ভালোবাসি তাই ২ পর্ব -১৪

#ভালোবাসি তাই ২
#পর্বঃ১৪
#তানিশা সুলতানা

আজকের সকালটা কুয়াশাময়। সাতটা বাজে অথচ এখনো চারপাশ কুয়াশায় ঢাকা। দুরের জিনিস দেখা যাচ্ছে না। তবে তেমন একটা শীত নেই।
এক কাপ রং চা বানিয়ে বেলকনিতে মাদুর পেতে বসে গায়ে কম্বল জড়িয়ে চা খাচ্ছে তানহা। দারুণ একটা অনুভূতি। রাতে চুরি করে লাগানো ফুল গাছে কুয়াশা জমেছে। মাটি পাতা সব ভিজে গেছে। তানহা গোলাপের ভেজা পাতায় OT লিখে রেখেছে।
ভেবে রেখেছে আজকে রান্না করবে না। অভিকে বলবে দোকান থেকে রুটি আর ডাল কিনে আনতে।

অভির ঘুম ভেঙেছে অনেক আগেই তবুও ঘাপটি মেরে শুয়ে আছে। ঠান্ডার মধ্যে বিছানা ছেড়ে উঠতেই আলসেমি লাগে।
তানহা গায়ে কোমরে হাত দিয়ে অভির মাথার সামনে এসে দাঁড়ায়।
“এই যে উঠুন। আটটা বাজে। আপনাকে তো আজ ইন্টারভিউ দিতে যেতে হবে।
তানহা র ডাক শুনে ধরফরিয়ে উঠে বসে অভি। শরীরের লোম দাঁড়িয়ে গেছে। বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নেয় অভি।
” আআর কখনো এভাবে ডাকবা না!
হকচকিয়ে বলে অভি।
“কেনো? ভ্রু কুচকে বলে তানহা।
” বারণ করছি তাই।
সোজা সাপটা বলে অভি।
“ডাকবোই। এখন থেকে ওগো হ্যাঁগো এসবই বলবো।
এবার তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসুন। দোকান থেকে খাবার কিনে এসে খেয়ে তারপর ইন্টারভিউ দিতে যাবেন।
অভির থেকে কম্বল নিয়ে সেটা ভাজ করতে করতে বলে তানহা।
” আমি ইন্টারভিউ দেবো না।
মাথা নিচু করে বলে অভি।
হাত থেমে যায় তানহার। অভির মুখের দিকে তাকায়। কম্বল রেখে অভির সামনে বসে। থুতনিতে হাত দিয়ে অভির মুখটা উঁচু করে।
“খবরে ছাপা হয়েছিলো আমাকে ভার্সিটি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন কোথাও চাকরি পাবো না আমি। সবাই হাসবে আমাকে নিয়ে। আমি সেটা নিতে পারবো না। প্লিজ জোর করবে না।
অভি তানহা র হাতটা সরিয়ে দিয়ে গটগট করে ওয়াশরুমে চলে যায়।
তানহা মুচকি হাসে।
” আপনার অসম্মান হবে আপনি কষ্ট পাবে এমন কিছু তানহা কখনোই করবে না।

ফেসবুকে আপলোড দেওয়া হয়েছে “নতুন সকাল” ভোটার জন্য নতুন RJ নেওয়া হবে। ভয়েস সুন্দর হতে হবে, শিহ্মিত হতে হবে। এবং দেখতে সুন্দর হতে হবে।
অভি তো সব দিক দিয়েই পারফেক্ট।
তানহা সেখানে থেকে নাম্বার নিয়ে কল করে ঠিকানা জেনে নেয়। আর ওরা আসছে এটাও জানিয়ে দেয়।

