#ভালোবাসি_প্রিয় (১৬)
#অপরাজিতা_রহমান (লেখনীতে)
আমার জানা মতে আমাদের বাসায় চার পা বিশিষ্ট কোন বিড়াল নেই।তাই আমাদের বাসার দুই পা বিশিষ্ট বিড়াল চাইলে আমার সাথে একই প্লেটে খেতে পারে।
এই রে রাজ কি সেদিন দেখে নিয়েছিল আমি ওর রেখে যাওয়া খাবার খেয়েছিলাম। ছিঃ ছিঃ কি না কি ভেবেছিল রাজ।
কুয়াশা! খিচুড়ি ঠান্ডা হয়ে গেলে কিন্তু খেয়ে মজা পাবে না।
আপনি ভাবলেন কি করে আমি আপনার এঁটো খাবার খাব?
সেদিন তো বিড়ালের মত চুরি করে ঠিকই খেয়েছিলে।
আপনি ই তো বলেন খাবার নষ্ট করতে হয় না। খাবার যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য খেয়েছিলাম।
নাও এখন হা করো দেখি। কান্না কাটি করে তো চোখ মুখ লাল করে ফেলেছ। আমাকে ভালোবাস বলে দিলেই তো পারো #ভালোবাসি_প্রিয় । ভালোবাসা লুকিয়ে রাখার নয় কুয়াশা। এমন ও তো পারে তোমার এই অপ্রকাশিত ভালোবাসা সারাজীবন অপ্রকাশিত ই থেকে গেল।প্রকাশ করার আর সুযোগ পেলে না। সময় থাকতে সবকিছুর মুল্য দিতে হয় কুয়াশা।
।
।
।
কেটে গেল বেশ কিছু দিন। কিন্তু রাজের প্রতি আমার ভালোবাসা অপ্রকাশিত থেকেই গেল।এরই মধ্যে আবার শাফিনের সাথে শীতলের বিয়েটা ও হয়ে গিয়েছে । যদি ও বিয়েতে আমি পরীক্ষার দোহাই দিয়ে যাই নি তবে শুনেছি বিয়েটা নাকি সুন্নতি নিয়মে হয়েছে। বিয়ের পরে ওরা হানিমুনে যাওয়ার পরিবর্তে ওমরাহ হজ্বে গিয়েছে। তবে আমার এখন শাফিন কে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছে করে।ও যদি সেদিন ব্রেকআপ না করত আমি কখনও রাজ কে পেতাম না। আমি কখনো পরিবর্তন হতে পারতাম না। আমারা দুইজনেই একই মেন্টালিটির ছিলাম। আমাদের কারোরই পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না। অথচ এখন আমরা দুজনই পরিবর্তন হয়ে গিয়েছি। ইসলাম কে জানতে ও মানতে শিখেছি। আসলে আল্লাহ যা করেন বান্দার ভালোর জন্যই করেন।
আমার আজ থেকে পরীক্ষা শুরু হবে। যদিও পরীক্ষার প্রিপারেশন ভালো নিয়েছি তবু ও টেনশন হচ্ছে, আমি কি ফাষ্ট ক্লাস করতে পারব? কিছু দিন আগে যখন রাজ কে সিরিয়াস হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনি কি সত্যিই দ্বিতীয় বিয়ে করবেন?
আমি যতটুকু জানি প্রথম স্ত্রী যদি স্বামী কে দ্বিতীয় বিয়ে করার অনুমতি না দেয় তাহলে স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারে না।
কিন্তু তুমি তো আর আমাকে স্বামী বলে মানো না।
মানি বা না মানি আমি কখনোই আপনাকে দ্বিতীয় বিয়ে করার অনুমতি দিব না।
ঠিক আছে করব না দ্বিতীয় বিয়ে। তবে একটা শর্ত আছে।
কিসের শর্ত?
