#ভালোবাসি_প্রিয়
#পর্ব_৪৯
#সুলতানা_সিমা
সব সুখ আকাশ ছুঁতে পারেনা। কিছু কিছু সুখ আছে, যেগুলা মনের অনেক গভীরের জায়গাটা ছুঁয়ে এসে অসীম আকাশটাও ছুঁয়ে যায়। এই সুখগুলা হয় ভিন্ন। বিশেষ কিছু ছাড়া এই সুখ অনুভব করা যায়না। যে সুখটা আজ সুমনা অনুভব করছেন এর আগে এমন সুখ কখনো অনুভব করেননি তিনি। এই ফুটফুটে বাচ্চাটা উনার নাতনী শুনে যে সুখ পাচ্ছেন। উনার মনে হচ্ছে এমন সুখ মনে হয় এই পৃথীবিতে কেউ কোনোদিন পায়নি। এটা দিহানের বাচ্চা শুনে সুমনা চৌধুরীর মনের আকাশে সূর্য উঁকি দিলো। মনের সব আঁধার কেটে যাচ্ছে। এতো লাগছে উনার, খুশিতে কেঁদে দিলেন তিনি। দিয়া খুশিতে আত্মহারা হয়ে দিশাকে বলল “আপু এটা ভাইয়ার মেয়ে। এটা আমাদের ফুপিন।” দিহানের বাবা চোখের চশমাটা খুলে চোখের পানি মুছলেন। খুশিতে কেঁদে তিনিও দিয়েছেন। উনার মুখে তৃপ্তির হাসি। দিহানের মা দিহানের সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন। অজনির দিকে হাত বাড়িয়ে অজনিকে বললেন “দিদুন। তুমি আমার দিদুন। আসো,দিদুনের কোলে আসো।”
দিহান তাঁর মায়ের দিকে তাকিয়ে তাচ্ছিল্য হাসলো। তাঁর মায়ের হাতটা সরিয়ে দিয়ে বলল “এটা আমার সেই বাচ্চা। যে বাচ্চাকে তুমি এবোরশন করাতে বলেছিলে। এটা তাঁর গর্ভে বড় হয়েছিলো যাকে তুমি বস্তির মেয়ে বলেছিলে। তুমি তো আমার মা হতে আম্মু, তবুও আমার সন্তানকে কীভাবে মারতে চেয়েছিলে তুমি? মানুষ দাদী হওয়ার স্বপ্ন দেখে। আর তুমি কিনা আমার বাচ্চাকে দুনিয়াতে আনতেই নারাজ ছিলে?” দিহানের মায়ের মুখ ছোট হয়ে গেলো। উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে সুমনা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আছেন। উনি দিহানের বাচ্চা এবোরশন করতে বলেছিলেন এটা কারো বিশ্বাস হচ্ছে না। দিহানের বাবা রাগান্বিত স্বরে বললেন “সুমনা এসব কী বলছে দিহান?” উনি মাথা নিচু করে চুপ হয়ে থাকলেন। দিয়া ঘৃণা নিয়ে বলল” ছিঃ আম্মু। তুমি এটা করতে পারছিলা? ভাইয়ার বাবা হওয়ার স্বাদ কেরে নিয়ে কী পেতা তুমি?” সুমনার চোখ দিয়ে টুপ করে দুফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো। কারো কোনো প্রশ্নের জবাব নেই উনার কাছে। উনি সত্যিই এমনটা করেছেন। কীভাবে এখন মুখ খুলে কথা বলবেন? লারা দিহানের কোল থেকে অজনিকে নিতে চাইলো। দিহান দিলোনা। তাঁর বড়মা নিতে আসলে সে বলে উঠে “আমার মেয়েকে কোলে নেওয়ার অধিকার কারো নেই। “দিয়া দিহানের সামনে দাঁড়িয়ে বলল” “ভাইয়া আমরা তো কিছু করিনাই আমাদের সাথে রাগ করনা প্লিজ।” দিহান কিছু বলল না। অরিনের অনুমতি না নিয়ে কারো কোলে দিবেনা অজনিকে। আর তাঁর মায়ের কোলে তো অরিন অনুমতি দিলেও দিবেনা।
সবাই সুমনা চৌধুরীর দিকে ঘৃণিত চোখে তাকাচ্ছে। একটা মা হয়ে বাচ্চার চিহ্ন নষ্ট করে দিতে বলেন কেমনে তিনি? এটা কেমন মা? কিছুক্ষণ পরে অজনি বলে উঠে “পাপা দেখো মাম্মাম আসছে।” অজনির কথায় সবাই লুপার কেবিনের দিকে তাকালো৷ সাদা অ্যাপোর্ন পরা অরিনকে দেখে সবার চোখ কপালে উঠে গেলো৷ অরিন একজন ডক্টর। কারো বিশ্বাস হচ্ছেনা যেন? লারার মুখে হাসি রেখা ফুটে উঠলো। কতদিন পরে অরিনকে দেখেছে সে। সবার চোখ অরিনের দিকে। অরিনের অ্যাপোর্ন খুলে ডক্টর মালিহার হাতে দিয়ে বলল “থেনক্সস মালিহা। আমাকে ট্রিটমেন্ট করার সুযোগ দেওয়ার জন্য। যদিও এটা এখানের নিয়ম নয় তবুও তোমরা আমার কথা রেখেছো। ” তারপর অরিন রুহানের দিকে তাকিয়ে বলল “মিস্টার রুহান। আপনার বোন খুব শীঘ্রই সুস্থ হয়ে যাবেন। চিন্তা করবেন না। আপাতত উনাকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে। উনার কেবিনের সামনে হৈ চৈ কম করবেন। আর উনার ঘুম ভাঙলে উনাকে খাইয়ে অষুধ খাইয়ে নিবেন।” রুহানকে কথাটা বলেই অরিন দিহানকে চলুন বলে যেতে লাগলো। অরিন এমনভাবে গেলো যেন এখানে কেউই তাঁর পরিচিত নয়। দিহান তানভীও অরিনের পিছু পিছু চলে গেলো। দিয়া কেঁদে দিলো। মায়ের দিকে রাগি লুকে তাকিয়ে বলল “চলে যাচ্ছি আমি। ভাইয়া যদি আমাকে তাঁর বাসায় না রাখে যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাবো। তবুও তোমাদের সাথে আর থাকবো না আমি।” দিয়া চলে যেতে লাগলো। দিশা বলল “দিয়া দাঁড়া। আমিও যাবো তোর সাথে।” মায়ের দিকে ঘৃণাভরা চোখে তাকিয়ে চলে গেলো দিশা।
