#ভালোবাসা রং বদলায়
লেখক — মাহমুদ
পর্ব —- ১২
,
ইদানীং যাবত রূপার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছে ধ্রুব। রূপাকে নিয়ে এটা সেটা ভেবেই পার করে দিয়েছে এ’কদিন। আর সেদিনের রাতের পর থেকেই ওলটপালট হয়ে গেছে তার সবকিছু। এটা কখনওই হবার ছিল না। কেন যে সে রূপার পাগলামীর মাঝে ডুব গিয়েছিল। আসলে সত্যি বলতে সেদিন ধ্রুব নিজের অজান্তেই রূপার প্রতি এক অদ্ভুত মায়া জন্মেছিল তার মনে। আর সেই একটা ভুলের কারণেই দু দুটো জীবন নষ্ট হল। ধ্রুবের অবশ্য কিছুই হবে না। কিন্তু রূপা? তার কী হবে? ওর কী কোনো নিশ্চয়তা আছে? মেয়েটা যে ঢুকরে ঢুকরে মরবে। এতদিন যাবদ ধ্রুব রূপার সাথে থেকে আসছে। কিন্তু কখনও মেয়েটার মধ্যে অন্যকোনো অস্তিত্ব খুজে পায়নি সে। আচ্ছা, রূপা কী সত্যিই সাদাসিধে-শান্তশিষ্ট টাইপের মেয়ে? নাকি সে সবার সামনে ভাল সাজার নাটক করে?
ধ্রুব ভেবে ফেলেছে, আজই সব ক্লিয়ার করে ফেলবে ও। তবে, ক্লিয়ার করার আগে তাকে সত্যিটা জানতে হবে। ধ্রুব আর কোনো কিছু না ভেবে পরিচিত নাম্বারে ফোন করল। দুই-তিনবার পর রিং হবার পর কলটা রিসিভ হল।
– হ্যালো! কে?
– শালা, এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলি আমাকে?
– ও, ধ্রুব বলছিস। এখন কয়টা বাজে বল তো? রাত ২ টা। আর তুই এখন ফোন দিয়ে বলছিস ভুলে গেছি কিনা। শালা, আমার কাচা ঘুমটাই নষ্ট করে দিলি।
– শ্যার্ট আর্প! আমার ঘুম উবে দিয়ে নিজে আরামে ঘুমাচ্ছিস, না?
– তো কী করবো? ঘুম আসলে কী তাকিয়ে থাকবো তোর মত? এখন বল কেন ফোন দিয়েছিস? একটু তাড়াতাড়ি বলবি, আমার প্রছন্ড ঘুম আসছে। আচ্ছা, একটা কথা বল তো, সবকিছু প্লান অনুযায়ী করছিস তো? শোন, ধ্রুব মেয়েজাত হল এক অদ্ভুত ভূখণ্ডের মত। এদেরকে যেমনটা দেখা যায়, এরা কিন্তু তেমন নয়। আর এদের সবথেকে বড় বুদ্ধি হল, পুরুষদের হেলুসেশনস করা। তোকেও হয়তো করতে পারে। এজন্য সাবধান করছি, তুই যেন ওর জালের ফাদে পা রাখবি না। একবার যদি ওর মায়া জালে পা রাখিস তাহলে আর বের হতে পারবি না। তোর সবথেকে বড় লক্ষ্যে হল, রূপাকে শাস্তি দেয়া। ভুলে যাবি না, ও তোর থেকে মূল্যবান জিনিস কেড়ে নিয়েছে। তুই রূপাকে আদর যত্ন করার জন্য বিয়ে করিস নাই, রিভেঞ্জ নেবার জন্য বিয়ে করেছিস। আশা করি আমি কী বলতে চাইছি, বুঝতে পেরেছিস।
