ভালোবাসা রং বদলায় গল্পের লিংক | আকাশ মাহমুদ | পর্ব -০১

বিছানা থেকে এক হেচকা টানে রূপাকে মেঝেতে ফেলে দিলো ধ্রুব। তারপর রূপার চুলের মুঠো গুলো শক্ত করে ধরলো সে। অপরদিকে ধ্রুবের হাত থেকে চুল ছাড়াবার ব্যর্থ চেষ্টা করতে লাগলো রূপা। কিন্তু ধ্রুপের জোরের সাথে সে পেরে উঠলো না। ধ্রুব এক হাত দিয়ে রূপার চুল আর অন্য হাত দিয়ে রূপার গাল টিপে ধরে চেচিয়ে বলতে লাগলো,
– ‘তোকে বলেছি না আমার রুমে এসে হক জমাতে আসবি না! আমার বেডে উঠলি তুই কোন সাহসে? এতবার মাইর খাওয়ার পরও তোর সাহস আসে কো’থেকে?’
রূপা কিছু বললো না। চুপচাপ সে ধ্রুবের অত্যাচার গুলো সহ্য করতে লাগলো। এটা নতুন কিছুই না। প্রতিনিয়ত রূপাকে এমন শাস্তি ভোগ করতে হয়। এটাই হয়তো তার নিয়তির লেখন। সারাজীবন কষ্ট ছাড়া কিছুই পায়নি সে! রূপার চোখ বেয়ে টুপ করে এক ফোঁটা অশ্রু ঝরে পড়লো।

মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে রূপা। রূপারা দুই বোন। ওর ছোট বোন দশম শ্রেণীতে পড়ে। ছোটবেলায় তারা অনেক গরিব হলেও সুখের কোনো কমতি ছিল না তাদের। রূপা যখন তৃতীয় শ্রেণীতে পড়তো তখন হঠাৎ তাদের মা রোড এক্সিডেন্টে মারা যান। তখন থেকে তাদের জীবন থমকে যায়। মা মরা সন্তান দুটোর চোখের পানি কিছুতেই সহ্য করতে পারছিলেন না মহসিন সাহেব। তাই তিনি দুটো সন্তানের ভালোর জন্য জাহানারা বেগমের সাথে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু কথায় আছে না? সুখ সবার কপালে জুটে না। তাই হয়েছিল রূপাদের সাথে। কে জানত তাদের কপালে এমন একটা দজ্জাল মা জুটবে?(লেখক মাহমুদ)

প্রায় একমাস পেরিয়েছে ওদের বিয়ে হয়েছে। কিন্তু সেই বিয়ের প্রথম দিন থেকেই ধ্রুব তার সাথে ভালোভাবে কথা বলে না। ধ্রুবের কথামত না চললেই এলপেথারি মারধর করা শুরু করে দেয়। রূপা বুঝে উঠতে পারে না তার দোষ টি কি? কেন তাকে এভাবে মারধর করে ধ্রুব! এসব প্রশ্ন তার মনের মধ্যে সীমাবদ্ধতা থাকে। কখনো মুখ তুলে বলতে পারেনি সে ধ্রুবকে। বলেনি বললে ভুল হবে। একবার সে ধ্রুবের সাথে এই বিষয়ে কথা বলেছিল। কিন্তু সেদিন ধ্রুব রূপার গালে একটা চড় বসিয়ে তার হাত ধরে গাড়ির দিকে টেনে হিচরে নিয়ে গিয়েছিল। তারপর থপ করে রূপাকে গাড়িতে বসিয়ে দেয় সে। রূপা ভয়াত কন্ঠে তার উদ্দেশ্য বলেছিলো, ‘এত রাতে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে? প্লিজ গাড়ি থামান। আমি কিন্তু এখনও আমার প্রশ্নের উত্তর পায়নি। দয়া করে বলুন আপনি আমার সাথে এমন আচরণ কেন করেন? কি দোষ করেছি আমি? কোন পাপের শাস্তি দিচ্ছেন আমাকে?’ সেদিন ধ্রুবের একটি ধমকে ভয়ে চুপসে গিয়েছিল রূপা। ভয়ে আর একটা কথাও বলতে পেরেছিল না সে। হঠাৎ গাড়িটা নির্জন জায়গায় থামতেই রূপা আবারও মুখ খুলেছিল। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলেছিল, ‘আমাকে কোথায় এনেছেন? আমার খুব ভয় করছে। (লেখক মাহমুদ)
দয়া করে এখান থেকে চলুন।’ সেদিন রূপার কোন কথায় কানে নেইনি ধ্রুব। রূপার হাত ধরে টেনে নিয়ে গিয়েছিল ভয়ংকর একটি জায়গায়। গন্তব্য পৌঁছাতেই থেমে যায় ধ্রুব। এরপর রূপাকে কবর স্থানের দিকে জোড়ে ধাক্কা দেয় ধ্রুব। রূপার সেদিন ভয়ে চোখমুখ লালে ধারণ করেছিল। সে ভয়ে ভয়ে কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেছিল, ‘আমাকে কবরস্থানে কেন এনেছেন? ছোটবেলা থেকেই আমি কবরস্থান দেখলে ভয় পাই। সেখানে আপনি আমাকে এতরাতে এখানে জোরপূর্বক কেন এনেছেন? প্লিজ আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলুন। এখানে ভূত আছে আমাকে মেরে ফেলবে।’ সেদিন রূপা অনেক আকুতি বিনুতি করলেও ধ্রুব তার কথা কানে নেইনি। কড়া কন্ঠে সেদিন সে তার উদ্দেশ্য বলেছিল, ‘স্যাট আর্প। ধ্রুব মাহমুদ কে প্রশ্ন করা না? তোমার সাহস হয় কিভাবে আমার মুখের উপর কথা বলার? একটা কথা মনে রাখবা আমার মুখের উপর কথা বলা কতটা ভয়ানক হতে পারে তা তুমি কখনো কল্পনা করতে পারবে না। আজ পর্যন্ত কেউ আমার হাত থেকে রেহাই পায়নি। ইউ! তুমিও পাবে না।’ সেদিন কথাগুলো বলে রূপাকে কবরস্থানে একা রেখে চলে গিয়েছিল ধ্রুব। রূপা সেদিন ভয়ে ভয়ে কাঁপছিল। চিৎকার দিয়ে সেদিন কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি ভাসিয়ে ছিল। সেই নির্মম রাতের কথা মনে পড়লেই এখনও ভয়ে কুকড়ে যায় সে। কি ভয়াবহ নাই ছিল সেই রাতটি! সেদিন যদি ও না আসতো তাহলে আজ সে…

