#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৬
আবরন সকালে ঘুম থেকে জেগে নাস্তা খেয়ে গোসল করে একটা হালকা গোলাপি পাঞ্জাবি , সাথে সাদা চুরিদার পাজামা আর একটা গ্ৰে কালারের শাল গায়ে পেচিয়ে সিল্কি চুল গুলো সেট করে একটা ব্ল্যাক ইউনিক সানগ্লাস পড়ে নিল । তারপর পৌনে এগারোটার দিকে , ফাহিম কে কল করতে করতে গাড়ি গ্যারেজ থেকে বের করতে লাগল । গাড়ি গ্যারেজ থেকে বের করে গাড়ি থেকে নেমে আধিরা আনজুম কে উদ্দেশ্য করে বললেন ,
– আম্মু ! আমি একটু বের হচ্ছি । কাজ আছে । সন্ধ্যায় ফিরব ।
আধিরা আনজুম বললেন ,
– সাবধানে যাস ।
ফাহিমকে ২ বার কল দেওয়ার পর না পেয়ে আবরন তাসিনকে কল দিল । তাসিন ফোন রিসিভ করতেই আবরন বলল ,
– আমার এই মূহুর্তে পূর্ণতার বাসার এড্রেস চাই ।
তাসিন বলল ,
– ও আজিমপুর থাকে । কত নাম্বার বাসা আমি খোঁজ নিয়ে তোকে ম্যাসেজ করছি ।
– ওকে । জলদি কর ।
– হঠাৎ ওর বাসার ঠিকানা কেন চাইছিস বলতো?
– এমনি । কাজ আছে ! তুই এড্রেস সেন্ড কর ।
– ফাইন ।
এই বলে তাসিন কল কেটে দিতেই আবরন ফোনটা পাশের খালি সিটে রেখে ড্রাইভ করতে শুরু করল । গন্তব্য আজিমপুর ।
মিনিট দশেকের মধ্যেই তাসিন এড্রেস আবরনকে সেন্ড করতেই আবরন মুচকি হেসে ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিল ।
………………………………………………..
গাড়ি রোডের এক সাইডে পার্ক করে আবরন এখন দাঁড়িয়ে আছে একটা দোতলা ভবনের সামনে । আবরন নিজের মোবাইলে তাসিনের পাঠানো ম্যাসেজটা দেখে ভাবলো ,
– এড্রেস অনুযায়ী এই বিল্ডিংয়ের কথাই তো বলা হয়েছে । কিন্তু যাবো কি করে !!
এসব ভাবতে ভাবতেই বিল্ডিং টা একবার নিচ থেকে উপর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করছিল , হঠাৎ ছাদের উত্তর দিকের কোনায় চোখ পড়তেই আবরনের বুঝতে বাকি রইল না পূর্ণতা ছাদে দাঁড়িয়ে । তাই মনে মনে খুশি হয়ে ছাদের দিকেই গেল ।
ছাদের দরজা দিয়ে প্রবেশ করতেই দেখল পূর্ণতা নিজের লম্বা চুল গুলো বাতাসে উড়তে দিয়ে কারো সাথে কথা বলায় ব্যস্ত । আবরন ওর আরেকটু কাছে এগিয়ে যেতেই শুনতে পেল পূর্ণতা কাউকে বলছে ,
– উনি একটা কুফা !
– ……………..
– কারন , উনার সাথে ধাক্কা খেয়েই প্রথমদিন পড়ে গিয়েছি , আবার কালকে উনার কথা শুনেই ফুচকা গিলতে পারি নি , আবার কাল রাতে উনার জন্যই ঘুমাতে পারি নি । মানে উনার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকেই একটার পর একটা কুফা লেগেই আছে !! হুহ !!
-…………………………..
কথা শেষ হতেই পূর্ণতা ফোনটা কান থেকে নিচে নামিয়ে পেছনে ঘুরতেই দেখল আবরন রাগি রাগি ফেস করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে ।
পূর্ণতা আবরনকে এখানে দেখে জিহ্বে কামড় দিয়ে আবার পেছনে ফিরে গেল । তারপর একটা ঢোক গিলে মনে মনে ভাবতে শুরু করল ,
– আয়হায় !! এই লোকটা এখানে কি করে এলো !! আমি স্বপ্ন দেখছি না তো ?? একবার কি নিজেকে চিমটি কেটে দেখবো ??
ভাবতে ভাবতে নিজের হাতে নিজেই জোরে চিমটি কাটলো । তারপর বুঝলো আজকে ও শেষ ।
আবরন পূর্ণতা কে এভাবে রিয়েক্ট করতে দেখে বলল ,
– কি ভয় পেলে নাকি !! ভয় তো পাওয়ার কথা না !! আর কি কি যেন বলছিলে , আরেকবার যদি বলতে তাহলে তোমার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ থাকতাম আরকি !!
এইটুকু বলে আবরন থামতেই পূর্ণতা ওর দিকে ভয়ে ভয়ে ঘুরে তাকালো । তারপর বলল ,
– আ আ আপনি এ এখানে কি করছেন ভা ভা ……
পূর্ণতা আবরনকে ‘ভাইয়া’ ডাকতে যাচ্ছিল , তার আগেই আবরন ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল ,
– হয়েছে আর বাকিটা বলতে হবে না । আর আমার জানা মতে তুমি তো তোতলা না , তাহলে এভাবে কেন কথা বলছো !!
আবরনের ধমকের সুরে কথা বলা শুনে পূর্ণতার জান যায় যায় অবস্থা । তারপর ও নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে বলল ,
– আমি বাসায় যাচ্ছি । আপনি চলে যান ।
এই বলে এক প্রকার ছুটেই চলে যেতে নিচ্ছিল পূর্ণতা , কিন্তু তার আগেই আবরন পূর্ণতার হাত ধরে ওকে টান দিয়ে থামিয়ে দিয়ে বলল ,
– সে কি ! প্রথম তোমাদের বাড়িতে এলাম ! আপ্যায়ন করবে না ?? তোমরা কি অতিথি এলে খালি মুখে ফিরিয়ে দাও নাকি ??
আবরনের এমন আচরনে পূর্ণতা কি বলবে ভেবে না পেয়ে বলল ,
– ঠিক আছে , বাসায় চলুন ।
আবরন ঠোঁটে বাকা হাসি দিয়ে বলল ,
– এখানে আরেকটু থাকি ??
