#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ১২
আবরন পূর্ণতার হাত ধরে ওকে নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করছিল , তাই ফাহিম আর তাসিন ও আবরন পূর্ণতার পেছন পেছন প্রবেশ করতে লাগল ।
পূর্ণতাকে নিয়ে আবরন সোজা দোতলায় গেল । দোতলায় বিশাল বড় স্পেস । আবরন পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে ওকে চোখ দিয়ে ইশারা করে একদম ভিতরে কর্নারে থাকা টেবিলটা দেখালো । পূর্ণতা আবরনের ইশারা অনুযায়ী সেদিকে তাকাতেই লক্ষ্য করল সেখানে একজন কাপল বসা । তবে তারা আননোউন না পূর্ণতার কাছে । পূর্ণতা ভ্রু কুচকে আবরনের দিকে তাকাতেই আবরন ঠোঁটে বাকা হাসি দিয়ে বলল ,
– সারপ্রাইজ !!
– কিভাবে কি আপনারা আমাকে একটু বলবেন ?? মানে আয়মান ভাইয়া আর প্রেনা একসাথে !! আই মিন এর মানে কি দাঁড়াচ্ছে ??
আবরন পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু দুষ্টু ফেস করে বলল ,
– কেন বুঝো না ?? ফাহিম ওকে একটু বুঝিয়ে দে তো !
ফাহিম দাঁত কেলিয়ে বলল ,
– দে আর ইন লাভ !! 😁
পূর্ণতা রেগে মেগে সেদিকে এগিয়ে গিয়ে প্রেনা আয়মানের ঠিক পেছনের সিটে বসল ।
সিটের উচ্চতা বেশি হওয়াতে প্রেনা আয়মান খেয়াল করল না ওকে ।
পূর্ণতার হাব ভাব খারাপ বুঝে আবরন এগিয়ে গেল ঐদিকে । আবরনকে এগোতে দেখে ফাহিম আর তাসিন ও গেল পিছু পিছু ।
সবাই এক টেবিলে বসতেই পূর্ণতা বলল ,
– আপনারা কি করে জানলেন ওরা এখানে আছে ??
আবরন পূর্ণতা কে বলতে শুরু করলো আস্তে আস্তে করে ।
ফ্ল্যাশব্যাক ———-
ঘুম থেকে জেগেই নাস্তার টেবিলে বসে ফাহিম আবরনকে বলল ,
– দোস্ত , আয়মান যে রিলেশনে আছে সেটা কি তুই জানতি ??
আবরন ভ্রু কুচকে বলল ,
– না তো !! কার সাথে ??
– ঐযে পূর্ণতার বেষ্ট ফ্রেন্ড ….. কি যেন নাম !!
তাসিন বলল ,
– প্রেনা নাম !
আবরন অবাক হয়ে বলল ,
– জল এত দূর গড়িয়ে গেল আর আমি টের ই পেলাম না !!
তাসিন বলল ,
– প্রেনা তখন সিক্রেট গ্যালারিতে ঢুকতে চেয়েছিল , ওর নাকি পূর্ণতার সাথে কি কথা ছিল । আমরা ঢুকতে দিই নি , তারপর দেখলাম রাগ দেখিয়ে চলে যাচ্ছিল আর তখন আয়মান ও ওর পেছনে ছুটে যাচ্ছিল ।
আবরন বলল ,
– তাহলে রহস্য উদঘাটন হলো !! পূর্ণতা তো প্রেনার সাথে অভিমান করে আছে । ঐদিন রাতে পূর্ণতা প্রেনাদের বাসায় ছিল , মাঝরাতে নাকি প্রেনাকে কথা বলতে দেখেছে কারো সাথে ! এরপর থেকেই রেগে আছে ।
ফাহিম বলল ,
– তাহলে এখন কি করবি !!
আবরন মুচকি হেসে বলল ,
– শোন তোরা দুইজন মিলে ওদের দুইজনের উপর আজকে সারাদিন খেয়াল রাখ , কোথায় যায় , কি করে সব ডিটেইলস্ আমাকে দিতে থাকবি ।
– ওকে । ( ফাহিম আর তাসিন রাজি হয়ে )
বর্তমান ———-
আবরন বলছে ,
– ফাহিম আর তাসিন আমার কথা মতো ওদের দুইজনকে ফলো করতে করতে এই রেস্টুরেন্টের সামনে এসে পৌঁছায় । তারপর আমাকে জানায় , আর আমি সারপ্রাইজ দিতে তোমাকে নিয়ে আসি ।
পূর্ণতা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে কিছু না বলে ওয়েটারকে ইশারা দিতেই ওয়েটার এসে হাজির হলো ।
– ইয়েস ম্যাম ! কি অর্ডার করতে চাচ্ছেন ?
