ভালোবাসি প্রিয় ৩ পর্ব -১৯

#ভালোবাসি_প্রিয় (১৯)

#সিজন_৩

#লেখিকা_নূন_মাহবুব

-“সময় বহমান।সময় তার আপন গতিতে এগিয়ে যায়।মনে হয় যেন চোখের পলকে দিন মাস বছর পেরিয়ে যাচ্ছে। নতুন দিন নতুন মাস নতুন বছরের সূচনা হচ্ছে।বৃত্তের জীবন থেকেও হারিয়ে গেছে কয়েক টা মাস। সূচনা হয়েছে নতুন এক বৃত্তের।যে বৃত্তের মধ্যে পূর্বের মতো কোনো অহংকার ,বখাটেপানা ,ক্লাব আড্ডা মেয়েদের কোন সাজসজ্জা নেয়। নিজেকে অনেক টা শুধরে নিয়েছে বৃত্ত।মুখ ভর্তি দাড়ি রেখেছে।যা বৃত্তের সৌন্দর্য কে আরো শত গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করছে। রোজা রাখছে।নফল ইবাদত করছে। বৃত্তের এই পরিবর্তনে সব থেকে বেশি খুশি হয়েছে সামিউল আবরার।তিনি বৃত্ত কে জানিয়েছে খুব শ্রীঘ্রই তিনি দেশে ফিরবেন। বৃত্তের প্রতি তার কোন রাগ অভিমান নেয়। বৃত্ত কে তিনি মন থেকে ক্ষমা করে দিয়েছেন শুনে খুশি তে বৃত্তের চোখ ছলছল করে ওঠে।বৃত্ত মনে মনে ভাবছে এ সবটা সম্ভব হয়েছে মিস দেড় ফুটের জন্য। কিন্তু বৃত্ত ঝর্ণা আবরার কে কিছুতেই বিয়ের জন্য রাজি করাতে পারছে না। অবশেষে বৃত্ত আর কোন উপায় না পেয়ে কিছু একটা ভেবে কিচেনে এলো জামিলার কাছে। কিচেনে এসে দেখে জামিলা মনের সুখে গান ধরেছে “মুড়ি ছাড়া বেগুনি কি করে জমে,প্রেম ছাড়া কচুড়ি কি করে জমে, রহিম ছাড়া জামিলা কি করে জমে?হায় কি করে জমে?”

-” জামিলার গান শুনে বৃত্ত হো হো করে হেসে উঠে বললো, কামাল কার দিয়া বুয়া।তবে রহিম টা কে বুয়া?”

-” জামিলা হকচকিয়ে গিয়ে বললো ,কেউ না ভাইজান। আপনি হয়তো ভুল শুনছেন।”

-“হতে পারে আমার কানে সমস্যা হয়েছে।যায় হোক তোমার ফোন টা দাও বুয়া।”

-” কেন ভাইজান?”

-” তোমার ফোনে ওয়াইফাই কানেক্ট করে দিবো।”

-” সত্যি দিবেন ভাইজান?এই লন ফোন। ইশ্ কতোদিন আমি‌ শান্তি করে টিকটক দেখতে পারি না।এই লন তাড়াতাড়ি দিয়ে দেন।”

-” হ্যাঁ দিবো তো।তবে আমার একটা শর্ত আছে।”

-” কি শর্ত ভাইজান।”

-” বৃত্ত জামিলার কানে কানে কিছু একটা বললো। যা শুনে জামিলা বললো,আমি পারুম না ভাইজান। আমার লাগবে না আপনার ওয়াইফাই।”

-” ঠিক আছে সমস্যা নেই।তবে এখন আমি মম কে গিয়ে বলছি যে আমাদের ড্রাইভার রহিমের সাথে তোমার চোখাচোখি চলে।তার জন্য তুমি গান গাও।”

-” না না ভাইজান। আপনি খালাম্মা রে কিচ্ছুটি ক‌ইবেন না।আমি এক্ষুনি গিয়ে খালাম্মা কে বলছি।আপনি শুধু জামিলার খেল দেখবেন।”

-” বৃত্ত গিয়ে ঝর্ণা আবরারের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ‌দাড়িয়ে দেখছে জামিলা কি করে।জামিলা গিয়ে ঝর্ণা আবরার কে বললো, খালাম্মা কেমন মানুষ আপনে? আপনার মধ্যে মায়া দয়ার ছিটেফোঁটা ও দেখতে পারছি না।”

-” কেন জামিলা?আজ হঠাৎ এই কথা?”

