ভালোবাসার হাতছানি পর্ব ৭

#ভালোবাসার_হাতছানি
#লেখিকা-সানজিদা সেতু
#পর্ব-০৭
(সকালে)
প্রায় সারারাত জেগে থাকার পর শেষ রাতে কখন যে ঘুমিয়েই পড়েছি বুঝতেও পারিনি,ঘুম ভাঙলো আযানের সুমধুর ধ্বনিতে।লাফ দিয়ে উঠে বসলাম,ঝটপট ওযু করে নামায পড়ে নিলাম।এতক্ষণে মনে পড়লো আরহামের কথা,উনি কোথায়?ঘরেতো কোথাও নেই,তবে কি এখনও বেলকনিতে!সর্বনাশ সারারাত যদি উনি এভাবেই বাইরে দাঁড়িয়ে থাকেন তাহলেতো উনার…
বেলকনির দিকে রীতিমতো দৌঁড় দিলাম কিন্তু একি,উনিতে এখানেও নেই!মানুষটা গেল কোথায়?ফোনটাও দেখি রুমেই রেখে গেছে তাই চাইলেও কোন কনট্যাক্ট করতে পারছি না।
সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেল,তারপর বিকেল শেষে রাত তবুও তার ফেরার কোন নাম নেই।এদিকে দুশ্চিন্তায় আমার অবস্থা খারাপ,একেতো এমন অপরিচিত একটা জায়গায় একা একা থাকতে ভয় লাগছে তার উপর আবার উনার কোন খবর নেই,খারাপ কিছু হয়ে যায়নি তো সেই টেনশনে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।তার সাথে ষোলকলা পূর্ণ করেছে বৃষ্টি,সন্ধ্যা থেকেই কথা নেই বার্তা হঠাৎ করেই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়েছে।পাহাড়ের বৃষ্টিটা নাকি এমনই,বিনা নোটিশেই শুরু হয়ে যায় আর অসম্ভব সুন্দর,যে কখনও দেখেনি তার কাছে নাকি কোনভাবেই এই সৌন্দর্যের ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব না।অন্য সময় হলে আমিও এই বৃষ্টির মাঝে হারিয়ে যেতাম,নিজের মত করে উপভোগ করতাম কিন্তু আজকে এই অবস্থায় সেটা কোনভাবেই সম্ভব না।আর তাছাড়া মাঝে মাঝেই প্রচণ্ড জোরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে,ছোট থেকেই বৃষ্টি পছন্দ করলেও এই ব্যাপারটা আমি প্রচণ্ড ভয় পাই আর আজ এই অচেনা জায়গায় একা ঘরে যেন ভয়ের চূড়ান্ত সীমায় পৌঁছে গেছি।তারমাঝে বেশ কিছুক্ষণ হলো ইলেক্ট্রিসিটিও চলে গেছে,চারপাশে গুমোট অন্ধকার আর শুনশান নিরবতা।
সারাটা দিন চরম উৎকণ্ঠায় পার করার পর যখন আমার সহ্যের সীমা প্রায় অতিক্রম করে ফেলেছি তখন উনার দেখা মিললো।প্রচণ্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করে যখন উনি রুমে ঢুকলেন আমি তখন বিছানায় হেলান দিয়ে মেঝেতে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছি।দরজা খোলার শব্দ কানে আসতেই মুখ তুলে তাকালাম,বিদ্যুতের হালকা ঝলকানিতে আবছাভাবে উনার মুখটা একবার দেখেই উনার দিকে ছুটে গেলাম,ঝাঁপিয়ে পড়লাম উনার বুকে।
– কোথায় ছিলেন আপনি,জানেন আমার কত টেনশন হচ্ছিল?
