ভালোবাসা রং বদলায় পর্ব -০৫

#ভালোবাসা রং বদলায়
লেখক —- #মাহমুদ
পর্ব – ৫
,
,

ধ্রুব ড্রেস চেঞ্জ করছে। আর ভাবছে রূপাকে সে কঠিনের থেকেও কঠর শাস্তি দিবে। দিন দিন মেয়েটার ডানা গজাচ্ছে। আজ তো তার মাকে একদম নিজের বশে নিয়ে ফেলেছে। নাহ! এটা কিছুতেই সহ্য করা যায় না। নিপাকে এই বাড়িতে আনলে যে তার প্লানের উপর প্রভাব পড়বে। এটা তো ধ্রুব কোনো মতে হতে দিবে না। কিছু তো একটা করতেই হবে। কিন্তু কী করা যায়? হঠাৎ ধ্রুবের ফোনে একটি কল এল। ধ্রুব কল রিসিভ করতেই অপাশ থেকে ভেসে এল,
– ‘সবকিছু আমাদের প্লান অনুযায়ী চলছে তো?’
– ‘হুম! সবকিছুই আমাদের প্লান অনুযায়ী চলছে।’
– ‘অহ গ্রেট, গুড জব!’
– ‘এবার আমাদের নতুন প্লান কী?’
– ‘সব কথা ফোনে বলা যাবে না। আমি সবকিছু ম্যাসেজে জানিয়ে দেব।’
– ‘ওকে! তবে একটা প্রবলেম হয়ে গেছে।’
– ‘কী?’
– ‘মা রূপার বোন কে আমাদের বাড়িতে রাখবে বলেছে।’
– ‘রাখুক। তাতে সমস্যা কী?’
– ‘ওর বোন আসলে তো আমাদের প্লানের উপর প্রভাব পড়বে।’
– ‘নাহ! কোনো প্রভাবই পড়বে না। ডোন্ট ওয়ারি। আই উইল হ্যান্ডেল দিস।’
– ‘ওকে!’
ধ্রুব কথা শেষ করে কল কেটে দিলো। হুহ! সে একটু বেশিই ভেবে ফেলেছে। সে যাইহোক রূপা দিন দিন তার মায়ের সাথে ঘনিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে। এভাবে তার মায়ের সাথে ঘনিষ্ঠ হলে তো তার কিছুই করার থাকবে না। কিছু তো একটা করতেই হবে। এসব ভাবতে ভাবতেই রূপা কখন যে তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তা তার খেয়ালই ছিলো না। রূপা হালকা কাশতেই ধ্রুব বুঝতে পারলো রূপা এসেছে। রূপাকে দেখে বেশ অবাক হলো ধ্রুব। রূপা কখন এল? তার কোনো কথা সে শুনেনি তো? কীভাবে বুঝবে ও? আগে তাকে পরখ করে দেখতে হবে।
– ‘তুই! এখানে! কখন এলি?’
রূপা আমতাআমতা করে বললো,
– ‘এইমাত্র।’
ধ্রুব স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। বললো,
– ‘ওকে ওকে। নাও গেট লস্ট।’
– ‘আপনার পানি….'(লেখক মাহমুদ)
ধ্রুব পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে স্বজোরে রূপার মুখে ঢেলে দিলো। বললো,
– ‘নে। আমার পানি খাওয়া শেষ। নাও গেট লস্ট!’
ধ্রুব শেষের কথাগুলো এতটা জোরে বলেছে যে রূপা ভয়ে ভয়ে কেপে উঠলো।
– ‘কী হলো এখনও দাঁড়িয়ে আছিস কেন? মাইর খাওয়ার শখ হয়েছে বুঝি?’
রূপা ভয়ে আর দেরী না করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল। ধ্রুব তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
– ‘আমার কাছ থেকে তুই কক্ষণো ভালোবাসা পাবি না। শুধুই পাবি কষ্ট আর কষ্ট। হা হা হা!’

