#ভালোবাসি তাই ২
#পর্বঃ১৬
#তানিশা সুলতানা
হঠাৎ তানহাকে ধাক্কা দিয়ে দুরে সরিয়ে দেয় অভি। চোখ বন্ধ করে নিজের মাথার চুল টেনে চলে যায় অভি।
তানহা বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকে অভির চলে যাওয়ার দিকে। তারপর বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেয় তানহা।
“আমি তো ভেবেছিলাম নিরামিষ অভি আমিষ হয়ে গেলো। কিন্তু নাহহহ। এর দ্বারা রোমাঞ্চ কখমোই সম্ভব না রে তানহা। তোরই কপাল পোরা শেষ মেষ একটা অনরোমান্টিক হিরোর প্রেমে পড়ে গেছিস।
তানহা কপাল চাপকে বলে।
চা বানিয়ে রুমে নিয়ে যায় তানহা। অভি কম্বল মুরি দিয়ে শুয়ে আছে।
” এই যে উঠুন। আপনার চা।
আর লজ্জা পেতে হবে না আপনার। এতো লজ্জা নিয়ে স্ত্রীর ঘর করা যায় না।
মুখ টিপে হেসে বলে তানহা।
“আর একটা কথা বললে ছাঁদে নিয়ে ফেলে দেবো।
কম্বলের নিচ থেকেই বলে অভি।
” ও মা গো
ছাঁদে নিতে হলে তো আবার হাত ধরতে হবে। আর ছাঁদে যেতে একদম পাক্কা পাঁচ মিনিট লাগবে। পাঁচ মিনিট আমার হাত ধরে থাকলে তো আপনি লজ্জায় দুই দিন মুখ দেখাতে পারবেন না।
ব্যঙ্গ করে বলে তানহা।
অভি এবার মাথা তুলে। গলা ওবদি কম্বল নামায়।
“চা দাও আর যাও এখান থেকে।
হাত বারিয়ে বলে।
“কেনো গো লজ্জা করছে বুঝি? যদি আবার রোমাঞ্চ রোমাঞ্চ ফিল হয়,তাহলে তো আবার আপনার
তানহার কথা শেষ করতে না দিয়ে অভি বলে ওঠে
” তোমাকে তো আমি
তাহা চা টা কোনো রকমে রেখে এক দৌড়ে দরজা ওবদি যায়।
“বিয়েটা হয় নি বলে পালালাম নাহলে আপনাকে রোমাঞ্চ শিখিয়ে ছাড়তাম।
বলেই চলে যায়।
অভি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
” পাগল করে দেবে মেয়েটা।
আনিকা বেগম অনেকখন যাবত স্মৃতিতে বকেই যাচ্ছে। স্মৃতি মুখ তুলে তাকাচ্ছেও না। মাথার ওপরের দেয়াল টার দিকে তাকিয়ে আছে।
মনের মধ্যে ঝড় চলছে।
নিশ্চয় আবির ডেকে ছিলো বিয়েটা যাতে আমি কোনো গন্ডগোল না করি তাই বলতে। ইসস রে মানুষ। কতোটা স্বার্থপর।নিজের স্বার্থের কোনো কতো কিছুই না করতে পারে।
এই তো স্মৃতি,
নিজের স্বার্থের জন্য আবিরের মতো একটা বেইমানের সামনে নিজের দুর্বলতা বলে দিলো। মন ছাড়া একটা মানুষের সামনে চোখের পানি ফেললো। এর মূল্য কী কখনো আবির দিতে পারবে?
পারবে না।
কিন্তু হ্যাঁ,
স্মৃতি একদিন খুব মিছ করবে। করতে হবেই। কারণ স্মৃতির মতো এমন নিঃস্বার্থ ভাবে কেউ কখনোই আবিরকে ভালোবাসবে না।
আবির সুন্দর বলে তো স্মৃতি ওকে ভালোবাসে না। মানুষের সৌন্দর্য একদিন চলে যাবে। তাই বলে কি ভালোবাসাও শেষ হয়ে যাবে?
