ভালোবাসা রং বদলায় পর্ব -১৪

#ভালোবাসা রং বদলায়
লেখক — #মাহমুদ
পর্ব – ১৪
,
.
সিড়ি বেয়ে রূপা বসার রুমে যাচ্ছিল। হঠাৎ দেখল নিলু তাড়াহুড়ো করে সদর দরজার দিকে এগুচ্ছে। রূপার বেশ খটকা লাগল। এই মেয়েটা রোজ রোজ কার সাথে দেখা করতে যায়? এতদিন রূপা এরিয়ে গেলেও, আজ কোনমতে এড়ানো যাবে না। নিলুর সঙ্গে এই প্রসঙ্গে কথা তাকে বলতেই হবে। মেয়েটা কার চক্কোরে পড়েছে এটা তাকে জানতে হবে। এমনিতে আজকালকের ছেলেদের উপর ভরসা নেই। কখন কী করে বসে?

– নিলুউউউউউউ!

আচমকা রূপার ডাকে দাড়িয়ে গেল নিলু। পিছন ঘুরে বলল,

– হ্যা ভাবি, কিছু বলবে?

– কোথায় যাচ্ছো?

– ফ্রেন্ডদের সাথে শপিং করতে যাচ্ছি ভাবি।

– সন্ধ্যার সময় কিসের শপিং! মাকে কী বলেছ?

– না… হ্যা মানে…

– দেখ নিলু, আমাকে মিথ্যা বলতে হবে না। আমি জানি তুমি শপিং করতে যাচ্ছো না। তোমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাচ্ছো। আমি ঠিক ধরেছি না?

চমকে গেল নিলু। ভাবি কিভাবে জানল?

– ন-না ভাবি। তুমি ভুল বুঝছো।

– উঁহু… আমি ঠিকই বুঝেছি। দেখ নিলু আমি তোমার ভাবি, আমার সাথে তো শেয়ার করতেই পারো না তাই না?

– না আসলে হ্যা…. হ্যা ভাবি তুমি ঠিক ধরেছ, আসলে আমি আমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে যাচ্ছি। তুমি প্লিজ মাকে বলো না। মা জানতে পারলে আমাকে মেরেই ফেলবে।

– আচ্ছা বলব না। তবে একটা শর্ত আছে।

– কি শর্ত?

– এই ভর সন্ধ্যার সময় তুমি বাইরে যেতে পারবে না। আজকালকার দিন কাল ভাল না। আর সেই ছেলেটাও ভাল কিনা, তারও তো কোনো নিশ্চয়তা নেই। ভাল হলে অন্তত তোমাকে এই সন্ধ্যার সময় দেখা করার কথা বলতো না।

– ভাবি, তুমি তাকে না দেখলে বিশ্বাস করতে পারবে না। সে খুব ভাল ছেলে। আর আমাকে খুব রেসপেক্টও করে সে।

– রেসপেক্ট করে তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু ওই ছেলেটা তোমার সাথে কিছু করবে না তার গ্যারান্টি কী? আজ না হয় তোমাকে সে রেসপেক্ট করে। কিন্তু এই রেসপেক্টটা কতদিনের থাকবে? আজ, কাল, না হয় পরশু। তারপর….

– ভাবি তুমি ওকে ভুল বুঝছ, ও খুব ভাল ছেলে।

– নাম কী ছেলেটার?

– শরৎ।

– কোথায় থাকে?

– রাজশাহী।

অবাক হল রূপা। বলল,

– রাজশাহী! এত দূর থেকে ঢাকায় এসে ছেলেটা তোমার সাথে দেখা করে?

– না, না। ও তো ঢাকাতেই থাকে। আর রাজশাহীতে ওদের নিজেস্ব বাড়ি। সেখানে ওর মা-বাবারা থাকেন।

– ও।

– ভাবি এবার তো যেতে দাও। আমি না গেলে ও রাগ করবে।

– নিলুউ! আমি কী বলেছি তুমি শুনো নাই?

– ভাবি ২০ মিনিটেরই তো ব্যাপার। আমি ওর সাথে জাস্ট দেখা করেই চলে আসব। তুমি প্লিজ বাধা দিওনা।

– তুমি মনে হয় আমার কথা শুনতে পাও নাই। আমি বলেছি না, এখন দেখা করা যাবে না। তাছাড়া এখন বাইরে রাত নেমে গেছে। একাএকা বাইরে বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না। ঘরে যাও বলছি। কাল দেখা করো।

– ভাবিই! প্লিজ…..

