ভালোবাসি প্রিয় ৩ পর্ব -২১+২২ ও শেষ

#ভালোবাসি_প্রিয় (২১)

#সিজন_৩

#লেখিকা_নূন_মাহবুব

-” আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে রাজ? আপনি কি জানেন আপনি ঠিক কি বলছেন?আর সবচেয়ে বড় কথা হলো আমি আপনার থেকে বয়সে অনেক বড়, বিধবা পাগল একটা মেয়ে।আর আপনি কি না নিজের থেকে বয়সে বড়,বিধবা পাগল একটা মেয়েকে বিয়ে করতে চায়ছেন?নাকি পাগল পেয়ে মজা নিচ্ছেন আমার সাথে?”

-“আমি আপনার অতীত জানি ম্যাম।আমি এটাও জানি আপনার স্বামীর নাম ও রাজ ছিল‌ এবং তিনি বিসিএস ক্যাডার হয়েছিলেন।আর কাকতালীয় ভাবে আমার নাম ও রাজ।তবে আমি বিসিএস ক্যাডার ন‌ই।আমি পেশায় একজন ডক্টর। বিশ্বাস করুন ম্যাম হয়তো আপনার এক্স স্বামীর মতো আপনাকে ভালোবাসতে পারবো না। আবার কমতি ও রাখবো না। একটিবার আমার হাত টা ধরে দেখুন ।কথা দিচ্ছি মৃ”ত্যু”র আগ পর্যন্ত সেই হাত আর ছাড়বো না। ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখবো। আপনার বাবার সাথে আমার কথা হয়েছে।তিনি ও চায়ছেন আপনি পুরোনো স্মৃতি ভুলে নতুন করে বাঁচতে শিখুন।প্লীজ ম্যাম আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না।”

-” আপনি কেন বুঝতে চায়ছেন না। আপনি যা চাচ্ছেন সেটা কখনো সম্ভব নয়।আমি নতুন করে আর কারো মায়ায় জড়াতে চাই না।বাকি জীবন আমি রাজের স্মৃতি বুকে নিয়েই কা”টি”য়ে দিতে পারবো।”

-” কুয়াশার কথা শুনে কুয়াশার বাবা এসে কুয়াশার দুই হাত ধরে বললো, প্লীজ মা আমি বাবা হয়ে তোর কাছে হাত জোড় করছি। এতো গুলো বছর তোকে চোখের সামনে কষ্ট পেতে দেখেছি।আমি আর তোর কষ্ট সহ্য করতে পারবো না।কারো স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকা যায় না মা।আমি ও তো তোর আম্মা কে কম ভালোবাসি নি। তবু ও সে মৃ”ত্যু”র পর আমি আবার নতুন করে বাঁচতে শিখেছি। তোর আম্মা স্পষ্ট বলে দিয়েছে তুই যদি এই বিয়েতে রাজি না হোস তার যেদিকে দুচোখ যায় সেদিকে চলে যাবে। তবু ও চোখের সামনে তোর কষ্ট সহ্য করবে না। কিছুদিন আগে তোর শ্বশুর শ্বাশুড়ি এসে তোকে এতো করে বুঝিয়ে গেল।তারা ও চায়ছেন তুই নতুন করে জীবন শুরু কর। আমাদের সিন্ধান্ত তোকে জানিয়ে দিলাম।বাকি টা তোর ইচ্ছা।দেখ তুই কি করবি বলে চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেলেন আতাউর রহমান।”

-” আতাউর রহমান যাওয়ার পরে রাজ বললো, দেখলেন তো মানুষ টা কতো কষ্ট পাচ্ছে আপনার জন্য। প্লীজ কুয়াশা না করবেন না।”

-“এই সমাজ কখনো আমাদের সম্পর্ক মানবে না রাজ। আমি আপনার বয়সে বড়,বিধবা এমনকি পাগল।লোকে হাসাহাসি করবে আমাদের নিয়ে।”

