#ভালোবসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ২
ফাহিম কাদো কাদো ফেস করে বলল ,
– উফফ , এই দড়ি ধরে দাড়িয়ে থাকতে থাকতে হাতটা ব্যথা হয়ে গেল অথচ প্রধান অতিথির এখনো আসার কোনো খবর নেই !!
আবরন দাড়িয়ে মোবাইলে স্ক্রলিং করতে করতে বলল ,
– বলদের মতন দড়িটা ছোট না করে আরেকটু বড় করলেই তো কোনো এক জায়গায় বেধে রাখা যেত । এখন দাঁড়িয়ে থাক , কি আর করবি !! জিনিসটা কিভাবে সেট করবি সেটা তোর আগে থেকেই মাথায় ঢোকানো ………..
আবরন কথা বলে শেষ করতে না করতেই কোথা থেকে জল হঠাৎ এসে আবরনকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতে যায় আর আবরন তাল সামলাতে না পেরে ছিটকে গিয়ে গেইট দিয়ে প্রবেশরত কাউকে নিয়ে উল্টে পড়ে …
পূর্ণতা প্রেনার ডাকে সাড়া দিতে পেছনে ঘুরে তাকাতেই হঠাৎ ওকে নিয়ে কেউ ধপাস করে নিচে পড়ে যায় ।
ঘটনা এত দ্রুত ঘটলো যে প্রেনা সেখানেই দাঁড়িয়ে গিয়ে জাষ্ট চিল্লিয়ে বলল ,
– পূর্ণওওওওওওওও !!
আবরন পড়ে যেতেই ওকে উঠাবে ভেবে ফাহিম দড়ি ছেড়ে এগিয়ে যেতে না যেতেই গেইটের উপরে ঝুলানো ডালা কাত হয়ে গাদা ফুলের পাপড়ি আবরন আর পূর্ণতার উপর বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়লো । পূর্ণতা হঠাৎ পড়ে গিয়ে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করে ছিল , আবরনেরও একই অবস্থা !
জল এই ঘটনা দেখে ” ওহ মাই গড ” বলে নিজের সম্মান বাঁচাতে সেখান থেকে কেটে পড়ল ।
আবরন তাকিয়ে দেখলো ও একটা মেয়ের উপর পড়েছে ।
পূর্ণতার চোখ থেকে দুই ফোটা কাজল কালো পানি দ্রুত গতিতে নিচে পড়ে গেল । আবরন খেয়াল করতেই জলদি জলদি উঠে দাড়ালো ।
আবরন উঠে দাঁড়াতেই প্রেনা দৌড়ে এসে পূর্ণতা কে ধরে ওঠালো । এতক্ষন পূর্ণতা নিজ ইচ্ছাতে না কাদলেও এবার একেবারে ভ্যা ভ্যা করে কেদে দিল ।
আবরন ওকে কি বলে বুঝাবে ভেবে না পেয়ে বলল ,
– দেখো , আমি ইচ্ছে করে কাজটা করি নি । কেউ আমাকে ধাক্কা দেওয়াতে আমি ব্যলেন্স সামলাতে না পেরে পড়ে যাই । তাকে তো আমি খুঁজে বের করে শাস্তি দিবোই কিন্তু তবুও বলছি I’m extremely sorry …
আবরন পূর্ণতা কে উদ্দেশ্য করে এইটুকু বলে থামল । তারপর প্রেনাকে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– ওকে নিয়ে ওয়াশরুমে যাও । ক্লিন করে দাও যেখানে যেখানে ক্লিন করা দরকার ।
প্রেনা মাথা নেড়ে “হা” সূচক জানিয়ে পূর্ণতা কে নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে গেল ।
প্রেনা পূর্ণতা কে নিয়ে চলে যেতেই আবরন ফাহিম আর তাসিনের দিকে তাকিয়ে দেখল ওরা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে । আবরন বলল ,
– জলদি এসব ক্লিন কর আর কাউকে দিয়ে ফুলের পাপড়ি আনার ব্যবস্থা কর । আজ আর এভাবে বরন হবে না । হাত দিয়ে ফুল ছিটিয়েই বরন হবে । পাঁচ মিনিটে সব রেডি চাই ।
এই বলে আবরনও ওয়াশরুমের দিকে গেল । ও পড়ে গিয়ে কিছু কিছু জায়গায় ব্যথা পেয়েছে আর ওর পরনের পাঞ্জাবীতেও মাটি লেগেছে ।
……………………………………………..
প্রেনা পূর্ণতার শাড়ি তে লেগে থাকা মাটি পরিষ্কার করছে আর পূর্ণতা কাদতে কাদতে বলছে ,
– আগে যদি জানতাম আমাকে এভাবে বরণ করা হবে , তাহলে বিশ্বাস কর , আমি আসতাম না ।
প্রেনা হেসে বলল ,
– ধুর বোকা !! তোকে তো আরো দুই বার বরন করা হলো । এই যে দেখ একবার মেইন গেইটে ফুলের বৃষ্টি দিয়ে বরন আরেকবার ফুল হাতে দিয়ে বরন হবে ।
পূর্ণতা হেচকি তুলতে তুলতে বলল ,
– খুব মজা লাগছে না তোর ??
