ভালোবাসি বলেই তো পর্ব -০৪+৫

#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৪

আবরন কার এক সাইডে পার্ক করে ফাহিম , আয়মান আর তাসিনকে নামতে বলে নিজেও নামলো কার থেকে । তারপর কারের ডিকি থেকে একটা গিটার বের করতেই আয়মান , ফাহিম আর তাসিনের চোখ উজ্জল হয়ে গেল । ওদের এমন দৃষ্টি আবরন আড় চোখে খেয়াল করে বলল ,

– ফলো মি !

আবরনের কথা মতো ওরাও খুশিতে আত্মহারা হয়ে এক প্রকার ছুটেই ওর পেছন পেছন গেল ।
আবরন ঝর্নার সামনের জায়গাটা তে গিয়ে বসলো । রাতেরবেলা কৃত্রিম আলো তে ঝর্নার পানি গুলো দেখতে খুব সুন্দর লাগে । আবরনকে বসতে দেখে ফাহিম , তাসিন আর আয়মান ও ওর সাথে গিয়ে বসলো ।
ফাহিম খুশি হয়ে বলল ,

– আবরন , শুরু কর ।

আবরন দাঁত কেলিয়ে বলল ,

– গান কি আমি গাইবো নাকি ?

– তাহলে আর কে গাইবে তুই ছাড়া ? ( আয়মান )

– গান গাইবে ফাহিম !! ( আবরন )

ফাহিম চোখ গোল গোল করে বলল ,

– লাইক সিরিয়াসলি ?

আবরন ওর দিকে গিটার বাড়িয়ে দিয়ে বলল ,

– ইয়াহ , I’m serious ….

ফাহিম কাদো কাদো ফেস করে গিটার হাতে নিয়ে বসে কিছুক্ষণ চিন্তা করে একটা ৫০০ টাকা দামের হাসি দিল , এমন হাসি যে ওর উপর এবং নিচ উভয় পাটির দাঁত দেখা যাচ্ছে । তারপর গান ধরলো ,

……………………………………………

জিব্রান মাত্র‌ই পূর্ণতা আর প্রেনাকে নিয়ে পার্কে পৌঁছালো । ওদের কে বলল ,

– চল , আগে ভিতরে গিয়ে একটা ভালো বসার প্লেস খুঁজি , তারপর তোদের বসিয়ে আমি ফুচকার অর্ডার দি‌ই ।

এই বলে ওদের নিয়ে পার্কের ভিতরে ঢুকল । ভিতরে প্রবেশ করে কিছুটা এগোতেই শোনা গেল কেউ গান গাইছে ,

Sonu Meri Darling
Janu Meri Jane Man
Bachpan Ka Pyar Mera Bhul Nahi Jana Re
Sachha Mera Pyar Hai
Jaan Meri Jane Man
Bachpan Ka Pyar Mera Bhul Nahi Jana Re

এই গানটা শুনে পূর্ণতা আর প্রেনা হাসি থামিয়ে রাখতে পারলো না , এমনকি জিব্রান ও হাসতে শুরু করেছে ।গানটা কে গাইছে রহস্য উদঘাটন করতে আরেকটু এগিয়ে যেতেই দেখল ঝর্নার ধারে চারজন ছেলে বসে আছে । জায়গাটাতে আলো তুলনামূলক কম হ‌ওয়াতে পূর্ণতা ভালো করে তাকিয়ে দেখতে চেষ্টা করল । ভালো করে তাকাতেই ওদের চিনতে কোনো সমস্যা হলো না । এমনকি মাঝখানে আবরন ও আছে । ওদেরকে অপর পাশের বেঞ্চিতে বসিয়ে জিব্রান গেল ফুচকা আনতে ।

ফাহিম এর গান শুনে সবাই হুহা করে হাসছিল , আবরন ও হাসি থামিয়ে নেই , হঠাৎ হাসির মাঝেই দেখল প্রেনা আর পূর্ণতা ওদের সামনেই কয়েক হাত দূরে থাকা বেঞ্চটার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে , সাথে একটা ছেলেও আছে । আবরন খেয়াল করলো ওরা তিনজন‌ই হাসছে আর একটু পর পর ওদের দিকেই দেখছে । ওদেরকে বসিয়ে রেখে ছেলেটা কোথায় যেন গেল । আবরন ফাহিম কে থামিয়ে দিয়ে বলল ,