আবরনের রিয়েকশন দেখে পূর্ণতার কেমন কেমন যেন লাগছে , তবুও বিষয়টা চাপা দিয়ে বলল ,
– তো থাকুন , আমি গেলাম ।
এই বলে পূর্ণতা চলেই যাচ্ছিল । তখন আবরনও পূর্ণতার পিছু পিছু ছুটে গিয়ে বলল ,
– এই দাঁড়াও , আমিও আসছি ।
দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিং বেল বাজাতেই মিলি রহমান এসে দরজা খুলে দিয়ে দেখলেন পূর্ণতা দাঁড়িয়ে, সাথে একটা ছেলে । পূর্ণতা বলল ,
– আম্মু , তোমার সাথে পরিচয় করিয়ে দিই । উনি হচ্ছেন শাহরিদ আহনাফ আবরন । আমাদের মেডিক্যালের ভিপি ।
আর আবরন ভাইয়া , উনি আমার আম্মু ।
আবরন সালাম দিতেই মিলি রহমান সালাম নিয়ে জিজ্ঞেস করলেন ,
– কেমন আছো বাবা ? এসো ভেতরে এসো । বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি ?
আবরন ভিতরে ঢুকতেই পূর্ণতা পেছন থেকে ভিতরে ঢুকে দৌড়ে নিজের রুমে ঢুকে গেল ।
মিলি রহমান ওকে ড্রয়িং রুমে বসিয়ে বলল ,
– বাবা , তুমি কোন বর্ষে কি বিষয়ে ডাক্তারি পড়ছো ?
– এই তো আন্টি মেডিসিন বিষয়ে ইন্টার্নি করছি বর্তমানে ।
– বাহ , খুব ভালো । তা একা এলে যে , বাবা মা কে নিয়ে আসতে !!
– আম্মু তো বাসায় ব্যস্ত , আর বাবা তো অফিসের কাজে চট্টগ্রাম গিয়েছে ।
– ওও , কি করে তোমার বাবা ??
– বাবা তো চৌধুরী গ্ৰুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক , তাই কাজের সূত্রে অনেক জায়গায় যেতে হয় ।
মিলি রহমান অবাক হয়ে বললেন ,
– সেকি !! মিঃ চৌধুরীর ছেলে তুমি ??
– হ্যা । উত্তেজিত হবেন না আন্টি , আমার মা আমাকে অন্য ভাবে বড় করেছেন তাই আমি চৌধুরীর ছেলে হওয়া নিয়ে গর্ববোধ করি না । আমাকে যেমন দেখছেন আমি তেমনি ।
– মাশাআল্লাহ , আলহামদুলিল্লাহ । আল্লাহ তোমার ভালো করুক । আচ্ছা তুমি বসো , আমি একটু খাবারের ব্যবস্থা করি ।
আবরন হেসে বলল ,
– তা করতে পারেন । আমি নিষেধ করবো না । তবে জিব্রান ভাইয়া কোথায় যদি একটু বলতেন !
– জিব্রানের সাথে আগেই পরিচয় বুঝি ?
– হ্যা , আন্টি ।
– জিব্রান তো ওর রুমে , মনে হয় শাওয়ার নিচ্ছে । আমি পূর্ণ কে বলে দিচ্ছি , ও তোমাকে ঘর ঘুরিয়ে দেখাবে ।
এই বলে মিলি রহমান পূর্ণতা কে ডাক দিল ।
পূর্ণতা নিজের রুমে গিয়ে সবেই শাওয়ার নিবে বলে বাথরুমে ঢুকছিল ।
মিলি রহমানের ডাক শুনে থেমে গিয়ে তার ডাকে সাড়া দিতেই দেখল মিলি রহমান রুমে এসেছে । মিলি রহমান পূর্ণতার কাছে এসে বলল ,
– আবরনকে একটু জিব্রানের রুমে নিয়ে যা তো !
পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল,
– ভাইয়া তো শাওয়ার নিচ্ছে ।
– তুই নিয়ে যা । বের হলে কথা বলবে ।
পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে ,
– আয়হায়, কি এমন কথা বলবেন উনি !! আমি যে উনাকে কুফা বলেছি তা আবার বলে দেবেন না তো !!
– কিরে !! কি এত ভাবছিস ! আমি গেলাম । এখন লাঞ্চ টাইম , ছেলেটাকে খালি মুখে তো আর যেতে দেওয়া যায় না ! তার উপর আবার চৌধুরীর ছেলে এবং সেই সাথে তোদের ভার্সিটির ভিপি ।
পূর্ণতা মিলি রহমানের কথা শুনে যেন ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খেল ।
মিলি রহমান চলে গেলেন রান্না ঘরের দিকে ।
পূর্ণতা বসার ঘরের দিকে ধীর পায়ে হেঁটে গিয়ে দেখল আবরন ফোনে স্ক্রলিং করছে ।
তারপর ওকে কি করে ডাকবে সেই বিষয়ে দাঁড়িয়ে গবেষণা করছিল ঠিক তখনই আবরন মুচকি হেসে বলল ,
– কিছু বলবে ?
পূর্ণতা হকচকিয়ে গিয়ে দেখল আবরন ওর দিকেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । পূর্ণতা বলল ,
– চলুন , ভাইয়ার রুমে । ভাইয়া এতক্ষনে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে ।
আবরন সোফা থেকে উঠে বলল ,
– চল ।
জিব্রানের রুমের দরজা পর্যন্ত গিয়ে পূর্ণতা থামল । আবরন ওর পিছনে ছিল । পূর্ণতা পিছনে ঘুরে তাকাতেই আবরনের থিতুনির সাথে বারি খেল ।
পূর্ণতা কপালে ব্যথা পেয়ে কপাল ডলতে শুরু করল ।
আবরন হেসে পূর্ণতার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল ,
– নিজের দোষে নিজে ব্যথা পেয়েছো । এখন আবার আমাকে “কুফা” বলো না যেন !!
পূর্ণতা গাল ফুলিয়ে সাহস করে বলেই ফেলল ,
– আপনি সত্যিই একটা কুফা ।
এই বলে সেখান থেকে চলে যাচ্ছিল কিন্তু আবরন ওর হাতের ড্যানা ধরে টেনে ধরে চোখ পিট পিট করে বলল ,
– ভাইয়ার দরজা কি আমি নক করবো ! বিষয়টা কেমন দেখায় না ??
