#ভালোবাসার_ভুল
#Writer_Sp_sanjana_(সাগরিকা)
🍁🍁🍁🍁
Part-17+18
কিছুক্ষন আগে যা ঘটল আমরা শুনে আসি।মেয়েটা মায়া বাসে উঠেই সে রাতকে এসে বলে।
মায়া:- রাত তুমি এতদিন কোথায় ছিলে তোমায় ফোনে পাচ্ছিলাম না কেন? তোমার শো কাল দিল্লীতে তোমাকে এখনি আমার সাথে যে হবে।বলেই রাতকে কিছু বলতে না দিয়ে নিজের সাথে নিয়ে য়ায়।
নিঝুম এতক্ষন নিরব দর্শকের মতো সবটাই দেখেছে কিন্ত কিছুই বলেনি ওর মাথায় একটা কথাই ঘুরছিল এই মেয়েটা কে? আর এতো অধিকার নিয়ে কেন কথা বলছিল।তবে কি রাতের লাইফে অন্যকেউ আছে? না তা কিভাবে সম্ভব রাত ই তো সে যে তাকে রোজ চিরকুট দিত।কিছু মাথায় আসে না নিঝুমের।অনেক কান্না পায় তবে কি সে আবার ভুল করেছে “ভালোবাসার ভুল”এইসবভাবতে থাকে।বাসের বাকি সবাই ও হা করে দেখছিলো।
এখন একটু প্রহরের দিকটা ঘুরে আসা যাক সে কখনোই বসে থাকার মতো মানুষ না।প্রহরের লোক সেই কুলু থেকেই তাদের পিছু করছে তারা শুধু রাতের নিঝুমকে ছেড়ে যাওয়ার অপেক্ষায় ছিল।মায়া রাতকে নিয়ে যাওয়ার পর তাদের সুবিধা হয় আর প্ল্যান করতে শুরু করে নিঝুমকে বাস থেকে কিভাবে নামানো যায়।তাই তারা স্পীড বাড়িয়ে বাসের কাছাকাছি গিয়ে চাকার নিচে কিছু পিন ফেলে দেয় আর চাকা পাঞ্চার হয়ে।সবাইকে কিছুক্ষনের জন্য গাড়ি থেকে নামতে বলে গাড়ি ঠিক করতে লাগে হেলপারা।সবাই আসেপাশে ঘুড়ে বেরাছিল কিন্তু নিঝুম একা একা হাঁটতে থাকে রাতের কথা ভেবে।রাতের ভাবনায় এতোটাই মগ্ন থাকে যে কেউ তার পিছু নিয়েছে সেটাও নজরে আসে না।তাই খুব সহজেই প্রহরের লোক নিঝুমকে তুলে নিয়ে যায়।
অন্যদিকে মায়া রাতকে এভাবে নিয়ে আসায় রাত অনেকটাই রেগে যায়।রাত মায়াকে বলে:- মায়া বাসে এইটা কি হচ্ছিল? তুমি আমাকে নাম ধরে কবে থেকে ডাকা শুরু করলে?