-“এতো গুলো বছর পরে আপনার প্রাণ প্রিয় বান্ধবীর সন্ধান পেয়েছেন। কোথায় দৌড়ে ছুটে যাবেন তার কাছে। কিন্তু তিন চার মাস হয়ে গেল এখনো আপনি তার সাথে দেখা করলেন না। আপনার জায়গায় আমি থাকলে কবেই ছুটে চলে যেতাম। বাল্যকালের বান্ধবী বলে কথা। আপনার কি তার জন্য একটু ও কষ্ট হয় না খালাম্মা?একটিবার জরিয়ে ধরে বলতে ইচ্ছে করে না #ভালোবাসি_প্রিয়?”

-” তোর কি আমাকে পাষান হৃদয়ের মনে হয় জামিলা? আমার ও খুব ইচ্ছে হয়।তবে সেই ইচ্ছা কে দমিয়ে রেখেছি। আমি আর শাহিনা দুজন দুজনকে কথা দিয়েছিলাম আমাদের সম্পর্ক আরো গাড়ো করতে আমরা বিয়াইন হবো। কিন্তু কে জানতো আমার বেটা এমন হবে।তাইতো আমি বেটা কে শুধরে নেওয়ার জন্য সময় দিয়েছিলাম।যাতে আমি শাহিনার সামনে গিয়ে দাঁড়াতে পারি।বেটার জন্য দোয়া কে চাইতে পারি। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর রহমতে আমার বেটা অনেক পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।আমি সবসময় আল্লাহ কাছে চেয়েছি আমার বেটার জীবনে এমন কেউ আসুক যে আমার বেটার জীবন টা দ্বীনের আলোয় আলোকিত করে দিতে পারবে।আর দোয়া হচ্ছে সেই মেয়ে যার ওছিলায় আমার বেটা নতুন একটা জীবন পেয়েছে।ভাবছি কাল শুক্রবার।ভালো একটা দিন। কালকেই যাবো শাহিনা কে সারপ্রাইজ দিতে।”

-” সত্যিই খালাম্মা।”

-” হ্যাঁ।

-” আমি তাহলে যাই খালাম্মা।কাল কি জামা পরে যাবো এক্ষুনি রেডি করে রাখি।”

-” ঠিক আছে যা।”

-” জামিলা এসে বৃত্ত কে বললো , কেমন দিলাম ভাইজান?”

-” ফাটাফাটি।এই নাও এই একহাজার টাকা তোমার বকশিশ।”

-” না না ভাইজান।টাকা লাগতো না। এমনিতেই দোয়া আপারে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।ছেলে হলে আমি নিজেই তারে বিয়ে করে নিতাম। আমি এখন যাই ভাইজান। অনেক কাজ বাকি আমার।”

-” জামিলার যাওয়ার পথে তাকিয়ে বৃত্ত বললো,মেয়েটা কতো সহজ সরল। অথচ আমি কতো খারাপ ব্যবহার করেছি তার সাথে।মিস দেড় ফুট তুমি আরো আগে কেন আমাকে দেখা দিলে না?তাহলে হয়তো আমার পাপের পাল্লা এতো ভারী হতো না।এর জন্য তোমাকে শাস্তি পেতে হবে। রেডি থেকো মিস দেড় ফুট। খুব শীঘ্রই আসছি আমি।

___________________________________
-” আম্মা আপনি যে বলেছিলেন আমাকে মুলার পায়েস বানানো টা শিখিয়ে দিবেন। কিন্তু আর দিলেন না।”

-” ছোঁয়া কিছু দিন থেকে বায়না করছে মুলার পায়েস খাওয়ার জন্য। ভাবছি ফ্রিজে মুলা কে”টে রাখা আছে ঐ টা দিয়ে রাতে সামান্য একটু রান্না করবো। তখন দেখে নিস ‌। তাহলেই পারবি।”

-” ঠিক আছে আম্মা। আমি তাহলে বাকি রান্না করে নিচ্ছি। আপনি গিয়ে বিশ্রাম করুন।”

-” তুই একা সবটা পারবি না। আমি ও হাতে হাতে সাহায্য করি।”

-” আপনি এমনিতেই অসুস্থ আম্মা। আবার এই আগুনের তাপে আরো অসুস্থ হয়ে যাবেন।”

-” শাহিনা বেগম কিছু বলার আগেই কলিং বেল বেজে উঠল। কলিং বেল শুনে দোয়া বললো, আম্মা আমি এইদিক টা দেখছি। আপনি গিয়ে দেখুন কে এলো?”