-“ভালোবাসা কখনো বয়স দেখে হয় না ম্যাম। ভালোবাসা এমন এক পবিত্র বন্ধন যা ধর্ম বর্ণ গোত্র দেখে হয় না।আর আপনি যদি বিধবা নারীর কথা বলেন।তো আমি বলবো বিধবা নারী কে বিয়ে করা সুন্নত। আমাদের নবীজী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার থেকে বয়সে অধিক বড় নারী কে বিয়ে করেছিলেন। আপনি কি আমাকে সেই সুন্নত টুকু আদায়ের সুযোগ দিবেন কুয়াশা? সুযোগ দিবেন আপনার হাত ধরে জান্নাতে যাওয়ার? বলতে কি দিবেন #ভালোবাসি_প্রিয়?”

-” কুয়াশা ভাবলো এই রাজ আমার রাজের মধ্যে অনেক টা মিল রয়েছে।একটা মানুষ কতোটা কেয়ারিং হতে পারে হয়তো এই রাজ কে না দেখলে বুঝতে পারতাম না।ছয় টা মাস আমার পাগলামি সহ্য করেছে।আমাকে নিজের লোকের মতো সেবা যত্ন করেছো।বাবা আম্মা হয়তো তার ব্যবহার ,তার কেয়ারিং দেখে ভাবছে সে আমার উপযুক্ত।মনে হচ্ছে এই রাজ ও আমার খুব পরিচিত, আমার অনেক চেনা।আমি কি করে আপনাকে হ্যাঁ বললো বলুন তো? আমার যে খুব ভয় হয়। আল্লাহ তায়ালা আমার প্রিয় মানুষ গুলো আমার থেকে কেড়ে নিয়ে যায়। যেমন টা আমার আম্মা চলে গিয়েছে,রাজ চলে গিয়েছে।এখন আবার আপনাকে আমার জীবনে জড়ালে আপনি ও যদি আমাকে ছেড়ে চলে যান?আমি আর স্বজন হারানোর যন্ত্রণা ভোগ করতে পারবো না।এবার আমি সত্যিই মা”রা যাবো।”

-” ম্যাম আমি কিন্তু আমার উত্তর পাই নি।”

-” কুয়াশা কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসি দিলো।যার অর্থ আমি রাজি। অবশেষে কুয়াশার জীবনে সূচনা হলো নতুন অধ্যায়ের।পুরনো স্মৃতি ভুলে নতুন করে বাঁচার আকাঙ্ক্ষা।অন্য কোন রাজের মাঝে সুখ খুঁজে নেওয়ার।”