– এই প্রথম ওকে এত কাছ থেকে দেখছি,একেকবার বিজলি চমকাচ্ছে আর ও আরও শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরছে।ওকে এভাবে দেখে ভালোও লাগছে আবার ভয়ও হচ্ছে বৃষ্টিটা যদি এক্ষুণি থেমে যায় তাহলেতো ও এক্ষুণি আমার থেকে দূরে সরে যাবে।আচ্ছা বৃষ্টিটা যদি এভাবেই সারাজীবন হতে থাকতো…
– চারদিকে এত অন্ধকার কেন,কারেন্ট কখন আসবে?আমার খুব ভয় করছে…
– It’s okay,ভয় পেও না আমি আছিতো…
(কিছুক্ষণ পর)
আমি আর উনি বেলকনিতে বসে আছি,অন্ধকার রাতে বাইরের বৃষ্টির দৃশ্য দেখতে বেশ ভালোই লাগছে।এমন রাতে যদি ভালোবাসার মানুষটা পাশে থাকে তাহলে একটা মেয়ের আর কি চাই,তার হাতে হাত রেখেই সারাজীবন কাটিয়ে দেওয়া যায়।আমার পাশে যেই মানুষটা বসে আছে সে আমাকে ভালোবাসে নাকি আমার প্রতি এটা তার শুধুমাত্র একটা সিম্প্যাথির প্রকাশ আমার জানা নেই।যদি ধরেও নেই যে এটা সত্যিই ভালোবাসা আর তার ভালোবাসা আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে তাতেই বা কি লাভ?আমিতো আর সেই ডাকে সাড়া দিতে পারব না,কি করে পারব অতীত যে কিছুতেই আমার পিছু ছাড়ছে না,আমি যে এখনও আকাশকেই…
– কি ভাবছো?
– ভাবছি আপনি না অনেক খারাপ
– খারাপ!কিন্তু কেন?
– এই যে আমাকে না বলে এভাবে গায়েব হয়ে গেলেন,জানেন আমি কত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম?নাহয় আমি একটা ভুল করেই ফেলেছিলাম কিন্তু তাই বলে এভাবে!
– আচ্ছা বাবা,সরি।আমার ভুল হয়ে গেছে,আর কক্ষণও এমন হবে না প্রমিজ
– এভাবে বললে হবে না,আগে কান ধরেন
– কার?আমার নাকি তোমার?
– যান আপনাকে আর সরি বলতে হবে না,আমিই সরি
– এই না না রাগ করছো কেন?এই যে কানে ধরলাম,আমার ভুল হয়ে গেছে ম্যাডাম,প্লিজ এবারের মত মাফ করে দেন…
– আপনি না…দূর ছাই আপনার সাথে কথা নাই গুড নাইট
– ঘুম পাচ্ছে বললেই হতো,এত নাটক করার কি আছে?
– উফ অসহ্য,এই আপনি ঘুমানতো নাহলে আমাকে ঘুমাতে দেন
– ওকে ম্যাম গুড নাইট…
আজকে আর কোন ঝামেলা করলাম না,চুপচাপ বিছানার এক কোণে জড়োসড়ো হয়ে শুয়ে পড়লাম,কিছুক্ষণ পর উনিও এসে আমার পাশেই শুয়ে পড়লেন।আমরা দুজন মানুষ একই বিছানায় একই চাদরের নিচে শুয়ে আছি তবুও দুজনের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান,এই ব্যবধান কি কখনও ঘুচবে?নাকি এভাবেই একসাথে থেকেও দুজনে দুই ভূবনের বাসিন্দা হয়ে থেকে যাবো?এই প্রশ্নের উত্তর আপাতত আমার জানা নেই,হয়তো সময়ই সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেবে…

(মাঝরাত)
হঠাৎ করেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল,মনে হল একজোড়া হাত আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে রেখেছে কিন্তু অস্বাভিক ব্যপারটা হচ্ছে হাতদুটো প্রচণ্ড গরম!ভয়ে ভয়ে চোখ মেলে তাকালাম,নাহ ভয় পাওয়ার মত কিছু হয়নি হাতদুটো আরহামের কিন্তু এমন গরম কেন?উনার কপালে হাত দিতেই পুরো ব্যাপারটা ক্লিয়ার হয়ে গেল,উনার পুরো শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে,জ্বরের ঘোরে প্রায় অচেতন তাই আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রীতিমতো থরথর করে কাঁপছে।লাফ দিয়ে উঠে বসলাম,বুঝতে পারছি এসবই হয়েছে এই ঠাণ্ডার মধ্যে কাল সারারাত বাইরে বসে ছিল আর তারপর আবার আজ সন্ধ্যার বৃষ্টি।নিজেকে কেমন যেন অপ্প্রাধী অপরাধী লাগছে,মনে হচ্ছে আমার জন্যি এসব হয়েছে।
এই অবস্থায় কি করব বুঝতে পারছি না,ভাবীকে ফোন করব?কিন্তু এত রাতে কি সেটা ঠিক হবে?কটেজের কাউকেওতো চিনি না আর এত রাতে একা একা বাইরে যাওয়াও ঠিক হবে না তাছাড়া এই অচেনা জায়গায় কার থেকেই বা হেল্প চাইবো?