– হু… তুই ঠিক বলেছিস, আমি ওকে রিভেঞ্জ নেবার জন্য বিয়ে করেছি। আর সেটাই আমার প্রধান কাজ। থ্যাংকইউ, আমাকে সঠিক পথ দেখানোর জন্য। আমি এ’কদিন বেশ দ্বিধার মধ্যে ছিলাম। কী করবো, না কী করবো মাথায় কাজ করছিল না। সবকিছুই মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছিলো। আর তুই তো জানিস, তোকে ছাড়া আমি কাউকে বিশ্বাস করি না এবং তুই ছাড়া আর কারো কথায় চলিও না। কারণ তোকে আমি বন্ধু নয়, ভাই মনে করি। তুই আমার সকল বিপদআপদে সাহায্য করেছিস। এমন একটা পর্যায় এসেছিল, বাবা মারা যাবার পর আমরা পথে নামতে বসেছিলাম। কিন্তু তুই বন্ধুত্বের হাত বাড়িতে আমাকে খুব হেল্প করেছিলি। আজ আমি ধ্রুব মাহমুদ হতে পারতাম না, যদি সেদিন তুই আমার পাশে না দাঁড়াতিস। তোকে যে কী বলে ধন্যবাদ জানাবো, আমার জানা নাই।
– আরে বাবা, এত সেন্টি হতে হবে না। তুই আমাকে ভাই বলেছিস না? এইটুকুই আমার জন্য যথেষ্ট।
– হুম।
– আন্টি কেমন আছে? ঠিকমত ঔষধ খায় তো?
– হ্যা ভালো আছে। মা, তোর কথা সবসময় জিজ্ঞেস করে, বাসায় আসতে বলে। কিন্তু তুই তো আসিস না। একবার তো মায়ের সাথে দেখা করতে পারিস। উনি তো তোকে কখনওই দেখে নাই। কিন্তু তোর নাম নিতেও ভুলে না।
– তুই তো জানিস, এখন আমার কাজের প্রচণ্ড চাপ। এজন্য আসতে পারিনা। তবে, আন্টি যখন বলেছে কোনো একদিন সুযোগ পেলে চলে আসব।
– ওকে।
– আচ্ছা এখন রাখ। খুব ঘুম আসতেছে। পরে কথা হবে। আর আমার কথাটা একবার হলেও ভেবে দেখিস। বাই।
ফোন টা কান থেকে সরিয়ে বিছানায় ফেলে দিল ধ্রুব। নিচের দিকে একটু ঝুকেই দেখতে পেল রূপার নিষ্পাপ মুখখানি। এই মুখটা যে কেউ দেখলেই বলবে, সে নিষ্পাপ! তার মাঝে কোনো খারাপ কিছুর অস্তিত্ব নেই। একটা মানুষ এত সুন্দর করে নাটক কিভাবে করতে পারে, ধ্রুপ ভেবে পায়না। তবে, এই নাটকটা বেশি দিন চলতে দেবে না সে। খুব তাড়াতাড়ি রূপার ভালোমানুষি মুখোশ সবার সামনে টেনে খুলবে। ধ্রুবের মা, রূপার জন্য মরিয়া বলতে গেলে। রূপাকে তিনি নিজের মেয়ের মত ভাবেন। কিন্তু মা তো জানে না, এই মেয়েটা কতবড় ক্রিমিনাল! একটা সময় এই মেয়েটাই তাদের মাথা থেকে ছাদ কেড়ে নিয়েছিল। সেদিন কতইটা না অসহায় হতে হয়েছিল তাদের। ধ্রুব ওকে কখনওই ক্ষমা করবে না। রূপাকে সে ঢুকরে ঢুকরে মেরে ফেলবে। এতেই তার তৃপ্তি।
.
সকাল বেলা,
– দুই মিনিটের ভিতরে আমাকে এক কাপ চা এনে দাও।
– জ-জি।
ধ্রুব ঘড়ির দিকে তাকাল। বলল,
– তোমার সময় এখন থেকে শুরু হল। গো….