___________________________________
-” বৃত্তের এক্সিডেন্টের কথা শুনে সকাল সকাল দোয়ার সপরিবারে হসপিটালে এসেছে। ঝর্ণা আবরার শাহিনা বেগম কে দেখা মাত্র জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো। দোয়া এগিয়ে গিয়ে দেখলো বেডের উপর বৃত্তের নিথর দেহ পড়ে রয়েছে। মাথা ,হাতে পায়ে সাদা ব্যান্ডেজ করে রাখা হয়েছে।যার উপর দিয়ে র”ক্তে’র ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। বৃত্তের এক্সিডেন্টের জন্য দোয়ার নিজেকে দায়ী মনে হচ্ছে। দোয়া যদি তার সাথে খারাপ ব্যবহার না করতো তাহলে হয়তো আজ বৃত্তের এই অবস্থা হতো না। দোয়া বৃত্ত কে যত‌ই খারাপ বখাটে অমানুষ বলুক দোয়া কখনো চাই নি বৃত্তের এমন পরিনতি হোক। দোয়া সবসময় চেয়েছে বৃত্ত কে নিজেকে শুধরে নিক। বৃত্তের এই অবস্থা দেখে দোয়ার চোখ থেকে দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। ঝর্ণা আবরার চোখের পানি মুছে বললেন, জানিস দোয়া আমার বেটা ছোট বেলায়‌ ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিল। শরীরের এক ফোঁটা র”ক্ত ভালো ছিল না। দেশ বিদেশে কতো জায়গায় নিয়ে গেছি। বাঁচার আশা একদম কম ছিল।কতো রাত যে নির্ঘুমে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে গিয়েছি একমাত্র আল্লাহ জানেন। স্বয়ং তিনি বাঁচিয়েছেন তাই আমার বেটা আবার এই পৃথিবীর আলো দেখতে পেয়েছিলো। ডক্টর বলে দিয়েছিলো ওকে যেন মানসিক ভাবে আঘাত না করি।আর আমি মা হয়ে সেই কথা ফেলতে পারি নি। বেটা যখন যা চেয়েছে দিয়েছি। কখনো বারণ ,শাসন করতে পারি নি। অতিরিক্ত আদরে বেটা আমার চোখের সামনে আস্তে আস্তে হয়ে উঠলো উগ্র বখাটে স্বভাবের। তবু ও আমি কিছু বলতে পারি নি। শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছি আর আল্লাহর কাছে দুই হাত তুলে প্রার্থনা করেছি আমার বেটার জীবনে এমন কাউকে পাঠানোর জন্য যে ওর জীবন টা পাল্টে দিয়ে নতুন একটা জীবন দিতে পারবে। তুই আমার বেটার জীবনে এসে ওর জীবন টা পাল্টে দিয়েছিস। বেটার দিকে একবার ভালো করে লক্ষ্য করেছিস‌।ওর মধ্যে এখন আর সেই উগ্ৰ ভাব নেয়। আমার বেটা এখন শার্ট প্যান্ট ছেড়ে পাঞ্জাবি , পায়জামা পরে।যে ছেলে টা কিছু দিন আগে ও মুখে সামান্য দাড়ি গজাতে দিতো না।বলতো দাড়িতে চুলকানি হয়।সেই ছেলে টা আজ মুখ ভর্তি দাড়ি রেখেছে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ছে। আমার ছেলেটা সত্যি তোকে অনেক বেশি ভালোবেসেছিলো। তোকে নিয়ে সংসার করার স্বপ্ন দেখেছিলো। কিন্তু তুই সবটা নাটক মনে করলি । তুই আমার ছেলেটার ভালোবাসা বুঝলি না।যায় হোক জোর করে তো আর ভালোবাসা হয় না।তবে যেখানেই যাস তোর জন্য সবসময় দোয়া করবো আমি। তুই যেন সুখী হোস এই কামনা করি সবসময়। তোর শ্বশুর শ্বাশুড়ি তোর স্বামী যেন তোকে সবসময় ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখে।”

-” দোয়া চোখের পানি মুছে বললো, এইভাবে আমাকে দূরে ঠেলে দিতে পারলে খালাম্মু উফস‌্ সরি শ্বাশুড়ি আম্মু।”

-” মানে?”

-” মানে বিয়ে হবে এবং এক্ষুনি এই মুহূর্তে।”
#ভালোবাসি_প্রিয় (২২)

