#ভালোবাসি_প্রিয় (১৭) [বোনাস পর্ব]
#সিজন_৩
#লেখিকা_নূন_মাহবুব
-“বৃত্ত সোফার উপর তার ফাইল রেখে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে ঝর্না আবরারের দরজার সামনে গিয়ে থমকে গেল।পুরো রুমে যেন শুভ্রতার আলো ছড়িয়ে পড়েছে। বৃত্ত যদি ও দোয়া কে হিজাব ছাড়া কখনো দেখে নি। কিন্তু মেয়েটার কথা গেট আপ দেখে আন্দাজ করতে পারলো এটা মিস দেড় ফুট। বৃত্ত কখনো কল্পনাও করতে পারে নি ,মিস দেড় দেখতে এমন হবে।বৃত্ত ভেবেছিলো হয়তো সে কালো, অসুন্দর যার কারনে নিজের গায়ের রং আড়াল করতে সবসময় নিজেকে কালো বোরকা দ্বারা আবৃত করে রাখতো। কিন্তু বৃত্ত সম্পূর্ণ ভুল ছিল।তখন বৃত্তের মনে পড়ে গেল দেড় ফুটের প্রথম দিনের বলা সেই কথাটা।আমি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর মানুষ। বৃত্তের মনে হচ্ছে সে কোন জান্নাতি হুর দেখছে।এতো মায়া এতো স্নিগ্ধতা। বৃত্তের মুখ থেকে আপনাআপনি বেরিয়ে গেল, মাশাআল্লাহ তোর জেল্লা আমায় ঘায়েল করেছে। কিন্তু পরক্ষণেই বৃত্ত নিজেকে সামলে নিয়ে বললো, ছিঃ ছিঃ। এ আমি কি ভাবছিলাম?আমার জীবনে শুধু একটাই মেয়ে।আমার মামনির মেয়ে।মামনির মেয়ে ছাড়া অন্য কোন মেয়ের স্থান আমার জীবনে নেই। যদিও সে শুধু মাত্র আমার কল্পনার সৃষ্টি করা একটা চরিত্র। কিন্তু এই মেয়ে আমাদের বাসায় কি করছে? আর মমের সাথে কিসের এতো সখ্যতা তার?”
-” দোয়া ঝর্না আবরারের সাথে কথা বলছিলো । হঠাৎ দরজায় চোখ পড়তেই চিৎকার দিয়ে ওঠে বললো,হায় আল্লাহ। বখাটে টা এইখানে এলো কিভাবে ?”
-” দোয়ার চিৎকার শুনে ঝর্না আবরার দোয়া কে জরিয়ে ধরে বললো,কি হলো তোর? এভাবে চিৎকার দিলি কেন?”
-” দোয়া দরজায় দাঁড়িয়ে থাকা বৃত্তকে দেখিয়ে বললো, আন্টি দেখো এই বখাটে , গুন্ডা ছেলেটা আমাকে ফলো করতে করতে তোমাদের বাসা পর্যন্ত চলে এসেছে।জানো আন্টি এই ছেলেটার মধ্যে মনুষ্যত্ববোধ বলতে কিছু নেই। মানুষ কে মানুষ মনে করে না। অবশ্য এতে তার দোষ না।দোষ তার পরিবারের।তার পরিবার তাকে সঠিক শিক্ষা দিতে পারে নি।জানি না কোন মা এমন অমানুষ সন্তান গর্ভে ধারণ করেছিলেন।”
-” আসলেই আমি আমার সন্তান কে সঠিক শিক্ষা দিতে পারি নি।এইটা আমার ব্যর্থতা।তবে আমি খুব করে চাই আমার এই বখাটে , গুন্ডা ছেলের জীবনে এমন কেউ আসুক যে আমার ছেলের জীবন টা পাল্টে দিয়ে ওকে সুন্দর একটা জীবন দান করবে।ও বাঁচার আনন্দ খুঁজে পাবে।”
-“এই বখাটে টা তোমার ছেলে খালাম্মু?
-” হ্যাঁ আমি সেই গর্ভধারিনী মা যে কি না ওর মতো অপদার্থ ছেলের জন্ম দিয়েছি।”
-” হু ইজ দ্যা গার্ল মম?ডু ইউ নো হিম?”