তাচ্ছিল্য হাসে স্মৃতি।
“মা সরি। আর কখনোই বেখেয়ালি হয়ে রাস্তায় দৌড়াবো না।
স্মৃতি মায়ের হাতটা আকড়ে ধরে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে।
” মনে থাকে যেনো।
স্মৃতির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলেন আনিকা বেগম।
স্মৃতি মলিন ঠোঁটে মৃদু হাসে।
হাসপাতালের চারপাশে সারাদিন ঘুর ঘুর করেছে আবির। কিন্তু স্মৃতিকে দেখার সুযোগ হয় নি। সারাক্ষণ স্মৃতির সাথে ওর বাবা মা ভাই বোন আঠার মতো লেগে রয়েছে। ভীষণ রাগ হচ্ছে আবিরের। কিন্তু রাগটা দেখানোর মতো কেউ নেই।
সন্ধা হয়ে গেছে। আবিরের বাসা থেকে অনবরত কল দিচ্ছে।
জানালা দিয়ে এক বার উঁকি দেয় আবির। স্মৃতি হয়ত ঘুমিয়ে পরেছে।
চলে যায়।
মোহনা ভীষণ চিন্তিত ভাইকে নিয়ে।
“মা তানহা পালিয়েছে তো কি? আমরা অন্য মেয়ে খুঁজে নেবো। তারাতাড়ি ভাইয়াকে বিয়ে করাতে হবে। তোমার ছেলে সিঙ্গাপুর যাওয়ার এতো বড় সুযোগটা হাত ছাড়া করে দিয়েছে। ভাবতে পারছো তুমি?
ওর জন্যই না একদিন আমাদের পথে বসতে হয়।
মোহনা রাগে গিজগিজ করতে করতে বলে।
” তোর আবিরের বিয়ে নিয়ে এতো চিন্তা কেনো বল তো?
আমার ছেলে এখন আমি বিয়েই দেবো না। আগে তোর বিয়ে দেবো তারপর আবিরের।
আর ওই মেয়েটাকেও বলি হারি
কেমন মুখ পুরি মেয়েকে তুই পছন্দ করেছিলি বল তো?
ছি ছি
লজ্জা শরম নেই। একদম বাড়ি থেকেই চলে গেলো?
তোর কথা আমি আর শুনছি না। এবার আমি আমার ছেলের কথা শুনবো।
তোর পছন্দের ওপর থেকে ভরসা উঠে গেছে আমার।
মটরসুটির খোলা ছাড়াতে ছাড়াতে বলেন আমেনা বেগম।
মোহনা দাঁত দিয়ে নখ কাটে।
“এবার তো মাও আমাকে সরিয়ে দিলো। কি হবে এবার? তানহাকে যদি আবির বিয়ে না করে তাহলে…..
ভেবেই মোহনা মাথায় হাত দেয়।
সামনের মাসের চার তারিখে এইচএসসি পরীক্ষা। মহিউদ্দিন অনবরত কল করছে তানহাকে। বাসায় ফিরে যেতে বলছে।
তানহার মুখটা ছোট হয়ে যায়। ভীষণ কান্না পাচ্ছে।
অভিকে ছেড়ে চলে যেতে হবে?
অভি খাবার আনতে গেছিলো। এসে দেখে তানহা হাঁটু মুরে বসে কাঁদছে।
খাবারটা রেখে অভি তানহার কাছে যায়। হাঁটু মুরে বসে তানহার সামনে।
” কি হয়েছে কাঁদছো কেনো?
তানহার মাথায়,হাত বুলিয়ে বলে অভি।
তানহার মাথা তুলে অভির দিকে তাকিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে কাঁদে।
“আমি থাকতে চাই আপনার সাথে।
হেঁচকি তুলে বলে তানহা।
“কিছুদিন পর পর এসে থেকে যেয়ো। আমি মানা করছি না তো।
অভি তানহার হাত ধরে বলে।
” বুঝতে পারছেন না কি বলছি আমি?
