ালাম,পেছন ফিরতেই দেখলাম ও আমার দিকেই ছুটে আসছে
– উনার সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি
– কিছু বলবে?
– না মানে বলছিলাম..একটু আগে আপনি..আ..আসলে..আমি..উত্তরটা…
– ঠিক আছে তোমাকে এখনই কিছু বলতে হবে না,পরে ভেবে চিন্তে বল
– আচ্ছা
দুজনে পাশাপাশি হাঁটছি,হোটেলের দিকেই যাচ্ছি।আচ্ছা আমি বলার আগেই উনি আমার সব কথা বুঝে যান কিভাবে!উনি কি মানুষের মন পড়তে পারেন নাকি!
– শ্রেয়া…
– জ্বি?
– বলছি যে উত্তরটা একটু তাড়াতাড়ি দিও প্লিজ।দেখো আজকেই এখানে আমাদের শেষ রাত তাই আমি চাই যদি ভালো কিছু হয় তাহলে এখানেই হোক।দ্বিতীয়বার আবার কবে সুযোগ হবে কে জানে…
– হুম
– একটা রিকুয়েষ্ট করব?
– কি?
– জীবনটা অনেক মূল্যবান একটা জিনিস তাই বলছি জীবনটাকে এভাবে নষ্ট কর না প্লিজ।যে নেই তার জন্য,তাকে ঘিরে থাকা অতীতের জন্য বর্তমানটাকে নষ্ট করে কি লাভ?

ঘড়িতে রাত প্রায় দশটা,আমি হোটেলের রিসিপশনে বসে আছি,অপেক্ষা করছি একজনের জন্যে।কি অবাক হলেন?না অবাক হওয়ার কিছু নেই,আসলে এখানকার একজন স্টাফকে কিছু জিনিস কিনতে পাঠিয়েছি,তারজন্যই এখন অপেক্ষা করছি আর কি।আসলে আরহামকে সারপ্রাইজ দিব তারই প্ল্যানিং চলছে এখন।উনি কিন্তু এখন এখানে নেই,সায়নী ভাবী প্ল্যান করে উনাকে একটা কাজে আটকে দিয়েছেন তাই উনার ফিরতে অনেক দেরি হবে।এই সুযোগে আমি…
উনার সন্ধ্যায় বলা কথাগুলো নিয়ে অনেক ভেবেছি।আসলেইতো আমি কে নিজের জীবনটাকে নষ্ট করতে চাইছি?আমি জানি উনি আমাকে কতটা ভালোবাসেন আর আমিওতো উনাকে…
নাহ আর না আজ রাতেই উনাকে সবকিছু খুলে বলব।এখানে আসার আগে ভাবিও বলেছিল জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না,সে তার আপন গতিতেই চলে।আমিও আর থেমে থাকব না,ভাবছি সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করব,এই মানুষটাকে আর কোন কষ্ট দিব না,নিজের সবটুকু দিয়ে তাকে আপন করে নেওয়ার চেষ্টা করব।
আমাদের রুমটা হোটেলের ষষ্ঠ তলায় তাই সিঁড়ি ভেঙে না উঠে বরাবরই লিফট ইউজ করি,আজকেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।কিন্তু গোলমালটা বাঁধল ছয় তলায় উঠে,লিফটের দরজা খুলতেই আমার চোখ কপালে উঠে গেল।এ আমি কাকে দেখছি!যেই মানুষটা এক বছর আগেই মারা গেছে সে কিভাবে আমার সামনে…
আর কিছু ভাবতে পারছি না,চারিদিকে সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসছে,লিফটের বাইরে পা বাড়ানোর মতোও কোন শক্তি পাচ্ছি না,চোখদুটো বন্ধ হওয়ার আগে দেখলাম এক জোড়া হাত আমার দিকে এগিয়ে আসছে…

প্রচণ্ড মাথাব্যথা করছে,চোখদুটো মেলতে খুব কষ্ট হচ্ছে তাই জেগে উঠেও বন্ধ করে রেখেছি।আচ্ছা একটু আগে যা দেখলাম সেটা কি স্বপ্ন নাকি সত্যি?হঠাৎ মনে হল কেউ আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে,একরকম লাফ দিয়ে উঠে বসলাম আর সাথে সাথে খেলাম বিশাল মাপের একটা ঝাড়ি
– কি আশ্চর্য!তোমার কি মাথায় কোন বুদ্ধি শুদ্ধি নেই?এভাবে উঠে বসলে কেন?চুপচাপ শুয়ে থাকো নাহলে কিন্তু…
– আ..আপনি!আ..আমি কোথায়?