রূপা গেস্ট রুমে এসে বসে আছে। ওই ঘরটাতে আজ আর যাবে না সে। আজকের রাতটা সে এখানেই পার করে দিবে। তবে ধ্রুবের এই আচরণগুলো কিছুতেই সহ্য করতে পারছে না সে। আচ্ছা! সে জীবনে কী অনেক বড় পাপ করেছিল? যার ফল তাকে এখন পেতে হচ্ছে! সে কী এই নরগ নামক জেলখানা থেকে কখনওই বের হতে পারবে না?
রূপার ভাবনার ছেদ পড়ল তার বাবা মহসিন সাহেবের ফোনে কলে। বাবার নাম্বার থেকে কল আসাতে চোখ দুটো ছলছলে উঠলো তার। বললো,
– ‘আসসালামু আলাইকুম বাবা। কেমন আছেন?’
– ‘আলাইকুম আসলাম। ভালো আছি রে মা। তুই কেমন আছিস?’
– ‘ভালো বাবা। মা কেমন আছেন? তারপর নিপা, যুথি আপু ওরা কেমন আছে?’
– ‘সবাই’ই ভালো আছে। আগে বল জামাই কেমন আছে?’
– ‘উনিও ভালো আছে।’
– ‘ওহ! জামাই এর সাথে সুখী আছিস তো?’
রূপা চুপ। সে কী বলবে? তার তো কিছুই বলার মত কোন ভাষা নেই। তবে তার বাবাকে খুব করে বলতে ইচ্ছে করছে, না বাবা আমি সুখী নেই। আমি সুখী নেই বাবা। আমি যে বাবা বড্ড অসহায় হয়ে পড়েছি। এই নরগ থেকে আমাকে বের করুন বাবা। আমি যে যন্ত্রণায় জ্বলেপুড়ে ছাড়খাড় হয়ে যাচ্ছি। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই চোখ পানি চলে এল রূপার। সে যে নিরুপায়। তার ইচ্ছার শর্তেও কিছুই বলতে পারছে না সে। ধ্রুবের সেদিনের কথা এখনও মনে আছে রূপার। ধ্রুব সেদিন বলেছিল রূপা যদি তার বাবাকে সবটা বলে দেয় তাহলে তার বাবাকে ধ্রুব শেষ করে ফেলবে। বাবার জন্য আজ সে এতশত অত্যাচার সহ্য করছে। না হলে যে সে কবেই না পালিয়ে যেত!
– ‘কীরে মা চুপ কেন? তুই সত্যিই সুখী আছিস তো?’
রূপা চটজলদি চোখের পানি মুছে ফেলল। নিজেকে খানিকটা স্বাভাবিক করে বললো,
– ‘হ্যা বাবা। আমি খুব সুখী। জানেন বাবা? উনি আমাকে খুব ভালোবাসেন। আমাকে কোনো কাজ করতে দেন না। উনি খুব ভালোবাসেন আমাকে।’
– ‘যাক! শুনে খুব খুশি হলাম। বাবা হয়ে তো কখনো তোদেরকে ভালো রাখতে পারলাম না রে মা। ক্ষমা করে দিস তোর এই স্বার্থপর বাবাটাকে।’
– ‘বাবা, এসব কী বলছেন? আপনি আমাদেরকে যতটা ভালো রেখেছেন ততটা ভালো এই পৃথিবীতে কেউ রাখতে পারবে না। আর কখনও এমনটা বলবেন না।’
– ‘হুম। তোর শ্বাশুড়ি তোকে কিছু বলে না তো?’
– ‘না বাবা। উনি আরো আমাকে খুব ভালোবাসেন। নিজের মেয়ের মতনই দেখেন। সবথেকে বড় কথা উনি খুব ভালো মনের মানুষ। এমন শ্বাশুড়ি পেতে হলে ভাগ্য লাগে বাবা ভাগ্য।’
– ‘ঠিক বলেছিস মা। তোর শ্বাশুড়ির মতনই তোর শ্বশুরও ভালো মনের মানুষ ছিলেন।'(লেখক মাহমুদ)
– ‘আপনি চিনেন উনাকে?’
– ‘হ্যা চিনবো না কেন? সে তো আমার খুব ভালো একটা বন্ধু ছিলো।’
– ‘ও।’
– ‘হুম। তাহলে রাখি মা। অনেক রাত নেমেছে। এখন তাহলে ঘুমা। জামাই ঘুমিয়ে পড়েছে কী?’
রূপা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
– ‘হুম।’
– ‘ও। তাহলে রাখি। ভালো থাকিস মা।’
– ‘না না বাবা। আপনার সাথে আমার কিছু কথা বলার আছে।’
– ‘কী কথা মা?’
– ‘বাবা আমরা কাল আসছি।’
মহসিন সাহেব বেশ খুশি হলেন। তিনি উৎফুল্ল কন্ঠে বললেন,
– ‘সত্যি মা? কখন আসবি? জামাইও আসবে?’
– ‘না বাবা। উনি আসবেন না।’
– ‘কেন? তাহলে তুই কার সাথে আসবি?’
– ‘মায়ের সাথে আসবো বাবা।’
– ‘ওহ। জামাইকেও সাথে করে আনিস মা।’
– ‘বাবা উনিও আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অফিসের কাজের জন্য আসতে পারবেন না।’
– ‘ও। তাহলে আর কী করার? তা তোরা কখন আসবি?’
– ‘সকালের দিকে!’
– ‘ঠিক আছে। রাখি মা। আল্লাহ হাফেজ।’
– ‘আল্লাহ হাফেজ।’