রূপা চলে গেল। দুই মিনিটের ভিতরে কিভাবে চা বানাবে সে? চা বানাতে কমসে কম ৭/৮ মিনিট লেগেই যায়। সে জায়গাই দুই মিনিটে চা বানানো অসম্ভব। তবুও রূপা দমে গেল না। আজ ধ্রুবের মেজাজ বিগড়ে আছে। এখন পান থেকে চুন খষে গেলেই তার বিপদ। রূপা আর দেরী না করে চুলোয় পানি গরম করতে দিল। চুলোর আঁচটা আগের তুলনায় বাড়িয়ে দিল সে। এরপর পানি গরম হয়ে এলে তাতে, চা আর চিনি মিশিয়ে দিল। খানিকক্ষণ পর চা পুরোপুরি উথলে গেলে চায়ের কাপে ঢেলে নিল। দেরী না করে একটা ট্রেতে করে চা নিয়ে গেল উপরের দিকে।
রূপা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
– আ-আপনার চা…
– এক মিনিট লেট। এখন?
– স-সরি আসলে….
– উহু… আমি কোনো এক্সকিউজ শুনতে চাই না। তোমার এই এক মিনিট লেটের জন্য আমার চা খাওয়ার ইচ্ছা উবে গেছে। এখন আর চা খাওয়ার কোনো মুড নাই। তুমি, আমার জন্য কফি বানিয়ে আনো। মুডটাও ভালো হয়ে যাবে।
– জি।
– আর শোন, কপিও দুই মিনিটের মধ্যে বানিয়ে আনবা। আমি দেরী করা পছন্দ করিনা। আমার কাছে এক সেকেন্ড ও মূল্যবান। সবকিছুই টাইম টু টাইম চাই। বাই দ্যা ওয়ে, তোমার হাতে সময় কম। এখন যাও….
রূপার এবারও দেরী হল কফি বানাতে। ধ্রুব রেগে গেল। বলল,
– এই এক ভুল কতবার করবা তুমি? তোমাকে না বলছি, আমার সবকিছু টাইম টু টাইম লাইক করি। এরপরও দু দুবার দেরী হল কিভাবে? এবার কী মাইর খাওয়ার শখ জাগছে মনে?
রূপা আমতাআমতা করে বলল,
– আসলে আমি কফি খুজে পাচ্ছিলাম না। তাই কফি….
– শ্যাট আর্প! এমন লো এক্সকিউজ আমার সামনে দিবে না একদমই। এসব তুমি জেনেশুনে করেছো। যাতে আমি কফি, চা কিছুই খেতে না পারি। হাহ! এতই বোকা ভেবেছো আমাকে?
– এমা, ছিঃ ছিঃ! আপনি আমাকে ভুল ভাবছেন। আমি সত্যিই বলছি। বিশ্বাস করেন, আমি কফি খুজে পাচ্ছিলাম না।
– ওহ জাস্ট শ্যাট আর্প। তোমাদের মত মেয়েদেরকে আমি ভালো করেই চিনি। সো, আমাকে বুঝাতে আসবে না।
– (নিশ্চুপ)
– শোনো, আমার হাতে আর বেশি সময় নাই। ১৫ মিনিট সময় দিচ্ছি, এর মধ্যে আমার জন্য সানরাইজ বানিয়ে আনো। জাস্ট ১৫ মিনিট। এবার যেন ভুল না হয়। দিস ইজ মাই, লাস্ট ওয়ানিং।
রূপা মনে মনে বিরক্ত হলেও বাইরের দিকে মুখটা স্বাভাবিক করে রাখল। বলল,
– জ্বি… জ্বি।
– এখানে হা করে দাঁড়িয়ে থাকলে হবে? ওইদিকে যে তোমার সময় শেষ হতে চলেছে, তার কী কোনো খেয়াল আছে?
এবারও সানরাইজ বানাতে দেরি হল রূপার। ভয়ে গলা পুরো শুকিয়ে গেছে ওর। এখন ভাগ্যে কী যে লেখা আছে, আল্লাহ মালুম। রূপা ভয়ে ভয়ে ধ্রুবকে বলল,
– আ-আসলে ১৫ মিনিটে সানরাইজ বানানো সম্ভব না। তবুও আ-আমি তাড়াতাড়ি বানানোর চেষ্টা করছি। তবে, আর ভুল হবে না। এবারের মত আমাকে ক্ষমা করে দেন।
ধ্রুব ফোনটা বিছানায় রাখল। বলল,
– প্রথবার ভুল করেছ ক্ষমা করে দিছি। দ্বিতীয় বারও ভুল করেছ, তবুও ক্ষমা করে দিছি। এখন তৃতীয়বার ভুল করার পরেও বলছ, ক্ষমা করে দেই? ক্ষমা এতই সোজা?