পূর্ণতা আবরনের কথা মতো জিব্রানের রুমের দরজায় টোকা দিয়ে বলল ,
– ভাইয়া ! ভাইয়া !
জিব্রান ভেতর থেকে পূর্ণতার গলা শুনে বলল ,
– হ্যাঁ পুচকি , ওয়েট কর । খুলছি ।
আবরন জিব্রানের কথা শুনে দাঁত কেলিয়ে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বলল ,
– তা পুচকি ! তোমার ভাইয়া কি জানেন তার বোন যে বড় হয়ে গিয়েছে ? তাকে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে ?
– হুহ ! আমি বিয়ে করবো না । আগে ভাইয়ার বিয়ে খাবো । আর সব ভাইদের কাছে তার বোন বড় হলেও ছোটই থাকে ।
– তাই নাকি ! যদি ভাইয়ার বিয়ের আগে তোমাকে কেউ তুলে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করে ফেলে !!
পূর্ণতা আর জবাব দিতে পারল না তার আগেই জিব্রান দরজা খুলে ওদের কে বাহিরে দেখে হেসে বলল ,
– আরে , কে এসেছে আমাদের বাসায় ??
আবরন জিব্রানকে বলল ,
– ভাইয়া , আপনার বোন নাকি আপনাকে বিয়ে করিয়ে তারপর নিজে বিয়ে করবে !!
জিব্রান পূর্ণতা কে চেতাতে হেসে বলল ,
– ধুর , আমার বোনকে আমি বিয়ে দিয়ে দেব !
পূর্ণতা ঠোঁট উল্টে বলল ,
– বাহ ! এখনই পর করে দেওয়ার কথা ভাবছো ?
আবরন আর জিব্রান একসাথে হেসে উঠলো ।
– হাসো হাসো আমার উপরেই তো হাসবে !
এই বলে নিজের রুমের দিকে চলে গেল গোসল করবে বলে ।
………………………………………………..
দুপুরে সবাই লাঞ্চ করতে বসেছে । মিলি রহমান নিজে আবরনকে বেরে খাওয়াচ্ছেন । তারপর বললেন ,
– অনেকদিন পর আমাদের বাসায় মেহমান এসেছে !
আবরন বলল ,
– কেন ! ঢাকায় কোনো রিলেটিভ থাকে না ?
জিব্রান বলল ,
– না । আমাদের চৌদ্দ গোষ্ঠীর সবাই ফ্রান্সে স্যাটেলড । শুধু আমার আম্মু ই আমাদের নিয়ে বাংলাদেশ পড়ে আছে । আর নানা নানু অনেক বছর আগে মারা গিয়েছেন । তখন পূর্ণ হয় নি । আমি ছোট ছিলাম । একমাত্র ছোট খালা আছে , সে সিলেট থাকেন । বছরে এক বার সময় করে গিয়ে ঘুরে আসি । আম্মুরা এই দুইবোন ই ।
আবরন বলল ,
– আপনাদেরও কি ফ্রান্সে সেটেলড হওয়ার ইচ্ছা ?
মিলি রহমান বললেন ,
– না । আমার পূর্ণকে ঢাকা মেডিক্যাল এ পড়াবো বলে আমি কোথাও যাই নি , ভবিষ্যতে যাবো কি না জানি না । তবে জিব্রান যাবে ওর বাবার সাথে বিজনেস দেখা শোনা করতে । তবে তার আগে আমরা চাই পূর্ণতা কে এমন একজনের হাতে তুলে দিতে যে ওর পড়াশোনা টা চালিয়ে যেতে দিবে , ওকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে দিবে । ওর পাশে থেকে ভালোবেসে আগলে রাখবে ।
পূর্ণতা খাচ্ছিল , হঠাৎ মায়ের মুখে এমন কথা শুনে খাবার তালুতে উঠে যেতেই কাশি দিতে শুরু করলো । জিব্রান জলদি পানি এগিয়ে দিতেই পূর্ণতা ঢক ঢক করে সব পানি খেয়ে নিল । জিব্রান বলল ,
– রিল্যাক্স !!
পূর্ণতা পানি খেয়ে কান্না করে দিয়ে বলল ,
– বাহ ! সবাই দেখছি আমাকে পর করে দিতে উঠে পড়ে লেগেছো ! আমি আর একটুও খাবো না । তোমরাই খাও ।
এই বলে পূর্ণতা কাদতে কাদতে উঠে চলে গেল ।
জিব্রান বলল,
– যাস না পূর্ণ । কথা শোন !
মিলি রহমান ও ডাকলেন , কিন্তু পূর্ণতা কারো কথায় কান দিল না । নিজের রুমের দরজা ভিতর থেকে লক করে কাদতে শুরু করলো ।
আবরন খাওয়া ছেড়ে উঠে বলল ,
– আপনারা যদি অনুমতি দেন , আমি ওকে আবার এখানে নিয়ে আসতে পারি । কারন ভার্সিটির সিনিয়র হিসেবে ও আমাকে ভয় পায় ।
জিব্রান বলল ,
– দেখো , পারো কিনা !
আবরন হাত টা ধুয়ে পূর্ণতার রুমের সামনে গিয়ে দরজা টোকা দিয়ে বলল ,
– জুনিয়র , তুমি নিশ্চয়ই শুনেছো সিনিয়দের রেস্পেক্ট না করলে আমি তাকে কি কি করতে পারি ! এখানে এখন আমি সিনিয়র, তুমি জুনিয়র । আমার কথা শুনতে তুমি বাধ্য । এই মূহুর্তে রুম থেকে বের হয়ে আবার আগের জায়গায় গিয়ে খেতে বসবে । নাহলে আমি কিন্তু এক্ষনি বরপক্ষ ডেকে তোমার বিয়ে ব্যবস্থা করবো ।
তোমার সামনে দুইটা রাস্তা । ২ মিনিট সময় দিচ্ছি । ভেবে নাও । আমি এখানে আছি ।
পূর্ণতা আবরনের কথা শুনে………….