– কোথায় মানে?যেখানে থাকার সেখানেই আছো,এখন কথা না বলে চুপচাপ শুয়ে পড়ো আমি তোমার জন্য কিছু একটা অর্ডার করে আসি
– লাগবে না,আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না
– বললেই হলো!ঠিকঠাক মত খাওয়া দাওয়া কর না বলেইতো এই অবস্থা
– মানে?কি হয়েছিল আমার?
– কি হয়েছিল জানো না?আমি হোটেলে ফিরতেই শুনলাম তুমি নাকি লিফটের ভেতরেই সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলে,পরে হোটেলেরই একজন গেস্ট নাকি রিসিপশনে খবর দিয়ে তোমাকে রুমে পৌঁছে দিয়েছে
– তারমানে ওটা স্বপ্ন ছিল না,সবই সত্যি!কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব?
– কি বিড়বিড় করছো?বললাম না চুপচাপ শুয়ে পড়ো
– হুম
উনি বেরিয়ে গেলেন,আমি আবার চিন্তার সাগরে হারিয়ে গেলাম।কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না,আকাশ কিভাবে ফিরে আসবে?ওতো…না এটা হতেই পারে না,আমি হয়তো ভুল দেখেছি..
– শ্রেয়া…
– (চমকে উঠে)জ্বি?
– আচ্ছা তোমার সমস্যাটা কি বলবে?রাতে ডিনার করনি কেন?আর আমি যে সেই কখন থেকে খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি সেদিকে কি কোন খেয়াল আছে?
– না মানে আমি ওই এমনিই…
– যদি আমার সন্ধ্যায় করা প্রশ্নটাই তোমার স্ট্রেসের কারণ হয়ে থাকে আর তারজন্যই তোমার এই অবস্থা হয়ে থাকে তাহলে I am sorry.মনে কর আমাদের মাঝে এমন কিছুই হয়নি,জাস্ট একটা দুঃস্বপ্ন ভেবে সবকিছু ভুলে যাও প্লিজ।আমার জন্য এভাবে নিজেকে কষ্ট দিও না,আমি আর কখনোই তোমকে এই ধরনের কোন প্রশ্ন করব না প্রমিজ…
– দেখুন আপনি…আপনি যা ভাবছেন তেমন কিছুই হয়নি,আমি আসলে…
– থাক,তোমাকে কোনকিছু এক্সপ্লেইন করতে হবে না।জাস্ট রিল্যাক্স আর খাবারটা খেয়ে নাও প্লিজ…
উনি চলে যাচ্ছেন,শুধু শুধু আমাকে ভুল বুঝে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছেন।আমিতো এমন কিছু চাই নি,আমিতো চেয়েছিলাম নতুন করে সবকিছু শুরু করতে তাহলে আবার কেন এভাবে সবকিছু…
– শুনুন…
– কিছু বলবে?
– আমার না একা একা খেতে ইচ্ছে করছে না,আমি খাব না
– মানে কি?ডক্টর বলেছে অতিরিক্ত স্ট্রেস আর উইকনেসের জন্যই তোমার এই অবস্থা সো কোন বাহানা না করে চুপচাপ খেয়ে নাও
– হুম…খেতে পারি তিবে একটা শর্ত আছে
– কি শর্ত?