#সিজন_৩

#লেখিকা_নূন_মাহবুব

-” বাসর ঘরে এক হাত ঘোমটা টেনে বসে রয়েছে দোয়া। বৃত্তের জ্ঞান ফেরার পর বিয়েটা কোন প্রকার আয়োজন ছাড়াই হসপিটালে হয়েছে।বিয়ে পড়ানো শেষ হলে ডক্টর যখন বললো, ছেলেটা তো এখনো পরিপূর্ণ ভাবে সুস্থ্য হয়ে ওঠে নি। বাসায় নিয়ে গেলে ওর দেখাশোনা কে করবে?তার চেয়ে বরং হসপিটালে আরো কিছু দিন এডমিট থাক। আমাদের নার্স আছে তারা বৃত্তের দেখাশোনা করবে। ডক্টরের কথা শুনে মূহুর্তের মধ্যে দোয়ার মধ্যে হিংসুটে ভাব উদয় হলো। দোয়া ফট করে বলে উঠলো,না না নার্সদের সেবার কোন প্রয়োজন নেয়।আমরা উনাকে বাসায় নিয়ে যাবো।আমি আছি, শ্বাশুড়ি আম্মা আছে,আমরা ঠিক উনার খেয়াল রাখতে পারবো। দোয়ার কথা শুনে মূহুর্তের মধ্যে হাসির রোল পরে গেল। দোয়া যখন বুঝতে পারলো সে কি বলেছে তখন একদম লজ্জায় নুয়ে পরলো।যা বৃত্তের চোখ এড়ালো না। বৃত্ত দোয়ার লজ্জা আরো বাড়িয়ে দিতে দোয়ার দিকে ফ্লাইং কিস ‌ছুড়ে দিলো।যা দেখে দোয়ার যেন কোটর থেকে চোখ বেড়িয়ে আসার উপক্রম হলো। দোয়া ভাবছে ছিঃ ছিঃ এই লোকটা আসলেই খারাপ। এতো গুলো মানুষের সামনে ছিঃ ছিঃ ছিঃ। তবে খারাপ হোক বখাটে গুন্ডা হোক সে এখন আমার বিয়ে করা বর। আমার জান্নাতের সঙ্গী। আমার বরের সেবা যত্ন আমি নিজেই করবো।অন্য কোন নার্স কেন করবে?আর এসব নার্সদের মতলব ও ঠিক লাগছে না। কেমন ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।মনে হচ্ছে জীবনে কোনদিন ছেলে দেখে নি। হসপিটালের কথা মনে হতেই দোয়া হেসে উঠলো।সে আজ একদম বাচ্চাদের মতো পাগলামি করছে। দোয়া তার সাথে ঘটে যাওয়া আগের ঘটনা ভাবছে হঠাৎ দরজার খট খট শব্দে ধ্যান ভাঙ্গল তার।বৃত্ত এসেছে।সাদা পায়জামা , পাঞ্জাবি দাড়িতে বেশ স্নিগ্ধ লাগছে তাকে। দোয়ার মনে হচ্ছে নতুন কোন বৃত্ত কে দেখছে। দোয়া খাট থেকে নেমে এসে বৃত্ত কে সালাম করতে গেলেই বৃত্ত দোয়া কে উঠিয়ে বললো, তোমার স্থান আমার পায়ে না , আমার বুকে। বৃত্ত দোয়া কে জরিয়ে ধরতে গেলেই দোয়া বললো,

-” একদম সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করবেন না।আগে আমার মোহরানা পরিশোধ করুন।”

-” এই আস্ত বৃত্তটাই তো তোমার।‌মোহরানার কি প্রয়োজন? আমি হলে চলবে না তোমার?”

-” আমি কোন কথা শুনতে চাই না।আগে আমার মোহরানা পরিশোধ করুন।”

-” ওকে ওকে।বৃত্ত একটা খাম এনে দিয়ে বললো,এই যে তোমার মোহরানার নগদ পাঁচ হাজার টাকা।”

-” আর বাকি টা?”

-” সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করে শুনাতে হবে তাই তো? এমনটাই তো বলেছিলে তুমি।”

-” হ্যাঁ। দোয়া ভাবছে বৃত্ত নিশ্চয় সুরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করতে পারবে না। কিন্তু বৃত্ত দোয়া কে অবাক করে দিয়ে সুরা ইয়াসিন পুরোটা তেলাওয়াত করে শুনিয়ে দিলো।”

-” দোয়া অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি! কিভাবে সম্ভব?”

-” মিস উফস্ সরি মিসেস আমি বিগত ছয় মাস ধরে ইউটিউব থেকে বিভিন্ন আলেমদের বয়ান শুনেছি। নিজেকে আপনার জন্য পরিপূর্ণ ভাবে তৈরি করেছি ম্যাম।আরো অনেক কিছু জেনেছি।”

-” যেমন ?”