গাড়ি স্টার্ট দিবে এমন সময় দিয়া আর দিশা এসে গাড়ির সামনের দাঁড়িয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে দু বোন একসাথে বলল “ভাইয়া আমরাও যাবো।” দিহান অরিনের দিকে তাকালো। অরিন মৃদু হাসলো। তারপর দিশা দিয়াকে বলল “উঠে পড়ো দুজন।” বলতে দেরি হলেও দুবোনের উঠতে একটুও দেরি হলোনা। তানভী মাঝখানে দুবোন দুপাশে উঠলো। গাড়িতে উঠেই ঝগড়া শুরু কে আগে অজনিকে কোলে নিবে এ নিয়ে। দিয়া অজনিকে টান দিয়ে নিজের কোলে বসালো। দিশা অজনিকে টেনে নিয়ে আসলো। দিয়া আবার নিয়ে গেলো। দিশা আবার নিতে চাইলো কিন্তু মুটকি দিয়ার সাথে পেরে উঠলো না। রাগে দিয়াকে চুল ধরে টান দিলো দিশা। এদের এমন ঝগড়া দেখে দিহান আর অরিন হাসতে হাসতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। টানাটানির একপর্যায়ে অজনি কেঁদে দিলো। আর কারো কোলে থাকবে না সে তাঁর পাপার কাছে চলে যাবে। না রাখতে পেরে দিহানের কাছে দিতে হলো। গাড়ি থামিয়ে দিহান অজনিকে নিলো। দিয়া দিশাকে বলছে,”তোমার জন্য আমার কোলে রাখতে পারিনাই।” দিশা দিয়াকে বলল “তোর মারামারি দেখেই তো কান্না করছে।” দিহান ধমক দিয়ে উঠল। দুবোন চুপ হয়ে গেলো।
সবার তীক্ষ্ণ চোখ সুমনা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে আছে। এতো বড় কাজ কিভাবে তিনি করতে চাইলেন? তাও আবার এখন দিদুন বলে আহ্লাদ দেখাতে গেছিলেন। হানিফ চৌধুরী রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বেরিয়ে গেলেন হসপিটাল থেকে। লারা কান্না করছে। জিহান লারাকে নিয়ে একটু আড়ালে আসলো। তারপর বলল “লারা কেঁদোনা প্লিজ। কষ্টের হচ্ছে আমার।” লারা জিহানকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে কেঁদে উঠল। কাঁদতে কাঁদতে বলল “বলেছিলাম না অরিন আমাকে ভুল বুঝবে। দেখেছেন? ও আমার দিকে একবারও তাকালো না। অথচ আমি দেখেছি ও কেবিন থেকে বেরিয়ে সবাইকে দেখছে।” জিহান লারার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল, “কেঁদোনা লারা। দিহান যখন অরিনকে খুঁজে পেয়েছে অরিন সবকিছু জানতে পারবে। ওঁর সাথে যা হয়েছে,তাতে ওঁর এমনটা করা স্বাভাবিক। তুমি দেখো একদিন ওঁর অভিমানের পাহাড় ভেঙে ভালোবাসার সাগরে পরিনত হবে।”
★
গাড়ি এসে থামলো একটা ডুপ্লেক্স বাড়ির সামনে। গাড়ি থেকে নেমে বাড়িটার দিকে থাকালো অরিন। দোতলার বাড়িটা খুব সুন্দর ডিজাইন। চারদিকে কতশত ফুল গাছ। বাড়ির সামনে একটা সুইমিংপুল। এই সুইমিংপুলটা একদম ভিন্ন। এখানের পানিটা দেখলে নীল লাগছেনা। গুলাপি লাগছে। পুলের নিচের কাজটা যে রংয়ের আছে পানিটাও সেই রং ধারণ করেছে।
অরিন বাড়ির দিকে তাকালো। একটা বারান্দায় গোলাপ ফুলের গাছ। অরিন খুব মনোযোগ দিয়ে তাকালো। এখানে আরো অনেক ফুলের গাছ লাগানো আছে। দিহান অরিনের পাশে এসে দাঁড়িয়ে বলল” এটা আমাদের বেডরুমের বারান্দা।” অরিন খুশি হয়ে বলল “সত্যিইইইইইই?” দিহানকে অরিনের চোখে তাকিয়ে হাসলো। অজনিকে দিয়ার কাছে দিতে গেলে অজনি যায়নি। দিশার কাছেও যায়নি। শেষমেষ তানভীর কাছে গেলো। অরিন চারদিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভিতরের দিকে যাচ্ছে। দিহান গিয়ে অরিনকে কোলে তোলে নিলো। আচমকা এভাবে কোলে তুলায় অরিন প্রথমে ভয় পেয়ে যায়। বুকে হাত দিয়ে দিহানকে বলে “উফ আপনি তো ভয় পাইয়ে দিছিলেন।” পিছন থেকে দিশাদের চাপা হাসি শুনা যাচ্ছে। অরিন দিহানকে বলল “এই কী করছেন এগুলা ওঁরা হাসছে।” দিহান