ঝটপট কম্বলটা ভালো করে উনার গায়ে পেঁচিয়ে দিলাম তারপর একটা একটা সুতি কাপড় আর পানিতে ভিজিয়ে উনার পুরো শরীর মুছে দিতে লাগলাম আর তারসাথে জলপট্টিতো আছেই।রাত বাড়ছে আর আমার উৎকণ্ঠাও,মনে মনে চাইছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভোরের আলো ফুটে উঠুক,তাহলে হয়তো উনাকে হসপিটালে নেওয়া সম্ভব হবে…
(আরহামের ভাষ্য)
জানালা দিয়ে সূর্যের আলো চোখে এসে পড়তেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল,আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকালাম।শরীরটা প্রচণ্ড ভারী ভারী লাগছে আর তারসাথে মাথাব্যথাতো আছেই কিন্তু শ্রেয়ার দিকে চোখ পড়তেই যেন একদম সুস্থ হয়ে গেলাম।আমাদের দুই মাসের বিবাহিত জীবনে যা হয়নি,এই একরাতেই যেন তার থেকে বেশি কিছু পেয়ে গেছি।শ্রেয়া আমার বুকে মাথা রেখে একদম বাচ্চাদের মত ঘুমাচ্ছে,এক হাত দিয়ে আমার একটা হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে আর অন্য হাতে একটা ভেজা কাপড়।হঠাৎ করেই পুরো ঘটনাটা সব ক্লিয়ার হয়ে গেল,এখন ভাসা ভাসা ভাবে সব মনে পড়ছে,সারারাত জেগে ও কিভাবে আমার সেবা যত্ন করেছে সবকিছু।এখন মনে হচ্ছে জ্বরটা এসে ভালোই হয়েছে,ইশ!কেন যে এত তাড়াতাড়ি সেরে গেল!সাবধানে ওকে বিছানায় শুইয়ে দিলাম তারপর ফ্রেশ হয়েই সোজা বেলকনিতে চলে গেলাম।
আজকের সকালটা মনে হচ্ছে একটু বেশিই সুন্দর,দূরের গারো পাহাড়টার দিকে চোখ পড়তেই স্তব্ধ হয়ে গেলাম।এখন বুঝতে পারছি মানুষ এত কষ্ট করে দূর দূরান্ত থেকে এখানে কেন ছুটে আসে,সবকিছুই এই দুর্লভ সৌন্দর্যটাকে উপভোগ করতে।ক্যামেরাটাকে প্রচণ্ড মিস করছি,এই কয়মাসে ক্যামেরাটা একবারের জন্যও হাতে নেইনি,শ্রেয়াকে ভুলতে আমার সবচেয়ে পছন্দের জিনিসটাকেও নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু এই মুহুর্তে ওটাকে খুব মিস করছি।এই দুর্লভ সৌন্দর্যটাকে ক্যামেরাবন্দী না করে কি থাকা যায়!কি আর করা,ক্যামেরা নেই তাতে কি?ফোনতো আছে,ঝটপট ফোনের ক্যামেরাতেই কয়েকটা ছবি তুলে নিলাম,শ্রেয়া যে কখন পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে খেয়ালই করিনি
– আপনার ক্যামেরাটা কোথায়?
– তুমি..এত তাড়াতাড়ি উঠে পড়লে যে!
– এটাতো আমারও প্রশ্ন,আর আপনার জ্বর?দেখি একবার এদিকে আসুনতো
– কেন?