– তোর এই গান শুনে শুধু আমরা না আশে পাশে থাকা সব লোকজন‌ই হাসছে ।

কথাটা আবরন হেসে হেসে কিছুটা জোরেই বলল যেন কথাটা পূর্ণতা প্রেনার কান অবধি পৌছায় ।

পূর্ণতা আবরনকে হাসতে হাসতে কথা গুলো বলতে শুনে প্রেনাকে বলল ,

– বাব্বা , উনি তো রাগ দেখানোর পাশাপাশি হাসতেও জানেন দেখছি ।

প্রেনা হেসে বলল ,

– কেন ! ভাইয়া কি মানুষ না ? আর তখন তো ভাইয়া নিজেই বলল যে সে ভালো তে ভালো আবার খারাপে প্রচুর খারাপ ।

পূর্ণতা প্রেনার কথা শুনছে আর আড় চোখে ওদের কাহিনী ও দেখছে ।

আবরনের কথা শুনে ফাহিম দাঁত কেলিয়ে বলল ,

– সবাই যেন হাসে এই জন্যই তো এই গানটা গাইলাম ।

আয়মান বলল ,

– তোর গান শুনে কানের নাড়ি ভুরি একদম পচে গেছে ।

তাসিন বলল , তুই তো তা ও ঐ পাশে বসেছিস , আমি তো একদম ওর সাথে , আমি আদৌ কানে শুনবো কিনা সন্দেহ !!

ফাহিম বলল ,

– এহহহ , নিজেরা তো গানের গ ও জানিস না , আমি যে গাইলাম এত সুন্দর একটা গান , তাতেও তোদের ভালো লাগছে না ।

ওদের কথা গুলো শুনে পূর্ণতা আর জোড়ে না হেসে পারল না । ওর হাসির শব্দ শুনে আয়মান , ফাহিম , তাসিন , আবরন সবাই ওর দিকে তাকালো ।
প্রেনা বিষয়টা লক্ষ‍্য করতেই পূর্ণতার মুখ হাত দিয়ে চেপে ধরে আস্তে করে কানে কানে বলল ,

– পূর্ণ !! কন্ট্রোল ইউর সেল্ফ !! ওরা সবাই তোর হাসি শুনে তোকেই দেখছে । নিজে তো মাইর খাবি সাথে আমাকেও খাওয়াবি মনে হচ্ছে ।

প্রেনার কথা শুনে পূর্ণতা চোখ বন্ধ করেই ঢোক গিলে তারপর তাকিয়ে দেখল আসলেই ওরা সবাই এদিকেই তাকিয়ে আছে ।

আবরন পূর্ণতার রিয়েকশন দেখে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে ফাহিম , আয়মান আর তাসিনের দিকে তাকাতেই দেখল ওরাও পূর্ণতার কাহিনী দেখছে । তাই ও কিছুটা রাগ হয়ে আস্তে করে বলল ,

– ঐদিকে তাকানো বাদ দিয়ে তোরাও এখন হাসি দে , নাহলে ওই মিস ‘কান্নাপরী ‘ আবার ও ভয়ে কাদতে শুরু করে দিবে । আবরনের কথা মতো ওরা সব একসাথে হুহা করে হেসে উঠলো ।

ওদের এভাবে হাসতে দেখে পূর্ণতা আর প্রেনা ও খুশি হয়ে গেল এই ভেবে যে ,
– যাক , ওরাও আমাদের মতোই মজা করছে ।

এর‌ই মধ্যে জিব্রান ফুচকার প্লেট হাতে নিয়ে পূর্ণতা এবং প্রেনার দিকে এগিয়ে এলো ।

জিব্রান জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়েই খাবে বলে সিদ্ধান্ত নিল কিন্তু তখন আবরন ওকে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– এক্সকিউজ মি ব্রো !

জিব্রান বলল ,

– আমি ??

