ভালোবাসি তাই ২ পর্ব -১৫

#ভালোবাসি তাই ২
#পর্বঃ১৫
#তানিশা সুলতানা

ফেব্রুয়ারি মাস। তারওপর আবার দিনটাও স্পেশাল। ৭ ই ফেব্রুয়ার। দোকানে দোকানে তাজা গোলাপের গন্ধ মৌ মৌ করছে। রাস্তা ঘাটে সব মেয়েদের হাতেই গোলাপ ফুল দেখা যাচ্ছে। রিক্সা করে যাচ্ছে অভি আর তানহা। তানহা নজর মেয়েদের হাতে থাকা গোলাপ ফুলের দিকে। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। খোলা চুল গুলো বাতাসের তালে উড়ে উড়ে অভির মুখে বারি দিচ্ছে। বিরক্ত হয়ে তানহার দিকে তাকায় অভি। তানহার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকায়। গোলাপ ফুলের দিকে মন মরা হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে অভি। তানহা যে ফুল চাইছে খুব ভালোই বুঝতে পারছে।
প্রতিবছরই রাত বারোটার সময় এক গুচ্ছ গোলাপ ফুল দিয়ে মোহনার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো অভি। মোহনাও জানালা দিয়ে অভি দেখে এক ছুঁটে এসে জড়িয়ে ধরতো। গোলাপ গুলো হাতে নিয়ে গন্ধ শুকতো। এতো গুলো ভালোবাসি বলতো।

“মামা রিক্সা থামান
হুট করে বলে ওঠে অভি। তানহার মনটা গোলাপের দিকে ছিলো বিধায় তানহা শুনতে পায় নি অভির কথা। হঠাৎ রিক্সা থামায় তানহা পাশে তাকায়। দেখে অভি নেই।
” উনি কোথায় গেলো?
আশেপাশে তাকিয়ে অভিকে খুঁজতে থাকে তানহা। অতঃপর অভিকে পেয়ে মুখে হাসি ফুটে ওঠে তানহার। পাশের দোকানে গাজরা কিনছে অভি। হাতে অনেক গুলো গোলাপ ফুল। মুচকি হাসে তানহা।

কেনা শেষে আবার এসে বসে তানহার। পাশে।
“মামা যান
রিক্সা ওয়ালা অনুমতি পেয়ে যেতে থাকে।
” বললেই হতো তোমার গোলাপ চাই। অন্যদের দিকে তাকিয়ে থাকার কি আছে?
গোলাপ গুলো তানহার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে অভি।
“মুখ ফুটে বললে তো রাস্তার একটা অচেনা ছেলেও গোলাপ কিনে দিতো।
ফুল গুলো নেয় তানহা। গ্রাণ শুকে না। তা দেখে অভি একটু অবাক হয়। সাধারণত সব মেয়েরাই ফুল পেলে আগে তার গন্ধ শুকে।
তানহা এক হাতে ফুল গুলো ধরে আরেক হাত অভির হাতের ভাজে রাখে। অভি চমকে তাকায়।
” এটা কেনো?
হাতের দিকে তাকিয়ে বলে।
“এভাবেই থাকতে ভালো লাগছে। থাকি না একটু?
অভি কিছু বলে না। তানহা অভির কাঁধে মাথা রাখে। পৃথিবীর সব থেকে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে তানহার। এর থেকেও শান্তি কোনো জায়গা হতেই পারে না।

দীর্ঘ আধ ঘন্টা পরে কাঙ্খিত জায়গায় পৌঁছে যায় ওরা।
তানহা আগে আগে নেমে যায়। হেঁটে হেঁটে এদিক সেদিক দেখতে থাকে। অভি ভারা মিটিয়ে তানহার পাশে এসে দাঁড়ায়।
” ওই দেখুন গোলাপ বাগান। যাবেন?
তানহা আঙুল তুলে গোলাপ বাগান দেখিয়ে বলে।
“এখানে গোলাপ বাগান দেখতে এসেছি আমরা?
অভি বুকে হাত গুঁজে ভ্রু কুচকে বলে।
” নাহহহ কিন্তু গোলাপ বাগান যখন এখানেই তো যেতে পবলেম কি?
তানহা কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে।
“এখন তো রোদ। এখন ওখানে গেলে ভালো লাগবে না। রোদ কমুক। বিকেল হোক। তারপর যাবো। গোধুলি উপভোগ করবো আর গোলাপের গ্রাম নেবো। এখন যে কাজে এসেছো সেটা কর।
অভি বলে
” ঠিক আছে।
তো গাজরা কার জন্য?
অভির হাতে থাকা হলুদ আর লাল নাম না জানা ফুলের গাজরার দিকে ইশারা করে বলে তানহা।
“ওহহ শীট
এটা তোমার জন্যই এনেছিলাম দিতে ভুলে গেছি। নাও
গাজরাটা দিয়ে বলে। তানহা ধরে না।
অভির সামনে এসে দাঁড়ায়।
” পরিয়ে দিন।
মিষ্টি হেসে বলে তানহা।
“পাগল করে দেবে আমায়।
অভি তানহার মাথায় গাজরা পড়াতে পড়াতে বলে।

