ভালোবাসা রং বদলায় পর্ব -১৩

#ভালোবাসা রং বদলায়
লেখক — #মাহমুদ
পর্ব — ১৩
,
সকালবেলা অফিসে যাবার জন্য ধ্রুব রেডি হচ্ছিল। হাতে ঘড়িটা পড়ে, কোনোরকম চুলটা আঁচড়িয়ে নিল সে। তৎখানিক রূপাও প্রবেশ করল চা নিয়ে।

– আমার এখন চা খাওয়ার সময় নাই। ঘরে আসছ, ভালো করছ। এবার, তাড়াতাড়ি আমার জুতোটা পরিষ্কার করে দাও। আমার অফিসের দিকে লেট হয়ে যাচ্ছে।

রূপা মাথা ঝাকাল। দ্রতগামীতে ধ্রুবের জুতোটা পরিষ্কারের কাজে লেগে পড়ল। জুতোজোড়া পরিষ্কার হয়ে এলেই ধ্রুবের সামনে রাখল। হালকা শুকনো কেশে বলল,

– এই নেন, হয়ে গেছে।

ধ্রুব ভ্রু কুঁচকাল। বলল,

– জুতোটা কে পড়িয়ে দেবে?

– কে?

– কে আবার? তুমি!

– আ-আমি?

– ইয়েস! ঠিক শুনেছো। তুমিই পড়িয়ে দিবা। নাও দেরী না করে জলদি জলদি পড়িয়ে দাও।

– জ্বি…. জ্বি।

ধ্রুবকে জুতোজোড়া পড়িয়ে দিল রূপা। ধ্রুব বলল,

– এখনও জুতো পরিষ্কার করতে পারো না? তাহলে কী পারো টা কী?

– (নিশ্চুপ)

– এমনভাবে মুখ বুজে না দাঁড়িয়ে থেকে, ডান পায়ের জুতো দেখ ময়লা লেগে আছে। ওইটা পরিষ্কার করো।

রূপা বাম হাতটা মেঝেতে ভর দিয়ে রাখল। আর অন্যহাত দিয়ে ধ্রুবের জুতো পরিষ্কার করতে লাগল। পরিষ্কার হয়ে এলেই ধ্রুব, রূপার বাম হাতের উপর পা রাখল। রূপা আহ বলে চেঁচিয়ে উঠলেই ধ্রুব চটজলদি ওর হাতের উপর থেকে পা সরিয়ে নিল। বলল,

– ও সরি… সরি। ফ্লোরে তোমার হাত রাখা ছিল? আমি তো খেয়ালই করি নাই। ইশশ, খুব লেগেছে না?

রূপা কিছু বলছে না। চোখ বেয়ে তার টপটপ করে পানি পড়ছে। ধ্রুব সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করল না। বলল,

– হাতে মলম বা বরফ লাগিয়ে নিও। ব্যাথা সেরে যাবে। এখন তাইলে আমি যাই। অ্যাগেইন, সরিইই…

ধ্রুব চলে গেল। এদিকে রূপার ব্যাথায় হাত চিনচিন করছে। কোনোমতেই হাত নাড়াতে পারছে না সে। রূপা উঠে দাঁড়াল। বেড সাইডের ড্রয়ার থেকে ফাস্ট এইট বক্স বের করল। কিন্তু দূর্রভাগ্যবশত, হাজারও খুজেও মলম পেল না। এখন কী উপায়? তৎখানিক রূপার মনে পড়ল বরফের কথা। বেশকিছু সময় পর রূপা নিচে নামল। ফারজানাকে কোনোমতে বুঝতে দেয়া যাবে না। সে আর যাই হোক, তিনি যদি কোনোভাবে জানতে পারেন, যে ধ্রুব তার সাথে অত্যাচার করে তাহলে তিনি খুব কষ্ট পাবেন। রূপা চাই না তার জন্য মা কষ্ট পান এবং তাদের মা ছেলের সম্পর্কটা বিচ্ছিন্ন হোক।
রূপা প্রথমে হুকি মারল। ফারজানাকে দেখতে না পেয়ে স্বস্তি পেল। খুব সাবধানে ফ্রিজটা খুলল। কয়েক টুকরা বরফ আচলে বেধে নিল। এরপর সিড়ির দিকে পা বাড়াল। কয়েক সিড়ি পা বাড়াতেই কারো হাসির আওয়াজ ভেসে আসল ওর কানে। সিড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই নিলুর ঘর চোখে বাধল তার। কয়েক মুহূর্তের জন্য থমকে দাঁড়াল সে। নিলু এমন হেসে হেসে কার সাথে কথা বলছে? দরজা হালকা বন্ধ রাখা। টান দিলেই খুলে যাবে। রূপা কৌতূহলবশত দরজাটা ধীরে ধীরে খুব সাবধানে তিন আঙুল মত ফাকা করল। দেখল, নিলু উবুড় হয়ে শুয়ে পা নাচাচ্ছে। আর হেসে হেসে কারো সাথে কথা বলছে। কিন্তু কী বলছে শোনা যাচ্ছে না। এমনভাবে মেয়েটা কার সাথে কথা বলছে? নিলু কারো সাথে প্রেম-ট্রেম করছে না তো? রূপা এবার কান পাতলো। ভালোভাবে শোনা না গেলেও কিছু কিছু কথা শুনতে পেল।

– কীহ! আজই দেখা করতে হবে?