দাঁড়িয়ে গেলো। দিশাকে ডাক দিয়ে বলল “দিশা আমি আমার বউ কোলে নিয়েছি বলে তোরা নাকি হাসছিস?” দিয়া দিশা একসাথে বলে উঠে “কই হাসছি। হাসবো কেন?” দিহান অরিনকে নিয়ে ভিতরে ঢুকলো। বাহিরটা যতটা সুন্দর ভেতর তাঁর থেকে বেশি সুন্দর। সব আসবাবপত্র গুলো বিদেশী। একেকটা ফার্নিচারের দামও হবে লাখের উপরে। দিহান অরিনকে নিয়ে তাঁদের রুমে গেলো। রুমটা আরো সুন্দর। সব কিছু শুধু সাদা আর সাদা। অরিন মুগ্ধ হয়ে চারদিকে তাকালো। দিহান অরিনকে কোল থেকে নামিয়ে বলল” পছন্দ হয়েছে।” অরিন বলল” অন্নেক পছন্দ হয়েছে।” দিহান অরিনের কোমর জড়িয়ে ধরে বলল” মনে আছে? একদিন রাতে বুকে মাথা রেখে ঠিক এইরকম একটা বাড়ি বানানোর পরিকল্পনা করেছিলে?” অরিন অবাক হয়ে তাকালো। কত বছর আগে বলেছে সে দিহান সেটা মনে রেখেছে। দিহান অরিনের কানের নিচে হাত রেখে বলল”তোমার স্বপ্ন ছিলোনা,আমাদের একটা ভিন্ন রকম সুইমিংপুল হবে সেখানে আমরা একসাথে সাতার কাটবো। তুমি বলেছিলে না, এমন একটা বেডরুম আমাদের থাকবে যেখানে শুধু সাদা রংয়ের সমাহার। কিন্তু সেই বেডরুমের বারান্দা হবে লালে লালে সাজানো। এই দেখো তোমার স্বামী সব দিয়েছে তোমায়। তখন ছোট্ট একটা চাকরি দিয়ে তোমার সব স্বপ্ন পূরণ করতে পারতাম না বলে খুব কষ্ট হতো। কিন্তু আজ আমি অনেকখুশি। কারণ আজ আমি আমার বউয়ের একটা স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছি। তুমি খুশিতো সোনা?” অরিনের দিহানের হাতের উপর তাঁর হাত রেখে ছলছল চোখে তাকিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো। দিহানকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো সে। দিহানের ভালোবাসা অদ্ভুত। সবার থেকে আলাদা।” অরিন দিহানকে বলল” আপনি না খুবই অদ্ভুত।”
_কী রকম?
_ আপনি জানেন? আপনি যতটা রাগি ঠিক ততটাই বউ পাগল।” দিহান হেসে উঠে বলল “আমি বউ পাগল হলে তুমিও জামাই পাগল।
_আচ্ছা এই বাড়িতে কে কে থাকে?
_আমি একাই থাকতাম।
_আপনার আব্বু আম্মু?
_উঁহু উনারা কখনো এসে থাকেননি তবে মাঝে মাঝে যখন আমি দুদিন তিনদিন হয়ে যেতো বাসায় যেতাম না। তখন নিতে আসতেন।”
_বাসায় যেতেন না কেন?
_একা থাকতে ভালো লাগতো তাই।” কিছুক্ষণ গেলো আর কারো মুখে কথা নেই। কিছুক্ষণ পরে দিহানের বুক থেকে মাথা তুলে অরিন বলল”আচ্ছা সবাইকে হসপিটাল দেখলাম, শাওন ভাই আর নীল ভাইকে দেখলাম না যে?” দিহানের কপালে ভাঁজ পড়লো। চিন্তিত হয়ে বলল,”আসলেই। ভালো কথা মনে করেছো একটা ফোন দেই।” দিহান ফোন বের করে আগে শাওনকে ফোন দিলো শাওন ধরেনি। তারপর নীলকে দিলো কিন্তু নীলের ফোন বন্ধ। দিহান অরিনকে বলল “আমার মনে হয় ওঁরা এখনো জানেনি।
_হতে পারে।
__________________
পিটপিট করে চোখ খুললো লুপা। চোখ খুলতেই চোখে পড়ে রুহানের কান্নারত চেহারা। কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলছে। লুপা চোখ খুলতেই তাঁর বাবা মা রুহান হন্তদন্ত হয়ে জিজ্ঞেস করতে লাগলেন তাঁর কেমন লাগছে। কষ্ট হচ্ছে কিনা। রুহান বলে ” আপ্পি খুব কষ্ট পাচ্ছিস? কথা বল আপ্পি প্লিজ।” কোনো জবাব দেয়না লুপা। ভাইয়ের কথায় ডুকরে কেঁদে উঠে সে। লুপার মা বলেন “কাঁদিস না রে মা। কী এমন কষ্ট তোর যে মাকে ছেড়ে চলে যেতে চাইলি?” লুপা সবার থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। চোখ দিয়ে অঝোর ধারা বৃষ্টি ঝরছে। কেন বেঁচে গেলো সে? এই অসয্য জীবন নিয়ে বাঁচবে কেমনে? নিজেকে অপরাধী মনে হয় তাঁর। অপায়া মনে হয়। নীলের জন্যও বেহায়া মন কাঁদে। এসব কিছুর তো একটাই সমাধান ছিলো। মৃত্যু। তাহলে কেন বাঁচালো তাকে। রুহান লুপাকে ধরে বসালো। লুপা কেঁদেই যাচ্ছে। তাঁর বাবা মা বার বার জিজ্ঞেস করছেন কি চাই তাঁর একটাবার বলতে, উনারা তাকে এনে দিবেন। লুপা কিছু বলছে না। কী বলবে সে? যে মানুষটাকে চায় সে মানুষটা তো তাকে চায়না। তাহলে কীভাবে সে তাকে আবদার করবে। কিছুক্ষণ পরে রুহান