“ভালোবাসার_ভুল Part-11+12

0
266

#ভালোবাসার_ভুল
#writer_Sp_sanjana_(সাগরিকা)
Part-11+12
🍁🍁🍁🍁
প্রহর তার বাবার সাথে কথোপকথন শেষে বাকিদের নিঝুমের সব ডিটেলস কাল্কেট করতে বলে কখন কোথায় কার সাথে যায়।
অন্যদিকে,
নিঝুমের মন খারাপ তার ধারনা তার জীবনে অন্ধকার রাত ই থাকবে কারন তার জীবনে যে আকাঙ্খিত ভালোলাগার ছোঁয়া দিয়েছে সেই আড়ালে দূরে থাকা ব্যক্তির চিরকুট তিনদিন ধরে আসছে না তাতে নিঝুমের প্রান, চঞ্চল পাখির মতো ছটফট করছে একটা চিরকুট পাওয়ার জন্য।
প্রহর সবভাবে খোজ নিয়েও ব্যর্থ হয় কারন নিঝুম এখন বাইরে কোথাও যায় না যদিও যায় একা যায় না গার্ড থাকে সাথে।
প্রহর:- ডেড এই মেয়ে বের ই হয় না বাসা থেকে কিন্তু একে আমার খাঁচায় বন্দী হতেই হবে ।😂😂😂😂
চতুর্থ দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই নিঝুম হন্যে হয়ে তার ভালো থাকার একমাএ ঔষধ চিরকুট খুঁজতে থাকে আর পেয়েও যায়।
আজ ঝুড়িটা একটু বড় সাইজের আর আজ একটা নয় তিন ভাগে তিনটি ফুল আছে একভাগে শিউলে ফুল আর চিরকুট:-

“কিছু দিনের এই দূরত্বে।
কি পোড়ায় তোমায়?
নাকি ভুলেই গিয়েছিলে ,
কেউ আছে অপেক্ষায় ।”

দ্বিতীয়ভাগে রেইন লিলি আর চিরকুট সাথে একটা দিল্লী থেকে মানালী টোরের টিকিট। চিরকুট এ লেখা:-
প্লিজ টোর এ এসো হয়তো আমি তোমার সামনে আসবো না কিন্ত তোমায় খুঁজে নিতে হবে আমায়।
শেষভাগে সাদা জারবেরা ফুল আর চিরকুট-

“আজ থেকে হবে লোকুচোরি পর্ব শেষ
থাকবো আমি সামনে খুঁজবে তুমি রেশ।”