– আমার সাথে আপনাকেও খেতে হবে
– মানে কি?আমিতো ডিনার করেই এসেছি আর পারব না
– উহু
– কি আশ্চর্য!এমন পাগলামির মানে কি?
– জানি না কিন্তু আমার সাথে না খেলে আমি খাব না ব্যাস
– শ্রেয়া…
– ঠিক আছে খেতে হবে না,আমার ঘুম পাচ্ছে,আমি ঘুমালাম,Good night…
– এই না না,Okay fine এইতো আমি খাচ্ছি।এবার শুরু কর
– উহু
– মানে কি!এবার কিন্তু আমি…
– আমি খেতে পারব না,খাইয়ে দিতে হবে
– হোয়াট!এই তোমার কি মাথায় আঘাত টাঘাত লেগেছে নাকি?দেখি এদিকে আসোতো
– খাইয়ে দিবেন কিনা বলেন নাহলে…
– অবাক লাগছে,ও হঠাৎ এমন বিহেভ কেন করছে?আগেতো কখনও
– কই দিন…
– হ্যাঁ দিচ্ছি।ওকে মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছি আর ও চুপচাপ খেয়ে নিচ্ছে,মাঝে মাঝে আবার আমাকেও খেতে বাধ্য করছে!এসব কি হচ্ছে কিছুইতো বুঝতে পারছি না।যাই হোক ওকে ঔষধ খাইয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলাম,কিছু কাজ পেণ্ডিং আছে তাই ভাবলাম এখনই করে নেই কিন্তু বিছানা থেকে নামতে যেতেই শ্রেয়া হাতটা টেনে ধরল
– যাবেন না প্লিজ
– কেন কিছু বলবে?
– আমার না প্রচণ্ড ভয় করছে,ও যদি আবারও চলে আসে…
– কি আশ্চর্য!এখানে আবার কে আসবে?কি যা-তা বলছো বলতো
– আ..আকাশ…ও যদি চলে আসে তাহলে…
– হোয়াট!তোমার কি মাথা টাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি?ও কিভাবে এখানে আসবে,ওতো…
– আমি যা-তা বলছি না,তখন লিফটের সামনে…বিশ্বাস করুন আমি স্পষ্ট দেখেছি ওই অখানে দাঁড়িয়ে ছিল
– ওর পাশে বসে পড়লাম,সাথে সাথেই ও আমার বুকে ঝাপিয়ে পড়ল।আচ্ছা ঠিক আছে বিশ্বাস করলাম,এখন প্লিজ একটু ঘুমানোর চেষ্টা কর
– কিন্তু…
– আমি আছিতো,তোমার কিচ্ছু হবেনা বিলিভ মি…
– উনার বুকে মাথা রেখে কখন যে ঘুমের কোলে ঢলে পড়লাম বুঝতেই পারলাম না
-খুব টেনশন হচ্ছে,শ্রেয়া হঠাৎ এমন এ্যাবনরমাল বিহেভ করছে কেন?আর এই আকাশের ব্যাপারটা?এসবের মানে কি?আমারতো কিছুই মাথায় আসছে না,তবে আপাতত কালকের ফ্লাইটটা ক্যান্সেল করতে হবে।ওকে এই অবস্থায়তো আর ফেরত নিয়ে যাওয়া যায় না তাই…

(পরদিন)
হোটেলের নিচতলার কফিশপটাতে বসে আছি,আপাতত একাই বসে আছি,আশেপাশে জনমানুষ নেই বললেই চলে।আসলে এখনতো ডিনার আওয়ার চলছে তাই এই সময়ে কারো কফিশপে না আসাটাই স্বাভাবিক।আমিও কিন্তু কফির জন্য আসিনি,এখানে বসে জাস্ট উনার জন্য ওয়েট করছি।আরহাম রুমেই আছে উনার একটা ভিডিও কনফারেন্স চলছে শেষ হলেই চলে আসবেন,আসলে আমারই রুমে থাকতে থাকতে দম বন্ধ হয়ে আসছিল তাই একটু আগেই নেমে এসেছি।আজ সারাটাদিন আমি রুম থেকে বের হইনি বললেই চলে,হব কিভাবে সারাক্ষণতো আকাশ আর ওকে ঘিরে মনের মাঝে জেগে উঠা প্রশ্নগুলো আমাকে তাড়া করে বেড়িয়েছে,এখনও বেড়াচ্ছে।বিকেলের দিকে আরহাম এক রকম জোর করেই আমাকে বীচে নিয়ে গিয়েছিল কিন্তু ওখানেই আমার কেন জানি মনে হচ্ছিল কেউ আমাকে ফলো করছে।এখন এখানেও তাই মনে হচ্ছে কিন্তু কে?আর কেনই বা আমার এমনটা মনে হচ্ছে?
