#ভালোবাসি_প্রিয় (২০)[ বোনাস পর্ব]
#সিজন_৩
#লেখিকা_নূন_মাহবুব
-” হসপিটালের সাদা বেডের উপর কারো ছবি বুকে জরিয়ে বসে আছে এক তরুণী। চুলগুলো উস্কো খুস্কো হয়ে আছে । চেহারায় বিষন্নতার ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।বৃত্ত দোয়ার হাত ধরে তরুণীর সামনে দাঁড় করিয়ে বললো, তুমি দেখতে চেয়েছিলে না ভালোবাসার জন্য মানুষ কি কি করতে? এই যে এই মেয়েটা কে দেখছো । হয়তো আজ সে মানসিক রোগী। কিন্তু এক সময়কার নামকরা একজন টিকটক সেলিব্রিটি ছিলো। কিন্তু দেখো ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে আজ সে একজন মানসিক রোগী।তার স্থান হয়েছে এই মেন্টাল হসপিটালে।”
-“বৃত্তের কথা শুনে মেয়েটা চোখ তুলে তাকাতেই দোয়া হতভম্ব হয়ে গেল।আরে এ তো কুয়াশা রহমান। দোয়া বৃত্ত কে বললো,এনাকে তো চিনি আমি। একসময়ে টিকটকের জনপ্রিয় মুখ ছিল। স্কুলে থাকাকালীন আমার সহপাঠীদের দেখতাম ওনার টিকটক দেখতে। অনেক ফ্যান ফলোয়ার,নামডাক ছিল তার। কিন্তু হঠাৎ করে তাকে আর টিকটকে দেখা যায় নি।এই নিয়ে আমার সহপাঠীদের মধ্যে হায় হুতাশ দেখা গিয়েছিল।”
-” ইতিমধ্যে কুয়াশায় চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে।যা দেখে বৃত্ত গিয়ে কুয়াশা কে জরিয়ে ধরে বললো,আমাকে চিনতে পেরেছো আপু? আমি বৃত্ত । তোমার সেই ছোট্ট বৃত্ত।যাকে তুমি কোলে পিঠে করে বড় করেছিলে।সেই বৃত্ত যে কিনা ছোট বেলায় তার কুশায়া আপু ছাড়া কিছু বুঝতো না।তার হাতে ছাড়া কারো হাতে খাবার খেতো না।তোমাকে কত্তো ইয়ার্কি করে বলেছি,বড় হয়ে আমি তোমাকে বিয়ে করবো।আর তখন তুমি আমার গাল টেনে দিয়ে বলতে ,ওরে আমার রহিম জামাই টা। নিজের মধ্যে এখন রুপবান রুপবান ফিল হচ্ছে।মনে আছে আপু সেসব মূহুর্তের কথা।নাকি এখনো তোমার মাথায় শুধু রাজ নামক ব্যক্তির বসবাস রয়েছে?”
-” ভালোবাসা মা”রা”ত্ব ক খারাপ জিনিস বৃত্ত। ভালোবাসা কখনো ভালো থাকতে দেয় না।আমি তো ভালো হতে চাই নি। আল্লাহ কেন আমাকে সুস্থ্য করে দিলো বৃত্ত? আমি তো অসুস্থ অবস্থায় ভালো ছিলাম।”
-” জীবন কারো জন্য থেমে থাকে না আপু।
আবার নতুন করে জীবন শুরু করো। নতুন কারো বুকে সুখ খুঁজে নাও।”
-” আমার কপালে কি আদৌ সুখ সহ্য হবে বৃত্ত? সেই ছোট্ট বেলায় আম্মা কে হারালাম। অবশ্য শীতলের আম্মা আমাকে আর শীতল কে আলাদা চোখে দেখে নি। তবু ও গর্ভধারিনী মায়ের ভালোবাসা আমার কপালে জোটে নি।রাজ নামক নির্দয় ব্যক্তির জন্য নিজের সবটা বিলিয়ে দিলাম। ক্যারিয়ার বিসর্জন দিলাম। কিন্তু এসব করে কি হলো? হৃদয়হীন ব্যক্তি আমাকে কখনো ভালোবাসে নি।ভালোবাসলে আমাকে কখনো একা রেখে চলে যেতে পারতো না। তার #ভালোবাসি_প্রিয় বলা কথাটা মিথ্যা ছিল। তার মিথ্যে ভালোবাসা ছিল বলতে বলতে চিৎকার করে কান্নায় ভেঙ্গে পরলো কুয়াশা। কুয়াশার চিৎকার শুনে তৎক্ষণাৎ একজন সুদর্শন ডক্টর ছুটে এসো বললো, আর ইউ ওকে ম্যাম?”