প্রেনা বলল ,
– এভাবে বলিস না পাগলি !! তুই কি এখনো বাচ্চা যে এভাবে কাদছিস ?? সবাই কি ভাববে বল ?? দুদিন বাদে ডাক্তার হবি আর এখনো যদি নিজেই এইটুকু ব্যথা পেয়ে কাদিস তাহলে রোগীর সেবা কিভাবে করবি ??
পূর্ণতা আবারো হেচকি তুলতে তুলতে বলল ,
– আমি কি ব্যথা পেয়ে কাদছি নাকি ?? আমি তো কাদছি ভরা ক্যাম্পাসে আমার উপর একটা সিনিয়র ছেলে এভাবে পড়ে গেল !! আমার মান সম্মান সব ধুলোয় মিশে গিয়েছে !!
প্রেনা বলল ,
– যার যা ইচ্ছে ভাবুক । আর যে তোর উপর পড়েছে , তাকে একটু ছুঁয়ে দেখতে ভার্সিটির সব মেয়েদের মন আকুপাকু করে । আর সেখানে সেই ড্যাশিং বয় তোর উপরে পড়েছে , সবার তো জেলাস হবে একথা জানলে ।
পূর্ণতা কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলল ,
– সে কোন রাজার রাজপুত্র যে তার জন্য সবাই এমন করে ? যার যা ইচ্ছে করুক , আই হ্যাভ নো ইনটারেষ্ট !
– লাইক সিরিয়াসলি ?? তুই চিনিস না ওটা কে ছিল !! আরে বুদ্ধু , ঐটাই তো ভার্সিটির ক্রাশ “দ্য গ্ৰেইট আবরন”
।
– সে যে ই হোক , বললাম তো আই হ্যাভ নো ইনটারেষ্ট !!
– আচ্ছা , হয়েছে ।
এই বলে পূর্ণতার চোখ নাক মুখ মুছে দিয়ে বলল ,
-চল , এখন । দেড়ি হচ্ছে ।
প্রেনা পূর্ণতা কে নিয়ে ওয়াশরুমের মেইন ডোর দিয়ে বের হতেই আবরনের সাথে আবার দেখা ।
আবরন পূর্ণতা আর প্রেনাকে দেখে ওদের দাড় করিয়ে পূর্ণতা কে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করলো ,
– কোথায় কোথায় লেগেছে? খুব বেশি চোট পেয়েছো ??
পূর্ণতা আবরনের প্রশ্ন শুনে জবাব দিতেই যাচ্ছিল যে ,
– আপনার মতো তাল গাছের সমান লম্বা সুঠাম দেহের এক ময়দার বস্তা আমার মতো মশার উপরে পড়ে গেলে ব্যথা না পেয়ে উপায় আছে ??
কিন্তু পূর্ণতার কথা গুলো ওর পেটেই চাপা পড়ে মারা গেল প্রেনার কথায় । প্রেনা বলল ,
– না না ভাইয়া । পূর্ণতা ঠিক আছে । সামান্য একটু হাত ছিলে গিয়েছে । তাই না বল ?? ( পূর্ণতা কে আঙ্গুল দিয়ে খোঁচা মেরে )
পূর্ণতা কিছুই বলছে না , চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে ।
আবরন বলল ,
– ঠিক আছে তোমরা গিয়ে স্টেজের সামনে গ্যালারিতে বসো । আমি আসছি । এক্ষুনি অনুষ্ঠান শুরু হবে ।
……………………………………………
দুপুর ১২ টা ৪৫ মিনিট ,
প্রেনা আর পূর্ণতা গ্যালারিতে প্রবেশ করতেই দেখলো স্টেজের সামনের দিকের জায়গাগুলোতেই নীল রং পরিহিতা সকলে বসেছে । প্রেনা আর পূর্ণতা ও একটা খালি জায়গায় গিয়ে বসে পড়ল একসাথে । হয়তো নবীনদের বরনীয় অনুষ্ঠান বলেই সামনে বসতে দেওয়া হয়েছে ।
এরই মধ্যে ধ্বনি ভেসে আসতে লাগল ,
– ” প্রধান অতিথির আগমন , শুভেচ্ছার স্বাগতম । ”
সবাই পেছন থেকে ভেসে আসা ধ্বনির রহস্য উদঘাটন করতে ব্যস্ত আর এদিকে স্টেজে কেউ প্রবেশ করে মাইক হাতে বলল ,
– সবাই বলো , “প্রধান অতিথির আগমন , শুভেচ্ছার স্বাগতম ”
সবাই স্টেজের দিকে লক্ষ্য করতেই আর বুঝতে বাকি রইল না স্টেজে কে দাঁড়িয়ে !!