-” এই ধরুন স্ত্রী কে জরিয়ে ধরা সুন্নত। স্ত্রীর কপালে চুমু দেওয়া সুন্নত। স্ত্রীর সাথে হাসি ঠাট্টায় মেতে থাকা সুন্নত। আরো অনেক কিছু মিন আরো অনেক কিছু। অবশ্য তুমি যদি শুনতে চাও আমার বলতে আপত্তি নেই। ”

-” হয়েছে ‌হয়েছে । আপনি যা জেনেছেন আপনার নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখুন। আমার জানার কোন আগ্ৰহ নেই।”

ইটস্ ওকে।বাট আমি যখন সেগুলো এপ্লাই করতে যাবো তখন কিন্তু তুমি একদম বাঁধা দিতে পারবে না। আর বাধা দিলে ও আমি কিন্তু শুনবো না।”

-” আগে নিজে সুস্থ্য হয়ে নিন। তারপর না হয়।”

-” তুমি যখন আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছো , তখনই আমি অর্ধেক সুস্থ্য হয়ে গেছি।আর তোমার সংস্পর্শে এসে পরিপূর্ণ ভাবে সুস্থ্য হয়ে গেছি। এই দেখ একদম ফিটফাট।”

-” তা তো দেখতেই পারছি। দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে হবে। আপনি কি পড়তে পারবেন? হাঁটু তে কি এখনো ব্যাথা আছে?”

-” তুমি একটু ছুঁয়ে দাও। একটু ভালোবাসা দাও। একবার জরিয়ে ধরে #ভালোবাসি_প্রিয় বল‌।দেখবে সব ব্যাথা দূর হয়ে যাবে।সব ব্যাথা হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে।”

-” ধ্যাত আপনি আসলেই একটা যা তা।”

-” দোয়া বৃত্ত দুজনেই নতুন জীবন শুরু করার জন্য নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলো। নামাজ শেষে বৃত্ত বললো ,এই আসো না একটা সেলফি তুলে রাখি।যাতে আমার ভবিষ্যৎ নাতি‌ নাতনি কে এই ছবি দেখিয়ে বলতে পারি,দেখ তোদের দাদু কতো স্ট্রং ছিলো অসুস্থ থেকে ও বাসর করেছে।”

-” বৃত্ত আপনি কিন্তু”

-” আমি কিন্তু কি?ও হো তোমাকে একটা জিনিস দেওয়ার আছে।এক মিনিট দাড়াও আমি এক্ষুনি আসছি। মিনিট পাঁচেক পরে বৃত্ত একটা দুল দোয়ার সামনে ধরলো।যা দেখে দোয়ার চোখ ছলছল করে উঠলো। দোয়া বললো,

-” আরে এইটা তো শ্বাশুড়ি আম্মার দেওয়া আমার সেই হারিয়ে যাওয়া দুল।এই দুল‌‌টা যে আমি কত্তো খুঁজছি তার কোন ইয়ত্তা নেয়। কিন্তু আপনি কোথায় পেলেন এই দুলটা?”

-“আমার গাড়িতে। প্রথমে ভেবেছিলাম‌ হয়তো মমের দুল হবে। কিন্তু বাসায় ফিরে দেখি মমের দুটো দুল আছে। তখন মনে হলো এইটা হয়তো তোমার। খুব যত্ম করে নিজের কাছে রেখেছিলাম। ”

-” ধন্যবাদ আপনাকে।”

-” শুধুমাত্র ধন্যবাদ? আর কিছু দিবা না?”

-” আর কিছু কি দিবো?”

-” সামথিং সুইট।”

-” মানে?