ধ্রুবের কথায় চিন্তারাজ্যর বেড়াজাল ছিড়ে বেরিয়ে এল রূপা। ধ্রুব আবারও বলতে লাগল,
– ‘সেদিনের রাতের কথা মনে আছে তোর? সেদিন তো শুধু কবরস্থানে রেখে এসেছিলাম তোকে। এবার যদি বেশি বাড়াবাড়ি করিস তাহলে তোকে ঘর থেকে বাইরে বের করে দেবো। রাস্তার হ্রিংস পশুরা যখন তোকে ছিড়ে ছিড়ে খাবে, তখন টের পাবি আমার কথা খিলাফ করার শাস্তি কতটা ভয়ানক।’
কথাগুলো বলেই রূপাকে স্ব’জোড়ে একটা ধাক্কা দিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল ধ্রুব। মাথার ব্যাথায় চোখ ঝাপসা হয়ে এল রূপার। ছোট্ট একটি সুরে অস্ফুট কন্ঠে বললো,
– ‘দ্বীপ….’

– ‘কিরে নবাবের বেটি! কই যাওয়া হইতেছে?’
জাহানারা বেগমের কথায় থমকে দাঁড়াল নিপা। সে আমতা আমতা করে বলল,
– ‘আপুকে অনেক দিন হয়েছে দেখি না। তাই….’
– ‘তাই কি হ্যা? শোনো মাইয়া, আমার সামনে ওই মাইয়ারে বোনের পরিচয় দিবি না। ওই নষ্টা মাইয়া ডা যা যা কৃতকর্ম করছে, আমাগোর সকলের সামনে মাথানত করাইছে সব কি ভুলে গেছোস?’
– ‘মা প্লিজ! আমার আপুর নামে আর একটাও বাড়তি কথা বলবে না।’
– ‘আমি বুইঝা গেছি। তুইও ওই মাইয়ার মত একটা পোলার হাত ধইরা ভাইগা যাবি, আর সাথে আমাগোর নামও ডোবাবি!’
– ‘সত্যি বলতে আজ আমি এই কথাটি বলতে বাধ্য হচ্ছি, সৎ মা কখনো আপন হয় না।’
নিপার কথা শুনে জাহানারা বেগম চোখমুখ কুঁচকে রাগান্বিত কন্ঠে বললেন,
– ‘কি কইলি তুই? খাড়া! তোরে আইজ যদি আমি গরম খুন্তির ছ্যাকা না দিছি তই আমার নামও জাহানারা নাহ!’

রূপার যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন নিজেকে আবিষ্কার করলো ধ্রুবের বিছানাতে। সে এখানে এল কিভাবে? তার যত দূর মনে আছে সে মেঝেতে পড়েছিল। তাহলে কে আনল তাকে?
রূপার ভাবনার অবসান ঘটল ফারজানা বেগমের ডাকে।
– ‘কি রে মা? এখন কেমন আছিস?’
– ‘জি মা ভালো।’
– ‘কি হয়েছে তোর? এমন অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পড়েছিলি কেন? শরীর কী দূর্বল লাগছে?’
– ‘না, আমি ঠিক আছি।'(লেখক মাহমুদ)
– ‘হুম। কেমন ঠিক আছিস তা তো দেখেই বোঝা যাচ্ছে। ধ্রুব আজ না থাকলে একটা কেলেংকারি হয়ে যেত।’
– ‘মানে?’
নিলু বলল,
– ‘ভাইয়াই তো তোমাকে অজ্ঞানরত অবস্থায় মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে তোমাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়েছিল। তারপর ডাক্তার কে ডেকে আনলে আমরা জানতে পারি তোমার গায়ে প্রচণ্ড জ্বর। ভাইয়া তোমার জ্বর হবার কথা শুনে একদম পাগল হয়ে গিয়েছিল। ডক্টর আংকেল কে বার বার বলছিল ওর কিছু হবে না তো?’
বলেই মুচকি হাসল নিলু। সে সাথে যোগ দিলো ফারজানা বেগমও। বহু কষ্টে নিজের হাসি থামিয়ে তিনি উৎফুল্ল কন্ঠে বললেন,
– ‘যাক! ছেলেটাকে তাহলে মানুষের মত মানুষ করতে পারলাম। এটাই আমার স্বার্থকতা।’
রূপা তাচ্ছল্য হেঁসে মনে মনে বলল, ‘হায় রে জীবনের নিয়তি!’

চলবে,,,,,,,,,,

#ভালোবাসা রং বদলায়
লেখক —- #মাহমুদ
সুচনা — পর্ব

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here