আবরনের কথা মতো গ্যালারিতে উপস্থিত হাজার হাজার ব্যক্তি একসাথে এই ধ্বনি দিতে ব্যস্ত ।
এরপর আবরন হাত দিয়ে ইশারা করতেই সবাই থেমে গেল ।
আবরন উপস্থিত বক্তৃতা দিতে শুরু করলো ,
– বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ।
আসসালামু আলাইকুম । আশা করি , সকলে ভালো আছো ।
আজকের আমাদের এই অনুষ্ঠান ভার্সিটিতে আগত নতুন স্টুডেন্টস দের নিয়ে । তাদেরকে বরণ করে নিতেই আজকে আমাদের এত আয়োজন । প্রতিবছর ই নতুন আগত হওয়ার পাশাপাশি পুরাতন রাও বিদায় নেয় । তাই দিনটা যেমন সুখের তেমন ই কষ্টের ও । আমাদের এই অনুষ্ঠান টা কে আরো সুন্দর করতে এই মূহুর্তে স্টেজে প্রবেশ করছে আমাদের সম্মানিত প্রধান অতিথি জনাব হাসান মাহমুদ রাজা । সকলে জোরে কড়া তালি ।
এই বলে থেমে আবার বলতে শুরু করল ,
এরপর স্টেজে প্রবেশ করতে যাচ্ছে আমাদের মেডিক্যাল কলেজের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো: টিটো মিঞা এবং সেই সাথে প্রবেশ করতে যাচ্ছে আমাদের মেডিক্যাল এর সহকারী অধ্যাপক এবং মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. খান আবুল কালাম আজাদ এবং আমাদের গাইনী বিভাগের অধ্যাপিকা ডা. নূর সাঈদা । আরো একবার জোরে কড়া তালি ।
এরপর একে একে সবাই কে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য ডাকা হলো । সকলের বক্তৃতা শেষে এলো আবরনের নিজ পরিচয় তুলে ধরার সময় ।
আবরন মাইক হাতে নিয়ে দাড়িয়ে ঠোঁটে বাকা হাসি দিতেই ভার্সিটিতে উপস্থিত সকলে চিল্লিয়ে উঠলো স্বজোরে ।
পূর্ণতা এতক্ষন আবরনকে ভালো করে খেয়ালই করে নি । কিন্তু সকলের এতো আকর্ষণ ওকে টানছে চোখ তুলে আবরনকে দেখার জন্য । পূর্ণতা তাকিয়ে দেখলো ,
উচ্চতায় ৫’৯” , গায়ের রং গোলাপি ফর্সা অর্থাৎ দুধে আলতা মিশালে যে আকার ধারন করে ঠিক তেমন , গায়ে পরোনে সাদা পাঞ্জাবি তাতে সাদা সুঁতোর কাজ করা , আর রং বেরং এর সুঁতোর কাজের কাশ্মীরি শাল পেঁচিয়ে এক হাতে মাইক নিয়ে ঠোঁটে বাকা হাসি হেসে বক্তব্য দিচ্ছে , হালকা মিষ্টি বাতাসে সিল্কি চুল গুলো উড়ছে আর কৃষ্ণচূড়া গাছ থেকে ফুল ঝড়ে ঝড়ে পড়ছে । খুবই রোমাঞ্চকর একটা পরিবেশে আবরনের কথা শুনতে ব্যস্ত সকলে ,
– আসসালামু আকাইকুম । আমার নাম “শাহরিদ আহনাফ আবরন ” । এই মেডিক্যাল কলেজে বর্তমানে মেডিসিন বিষয়ে পড়ুয়া একজন ছাত্র । সেই সাথে এই ভার্সিটির নির্বাচিত ভিপি । আমি আমার এই জায়গায়টা নিজ যোগ্যতায় অর্জন করেছি । এই ভার্সিটিতে আমাকে চেনে না এমন কেউ নেই এবং এই এলাকায় আমি সবার পরিচিত । এই ভার্সিটিতে অধ্যায়নরত প্রতিটি অধ্যাপক অধ্যাপিকা আমাকে যেমন ভালোবাসে তেমনি আমাকে বিশ্বাসও করে । এই ভার্সিটির সব কিছুর দেখভাল আমিই করি । যারা পুরাতন তারা আমাকে চিনে খুব ভালো করেই । তবে তোমরা যারা নতুন তাদের বলছি সর্বপ্রথম এখানে মিথ্যা বলা , সিনিয়রদের সাথে বেয়াদবি করা , ছেলেদের মেয়েদের সাথে খারাপ আচরন এবং মেয়েদের ছেলেদের সাথে দুর্ব্যবহার এসব কিছুই এখানে চলবে না । সিনিয়রদের যেমন জুনিয়ররা সম্মান করবে ঠিক তেমনি জুনিয়রদেরকেও সিনিয়রদের ভালোবাসতে হবে । এছাড়া কারো যদি কোনো প্রবলেম হয় বা কারো দ্বারা কোনোভাবে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হও , ৩০৫ নাম্বার কক্ষটা আমার , সেখানে গিয়ে কমপ্লেইন জানাবে , আমি নিজে ব্যবস্থা নেব । মনে কোনো ভয় বা সংকোচ না রেখে সরাসরি আমাকে জানাবে ।
আমি যেমন ভালোতে খুব ভালো হতে পারি , ঠিক তেমনি খারাপে কিন্তু অনেক খারাপ ও হতে পারি । আশা করি , এতক্ষনে সকলে বুঝে গিয়েছো আমি কেমন ??
সবাই স্বজোরে তালি বাজালো । পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে ,
– মুখে মুখে সবাই এসব বলতে পারে , দেখা যাবে কাজের বেলায় কতদূর !! সুন্দর বলে জাতির ক্রাশ আপনি কিন্তু কতদূর সমাধান দেন সমস্যার তা ই দেখবো !!