অভি ফ্রেশ হয়ে দোকানে চলে যায় খাবার কিনতে। তানহা অভির লাগেজ থেকে অভির জন্য একটা নীল রংয়ের শার্ট কালো জিন্স বেছে বের করে।
অভির লাগেজে নীল রংয়ের একটা শাড়ি দেখতে পায় তানহা। এটা পরার লোভ সামলাতে পারে না। তানহার ব্যাগে ক্রিম কালার ব্লাউজ আছে। এটা দিয়েই পরে নেবে।
ভেবেই মুচকি হেসে ওয়াশরুমে চলে যায় তানহা। শাড়িটা কোনো রকমে পেঁচিয়ে বের হয়। তখনই অভি চলে আসে।
তানহা দেখে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে থাকে। তানহা কিছুটা লজ্জা পায়।
“তাকিয়ে আছেন কেনো? কুচি গুলো ঠিক করে দিন।
লজ্জা কমানোর জন্য তানহা।
আঁচল ঠিকঠাক করে নেয়। তারপর কুচি করার চেষ্টা করে।
অভি দরজাটা ভিরিয়ে দিয়ে এসে খাবারটা নামিয়ে তানহার কাছে দাঁড়ায়।
তানহার হাত থেকে কুচি গুলো নিয়ে নেয়। তানহা মাথা উঁচু করে অভির চোখের দিকে তাকায়। অভি তানহার দিকেই তাকিয়ে ছিলো বিধায় দুজনেরই চোখাচোখি হয়ে যায়। অভি আজকে আর চোখ সরায় না তানহা সরিয়ে নেয়। অভি মুচকি হাসে। আরও একটু এগিয়ে যায় তানহার দিকে। দুজনের মধ্যে দুরত্ব নেই বললেই চলে।
তানহা হকচকিয়ে যায়।
” এভাবে কুঁচি করবেন কি করে?
রিনরিনিয়ে বলে তানহা। অভি উওর দেয় না। তানহার মুখের দিকে তাকিয়ে কুচি করতে থাকে।
অভি কুচি গুলো ঠিক করে দেয়।
” ধরো
আস্তে করে ফিসফিস গলায় বলে।
“হ্যাঁ
তানহা চমকে ওঠে বলে।
” কুচিটা গুঁজে নাও
কুঁচির দিকে ইশারা করে বলে অভি। লজ্জাটা বেরে যায় তানহা র। ফটাফট অভির থেকে কুচি নিয়ে অভিকে পেছন ঘুরে দাঁড়িয়ে গুঁজে নেয়।
“তোমারও লজ্জা আছে তাহলে?
তানহার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে অভি। তানহা চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে নেয়। অভি মুচকি হেসে রুমে থেকে চলে যায়।
অভি চলে যাওয়ার শব্দে তানহা জোরে শ্বাস নেয়। চোখ খুলে। নিজের মাথায় নিজেই একটা গাট্টা মারে তানহা।
” ধ্যাত আমিও না
আঁচলে সিপটিপিন দিয়ে খাটে বসে থাকে।

অভি খাবার সার্ভ করে তানহাকে ডাকে।
তানহা গুটিগুটি পায়ে যায়।

খাওয়ার মাঝেই তানহা বলে ফেলে ঘুরতে যেতে হবে।
“আমি যাবো না।
” প্লিজ
করুন সুরে বলে তানহা।
“হুমমম
বলেই অভি খেতে থাকে। তাহা বিশ্ব জয়ের হাসি দেয়।