মায়া:- আসলে স্যার আপনাকে ফোনে পাচ্ছিলাম না আর কাল আপনার শো তাই টেসশান এ এভাবে কথা বলে ফেলেছি সরি স্যার।
রাত:- সরি বললেই হবে আমি নিঝুমকে ঠিকভাবে বায় ও বলতে পারলাম না তোমার জন্য।ও একা যেতে পারবে কিনা কে জানে।আমাকে ফোন করতে হবে তাকে বলেই দু-তিন বার ফোন করে কিন্তু কেউ ধরে না।রাত ভাবে নিঝুম রাগ করেছে তাই ধরছে না তাই আর ফোন করে না।
রাতের দিকে প্রহরের লোকরা নিঝুমকে নিয়ে প্রহরের বাসায় পৌছায়।
১ম ছেলে:- বস পাখি নিয়ে এসেছি এখন তোমার খাঁচায় বন্দী কর।
প্রহর:- তাতো করবোই এখন একে গেষ্ট রুমে বেঁধে রাখ সকালে বাবার সাথে কথা বলে দেখছি এর সাথে কি করতে হবে।
প্রহর শুতে চলে যায় দুজন ছেলে নিঝুমকে পাহাড়া দেয়।সকালে প্রহরের ঘুম ভাঙতে দেরি হয় দুপুরের দিকে আবির শাহ্ আর প্রহর মিলে ঐ রুমে যায় যেখানে নিঝুমকে রাখা হয়েছে।নিঝুমকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে রাখা হয়েছে।
প্রহর:- বাবা বল এর সাথে কি করব? মেরে ফেলবো কি তাহলে মেয়ে মরার শোকে মা বাবা দুটোই মরবে।
আবির শাহ্:- নো ইটস্ নট রাইট। এতো সহজ মৃত্য দেব না মরবে তবে নিজের মেয়েকে চোখের সামনে তিলেতিলে মরতে দেখে মরবে।একে তুই বিয়ে করার ব্যবস্হা কর তারপর আমি নীলিমাকে বোঝাবো আমাকে রিজেক্ট করার ফল কি আর নীল দিবে বুঝবে বেইমানীর খেসারত। প্রহর লোক লাগিয়ে দেয় বিয়ে ব্যবস্হা করার জন্য কাল সকালে বিয়ে হবে মন্দিরে। সন্ধ্যায় যখন নিঝুমের জ্ঞান ফিরে তখন অনেক চেঁচামেচি করে।
নিঝুম:- তোমারা কে আর কেন আমাকে এখানে নিয়ে এসেছো?
তখনই রুমে প্রবেশ করে আবির শাহ্ আর প্রহর।
আবির শাহ্:- আমি আনিয়েছি তোমায় এখানে ।আমি তোমার সাথে প্রহরের বিয়ে দিয়ে নীল চ্যাটার্জিকে উচিৎ শিখা দিতে চাই। নীলিমা ও কাঁদবে তোমার জন্য।
প্রহর:- বাহ বাবা একডিলে দুইপাখি।
নিঝুম:- কেন এমন করছো তোমারা? আমি কি করেছি? প্লিজ আমাকে যেতে দেও।
আবির শাহ্:- কথায় আছে বাবা মায়ের কর্মফল ছেলে মেয়ে পায় ঠিক তেমনি তুমি পাবে তোমার বাবার কর্মফল।
নিঝুম:- কিসের কর্ম?কিসের ফল? কিছু বোঝতে পারছি না আমি?প্লিজ ক্লিয়ার করে বলুন?আমার বাবা কখনো কিছু ভুল করতে পারে না।আপনার নিশ্চয় ভুল হচ্ছে।
আবির শাহ্:-
২৫ বছর আগে,
নীল আর আমি ছিলাম একে অপরের পরম বন্ধু।তার যখন ৮ বছর বয়সে মা মারা য়ায় তখনই আমাদের বন্ধুত্ব শুরু হয়।একসাথে স্কুল শেষ করে দু’জনই এন্ট্রান্স দেই।দুজনের কলেজ হয় দু জায়গায় প্রথমে নীল আমাকে ছাড়তে না চাইলেও পরে আমার ক্যারিয়ারের কথা আমাকে যেতে দেয়।তারপর ও আমরা ছিলাম কাছাকাছি ছুটিতে আমরা একে অপরের সাথেই কাটাতাম।
চলবে……..
(সামনে পর্বে অনেক রহস্যের উপর থেকে পর্দা উঠতে চলেছে সবাই সাথেই থাকবেন।আসা করি ভালো লাগছে?)