রূপা ধমকের সুরে বলল,

– নিলু, কি বলেছি বুঝো নাই? আমাকে কী এখন মাকে ডাকতে হবে?

বিরক্ত হল নিলু। বলল,

– ওকে যাচ্ছি না। হ্যাপি?
.
– রূপা মা, এই কফিটা ধ্রুবকে দিয়ে আয়। ছেলেটার খুব শখ করেছে আমার হাতের কফি খেতে।

– আপনি কষ্ট করে বানাতে গেলেন কেন মা? আমাকে তো অন্তত ডাকতে পারতেন। আমি বানিয়ে দিতাম।

ফারজানা মুচকি হাসলেন। বললেন,

– আরে সমস্যা নাই। ছেলেটা আমার কাছে অনেক দিন পর একটা আবদার করেছিল। আমি কী সেটা ফেলে দিতে পারি নাকি?

কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারও বললেন,

– এখন দেরী করিস না মা। কফিটা ঠান্ডা হয়ে গেলে ও রাগ করবে। তাড়াতাড়ি যা।

– জ্বি।

রূপা সিড়ি বেয়ে ধ্রুবের ঘরের দিকে গেল। ঘরে গিয়ে দেখতে পেল, ধ্রুব নেই। বোধয় বাথরুমে গেছে। রূপা কফির মগ টেবিলের উপর রেখে দিয়ে চলে এল বসার ঘরে। কিছুক্ষণ পর উপর থেকে ধ্রুবের গলার স্বর ভেসে এল। ধ্রুব তার ঘর থেকে মা-মা বলে ডেকেই যাচ্ছে। একপর্যায়ে ধ্রুবের চিল্লাচিল্লিতে সবাই বসার ঘরে জড় হল।

– মা, ভাইয়ার কি হয়েছে? এমন চেঁচামেচি করছে কেন?

– কী জানি! রূপা তুই কি কিছু জানিস?

– না, মা। আমি তো একটু আগেই উনার রুমে গিয়েছিলাম। উনি রুমে ছিল না। হয়তো বাথরুমে ছিল। তাই উনাকে না পেয়ে আমি কফির মগটা টেবিলের উপর রেখে এসেছিলাম। আর তাছাড়া ঘরের ভিতরের সবকিছুই তো ঠিক ছিল। তাহলে….

– আচ্ছা, আমি গিয়ে দেখছি, কি হয়েছে?

ফারজানা উপরে চলে গেলেন। তার সাথে রূপা-নিলুও গেল। ধ্রুবকে ডেকে ফারজানা বললেন,

– কি হয়েছে বাবা? এমনভাবে ডাকছিস কেন?

– মা, এখানে কফি রেখেছে কে?

– কেন কি হয়েছে?

– টেবিলের উপরে আমার কিছু ইম্পরট্যান্ট ফাইল রেখে বাথরুমে হাতমুখ ধুতে গিয়েছিলাম। বাইরে এসেই দেখি ফাইলের উপরে কফি পরে ভিজে সপসপে হয়ে গিয়েছে। আমি দিনরাত এক করে এই ফাইল-টা তৈরি করেছি।

সবাই চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। অপরদিকে রূপা ভয়ে চুপসে গেছে একেবারে। কফিটা ফাইলের উপর কিভাবে পড়ল? সে তো ঠিকভাবে রেখে গিয়েছিল। তাহলে? রূপা দেখল, টেবিলের উপর ধ্রুবের যে ছবিটা রাখা ছিল সেটা উবুড় হয়ে পড়ে আছে। তার মানে ছবিটা কফির মগের উপর পড়ে গিয়েছিল। তারপর….

রূপা কাঁপা কাঁপা সুরে বলল,

– আ…..

ফারজানা রূপাকে থামিয়ে দিলেন। বললেন,

– আমিই রেখে গিয়েছিলাম। সরি রে বাবা। আমি বুঝতে পারি নাই।

রূপা ফারজানার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকাল। ফারজানা দু চোখের পাতা বন্ধ করে রূপাকে চুপ থাকতে বললেন। ধ্রুব তার রাগ সঞ্চয় করে বলল,

– তুমি সরি বলছো কেন মা? দোষটা তো আমারই। ফাইলটা আমার ওইখানে রাখা উচিত ছিল না।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে আবারও বলল,

– সরি মা। আমার সামান্য ইস্যু নিয়ে এমন রিয়াক্ট করা ঠিক হয় নাই। আসলে মাথাটা তখন গরম ছিল। এজন্য…. এগেইন সরি মা।

.
বালিশ নেবার জন্য বিছানার দিকে হাত বাড়াল রূপা। তৎখানিক ধ্রুব ওর হাতটা খপ ধরে ফেলল। হাতটা আরো শক্ত করে ধরল সে। বলল,

– কফির মগটা তুমিই ওইখানে জেনেশুনে রেখেছিলে না? যাতে আমার কষ্টের ফল নষ্ট হয়ে যায়। রাইট?