পূর্ণতা মুচকি হেসে বলল ,
– আমার একটা প্ল্যান আছে !!
আবরন , তাসিন , ফাহিম ওর প্ল্যান শুনে দাঁত কেলিয়ে রাজি হলো ।
পূর্ণতা ওয়েটারকে বলল ,
– আপনি লিখুন !
চারটা নাগা বার্গার , দুইটা হট ডগ , ফ্যামিলি সাইজ বারবিকিউ চিকেন , ফ্রেঞ্চ ফ্রাই , চারটা কোল্ড ড্রিংকস ।
কিছুক্ষণ ওয়েট করতেই একটা একটা করে সব আসতে লাগল ।
আবরন বলল ,
– এক ঘন্টা আগে নাস্তা করেছি সবাই ,এত গুলো খেতে পারবো !!
পূর্ণতা বলল ,
– সেসব চিন্তা করবেন না , খেতে থাকুন , বাকি সব আয়মান ভাইয়া আর প্রেনা খাবে ।
ফাহিম হেসে আস্তে করে বলল ,
– তোমার মাথায় বুদ্ধি আছে !
পূর্ণতা হাসল ।
ওরা খেয়ে দেয়ে ওয়েটারকে বলল ,
– ভাইয়া , বাকি খাবার গুলো আমাদের পেছনের সিটে বসা আপু আর ভাইয়াকে দেন । আমরা একসাথেই । আর বিল টা ও ওরাই দিবে ।
ওয়েটার ওদের কথা মতো কাজ করলো ।
প্রেনা আর আয়মান কথা বলছিল যে কি করে বাকিদের এই বিষয়টা জানাবে যে ওরা রিলেশনে আছে আর হঠাৎ তখন ওয়েটার ওদের টেবিলে এক গাদা খাবারের প্লেট দিতে শুরু করল ।
আয়মান আর প্রেনা অবাক হয়ে তাকালো ।
আয়মান বলল ,
– এক্সকিউজ মি !! এগুলো তো আমরা অর্ডার করি নি ।
– আপনার সাথের গ্ৰুপ অর্ডার করেছিল ।
প্রেনা ভ্রু কুচকে বলল ,
– মানে ?
– ইয়েস ম্যাম । এই নিন বিলের রিসিট ।
বিল দেখে আয়মান অবাক হয়ে বলল ,
– ভাই , আপনার মিসটেইক হচ্ছে !
তখন আবরন উঠে দাঁড়িয়ে বলল ,
– আরে মিসটেইক হবে কেন ? ঠিকই তো আছে । আমরা তো তোরই সাথে ! বিল টা দিয়ে দে ।
আয়মান আর প্রেনা ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খেল । আয়মান বলল ,
– দোস্ত , তুই একা এত কিছু খেয়েছিস !!
তখন ফাহিম আর তাসিন দাঁড়িয়ে বলল ,
– ট্যান ট্যানা !!! আমরাও খেয়েছি !!
পূর্ণতা দাঁড়িয়ে বলল ,
– সাথে আমি ও আছি ।
প্রেনা পূর্ণতা কে দেখে যেন অজ্ঞান হয়ে যাবে এমন অবস্থা । নিজেকে কোনো রকম সামলে আয়মানকে বলল ,
– আমার খারাপ লাগছে । আমি বাড়ি যাবো ।
পূর্ণতা প্রেনার কান মলা দিয়ে বলল ,
– এত তাড়া কিসের ? আগে পই পই করে ডায়রিতে হিসেব উঠিয়ে নিই , তারপর যেও !!
আবরন আয়মানকে বলল ,
– না মানে ! কিভাবে কি ? আমাকে একটু বুঝাবি ?
আয়মান বলল ,
– ওকে , রিল্যাক্স , আমি বলছি ।
……………………………………………….
একটা বড় টেবিলে সবাই গোল হয়ে বসেছে । উদ্দেশ্য প্রেনা – আয়মানের রিলেশনের শুরু টা শোনা এবং কেন ওরা বিষয়টা সবার থেকে গোপন করেছে তা জানা !
আয়মান বলতে শুরু করল ,
– সেদিন নবীন বরণ অনুষ্ঠানে আমি প্রেনাকে প্রথম দেখেছি বিষয়টা এমন না , এর আগেও ওকে অনেকবার ফলো করেছি , অনেকবার কথা ও বলেছি । তখন প্রেনা কলেজে পড়ত । ওকে পছন্দ করতাম , কিন্তু ও কখনো পাত্তা দেয় নি ।
ফাহিম বলল ,
– ওর জন্য তুই অন্য কারো সাথে রিলেশনে যাসনি ?