লুপাকে খাওয়াতে চাইলে লুপা খায়না। রুহান কান্নাজড়িত গলায় বলল,”আপ্পি জানিস আমি এখনো কিছু খাইনি।” লুপা ঠোঁট কামড়ে কেঁদে উঠে। চোখের পানি মুছে হা করে খেয়ে নিলো। লুপাকে খাইয়ে অষুধ খাওয়ালো রুহান। তারপর অরিন অজনির ব্যাপারটা লুপাকে বলল। অরিন তাঁর ট্রিটমেন্ট করেছে সেটাও বলল। সব শুনে লুপা রুহানকে বলল “আমাকে অরিনের কাছে নিয়ে যাবি রুহান? একটাবার আমি অরিনের পায়ে ধরে ক্ষমা চাইবো। শুধু একটাবার ক্ষমা চেয়ে বলবো ও যেন আমাকে নিজ হাতে খুন করে ওঁর সাথে হওয়া অন্যায়ের বদলা নেয়। ” বলেই হাউমাউ করে কাঁন্না করতে লাগে লুপা।
_______________________________
মদ খেয়ে মাতাল হয়ে খাটে পড়ে আছে নীল। মাতাল অবস্থায়ও বার বার লুপার নাম আওড়াচ্ছে। শাওন সোফায় বসে বসে নীলের এসব দেখছে। কষ্ট হচ্ছে তাঁর। খুব কষ্ট হচ্ছে নীলের জন্য। কিন্তু কী বা করবে সে? লুপার সাথে ফোনে কথা বলে তাঁর বাসায় ছুটে এসেছে নীল। এসে আবদার করছে তাকে এক বোতল মদ এনে দিতে। শাওন না বললে নীল মরে যাওয়ার হুমকি দেয়। বাধ্য হয়ে শাওন গিয়ে এক বোতল নিয়ে আসে। সোফা থেকে উঠে শাওন তেঁতুলের টক জল নিয়ে আসলো। নীলকে ধরে বসিয়ে বলল “এই নে এটা খা। হাঁ করো।” নীল হা করলো না। ভাঙা গলায় বলল”
_এইইই শাওন জানিস লুপা না অনেএএএএএক হট। ওর ঠোঁট জোড়া,,উফফফ। উম্মা।”ফ্লায়িং কিস দিলো নীল। শাওন ধমক দিয়ে বলল ”
_ওই চুপ। নে ধর হাঁ কর।
_হাঁ করলে লুপা আসবে?
_হ্যাঁ আসবে। এসে তোর ভেতরে ঢুকে যাবে। নে হাঁ কর।” নীল হাঁ করে মুখে ঢুকিয়েই মুখটা বাঁকা করে সবটুকু জল শাওনের মুখের উপর ফেলে দিলো। শাওন রাগি লুকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলল “এই কুত্তা ফেলবি তো ফেল। সবটুকু আমার মুখে ফেললি কেন?” নীল বাচ্চাদের মতো হাসতে হাসতে কেঁদে দিলো। তারপর শাওনের হাত দোয়ার মতো করে রেখে ভাঙা গলায় বলল “শাওন আল্লাহকে বল লুপাকে আমার করে দিতে। আমি আর মদ খাবোনা প্রমিজ। শুধু আল্লাহকে বল লুপাকে নীলের চাই-ই চাই।
#ভালোবাসি_প্রিয়
#পর্ব_৫০
#সুলতানা_সিমা
আজ নীলের গায়ে হলুদ। ভালোবাসার কাছে ব্যর্থ এক প্রেমিকের গায়ে হলুদ। ন’বছর ধরে যাকে ভালোবেসে আসছে, তাঁকে ফেলে অন্যকারো নামে হলুদ মাখবে আজ। শামু চেয়েছিলো তাঁদের সঙ্গিত,মেহেদী,রঙখেলা সব অনুষ্ঠান করতে। কিন্তু নীলের জন্য তা আর পারলো কই। নীল তো গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানটাও বাতিল করে দিয়েছিলো। মায়ের জোড়াজুড়িতে এটা বাতিল দিতে পারলোনা। একটু আগে রিসোর্টে এসে পৌঁছেছে তাঁরা। এসেই নীল এই রুমে ঢুকে সিগারেট খাওয়া শুরু করেছে। এখনো খেয়ে যাচ্ছে। লুপার কথা খুব মনে পড়ছে। সেদিনের পর থেকে লুপার সাথে আর কথা হয়নি নীলের। নীল ইচ্ছে করেই কথা বলছে না। ফোন দিলেই তো লুপা কাঁদবে। লুপার কান্না যে সয্য হয়না তাঁর।
লুপাকে ভালোবাসার কোনো কারণ ছিলোনা। কারণ ছাড়াই লুপাকে ভালোবাসিলো সে। না লুপার ঠোঁট,চোখ,সুন্দর্য না লুপার চঞ্চলতা তাকে পাগল করেছিলো। হঠাৎ করেই লুপার জন্য পাগল হয়েগেছিলো সে। পুরো লুপাটাই তাকে পাগল করেছিলো। তখন লুপা ক্লাস নাইনে ছিলো। নীল তখন এইসএসসি পরিক্ষা দিচ্ছিলো। পরিক্ষা চলাকালীন সময় একবার দিহানের সাথে দেখা করতে গেছিলো তাদের বাড়ি। লুপার ফোন থেকে ভুল করে লুপার কিছু ছবি কেটে ফেলছিলো। সেজন্য লুপার সাথে সেদিন তাঁর ঝগড়া হয়েছিলো। সেই ঝগড়া থেকে লুপাকে তাঁর ভালো লাগে। সেই ভালো লাগা আস্তে আস্তে ভালোবাসায় পরিনত হয়।
_কিরে বিয়ের খুশিতে নাচানাচি রেখে সিগারেট টানছিস কেন?” দিহানের কণ্ঠস্বরে ধ্যান ভাঙে নীলের। দিহানের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয় সে। দিহান নীলের পাশে বসে চিন্তিত হয়ে বলল ” কিরে নীল,তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন?” নীল দিহানকে বলল “তুই একা এলি, অরিন আসেনি?”