আজকের চিরকুট পেয়ে অনেক খুশি হয় নিঝুম।মনে হচ্ছে পৃথিবীর সব আনন্দ আজ তার কাছে ধরা দিয়েছে।সে এই ট্রিপে যাবে আর এই অপ্রকাশিত ভালোবাসার মানুষটির সন্ধান পাবে।নিঝুম ভেবে নিল সুযোগ পেলেই আজ বাবাকে বলবে সে এই ট্রিপে একা যেতে চায়।সামনের সপ্তাহে শুরু হবে ট্রিপ।টিকিটাও যে ট্রেবল এজেন্সির সেখান থেকে খোঁজ নিতে কোথা থেকে কখন শুরু হবে যাত্রা।গার্ডদের পাঠিয়ে দিলাম খুজ নিতে।
In Landon,
রাত ব্যানার্জি তার বিরাট বড় একটা কনর্সাটে গান গাইছে।সবার তার গানের সাথে নাচছে আর সবাই বলছে “onece more once more”
রাত একের পর এক গান গেয়েই চলেছে।কনর্সাট শেষে গ্রিন রুমে গিয়েই রাত তার ম্যানেজার মায়া কে ডাকে।মায়া কিছুদিন হল রাতের ম্যানেজার পদে জয়েন করেছে দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী তবু রাত তাকে একজন এমপ্লয় ই ছাড়া কিছু ভাবতে পারে না ব্যাপারটা ওকে জালায় যে মায়ার মায়া জালে সবাই পাগল সে জাল থেকে রাত কিভাবে মুক্ত।
রাত:- আগামী কিছুদিন আমি কোনো শো করবো না নতুন কোনো কন্টাক্ট হাতে নিবে না আমার দিল্লী যাবার টিকিট কাটো।দিল্লী যাবার পর তোমার কিছু দিনের ছুটি।
কিছুক্ষন পর ড্রেস চেঞ্জ করে প্রাইভেট কার নিয়ে চলে যায় হোটেলে ডিনার শেষে ব্যাগ প্যাক করে ব্যালকনিতে বসে আছে।ঘন্টা তিনেক পর তার ফ্লাইট এয়ারপোর্ট যাবে কিছুক্ষন বাদে। ব্যালকনিতে বসে ভাবছিল সেইদিনের কথা যেদিন নিঝুম কে সে প্রথম দেখেছিল ফাইট এরজন্য দেরি হয়ে যাচ্ছিল দিল্লীর গাড়ির জামে বসেছিল রাত আর খুব বিরক্ত হচ্ছিল হঠাৎ তার উপর আবার বিষ্টি নেমে আসে তখনই তার চোখ যায় সামনে গাড়ি থেকে নামা সাদা ডিজাইনার শাড়ি পড়ে রাস্তার পাশে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টি বিলাসী এক মেয়ের উপর কিন্তু কিছুসময়ের মধ্যে জ্যাম ছুটে রাতের এগিয়ে যায় ফলে মেয়েটিকে আর দেখতে পায় না পরের তার বিষয়ে খবর নেয়।এইসব ভাবতে ভাবতে টাইম হয়ে যাওয়ায় এয়ারপোর্টে র জন্য বেরিয়ে পরে রাত দিল্লী আসার উদ্দেশ্যে।
In Delhi,
নিঝুম রাতে খেতে বসে নীলকে বলে-
নিঝুম- বাবা আমি সামনের সপ্তাহে মানালি যেতে চাই টিকিট পেয়ে গেছি আমি শুধু একা যাওয়ার পার্মিশান চাই।
নীল(নিঝুমের বাবা):-কি বলছিস তুই একা কোথাও যেতে পারবি না গার্ড নিয়ে যা তুই তো জানিস আমার অনেক শত্রু যারা তোকে টার্গেট করবে।
নিঝুম:- বাবা আমার কিছু হবে না প্লিজ বাবা আমাকে যেতে দেও আমি তো তোমার কাছে কখনো কিছু চাইনা প্রথম বার চাইছি আমাকে দিয়ে দাও যেতে।
নিঝুমের বাবা:- আচ্ছা ঠিক আছে তুই জা।
আমি তোর জন্য কমিশনারের সাথে কথা বলব যাতে তোর উপর দূর থেকে নজর রাখার জন্য কাউকে এপয়েন্ট করে(মনে মনে)
নিঝুম অনেক খুশি তার খুশি দেখে নিলীমাও অনেক খুশি তার মেয়ে যে অনেকদিন পর আবার আগের মতো হাসছে। নিঝুম রুমে গিয়েই ব্যাগ গুছাতে লেগে পরে। এইভাবে রাত কেটে যায়।পরদিন দুপুরে রাত দিল্লী আসে তার বাসায় কিছুদিন এখানে বাবা মায়ের সাথে সময় কাটিয়ে মানালী ট্রিপে যাবে।
রাতের বাসায়,
রাত:- মামনী মামনী তুমি কোথায় তোমার ছেলে এসে গেছে।
প্রীতি(রাতের মা):- এতোদিনে মনে পড়ল মামুনীকে তোর তো ফ্যান ই তোর সব।
রাত:- মামুনী তো দেখছি অভিমান করেছে রাগ করে না মামুনী আমি এইবার পুরো একসপ্তাহ থাকবো তোমার সাথে। বাবা কোথায়?
প্রীতি:- তার আসার সময় হয়ে এসেছে কিছুক্ষন বাদে চলে আসবে তুই রুমে যা ফ্রেশ হয়ে নে।
রাত ফ্রেশ হতে রুমে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে কিছুটা সময় রেস্ট নিয়ে এসে খাবার টেবিলে বসে।
প্রিয়াঙ্ক ব্যানার্জি (রাতের বাবা):-এবার কতদিনের জন্য আসা হল।
রাত:- বাবা তুমিও এমন করছো।এখন আমি কিছুদিনের জন্য এখানেই আছি তারপর কিছু সময়ের জন্য মানালী ট্রিপে যাব।
রাতের বাবা:- ওহ। যা ভালো মনে করিস কর।
চলবে………….
( কেমন লাগছে গল্পটা জানালে খুশি হব।)