এসব ভেবেই চোখ তুলে স্টেজের দিকে তাকাতেই দেখল আবরন ওর দিকেই দেখছে । দুজনের চোখে চোখ পড়াতেই ইতস্তত বোধ করে দুজনেই দৃষ্টি সরিয়ে নিল ।
……………………………………………
অবশেষে সিনিয়ররা নবীনদের ফুল হাতে দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতে শুরু করলো । আয়মান প্রেনাকে ফুল দিয়ে পূর্ণতার হাতে একটা রজনী গন্ধার স্টিক আর সাথে একটা মলমের টিউব দিল ।
তা দেখে পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,
– এটা কি দিলেন ভাইয়া ??
আয়মান বলল ,
– তুমি নাকি পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছো । তাই আবরন তোমাকে ক্ষত জায়গায় এটা লাগাতে বলেছে ।
এই বলে অন্যদের ফুল দিতে ব্যস্ত হয়ে গেল আয়মান ।
প্রেনা দাঁত কেলিয়ে পূর্ণতা কে বলল ,
– আরেব্বাস !!! ভাইয়া তো দেখছি তোর কেয়ার নিতেও শুরু করেছে ।
প্রেনার কথা পূর্ণতার কান অবধি পৌছালো না , কারন আয়মানের কথা শুনেই পূর্ণতা স্টেজের দিকে , আশে পাশে তাকিয়ে আবরনকে খুঁজছে । হঠাৎই লক্ষ্য করলো স্টেজের এক পাশে দাঁড়িয়ে আবরন একটা মেয়ের সাথে কথা বলছে । এক পলক দেখেই পূর্ণতা দৃষ্টি সরিয়ে নিল ।
প্রেনা বলল ,
– কিরে ?? কোথায় হারিয়ে গেলি ?? আয় মলমটা লাগিয়ে দিই ।
এই বলে পূর্ণতার হাত থেকে মলমটা নিয়ে ওর হাতের পেছনের ক্ষত জায়গাটাতে মালিশ করে দিতে লাগল ।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।।
(এট দ্য সেইম টাইম )
আবরন স্টেজ থেকে নেমে দাড়াতেই জল দৌড়ে গিয়ে ওর সামনে দাড়ালো । তারপর ন্যাকা কান্না শুরু করে বলল ,
– আই এম রিয়েলি ভেরি সরি বেইব । আমি তখন তোমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছিলাম , কিন্তু তুমিই তো দূরে সরতে গিয়ে ছিটকে পড়ে গেলে !! খুব লেগেছে তাই না ??
আবরন রেগে বলল ,
– দেখো জল , আমার এসব ন্যাকামো পছন্দ না । তুমি সব সময় আমার পেছনে এভাবে কেন লেগে থাকো !! জাষ্ট ফুপির মেয়ে বলে তোমাকে কিছু বলি না , অন্য কেউ এমন বেয়াদবি করলে এতদিনে খবর করে দিতাম । আর শোনো যখন তখন আমাকে জড়িয়ে ধরবে না । সেই যোগ্যতা এবং অধিকার দুটোর একটাও তোমার নেই ।
– কেন , বেইব !! এভাবে কেন বলছো !! আমি তো তোমাকে ভালোবাসি । আমার তো তোমার কাছাকাছি থাকার অধিকার আছে ।
– কিন্তু আমি তো ভালোবাসি না । তাই যথা সম্ভব দূরে থাকবে । আজ তোমার কারনে ঐ মেয়েটা তখন কতটা চোট পেল । আজ প্রথমদিন এলো , ওদের জন্যেই এত আয়োজন । আর ওর দিনের শুরু টা এভাবে নষ্ট হয়ে গেল তোমার জন্য । তুমি আমার সাথে ভদ্রভাবে আচরন করো , নাহলে আমি ফুপিকে জানাতে বাধ্য হবো । সো , ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট !!
এই বলে আবরন চলে গেল ।
জল সেখানেই দাঁড়িয়ে রাগে ফুসতে ফুসতে ভাবতে লাগল ,
– কোথাকার না কোথাকার একটা মেয়ের জন্য আবরন আমাকে এত্ত গুলো কথা শুনালো । ঐ মেয়েকে হাতের নাগালে একবার পাই তারপর বুঝাবো জল কি কি করতে পারে !!
এই ভেবে সেখান থেকে চলে গেল জল ।
………………………………………………
অনুষ্ঠান শেষ হলো দুপুর ৩ টায় । লাঞ্চ আওয়ার বলে সবাইকে ১ প্যাকেট করে খাবার দেওয়া হয়েছে অনুষ্ঠান শেষে ।
প্রেনা আর পূর্ণতা ক্যাম্পাসের এক সাইডে এসে দাঁড়িয়েছে । পূর্ণতা ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে জিব্রানকে কল করতেই যাচ্ছিল , তখন হঠাৎ কোথা থেকে জল এসে ওর ফোনটা হাত থেকে কেড়ে নিয়ে নিল চিলের মতো থাবা মেরে ।
পূর্ণতা হকচকিয়ে গিয়ে সামনে থাকা আপুকে বলল ,
– আপু , কোনো সমস্যা ?