আবরনের হঠাৎ এভাবে জিব্রানকে ডাক দেওয়া পূর্ণতা আর প্রেনার মনে আশংকার ঝড় তুললো ।

আবরন বলল ,

– হ্যা , আপনি । আপনি দাঁড়িয়ে না থেকে চাইলে আমাদের সাথে জয়েন হতে পারেন ।

আবরন চোখ দিয়ে ফাহিম , আয়মান আর তাসিনকে ইশারা করতেই ওরাও জিব্রানকে বলল ,

– ভাইয়া , আসেন ।

জিব্রান পূর্ণতা আর প্রেনার দিকে তাকিয়ে বলল ,

– ওদের কি ভালো মনে হচ্ছে ??

পূর্ণতা উত্তর দেওয়ার আগেই আবরন উঠে এসে ওদের সামনে দাঁড়িয়ে বলল ,

– ভাইয়া , আপনি পূর্ণতার কোনো রিলেটিভ !

ওর মুখে নিজের বোনের নাম শুনে ভ্রু কুচকে বলল ,

– আমি ওর আপন বড় ভাইয়া , আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না ! আর আমার বোনকে কি করে চিনেন ?

আবরন হেসে বিনয়ের সাথে বলল ,

– আমি আপনার বোনের ভার্সিটির ভিপি শাহরিদ আহনাফ আবরন । আপনি আমাকে আবরন বলেই ডাকতে পারেন , আর ভাইয়া আমি আপনার থেকে বয়সে ছোট হবো , তাই প্লিজ তুমি করেই বলবেন ।

জিব্রান বলল ,

– ও তাই নাকি ? তাহলে তো দেখা হয়ে ভালোই হলো । ঠিক আছে , চলো বসি একসাথে ।

আবরন খুশি হয়ে ওর পাশেই জিব্রানকে জায়গা করে দিল ।
প্রেনা আর পূর্ণতার কলিজা আরেকটু হলে লাফ দিয়ে ভেতর থেকে বের‌ই হয়ে যাচ্ছিল । তারপর ওদের কথোপকথন শুনে ওরা যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলো ।

জিব্রান বলল ,

– তোমরা তো ছোট ভাই তাহলে !! আমি একা একা খাচ্ছি , বিষয়টা ভালো দেখায় না । বলো কে কি খাবে ??

আবরন বলতে যাবে তার আগেই তাসিন বলল ,

– ভাইয়া , ফুচকা‌ই খাবো ।

ফাহিম বলল ,

– আমি ও খাবো ।

আয়মান বলল ,

– আমি ফুচকা খাই না । বেশি করে ঝাল দিয়ে চটপটি খাবো ।

ওদের এমন ছোঁছামি দেখে আবরন মনে মনে ভাবছে ,

– এই গুলো কি ঘাস খেয়ে বড় হয়েছে এতদিন ? মাথায় ঘিলু নেই একটু ও !! মান সম্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে দিল ।

জিব্রান আবরনকে জিজ্ঞেস করল ,

– কি হলো তুমি চুপ করে র‌ইলে কেন ? বলো কি খাবে ?

আবরন বলল ,

– না ভাইয়া , আমি কিছু খাবো না । আম্মু প‌ই প‌ই করে বলে দিয়েছে স্ট্রিট ফুড খেতে না যদিও আমার খুব পছন্দ । কিন্তু বুঝেন‌ই তো মায়ের আদেশ বলে কথা !!

কিন্তু …….

জিব্রান বলল ,

– কিন্তু কি ?

– কিন্তু আপনি যদি আমাকে বাসায় দাওয়াত করে খাওয়ান আমি অবশ্য‌ই যাবো ।

জিব্রান হেসে বলল ,

– তাহলে সে কথাই র‌ইল ।

আবরনের কথা শুনে আয়মান , ফাহিম আর তাসিনের নিজেদের চুল টেনে নিজেদের‌ই ছিড়ে ফেলতে মন চাইছিল সেই মূহুর্তে । এই ভেবে যে , ” ব্যাটা একা বাসায় নেমন্তন্ন নিয়ে নিল , আর আমাদের স্ট্রিট ফুড খেতে হবে । ”

তারপর জিব্রান ফাহিম কে টাকা দিয়ে বলল ,

– যাও , গিয়ে নিয়ে এসো ।

ফাহিম চলে যেতেই জিব্রান পূর্ণতা কে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– কি রে , কেমন খেতে ??