অভির হাতটা ঝাড়া মেরে সরিয়ে দিয়ে বলে তানহা।
“আমি সব সময় আপনার সাথে থাকতে চাই। বিয়ে করতে চাই আপনাকে। আপনার বাচ্চার মা হতে চাই। সারাজীবন আপনাকে করলার সুপ বানিয়ে খাওয়াতে চাই।
কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে বলে তানহা।
অভি মাথা নিচু করে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে।
” বিয়ে করবেন আমায়?
আশাভরা চোখে অভির দিকে তাকিয়ে করুন সুরে বলে তানহা।
“ভাগ্যে থাকলে করবো।
যদি লেখা থাকে তুমিই আমার অর্ধাঙ্গিনী হবে তবে তাই হবে।
অভির উওরটা তানহার একদম পছন্দ হয় না।
দাঁতে দাঁত চেপে তাকায় অভির দিকে।
” আমি কথা দেয়া পছন্দ করি না। ভাগ্য মানি। যা হবে সব সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাতেই হবে।
খাবার এনেছি চলো খেয়ে নি। এখনো পঁচিশ দিন বাকি পরিহ্মার। আরও দুই চারদিন থেকে যেয়ো না হয়।
ভালো রেজাল্ট করো। এখানকার ভালো একটা ভার্সিটিতে ভর্তি করিয়ে দেবো। তারপর পাক্কা চার বছর আর কেউ এখান থেকে যেতে বলবে না তোমায়।
খাবার প্লেটে দিতে দিতে বলে অভি।
“খাবো না আমি।
রাগ দেখিয়ে চলে যায় তানহা।
অভি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
দুজনের খাবার এক প্লেটে নিয়ে রুমে যায়। তানহা কম্বল মুরি দিয়ে শুয়ে আছে৷ শুধু ফুঁপানোর আওয়াজ ভেসে আসছে।
অভি তানহার পাশে বসে।
” উঠো
আমি জানি তোমার খুব খিধে পেয়েছে। তারাতাড়ি খেয়ে নাও
ভাত মাখাতে মাখাতে বলে অভি।
“বললাম না খাবো না।
কম্বলের নিচ থেকেই বলে তানহা।
” খায়িয়ে দিতাম। তুমি নিশ্চয় আমার হাতে খাওয়ার বড় অফারটা হাত ছাড়া করবে না?
তানহা আস্তে আস্তে উঠে বসে। চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে। মুখটাও ফুলে গেছে। সারা মুখে পানি লেগে আছে।
অভি বা হাত দিয়ে তানহার চোখের পানি মুছিয়ে দেয়।
তানহার মুখের সামনে ভাত দেয়। তানহা খেয়ে নেয়।
“দেখো,
বাবা মা সব সময় ভালো চায়। আবির সুন্দর স্মার্ট, ভালো চাকরি করে। একদম পারফেক্ট। আর আমি? কালো, খাটো, খারাপ, ভার্সিটি থেকে বের করে দিয়েছে আমাকে। আমার ফিউচার অন্ধকার।
প্রেম করার জন্য আমাকে চুজ করতে পারো। কিন্তু বিয়েটা সব সময় পারফেক্ট মানুষকে করতে হয়। বুঝলে খুকি?
“আমার আপনাকেই চাই। পারফেক্ট কাউকে না। আপনি আমাকে বিয়ে না করলে আমি এমন কোথাও চলে যাবো আর কখনো খুঁজেই পাবেন না। বলে দিলাম। আমি না থাকলেই পবলেম শেষ।
তানহা অভিমানে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলে।
অভি হতাশার চোখে তাকায় তানহার দিকে।
” তুমি আমাকে পাগল না করে ছাড়বে না বলো?
তানহা অভির বুকে মাথা রাখে।
“আমার জন্য পাগল হয়ে ঠকবেন না। এতটুকু নিশ্চিত থাকতে পারেন।
ফিসফিসের বলে তানহা।
চলবে