রূপা অবাক হল। ধ্রুব বলল,

– আই নো দ্যাট। মা, তখন তোমাকে বাঁচানোর জন্যেই সব দোষ নিজের ঘাড়ে চাপিয়ে নিয়েছিল। বাহ! বাহ! তুমি দেখছি, আমার মাকে নিজের বশে নিয়ে ফেলেছো। তোমার কথায় তো দেখছি তিনি ওঠেন, বসেন এবং সবকিছুই করেন।
খানিকক্ষণ চুপ থেকে আবারও বলল,

– দেখ রূপা, আমি তোমাকে ফাস্ট এন্ড লাস্ট ওয়ানিং দিচ্ছি… আমার মা-বোন দুজনের থেকে দূরে দূরে থাকবে। তারা যেন তোমার ছায়াও না পায়।

রূপা বরাবরই অবাক হল। কিন্তু মুখে তা প্রকাশ করল না। রূপা গম্ভীর সুরে বলল,

– সরি! বাট আমি এটা পারব না।

– কি বললে তুমি? আমার মুখের উপর তর্ক? ধ্রুব মাহমুদের উপর তর্ক?

বলেই রূপাকে মারতে যাচ্ছিল ধ্রুব। কিন্তু কোন এক কারণে মারতে পারল না সে। রূপা বলল,

– থামলেন কেন? মারুন! কি হলো মারুন না! একটা কাজ করেন। একেবারের জন্যেই আমাকে মেরে ফেলুন। আমি আর পারছি না। সত্যিই আমি আর পারছি না।

ধ্রুব কিছু বলল না। লাইট-টা অফ করে দিয়ে বিছানায় শরীর মেলিয়ে দিল। একটি বারের জন্যও রূপার দিকে তাকাল না ধ্রুব। তাকালে হয়তো ধ্রুবের চোখের পানিটা দেখে ফেলত সে।

.
দিন গড়াচ্ছে, মাস গড়াচ্ছে। ধীরে ধীরে রূপার প্রতি আবারও মায়া জন্ম নিয়েছে ধ্রুবের মনে। আর পারছে না সে রূপাকে কষ্ট দিতে। মেয়েটাকে কষ্ট দিতে গেলেই ওর বুকটা ক্ষত-বিক্ষত হয়ে যায়। কিন্তু কেন এমনটা হয়? রূপার প্রতি আবারও কেন দূর্বল হয়ে পড়েছে সে? আর ভাবতে পারছে না ধ্রুব। মাথাটা পুরো ফাকা। চারিদিক যেন তার মারবেলের মত ঘুরছে। আজও রূপাকে মারতে গিয়েছিল সে। কিন্তু কোনো এক বাধায় মারতে পারেনি সে। কিন্তু কেন মারতে পারেনি সে? কেন ওকে প্রতিবার মারবার সময় তার বুকে ব্যাথা অনুভব হয়? কেন রূপার নিষ্পাপ মুখখানি দেখলে তার সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যায়? কেন মেয়েটাকে দেখলে তার হৃদস্পন্দন তেজ গতিতে বেড়ে যায়? এগুলোকে কি নাম দেবে সে? ভালোবাসা! নাকি….

হঠাৎ কল এল সেই চেনাপরিচিত নাম্বার থেকে। ধ্রুব কলটা রিসিভ করতেই অপাশ থেকে বলে উঠলে,

– কি খবর দোস্ত? কোনো খোজ-খবর নেই তোর! কোথায় থাকিস?

– (নিশ্চুপ)

– কি রে চুপ কেন? এক মাস হতে চলল তোর সাথে কোন যোগাযোগ নেই আমার। এত সহজে ভুলে গেলি আমাকে?

– ভুলি নাই রে। ভীষণ দ্বীধার ভিতরে আছি আমি। কী করবো না করবো কিছুই মাথায় আসছে না আমার।

– কেন কি হয়েছে? কিসের এত দ্বিধা তোর?

ধ্রুব চুপ হয়ে গেল। ওকে কী এটা বলা ঠিক হবে?

– হ্যালো!! লাইনে আছিস?

– হু।

– আবেএএএ! চুপ কেন? বল আমায় কি হয়েছে?