_হ্যাঁ এসেছো তো আগে বল তোকে এমন দেখাচ্ছে কেন? “নীল একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল”
_তেমন কিছু না। আন্টিরা আসেনি?
_দিয়া আর দিশা এসেছে। যা তুই ফ্রেশ হয়ে আয়।
_আব,,,,তোর চাচ্চুরা কেউ আসেনি? মানে জিহান ভাইয়া,,,লু লু লুপারা।
_ভাইয়ারা মনে হয় আসছে। আর লুপা তো আজ মাত্র বাড়িতে এসেছে। জানিনা, আসতেও পারে।
_কেন লুপা কই ছিলো?
_আর বলিস নারে হঠাৎ করে ও সুইসাইড এটেম্পট নিয়েছিলো।
_কিইইইইইইইইইই?
_হ্যাঁ। যেদিন আমি দেশে আসলাম সেদনই ও এমনটা করেছিলো। তারপর তো বাসায় না গিয়ে আগে হসপিটাল গেলাম। আমি ইয়ার এটাই বুঝতে পারছি না। লুপা হঠাৎ কেন এটা করলো।” দিহানের কথায় নীলের পৃথীবি থমকে গেছে। কলিজাটা মনে হয় কেউ ছুরি চালাতে চালাতে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে। বুকের উপর ভারি পাথর অনুভব করছে সে। নিশ্বাসগুলা ভেতর থেকে বাইরে আসতে চাইছে না। দম বন্ধ হয়ে আসছে তাঁর। লুপা মরতে গেছিলো। যেদিন দিহান দেশে আসে সেদিনই তো লুপা তাঁর কাছে একটা বাচ্চা আবদার করেছিলো। যে পাগলামোর কারণে নীল ফোন দিতে নিষেধ করে ফোন রেখে দিছিলো। কষ্ট চেপে রাখতে গিয়ে নীলের গলা ব্যথা করছে। দিহান নীলকে বলল” যা তারাতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয়।” নীল নড়লো না। দিহান নীলকে টেনে ওয়াসরুমে ঢুকিয়ে দিলো। নীল এখনো হুসে নেই। তাঁর মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে গেছে। লুপা সত্যি এমনটা করবে জানা ছিলনা তাঁর।
নীল ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে তাঁর মায়ের খুঁজে বের হলো। একটা রুমে নীলের মায়ের সাথে কিছু মহিলা বসে গল্প করছিলেন। নীল তাঁর মাকে বলল কিছু বলতে চায়। নীলের মা মহিলাদের বললেন কিছু মনে না করলে যেন তারা অন্য কোথাও গিয়ে বসে৷ সবাই বেরিয়ে যায়। সবাই যাওয়ার পরে নীল দরজা বন্ধ করে এসে তাঁর মাকে খাটে বসালো। তারপর তাঁর মায়ের পায়ের কাছে বসে উনার দুহাত ধরে কান্নাজড়িত গলায় বলল “আম্মু এখনো সময় আছে আম্মু মেনে নাও প্লিজ। আমি লুপাকে ছাড়া যেভাবে থাকি থাকতে পারবো৷ কিন্তু ওঁর কিছু হলে আমি মরে যাবো আম্মু। বিশ্বাস করো ওঁকে আমি খুব বেশি ভালোবাসি। ওঁর মৃত্যু আমি মেনে নিতে পারবো না। ও মরে যাবে আম্মু। প্লিজ মেনে ওঁকে। ওঁ খারাপ নয় আম্মু ও সত্যি অনেক ভালো মেয়ে শুধু জেদের বশে একটা ভুল করে ফেলেছে। ভুল তো মানুষ করে তাইনা আম্মু। যে নিজের ভুল বুঝতে পারে তাকে তো দোষী বলা যায়না। একটা সুযোগ দাও ওঁকে। দেখবে আম্মু ওঁ তোমার সংসারটা নিজ হাতে সাজিয়ে রাখবে। লুপাকে খুব বেশি ভালোবাসি আম্মু,আমি ভালো থাকবোনা ওঁকে ছাড়া।”
ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে নীল। নীলের মা তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে আদুরে গলায় বললেন “আমি জানি নীল তুই কষ্ট পাচ্ছিস। কিন্তু এই পাগলামিটা তুই আবেগের বশে করছিস। শামুকে বিয়ে করার পরে দেখবি সবঠিক হয়ে গেছে। একদিন তুই এসে আমাকে বলবি, শামু হচ্ছে জীবনসঙ্গী হিসেবে পারফেক্ট। পাগলামি করবি না নীল। আমি ওই মেয়েকে মেনে নিতে পারবো না।
_আমি কী সত্যি তোমার ছেলে আম্মু?