Part-12

এইভাবে হাসি আনন্দে নিঝুম আর রাত এর তাদের ফ্যামিলি র সাথে কাটানো দিনগুলো ফুরিয়ে আছে।আর তারা পৌঁছায় তাদের বহু প্রতীক্ষিত দিনে।আজ সকাল থেকেই নিঝুম তাড়াতাড়ি উঠে রেডি হতে লেগে যায়।আজ সে পড়েছে লং কুর্তি সাথে জিন্স আর ম্যাচিং কানের দুল হাই হিল।সকালে জলখাবার খেয়ে টেক্সি বুক করে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে যায় রেল স্টেশনের উদ্দেশ্যে সেখানে ট্রেবল এজেন্সির থেকে সবার জন্য সাথে নিঝুমের জন্য ও দিল্লী টু চন্ডীগড় সিট বুক করা আছে।নিঝুমের স্টেশনে পৌঁছাতে একটু লেট হয়ে যায় যার ফলে কামড়া খুঁজতে ট্রেন ছেড়ে দেয় আর নিঝুমকে দৌরে একদম শাহরুখ খানের সিনেমার স্টাইলে ট্রেনে উঠতে হয়।ট্রেনে উঠেই নিঝুম অবাক হয় তার হাত ধরা মানুষটিকে দেখে তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রাত ব্যানার্জি যার হাত ধরার জন্য হাজারো মেয়ে পাগল সে আজ নিঝুমের হাত ধরে তুলেছে।নিঝুম গিয়ে নিজের সিটে বসে আর ঐখানেই পায় আজকের সাদা গোলাপ আর চিরকুট।যাতে দুই লাইন লেখা-

“তোমায় আমায় দেখা হওয়ার এটাই প্রথম পদক্ষেপ;
আজ থেকে থাকবে না কোনো না পাওয়ার
আক্ষেপ।”
চিরকুট পেয়ে নিঝুম এইটা সিউর হয় যে তার নিশ্চুপ ভালোবাসার মানুষটা কাছেই কোথাও আছে। তখনই পাশের সিটে এসে রাত বসে ।এইভাবে গাড়ি চলতে থাকে নিজের গতিতে।নিঝুম ব্যাগ গুছিয়ে উপরে রেকে রাখতে গিয়ে হালকা ধাক্কায় টাল সামলাতে না পেরে নিঝুম গিয়ে পড়ে রাতের কোলে। নিঝুম প্রচুর রেগে যায় আর রাতকে বলে
নিঝুম:- কি হচ্ছে এটা আপনি আমাকে কুলে চেপে ধরলেন কেন? সব রকস্টার ই এমন ক্যারেক্টারলেস ।😡
রাত:- কি বললে আমি ক্যারেক্টারলেস তুমি নিজে এসে আমার কুলে পড়লে আর এখন আমি ক্যারেক্টারলেস?
এভাবে ঝগড়া করতে করতে যে যার জায়গায় বসে।সারা রাস্তা দুজন কথা কম ঝগড়া বেশি করে। ট্রেনে স্টেশন সিগন্যাল এ সমস্যা হওযায় রাতেও চন্ডীগড় পৌঁছাতে পারে না ট্রেন। রাতে যখন সবাই ঘুমিয়ে পড়ে তখন ও রাত উপরের সিটে শুইয়ে নীচের সিটে শুয়ে ঘুমিয়ে থাকা নিঝুমকে অপলক ভাবে দেখতে থাকে।কাকভোরে সবার ঘুম ভাঙলে সবাই যে যার মতো ফ্রেশ হতে বাথরুমে যায় কিন্ত রাত যায় না সে অনেক আগেই উঠে ফ্রেশ হয়ে গিয়েছিল।নিঝুম ফ্রেশ হয়ে আসতেই সিটে দেখতে পেল তার চির পরিচিত চিরকুট সাথে একগুচ্ছ মল্লিকা ফুল।

“তুমি আমার নও তবু আমার ই মনে হও
রোদের তীব্রতার শেষে হালকা বৃষ্টি হয়ে রও
তোমায় ভালোবেসে দিয়েছি মনের ঠিকানা
চাইলে এসো নয়তো দূরেই রও”