#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ৭
পূর্ণতা নিজের রুমের দরজা ভেতর থেকে লক করে কাদছিল তখন বাহির থেকে আবরনের গলা শোনা গেল । আবরন ধমকের সুরে বলছে ,
-জুনিয়র , তুমি নিশ্চয়ই শুনেছো সিনিয়দের রেস্পেক্ট না করলে আমি তাকে কি কি করতে পারি ! এখানে এখন আমি সিনিয়র, তুমি জুনিয়র । আমার কথা শুনতে তুমি বাধ্য । এই মূহুর্তে রুম থেকে বের হয়ে আবার আগের জায়গায় গিয়ে খেতে বসবে । নাহলে আমি কিন্তু এক্ষনি বরপক্ষ ডেকে তোমার বিয়ে ব্যবস্থা করবো ।
তোমার সামনে দুইটা রাস্তা । ২ মিনিট সময় দিচ্ছি । ভেবে নাও । আমি এখানে আছি ।
পূর্ণতা আর কোনো রাস্তা না পেয়ে চোখ নাক মুছে নিয়ে অভিমান করে দরজার কাছে গিয়ে দরজায় টোকা দিল আবরনকে আকর্ষন করতে । আবরন টোকার শব্দ শুনে দরজায় কান পাতল । পূর্ণতা আস্তে আস্তে বলল ,
– সিনিয়র , আপনি আসলেই একটা কুফা !! আমার জীবনের অনেক বড় একটা কুফা । আপনার জন্য আজ আমাকে সবাই পর করে দেওয়ার ডিসিশন ও নিয়ে ফেলেছে ।
এই টুকু বলে নাক টেনে হেচকি তুলতে তুলতে আবার বলল ,
– আমি রাগ করলে বা অভিমান করলে এ বাড়ির মানুষগুলো আমাকে কখনো মানাতে আসে নি , কারন তারা জানে আমি নিজেই বেহায়ার মতো আবার একটু পরেই সেধে সেধে কথা বলতে যাবো । আজ আপনি এসেছেন বলে আমি এখন সব অভিমান ঝেড়ে ফেলে ভদ্র মানুষের মতো টেবিলে গিয়ে খেতে বসবো । কারন , আমি চাই না আম্মু আর ভাইয়াকে ছোট করতে । তাদের স্বার্থে তাদের মান রাখতে আমি এখন আপনার কথা শুনবো । কিন্তু আমি কার পর আর কোনোদিন আপনার সামনে পড়তে চাই না । আপনি যেহেতু আমার সিনিয়র আমার উচিত আপনাকে সম্মান করা । সেইভাবে হিসেব করেই আমি চলবো । কিন্তু প্লিজ আপনি আর আমার জীবনে কোনো কুফা নিয়ে আসবেন না ।
পূর্ণতার কথা গুলো কেন যেন আবরনের মনে তীরের মতো গিয়ে লাগছিল । তাই ব্যথা সহ্য করে চুপচাপ শুনে যাচ্ছিল ।
আবরনের সাড়া শব্দ না পেয়ে পূর্ণতা বলল ,
– মি. সিনিয়র আপনি কি শুনেছেন আমি কি বলেছি ?
আবরন মুখে জোরপূর্বক হাসির রেখা টেনে বলল ,
– হুম । এখন বের হও ।
পূর্ণতা দরজা খুলে বের হলো । আবরন ওর দিকে তাকিয়ে দেখলো ফর্সা
নাকটা লাল হয়ে আছে কান্না করার ফলে । আর গালে পানির স্রোত গড়িয়ে যাওয়ার রাস্তা তৈরি হয়েছে । বড় বড় চোখের পাপড়ি গুলো পানির কারনে জমাট বেধে আছে ।
পূর্ণতা আবরনের দিকে এক পলক তাকিয়ে খাওয়ার ঘরে চলে গেল । আবরনও ওর পেছন পেছন গেল ।
পূর্ণতা কে আবার টেবিলে খেতে বসতে দেখে মিলি রহমান আর জিব্রান দুজনের মুখেই হাসির রেখা ফুটে উঠল । জিব্রান আবরনকে বলল ,
– আবরন ! এই প্রথম কেউ পূর্ণতার জিদের কাছে জিতে গেল ।
আবরন বিনয়ের সাথে হেসে বলল ,
– জুনিয়রদের কিভাবে টাইট দিতে হয় তা আমার ভালোই জানা আছে ।
জিব্রান আবরনের কথায় হেসে উঠলো ।
মিলি রহমান বললেন ,
– কাল তো শুক্রবার । তোমাদের কোনো অনুষ্ঠান আছে নাকি ?
– না , আন্টি । শনিবার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । তারপরের সপ্তাহে ক্লাস শুরু সবার ।
– ওও আচ্ছা । তোমাদের বাসা কোথায় বললে না তো ??
– আন্টি আমি ঢাকা মেডিক্যালের সাথেই থাকি । আর এমনিতে উত্তরায় নিজেদের বাড়ি আছে । আর চট্টগ্ৰামেও বাবা নতুন ফার্ম হাউজ বানিয়েছে ।
– উত্তরা কে থাকে এখন ?
– কেউ না , ঐটা একটা ডুপ্লেক্স বাড়ি । বাবা আমার মেডিক্যাল এ যাওয়া আসার দূরত্ব কমাতে এখন যেখানে থাকি ঐ ফ্ল্যাট টা কিনে দিয়েছেন ।
– ওও , বেশ ভালো । পূর্ণর যাওয়া আসায় ও বোধয় সমস্যা হবে । ও তো কোথাও একা যেতে চায় না আর আমি ও দিই না । এত দিন কলেজে ও আর ওর বান্ধবী প্রেনার স্কুটিতে একসাথে যেত , কিন্তু এখন প্রেনার উল্টো এসে ওকে নিয়ে যাওয়া তো সম্ভব হচ্ছে না । আর জিব্রানও প্রতিদিন দিয়ে আসতে পারবে না । কারন ও একটা অফিসে জব করে টাইম পাসের জন্য আর সাথে কিছু ইনকামও হয়ে যায়। কদিন বাদে তো জিব্রান ও চলে যাবে । আমি অনেক টেনশনে আছি জানো ??
পূর্ণতা খেতে খেতে কথা শুনছিল । তারপর খাওয়া শেষ করে উঠে চলে গেল নিজের রুমে । এই টপিক গুলো ওর একদম ভালো লাগছিল না , আর ওর ঠিক সামনেই আবরনকে দেখতে আরো রাগ লাগছিল । তাই জলদি খেয়ে উঠে গেল ।
পূর্ণতা চলে যেতেই আবরন বলল ,
– আন্টি , আপনি চিন্তা করবেন না । আপনি চাইলে আমি পূর্ণতা কে প্রতিদিন আনা নেওয়ার দায়িত্ব টা নিতে পারি । আমার নিজের কার আছে । সময় ও লাগবে না আর ওর একা ও যেতে হবে না ।
জিব্রান বলল ,
– আরে না । তোমার কষ্ট হবে । ওকে কারাতি তে আজকে এডমিশন নিয়ে দিয়েছি । কারাতি শিখে গেলে একা একাই চলতে পারবে ও ।
– কারাতিতে মাত্র জয়েন হয়েছে । এখনি তো আর ডিফেন্স জানবে না । আমার নিজের এক্সপেরিয়েন্স থেকে বলছি , আমি কিন্তু ব্ল্যাক বেল্ট ২ ড্যান করা একজন । ব্ল্যাক বেল্টে আসতেও মিনিমাম আড়াই থেকে তিন বছর লাগে । এই আড়াই তিন বছর কি করে চলবে ও ??