তোমাকে পরীক্ষায় ফাষ্ট ক্লাস পেতে হবে।আর আমি খুব ভালো করেই জানি তুমি পারবে না।আর যদি না পার তখন আমার দ্বিতীয় বিয়েতে অনুমতি দিতে হবে।
ঠিক আছে আমি রাজি। আমি ও ফাস্ট ক্লাস পেয়ে দেখিয়ে দিব এই কুয়াশা কখনো আপনার ভাগ কাউকে দিবে না। (মনে মনে বললাম)।
আজ আমার কম্পিউটার পরীক্ষা। ৫ টা বোর্ডের প্রশ্ন দুই থেকে তিন বার করে শেষ করেছি। তাছাড়া রাজ ও সাজেশন জোগাড় করে এনে দিয়েছে।আর কাকতালীয় ভাবে রাজের এনে দেওয়া সাজেশনের সাথে শায়ান ভাইয়ার দেওয়া সাজেশন হুবহু মিলে গিয়েছে।হয়তো রাজ কোনো ভাবে শায়ান ভাইয়ার থেকেই সাজেশন আনিয়েছে। পড়া শেষ করে এসে দেখি সবাই না খেয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি এসে বসতেই আম্মা আমার প্লেটে ভাত আর ডিম দিল। আমার পাতে ডিম দেওয়া দেখে রাজ ফোড়ন কেটে বলল, আম্মা ওকে ডিম দিচ্ছ কেন? এমনিতেই তো বেচারি পরীক্ষার খাতায় এতো গুলো ডিম পাবে। আবার এখন ডিম খাচ্ছে দেখা গেল পরীক্ষার খাতায় কিছু না লিখতে পেরে নকল করা শুরু করে দিল।
আম্মা আপনার ছেলেকে বলে দিন, আমি মোটেই পরীক্ষায় ডিম পাবো না আর না আমার নকল করতে হবে। আমি যথেষ্ট ভালো প্রিপারেশন নিয়েছি।আর যখন নকল করতাম সৎ ভাবেই করতাম। নকলবাজ হতে পারি তবে অসৎ ভাবে নকল করি না,সৎ নকলবাজ আমি।
আমার কথা শুনে রাজ এমন ভাবে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে যেন আমি কোন চোর।এই ভাবে তাকিয়ে রয়েছেন কেন?
এর আগে তো কখনো শুনিনি সৎ ভাবেও নকল করা যায়।এই প্রথম শুনলাম তো তাই একটু অবাক হয়েছি ।
ধরেন, যেসব ছাত্র ছাত্রী পরীক্ষার খাতায় কিছু লিখতে পারছে না। খাতা কলম নিয়ে ঘাপটি মে*রে রয়েছে কিন্তু যেই একবার ওয়াসরুমে গেল ,আর ওয়াসরুম থেকে ফিরে এসে বিদ্যাসাগর হয়ে গেল সেসব ছাত্র-ছাত্রীদের কে অসৎ নকলবাজ বলে। কিন্তু আমি তো সেরকম কিছু করি না। আমার সাথে কোন নকলের টুকরো ও থাকে না। আমি আসল পয়েন্ট গুলো বেঞ্চে লিখে রাখি ।পরে যখন ভুলে যাই তখন দেখে নি। এইখানে তো আমার অসৎ কোন উদ্দেশ্য থাকে না।তাই আমি একজন সৎ নকলবাজ।
আহা কি লজিকের বাহার তোমার।
খাওয়া শেষ করে রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে বোরকা পড়ে রেডি হয়ে নিলাম। তখন ই রাজ এসে বলল পরীক্ষা দিয়ে যাওয়ার আগে দুই রাকাত সালাতুত হাজতের নামাজ পড়ে যাও।
কিন্তু সালাতুল হাজতের নামাজ কি? কিভাবে পড়তে হয়? কখন পড়তে হয় আমি তো কিছুই জানি না।
ইচ্ছা পূরণের সালাতকেই সালাতুল হাজত বলা হয়!
⭕ সালাতুল হাজত পড়ার নিয়মঃ
” কোন হালাল চাহিদা পুরনের জন্য আল্লাহ’র সন্তষ্টির উদ্দেশ্যে দুই রাকাত নফল সালাত আদায় করাকে “সালাতুল হাজত” বলা হয়”
[ইবনু মাজাহঃ হা/১৩৮৫]
⭕ কখন পড়বেনঃ
কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে কিংবা শারীরিক-মানসিকভাবে কোনো দুশ্চিন্তা দেখা দিলে এ নামাজ পড়তে হয়!
⭕ নিষিদ্ধ সময়ঃ
সালাতুল হাজত নিষিদ্ধ ওয়াক্ত ব্যাতীত যেকোনো সময়েই পড়তে পারেন!
⭕ নিয়মঃ
নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। হাজতের নিয়তে অন্যান্য নামাজের মতোই দু-রাকাত নফল নামাজ আদায় করবেন!