জল মোবাইল টা হাতে নিয়ে ছুড়ে ছুড়ে ক্যাচ ক্যাচ খেলতে খেলতে বলল ,
– আবার সমস্যা নেই বলছো কি ?? অনেক সমস্যা !! তোমার রূপ দেখিয়ে তো সিনিয়র ভাইদের ভালোই পটানো শিখে গিয়েছো দেখছি ।
পূর্ণতা বলল ,
– এক্সকিউজ মি আপু !! আপনার হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে । আমি তো আপনাকে চিনি না ।
জল বলল ,
– তো এখন চিনে নাও । আমি আবরনের হবু ফিওন্সে । তোমাকে যেন আবরনের আশেপাশে কখনো না দেখি । তাহলে আমার হাত কতদূর তা হারে হারে বোঝাবো !!
পূর্ণতা আর নিজেকে সামলাতে পারলো না । কষ্টে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো ।
প্রেনা কিছুটা রেগে বলল ,
– ও তো ভাইয়াকে কিছু বলে নি বা ভাইয়ার আশেপাশে ও ঘোরে নি । তাহলে কি সমস্যা আপনার ?? মোবাইলটা দিন বলছি !!
– আমার সাথে মুখে মুখে তর্ক করছো ?? সাহস তো কম না । একজনের রূপ আর আরেকজনের দেখছি মুখ চলে । মোবাইল পাবে না । যা বলেছি , কথাটা যেন মাথায় থাকে ।
এই বলে ফোনটা নিয়েই চলে গেল জল ।
পূর্ণতা কে এভাবে কাদতে দেখে প্রেনার মাথায় রক্ত উঠে গেল ।
ও পূর্ণতা কে ধরে টানতে টানতে গেল ৩০৫ নাম্বার কক্ষের দিকে …………
#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৩
প্রেনা পূর্ণতা কে টেনে টেনে ৩০৫ নাম্বার কক্ষের দিকে ছুটছিল , কিন্তু তখনই হঠাৎ পূর্ণতা প্রেনাকে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে বলল ,
– প্রেনা , কোথায় যাচ্ছিস !! তোর ফোনটা দিয়ে ভাইয়াকে কল দে । আর এই মূহুর্তে আর একটা প্রশ্ন ও করবি না , তোকে আমার দিব্যি ।
প্রেনা ওর কথা শুনে ঠায় দাঁড়িয়ে গেল । কিছু আর বলতে পারলো না । নিজের ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করে পূর্ণতার দিকে বাড়িয়ে দিল । পূর্ণতা ফোনটা নিয়ে জিব্রানকে কল দিল । দুইবার রিং হতেই ওপাশ থেকে জিব্রান কল রিসিভ করল ,
– হ্যা , পুচকি । কোথায় আছিস ?
– ভাইয়া , আমার অনুষ্ঠান শেষ । আমি মেডিক্যাল এর মেইন গেইটে আছি । তোমার আসতে কতক্ষন লাগবে ?
– আমি শহীদ মিনারের সামনে আছি , ১০ মিনিট ওয়েট কর । I’m on my way …..
তারপর কলটা কেটে গেল ।
পূর্ণতা ফোনটা প্রেনার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল ,
– ভাইয়ার আসতে ১০ মিনিট লাগবে । তুই চাইলে চলে যেতে পারিস ।
– তুই পাগল ! তোকে এভাবে একলা ফেলে আমি চলে যাবো ?
– না , আমি তো ভাইয়ার সাথে যাবো । তোর একা যেতে হবে , তাই আর কি !
– আমার বাসা কাছে , তুই ই তো আজিমপুর থাকিস । দশ হাত দূরে ।
– আচ্ছা , তাহলে তুই স্কুটি নিয়ে উল্টো পথে আমাকে নিতে যাবি প্রতিদিন ?
– দরকার হলে যাবো ।
– এত কেন ভালোবাসিস আমাকে ?
– কারন তুই আমার সেই ছোট্ট বেলার বেষ্টি । তোর কিছু হলে আমিও …….
– হয়েছে , নেগেটিভ কথা বাদ দে …….
– আচ্ছা , একটা কথা বলি , রাগ করিস না ।
– আমি জানি , কি বলবি !! তা ও তুই ই বল ।
– তোকে আজ এভাবে অপমানিত হতে দেখে নিজেকে সামলাতে পারছিলাম না , তাই তো ভাইয়ার কাছে বিচার দিতে চাইছিলাম ।
– বিচার দিলে লাভ নেই , তখন শুনলি না সে কি বলল ? সে ভাইয়ার হবু ফিওন্সে !! আমরা বিচার দিলে তো ভাইয়া বিলিভ করবে না । দরকার কি বাড়া বাড়ির । যেমন আছি থাক না ।
– তুই সব সময় ই এমন ম্যান্দা মার্কা । জিব্রান ভাইয়া ঠিকই বলে ..
এরই মধ্যে জিব্রান চলে এলো !!
ও প্রেনার কথা কিছুটা শুনতে পেয়ে বাইক থেকে নেমে বলল ,
– আমি কি ঠিক বলি রে প্রেনা ??
প্রেনা হেসে বলল ,
– এই যে , তোমার বোন একটা ম্যান্দা মার্কা ।
জিব্রান হেসে দিল । প্রেনা ও হাসতে শুরু করলো ।
পূর্ণ গাল ফুলিয়ে বলল ,
– হ্যা হ্যা , যত খুশি হাসো !!
জিব্রান বলল ,
– ঠিক আছে , চল এখন !
