#ভালোবাসি তাই ২
#পর্বঃ২৮
#তানিশা সুলতানা
প্রিয় মানুষটি পাশে থাকলে যেকোনো মুহুর্তই সুখকর হয়ে ওঠে। আজকে স্মৃতির গায়ে হলুদ। খুব ছোট করে গায়ে হলুদের আয়োজন করা হয়েছে। হালিজা আর স্মৃতি দুজন মিলে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে স্মৃতিকে। মনে শান্তি আসছে না স্মৃতির। আর কেউ বুঝতে না পারলেও তানহা ঠিক বুঝতে পারছে। কিছু তো একটা হয়েছে স্মৃতির।
“হালিজা যা তো বোন ফুল নিয়ে আয়।
হালিজা চলে যেতেই তানহা দরজা বন্ধ করে দেয়।
” স্মৃতি কি হয়েছে?
স্মৃতির থুতনিতে হাত দিয়ে মাথাটা উঁচু করে ধরে বলে তানহা।
হু হু করে কেঁদে ওঠে স্মৃতি। তানহা আগলে নেয় স্মৃতিকে।
“আমি স্বার্থপর নই তানহা। বিশ্বাস কর আমি ইচ্ছে করে বিয়েতে রাজি হয় নি।
হেঁচকি তুলে বলে স্মৃতি। তানহা বুঝতে পারে স্মৃতি কেনো এসব বলছে। তানহার সাথে আবিরের বিয়ে ঠিক হয়েছিলো তাই।
” আমার ভাই তোকে রিফিউজ করেছে। তুই আবিরকে ডিজার্ভ করিস। কিন্তু আবির
তানহা স্মৃতিকে থামিয়ে দেয়।
“তোর ভাইকে আমি বিয়ে করে নিয়েছি। জানিস তো তুই।
তুই ভাবছিস না তোকে বকবে?
রিলাক্স স্মৃতি। মা কিচ্ছু বলবে না। বরং তোকে সরি বলবে। আবির তোকে খুব ভালোবাসে।
মুচকি হেসে বলে তানহা।
স্মৃতি তাচ্ছিল্য হাসে।
” জানিস তানহা আগে আমি আর আবির মিলে প্লান করতাম বিয়েতে কি করবো? কিভাবে সাজবো? আবিরের দিকে কিভাবে তাকাবো? হাসবো কি না? কিন্তু সবটা নষ্ট করে দিয়ে চলে গেছিলো আবির। আমি মেনেও নিয়েছিলাম। কিন্তু আবার চলে আসলে।
“ভালোবাসে তাই এসেছে।
” আবার চলে যাবে না তার কোনো গ্যারান্টি আছে। ও আসলে ভেসে আসা মেঘ। যে আসে আবার চলেও যায়।
“স্মৃতি থাম তো তুই। আজ তোর গায়ে হলুদ এটাতে ফোকাস কর। কাল কি হবে এটা ভেবে আজটা নষ্ট করা বোকামি ছাড়া কিছুই না। আর সবাই জানে তোরা ভালোবেসে বিয়ে করছিস। এখন তুই মুখ গোমড়া করে থাকলে সবাই কি বলবে বল তো? তোর খুশির জন্য সবটা করছে সবাই। আর তুই?
স্মৃতির চোখের পানি মুছে দেয় তানহা।
“আর কাঁদবি না কিন্তু।
পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে তানহা আর অভি। সবাই স্মৃতির ওপর ফুলের পাঁপড়ি ছড়াচ্ছে আর অভি তানহার মাথায়।
মাঝেমধ্যে তানহা রাগী দৃষ্টিতে তাকায় অভির দিকে। আর দাঁত কেলায়।
” কি বুঝছেন মিসেস মহিউদ্দিন?
এক প্লেট মিষ্টি তমা বেগমের হাতে ধরিয়ে দিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলেন আহাম্মদ চৌধুরী।
“যা বোঝার তাই বুঝলাম।
মুখ বাঁকিয়ে বলেন তমা বেগম।
” আপনার মেয়েকে যে আমার ছেলে বিয়ে করেছে জানেন সেটা?
বিশ্ব জয়ের হাসি দিয়ে বলেন আহাম্মদ চৌধুরী।
তমা বেগম আশ্চর্য হয়ে যায়। কথাটা কত % সত্যি ওনার জানা নেই। কিন্তু এই লোকটার সামনে তো ছোট হওয়া যাবে না। তাই মুখে হাসির রেখা টানে।
“অবশ্যই জানি। আমার মেয়ে সবটা আমাকে বলেন।
ভাব নিয়ে বলে তমা বেগম।
আহাম্মদ চৌধুরী ভেবাচেকা খেয়ে যায়। তানহা তার মাকে বলে দিলো কথাটা। আর অভি বললো না? মনে মনে রেগে যায় অভির প্রতি।
” তো আপনি মেনে নিয়েছেন?
“কেনো নেবো না? সোনার টুকরো ছেলে। আমাকে লিপস্টিক কিনে দিয়েছে অনেকগুলো।
এক গাল হেসে বলেন তমা বেগম।
” এই যে আজকে গাড়ো খয়েরী রঙের লিপস্টিক লাগিয়েছি না এটা অভি দিয়েছে। ওয়াটার প্রুফ। পানি দিয়ে ঘসলেও চব্বিশ ঘন্টার আগে উঠবে না।
ঠোঁটে থাকা লিপস্টিক দেখিয়ে বলেন তমা বেগম।
আহাম্মদ চৌধুরী গাল ফুলায়।
“এতোখনে বুঝলাম আমার ছেলেটা এই পাগলকে কি করে ঠান্ডা করেছে।
বিরবির করে বলেন আহাম্মদ চৌধুরী।
” কিছু বললেন বিয়াইন সাহেব?