– কোন প্রশ্ন না,যা বলছি করেন
– হুম,ওর দিকে এগিয়ে গেলাম।ইয়েস ম্যাম বলেন কি বলবেন
– উনি কাছে আসতেই উনার উপর ঝাঁপিয়ে পড়লাম,কপালে গায়ে হাত দিয়ে জ্বরের অস্তিত্ব আছে কিনা চেক করলাম
– ওকে যত দেখছি অবাক হয়ে যাচ্ছি,যেই মেয়ে আমার স্পর্শও পছন্দ করে না,সবসময় দূরে দূরে থেকে সে আজ নিজে থেকেই আমাকে…মনে হচ্ছে অসুস্থতা জিনিসটা অতটাও খারাপ না,মাঝে মাঝে অসুস্থ হওয়া ভালো
– জ্বর আর নেই কিন্তু আপনি এভাবে বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?যান আবার শুয়ে পড়ুন,আমি নাহয় ব্রেকফাস্ট অর্ডার করছি
– লাগবে না
– কেন?দেখুন এখন জ্বর নেই বলে ভাববেন না আমি আপনাকে এত ইজিলি ছেড়ে দিব,এখন ব্রেকফাস্ট করেএকটা প্যারাসিটামল খেয়ে নেবেন বুঝেছেন?
– সবকিছুই হবে বাট রুমে না,অন্য কোথাও
– মানে?
– মানে ঝটপট রেডি হয়ে নাও,আমরা আজ সারাদিন ঘুরাঘুরি করব,ব্রেকফাস্ট ডিনার সব বাইরে
– কিন্তু আপনার এই শরীরে…
– আমার আবার কি হয়েছে,এই দেখো আমি একদম ঠিক আছি আর তাছাড়া তুমিতো আছোই
– কিন্তু…
– কোন কিন্তু না,আজকেই এখানে আমাদের শেষ দিন তাই আমি চাই আজকের দিনটাকে পুরোপুরি উপভোগ করতে
– শেষ দিন!কিন্তু আমাদেরতো আরও কয়েকদিন থাকার কথা ছিল
– তা ছিল কিন্তু জরুরি একটা কাজে কাল রাতেই আমাকে সিঙ্গাপুর যেতে হবে তাই…
– ওহ

(রাত বারোটা)
ট্রেনের এসি কম্পার্টমেন্টে পাশাপাশি দুটো চেয়ারে বসে আছি আমি আর আরহাম।
ট্রেনে যাচ্ছি তার কারণ এত আরজেন্ট এয়ার টিকিটের ব্যবস্থা করা যায়নি তাই এক রকম বাধ্য হয়েই ট্রেনে যেতে হচ্ছে।
হ্যাঁ আজকেই আমাদের ফিরে যেতে হচ্ছে,যেতে হচ্ছে বলছি কারণ আমাদের দুজনের কারোরই ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে না।বিশেষ করে আজ সারাদিন দুজনে একসাথে এত মজা করেছি যে জায়গাটাকে কিছুতেই ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না।ছোট থেকেই পাহাড় আমার অনেক পছন্দ,সমুদ্রের থেকে পাহাড়ই আমাকে বেশি টানে,অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল হাইকিং এ যাবো কিন্তু আব্বু আম্মু রাজি ছিল না তাই কখনও যাওয়ার সুযোগ হয়নি।আজ সারাদিনে আরহাম আমার অনেক ইচ্ছেই পূরণ করেছে।হাত ধরে গারো পাহাড়ের টিলায় উঠা,পাহাড় চূড়ায় দাঁড়িয়ে দুহাত দুদিকে প্রসারিত করে নিজের নামের প্রতিধ্বনি সৃষ্টি করা,পাহাড়ের আড়ালে রক্তিম সূর্যটাকে হারিয়ে যেতে দেখা,পাহাড়ী ছড়ায় গোসল দেওয়া আর ক্যাণ্ডেল লাইট ডিনারে কোন আদিবাসী রেস্টুরেন্টে ওদেরই ট্রেডিশনাল কোন আইটেম বাঙালী কায়দায় উপভোগ করা এসবই সম্ভব হয়েছে উনার জন্য।
যেতেতো ইচ্ছে করছে না কিন্তু কি আর করার যেতেতো হবেই তবে অনেক বেশি মিস করব রিসোর্টটাকে আর আজকের এই দিনটাকে।ট্রেন চলতে শুরু করেছে,প্রতিটা পদক্ষেপেই শেরপুর শহরটাকে পেছনে ফেলে নিজের গন্তব্যের দিকে আরও একটু এগিয়ে যাচ্ছে।আমি জানালা দিয়ে বাইরের অন্ধকারটাকে উপভোগ করছি,হঠাৎই কাঁধে কারো স্পর্শ পেলাম,তাকিয়ে দেখি আরহাম আমার কাঁধে মাথা রেখে বেভোরে ঘুমোচ্ছে।একটু আনইজি লাগছে কিন্তু কি আর করার,একটু সোজা হয়ে বসলাম যাতে উনার মাথা রাখতে একটু সুবিধে হয়।আমারও প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে কিন্তু…সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই উনার মাথার উপর মাথা রেখে ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে গেলাম….