– ………..

– আজ দেখা করা অসম্ভব।

– ………..

– বললাম তো আজ দেখা করা সম্ভব না।

– ………..

– উফফ! আচ্ছা আসব। কখন দেখা করবা?

– ……….

– কিহ! এক্ষুণি?

– ………..

– না, এই মুহূর্তে আসতে পারব না। আর মাও আসতে দেবে না।

– ………..

– তুমি পাগল নাকি? আজ শুক্রবার। কলেজ বন্ধ, আর তুমি বলছ কলেজের নাম করে আসতে! পাগল নাকি?

– ……….

– আচ্ছা আসছি। গিয়েই আগে তোমার মাথা ফাটাবো। তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে। ঢং কত….

রূপা এইটুকুই শুনে বুঝল, নিলু কোনো একটা ছেলের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। এই মেয়ে প্রেম করে, আর সে কখনও বুঝতেও পারেনি। রূপা এবারও খুব সাবধানে দরজা লাগিয়ে দিল। এরপর চলে গেল নিচের দিকে।

রূপা চুলোয় ভাত বসিয়ে দিয়েছে, আর অন্যে চুলোয় বেগুন তরকারি। তরকারিতে লবল-হলুদ দিয়ে হালকা নাড়াচাড়া করল। এর মাঝেই নিলু পা টিপে টিপে সিড়ি বেয়ে নামছিল। সদর দরজার দিকে পা বাড়াতেই রূপা ডাক দিল,

– সেজেগুজে কোথায় যাওয়া হচ্ছে ননদিনী?

ভয়ে আৎকে উঠল নিলু। আমতা আমতা করে বলল,

– একটু বাইরে যাচ্ছিলাম ভাবি।

– এত সকাল সকাল বাইরে কী? আর তাছাড়া আজ তো তোমার কলেজও নাই। আমি তো ভেবেছিলাম আমরা ভাবি-ননদ মিলে গল্প করবো। এজন্য রান্নাও তাড়াতাড়ি বসিয়ে ফেলেছি। আর তুমি এখন বলছো বাইরে যাবা।

– আসলে ভাবি, কাজটা খুব ইম্পরট্যান্ট। তাই যেতে হচ্ছে। আর আমার বেশি সময়ও লাগবে না। ৩০ মিনিটের ভিতরে চলে আসব। তখন তোমার রান্নাও শেষ হবে আর গল্পও করতে পারব।

রূপা সরু চোখে বলল,

– কারো সাথে কী দেখা করতে যাচ্ছো নাকি?

নিলু ঘাবড়ে গেল। বলল,

– ন-না মানে হ্যা, আমার একটা বান্ধুবীর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। আচ্ছা, ভাবি আমি গেলাম। দেরী হয়ে যাচ্ছে।

বলেই দরজার দিকে পা বাড়াল। পেছন থেকে রূপা বলল,

– ছেলেটা কে?

রূপার কথাটা শুনে হতভম্বিত হয়ে গেল নিলু। কয়েক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল সে। পিছন ফিরে বলল,

– কোন ছেলে?

– যার সাথে দেখা করতে যাচ্ছো এই মুহূর্তে।

– কে বললো তোমাকে, আমি ছেলের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি? আমি তো বললামই, আমার একটা বান্ধুবীর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। একটু আগেই ও আমাকে ফোন দিয়েছিল। তোমার বিশ্বাস না হলে দেখতে পারো।

রূপা কথা ঘুরাল। বলল,

– আরে পাগলী আমি তো মজা করছিলাম। একমাত্র ননদ আমার। তার সাথে মজা না করলে হয় নাকি?

হাপ ছেড়ে বাঁচল নিলু। বলল,

– হ্যা… হ্যা।

.
দুপুর না গড়াতে ধ্রুব বাড়ি ফিরল। আজ অফিসে থাকতে তেমন একটা ভাল লাগছিল না তার। মাথাটা ব্যাথা করছে ধ্রুবের। অনবরত ব্যাথাটা আরো বেড়ে যেতে লাগল। হচকিয়ে উঠল ধ্রুব। রূপাকে ডাক দিতেই সে ঘরে চলে এল। বলল,

– আমাকে ডেকেছিলেন?

– হুম।

– ও। আপনার কী কিছু লাগবে?

– উহু…. মাথা ব্যাথা করছে। মাথাটা একটু টিপে দাও।

– জ্বি।

ধ্রুবের মাথা টিপে দিতে লাগল রূপা। রূপার মাথা টিপে দেয়ার স্টাইল দেখে মাথায় রক্ত উঠে গেল ওর। বলল,

– এখনও কী মাথাও টিপে দিতে জানো না? তাহলে কী পারো টা কী?