_রিসোর্ট ভর্তি মেহমান। শামু হলুদের জন্য সাঁজগোঁজ করছে। ইন্ডিয়া থেকে ওঁর বন্ধু বান্ধব এসেছে আত্মীয় স্বজন সবাই এসেছে। এতো এতোগুলা মানুষের সামনে অপমানিত হলে প্রমাণ হবে তুই আমার ছেলে? তাহলে ঠিক আছে। ছোট হচ্ছি আমি সবার কাছে। তুই ওই মেয়েকে বিয়ে করে সুখী হ।” বলেই নীলের মা উঠে যেতে চাইলেন। নীল তাঁর মাকে বলল “ছোট হতে হবেনা তোমাকে। তোমার সুন্দর সংসার চাই৷ ছেলের সুখ দিয়ে তুমি কী করবে? আত্মীয়তা মজবুত হওয়া চাই। ছেলের চাওয়া পাওয়া দিয়ে তোমার কী হবে। সংসার সুন্দর থাকুক আত্মীয়তা মজবুত হোক৷ এতে আমি মরে যাই বা বেঁচে থাকি এটা দেখতে হবেনা তোমায়। ” কথাগুলা বলেই নীল বেরিয়ে আসলো তাঁর রুম থেকে। নীলের মা রাগ করে থাকালেন। উনি তো সন্তানের ভালো কথা চিন্তা করেই এ বিয়ে দিচ্ছেন। তাহলে এতো রাগছে কেন। উনার বিশ্বাস শামু মেয়েটা উনার ঘরের লক্ষী হয়ে থাকবে। লুপা তো একটা বেইমান মেয়ে,ওঁর কাছে তো নীল ধোঁকা খাবে।
_________________________
হাঁটুতে মুখ গুঁজে কান্না করছে লুপা। আজ তাঁর ভালোবাসার মানুষের হলুদ হবে। কতো আয়োজন চলছে সেখানে। হয়তো নীলও খুশি। থাকুক না সে সুখে। তাঁর সুখ দেখে না হয় সে ভালো থাকবে। ফোনের মেসেজ টোন বেজে উঠতেই তৎক্ষণাৎ ফোন হাতে নিলো লুপা। ভেবেছিলো নীলের মেসেজ। কিন্তু না, নীল নয়। তাঁর সেই ফেসবুক ফ্রেন্ড। হাই পাঠিয়েছে। লুপা হ্যালো পাঠালো। ওপাশ থেকে মেসেজ আসলো কেমন আছো। লুপা বলল”
ভালো না বন্ধু। জানো! আজ আমার ভালোবাসার মানুষের হলুদ হবে। তোমাকে বলেছিলাম না আমার সব কথাগুলা। সে না এই কারণে আমায় পছন্দ করেনা।😭😭😭
_কেঁদোনা বন্ধু। তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষটাকে বুঝাও।
_ও আমায় ভালোবাসেনা। ও আমায় ঘৃণা করে। কারণ আমি যে খুব খারাপ। তাইতো ও বিয়ে করে নিচ্ছে অন্য কাউকে। জানো বন্ধু? ওই শামু মেয়েটা মানে ওঁর বউ, ওঁ খুব ভাগ্যবতী। ওর মতো ভাগ্য যদি আমি লুপার হতো তাহলে নীল আমার হতো।
লুপা মেসেজ সেন্ড করে ফোন হাত থেকে রেখে দিলো। ফোনের ওপাশের জন অফলাইন চলে গেছে। আজ প্রথম তাঁর নাম বলল সে। নয়তো তাঁর নাম নিলা বলেই পরিচয় দিয়েছিলো। নীলের কথাটাও আজ প্রথম বলল।
_আপ্পি আসবো? “রুহানের ডাকে চোখ মুছে লুপা বলল” আয়।” রুহান এসে লুপার পাশে বসে বলল” আপ্পি দিয়ারা সবাই গেছে নীল ভাইয়ের হলুদের অনুষ্ঠানে। চলনা আমরাও যাই।” লুপা চাপা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল” আমি যাবোনা রে। তুই চলে যা।”
_প্লিজ প্লিজ প্লিজ আপ্পি চলনা।
_তুই যা না। তোকে আমি বেঁধে রাখছি?
_আপ্পি তুই না বলেছি অরিন আপ্পির কাছে যেন নিয়ে যাই। দেখলিই তো দিহান ভাই দিশাপ্পি দিয়া তোকে দেখে গেলো অরিন আপু আসলোনা। তারমানে তোর সাথে অরিন আপুর দেখা হওয়াটা কঠিন ব্যাপার। নীল ভাইয়ের হলুদে কিন্তু তাঁরাও গিয়েছে। এটা কিন্তু তোর গোল্ডেন চান্স।” লুপা কিছুক্ষণ কী যেন ভাবলো। তারপর বলল, “ওকে যা রেডি হয়ে আয়।” রুহান খুশিতে বোনের কপালে চুমু এঁকে দিয়ে তারাতাড়ি রেডি হতে গেলো। লুপার কষ্ট হচ্ছে যেতে, কিন্তু কী করার। অরিনের জন্য তাকে যেতেই হবে।
________________________________
দিহানের বাবা মা তাঁর বড় মা লারা সবাই এসেছেন একটু আগে। সবাই এসে অজনিকে কোলে নেওয়ার জন্য দিয়াকে বলছে। কিন্তু দিয়া দিচ্ছেনা। দিহানের মা রেগে দিয়াকে বকাও দিছেন দিয়া তবুও দেয়নি। দিহানের বাবা মেয়ের কাছ থেকে নিতে না পেরে অজনির কপালে একটা চুমু দিয়ে গেলেন। অজনি গাল ঝাড়তে ঝাড়তে উনাকে বলল “বুইড়া বেটা টাকলা বেটা লুইচ্চা বেটা।” নাত্নির কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলেন তিনি। এখন উনার আরো লোভ হচ্ছে কোলে নেওয়ার। দিহানের মা কেঁদেই দিলেন। এতটা কাছে থেকেও নাতনির ছোঁয়া পাচ্ছেন না উনার বুকটা পুড়ে যাচ্ছে।
ইন্ডিয়ান কয়েকটা মেয়ের সাথে অরিন কথা বলছে। হলুদ রংয়ের একটা লেহেঙ্গা পড়েছে সে। খুব সুন্দর লাগছে তাঁকে। দিয়া দিশা সেইম লেহেঙ্গা পড়েছে। কাল সারাদিন ভাবি ননদগুলা মিলে শপিং করে কাটিয়েছিলো। দিহানের গায়ে একটা হলুদ পাঞ্জাবী। আসার সময় অরিন নিজেই এটা তাকে পড়তে দিয়েছে। কিন্তু তাঁর কিউটের ডিব্বাকে এই পাঞ্জবীতে আরো কিউট লাগছে। অরিন গাড়িতে বসে বলেছে রিসোর্টে এসেই যেন এটা চেঞ্জ করে নেয়। কিন্তু দিহান নীলকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে এটা চেঞ্জ করতে ভুলেই গেছে। সে বিষয়টা নিয়ে অরিন দিহানকে এড়িয়ে চলছে। কিন্তু দিহান বুঝতে পারছে না কেন অরিন এমন করছে। দিহান অরিনকে ডাক দিলো, অরিন শুনছে না। অনেক জোরে মিউজিক চলছে। দিহান অরিনের হাত ধরে উপরে নিয়ে গেলো। একটা রুমে নিয়ে বলল” কখন থেকে ডাকি শুনোনা কেন?” অরিন হাত ভাঁজ করে মুখ ঘুরিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল৷ দিহান বুঝতে পারছে না হঠাৎ রেগে আছে কেন। অরিনের কোমর জড়িয়ে নিজের দিকে টান দিলো। অরিন এসে দিহানের বুকে পড়লো। দিহান অরিনের গালে স্লাইড করতে করতে বলল “বউটা রাগ করেছে কেন?” অরিন চুপ কিছু বলছে না। দিহান অরিনের কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বলল “বউ বলনা কী হইছে? এভাবে চুপ থাকলে স্বামীর কষ্ট হয়, বুঝনা?