জিব্রান বলল
– তা তো ভাবি নি । তাহলে তো বিষয়টা সত্যিই চিন্তার !
মিলি রহমান বললেন ,
– বাবা , তোমার যদি কষ্ট না হয় তাহলে আমি তোমাকে ওর গার্ডিয়ান অর্থাৎ ভার্সিটিতে সম্পূর্ণ দেখভাল করার দায়িত্ব তোমাকে দিচ্ছি । পূর্ণ খুবই সহজ সরল । ওকে দেখে রেখো ।
মিলি রহমানের কথা শুনে আবরন মনে মনে ভাবছে ,
– মিস . কান্নাপরী । আমার থেকে দূরে যেতে চাইছিলে এখন দেখো তোমার মা ই কেমন তোমাকে ঠেলে আবার আমার কাছেই পাঠাচ্ছে ।
এই ভেবে মুচকি হেসে বলল ,
– আমি ওর সব দায়িত্ব নিব যদি আপনাদের কোনো আপত্তি না থাকে ! আর ওকে কোচিং করতে হবে আর বাসায় ওর বাকি প্রবলেম গুলো আমিই দেখাতে পারবো । ওর ও তো সেইম সাবজেক্ট । আমি ওকে এই বিষয়ে হেল্প করতে এক পায়ে রাজি আছি । এখন আপনাদের সহমত প্রয়োজন ।
জিব্রান বলল ,
– যা ভালো বোঝো করো । কিন্তু ওর রেজাল্ট যেন ভালো আসে আর স্বপ্নও যেন পূরন হয় ।
– তাহলে তো কথাই নেই । ঠিক আছে । এই কয়দিন ঘোরাফেরা করুক , ক্লাস শুরু হলেই আমি আমার সব দায়িত্ব পই পই করে পালন করবো ।(আবরন হেসে বলল)
মিলি রহমান আর জিব্রানও হাসল ।
এরপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই বসার রুমে বসলেন গল্প করতে ।
আবরন বলল ,
– আপনারা খুব ভালো । আমি একা থাকি বাসায় আম্মুকে নিয়ে । বাবা প্রায়ই ব্যস্ততার কারনে বাসায় ফেরেন না । আপনাদের সাথে পরিচিত হতে পেরে ভালো লাগছে । তবে এটা ভাববেন না আমি এমন সবার বাসায় ঘুরে বেড়াই । সবাই আপনাদের মতো না । জিব্রান ভাইয়াকে বড় ভাইয়ের মতো পাশে চাই ।
জিব্রান বললেন ,
– কোনো অসুবিধা নেই । আমার ও একটা ছোট ভাইয়ের খুব দরকার ছিল । যখন ছোট ভাই তুমি তাহলে “তুই” করে বলবো এখন থেকে । আর তুই ও আমাকে “তুমি” করে বলবি ।
আবরন খুশি হয়ে বলল ,
– ঠিক আছে । তুমি যেভাবে বলবে ।
মিলি রহমান ওদের ভাই এর মতো কথা বলা শুনে খুশি হয়ে বললেন ,
– আবরন , তুমি খুব ভালো। এভাবেই এই ছোট্ট পরিবারের পাশে চাই তোমাকে । আমার মেয়েটাকে দেখে রেখো সবসময় ।
– আপনি কোনো চিন্তা করবেন না আন্টি ।
– আচ্ছা , তোমার চাচা , ফুপু , খালা , মামা কোথায় থাকে ?
– আমার বাবারা এক বোন- এক ভাই ।
ফুপি বাবার ছোট । সে উত্তরায় থাকেন । আর খালা আছেন সে তার দুই ছেলে নিয়ে চট্টগ্রাম থাকেন । আর মামা একজন ই । সে তার পরিবার নিয়ে ইংল্যান্ডে স্যাটেলড ।
– বাহ , খুব ভালো । সবাই একটা পজিশনে আছে ।
– হা ।
……………………………………………….
আজ শুক্রবার বলে পূর্ণতা সাত সকালে উঠেছে । শুক্রবার ছুটির দিন বলে সবাই পড়ে পড়ে ঘুমায় কিন্তু পূর্ণতা ঠিক তার উল্টো । সকাল সকাল গোসল করে মায়ের কাছে গিয়ে তার বায়না শুরু করল ,
– আজ আমি প্রেনাদের বাসায় থাকবো সারাদিন । রাতেও থাকবো । কাল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । আমাদেরকে লাল পাড়ের কালো শাড়ি পড়তে বলেছে । আমার এই রং এর শাড়ি নেই । তোমার ও নেই । প্রেনারও নেই । ওর এক খালাতো বোনের নাকি আছে কিন্তু সেটার অবস্থা নাকি বাজে । এখন শাড়ি কিনতে হবে । আমি আর প্রেনা মিরপুর-১১ যাবো শাড়ি কিনতে । তুমি কিন্তু নিষেধ করতে পারবা না আগেই বলে দিচ্ছি ।
মিলি রহমান বললেন ,
– ঠিক আছে । যাবি শাড়ি কিনতে সমস্যা কি ? আমি নিষেধ কেন করবো ? লাগলে কিনবি না ? অবশ্যই কিনবি । কিন্তু তোদের দুই বলদকে তো একা মিরপুর যেতে দেবো না ।
পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,
– কার সাথে যাবো তাহলে ? ভাইয়া তো ওর বন্ধুর বাসায় যাবে । আমি প্রেনার সাথে ওর স্কুটি নিয়ে চলে যাবো । এখন তো বড় হয়েছি তাই না !!