প্রেনা বলল ,
– আচ্ছা , তোমরা যাও । আমি আসছি ।
জিব্রান বলল ,
– তুই কোথায় যাচ্ছিস ? আমাদের সাথে চল , আমি ড্রপ করে দিচ্ছি ।তোর চেয়ে ভালোই পারি বাইক চালাতে ।
পূর্ণতা বলল ,
– হ্যা , চলনা । একসাথেই যাই ।
প্রেনা আর না করল না । এরপর জিব্রান বাইক স্টার্ট দিয়ে ওদের উঠতে বলল । পূর্ণতা প্রথমে উঠলো , তারপর প্রেনা উঠে বসল । তারপর রওনা হলো গন্তব্যের দিকে ।
……………………………………………..
আবরন বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে পাঞ্জাবি চেঞ্জ করে একটা ট্রাউজার আর টি শার্ট পড়ে নিল । বাহিরে গেলে আবরনের জাতীয় পোশাক পাজামা – পাঞ্জাবি আর শাল হলেও বাসায় সে টিশার্ট ট্রাউজারেই অভ্যস্ত ।
নিজের বিছানায় বসে নিজের মাকে ডাকতে লাগলো ,
– আম্মু , আম্মু …… ও আধিরা আনজুম …….
ছেলেকে এভাবে ডাকতে শুনে আধিরা আনজুম নিজের রুম থেকে এক প্রকার দৌড়েই ছেলের রুমের দিকে গেল ।
– কি হয়েছে ? এভাবে নাম ধরে ডাকিস কেন বলতো ??
– আম্মু বলে ডাকলে তো শোনো না , তাই বাবার মতো নাম ধরে ডাকলাম যেন জলদি জলদি হাজির হতে পারো ।
আধিরা আনজুম ছেলের কথায় হেসে বললেন ,
– তা কি এমন জরুরি তলব শুনি ?
আগে বসো এখানে । আধিরা আনজুম ছেলের বিছানায় বসে বললেন ,
– এখন বল !
আবরন নিজের মায়ের কোলে মাথা রেখে বললেন ,
– মাথাটা প্রচন্ড ব্যথা করছে ! একটু চুল গুলো টেনে দাও না ।
আধিরা আনজুম ছেলের কথা শুনে সিল্কি চুল গুলো বিলি করে করে চুল টেনে দিতে দিতে বললেন ,
– আর কত আমি চুল টেনে দেব বল ? কোথায় একটা বিয়ে করবি তা না , এখনো আমার আচল দিয়ে মুখ মুছিস , আমার গামছা দিয়ে চুল মুছিস , আমাকেই বলিস সব কিছু করে দিতে ।
আবরন চোখ বন্ধ করে মায়ের চুল টেনে দেওয়া অনুভব করছিল । মায়ের মুখে এসব কথা শুনে হঠাৎ বন্ধ চোখের মাঝেই যেন সকালের ঘটনা গুলো ছবির মতো ভেসে উঠছে । সেই কাজল কালো চোখ থেকে বেয়ে পরা পানি , কাপা কাপা ঠোঁট এসব কিছুই মনে আসতে লাগল । তারপর হঠাৎ করে জলের কথা মনে হতেই রাগে চোখ খুলে ফেলল ।
আধিরা আনজুম বললেন ,
– কি রে , কি হলো ?
আবরন বলল ,
– আম্মু , জানো আজকে কি হয়েছে ?
– না বললে কেমন করে জানবো ?
– জল আজকে অনেক গুলো অন্যায় করেছে । ও বরাবরই আমার সাথে ঘেষে ঘেষে চলে । বিলিভ মি , আমার ওকে আর সহ্য হচ্ছে না । প্লিজ , তুমি বিষয়টা বাবাকে জানিয়ে একটু হ্যান্ডেল করো না ।
– তোর বাবাকে এ বিষয়ে কোনো কথা বলা যায় ? বললেই তো সে বলবে , তার একমাত্র ছোট বোনের একমাত্র মেয়ে , তার নামে কোনো বাজে কথা সে শুনতে চায় না ।
আবরন মায়ের কোল থেকে মাথা উঠিয়ে বসে চিন্তিত ফেস করে বলল,
– বাবা কি চাচ্ছে জলকে এ বাড়ির বউ করে আনতে ??
-তা জানি না , কিন্তু জলকে তোর বাবা অনেক ভালোবাসে ।
– ধুর !! বাবা যদি কখনো এ কাজ করে তাহলে আমি সোজা এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো ।
আধিরা আনজুম কিছুটা রাগ করে বললেন ,
– চুপ কর তো । এসব কথা মুখে আনতে নেই ।
আর তোকে তো আমি সেই কবের থেকেই বলছি যে নিজের পছন্দ মতো একটা মেয়েকে বিয়ে করে এই বাড়ির বউ করে নিয়ে আয় , তাহলেই দেখবি সব সমস্যার সমাধান হবে । আর একথা বলছি কারন হচ্ছে , তোর উপর আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস আছে যে তুই একজন পারফেক্ট গার্লকেই এ বাড়ির বউ করে আনবি ।
– তা বুঝলাম । কিন্তু এখনো তো নিজের পায়ে দাড়াই নি । আর একটা বছর , তারপর নিজের একটা চেম্বার খুললেই দেখবে বিয়ে করে নিব ।
আধিরা আনজুম মুচকি হেসে বললেন ,
– তা আমার ভবিষ্যত ডাক্তার ছেলে বুঝি কাউকে পছন্দ করে রেখেছে !!