_এখানে আসার আগে কী বলছিলাম আপনায়?
_কই কিছুই তো বলনি।
_বলেছিলাম না,এখানে এসে এটা চেঞ্জ করে নিতে।
_অহ। ভুলে গেছিলাম সরি। আর এটা তো তুমি নিজেই পড়তে বলছিলে।
_আমি পড়তে বললে আমিই তো খুলতে বলছি। খুললেন না কেন? এটা খুললে তো মেয়েরা তাকাবে না। এটা খুলবেন কেমনে। ” ঝাড়ি দিয়ে বলল অরিন। দিহান বলল”
_আচ্ছায়ায়ায়ায়া। তাহলে মেডাম জ্বলেপোড়ে ছাঁই হয়ে যাচ্ছেন। ওকে এক্ষুনি খুলছি। ” বলেই পাঞ্জাবী টান দিয়ে খুলে ফেললো দিহান। অরিন দিহানকে ধমক দিয়ে বলল”এখন বডি দেখাতে চান সবাইকে?”
_আমি কী করবো বলো যেটা বলবা সেটাই করবো।” অরিন কিছুক্ষণ চুপ থাকলো তারপর বলল”
_আপনি এখন আমায় আদর করবেন।
_এখন?
_হুম।
_মদটদ খাওনাই তো?
_উঁহু। খাইনি। আপনাকে দেখলেই তো নেশা ধরে তাহলে মদের প্রয়োজন হবে কেন?
_আর আমার বউকে দেখলে যে আমার নেশা ধরে। সেটার কী হবে?
_দেখতে চান?
_অবশ্যই।
“অরিন দিহানের পায়ের উপর ভর দিয়ে তাঁর ঠোঁটে দিহানের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। দিহান অরিনের কোমর জড়িয়ে ধরতেই সে আঁকড়ে ধরে দিহানের চুল।
দিশার কাছে অজনি আছে। দিয়ার কাছ থেকে অনেক কষ্ট করে এনেছে। দিয়া দেয়না তাঁর কোল থেকে। দিহানের মা এ নিয়ে দশবার হবে দিশাকে এসে বলেছেন একবার অজনিকে উনার কোলে দিতে। দিশা দেয়না। তাঁর বড়মা,বাবা,বড়চাচ্চু সবাই নিতে চেয়েছেন দিশা দেয়নি। তাঁর ভাইয়ের কড়া নিষেধ আমার মেয়েকে কারো কোলে দিবিনা। দিশা সবার উপর বিরক্ত হয়ে বাইরে চলে গেলো। অনেক্ষণ বাইরে দাঁড়িয়ে থাকার পরে দেখলো কিছুদূর দাঁড়িয়ে আছে শাওন। দিশা অজনিকে কোল থেকে নামিয়ে বলল” শুনো, ফুপিন যাচ্ছি আর আসছি। কেউ তোমাকে নিতে চাইলে কারো কোলে যাবা না। এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবা।” অজনি আচ্ছা বলল। দিশা অজনিকে রেখে শাওনের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। শাওন দিশাকে দেখে চলে যেতে চাইলে দিশা হাত ধরে ফেলে। হাত ধরে বলে”একটা ভুলের আর কতো শাস্তি দিবে তুমি?” শাওন গম্ভীর গলায় বলল “হাত ছাড়ো।” দিশা কেঁদে দিলো। কাঁদতে কাঁদতে বলল “মাফ না করলে কিন্তু আমি সত্যি মরে যাবো।” শাওন এবার দিশাকে থাপ্পড় মারতে চায়। কিন্তু হাত উঠিয়ে নামিয়ে নেয়। মারেনা থাপ্পড়। দিশাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয় সে। দিশার কিছু হলে যে সে নিজেও বাঁঁচবে না। সেদিন দিশার খবরটা শুনে আত্মা শুকিয়ে গেছিলো তাঁর। দিশার যদি কিছু হয়ে যেতো তাহলে সেও মরে যেতো। ঠোঁট কামড়ে কাঁদছে শাওন। কান্নাজড়িত গলায় দিশাকে বলল” “বিশ্বাস করে আমার কাছে নিজেকে সপে দিয়েছিলে। তাহলে বিশ্বাস করে আমার বাচ্চাটা রাখতে পারলা না কে দিশা?
_আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম। বুঝে উঠতে পারছিলাম না কী করবো।
_এর শাস্তি আমি তোমায় দিবো দিশা। বিয়ের পাঁচ বছর পরও তুমি কোনো বাচ্চা পাবেনা। শুধু বাচ্চা নয়। আমাকেও পাবেনা।” শাওনের কথায় আঁতকে উঠল দিশা। শাওনের বাহুডোর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে অবাক হয়ে থাকালো শাওনের দিকে। শাওন মুখ ঘুরিয়ে নিলো। দিশা বুঝে উঠতে পারছে না। শাওন কী সত্যি বলছে? নাকি তাকে ভয় দেখাচ্ছে?
রিসোর্টের একটুদূরেই লুপাদের গাড়ি খারাপ হয়ে যায়। গাড়ি থেকে নেমে লুপা বলল” একটুর জন্য নষ্ট হতে হলো। রুহান বলল “দুমিনিট হাঁটলেই তো রিসোর্ট। চল হেঁটে যাই।
_হাঁটা ছাড়া তো আর উপায় নেই।” বলেই হাঁটা ধরলো লুপা। রুহান হলুদ পাঞ্জাবী কালো জিন্স পরেছে। লুপা কালো রংয়ের একটা লংড্রেস পড়েছে। জীবনটা যেখানে কালো, সেখানে রঙিন পোশাকে সেজে কী করবে? একটু পথ এসে চোখে পড়লো ছোট একটা বাচ্চা রাস্তার মাঝখান দিয়ে হেঁটে আসছে। রুহান বাচ্চাটা দেখেই বলল “আপ্পি এটা তো দিহান ভাইয়ের বাচ্চা। দিহানের বাচ্চা শুনে লুপার মুখে হাসি ফুটলো। কিন্তু সাথে সাথে হাসি উধাও হয়ে গেলো। একটা ট্রাক খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। লুপা একমুহূর্ত দেরি না করে দৌঁড়ে গিয়ে অজনিকে নিয়ে ছিঁটকে পড়ে রাস্তার পাশে। ট্রাকের ধাক্কা লুপার গায়ে লাগে। রুহান দৌঁড়ে এসে লুপাকে ধরে। লুপা দাঁতে দাঁত চেপে চোখ মুখ খিঁচে আছে। শরীরে প্রচন্ড ব্যথা করছে। কনুই, হাঁটু,কপাল অনেক জায়গায় কেটে গেছে। ঠোঁটের কোনে কিঞ্চিৎ রক্ত জমে আছে। অনেকটা ফুলে গেছে ঠোঁট। মেরুদণ্ডে অনেক ব্যথা পেয়েছে। লুপার মনে হচ্ছে যেন ভেঙে গেছে। অজনি ভয় পেয়ে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিছে। অজনির কান্না দেখে ছুটে আসে সবাই। ঘটনা কি সেটা জেনে সবাই অজনিকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল। অজনির কিছু হয়নি দেখে সবাই স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো। দিহানের মা দিশাকে টাস করে থাপ্পড় দিয়ে বললেন” ওঁর যদি কিছু হতো আজ তোকে মেরে ফেলতাম।” অরিন দিহান দৌঁড়ে আসলো। এসে যখন সবকিছু শুনলো। ভয়ে তাদের আত্মা শুকিয়ে গেলো। একটুর জন্য মেয়েকে হারাতে যাচ্ছিলো তাঁরা। রুহান লুপাকে উঠে বসালো। সে ছাড়া কেউ হেল্প করছেনা লুপাকে ধরতে। ভাইয়ের হাতে ভর দিয়ে লুপা দাঁড়ালো। ডান পা নাড়াতে পারছেনা। অরিন আর দিহান অজনিকে জড়িয়ে কান্না করে দেয়। অজনির কিছু হলে দুজনই মরে যেতো। দিহান রেগে দিশার দিকে তাকালো। দিশা গালে হাত দিয়ে কাঁদছে। দিহান মারতে চাইলে অরিন বাধা দেয়। অরিন অজনিকে কোলে নিয়ে লুপার সামনে এসে দাঁড়ালো। লুপার তৃষ্ণার্ত চোখ শুধু অরিনকে দেখে যাচ্ছে। কতদিন পরে অরিনকে দেখলো সে। অরিন লুপাকে বলল ” আমার মেয়ের প্রাণ বাঁচানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।” কথাটা বলেই অরিন চলে গেলো। অরিনের পিছু পিছু অনেকজন চলে গেলো। লারা খবরটা শুনে মাত্র এসেছে রিসোর্ট থেকে বেরিয়ে। এসে হন্তদন্ত হয়ে লুপাকে বলল “লুপা তুমি ঠিক আছো তো? কোথাও ব্যথা হচ্ছে তোমার? চলো এক্ষুনি হসপিটাল যাবে।” চোখের পানিটা মুছে লুপা ম্লান হেসে ভাঙা গলায় বলল “আমি ভালো আছি ভাবী। আমার একটুও ব্যথা করছে না। চলো ভিতরে।” রুহান লুপাকে ধরে ধরে নিতে চায়, লুপা বলে সে একা পারবে। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে ভেতরে গেলো লুপা। হলুদ লেহেঙ্গা পড়া শামুকে দেখেই বুকের ভেতর ধুক করে উঠল লুপার। চারদিকে কতশত উল্লাস হৈচৈ। বুকটা ভারি হয়ে আসছে লুপার। নিজেকে সামলে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে একটা চেয়ারে বসলো গিয়ে। বুকের তীব্র ব্যথার কাছে শরীরের ব্যথা হার মেনে গেছে তাঁর। কত ভাগ্যবতী সে, ভালোবাসার মানুষের হলুদে এসেছে আজ।
চলবে……।
চলবে,,,,,,,।