আপনি কিন্তু এখন থেকে আমার বিয়াই লাগেন।
“আসছি
ছেলের বাড়ি থেকে হলুদ চলে এসেছে।
এই বলে কেটে পরেন আহাম্মদ চৌধুরী।
তমা বেগম খিলখিল করে হাসে।
” এসেছিলো আমাকে কথা শোনাতে।
তানহা আর অভি আজ ম্যাচিং করে পরেছে। একদম মনে হচ্ছে সরষে হ্মেত। তানহা একদম পাত্তা দিচ্ছে না অভিকে। সারাক্ষণ স্মৃতি আর হালিজার সাথে সেটে আছে।
“অভি
অভি বিরক্ত হয়ে এক পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। কারো ডাকে পেছনে ঘুরে তাকায় অভি।
মোহনা দাঁড়িয়ে আছে। চোখের নিচে কালি পরে গেছে। শুকিয়ে গেছে অনেকটা। একটা হলুদ শাড়ি পরেছে। আগের মতো সাজুগুজু করে নি।
” কিছু বলবে?
“সরি
আবার তোমার জীবনে ফিরতে চাই না। তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি তাই সরি বলছি। কালকে বিদেশ চলে যাচ্ছি। এখানে থাকা আর সম্ভব না। দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে আমার। আমার জীবনে ঠিক কি ছিলে আগে বুঝতে পারি নি।
সত্যি একটা কথা কি জানো অভি। আমাকে তোমার মতো আর কেউ ভালোবাসে নি। আমার বাবা মাও না। আর সেই তুমিটাকেই আমি ঠকিয়েছি।
পারলে হ্মমা করে দিও।
আজকে এখানে আসার কারণটাই ছিলো তোমাকে সরি বলা।
আসছি
এক টানা কথা গুলো বলে চলে যায় মোহনা। আজকে মেয়েটা চোখে মুখে কোনো হ্মোপ রাগ জেদ ছিলো না। ছিলো শুধু আর্তনাদ হাহাকার।
অভি মুচকি হাসে।
” এই মেয়েটাকে ধন্যবাদ। আমার জীবন থেকে চলে না গেলে তানহার মতো কাউকে পেতাম না।
তানহা খেয়াল করেছে অভিকে মোহনার সাথে কথা বলতে। কোমরে হাত দিয়ে অভির সামনে এসে দাঁড়ায় তানহা।
“কি বেপার বলেন তো? আপনিও শুকিয়ে গেছেন আপনার প্রাক্তনও শুকিয়ে গেছে। কানেকশনটা কি?
অভি তানহাকে রেলিঙের দিকে ঘুরিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কাঁঠে থুতনি ঠেকায়।
” কানেকশনটা হলো। ও আমার জন্য পুরে পুরে শুকিয়ে গেছে। আর আমি আরেকজনের সাথে কথা বলতে না পারায় শুকিয়ে গেছি।
তানহা মুখ বাঁ কায়।
“বিয়ে তো হয়েই গেছে এখন আর পড়ালেখা করতে হবে কেনো? জোর করে না পাঠিয়ে দিলেই পারতেন।
” বিয়ে হয়ে মানে এটা নয় জীবনটা থেমে গেছে। আমি তোমাকে সুযোগ দিয়েছি পড়ালেখা করার। তোমার উচিৎ এটার সদ্য বেবহার করা। শিক্ষিত মানুষের অনেক গুন। পড়ালেখা করতে হবে তোমাকে।নিজের পা য়ে দাঁড়াতে হবে। আমাদের বেবিদের মানুষ করতে হবে। বুঝলেন ম্যম
“হুমম বুঝলাম
এবার চলুন বোনকে হলুদ ছোঁয়াবেন।
তানহা আর অভি মিলে হলুদ ছোঁয়ায় স্মৃতিকে।
সবার নজর কারে একটা মেয়ে। ছয়ফিট লম্বা হবে। বোরকা পরেছে। পায়ের খানিকটা বেরিয়ে গেছে। পা দুটো ছেলেদের মতো। আবার কথা বলছে মেয়েদের মতো।
তমা বেগম এটা সেটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। মুখটা কিছুতেই খুলতে চাইছে না মেয়েটা।
” বিরিয়ানি রান্না করেছে। খাবে? আলু দিয়েছে। ইসস কি যে মজা হয়েছে।
আবির বিরক্ত হয়ে কথার উওর দিয়ে যাচ্ছে। কতোখন আর ভয়েস চেঞ্জ করে কথা বলবে?
“তুমি বসো আমি বিরিয়ানি নিয়ে আসছি।
বলে চলে যায় তমা বেগম। এই ফাঁকে উঠে চলে যায় আবির। সাংঘাতিক মহিলা।
স্মৃতির পাশে গিয়ে বসে।
হালিজা জিজ্ঞেস করতেই বলে ছেলের বাড়ির লোক।
স্মৃতি বেশ বুঝতে পারছে এই লোকটা আবিরই। কিন্তু এ এখানে কি করছে? সবাই বুঝতে পারলে কি বলবে?
চলবে
বোনাস পর্ব দিয়ে দিলাম।