ধ্রুব অস্ফুট সুরে বলল,

– রূপা……

– রূপা কী? ও কী আবার তোর অত্যাচারের ঠ্যালায় মরে-টরে গেল নাকি?

তেড়ে গেল ধ্রুব। বলল,

– ফালতু কথা বলিস কেন?

– আরেব্বাস! ফালতু কথার কী বললাম?

– দেখ আমি এখন ফান করার মুডে নেই। রাখি।

– আরে না না। সরি সরি… আমি আর ফান করছি না। এবার বল কি হয়েছে?

– আসলে…..

– কী বল?

– আ-আমি….

– আরে তুতলাচ্ছিস কেন? যা বলবি বিনা দ্বীধায় বল।

– আসলে আমি আবারও রূপার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছি। ও আমার চোখে হারা হলেই আমি পাগল হয়ে যায়। ওকে ছাড়া একমুহূর্তের জন্যও থাকতে পারিনা। এই এক মাসেই আমি ওকে বহুত কষ্ট দেবার জন্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু কোনো এক মায়ার টানে সফল হতে পারি নাই। আসলে কী জানিস? আমি ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। এজন্য…..

ঘর কাঁপিয়ে হেসে দিল সে। বলল,

– আমি জানতাম, তুই এমন কিছুই বলবি। তবে তোর থেকে আমি এটা আশা করি নাই।

– তুই আমার কথাটা বোধয় বুঝতে পারিস নাই। আমি রূপাকে…..

– আমি ঠিকই বুঝেছি। আমাকে আর নতুন করে বুঝাতে আসতে হবে না। নতুন করে বুঝতে হলে তোকে বুঝতে হবে। আমি তোকে আগেই বলেছিলাম, মেয়েটা সুবিধার না। তোকে সে তার মায়ার জালে ফাঁসিয়ে নেবে। নিলো তো! আমার কথা বিশ্বাস হল এবার?

– তুই ভুল বুঝছিস। আমার কথাটা আগে একটা বার শোন। আমরা যেমন ভাবছি মেয়েটা তেমন না। আমার কী মনে হয় জানিস? আমাদের কোথাও ভুল হয়েছে। আমার মনে হয় না ও এমন বড় কিছু করতে পারবে। এতদিন ধরে ওর সাথে থেকে এসেছি। কখনও ওর চোখে খারাপ কিছু বাঁধেনি আমার। সবথেকে বড় কথা, মেয়েটা খুব ধর্য্যশীল। আমি ওর উপর কম অত্যাচার চালায় নাই। তারপরও মেয়েটা কখনও উফ পর্যন্ত করে নাই। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে নিষ্পাপ মেয়েটার সাথে আমরা নিজের অজান্তে হলেও অন্যায় করেছি। আর….