পূর্ণতা বেশি করে টক দিয়ে একটা আস্ত ফুচকা মুখে পুরে খেতে খেতে বলল ,

– ইয়ামিইইইই !!

আবরনের বুঝতে বাকি র‌ইল না ওদের ভাই বোনের সম্পর্ক কতটা মধুর ! ও দুষ্টুমি করে পূর্ণতা কে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– আস্তে খাও ! কেউ তো তোমার ভাগেরটা খেয়ে ফেলবে না , এভাবে খেলে তো গলায় আটকাবে !

পূর্ণতা সবেই একটা ফুচকা মুখে নিয়েছিল ঠিক তখন আবরনের এমন কথা শুনে আর ফুচকা গিলতে পারলো না । কাশি দিতে দিতে পানি চাইলো প্রেনার কাছে । প্রেনা ঝটপট পানি এগিয়ে দিয়ে ওর মাথায় হাত বুলাতে লাগল ।

আবরন বলল ,

– দেখেছো , বলতে না বলতেই গলায় বাঁধলো !!

জিব্রান হেসে বলল ,

– ফুচকা পেলে ওর আর দুনিয়ার খবর থাকে না ।

ফাহিম ফুচকা আর চটপটি নিয়ে আসতেই আয়মান বলল ,

– আবরন , এখন তুই না করবি না । প্লিজ একটা গান ধর , আমরা খেতে খেতে এনজয় করি ।

আবরন গিটার টা হাতে নিয়ে সুর তুলে গান গাইতে শুরু করলো ,

Kehte hain khuda ne iss jahan mein sabhi ke liye ❤️

Kisi na kisi ko hai banaya har kisi ke liye ❤️

Tera milna hai uss rab ka ishaara maanu ❤️

Mujhko banaya tere jaise hi kisi ke liye ❤️

Kehte hain khuda ne iss jahan mein sabhi ke liye ❤️

Kisi na kisi ko hai banaya har kisi ke liye ❤️

Tera milna hai uss rab ka ishaara maanu ❤️

Mujhko banaya tere jaise hi kisi ke liye ❤️

Kuch toh hai tujhse raabta ❤️

Kuch toh hai tujhse raabta ❤️

Kaise hum jaane hume kya pata

Kuch toh hai tujhse raabta ❤️

Tu humsafar hai, phir kya fikar hai ❤️

Jeene ki wajah hi yahi marna issi ke liye ❤️

Kehte hain khuda ne iss jahan mein sabhi ke liye ❤️

Kisi na kisi ko hai banaya har kisi ke liye ❤️

Meharbaani jaate jaate mujh pe kar gaya ❤️

Guzarta sa lamha ek daaman bhar gaya ❤️

Tere nazara mila, roshan sitaara mila ❤️

Takdeer ki kashtiyon ko, kinara mila ❤️

Sadiyon se tarse hai jaisi zindagi ke liye ❤️

Teri sauhbat mein duaayein hain ussi ke liye ❤️

Tere milna hai uss rab ka ishaara

Maanu mujhko banaya tere hi jaise kisi ke liye ❤️

Kuch toh hai tujhse raabta ❤️

Kuch toh hai tujhse raabta ❤️

Kaise hum jaane hume kya pata

Kuch toh hai tujhse raabta ❤️

Tu humsafar hai, phir kya fikar hai ❤️

Jeene ki wajah hi yahi marna issi ke liye ❤️

Kehte hain khuda ne iss jahan mein sabhi ke liye ❤️

Kisi na kisi ko hai banaya har kisi ke liye ❤️
#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৫

রাত ৩ টা ২০ মিনিট ,

পূর্ণতা কখন থেকে বিছানায় শুয়ে একবার ডান কাতে ঘুমাতে চেষ্টা করছে তো একবার বাম কাতে । একবার মাথা বালিশের নিচে দিয়ে ঘুমাতে চেষ্টা করছে তো আরেকবার উপুর হয়ে । কিন্তু কোনো ভাবেই ঘুম আসছে না ।