⭕করণিয়ঃ
–সালাতুল ‘হাজত’ নামাজের আলাদা কোনো নিয়ম নেই। স্বাভাবিক নামাজের মতোই উত্তমভাবে অজু করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বে। নামাজ শেষে আল্লাহ তায়ালার হামদ ও ছানা (প্রসংসা) এবং নবী করিম সা. এর ওপর দরুদ শরিফ পাঠ করে নিজের মনের কথা ব্যক্ত করে আল্লাহর নিকট দোয়া করবে!!
⭕ এই দোয়া পড়বেন মুনাজাতে ইনশাআল্লাহঃ
(ُ رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ)
[রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনিয়া হাসানাতাও ওয়া ফিল আখিরাতি হাসানাতাও ওয়া ক্কিনা আজাবানা নার]
অথবাঃ
ﻟَﺎ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟﻠَّﻪُ
ﺍﻟْﺤَﻠِﻴﻢُ ﺍﻟْﻜَﺮِﻳﻢُ ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺮْﺵِ ﺍﻟْﻌَﻈِﻴﻢِ
ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﻣُﻮﺟِﺒَﺎﺕِ ﺭَﺣْﻤَﺘِﻚَ
ﻭَﻋَﺰَﺍﺋِﻢَ ﻣَﻐْﻔِﺮَﺗِﻚَ ﻭَﺍﻟْﻐَﻨِﻴﻤَﺔَ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺑِﺮٍّ ﻭَﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻣَﺔَ
ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺇِﺛْﻢٍ ﻟَﺎ ﺗَﺪَﻉْ ﻟِﻲ ﺫَﻧْﺒًﺎ ﺇِﻟَّﺎ ﻏَﻔَﺮْﺗَﻪُ ﻭَﻟَﺎ ﻫَﻤًّﺎ ﺇِﻟَّﺎ
ﻓَﺮَّﺟْﺘَﻪُ ﻭَﻟَﺎ ﺣَﺎﺟَﺔً ﻫِﻲَ ﻟَﻚَ ﺭِﺿًﺎ ﺇِﻟَّﺎ ﻗَﻀَﻴْﺘَﻬَﺎ ﻳَﺎ
ﺃَﺭْﺣَﻢَ ﺍﻟﺮَّﺍﺣِﻤِﻴﻦَ
উচ্চারণ: লাইলাহা ইল্লাল্লাহুল হালিমুল কারিম, সুবহানাল্লাহি রাব্বিল আরশিল আজিম। আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন, আছআলুকা মুজিবাতি রাহমাতিক; ওয়া আজা-ইমা মাগফিরাতিক, ওয়াল গানিমাতা মিন কুল্লি বিররিউ ওয়াস সালামাতা মিন কুল্লি ইছমিন লা তাদাঅলি- জাম্বান ইল্লা গাফারতাহু ওয়ালা হাম্মান ইল্লা ফাররাজতাহু ওয়ালা হাজাতান হিয়া লাকা রিজান- ইল্লা কাজাইতাহা ইয়া আর হামার রাহিমীন।
[তিরমিজি, মিশকাতঃ হা/৮৭৩,
আবু দাউদঃ ১৩১৯; সালাত অধ্যায়-২]
এইবার বুঝতে পারলে তো কিভাবে পড়তে হবে।
হ্যাঁ।পড়ছি আমি।
দেখতে দেখতে আমার ছয় টা সাবজেক্টের পরীক্ষা শেষ হয়ে গেছে।সব কয়টা সাবজেক্ট ই ভালো পরীক্ষা হয়েছে আমার।আজ শেষ পরীক্ষা।তাই পরীক্ষা শেষ করে আমি আর জামিয়া বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে ফুচকা খেতে গেলাম। ফুচকা খাওয়ার এক পর্যায়ে জামিয়া বলে উঠলো ,দোস্ত শায়ান ভাইয়া কে #ভালোবাসি_প্রিয় কথা টা বলা হলো না আমার।
কেন জামিয়া? এখন তো আমাদের পরীক্ষা শেষ । তাহলে এখন বলতে সমস্যা কোথায় তোর?
শায়ান ভাইয়ার এই ডিসেম্বর মাসেই বিসিএস পরীক্ষা।
এখন কি ভাইয়া কে বলা ঠিক হবে।
ডিসেম্বর মাসে শায়ান ভাইয়ার পরীক্ষার কথা শুনে আমি অনেক টা অবাক হয়ে গেলাম।কারন…
চলবে ইনশাআল্লাহ,,,,,,
ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।