কলটা কেটে দিয়ে মহসিন সাহেবের পাশে শুয়ে থাকা জাহানারা বেগমের উদ্দেশ্য হাসিমুখে বললেন,
– ‘যুথির মা শুনছো, কাল আমার মেয়ে আসছে।’
জাহানারা বেগম চোখমুখ কচলাতে কচলাতে বললেন,
– ‘তোমার কী খাইয়া দাইয়া কোনো কাম নাই। ওই নষ্টা মাইয়ার জন্য আমার কাচা ঘুমটাই ভাইঙা দিলা! ও আসবে তো কী হইছে? আমি কী এখন নাচবো? নাকি ঢোল বাজামু?’
মহসিন সাহেব খানিকটা অবাক হলেন। বললেন,
– ‘এটা কোন ধরনের ভাষা? তুমি সবসময় আমার ফুলের মত মেয়েটাকে নষ্টা মেয়ে বলো কেন? তুমি কী কখনো ওর মা হয়ে উঠতে পারবে না? সারাজীবনই কী সৎ মা হয়েই থেকে যাবে?’
জাহানারা বেগম এবার তেড়ে গিয়ে বললেন,
– ‘কী বললে তুমি? আমি মা হইয়া উঠতে পারি নাই? তাহলে এতদিন কী ওদের মা কবর থেকে উঠে এসে ওদেরকে মানুষ করেছে?'(লেখক মাহমুদ)
– ‘ওর মাকে নিয়ে তুমি আর একটা কথাও বলবে না। এই আমি শেষ বলে দিলাম। আর আমি যদি তোমার মেয়েকে মেনে নিতে পারি তাহলে তুমি কেন আমার মেয়েদেরকে মেনে নিতে পারো না? কেন ওদের সাথে এমন ব্যবহার করো? ওরা কী মানুষ নয়? ওদের কী কোনো চাওয়াপাওয়া নেই? ওরা তো তোমার কাছে কিছুই চাইনি। শুধু চেয়েছে তোমার একটু ভালোবাসা। কিন্তু তার বদলে তুমি তুমি কী করেছো? ওদেরকে সবসময় দুরে দূরে ঠেলে দিয়েছো। কখনো ওদেরকে একটু বুকে টেনে নাওনি! আচ্ছা! কোনো মা কী এমনটা করে? হোক না সে তুমি সৎ মা! একবার কী তোমার ওদের আপন মা হতে ইচ্ছা করে না?’
– ‘বাব্বাহ! দুই মাইয়া মিলে তো দেখতেছি তোমারে বশে নিয়া ফেলসে। এতদিন তো আমারে এসব বলো নাই। ওহ বুঝসি। তোমার মাইয়া আমার নামে আজ বদনাম করসে না? খাড়াও! কাল ওরে আসতে দাও। তারপর বুঝবো ও ঠ্যালা।’
– ‘দেখো জাহানারা আমাকে রাগিয়েও না? কাল বিয়েন আসবেন। আর কাল যদি তুমি উনার সামনে কোনো প্রকার তামাশা করো তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে।’
মহসিন সাহেব কথাটি বেশ উচ্চস্বরে বললেন। জাহানারা বেগম ভয়ে চুপ করে রইলেন। এখন মুখ খুললেই বিপদ। যা করার ঠান্ডা মাথায় করতে হবে। না হলে যে হেতে বিপরীত হয়ে যাবে।

চলবে,,,,,,,,,,,,,

লেখকের অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here