মাথার মধ্যে বার বার সেই এক‌ই গান আর এক‌ই ফেস রিয়েক্ট গুলো নাড়া দিচ্ছে ,

“Kuch to hai tujhse raabta ♥️ , ♥️kuch to hai tujhse raabta ”

পূর্ণতা ঘুমাতে ব্যর্থ হয়ে উঠে বসে বিছানা থেকে নেমে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো । আকাশে চাঁদ ও নেই , যে দেখতে দেখতে হয় তো এক সময় ঘুমিয়ে পড়বে ।

পূর্ণতা অসহায়ের মতো আবার রুমে ফিরে এসে বিছানায় বসল । কি করে সময় পার করবে ভেবে না পেয়ে বীর বির করতে লাগলো ,

– ফোনটাও ঐ শাকচুন্নি টা নিয়ে নিয়েছে , ফোন টা থাকলেও তো নিউজ ফিডটা ঘুরে দেখতে পারতাম । ধুর !! ভালো লাগেনা ।

ঐ শাকচুন্নির হবু এমন কেন !! একজন থাকতে আরেকজনের ঘুম নষ্ট করে ??

এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ মনে হলো,

“আরে , আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম । ভাইয়া তো আমার জন্য শুটকি ইয়ে মানে চকলেটস এনেছে । সেগুলো খেতে খেতেই সকাল হয়ে যাবে । ”
এই ভেবে মুচকি হেসে বক্স থেকে চকলেট বের করে খেতে বসলো পূর্ণতা ।

আবরন এক ঘুম দিয়ে মাঝ রাতে দুঃস্বপ্ন দেখে আবার জেগে উঠলো ।

ওর শরীর টা ঘামে পুরো ভিজে গিয়েছে । এসি চলছে তবুও এত ঘাম দেখে এসির রিমোটটা হাতে নিয়ে Temperature ১৭ ডিগ্ৰি করে দিল ।

তারপর কপালের ঘাম মুছে মনে মনে ভাবতে লাগলো ,

– হঠাৎ এমন স্বপ্ন কেন দেখলাম !! ভার্সিটিতে যেখানে সবাই আমাকে ভয় পায় সেখানে পূর্ণতা আমার সাথে এরকম বিহেইভ করছে !! ওকে তো আমার বাসায় দেখলাম !! ও আমাকে দিয়ে ঘর মুছাচ্ছে , কাপড় কাচাচ্ছে আরো কত কি !! এমন ভাবে বলছিল যেন ও আমার “ব‌উ” লাগে , ওর কথা না শুনলে ও এই বাসা থেকে প‌ই প‌ই করে বেরিয়ে যাবে !!

আল্লাহ !! এ কোন পূর্বাভাস ??
নাহ , ওকে এখন থেকেই টাইট দিয়ে রাখতে হবে ।

হঠাৎ এসব কথা চিন্তা করতে করতে নিজেই ভাবতে লাগলো ,

– আমি পূর্ণতা কে নিয়ে এত কেন ভাবছি ?? আর ওকে টাইট দিয়ে আমি কেন রাখতে যাবো !! ধুর , এসব কি চিন্তা করছি হঠাৎ করে ?? না, এখন মাথা ব্যথা করছে ।

নিজের রুম থেকে বের হয়ে আবরন আধিরা আনজুমের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল । দরজায় টোকা দিয়ে ডাকতে লাগল ,

– আম্মু , আম্মু !! দরজা টা খোল !!

২ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে দরজা না খোলায় গলার জোর আরেকটু বাড়িয়ে দিয়ে ডাকলো ,

– আধিরা আনজুম , ও আধিরা আনজুম !! দরজাটা খোল !!

লাইনটা শেষ করতেই আধিরা আনজুম দরজা খুলে ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে বললেন ,

– তুই এত রাতে এভাবে কেন ডাকছিস ? কিছু হয়েছে !

– মাথা ব্যথা করছে । চুল গুলো টেনে দেবে চলো !!
এই বলে মায়ের হাত ধরে টেনে নিজের রুমে নিয়ে গেল আবরন । তারপর মাকে নিজের বিছানায় বসিয়ে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো । আধিরা আনজুম চুল টেনে দিতে দিতে বললেন ,

– আর কত পাগলামি করবি বলতো ? মাঝরাতে কেউ এভাবে মাথা টিপে দিতে রুম থেকে টেনে আনে !!