আজ দুদিন হলো আরহাম সিঙ্গাপুর গেছে,সেদিন শেরপুর থেকে আমাদের ফিরতে প্রায় দুপুর হয়ে গিয়েছিল আর উনার ফ্লাইট ছিল রাতে তাই ফিরে আসার পর আর তেমন একটা কথা বলার সুযোগ হয়নি।এদিকে এই দুদিনে উনি একটাবারের জন্যও আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করেননি!মহুয়া রিসোর্ট,গারো পাহাড় আর উনার সাথে ওখানে কাটানো বিকেলগুলোকে প্রচণ্ড মিস করছি আর সবচেয়ে বেশি মিস করছি শেষরাতের ডিনারটাকে।সারাদিন এটা ওটা করে সময়টাকে পার করে দিলেও বিকেলের পর থেকে আর যেন সময়টা কাটতেই চায় এখন প্রায় সন্ধ্যা,আমি বারান্দায় বসে আছি।এক মগ কফি হাতে আরহামের সাথে পাশাপাশি চেয়ারে বসে গল্প করতে খুব ইচ্ছে করছে কিন্তু উনিতো আর এখানে নেই তাই…
সায়নী ভাবীকেও পাচ্ছি না কারণ উনি প্রচণ্ড রকমে রেগে আছেন আমাদের উপর কারণ আমরা এত তাড়াতাড়ি হানিমুন থেকে ফিরে আর এসেই উনি বিজনেস ট্যুরে চলে গেছেন!আর মাহিন?তাকে কি আর পাওয়ার উপায় আছে!বড় ভাইয়া ওকে একটা খেলনা স্পেসশিপ কিনে দিয়েছে সে এখন তাই ওটা দিয়ে এলিয়েনদের ধরতে ব্যস্ত।এ বাড়িতে বোধহয় আমিই একমাত্র ফ্রি আছি,নিজেকে খুব একা একা লাগছে এতটা একা আগে কখনও মনে হয়নি…
– মন খারাপ?
(হঠাৎ ভাইয়ার কণ্ঠ শুনে চমকে উথে পেছনে তাকালাম)
– ভাইয়া তুই!কখন এলি?
– অনেক্ষণ,এতক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তোকে দেখছিলাম।কি এত ভাবছিলি বলতো?
– ও কিছু না,তারপর বাড়ির সবাই কেমন আছে?আব্বু-আম্মু আর শ্রু..না মানে তুই কেমন আছিস?
– হুম সবাই ভালো,তুই শ্রুতিটাকে অনেক মিস করিস না?
– না মানে ওই আর কি
– আমিও পাগলীটাকে প্রচণ্ড রকমের মিস করি,আমি জানি আব্বু আম্মুও…কিন্তু কি করব বল,কেন যে ও এমন একটা কাজ করতে গেল!ওর জন্য তোর জীবনটাও…
– আচ্ছা বাদ দে,তা হুট করে এখানে আসলি যে?
– কেন তোর বাড়িতে কি আমি এমনিতেই আসতে পারিনা?
– তা পারিস কিন্তু…
– আরহাম আসতে বলেছিল
– মানে!
– মানে ও সকালে ফোন দিয়েছিল,বললো ওর ফিরতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে তাই আমরা যেন ঠিকমত তোর খেয়াল রাখি
– হুহ আমাকে একবার ফোন দেওয়ার সময় হয় না আর এখন আসছে দরদ দেখাতে (বিড়বিড় করে)
– কি রে কি বিড়বিড় করছিস?
– কি..ক..কিছু না
– যাই বলিস ছেলেটা কিন্তু তোকে অনেক ভালোবাসে,তোর জীবনে এত বড় একটা ক্রাইসিসের পর যে ওর তোর জীবনে এসেছে তাতে আমি অনেক খুশি।দেখিস ওই পারবে তোর জীবনটাকে ভালোবাসা দিয়ে ভরিয়ে দিতে
– আমি জানি কিন্তু বিনিময়ে আমি কি কখনও পারব উনাকে ভালোবাসতে?(মনে মনে)
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here