– আমি সত্যি বলছি, এমন ভুল আর কখনওই হবে না। আপনি প্লিজ, আমাকে ক্ষমা…..
– কেউ একজন তোমার কাছে ঠিক এমনভাবেই ক্ষমা চাইছিল। তুমি কী তখন তাকে ক্ষমা করে দিছিলে? দাও নাই। তাইলে আমি কেন ক্ষমা করবো? কেন ক্ষমা করবো বলো?
রূপা ধ্রুবের দিকে হতবিহ্বল দৃষ্টিতে তাকাল। বলল,
– আমি মানে ঠিক বুঝলাম না। কে ক্ষমা চেয়ছিল আমার কাছে?
ধ্রুব ব্যঙ্গত্মক ভঙ্গিতে হাসল। বলল,
– কেউনা।
ধ্রুব খানিক্ষণপর প্রসঙ্গ পাল্টাল। বলল,
– তুমি ১৫ মিনিটের জায়গায় আরো ১৫ মিনিট লেট করছ। এখন কী শাস্তি পেতে চাও বলো।
– (নিশ্চুপ)
– বলো!
– (নিশ্চুপ)
– কী হল, কথা কানে যায় নাই? বয়রা নাকি?
– (নিশ্চুপ)
– এমন চুপ করে থেকে কী প্রমাণ করতে চাইছ? তোমার মত নম্ন-ভদ্র মেয়ে আর পৃথিবী নাই? যে মেয়ে স্বামীর উপরে কথা বলে না, চুপচাপ থাকে তাকেই তো সবাই নম্ন-ভদ্র বলে। তুমিও কী ভাল সাজার জন্য নাটক করছ না তো?
– (নিশ্চুপ)
– সে যাইহোক, ওইসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নাই। তুমি লেট করছ। এজন্য তোমাকে শাস্তি পেতেই হবে। আর শাস্তিটা হল, তোমার নিজ হাতেই আমাকে গালে তুলে খাইয়ে দিতে হবে। এবং এক্ষুণি দিতে হবে।
রূপা চুপ। ধ্রুব গলা চড়িয়ে বলল,
– কী হল কথা কানে যায় নাই?
রূপা ভয় পেয়ে গেল। বলল,
– জ্বি…. জ্বি। দিচ্ছি….
– গুড।
রূপা চামচ দিয়ে খাওয়াতে যাচ্ছিল। ধ্রব বাধা দিল। বলল,
– উহু… হাত দিয়ে খাওয়াতে হবে।
রূপা চামচ সরিয়ে নিল। সানরাইজ, ধ্রুবকে খাইয়ে দিতেই আঙুলে কামড় বসিয়ে দিল সে। রূপা সহ্য করতে না পেরে “আহ” বলে চেচিয়ে উঠল। ধ্রুব বলল,
– কী হল, খাওয়ানো বন্ধ করে দিলে কেন? তোমার মত এত, আমার ফালতু সময় নাই। এখনও অফিসের অনেক কাজ বাকী আছে। উফফফ! দেরী না করে তাড়াতাড়ি খাইয়ে দাও।
দ্বিতীয়বারও একই কাজ করল ধ্রুব। রূপা এবারও আঙুলের ব্যাথায় কেকিয়ে উঠল। ধ্রুব বিরক্ত হল। বলল,
– বার বার উহ-আহ করতেছ কেন? সমস্যা কী?
রূপা কিছু বললো না। ধ্রুব ওর একটা আঙুলে এত জোড়ে কামড় বসিয়ে দিয়েছে যে, আঙুল থেকে ঝরঝর করে রক্ত পড়ছে। ব্যাথায় চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে এল রূপার।
চলবে,,,,,,,,
অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