– আমি আনি । এখন বলো , “বাবা কোথায় ? ”

– তোর বাবা তো চট্টগ্রামের অফিসে গিয়েছে , ঐখানে নাকি নতুন ফার্ম হাউজটা কমপ্লিট হয়ে গিয়েছে । সেটার উদ্বোধন ছিল । তাই আসতে পারে নি ।

– ওওও । আচ্ছা , মা তোমাকে বাবা কিভাবে বিয়ে করেছিল ?

– হঠাৎ এই প্রশ্ন ? আগে তো কত বার বলতে চেয়েছি , তুই তো বলতি যে ‘ এসব জেনে তোর কাজ নেই ‘ । আর আজ নিজে জানতে চাইছিস ?? কাহিনী কি বলতো ?

– আগে তুমি বলো !! বাবার সাথে তোমার কি করে পরিচয় ??

– তোর বাবা শাদমান চৌধুরী বিশাল বড় লোকের ছেলে । তাই তখন ভার্সিটিতে তাকে সবাই তোয়াজ করে চলতো । আমি যখন ভার্সিটিতে প্রথম এডমিশন নিই , তোর বাবা তখন ৪র্থ বর্ষের ছাত্র । আমি যখন ভার্সিটিতে যেতাম , দেখতাম সব মেয়েরা তোর বাবার পিছু পিছু ঘোরে , আর তোর বাবা কাউকে পাত্তা দিত না , খুব ইগো নিয়ে চলতো । তাই আমি জিদ নিয়ে তোর বাবার দিকে ফিরিয়েও তাকাতাম না । কেউ তার বিষয়ে কোনো কথা বলতে শুরু করলেও আমি তাদের এড়িয়ে চলতাম । কারন , আমার কথা হচ্ছে সে তো কাউকে পাত্তা দেয় না , তাহলে তার পিছনে ঘুরে সময় নষ্ট করে কি কোনো লাভ আছে !!

তো হঠাৎ একদিন তোর বাবা তার দলবল কে দিয়ে আমাকে তার রুমে ডেকে পাঠায় । আমি ও নির্ভয়ে সেখানে যাই । যাওয়ার পর সে আমাকে থাকতে বলে বাকি সকলকে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বলে । আমি তবুও মন থেকে সাহস হারাইনি ।

তারপর , সে আমাকে বলল ,

– কি মনে করো নিজেকে ? বিশ্ব সুন্দরী ?? এখানকার সব মেয়েরা আমার জন্য পাগল , আর তুমি আমাকে না দেখার ভান করে হেঁটে চলে যাও !! কি সমস্যা তোমার ?? এত কিসের ইগো !!

আমি দাঁড়িয়ে গিয়ে বললাম ,

– সেইম প্রশ্ন আপনার জন্য আমার !! কিসের এতো ইগো আপনার ! বাবা কোটিপতি বলে সবার মাথা খাবেন নাকি ? বুঝলাম ভার্সিটির সব মেয়েরা আপনার জন্য পাগল , কিন্তু খুঁটিয়ে দেখলে হয় তো বুঝবেন যে সবাই আপনার পাশাপাশি আপনার টাকার জন্য ও পাগল !! সবাইকে নিয়ে গিয়ে পাবনায় ফ্রি ট্রিটমেন্ট এর ব্যবস্থা করুন । আপনার বাবার তো আবার টাকার অভাব নেই !!

আর আপনার মতো বড় লোকদের দিকে আমি ফিরেও তাকাই না ।

এই বলে আমি সেদিন বাসায় চলে আসি ।

এরপর থেকে তোর বাবার মাথা খুলল আর সে কিছুদিন পর থেকে আমাকে ফলো করতে শুরু করল । এতদিন তার পেছনে সবাই ঘুরতো আর এখন সে উল্টো আমার পেছনে ঘুরে । ব্যাপারটা প্রথমে আমার কাছে হাস্যকর মনে হলেও পরে তোর বাবার এই ভার্সিটি থেকে চলে যাওয়ার পরেও যখন দেখতাম সে ভার্সিটির বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকে , তখন বুঝলাম যে সে হয়তো আমার সাথে কথা বলতে চায় । তাই একদিন আগ্ৰহ দেখিয়ে নিজেই গিয়েছিলাম তার সাথে কথা বলতে যে কি সমস্যা ??