ভোরেই ট্রেন পৌছাছে চন্ডীগড়।এখান থেকে যাত্রা হবে এসি বাসে। তৎক্ষনাৎ সবাই উঠে পড়ল বাসে যাত্রা শুরু।ভাকরা নাঙ্গাল বাঁধ পেরিয়ে পঞ্জাবের রোপারে ব্রেকফাস্ট,তারপর দুপর দুপর মান্ডি পৌঁছে মধ্যাহ্ন ভোজ।এর মাঝে যতবার সুযোগ পেয়েছে রাত নিঝুমকে অনেক জালিয়েছে ফলশ্রুতিতে নিঝুম গাইডদের বলে সিটে চেন্জ করে নিয়েছে। মধ্যাহ্নভোজ শেষে সবাই যে যার মত বাসে উঠে পড়ল।ভোজনের ফলে সবার ই হালকা হালকা ঘুমাচ্ছিল।কিন্ত রাত ব্যাস্ত তার নিঝুমকে দেখতে।এখন তাদের গন্তব্য কুলু।কিছুক্ষন পর রাত গিয়ে বসল ড্রাইভারের পাশে।রাত আগেও এসেছে এখানে ঘুরতে মানালী তার এখন সবটাই জানা তাই নি্রবিকার ভাবে ড্রাইভারের পাশে এসে বসল।চালকটি এক তরুন শিখ। নাম বান্টি সিং।রাত তাকে জিজ্ঞেস করল,
রাত:- কুলু পৌছনে মে অর কিতনা বক্ত লাগেগা হাম লোগোকো?( কুলু পৌঁছাতে আর কতটা সময় লাগবে আমাদের?)
ড্রাইভার:- অর পঁচিশ – তিরিশ কিলোমিটার।পৌঁছতে পৌঁছতে সাম হো জায়েগা।( পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে যাবে।
রাত:- wow কুলু হল ভারতের একটা বিখ্যাত টুরিস্ট প্লেস। হিমালয়ের একটা প্রধান গেট ও বলে এটাকে।আজ রাতের পরিবেশ ও দেখা যাবে আগের বার এসেই ব্যাংক করতে হয়েছিল।
নিঝুম এবার নিজেই উঠে এল রাতের ঐদিকে বাইরের ভিউ দেখবে আর গল্প করবে বলে।কুলু মানালীর বিষয়ে অনেক পড়েছে সে কিন্ত আসা হয়ে উঠেনি কখনো।
রাত:- কি হল উঠে এলেন যে আমার থেকে দূরে থাকতে ভালো লাগছে না বুঝি।
নিঝুম:- যা সবসময় শুধু বাজে বাজে কথা সবাই তো ঘুমচ্ছে আমি একটু গল্প করতে আসলাম।সেই কখন মান্ডি থেকে তো শুধু পাহাড় আর পাহাড় ই দেখছি, দু ঘন্টা ধরে তো পাহাড় ই গুনে যাচ্ছি।
রাত:- কেন সঙ্গে সঙ্গে যে বিপাশা নদীটা চলছে, সেটা নজরে পড়ছে না?এই বিপাশা তো সারাক্ষন ই পাশে থাকবে সেই কুলু মানালী পাড় হয়ে রোটাং পাস পর্যন্ত।
নিঝুম:- বাহ তুমি দেখি অনেকটাই জানো।আগেও এসেছো নাকি?আমি তো শুনেছিলাম কুল হল গিয়ে ভ্যালি অফ গডস্। দেবদেবীর উপত্যকা।
রাত:- অনেক বার এসেছি গান গাওয়া টা যেমন আমার ফ্যাশন তেমন ট্রেভেলিংটাও।
কথোপকথনের মাঝেই সূর্য ঢাকা পড়ছে এক পাহাড়ের আড়ালে। মাথার উপর ঝকঝক করছে আকাশ,তবু আলো যেন মরে এল সহসা। দ্রুত ছায়া ঘনাচ্ছে। পাহাড়ের গায়ে, দূরে দূরে, দেখা যায় ছোট ছোট গ্রাম। আলোছায়া মাখা চাষের খেতগুলোও যে এখন কী অপরূপ।
নিঝুম একদৃষ্টে জানালা দিয়ে বাইরেটা দেখছিল। অস্ফুটে বলে উঠে- অসাধারণ ঠিক যেন পটে আঁকা ছবির।
চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here