– বড় হয়েছিস শুধু হাতে পায়ে । মাথার ঘিলু তো বাড়ে নি । দাড়া আমি ব্যবস্থা করছি । তবুও একা যেতে দেব না ।
পূর্ণতা গাল ফুলিয়ে বলল ,
– ঠিক আছে করো ব্যবস্থা ।
এই বলে নিজের রুমে চলে গেল ।
মিলি রহমান নিজের রুমে গিয়ে আবরনকে কল দিল ।
আবরন মনের শান্তি তে ঘুমাচ্ছিল । হঠাৎ ফোন বেজে ওঠায় ঘুমু ঘুমু চোখে মোবাইলের দিকে না তাকিয়েই রিসিভ করে কানে দিয়ে বলল ,
– হুম , কে ?
ওপাশ থেকে শোনা গেল,
– হ্যা বাবা , আমি । পূর্ণর মা বলছি ।
এই কথা শুনে আবরনের সব ঘুম পালিয়ে গেল । আবরন উঠে বসে সোজা হয়ে বসে বলল ,
– হ্যা , আন্টি বলুন !
– কাল অনুষ্ঠানে নাকি ওদের লাল পাড়ের কালো শাড়ি পড়তে বলা হয়েছে । ওর আর প্রেনার শাড়ি নেই , এখন সে সাত সকালে বায়না ধরেছে মিরপুর যাবে শাড়ি কিনতে । জিব্রানের নাকি কোথায় বন্ধুদের সাথে কাজ আছে , ও সেখানে যাবে । তুমি কি ওদের একটু নিয়ে যেতে পারবে ?
আবরন বিনয়ের সাথে হেসে বলল ,
– হ্যা , আন্টি । কেন পারবো না !! কখন আসবো ?
– পূর্ণতা আজ নাকি আবার প্রেনাদের বাসায় থাকবে । তুমি ১০ টার পর আসো , ও রেডি হয়ে থাকবে ।
-ওও , আচ্ছা , ঠিক আছে । আপনি চিন্তা করবেন না । আমিই নিয়ে যাবো ।
– আচ্ছা বাবা । তোমার মাকে আমার সালাম দিও । পারলে তাকে সাথে নিয়ে এসো । আমি তো বাসায় একা আজ ।
– আচ্ছা , দেখি আম্মু কি বলে !
– আচ্ছা , আল্লাহ হাফেজ ।
– আল্লাহ হাফেজ ।
আবরন ফোন টা বিছানায় ফেলে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হতে হতে একবারে শাওয়ার নিয়ে নিল । তারপর একটা স্কাই ব্লু কালারের পাঞ্জাবি , সাদা চুরিদার পরে নিল । আজকে সে আর শাল পড়লো না । সিল্কি স্ট্রেইট চকোলেট কালার চুল গুলো সেট করে একটু পারফিউম লাগিয়ে সে ডাইনিং রুমে গিয়ে আধিরা আনজুম কে ডাকতে লাগল ।
– আম্মু , আম্মু ।
আজ আধিরা আনজুম ছেলে তার বাপের মতো নাম ধরে ডাকার আগেই হাজির হলো ।
– হ্যা , বল । এতো সেজে গুজে কোথায় বের হচ্ছিস ?
– আম্মু , তোমাকে একজন সালাম দিয়েছে ।
– ওয়ালাইকুমুসসালাম । সালাম নিলাম । কিন্তু কে দিয়েছে ?
– তা সময় হলে বলবো । এখন একটা ভালো কাজে যাচ্ছি । দোয়া করো ।
– কি এমন ভালো কাজ শুনি ??
– বললাম তো সময় হলে বলবো ।
– মায়ের মন বলে একটা কথা আছে , শুনেছিস কখনো ?
– হ্যা , কেন বলোতো ?
– আমার মন বলছে তুই কাউকে পেয়ে গিয়েছিস , কিন্তু সময়ের অপেক্ষায় আছিস ।
আবরন চোখ বড় বড় করে বলল ,
– তাই নাকি ? আমি তো নিজেও জানতাম না । ঠিক আছে তুমি যখন বলছো বিষয়টা ভেবে দেখবো । এখন জলদি নাস্তা দাও । আমার ক্ষুধা লেগেছে ।
– বস টেবিলে আমি দিচ্ছি ।
আবরন টেবিলে বসে মনে মনে ভাবছে ,
– ( মিস কান্নাপরী , সবাই তো দেখছি এক পায়ে রাজি , সময় যাক আমিও ডাকবো কাজি )
ভাবতে ভাবতে নিজেই হাসছে আবরন ।
আধিরা আনজুম টেবিলে নাস্তা দিতে দিতে বললেন ,
– এত হাসিস না । বেশি হাসি কিন্তু দুঃখের কারন ।
– আম্মু এভাবে বলো না । কোনো দুঃখের আচ আমি আসতে দেবো না । তুমি দেখে নিও ।
– এখন কথা না বলে খা ।
– ওকে ।
আবরন নাস্তা খেয়ে আধিরা আনজুম কে বিদায় জানিয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল । গন্তব্য পূর্ণতাদের বাসা ।
আবরন ড্রাইভিং করতে করতে আয়মান , ফাহিম আর তাসিনকে কল দিল । ওদেরকে ধানমন্ডি ১১ তে কাজ আছে বলে সেখানে চলে যেতে বলল ।
তারপর ফোনটা পাশের খালি সিটে রেখে মনে মনে ভাবতে লাগল ,
– আচ্ছা , পূর্ণতার নাম্বারটা তো নেওয়া হয় নি । আজই নিতে হবে মনে করে ।
ভাবতে ভাবতে আবারো ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিল আবরন ।
………………………………………………..
#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা- #আদ্রিয়া_রাওনাফ
( বোনাস পর্ব )
সময় ১০ টা ১৫ মিনিট ,
পূর্ণতা একটা নেভি ব্লু রং এর লং স্কার্ট এর সাথে সাদা রংয়ের একটা লং টপস পড়েছে । কানে সাদা কানের দুল আর গলায় একটা পার্লের মালা পড়ে নিয়ে লম্বা চুল গুলো পেচিয়ে খোপা করে নিয়ে তাতে সাদা পাথরের একটা খোপার চেইন চারপাশে লাগিয়েছে । সামনের ছোট চুলগুলো কানের পেছনে গুজে দিয়েছে । ঠোঁটে হালকা কালারের একটা লিপস্টিক দিয়েছে । আর একটা নেভি ব্লু আর সাদা শেডের ওরনা গলায় ঝুলিয়েছে ।
রেডি হয়ে মায়ের কাছে গিয়ে বলল ,
– কাকে আসতে বলেছো ? কে নিয়ে যাবে আমাদের ?