মুখোমুখি বসে আছে স্মৃতি আর আবির। আবির তাকিয়ে আছে স্মৃতির দিকে। আর স্মৃতি মাটির দিকে।
” এখনো ভালোবাসো আমায়?
কিছুখন নিরব থেকে বলে ওঠে আবির।
চমকে ওঠে স্মৃতি। তাকায় আবিরের দিকে। চোখ মুখ শক্ত করে নেয় স্মৃতি। “ভালোবাসা” এই একটা শব্দের জন্যই এখানে এসেছে স্মৃতি। কিন্তু প্রকাশ করবে না। “যে ভালোবাসার মূল্য বোঝে না তার কাছে ভালোবাসা প্রকাশ করাটা বোকামি”
“দুনিয়ায় অনেক মেয়ে আছে আমার বোনকে ছেড়ে দিন প্লিজ।
আবিরের চোখে চোখ রেখে বলে স্মৃতি।
আবির হাসে। আবিরের হাসি স্পষ্ট বুঝিয়ে দিচ্ছে ওছাড়বে না তানহাকে।
” একটা কারণ দেখাও তানহাকে বিয়ে না করার জন্য?
পাল্টা বলে দেয় আবির।
এরকম কথায় বেশ বিরক্ত হয় স্মৃতি।
“তানহা অভি ভাইয়াকে ভীষণ ভালোবাসে। আর এখন পালিয়ে অভি ভাইয়ার কাছে গেছে। ওরা এখন এক সাথে আছে। কেনো আলাদা করবেন ওদের?
কর্কশ গলায় বলে স্মৃতি।
” ব্যাছ এইটুকুই?
গালে হাত দিয়ে বলে আবির।
“আর কি করণ চাই আপনার?
” তোমার কোথাও জ্বলছে না তো? মুচকি হেসে বলে আবির।
চোখে পানি টলমল করে ওঠে তানহার।
“হ্যাঁ জ্বলছে আমার। সয্য করতে পারছি না আমি। চোখের সামনে আপনাকে আর তানহা কে দেখে বাঁচতে পারবো না আমি। সুইসাইড করে ফেলবো। কারণ আমি অভিনয় করতে পারি না। বেইমানি করতে জানি না আমি। আপনাকে ভালোবেসেছিলাম এখনো বাসি আর যতদিন বেঁচে থাকবো আপনাকে ভুলতে পারবো না। অল্পকিছু দিন অভিনয় করে আপনি ভুলে যেতে পারেন। কিন্তু সেই অল্প কিছুদিনের অভিনয়টা আমার বুকে গেঁথে গেছে।
উঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলে স্মৃতি। গাল বেয়ে অনবরত পানি গড়াতে থাকে।
” রিলাক্স স্মৃতি
আবির স্মৃতির হাত ধরে বলে।
স্মৃতি ঝাড়া দিয়ে হাত সরিয়ে নেয়।
“ছোঁবেন না আপনি আমাকে। খুব খারাপ আপনি। আমার মনটাকে তো মেরেই ফেলেছেন এখন দেহটাকেও মারতে চান। আল্লাহর কাছে দিন রাত প্রার্থনা করি আপনার মতো বেইমান দের যেনো কোনো মেয়ে ভালো না বাসে। ভালো থাকতে পারবেন না আপনি। আমি যতটা কষ্ট পেয়েছি তার থেকেও বেশি কষ্ট পাবেন আপনি। বেইমানরা কখনোই ভালো থাকতে পারে না।
বলেই দৌড়ে চলে যায় স্মৃতি।
” স্মৃতি শোনো
আবারও স্মৃতির পেছনে ছোটে।
মেইন রোডে এসেও স্মৃতি পাগলের মতো দৌড়াতে থাকে। হঠাৎ একটা বড় টাক আসে। চোখের পলকেই টাকটা স্মৃতিকে ধাক্কা মেরে দেয়।

“স্মততততততততততততততততততি
আবির এক চিৎকার দিয়ে বসে পরে। মাথাটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। মুহুর্তেই পিচঢালা কালো রাস্তাটা লাল হয়ে যায়। আশেপাশে থেকে মানুষজন দৌড়ে আসে। আবির শুধু স্মৃতির রক্ত মাখা হাতটা দেখতে পায়। উঠে দাঁড়ানোর শক্তি পায় না আবির। মানুষ জন আড়াল করে দেয় স্মৃতির হাতটা।
খুব করে আবিরের বলতে ইচ্ছে করছে
“তোমরা সরে দাঁড়াও আমি স্মৃতির হাতটা দেখবো। সরে যাও তোমরা। আমাকে দেখতে দাও
কিন্তু গলা দিয়ে কোনো শব্দ বের হয় না। বাচ্চাদের মতো হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যেতে থাকে আবির।
হারিয়ে ফেলার ভয়টা কাবু করে দিয়েছে আবিরকে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here