– শ্রেয়া…
– অনেকদিন পর কণ্ঠটা শুনে চমকে উঠে পেছনে তাকালাম,আপনি!আ..আপনি এখানে কিভাবে!আ..আমার..
– শ্রেয়া প্লিজ আমার কথাটা একবার শোন
– কে আপনি?আর কি চাইছেন আমার কাছ থাকে
– Relax yaar just cool down
– দেখুন একদম আমার কাছে আসবেন না,নাহলে কিন্তু আমি…চোখজোড়া আবারও বন্ধ হয়ে আসছে,শুধু আবছাভাবে দেখছি দুজন মানুষ আমার দিকে ছুটে আসছে
– ভিডিও কনফারেন্স শেষ করে সবে কফিশপটাতে ঢুকেছি,দেখলাম শ্রেয়া পড়ে যাচ্ছে আর ওর দিকে ছুটে যাচ্ছে দুজন মানুষ।কোন রকমে ছুটে গিয়ে শ্রেয়াকে বুকে জড়িয়ে নিলাম তারপরই ওই দুজনের দিকে নজর দিলাম।ওদের দেখেইতো আমার চোখ কপালে উঠে গেছে,একি তোরা!এসব কি হচ্ছে?তবে কি কাল রাতে শ্রেয়া…(আরহাম)
– ও ঠিক আছেতো?
– আমার সাথে আয়,যা বলার রুমে গিয়ে বলিস,এখানে কোন সিনক্রিয়েট হোক আমি চাই না (আরহাম)
(কিছুক্ষণ পর)
আমার জ্ঞান ফিরে এসেছে,এখন বালিশে হেলান দিয়ে বিছানায় বসে আছি।আরহাম আমার পাশেই আছে তবে কিছুটা দূরে বসে আছে,আর আমার সামনে সোফায় যে দুজন মানুষ মাথা নিচু করে বসে আছে তাদের দেখে এতক্ষণে আমার খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাওয়ার কথা কিন্তু আমি তা পারছি না,উল্টো একেবারে বিভ্রান্ত হয়ে গেছি,কি হচ্ছে কিছুই মাথায় ঢুকছে তাই নির্বাক দর্শকের মত সবকিছু দেখে যাচ্ছি।
– এবারে কি আমি জানতে পারি এসবের মানেটা কি?এক্স্যাক্টলি কি হচ্ছে এখানে?এটা কি সত্যিই হচ্ছে নাকি আমি কোন স্বপ্ন দেখছি? (আরহাম)
– স্বপ্ন না,সব সত্যি (আকাশ)
– মানে কি!তুইতো এক বছর আগে…আর শ্রুতি এতদিন কোথায়….(আরহাম)
– এক বছর আগে সবটাই ছিল সাজানো (আকাশ)
– মানে?(আরহাম)
– মানে প্ল্যানটা ক্রাশ করেছিল ঠিকই কিন্তু ওই ফ্লাইটে আমি ছিলামই না (আকাশ)
– হোয়াট!কি বলতে চাইছিস ক্লিয়ার করে বল(আরহাম)
– আমি বলছি,সেদিন এয়ারপোর্টে আমিই আকাশকে আটকে ছিলাম।আসলে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যাওয়ার কয়েকদিন পরেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমি ওকে কতটা ভালোবাসি কিন্তু ওরতো শ্রেয়ার সাথে বিয়ে হয়ে গিয়েছিল।কি করব বুঝতে পারছিলাম না তখনই একদিন ওর সাথে আমার দেখা হয় (শ্রুতি)