অভিকে বাইরে ওয়েট করতে বলে তানহা অফিসের ভেতরে ঢোকে। ওনাদের সাথে কথা বলে তারপর অভিকে ডেকে নেয়। অভি অবাক হয়ে যায়। ওর জন্য আজকে এখানে নিয়ে এসেছে তানহা।
অভির ভয়েস তাদের খুব পছন্দ হয়। চাকরি কনফার্ম হয়ে যায়। কাল সকাল থেকেই অভি জয়েন করবে। সকাল ৬ টায় ” নতুন সকাল শো-টা শুরু হবে।
অভি মাথা নারিয়ে চলে আসে।

ওখানে থেকে বেরিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে ঢোকে দুজন। সেখান থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে নেয়। যদিও এটাকে বিকেলের খাবার বলে। কারণ সাড়ে তিনটা বাজে।

পাশাপাশি হাঁটছে তানহা আর অভি। গোলাপ বাগানটা দারুণ। দুপুরে এখানে কোনো লোক ছিলো না। কিন্তু এখন এখানে হাজার হাজার কাপল।সবাই হাত ধরে হাঁটছে।
“আজকে নীল শাড়ি পড়লাম কিছু বললেন না যে?
তানহা হাঁটার ফাঁকে অভির দিকে তাকিয়ে বলে। অভি সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে হাঁটছে।
” আমি জানতাম এটা তুমি পরবে। আর শাড়িটা তোমার জন্যই কিনেছিলাম।
অভির উওর শুনে তানহার পা থেমে যায়। শাড়িটা ওর জন্যই কিনে ছিলো কথাটা কানে বাজছে।
তানহাকে দাঁড়িয়ে যেতে থেকে অভিও থেমে যায়।
“কি হলো?
তানহার দিকে তাকিয়ে বলে।
তানহা মুচকি হেসে হাত বারিয়ে দেয়। অভি কপাল কুচকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। অদ্ভুত সব বায়না মেয়েটার।
অভি ধরে তানহার হাত। ভীষণ লাগছে তানহার। আহা দুই ধারে সারি সারি গোলাপ গাছ। মাঝখান দিয়ে দুটো গোলাপ ফুল পাশাপাশি হাত ধরে হেঁটে যাচ্ছে।
” রোজ ডে তো রোজ দিলেন। চকলেট ডে তে চকলেট ও দেবেন আমি জানি৷ টেডি ডে তে টেডি দেবেন। তো কিস ডে তে কিস দেবেন তো। না কি কিপ্টামি করবেন।
তানহা র কথা শুনে হেঁচকি উঠে যায় অভি।
তানহা খিল খিল করে হেসে ফেলে।
“বলছি তাই হেঁচকি। আর যদি
থাক বললাম না।
অভিকে চোখ মেরে বলে তানহা।
” আর একটা কথা বললে হাত ছেড়ে দেব। আর হাত ধরবো না।
“ওকে আর কথা বললাম না এই আমি ঠোঁটে আঙুল দিলাম।

মুহুর্তেই এম্বুলেন্স চলে আসে। সবাই ধরাধরি করে স্মৃতিকে এম্বুলেন্সে তুলে দেয়। চোখের পলকেই এম্বুলেন্স চলে যায়। মানুষ জনও চলে যায়। এখন ফাঁকা রাস্তায় আবির বসে আছে। সামনেই লাল রক্ত। চোখের পানি ধরে রাখতে পারে না আবির। হু হু করে কেঁদে ওঠে।
” আমি এখনো তোমাকে অসম্ভব ভালোবাসি স্মৃতি। কিন্তু?
এই কিন্তুই আমাদের আলাদা করে দিচ্ছে।
তোমার কিচ্ছু হবে না। আমি কিছু হতে দেবোই না। তোমাকে বাঁচতেই হবে।
একটুখানি রক্ত হাতে তুলে নেয় আবির।