– (নিশ্চুপ)

– ভাল করে মাথা টিপে দাও। যেন ব্যাথার কোনো চিহ্নই না থাকে মাথায়।

– জ্বি।

কিছুক্ষণ পর ধ্রুব বলল,

– আচ্ছা, থাক আর টিপতে হবে না। এবার মাথায় একটু তৈল মালিশ করে দাও।

রূপা তাই করল। ধ্রুবকে খুব যত্নসহকারে মাথা তেল মালিশ করে দিল সে। কিন্তু তাতেও মন ভরল না ধ্রুবের। বিরক্ত হয়ে বলল,

– ওহ গড!! এভাবে কেউ মাথায় তৈল দিয়ে দেয়? চুল তো মনে হয় একটাও রাখো নাই। স্টুপিড কথাকার!!

– স-সরি। আসলে…..

– জাস্ট শ্যাট আপ ওকে? তোমার আর মাথায় তৈল দিয়ে দিতে হবে না।

রূপা মাথা নিচু করে রইল। এরপর পা বাড়াল দরজার দিকে। পিছন থেকে ধমকের সুরে ধ্রুব বলল,

– কোথায় যাচ্ছো? আমি কী তোমাকে যেতে বলেছি, হ্যা?

– (নিশ্চুপ)

– কী হল বলো, আমি কী যেতে বলেছি? তাইলে যাচ্ছো কেন? এ’কদিন কিছু বলছি না বলে, তোমার খুব পাখনা গজিয়ে না?

– (নিশ্চুপ)

ধ্রুব এবার রেগে গেল। বলল,

– খুব বার বেড়েছিস না? তোকে তো আমি…

বলেই ধ্রুব রূপাকে মারতে যাচ্ছিল। ঠিক সেই মুহূর্তে নিলু চলে এল। চেচিয়ে বলে উঠল,

– ভাইয়াআআআ……

নিলুর আওয়াজ কানে পৌছাতেই হাত নামিয়ে নিল ধ্রুব। ওরা দুজনই নিলুর দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকাল। তৎখানিক নিলু ঘরে ঢুকে পড়ল। ধ্রুবের সামনে গিয়ে দাঁড়াল সে। বলল,

– এটা কী করতে যাচ্ছিলি ভাইয়া? ভাবিকে তুই….. কেন ভাইয়া?

ধ্রুব গিয়ে সোফায় বসল। এরপর ফোন টিপতে লাগ সে। নিলু আবারও বলল,

– কী হল, চুপ করে আছিস কেন? তুই ভাবিকে এভাবে মারতে যাচ্ছিলি কেন? বল, কেন মারতে যাচ্ছিলি?

ধ্রুব বলল,

– আমি রূপাকে মারতে যাচ্ছিলাম না। ওকে, ব্যায়াম করতে হয় কিভাবে, তাই শেখাচ্ছিলাম। বিশ্বাস না হলে, তোর ভাবির কাছে শুনে দেখ। কী রূপা, আমি কী তোমাকে মারতে যাচ্ছিলাম? তোমার ননদ তো আমাকে বিশ্বাস করছে না। তুমি বললে হয়তো করবে।

রূপা বলল,

– হ-হ্যা উনি আমাকে ব্যায়াম করা শেখাচ্ছিলেন। আসলে মোটা হয়ে গেছি তো তাই ভাবলাম ব্যায়াম করা শুরু করে ফেলি। আর তাছাড়া ব্যায়াম করলে শরীরও ভাল থাকে। সেজন্য তোমার ভাইয়ার কাছে বায়না ধরেছিলাম। উনি তো প্রথমে রাজিই হচ্ছিল না। পরে বুঝিয়ে-শুজিয়ে রাজি করিয়েছি। তোমার ভাইয়া কিন্তু ভালোই ব্যায়াম শেখাতে পারে।

– ভাইয়া, আমিও ব্যায়াম করা শিখব। কবে শেখাবি?

– উমম, কাল।

– থ্যাংকইউ ভাইয়া। বাই দ্যা ওয়ে ভাবি, তুমি কিভাবে জানলে যে ভাইয়া ভাল ব্যায়াম করতে পারে?

রূপা চমকে উঠল। ও তো এটারই ভয় পাচ্ছিল। এখন কী বলবে সে? ধ্রুব বলল,

– আমি বলেছিলাম তোর ভাবিকে।

– বাব্বাহ! এত বছর তোর সাথে থেকেও আমি আজ পর্যন্ত জানতে পারলাম না যে তুই ব্যায়াম করতে পারিস। আর ভাবি কয়েক মাস থেকেই জেনে গেল। একেই বলে স্বামী স্ত্রীর পবিত্র ভালবাসা। হিহিহি।

নিলুর শেষের কথাগুলো শুনে দুজনই একে অপরের দিকে মুখ চাওয়াচাওয়ি করতে লাগল।

চলবে,,,,,,,,,,,,

(যারা যারা গল্পের মূল কাহিনী নিয়ে ঝড় তুলেছিলেন, তাদের উদ্দেশ্য একটা সুখবর দেই। পরবর্তী পর্বেই আপনারা সবাই, মূল কাহিনীর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here