-” ঝর্না আবরার কিছু বলতে যাবে তার আগেই জামিলা এসে বললো, ভাইজান এই লন আপনার শরবত।জামিলা রুমে এসে দোয়া কে খেয়াল করে নি। বৃত্তের হাতে শরবত দিয়ে বেড়িয়ে যাবে তখনই দোয়ার দিকে চোখ পড়তে বলে উঠলো,ও মা ও মা এ কত্তো সুন্দর মাইয়া। চেহারার কি ছুরোত ?।যেন আসমানের পরী।এমন সুন্দর মাইয়া বৃত্ত ভাইজানের বউ হলে মন্দ হবে না।সবাই বউ দেখে বলবে , জিতেছেন ভাইজান , জিতেছেন।”
-” আহ্ জামিলা! কি হচ্ছে টা কি? ধমকের সুরে বললেন ঝর্না আবরার।”
-” আসলে খালাম্মা এতো সুন্দর মাইয়া দেখে নিজেরে কন্ট্রোল করতে পারি নি।তয় খালাম্মা এই মাইয়াডারে আমার চেনা চেনা লাগছে। খাঁড়ান এক মিনিট।আমি যামু আর আমু।জামিলা দৌড়ে গিয়ে তার রুম থেকে ফোন নিয়ে এসে একটা ভিডিও বের করে বললো,এই যে দেহেন খালাম্মা এই মাইয়াডা সেই মাইয়া যে বৃত্ত ভাইজানের চোপড়ার মধ্যে চটকানা দিছিলো।তাই তো বলি এতো চেনা চেনা লাগে ক্যা রে?”
-” আমি তাকে প্রথমে দেখাতে চিনতে পেরেছি। কিন্তু কিছু বলি নি।কারন তার কোন দোষ ছিল না। বরং আমার আরো ইচ্ছা ছিল কখনো তার সাথে দেখা হলে তাকে ধন্যবাদ দেওয়ার।আর আজ সেই ইচ্ছেটা ও পূরন হয়ে গেল।আর এখন তো ও আমার মেয়ে।ওর প্রতি ভালোবাসা আরো দ্বিগুন হাড়ে বেড়ে গেল। তুই কথা না বাড়িয়ে কিচেনে যা, রান্নার জোগাড় কর।আমি নিজে হাতে আমার মেয়েটাকে রান্না করে খাওয়াবো।”
-” না না খালাম্মু । আমার ফিরতে হবে। আম্মা চিন্তা করবেন।”
-” শাহিনার সাথে অনেক বোঝাপড়া বাকি আছে আমার।সে আমি দেখে নিবো।মেয়ে কি তার একার নাকি। তুই আমার ও মেয়ে।আজকে তুই আমার কাছে থাকবি। কোথাও যাওয়া হচ্ছে না তোর।”
-” কিন্তু খালাম্মু আম্মা অসুস্থ। আজকে ডক্টর দেখিয়েছি। ডক্টর আম্মাকে বিশ্রাম নিতে বলেছেন।আমি বাসায় না থাকলে আম্মা নিজে সব কাজ করবে । তারপর আবার অসুস্থ হয়ে পরবে।”
-” তাহলে অন্তত দুপুরে একটু খাওয়া দাওয়া করে যা মা।”
-” ঠিক আছে। তাহলে চলো আমি তোমাকে রান্নার কাজে সাহায্য করি।”
-” না না মা ।তোর কিছু করতে হবে না। তুই বরং বিশ্রাম কর।”
-” এতো বছর পরে তোমার দেখা পেলাম। আম্মার কাছে তোমার গল্প অনেক শুনেছি।আর বাকি গল্প এখন তোমাকে রান্নার কাজে সাহায্য করতে করতে শুনবো। প্লীজ না করো না।”
-” এই কথাটা অবশ্য মন্দ বলিস নি।তবে
তোর মাকে একদম আমার কথা বলবি না।আমি গিয়ে তোর মাকে সারপ্রাইজ দিবো। ইশ্ তখন শাহিনা টা নিশ্চয় কেঁদে কে”টে এক হয়ে যাবে। ভাবতেই কেমন ভালো লাগছে।”
-” বৃত্ত এতোক্ষণ নিরব দর্শক হয়ে তাদের কে পর্যবেক্ষণ করছিল।তাকে কেউ পাত্তাই দিচ্ছে না।তার মধ্যে বাসার কাজের লোক কাজের লোক ফিল হচ্ছে। নিজের মম তাকে চিনতে পারছে না। বৃত্ত কিছু টা বিরক্ত হয়ে ঝর্না আবরার কে এক সাইডে নিয়ে গিয়ে বললো, আই আষ্কড ইউ সামথিং।হু ইজ দ্যা গার্ল?”
-” তোমার মামনির মেয়ে?”
-” হোয়াট? আর ইউ কিডিং মি?”