Part-18
একদিন নীল রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছিল হঠাৎ একটা ছোট কুকুরকে রাস্তায় ছোটাছুটি করতে দেখে সামনে থেকেই একটা গাড়ি আসছিলো তাই নীল দৌড়ে গিয়ে কুকুর টিকে বাঁচায় কিন্ত সে সামান্য ব্যাথা পায় কিন্তু কুকু্রটিকে আদর করে ছেড়ে দেয়।উঠে দাঁড়িয়ে সামনে তাকাতে এক সুন্দর মেয়েকে গাড়ি থেকে নামতে দেখে মুগ্ধতার নয়নে তাকায়।আর নীলিমাকে বলে-
নীল:- অপনি কিন্তু গাড়ি চালাতে পারেন না একটু জন্য আমি না দেখলে কুকুর টা আজ মরে যেত।
নীলিমা:- আসলে আমি সত্যি দুঃখিত কুকুর টা হঠাৎ চলে আসায় দেখতে পাই নি।
নীল:- পরবর্তী সময়ে সাবধানে চালাবেন।
নীলিমা:- আরে আপনি তো হাতে ব্যাথা পেয়েছেন।চলুন আমি আপনাকে হসপিটাল এ নিয়ে য়ায়।
নীল:- না না এসব লাগবে না নিজে ই ঠিক হয়ে যাবে।
নীলিমা:- আরে চলুন তো আপনি গাড়িতে উঠুন।
নীলিমা নীলকে হসপিটালে নিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেয়।তারপর বাসায় পৌছে দেয়।এরপর কিছুদিন নীল শুধু নীলিমার ভাবনায় কাটায়। আবির ও একদিন নীলকে ফোন দেয়।অনেকদিন নীল তাকে ফোন না দেওয়ায় আবির রাগ করেই ফোন করে।
আবির:- আমায় তো ভুলেই গেলি দোস্ত।
নীল:- না আসলে প্রথম বার কারো প্রেমে পড়েছি।তারপর নীলিমার সাথে সাক্ষাৎ এর বর্ণনা দেয়।
আবির:- বাহ্ তা ভাবির নাম কি? কোথায় বাড়ি দেখতে কেমন রে?
নীল:- সেটাই সমস্যা নাম ঠিকানা কিছুই জানি না।
আবির:- তাহলে আর কি হবে ভুলে যা এই মেয়েকে কোথায় আবার খুঁজবি।
নীল:- না রে আমার মন বলছে তাকে আমি পাবোই।
তারপর কিছুদিন চলে গেলে একদিন নীল তার বাবাকে রিসিভ করতে এয়ারপোর্ট যায়।তখন আবার নীলের সাথে দেখা হয়।দুজনেই কিছুসময় কথা বলে আর কফি ডে তে যায়।
নীল:- আপনাকে আমি কতো খুঁজেছি জানেন।
নীলিমা:- তাই বুঝি? আমি জানতাম না জানলে হয়তো আর আগে দেখা করতাম হা হা হা।
নীল:- আমি কি আপনার ফোন নাম্বারটা পেতে পারি।
নীলিমা:- হ্যাঁ এই নিন আমার কার্ড।
নীল:- বাহ্ আপনি দেখি গান ও শেখান।আমি কি আসতে পারি আপনার গান শুনতে।
নীলিমা:- হ্যা অবশ্যই।
এইভাবে কিছুদিনের মধ্যেই এদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব হয়ে উঠে। হঠাৎ একদিন নীলিমা গভীর রাতে নীলকে ফোন করে দেখা করতে বলে।নীল আসলে লুকিয়ে দেখা করে একটা ঘড়ি দেয় ঠিক করে আনার জন্য।
নীলিমা:- এইটা আমার বাবার দেওয়া প্রথম ঘড়ি এটা ভেঙে গেছে জানলে বাবা কষ্ট পাবে।আমি চাই তুমি আমাকে এটা কাল সকালের মধ্যে ঠিক করে এনে দেও প্লিজ।
নীল:- আচ্ছা তা এনে দেওয়া যাবে। কিন্তু তুমি এতো রাতে আমাকেই বললে ফোন করে অন্য কাউকে নয় কেন?
নীলিমা:- আমার এই শহরে কেউ বন্ধু নেই।আপনার বন্ধু সংখ্যা এমনেতেই অনেক কম।
নীল:- ঠিক আসে আসি সকালে দেখা হবে।
এইভাবে প্রায় দিন দেখা করা কখনো নীল চলে যায় নীলিমা র গানের স্কুলে তো কখনো নীলিমা দেখা করে বিভিন্ন জায়গায়।এরমধ্যে নীলের আবিরের সাথে কথা বলার পরিমান একটু কমে আসে।একদিন হঠাৎ আবিরের বাসায় নীল দেখা করতে গেলে নীলিমাকে দেখতে পায়।
নীল:- তুমি এখানে?
নীলিমা:- এটা বাবার বন্ধুর বাসা পূজোর নেমন্তন্ন করতে এসেছিলাম।আর তুমি?