– আমি অনেক চেষ্টা করেছিলাম শ্রেয়াকে আপন করে নেওয়ার কিন্তু সেদিন শ্রুতির সাথে দেখা হওয়ার পর আর সেটা সম্ভব হয়নি কারণ আমিতো শ্রুতিকেই ভালোবাসতাম।তাই ও যখন নিজের ভুল বুঝতে পেরে আমার কাছে ফিরে আসার কথা বলল আমি আর না করতে পারিনি (আকাশ)
– কিন্তু শ্রেয়াকেওতো আমি কষ্ট দিতে পারি না আর তাছাড়া আমাদের দুই ফ্যামিলি কখনোই এটা মেনে নিত না তাই বাধ্য হয়েই এসব…(শ্রুতি)
– ছি!তোরা কি মানুষ!বাধ্য হয়ে এসব করেছি,তোরা জানিস তোরা কি করেছিস?আচ্ছা আকাশ,একবার ভেবে দেখেছিস তোদের এই মিথ্যেটা কতগুলো মানুষের জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে?এই যে আমার সামনে বসে থাকা এই মানুশটাকে দেখছিস,গত এক বছরে নিজেকে একটা জীবন্ত লাশ বানিয়ে ফেলেছে।ছি!আমি ভাবতেও পারছি না তুই এক সময় আমার বন্ধু ছিলি(আরহাম)
– আমরা জানি আমরা অনেক বড় অপরাধ করে ফেলেছি কিন্তু বিশ্বাস কর আমাদের উদ্দেশ্য খারাপ ছিল না।আকাশ শ্রেয়ার সাথে থাকলে আমরা কেউই সুখী হতে পারতাম না তাই…(শ্রুতি)
– তাই এই জঘন্য কাজটা করে ফেললি!বাহ বাহ বাহ কি থিওরি!(আরহাম)
– সেদিন বীচে হঠাৎ করেই শ্রেয়াকে দেখে ফেলি,তারপর থেকেই ওকে ফলো করে যাচ্ছি।তুই ওকে আপন করে নিয়েছিস দেখে যে আমি কি খুশি হয়েছিলাম!কিন্তু যখন দেখলাম শ্রেয়া এখনও তোকে মেনে নেয়নি,নিজেকে একটা খোলসের মধ্যে আটকে রেখেছে তখন থেকেই নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে।অনেকবার চেষ্টা করেছি তোদের সামনে এসে নিজের ভুল স্বীকার করে নিতে কিন্তু…(আকাশ)
– আচ্ছা শ্রেয়ার কথা নাহয় বাদই দিলাম,তোর বাবা মায়ের কথাটাও একবার ভাবলি না!একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে তাদের কি অবস্থা হয়েছে ভেবে দেখেছিস কখনও?(আরহাম)
– ও তুই চিন্তা করিস না,আমি ফিরে গিয়েই বাবা মাকে সব খুলে বলব।জানি খুব রাগ করবে কিন্তু আমি ঠিক ম্যানেজ করে ফেলব (আকাশ)
(এতক্ষণ মাথা নিচু করে চুপচাপ ওদের কথা শুনছিলাম।মানুষ এতটা সেলফিশ আর মনুষ্যত্ব বিহীন কি করে হতে পারে!ভাবতেও অবাক লাগছে এই স্বার্থপর মানুষটার জন্য আমি এতদিন আমি নিজেকে আর আরহামকে এত কষ্ট দিয়েছি!)