সে কি কান্ড জানিস না , তোর বাবার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়েছিল , সে আমার হাত ধরে বলল যে সে আমাকে ভালোবাসে । আমিই নাকি তাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে দিয়েছি , হ্যান ত্যান কত কিছু !!
আমি সেদিন শুধু তার কথা শুনেছিলাম । তাকে কিছুই বলি নি । কিন্তু পরেরদিন সকালে দেখি সে আমার বাড়িতে তার ফ্যামিলি নিয়ে হাজির । পরে তোর খালার কাছে শুনলাম তারা নাকি প্রস্তাব নিয়ে এসেছে তাদের ছেলের জন্য । তারপর আরকি !! করেই নিলাম বিয়েটা , তবে সত্যি বলতে আমি তোর বাবাকে আগের থেকেই ভালোবাসতাম , কিন্তু কখনো তা প্রকাশ করি নি ।

এই বলে আধিরা আনজুম থামলেন । আবরন মুচকি হেসে বলল ,

– মেয়েরা বুঝি এমন‌ই চাপা হয় !!

– হ্যা , হয় । তবে আজকালকার মেয়েরা এমন খুব ক‌ম‌ই হয় ।

– তাই নাকি !! তাহলে তো ……

আধিরা আনজুম চোখ বড় করে বললেন ,

– তাহলে কি ? বল , চুপ করে গেলি যে ?

– আগে বলো , আমি ছেলে হিসেবে কেমন ?

– তুই তো তোর বাবর বিপরীত !! নিজের নামের সাথে কোনোদিন “চৌধুরী” লাগাস নি । সব জায়গায় তোকে শাহরিদ আহনাফ আবরন নামেই চিনে । আর ইগো তো তোর মধ্যে নেই ই , আর সবাইকে ই সাহায্য করিস আবার ভুল করলে শাসন ও করিস !! কিন্তু …

– কিন্তু কি আম্মু ?

– কিন্তু আজ পর্যন্ত কাউকে নিজের মনে জায়গা দিতে পারলি না । মানে সত্যিকার অর্থে ভালোবাসলি না ।

আবরন উঠে বসে বলল ,

– আম্মু , কাউকে ভালোবাসলে কিভাবে বুঝবো যে তাকে আমি ভালোবাসি ?

– কেন ! কাউকে ভালোবাসিস নাকি !!

– সেটাই তো জানতে চাচ্ছি , ভালোবাসার লক্ষ‍ন কি ?

– আমার এক্সপেরিয়েন্স থেকে বলি তোকে ,

ভালোবাসলে সবার প্রথম ফিল হবে সে তোর আশে পাশে থাকলে তোর ভালো লাগে ,না থাকলে তাকে একটু দেখার জন্য মনটা কেমন যেন করবে !
রাতে ঘুম হবে না , মাথার মধ্যে তাকে নিয়ে সব স্মৃতি ঘুরপাক খাবে । ঘুমালেও তাকে স্বপ্নে দেখার সম্ভাবনা ৮০% …. তার ছোট খাটো বিষয়ে নিজের অনিচ্ছায় কেয়ার করা , তাকে কেউ কিছু বললে খারাপ লাগা , তাকে মন খারাপ করতে দেখলে কষ্ট লাগা । তাকে হাসি খুশি দেখলে নিজের স্বস্তি লাগা ইত্যাদি ইত্যাদি । আরো অনেক লক্ষন আছে । ভালোবাসার লক্ষন বলে শেষ করা যাবে না ।

এই বলে আধিরা আনজুম হাসলেন ।

আবরন বলল ,
– ভালোবাসলে মনে হয় মানুষ একটু পাগল পাগল ও হয়ে যায় !!