আবরন আধিরা আনজুমের দিকে তাকিয়ে বলল ,
– ধুর !! কি যে বলো না আম্মু !!
এই মা ছেলের দুষ্টু মিষ্টি গল্প চলতেই থাকবে সারাদিন ।
……………………………………………
সন্ধ্যা ৬ টার দিকে জিব্রান একটা বড় স্যুটকেস এনে পূর্ণতার খাটের উপর রাখলো । পূর্ণতা খাটে বসে বালিশের সাথে হেলান দিয়ে বই পড়ছিল । হঠাৎ খাট কেপে উঠতেই চোখের সামনে থেকে বইটা সরিয়ে দেখলো , জিব্রান ওর দিকেই তাকিয়ে ভ্রু নাচাচ্ছে আর খাটের উপর একটা বিশাল স্যুটকেস । পূর্ণতা বইটা পাশে রেখে স্যুটকেসের দিকে ইশারা করে জিব্রানকে জিজ্ঞেস করলো ,
– এর ভেতর কি আছে ভাইয়া ??
জিব্রান দাঁত কেলিয়ে বলল ,
– তোর জন্য কক্সবাজার থেকে এক স্যুটকেস শুটকি নিয়ে এসেছি ।
পূর্ণতা জিব্রানের কথা শুনেই চেহারা কুচকে বলল ,
– ছি , ইয়াক 🤢 , এটা আমার বিছানার উপর কেন রাখলে , জলদি রান্নাঘরে নিয়ে যাও ।
জিব্রান বলল ,
– কেন !এগুলো রান্না ঘরে রাখতে এনেছি নাকি ?? এগুলো তোর আলমারি তে , ড্রেসিং টেবিলে থাকবে ।
– ছি , গন্ধে তো মরেই যাবো । ভাইয়া প্লিজ , সরাও এগুলো । আমি আম্মুকে এখনি ডাকছি ।
জিব্রান বলল ,
– ডাক , আই ডোন্ট কেয়ার ।
পূর্ণতা মিলি রহমানকে ডাকতে শুরু করলো ,
– আম্মু , আম্মু । দেখো তোমার ছোলে আমার বিছানায় কিসব রেখেছে !!
মিলি রহমান বসার ঘর থেকে উঠে এসে পূর্ণতার রুমে এসে বলল ,
– কি হয়েছে ?
– দেখো , তোমার ছেলে কি এনেছে আমার জন্য ! ( কাদো কাদো ফেস করে )
জিব্রান ভ্রু কুচকে বলল ,
– কি এনেছি ?? তোর প্রিয় চকলেটস আর কিছু অলংকার এনেছি । কি সব আজে বাজে বকছিস তখন থেকে ?? এখন আবার আম্মুকেও ডেকে বিচার দিচ্ছিস !
জিব্রান কথাগুলো এমন ভাবে বলল যেন কিছুক্ষন আগের বলা কথাগুলো সম্বন্ধে ও কিছুই জানে না ।
মিলি রহমান পূর্ণতার দিকে ভ্রু কুচকে তাকালেন । পূর্ণতা মিলি রহমানের এমন দৃষ্টি দেখে ঠোঁট উল্টে বলল ,
– বিশ্বাস করো আম্মু , ভাইয়া মিথ্যে বলছে । ও এটার ভিতর শুটকি এনেছে । বলে কিনা আমার আলমারি , ড্রেসিং টেবিলে এসব রাখতে ।
জিব্রান বলল ,
– এহহহ !! আমি কখন বললাম এ কথা ?? আম্মু তোমার বিশ্বাস না হলে আমি তোমাকে ব্যাগ খুলে দেখাচ্ছি !
মিলি রহমান বললেন ,
– খোল ।
পূর্ণতা ও আগ্ৰহ নিয়ে তাকালো । জিব্রান স্যুটকেস খুলতেই দেখা গেল , এত্ত এত্ত চকলেটস আর এত্ত এত্ত অলংকার আর কিছু স্যান্ডেলস ও আছে ।
এসব দেখে পূর্ণতার মুখ টা শুকিয়ে গেল ।
জিব্রান দাঁত কেলিয়ে বলল ,
– হুহ , নিজের চোখেই দেখে নাও ।
মিলি রহমান বিষয়টা বুঝতে পেরে বললেন ,
– উফফফফ !! তোরা এখনো সেই বাচ্চাদের মতো পাগলামি করিস !! আমি আর পারি না তোদের নিয়ে । তোদের বাবা তো ফ্রান্সে গিয়ে ই পড়ে থাকে , তোদের এসব কাহিনী আমারই দেখতে হয় !!
এসব বলতে বলতে পূর্ণতার রুম থেকে মিলি রহমান বেরিয়ে গেলেন ।
মিলি রহমান চলে যেতেই , জিব্রান হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খেতে লাগলো । পূর্ণতা গাল ফুলিয়ে ওকে বালিশ দিয়ে মারতে শুরু করলো । জিব্রান ও কম না , সে ও বালিশ হাতে নিয়ে পাল্টা মাইর দিতে শুরু করলো । এই পিলো ফাইট আর থামবে না ।
কিছুক্ষণ পর দুজনেই হরান হয়ে বসে হাসতে লাগলো । হাসতে হাসতে হঠাৎ পূর্ণতা হাসি থামিয়ে দিয়ে বলল ,
– ভাইয়া !! তুই সত্যিই চলে যাবি বাবার কাছে ফ্রান্সে ??