– এলেই দেখবি ।
– ঠিক আছে , তোমার ফোনটা একটু দাও । আমি একটু প্রেনাকে কল দিব ।
– কাল থেকে তুই আমার ফোন , জিব্রান এর ফোন দিয়েই কথা বলছিস !! ব্যাপার কি বলতো ? তোর ফোন কোথায় ?
মিলি রহমানের প্রশ্ন শুনে পূর্ণতা কি উত্তর দেবে বুঝে উঠতে পারছে । কি বলবে ভাবতে ভাবতে তারপর বলল ,
– আসলে আমার ফোনে ব্যালেন্স নেই ।
– ওও , আচ্ছা । এই নে ।
পূর্ণতা মিলি রহমানের ফোন নিয়ে প্রেনাকে কল করে বলল ,
– হ্যালো প্রেনা ! আমাকে কে যেন নিতে আসবে । আমি তোর বাসার সামনে গিয়ে আগে তোকে পিক করে নিব , তুই রেডি থাকিস । ভাইয়া নাই , আর আম্মু এত দূরে একা যেতে দিতে রাজি হচ্ছিল না । তাই কাকে যেন আমাদের সাথে পাঠাবে । তুই রেডি হয়ে যা । আমি বের হয়ে কল দিব ।
– ধুর বলদ , তুই আমাকে উল্টো তাহলে এখানে পিক করতে আসবি কেন ? আমি ই একটা রিকশা নিয়ে তোদের বাসায় চলে আসছি । তারপর নাহয় একসাথে যাবো ।
– ও হ্যা , তাইতো । ঠিক আছে । জলদি চলে আয় । আর জানিস একটুর জন্য আম্মুর কাছে ধরাই পড়ে যাচ্ছিলাম । আমার ফোনটা ঐ শাক চুন্নির হাত থেকে যেভাবেই হোক উদ্ধার করতে হবে । আজ তো ব্যালেন্স নেই বলে কাটিয়ে দিয়েছি । জানিস , আরেকটু হলে আমি ভয়ে শেষ ই হয়ে যাচ্ছিলাম ।
– বলিস কি ? আচ্ছা , বাকি ঘটনা যেতে যেতে শুনবো । আমি আসছি । ফোন রাখ ।
– ওকে ।
তারপর ফোনটা কেটে দিতেই হঠাৎ টাইমলাইনে ‘আবরন’ লেখা নামটা চোখে পড়ল । পূর্ণতা চোখ বড় বড় করে তাকাতেই দেখল ফোনে কল আসছে , সেখানেও ‘আবরন’ লেখা । পূর্ণতা ফোনটা গিয়ে মিলি রহমান কে দিয়ে বলল ,
– উনার সাথে কি কথা বলেছো তুমি ?
মিলি রহমান পূর্ণতা কে উত্তর না দিয়ে ফোন রিসিভ করে বলল ,
– হ্যা বাবা !
– আন্টি আমি নিচে আছি ।
– উপরে এসো ।
– না , আপনি ওকে পাঠিয়ে দিন । এখন গেলেই ভালো হবে ।
– আচ্ছা । পাঠাচ্ছি ।
ফোন কেটে দিতেই মিলি রহমান পূর্ণতা কে বলল ,
– নিচে যা , আবরন দাঁড়িয়ে আছে । আর এই নে ৭০০০/- টাকা দিলাম । যতটুকু দরকার হয় খরচ করিস । শাড়ির সাথে ম্যাচিং করে কিছু কিনতে হলে কিনে নিস ।
পূর্ণতা যেন ৪৪০ ভোল্টের শক খেয়ে টাকা গুলো হাতে নিল । তারপর বলল ,
– উনি কেন এসেছেন ?
– ও ই তো তোদের সাথে যাবে ।
– কিন্তু কেন ? ( অসহায়ের মতো ফেস করে )
– তোদের পাহাড়া দিতে । এখন কথা না বলে নিচে যা ।
পূর্ণতা আর কিছু বলার সুযোগ পেল না । তাই ভদ্র মেয়ের মতো জুতো পায়ে দিয়ে হ্যান্ড ব্যাগে টাকা গুলো ভরে নিচে গেল ।
নিচে নামতেই দেখল আবরন স্কাই কালারের পাঞ্জাবী পড়া, চোখে সানগ্লাস , হাতে ঘড়ি , সাদা চুরিদার আর পায়ে লোফার । পাঞ্জাবীর হাতা বরাবরের মতো ফোল্ড করে পড়েছে কিন্তু আজকে একটা জিনিস মিসিং মিসিং মনে হচ্ছে ।
পূর্ণতা ওকে ভালো করে দেখে বুঝলো আবরন আজকে শাল পড়ে নি । আবরন গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে স্ক্রলিং করছিল । পূর্ণতা কে দেখে ওর দিকে তাকাতেই দেখল পূর্ণতা এক ধ্যানে ওকেই খুঁটিয়ে দেখছে ।
আবরন সানগ্লাস পড়া বিধায় পূর্ণতা লক্ষ্য করে নি যে আবরন ও ওকে দেখছে । আবরনের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি এলো পূর্ণতা কে চেতানোর । তাই ঠোঁটে বাকি হাসি দিয়ে বলল ,
– আমি তো জানি , আমাকে দেখলে সবাই দিনে হাজার বার ক্রাশ খায় । তা তুমি কয়বার খেলে ?
পূর্ণতা ভেংচি কেটে বলল ,
– একবার ও না , হুহ । 😒
আবরন ওর কাছে এগিয়ে যেতে যেতে বলল ,
– তাই নাকি ? তাহলে ওভাবে রসগোল্লার মতো চোখ বড় বড় করে আমার দিকে কি দেখছিলে ?
– দেখছিলাম , আপনি দেখতে কাউয়ার মতো কেন ??
আবরন ভ্রু কুচকে বলল ,
– হোয়াট ? এম আই লুকিং লাইক এ “কাউয়া” ?
– হ্যা ।
– তাহলে তুমি “কাউয়ার বউ” ।
– আমি কেন কাউয়ার বউ হবো ? আমি কি কোনো কাউয়াকে বিয়ে করেছি নাকি করবো ?