-” কিছু না।শুনেছি বাসর রাতে নাকি স্ত্রী কে কিছু গিফট দিতে হয়।তাই অনেক আগেই তোমার জন্য এই গিফট আমি কিনে রেখেছিলাম। দোয়ার হাতে একটা প্যাকেট বাড়িয়ে দিয়ে বললো বৃত্ত।”

-” দোয়ার প্যাকেট খুলতেই খুশি তে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরলো। গিফটের প্যাকেটে মোড়ানো ছিল একটা কোর‌আন শরীফ, জায়নামাজ,তসবিহ, বিভিন্ন ধরনের হাদিসের ব‌ই। দোয়া খুশি হয়ে বৃত্ত কে বললো, আমার জীবনের সবচেয়ে দামী গিফট ছিলো এইটা। আমি সত্যিই এতো খুশি হয়েছি যে আপনাকে বলে বোঝাতে পারবো না।”

-” আমি তো তোমাকে গিফট দিলাম। এবার আমার পালা।ক‌ই দাও দেখি আমার
গিফট?”

-“দোয়া মনে মনে ভাবছে এই রে এখন আমি কি দিবো? আমি কি জানতাম নাকি বৃত্ত আমার থেকে গিফট চায়বে।”

-” কি হলো দাও?”

-” দোয়া কিছু একটা ভেবে বললো, চোখ বন্ধ করুন।বৃত্ত চোখ বন্ধ করতেই দোয়া বৃত্তের গালে চুমু দিয়ে বললো, #ভালোবাসি_প্রিয়।।

___________________________________

-” দোয়ার ভার্সিটির প্রথম দিনের একটা ছবি সামনে নিয়ে চোখের পানি ফেলছে অভি।এই ছবিটা অভি প্রথম দিন সবার চোখ আড়াল করে তুলেছিল। বৃত্তের এক্সিডেন্টের কথা শুনে অভি ও সপরিবারে গিয়েছিলো হসপিটালে। হসপিটালে অভি দোয়া কে অনেক অবাক হয়ে যায়। অভি ভাবে আজ‌ই সুযোগ আব্বু আম্মু কে দোয়ার কথা বলার। দোয়া কে দেখানোর। অভি দোয়ার কথা বলতে যাবে তার আগেই অবনী দোয়া কে দেখিয়ে বললো, ভাইয়া ঐ যে মেয়েটাকে দেখছো, আমরা তোমার জন্য ঐ মেয়ে টাকে পছন্দ করেছিলাম।জানো মেয়েটা কি মিষ্টি দেখতে। একদম পরীর মত। তুমি একবার দেখলে আর চোখ ফেরাতে পারতে না। অবনীর কথা শুনে অভির যেন পুরো পৃথিবী থমকে গেল। মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে এলো তার। ততক্ষণে অভি জানতে পারে দোয়াই বৃত্তের সেই মামনির মেয়ে যাকে বৃত্ত না দেখেই তার মনের ঘরে ঠাঁই দিয়েছিলো। তখন অভির চোখের সামনে নিজের ভালোবাসার মানুষের বিয়ে হতে দেখা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না। অভি চোখের পানি ফেলছে আর বলছে, খুব ভালোবেসে ছিলাম তোমাকে। আমার মনের রানী করতে চেয়েছিলাম। জীবন তো একটাই।এই জীবনে কাঙ্ক্ষিত মানুষ ছাড়া ও কা”টি”য়ে দেওয়া যায়। কিন্তু তার স্মৃতি কি ভুলে থাকা যায়। আমি পারবো না দোয়া তোমার স্মৃতি ভুলে নতুন করে অন্য কাউকে আমার জীবনে জায়গা দিতে। অন্য কোন দ্বিতীয় নারী আসবে না আমার জীবনে। ভালোবাসার এই গল্পে আমি খলনায়ক হয়েও আসল নায়ক হিসেবে থেকে গেলাম। আমি না হয় সারাজীবন তোমাকে দূর থেকে ভালোবেসে যাবো। বুড়ো বয়সেও লাঠি তে ভর করে কাঁপা কাঁপা স্বরে বলবো #ভালোবাসি_প্রিয়।

সমাপ্ত

[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here