এই বলে দাঁত কেলিয়ে হাসতে লাগল । আধিরা আনজুম ও হাসলেন । তারপর বললেন , আরেকটু পর আজান দিয়ে দিবে । নামাজ টা পড়ে একবারে ঘুমাস । আমি গেলাম ।

আধিরা আনজুম চলে যেতেই আবরন দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে বিছানায় বসে ভাবলো ,

– তাহলে কি আমার পূর্ণতা কে ভালো লাগে ! যা , ই হোক । ওকে জ্বালাতে ভালোই লেগেছে গত কাল । আরো জ্বালাবো ।

এই ভেবে মুচকি হেসে আরো কিছু ভাবতে লাগল ।

………………………………………………..

সকাল ১০ টা ,

জিব্রান পূর্ণতা কে নিয়ে মিরপুর ১০ এ যাচ্ছে শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে । সেখানে কারাতি তে পূর্ণতা কে আজ ভর্তি করিয়ে দেবে ।

বাইকে করে যেতে ২০-৩০ মিনিটের রাস্তা যদি জ্যাম না থাকে । পূর্ণতা বলল ,

– এত দূরে আসতে হবে প্রতিদিন ??

– দূর কোথায় ! এর চেয়ে কাছে আর কারাতি দোজো নেই ।

সেখানে পৌঁছে খোঁজ নিয়ে দেখলো সপ্তাহে ৬ দিন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় । সকাল ১০টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত আছে , আবার বিকেল ৪টা থেকে ৬ টা পর্যন্ত ও আছে । জিব্রান পূর্ণতার সুবিধা অনুযায়ী ওকে বিকেলের ব্যাচে ভর্তি করিয়ে দিল ।

……………………………………………….

মিরপুর থেকে ফিরে এসে শাওয়ার নিয়ে পূর্ণতা ছাদে গিয়ে জিব্রানের ফোন দিয়ে প্রেনাকে কল দিল ,

– জানিস , আমাকে ভাইয়া কারাতিতে ভর্তি করিয়ে দিয়েছে !!

– ওয়াহ ! তাহলে তো ভালোই হলো !! রাস্তা ঘাটে কেউ ঝামেলা করলে এক ঘুষি মেরে উড়িয়ে দিতে পারবি ।

– কিন্তু আমার তো একা যেতে কেমন কেমন যেন লাগবে ! তুই ও ভর্তি হয়ে যা না !!

– আম্মু জীবনেও রাজি হবে না । বলবে এসব শিখে কাজ নেই । পড়াশোনায় মন দে ।

– কে বলেছে কাজ নেই ? এই যুগে সেল্ফ ডিফেন্স খুব জরুরী ।

– হ্যা , তা তো দেখছি ই । তোর তো বড় ভাই আছে , আর এখন তো হিরোও আছে । তোকে এমনিতেই চোখে চোখে রাখবে !

– ভাই আছে বুঝলাম ! হিরোটা আবার কে !!

– কেন ! জানিস না মনে হয় ?? কাল রাতে হিরো কি সুন্দর হিরোইন এর জন্য গান গাইলো !

এই বলে প্রেনা হিহি করে হাসতে লাগলো !!

– ধুর !! আবার তুই শুরু করলি !! কাল রাতে ঐ লোকটার জ্বালায় ঘুমুতে পারি নি এমনিতেই !! এক রাতে আমার চোখের নিচে কালি পড়ে গিয়েছে ।

– সিরিয়াসলি ?? তার মিনে সামথিং সামথিং হ্যা ??

– নো , নাথিং নাথিং । উনি একটা কুফা !

– বলিস কি কেন ?

– কারন , উনার সাথে ধাক্কা খেয়েই প্রথমদিন পড়ে গিয়েছি , আবার কালকে উনার কথা শুনেই ফুচকা গিলতে পারি নি , আবার কাল রাতে উনার জন্যই ঘুমাতে পারি নি । মানে উনার সাথে দেখা হ‌ওয়ার পর থেকেই একটার পর একটা কুফা লেগেই আছে !! হুহ !!

প্রেনা হাসতে হাসতে শেষ ঐপাশে । পূর্ণতা ওর হাসি শুনে রেগে ফোনটা কেটেই দিল ।

ফোন কান থেকে নামিয়ে পেছনে ঘুরে তাকাতাই দেখল ……………………….

#চলবে ♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here