– আফটার অল বাবা-মার একমাত্র সন্তান বলে কথা,যতই রাগ করে থাকুক আমি ফিরে গেলেই সব ভুলে বুকে টেনে নেবে (আকাশ)
– খবরদার,অনেক হয়েছে আর না।আচ্ছা তোমাদের লজ্জা করে না?কি ক্ষতি করেছিলাম আমরা তোমাদের যে আমাদের সাথে এমন…ঐ বুড়ো মানুষদুটো এমনিতেই তোমার মৃত্যুশোক বুকে নিয়ে কোন রকমে বেঁচে আছে,এখন আর ওদেরকে এই আঘাতটা দিয়ে একেবারে মেরে ফেলো না।দয়া করে এবারে অন্তত ওদেরকে রেহায় দাও…(শ্রেয়া)
– শ্রেয়া…আমার কথাটা একবার শোন প্লিজ (শ্রুতি)
– তার আর দরকার নেই,বাবা-মার কাছেতো তুই এক বছর আগেই মারা গেছিস,আজ থেকে নাহয় আমার কাছেও…আমি ধরে নেব আমার কোনদিনও কোন বড় বোন ছিল না,একটা দুঃস্বপ্ন ভেবে নাহয় সব ভুলে যাব…(শ্রেয়া)
– শ্রেয়া…(শ্রুতি)
– আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেন?ওদেরকে চলে যেতে বলুন প্লিজ,আমার আর ওদেরকে সহ্য হচ্ছে না (শ্রেয়া)
– আমার মনে হয় তোদের এবার চলে যাওয়া উচিত,শুনলিইতো ও কি বললো (আরহাম)
– কিন্তু…(আকাশ)
– শুধু ওই না,আমিও আর তোদেরকে দেখতে চাই না।So please stay away from our life আর হ্যাঁ ও যা বলেছে কথাগুলো মাথায় রাখিস।তোর কারণে ওর যদি আবার কোন ক্ষতি হয় তাহলে কিন্তু আমি তোদেরকে ছেড়ে কথা বলব না…(আরহাম)

(রাত বারোটা)
আমি ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসে আছি,আকাশরা চলে যাওয়ার পর পরই আরহাম আমার কাছে ছুটে এসেছিল।কিছুক্ষ্ণ আমার পাশে থেকেই কোথায় যেন বেরিয়ে গেলেন।তাও প্রায় ঘণ্টা খানেক হয়ে এলো,মানুষটা কোথায় আছে কি করছে কে জানে।ফোনটা হাতে নিয়ে বেলকনিতে চলে আসলাম,উনার নাম্বার ডায়াল করতে যাব তখনই দরজা খোলার শব্দ পেলাম
– শ্রেয়া…শ্রেয়া…গেল কোথায় মেয়েটা?শ্রেয়া..কোথায় তুমি?
– এইতো এইদিকে
– তুমি ওদিকে কি…আর কিছু বলতে পারলাম না,ওকে এভাবে বধূবেশে দেখে আমি যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি
– এমন অবাক হয়ে কি দেখছেন?আপনিতো আমাকে এভাবেই দেখতে চেয়েছিলেন তাইনা?তাইতো লাগেজে আমার বিয়ের শাড়িটাও নিয়ে এসেছিলেন…
– না মানে আসলে আমাদের বাসররাতেতো তোমাকে বধূবেশে দেখার সুযোগ পাইনি তাই…
– হুম বুঝলাম,তা কেমন লাগছে আমাকে?
– অপূর্ব…অসাধারণ..কিন্তু…
– কিন্তু?