তখনই আবির আসে আর বলে- নীল আমার ছোট বেলার বন্ধু।
নীলিমার মা ডাকায় নীলিমা চলে যায়।আবির আর নীল কথা বলতে থাকে।
আবির:- জানিস নীলিমা কে মা অনেক পছন্দ করে মা বলছিল পূজো তে গেলে ওর সঙ্গে বিয়ের কথা বলবে।
নীল:- আর তুই?পছন্দ করিস না?
আবির:- সত্যি বলতে কি আমিও ওকে অনেক পছন্দ করি।তাইতো মাকে হ্যাঁ বলে দিয়েছি।আচ্ছা ছাড় তো আমার কথা তুই বল ও মেয়েকে পেয়েছিস? নাম কি?
নীল:- যদি বলি এই নীলিমা ই সেই।হম নীলিমাই সে যাকে দেখেই আমি ভালোবেসেছি।
আবির:- কি বলছিস এইসব।
নীল:- দেখ আমি তোর থেকে লোকাতে চাইনি তাই বলে দিলাম।আমি চাইনা কোনো মেয়ের জন্য আমাদের মধ্যে জগড়া হোক। যেহেতু আমরা কেউই এখনো তাকে প্রোপজ করিনি এখন আমরা একইসাথে দুজনেই ওকে প্রপোজ করবে।
আবির:- নীলিমা যাকে হ্যাঁ বলবে সেই তাকে বিয়ে করবে।
নীল:- হ্যাঁ তাহলে কাল ই আমরা দেখা করি।
পরদিন নীলিমাকে দুজন একসাথে কফি শপে ডাকে আর প্রপোজ করে।এটাও বলে সিদ্ধান্ত নীলিমার।সে যাকেই নির্ধারিত করোক না কেন ওদের বন্ধুত্ব সবসময় থাকবে।
নীলিমা:- দেখ এভাবে সম্ভব না আমার কিছুদিন সময় লাগবে।
আবির:- হ্যাঁ তুমি তোমায় পযাপ্ত সময় নেও।
তারপর ওরা চলে আসে।
তারপর থেকে ওরা তিনজন একসাথেই দেখা করত,ঘুরতে যেতে।
একদিন নীলিমা নীলকে একা দেখা করতে বলে।নীল আসে নীলিমার সাথে দেখা করতে স্কুলে।
নীলিমা:- নীল আমি তোমাকেই বিয়ে করতে চাই।তুমি প্লিজ তোমার বন্ধুর সাথে কথা বলে এ বিয়ে না হয় ব্যবস্হা নিবে।
নীল:- এসব কি বলছ তুমি? আমি আবির কে এসব বলতে পারব না। তুমি আমাকে এখানে একা ডেকে ভুল করেছো আমায়।
তখন কিছুটা দূর থেকে আবির ওদের দেখে ফেলে আর ভাবে নীল তাকে প্রতারনা করছে যার জন্য সে রেগে যায় আর বলে তুমি কতটা নিচে নামতে পারো।ভুল বুঝে কারন আবির ওদের কথোপকথন শুনতে পায়নি কেবল দূর থেকে দেখতে পায়।
নীলিমা:- দেখ তুমি যদি তোমার বন্ধুকে না বল তাহলে আমি মা বাবাকে তোমার কথা বলতে বাধ্য হব।আর আবিরের এইভাবে অপমান হবে। তুমি কি চাও এইসব?
নীল:- দেখ নীলিমা আমার জন্য আমার বন্ধু সবার উপরে।সেই ছোটবেলা থেকে যখন কেউ আমার বন্ধু ছিলো না তখন থেকে সে আমার বন্ধু।তুমি আমার জন্য হলেও তার ভালোবাসা গ্রহন কর।আমি চাই তার সাথেই থাকো তুমি।
নীলিমা:- এসব কি বলছো তুমি আমি তোমাকে ভালোবাসি আর তোমাকেই বিয়ে করব আর কাউকে না তোমার বন্ধুত্বকে তুমি এর মাঝে আনতে পারো না।
দুজনের মধ্যে এইভাবে কথা হয় তারপর তারা সিদ্ধান্ত নেয় একসাথে কাল গিয়ে কথা বলবে আবিরের সাথে।এখন দেখার হল কাল এমন কি হয়েছিল যে নীল আর আবির এখন এতো বড় শত্রু।
চলবে………
( কেমন লাগছে জানাবেন।দেখা হচ্ছে সামনের পার্টে)