-” শাহিনা বেগম দরজা খুলে পরিচিত একটা মুখ দেখে থমকে গেল।সে কখনো ভাবেনি এতো গুলো বছর পরে আবার তার প্রাণপ্রিয় বান্ধবীর দেখা পাবে। তৎক্ষণাৎ শাহিনা ঝর্ণা আবরার কে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিল। কিছুক্ষণের জন্য মনে হলো এই বাসায় কোন শোক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এ কান্না কষ্টের নয়।এ কান্না সুখের,হারানো সুখ ফিরে পাওয়ার। কিছুক্ষণ কান্নার পর ঝর্ণা আবরার বললেন, ভেতরে নিয়ে গিয়ে কিছু খেতে দিবি?নাকি চোখের পানি দেখিয়ে বিদায় জানাবি?”

-” শাহিনা বেগম চোখের পানি মুছে বললো,আয় ভেতরে আয়।”

-” সবাই কে ড্রয়িং রুমে বসতে দেওয়া হয়েছে। বৃত্তের দুচোখ চাতক পাখির মতো প্রিয় মানুষ টাকে খুঁজে চলেছে।এর‌ই মধ্যে কিচেন থেকে দোয়া বেড়িয়ে এসে বললো,কে এসেছে আম্মা? ব্যাস এই তিন টা কথায় যথেষ্ট ছিল বৃত্তের হৃদস্পন্দন কম্পিত হ‌ওয়ার জন্য।”

-” সবাই কে নাস্তা দেওয়া হলো। খাওয়া দাওয়া শেষ হলে এক পর্যায়ে ঝর্ণা আবরার দোয়া কে পুত্র বধূ করে আনার আকুতি প্রকাশ করেন। যা শুনে দোয়ার আব্বা বললো,

-” মেয়ে যখন বড় হয়েছে বিয়ে তো দিতেই হবে। তোমাদের ব্যাপারে সবটা জানি আমি।তবে বিয়ের ব্যাপারে আমার মেয়ের কথায় শেষ কথা। দোয়ার অমতে আমি কিছুই করবো না। দোয়া যদি এই বিয়েতে রাজি থাকে তাহলে আমাদের কোন আপত্তি নেই।”

-” এর‌ই মধ্যে জামিলা বলে উঠলো, আমার মনে হয় বৃত্ত ভাইজান আর দোয়া আপারে একটু আলাদা ভাবে কথা বলতে দেওয়া উচিত। শাহিনা বেগম ও জামিলার হ্যাঁ তে হ্যাঁ মিলিয়ে বললেন, আমার ও তাই মনে ‌হয়।”

-” অবশেষে দোয়া কে বাধ্য হয়ে বৃত্তের সাথে যেতে হলো। দোয়া সোজাসুজি বৃত্ত কে বলে দিলো, আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।”

-” কিন্তু কেন? আমি তো আর আগের মতো নেই। তুমি আমাকে দেখে ও আমার পরিবর্তন বুঝতে পারছো না। আমি সত্যিই আগের বৃত্ত নেই।তারপর ও তোমার সমস্যা কোথায়?”

-” আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি আপনি ভালো মানুষ সাজার নাটক করছেন।এই সব আপনার সাজানো নাটক।আর আপনার সেই নাটকে খালাম্মু কে ও শামিল করেছেন।”

-” কোনো নাটক করছি না। আমি সত্যিই তোমাকে ভালোবাসি।তোমাকে ঠিক কিভাবে বোঝালে তুমি বুঝবে আমি তোমাকে কতটা ভালোবাসি?”

-” বললাম না সব আপনার সাজানো নাটক। আপনি কখনো পরিবর্তন হতে পারেন না।”

-” ভালোবাসার জন্য মানুষ সব করতে পারে।চলো আমার সাথে দোয়ার হাত ধরে বললো বৃত্ত।”

-“আমার হাত ছাড়ুন বৃত্ত।আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না।”

-” মিস দেড় ফুট তুমি যেন আমাকে কি বলো? আমি বখাটে,আমি খারাপ, আমি অমানুষ,ব্লা ব্লা।তো অমানুষেরা ঠিক কি করতে পারে এইটা ও নিশ্চয় জানো।তাই অমানুষের অমানুষি না দেখতে চাইলে ভালোই ভালোই বলছি আমার সাথে চলো।”

-“আমি আপনার সাথে কোথাও যাচ্ছি না।”

-“অবশ্যই যাবে তুমি। ভালোবাসার জলজ্যান্ত প্রমাণ দেখাতে নিয়ে যাবো তোমাকে ।ভালোবাসার জন্য একটা মানুষ ঠিক কি করতে পারে সেটা নিজ চোখে দেখতে পাবে।সো কথা না বাড়িয়ে চলো আমার সাথে।আর না গেলে আমি কিন্তু তোমাকে…

-“কোথায় যেতে হবে?”

-“পাবনা মেন্টাল হসপিটালে।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here