-” ডক্টর বৃত্তের দিকে না তাকিয়ে কুয়াশা কে ইনজেকশন পুশ করতে করতে বললো, ম্যাম এখনো পরিপূর্ণ ভাবে সুস্থ্য হয়ে ওঠে নি। আপনারা প্লীজ ওনাকে ডিস্টার্ব করবেন না।”
-” ডক্টরের দিকে চোখ পড়তেই বৃত্ত আরেক দফা চমকে উঠলো। বৃত্তের মুখ থেকে আপনাআপনি বেরিয়ে গেল ,রাজ ব্রো তুমি? হোয়াট এ প্রেজেন্ট সারপ্রাইজ? তুমি বিডি তে কবে ফিরলে ব্রো?”
-” রাজ এসে বৃত্ত কে হাগ করে বললো,আরে বৃত্ত তুমি এইখানে? কুয়াশা ম্যাম তোমার …
-” আমার ফুপির একমাত্র মেয়ে। তাহলে তুমি সেই ডক্টর যে আমার আপুকে আবার সুস্থ্য করে তুলতে পেরেছে?”
-” আমি আর কই করলাম? সবই আল্লাহর ইচ্ছা। আমি শুধু মাত্র তার চিকিৎসা করেছি।”
-” অভি কিছু দিন আগে বলছিলো তুমি নাকি দেশে ফিরবে। খুব এক্সাইটেড ছিলাম আমি। এইখানে না আসলে জানতেই পারতাম না তুমি লুকিয়ে লুকিয়ে বিডি তে রয়েছো।”
-” এসেছি ছয় মাস মতো হবে। এইখানে এসেই তোমার আপুর চিকিৎসা শুরু করেছি। অবশ্য এ কথা বাসায় কেউ জানে না।ভেবেছি একবারে বউ নিয়ে গিয়ে সারপ্রাইজ দিবো। তাহলে আর কেউ রাগ করে থাকতে পারবে না।”
-” কোন বিদেশিনীর মায়ার পরেছো নাকি?”
-” রাজ কুয়াশার দিকে তাকিয়ে বললো,মায়ায় পরেছি তো তবে কোন বিদেশিনীর নয়। কোন এক নিষিদ্ধ ললনার।জানি না এর শেষ পরিণতি কি হবে? সে আদৌ আমাকে চায়বে কি না?”
-” বৃত্ত রাজের আকার ইঙ্গিতে বুঝতে পারলো সে কুয়াশা আপুর কথা বলছে।যদি ও বৃত্ত নিজে ও জানে না আদৌ এইটা সম্ভব কি না। বৃত্ত চাপা এক দীর্ঘ শ্বাস ফেলে দোয়া কে নিয়ে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে এলো।
-” এদিকে রাজ পরম যত্নে কুয়াশার মাথার নিচে বালিশ , গায়ে পাতলা চাদর দিয়ে মশারি টাঙিয়ে দিলো।যেন তার খুব কাছের কেউ ,তার আপনজন।তার মানসিক প্রশান্তির কারণ।”
__________________________________
-” গাড়ি চলছে আপন গতিতে।বৃত্ত দোয়া কারো মুখে কোন কথা নেয়। নিরবতা ভেঙ্গে বৃত্ত বললো, এরপর ও তোমার মনে হয় আমি নাটক করছি। আমার ভালোবাসা মিথ্যা? কুয়াশা আপু কে নিজের চোখে দেখলে তো তুমি।রাজ নামক এক অশিক্ষিত আনস্মার্ট, গেঁয়ো লোকের মায়ায় পরে নিজের ক্যারিয়ার পর্যন্ত বিসর্জন দিয়েছে সে।তাহলে ভাবো আমি কেন তোমাকে ভালোবেসে পরিবর্তন হতে পারবো না? কি হলো? উত্তর দাও।”
-” আমি তো বলেছি আপনাকে বিয়ে করা সম্ভব না। আপনি কি জোর করে আমাকে বিয়ে করতে চায়ছেন?