আহাম্মদ চৌধুরী সবেই খেতে বসেছিলেন। অফিসে কাজের চাপে খাওয়ার সময়ও পায় না। তাই তো দুপুর গড়িয়ে গেছে তারপর লান্স করতে বাসায় এসেছে।
আনিকা বেগম খাবার বেরে দিচ্ছে।
ভাত মেখে সবেই মুখে ভাত পুরতে যাবেন তখনই হুরমুর করে রাফিদ বাসায় ঢোকে।
“চাচ্চু স্মৃতি এক্সিডেন্ট করেছে। ওকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
হাত থেকে ভাত পরে যায় আহাম্মদ চৌধুরীর। আনিকা চৌধুরীর মাথা ঘুরে ওঠে।
” এই দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে আর পারা যায় না। সারাক্ষণ শুধু বাবা মাকে টেনশন দেবে। একজন তো চলে গেছে। কোথায় গেছে কি করছে? কিছুই জানি না। আরেকজন এক্সিডেন্ট করে বসেছে। আমাকেই মরতে হবে। নাহলে এদের জন্য কবে জানি
বলতে বলতে দৌড়ে যায় আহাম্মদ চৌধুরী। রাফিদ আনিকা বেগমকে ধরে নিয়ে যায়।

আল্লাহ তায়ালা অসীম রহমতে স্মৃতি ভালোই আছে। মাথায় কিছুটা কেটে গেছে। আর পা ভেঙে গেছে। চুপচাপ মাথার ওপরের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে আছে স্মৃতি। কোনো দিকে তাকাচ্ছেও না। কারো সাথে কথাও বলছে না।

হালিজা রাব্বি কখন থেকে এটা ওটা বলে যাচ্ছে। কিন্তু স্মৃতি শুনছে কি না জানে না ওরা?

🥀🥀🥀🥀🥀
সন্ধা হয়ে গেছে।
কিছুখন আগেই তানহা আর অভি বাসায় এসেছে। অভির মাথাটা ধরেছে খুব। তাই তানহা চেঞ্জ না করেই আদা দিয়ে চা বানাতে গেছে।
কোমরে আচল গুঁজে আদা কাটছে। আবার হাত উঁচু করে চিনি পারছে।
অভি তানহার থেকে একটু দুরে বসে ছিলো।
হঠাৎ তানহার ফর্সা পেটের দিকে চোখ যায় অভির। কাপরটা অনেক খানি সরে গেছে। ফলে পুরো পেটটার দৃশ্য মান।
অভি চোখ ফিরিয়ে এদিক সেদিক তাকায় কিন্তু তবুও বেহায়া চোখটা ওই দিকেই যাচ্ছে।
কেমন একটা ঘোরের মধ্যে চলে যায় অভি। নিজের ওপর কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলে।
এক পা একপা করে তানহার দিকে এগিয়ে যায়।
তানহা মিটসেফের ওপর থেকে চায়ের বয়েমটা নাগাল পাচ্ছে না। পায়ের ওপর ভর দিয়ে উঁচু হয়ে নাগালে আনার চেষ্টা করছে। কিন্তু বারবার ই ব্যর্থ হচ্ছে।

হঠাৎ করে একটা ঠান্ডা হাতের ছোঁয়ায় কেঁপে ওঠে তানহা। নিজেকে শূন্যে অনুভব করে। আর চায়ের বয়াম একদম হাতের নাগালে পায়।
বয়ামটা হাতে নেয় তানহা।
অভি নামিয়ে দেয় তানহাকে। তানহা র দুই বাহু ধরে নিজের দিকে ফেরায়।

“কককি কররছেন আআপনি?
থেমে থেমে বলে তানহা।
” হিসসসসসসসসসস
তানহা র ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বলে অভি।
“কোনো কথা না।
হিসহিসিয়ে বলে অভি।
তানহা চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়।
” এর আবার কি হলো? এখন কি করবো?
তানহা মনে মনে বলে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here