-” নো আই অ্যাম সিরিয়াস বলে ঝর্না আবরার দোয়া কে নিয়ে কিচেনে চলে গেল।”
-” বৃত্ত ভাবতে ও পারে নি তার কল্পনার চরিত্র টা কখনো বাস্তবে রূপ নিবে।তবে বৃত্ত তার মামনির মেয়ে কে যেভাবে কল্পনা করেছিলো তার থেকেও অধিক সুন্দর মেয়েটা। এমনিতেই দোয়ার প্রতি বৃত্তের একটা সফট কর্নার তৈরি হয়েছিল।আর আজ দোয়া তার মামনির মেয়ে জেনে দোয়ার প্রতি তার এক অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে।যে অনুভূতির সাথে বৃত্ত পরিচিত নয়।তবে কি বৃত্ত মেয়েটার সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে গেল? কিন্তু পরক্ষণেই বৃত্ত ভাবলো আমি তো মেয়েটাকে না দেখেই আমার কল্পনার রাজ্যের রানী করেছিলাম।তার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে না। বৃত্ত রুমে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দুই হাত মাথার নিচে ভাঁজ করে দিয়ে দেয়ালের কোনায় থাকা টিকটিকি দেখতে লাগলো।এই মুহূর্তে বৃত্তের কাছে দেয়ালের কোনায় লেগে থাকা টিকটিকি দেখতে ও ভালো লাগছে। সবকিছু তে তার এতো ভালো লাগছে কেন? আচ্ছা তার ভালো লাগার কারণ টা কি শুধু ঐ দেড় ফুট মেয়েটা? যে কিনা কিছুদিন আগে ও তার বিরক্তির কারণ ছিল।যেই মেয়েটা কে ভার্সিটি তে দেখবে না বলে তাকে অনেক ভাবে অপমান অপদস্থ করেছে।আর আজ সেই মেয়েটা কে এক নজর দেখার জন্য বৃত্তের মন ছটফট করছে। বৃত্তের মনে হচ্ছে তার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকেই জনম জনম পাড় করে দিতে পারবে।বৃত্ত পানি খাওয়ার নাম করে কিচেনে গিয়ে আরেক দফা চমকে গেল। দোয়া বোরকা হিজাব খুলে কালো লং একটা থ্রি পিস পরেছে হয়তো আগে থেকেই পরা ছিল। সাথে নতুন বউয়ের মতো এক হাত ঘোমটা দিয়েছে।বৃত্ত কিচেনের বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছে এমন সময় জামিলা এসে বললো,
-” আজকে সূর্য মামা কোন দিক থেকে উঠেছে ভাইজান? আপনি কিচেনে এসেছেন? মাগো মা এই দিন ও দেখার বাকি ছিল আমার। আপনার কিছু লাগতো ভাইজান?”
-” তুমি ইদানীং বেশি বেশি কথা বলছো বুয়া। আমি ঐ দেড় ফুট মেয়েকে দেখতে এইখানে আসি নি।আমি পানি খেতে এসেছিলাম।”
-“ইফতারের আগে কিচেনে খটখট শব্দ শুনে আম্মা জিজ্ঞেস করলো কিচেনে কে রে? আমি বললাম,আমি বেগুনি চুরি করে খাই নি। ব্যাপার টা কি এইরকম হয়ে গেল না ভাইজান?”
-” বৃত্ত নিজের কথায় নিজেই বোকা বনে গেল।বৃত্ত কিছু টা লজ্জা পেয়ে বললো,মম কে একটু আমার রুমে পাঠিয়ে দাও।মমের সাথে আমার কথা আছে।”
-” ঠিক আছে ভাইজান।”
-” ঝর্না আবরার শাড়ির আঁচলে হাত মুছতে মুছতে এসে বললো,কি হয়েছে বেটা? কিছু লাগবে তোমার?”
-” হ্যাঁ ।বউ লাগবে।আই নিড বিয়ে মম!”
চলবে ইনশাআল্লাহ।।
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।
[ আসসালামুয়ালাইকুম।গল্পটা প্রায় শেষ প্রান্তে চলে এসেছে। সত্যি বলতে আমি খুব করে চাচ্ছি গল্প টা শেষ করে দিতে।রোজার মধ্যে লেখালেখি করাটা আমার কাছে একটা বাড়তি ঝামেলা মনে হচ্ছে।রাতে ও একটা পর্ব পেতে পারো।২০ পর্বে ইনশাআল্লাহ শেষ করে দিবো।তবে এর মধ্যে সবটা ক্লিয়ার করে দিবো।সবাই ভালো থাকো সুস্থ থেকো।এই রমজানে যার যা প্রয়োজন আল্লাহর কাছে কেঁদে কে”টে চেয়ে নাও। আর বিশেষ করে আমার মতো মিসকিন যারা তারা ইফতারের আগ মুহূর্তে অন্যের জন্য বেশি বেশি দোয়া করে নিজে উত্তম জীবনসঙ্গী লুফে নাও । আর হ্যাঁ আমাকে মোনাজাতে রেখো সবাই]