-” বৃত্ত কোন কথা না বলে চুপচাপ ড্রাইভ করতে লাগলো। সারা রাস্তা বৃত্ত আর একটা কথাও বলে নি। দোয়া কে তার বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে চুপচাপ গাড়ি নিয়ে চলে এলো।”
__________________________________
-” খালাম্মা আপনি এতো চিন্তা করছেন কেন? বৃত্ত ভাইজান রে কল করে দেখেন কোথায় আছে?
-” তোর কি মনে হয় আমি কল করিনি। হাজার বার কল করেছি কিন্তু কোন রেসপন্স নেয়।রাত প্রায় বারোটা বেজে গেছে এখনো আমার বেটা বাসায় ফিরছে না।না জানি কোথায় আছে এখন। ইদানিং বেটার কি যে হয়েছে।কখন কি করে বসে কিছুই বুঝতে পারছি না।”
-” বৃত্ত ভাইজান তো দোয়া আপারে নিয়ে বের হয়েছিল । দোয়া আপা নিশ্চয় বলতে বৃত্ত ভাইজান কোথায় আছে ? আপনি বরং দোয়া আপাকে একটা কল করে দেখেন খালাম্মা।”
-” ঠিক বলেছিস। ঝর্ণা আবরার দোয়া কে কল করলে ও কল রিসিভ হলো না। পরক্ষণেই দোয়া কল ব্যাক করতেই ঝর্ণা আবরার রিসিভ করে বললো, ঘুমিয়ে গেছিলি নাকি?”
-” হ্যাঁ খালাম্মু।একটু চোখ লেগে আসছিলো।এতো রাতে কল করেছো । কিছু হয়েছে?”
-” বেটা এখনো বাসায় ফেরে নি।”
-” কি বলো? বৃত্ত ভাইয়া সেই সন্ধ্যায় আমাকে নামিয়ে দিয়ে গেছে। তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছো খালাম্মু।দেখ গিয়ে তোমার গুনধর ছেলে নিশ্চয় বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতেছে।আর এইদিকে তুমি চিন্তা করছো। কোন রেসপন্সিবিলিটি নেয় তোমার ছেলের।সে নাকি আবার আমার দায়িত্ব নিবে। ফালতু লোক অনেক টা অভিমানের স্বরে বলল দোয়া।”
-” তুই এখনো আমার বেটা কে চিনতে পারিস নি। আমার বেটা সত্যি সত্যি নিজেকে শুধরে নিয়েছে। দোয়া সাথে কথা বলার সময় ঝর্ণা আবরারের অন্য ফোনে বৃত্তের নাম্বার থেকে কল আসে। ঝর্ণা আবরার দোয়া কে বললো একটু হোল্ড কর তো মা।বেটা কল করেছে।দেখি কি বলে।”
-” ঠিক আছে খালাম্মু।”
-” ঝর্ণা আবরার হ্যালো বলতে ঐ প্রান্ত থেকে পুরুষালী কণ্ঠে ভেসে আসে কিছু কথা ।যা কর্ণপাত হতেই ঝর্ণা আবরার চিৎকার দিয়ে উঠলো।”
-” ঝর্ণা আবরার দোয়া কে কল হোল্ড করতে বললে ও দোয়া করে নি। দোয়া শুনছিলো বৃত্ত কি বলে? ঝর্ণা আবরারের চিৎকার শুনে দোয়া বললো,খালাম্মু কি হয়েছে?”
-” বেটা নাকি বেসামাল ভাবে গাড়ি ড্রাইভ করছিলো। মা”রা”ত্ব”ক ভাবে এক্সিডেন্ট হয়েছে বেটার।”
-” ঝর্ণা আবরারের কথা শুনে দোয়ার চোখ থেকে আপনাআপনি পানি গড়িয়ে পরলো।হাতের ফোন ফ্লোরে পড়ে খন্ডবিখন্ড হয়ে গেল।”
চলবে ইনশাআল্লাহ।।
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।।