– বাহ ধ্রুব। বাহ! এতটা চেঞ্জিং? ওই মেয়েটার ফান্দে পড়ে তুই সবকিছুই কী ভুলে গেলি? কিছুই কী তোর মনে নাই? কিভাবে ভুলে গেলি সব? ও তোর ছোট ভাইকে এক্সিডেন্ট করিয়ে মেরে ফেলেছিল। তারপরও কিভাবে বলিস আমাদের কোথাও ভুল হয়েছে। আর কী বললি তুই? রূপা নিষ্পাপ! হায়রে আল্লাহ! ওকে যদি নিষ্পাপ বলিস তাহলে তো দুনিয়াতে যারা নিষ্পাপ আছে তারা তো এই কথা শুনলে গর্তে গিয়ে লুকাবে। আর তোর কী আমার কথা বিলিভ হয় না? তুই না আমাকে ভাই ভাবিস? তাহলে আজ কিভাবে বললি মেয়েটাকে চিনতে ভুল হয়েছে আমাদের। সেদিনের দৃশ্য এখনও আমার চোখের সামনে ভেসে উঠে। সেদিন তোর ভাই, আমার সাথে কথা বলে গাড়িতে উঠেছিল। আমি ওকে বিদায় দিয়ে অফিসের দিকে যাচ্ছিলাম। কী মনে করে যেন থমকে গেলাম। পিছন ঘুরে দেখতে পেলাম, ও কার সাথে যেন কথা বলছে। কিন্তু কার সাথে বলছে তা বুঝা যাচ্ছিল না। এরপর আমি বুঝার জন্য দু কদম পা বাড়ালাম। স্পষ্ট দেখতে পায় সে একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে। ওদের দেখে মনে হচ্ছিল, ওরা কোনো একটা কারণে ঝগড়া করছে। কিছুক্ষণ পর মেয়েটা চলে যায়। তোর ভাইও গাড়িতে উঠে বসে। পাশে আংকেলও ছিলেন। গাড়ি স্টার্ট দিলেই আমি অফিসের ভিতরে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর আমার একটা ম্যানেজার এসে বলে, অফিসের সামনে নাকি বড় একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে। আমি দেরী না করে সেখানে ছুটে চলে যায়। গিয়েই দেখতে পায় আংকেলের রক্তাক্ত চেহারা। উনার পুরো শরীর রক্তে মেখে গিয়েছিল। চেনার কোনো চান্সই ছিল না। আর অপরদিকে তোর ভাইয়ের অবস্থা ছিল করুণ। শ্বাস চলছিল, কিন্তু নড়তে পারছিল না। আমি প্রথমেই ওর কাছে ছুটে যায়। ওকে ধরে বলি, ‘এক্সিডেন্টটা কিভাবে হল?’ ও জড়ালো কন্ঠে বলেছিল, ‘এটা এক্সিডেন্ট না ভাইয়া, জেনেশুনে প্লান করানো হয়েছে।’ আমি বললাম, ‘কে করিয়েছে?’ ও বলেছিল, ‘রূপা… ওই মেয়েটাকে কখনও ছেড়ে দিবেন না ভাইয়া। ও আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে। আমি চাইনা, আমার মত হতভাগী আর দ্বিতীয়জন না হয়। আর এই এক্সিডেন্টটাও রূপা’ই করিয়েছে।’ আমি বলেছিলাম, ‘একটু আগে যে মেয়েটার সাথে কথা বলছিলি সেই মেয়ে? উত্তরে ও, ‘হ্যা’ বলেছিল। আমি একেএকে সবকিছু জিজ্ঞেস করতে লাগলাম। সবকিছু শুনে আমি জানতে পারলাম মেয়েটা নাকি বড়লোক ছেলেদের সাথে রিলেশন করে টাকা খায়। আর সেদিনও তোর ছোট ভাইয়ের কাছে সে টাকা চাইতে এসেছিল। সেদিন ও ‘টাকা নেই’ বলেছিল বলে, আজ তোর ভাই আর এই পৃথিবীতে নেই। সাথে তোর বাবাকেও এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হল ওই মেয়েটার জন্য। সেদিন খুব চেষ্টা করেছিলাম ছেলেটাকে বাঁচানোর জন্য কিন্তু আমি বাঁচাতে পারিনি। পারিনি ওকে পৃথিবীর আলো দেখাতে। সেদিন মনে খুব ক্ষোভ জন্মেছিল ওই মেয়েটার জন্য। পুরো ঢাকাশহরে খোঁজ লাগিয়েছিলাম ওকে খুঁজবার জন্য। দেরী করে হলেও সহজে আমরা মেয়েটার সন্ধান পেয়ে গিয়েছিলাম। কারণ মেয়েটাকে সবাই চিনতো। ঢাকার কোনো ছেলে বাকি ছিল না যে ওকে চেনে না। সবাই ওকে চিনতো। খুব সহজে পেয়েও গেলাম তারপরই তো তুই জানিয়ে দিলি, ওকে বিয়ে করবি। ওর জীবনটা নষ্ট করে দিবি। আমি ভেবেছিলাম তুই আবেগে এসে কথাগুলো বলছিস। কিন্তু কে জানে, তুই ওকে সত্যি সত্যি বিয়ে করে ফেলবি?

এইটুকুই বলে থামল সে। কিছুক্ষণ পর আবারও বলতে লাগল,

– শোন ধ্রুব, রূপা তোর টাইপের মেয়ে না। ও একটা খুনী। ভুলে যাবি না ও আগে থেকে ট্রাক ঠিক করেছিল তোর ভাইকে মারবার জন্য। সেদিন ও সবকিছু প্লান করে এসেছিল তোর ভাইকে মেরে ফেলবার জন্য। কিন্তু কী হল? তোর ভাইয়ের সাথে বাবাকেও মেরে ফেলল। আর একটা কথা মনে রাখবি খুনী কখনও কারো আপন হয় না। খুনী সবসময় খুনীই হয়। তুই-ই ভেবে দেখ, ওকে এতবার মারবার পরেও কিছু বলছে না কেন? অবশ্য তুই কিভাবে বুঝবি? তোর চোখে তো রূপা মহৎ-মহান।

– (নিশ্চুপ)

– ও জানিস, এসব কেন চুপচাপ সহ্য করছে? তোর ধন-সম্পত্তি এবং টাকার লোভে।

চলবে,,,,,,,,,,,,

লেখকের অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষিদ্ধ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here