জিব্রান ও হাসি থামিয়ে দিয়ে বলল ,
– না গিয়ে উপায় আছে । বাপ দাদার ব্যবসা তো এখন আমাকেই ধরতে হবে । আমাদের তো আর কাকু নেই যে সে ব্যবসা ধরবে ।
পূর্ণতা বলল ,
– তুমি চলে গেলে আমি আরো একা হয়ে যাবো । তুমি ঠিক ই বলো , আমি ম্যান্দা , আমাকে কেউ কিছু বললে আমি পাল্টা জবাব দিতে জানি না । তুমি চলে গেলে আমাকে কে বাঁচাবে রাস্তা ঘাটে চলতে গেলে ।
– কেন ? নিজেকে রক্ষা করতে শিখবি ! সেল্ফ ডিফেন্স !!
– সেটা কিভাবে সম্ভব ! আমি তো আর মারা মারি জানি না তোমার মতো !
-কেন শিখবি ? কারাতি তে ভর্তি করিয়ে দেব !
-আমার মতো মেয়ে কারাতি শিখবে ?
– তোর চেয়ে বড় বড় মহিলারাও শিখে ! আর তুই তো পুচকি ! কালই ভর্তি করিয়ে দেব !! এখন এসব বাদ দে !!
– কিন্তু !!
– কোনো কিন্তু না ! এখন স্মাইল কর আর এসব গুছিয়ে রাখ ।
পূর্ণতা ভাইয়ের কথা মতো হেসে তারপর স্যুটকেস থেকে সব বের করে গুছাতে লাগল ।
………………………………………………..
আবরন সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হয়েছে । আয়মান , ফাহিম আর তাসিনকে বলেছে দেখা করতে ।
আয়মান , ফাহিম আর তাসিন ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় উপস্থিত হয়ে আবরনের জন্য অপেক্ষা করছে ।
ফাহিম বলল ,
– আজকের দিনটা একটা কুফা ছিল ।
– ঠিকই বলেছিস ! ( তাসিন )
আয়মান ভ্রু কুচকে বলল ,
-কেন ? কি হয়েছে ?
ফাহিম সকালের সব কাহিনী বর্ণনা করতেই আয়মান বলল ,
– জল তো আমার কাছে এসে জানতে চেয়েছিল আবরন কোথায় ! আমি তো ওকে বলি নি , তাও কি করে খুঁজে পেল ??
– আরে , ও তো লোহা , আর আবরন চুম্বক , তাইতো যেখানেই থাকুক না কেন এসে লেগে পড়ে !! ( তাসিন )
আয়মান বলল ,
– ও তাহলে ওই মেয়েটাই পড়ে গিয়ে চোট পেয়েছিল যার কাছে আবরন আমাকে দিয়ে মলম পাঠিয়েছিল ।
ফাহিম বলল ,
– সিরিয়াসলি ! আবরন কবে থেকে মেয়েদের ব্যাপারে এতোটা কেয়ার নিতে শুরু করলো । তা নাহয় বুঝলাম , কোনো ছেলে কোনো মেয়ের সাথে বাজে ব্যবহার করলে তাকে ও ছেড়ে দেয় না , কিন্তু এসব ছোট খাটো বিষয়ে তো আগে কখনো এত কেয়ার করতো না । কতই মেয়েই তো কত ভাবে আঘাত পায় , ও কি তাদের গিয়ে মলম এগিয়ে দেয় ??
আয়মান বলল ,
– ধুর , নেগেটিভ চিন্তা করিস না তো ।
এরই মধ্যে আবরন কার নিয়ে হাজির ।
কারের গ্লাস নামিয়ে ওদের বলল ,
– ভিতরে আয় । ঘুরতে যাবো ।
ওরা একে একে গাড়িতে উঠে বসতেই আবরন ড্রাইভ করতে লাগলো ।
আয়মান বলল ,
-কিরে , কোথায় ঘুরতে যাচ্ছি ?
– এই যে কাছেই , ভিক্টোরিয়া পার্কে ( বর্তমানে বাহদুর শাহ পার্ক নামে পরিচিত )
– হঠাৎ !! ( তাসিন )
– এমনি , মন চাইলো । অনেক দিন যাই না ।
……………………………………………….
জিব্রান সন্ধ্যা ৭:৪৫ এর দিকে প্রেনাকে হঠাৎ আসতে বলে নিজে গিয়ে রেডি হয়ে পূর্ণতা কে রেডি হতে বলল ।
পূর্ণতা বলল ,
– এখন আবার কোথায় যাবো ?
– ৭ দিন পর ফিরলাম বাসায় , তাই চল তোদের ফুচকা খাওয়াবো ।
ফুচকার নাম শুনে প্রেনা যেমন ফোনে নিষেধ করে নি যে সে আসবে না , ঠিক তেমনি পূর্ণতা ও নাচতে নাচতে রেডি হতে শুরু করলো ।
৮ টা ৩০ এর দিকে জিব্রান , পূর্ণতা আর প্রেনা এসে উপস্থিত হলো ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে ।
অন্যদিকে আবরন তার দলবল নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালো ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে ……………..
#চলবে ♥️
দেখবেন । ♥️