– তুমি হঠাৎ এভাবে…
– আপনার প্রশ্নের উত্তরটা শুনবেন না?
– তার আর দরকার নেই,তুমি না বললেও আমি আমার উত্তর ঠিক পেয়ে গেছি।কি আমি যা ভাবছি তা সত্যিতো?
– হুম
– আর দেরি করলাম না ছুটে গিয়ে ওকে কোলে তুলে নিলাম,চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিলাম ওর চোখ-মুখ
– এই কি করছেন আপনি?পাগল হয়ে গেছেন নাকি?
– হ্যাঁ আমি সত্যিই পাগল হয়ে গেছি,তুমি জানো না আজ আমি কতটা খুশি
– I am sorry
– সরি!কিন্তু কেন?
– ওই স্বার্থপরটার জন্য আপনাকে এতদিন…
– আহ শ্রেয়া,ওসব বাদ দাও তো।অনেক হয়েছে অতীতকে আঁকড়ে ধরে থাকা কিন্তু আর না,আজ থেকে আমরা শুধু আমাদের জন্য বাঁচব।অতীতকে ভুলে চল আমরা সবকিছু আবার নতুন করে শুরু করি…
– আচ্ছা ঠিক আছে,তাহলে আপনার ফোনটা একটু দিনতো
– ফোন!আচ্ছা এই নাও
– কাজটা শেষ করে উনার হাতে ফোনটা ফেরত দিলাম
– এটা কি হল?
– আমাদের কালকের ফ্লাইটটা ক্যান্সেল করে দিলাম
– হোয়াট!কিন্তু কেন?
– কেন আবার?আমাদের হানিমুনতো আখন থেকে শুরু হবে তাহলে…
– কি বললে তুমি!হানিমুন মানে!
– না না,ও কিছু না,আমি একটু আসছি…
– এই শ্রেয়া..কোথায় যাচ্ছো?দাঁড়াও বলছি…কিছুক্ষণের মধ্যেই ওকে ধরে ফেললাম,দুহাতে ওর কোমড় পেচিয়ে ধরে রেখেছি
– লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছি,উনার চোখের দিকে তাকাতে পারছি না
– কি যেন বলছিলে?আমাদের হানিমুন তাইতো?
– হুম
– Are you sure?Listen my dear wife,ভেবে চিনতে উত্তর দাও নাহলে কিন্তু পরে পস্তাতে হবে
– ফলাফল যাই হোক আমার ডিসিশন চেঞ্জ হবে না,এমনিতেই অনেক দেরি করে ফেলেছি আপনার সাথে কাটানো আর একটা মুহূর্তও আমি নষ্ট করতে চাই না…
– ওর উত্তর শুনে খুশিতে মনটা ভরে উঠলো।ওকে আরও কাছে টেনে নিলাম,ওর ঠোঁটে ঠোঁট রেখে সুখের সাগরে গা ভাসিয়ে দিলাম
আমরা দুজন দুজনের মাঝে হারিয়ে গেছি।অদূরে সমুদ্রের গর্জন শোনা যাচ্ছে,মাঝে মাঝে দুই একটা সামুদ্রিক রাত জাগা পাখির ডাক ভেসে আসছে,আকাশের চাঁদটা যেন আজকে একটু বেশিই আলো দিচ্ছে যেন আমাদের দুজনের এই মধুর মিলনের সাক্ষী হতে পেরে ওরা সবাই আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেছে।আজ থেকে শুরু হলো আমাদের নতুন জীবন,যে জীবনে থাকবে না কোন পিছুটান,আর না থাকবে কোন অতীতের ছায়া।সবকিছু আমরা নতুন করে শুরু করব,সবাই আমাদের জন্য দোয়া করবেন যেন এভাবেই আমরা সারাজীবন একসাথে থাকতে পারি,ভালোবাসায় ভরে রাখতে পারি আমাদের এই দাম্পত্যের জীবনটাকে…
(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here