আবরন দাঁত কেলিয়ে বলল ,
– আমার কেন যেন মনে হচ্ছে , তোমার এক কা কা করা কাউয়ার সাথেই বিয়ে হবে ।
এই বলে হুহা করে হাসতে লাগল ।
পূর্ণতা গাল ফুলিয়ে বিরবির করে আবরনের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করছে । তখনই প্রেনার আগমন ।
প্রেনা রিকশা থেকে নেমে দাঁড়াতেই দেখল পূর্ণতা রাগি রাগি ফেস করে দাঁড়িয়ে আছে আর সামনে বিশাল বড় কারের সামনে একটা ছেলে । ছেলেটা উল্টো পাশে ঘুরে আছে বলে ও দেখতে পাচ্ছিল না ।
তাই পূর্ণতার দিকে এগিয়ে গল । পূর্ণতা প্রেনা কে দেখে সব রাগ ওর ওপর ঝাড়লো ।
– এতক্ষন লাগে আসতে ? কতক্ষন যাবৎ দাঁড়িয়ে আছি । সেই কখন ফোন করে বলেছিস ” আসছি ” । এতক্ষন পর কি করে এলি ? আরো আগে আসার দরকার ছিল তোর ।
প্রেনা বলল ,
– রিল্যাক্স ! এত রেগে যাচ্ছিস কেন ?
আবরন হেসে বলল ,
– ভবিষ্যতবানী শুনে ।
প্রেনা পেছনে ঘুরে তাকাতেই আবরনকে দেখে অবাক হয়ে বলল ,
– আরে , ভাইয়া !! আপনি এখানে ?
– আমি ই তো । কেন ? সমস্যা আছে নাকি ?
– না না , তা থাকবে কেন ?
– তাহলে কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে উঠো ।
– কিন্তু কেন ?
পূর্ণতা বলল ,
– আম্মু উনার সাথে যেতে বলেছে ।
প্রেনা বলল ,
– ও আচ্ছা , তাহলে তো বেশ ভালো ।
পূর্ণতা রেগে গাড়ির পেছনের ডোর খুলতে খুলতে বলল ,
– একটা কথা ও বলবি না , চুপচাপ থাক ।
আবরন বলল ,
– এই যে মিস !! আপনাদের যে কোনো একজনকে সামনে বসতে হবে । কারন আমি তো আপনাদের উবার এর ড্রাইভার না ।
প্রেনা বলল ,
– ভাইয়া , পূর্ণতা সামনে বসুক , আমি ই পেছনে বসছি ।
পূর্ণতা বলল ,
– না , তুই সামনে গিয়ে বস । আমি পারবো না ।
আবরন বুঝলো এখানে একটু কড়া গলায় কথা বলতে হবে , নাহলে পূর্ণতা মানবে না । তাই একটু ধমকের সুরে বলল ,
– এই , তুমি সবসময় এতো ঝামেলা কেন করো ? চুপচাপ সামনে এসে বসো । প্রেনা যাও গিয়ে পেছনে বসো ।
পূর্ণতা রাগ দেখিয়ে সামনে গিয়ে বসলো । প্রেনা মুচকি হেসে পেছনে উঠে বসলো ।
আবরন কারের ডোর লাগিয়ে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে কার স্টার্ট দিল ।
তারপর পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে দেখল ,
ও সিট বেল্ট বাধে নি । তাই বলল ,
– গাড়িতে যে সিট বেল্ট বাধতে হয় জানো না ?
এই বলে নিজেই বেল্ট লাগিয়ে দিল । আবরন ওর এত কাছ থেকে বেল্ট বাধছিল যে ওর পারফিউমের ঘ্রাণে পূর্ণতার রাগ সুরসুর করে উড়ে গেল ।পূর্ণতা আবরনকে দেখছিল । আবরন ওর বেল্ট লাগিয়ে দিয়ে নিজের বেল্ট টা লাগিয়ে গাড়ি ড্রাইভিং শুরু করল । গন্তব্য মিরপুর ১১ । মেইন রোডে উঠেই আবরন গাড়ির ব্লুটুথে দার্শান রাভালের “rabba meher kari” গানটা প্লে করে ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিল । পূর্ণতা গানে মনোযোগ দিতেই মনে হচ্ছিল এই মূহুর্ত্তের জন্য গানের প্রতিটা লাইনই বাস্তব ।
Duavan Mangda
Main Tere Layi Duavan Mangda
Main Jithe Jithe Jaavan Heeriye
Sang Tera Parchavan Mangda
Main Lad Da Rawan
Zamane Naal Lad Da Rawan
Sitaare Mohabbata De
Teri Chunni Utte Jad Da Rawan
Ho Tere Layi Aa Jeeti Baazi
Haar Jaavan Tu Je Raazi
Tere Baajo Mera Bolna
Ho Rabba Mehar Kari Tu Mehar Kari
Mera Ho Jaaye Woh Na Der Kari
Is Janam Mil Jaaye Woh
Usey Agle Janam Mera Pher Kari
Mehar Kari Tu Mehar Kari
Mera Ho Jaaye Woh Na Der Kari
Is Janam Mil Jaaye Woh
Usey Agle Janam Mera Pher Kari
Tu Hi Sahara Mera Kinara Mera
Tu Hi Hai Chann Mera Sitaara Mera
Tu Hi Hai Yaara Mera Guzara Mera
Tu Hi Hai Mera Safar
Tu Sahara Mera Kinara Mera
Tu Hai Chann Mera Sitaara Mera
Tu Hai Yaara Mera Guzara Mera
Tu Hi Hai Mera Safar
Hawaon Ki Awaaz Jaisa Tu
Roohani Kisi Saaz Jaisa Tu
Jo Sunke Khush Ho Jaaye Khuda
Usi Alfaaz Jaisa Tu
Ishq Mujhe Raas Aaya Hai
Jab Se Tu Paas Aaya Hai
Teri Khushboo Se Har Taraf
Naya Ehsaas Aaya Hai
Shayar Toh Hoon Main Waise
Tareef Karun Main Kaise
Alfaaz Mere Kol Na
Ho Rabba Mehar Kari Tu Mehar Kari
Mera Ho Jaaye Woh Na Der Kari
Is Janam Mil Jaaye Woh
Usey Agle Janam Mera Pher Kari
Mehar Kari Tu Mehar Kari
Mera Ho Jaaye Woh Na Der Kari
Is Janam Mil Jaaye Woh
Usey Agle Janam Mera Pher Kari
Ho Rabba Itna Barsa De
Mujhpe Karam
Ho Rabba Mehar Kari
#চলবে ♥️