আয়মান প্রেনার দিকে তাকিয়ে বলল ,
– হুম ।
– তারপর ? ( তাসিন)
– তারপর ওকে অনেক বার বলেছিও যে ভালোবাসতে দোষ কিসে !
ওর একটাই উত্তর ছিল আমার অনেক বড় স্বপ্ন আছে , আমি মেডিক্যাল এ ভর্তি হতে চাই , এসবে আমি জড়াতে চাই না । জাষ্ট লিভ মি ।
কিন্তু কখনো একবারও জানতে চায় নি আমি কিসে পড়ি !!
এরপর একদিন সত্যির মুখোমুখি হতে হলো ওকে , সেটা ছিল নবীন বরণ অনুষ্ঠানের দিন । ঐদিন যখন আবরন আমাকে পূর্ণতার ফুলের সাথে মলম টা দিতে বলে পূর্ণতা কে দেখিয়ে দিচ্ছিল ঠিক তখন ওর পাশে প্রেনাকে বসা দেখে আমি অবাক হই আর খুশিও হই । ঐদিন ওকে ফুলের সাথে একটা ছোট্ট চিরকুট দিয়েছিলাম , সেটা ও তখন পড়ে নি পূর্ণতা দেখবে ভেবে ।
পরে পড়েছিল বাসায় গিয়ে ।
পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,
– কি লেখা ছিল তাতে !
প্রেনা বলল ,
– বাসায় গিয়ে ছোট্ট কাগজটা খুলে দেখি তাতে ফোন নাম্বার দিয়ে নিচে লেখা আমাকে একটা কল দিও , আমি তোমাকে বুঝিয়ে বলতে চাই ।
আয়মান বলল ,
– ও কল দিয়েছিল , আমি পরে ওকে সব বুঝিয়ে বলি যে একই সাথে পড়াশোনা তাহলে রিলেশনে যেতে সমস্যা কি ! বিয়ের ব্যাপারটা নাহয় পরে ভাবি !
প্রেনা বলল ,
– আমি ওর কথায় কি করে যে সায় দিয়েছিলাম , আমি নিজেও জানি না ।
আবরন বলল ,
– তা বিয়ের দাওয়াত কবে পাচ্ছি ?
পূর্ণতা রেগে বলল ,
– এই আপনি জীবনে বিয়ে খান নি ?? এত বিয়ে খাওয়ার শখ কেন ?
– বন্ধুর বিয়ে খাবো না ? আর তোমার ও তো বান্ধবী !!
– না খাবেন না , কেউ ওদের বিয়ে খাবো না , রিলেশন যেভাবে না জানিয়ে শুরু করেছে , বিয়ে ও না জানিয়ে করবে তাতে আমাদের কি !
প্রেনা ঠোঁট ফুলিয়ে বলল ,
– এমন করিস না প্লিজ !! আমার ভুল হয়েছে! মাফ করে দে না ! প্লিজ !!😢
পূর্ণতা কিছু না বলে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রাখল ।
আবরন বলল ,
– ঠিক আছে , তাহলে পূর্ণতার অভিমান ভাঙ্গাতে তোরা বরং জলদি জলদি বিয়ে টা সেড়ে ফেল , দেখবি ওর রাগ সুর সুর করে নেমে যাবে ।
আয়মান পূর্ণতা কে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– হিসেবে তুমি আমার শালিকা তাই না ?? তুমি যদি অভিমান করো তাহলে কিন্তু আমাদের হার্ট ব্রেক করবে । কারন দুইজন দুইজনকে খুব ভালোবাসি তো !! 😓
পূর্ণতাকে উদ্দেশ্য করে এবার সবাই বলল ,
– ফরগিভ দেম !!
পূর্ণতা ভাব নিয়ে বলল ,
– ইটস ওকে । কিন্তু আর কোনোদিন যদি কিছু লুকিয়েছিস তাহলে খবর আছে বলে দিচ্ছি , তখন আর মাফ করবো না , হুহ !
ফাহিম দাঁত কেলিয়ে বলল ,
-তাহলে এই খুশিতে ট্রিটস কবে পাচ্ছি ?
আয়মান বলল ,
– আবার ট্রিটস চাচ্ছিস , আজকে কত টাকা খেয়েছিস হিসাব আছে ?
তাসিন বলল ,
– সেটা তো পূর্ণতা একা খেয়েছে !!
আবরন হাসল ।
পূর্ণতা আয়মানকে বলল ,
– হ্যা , ভাইয়া । আমি খেয়েছি ! উনাদের বরং আরেকদিন ট্রিট দিয়ে দিয়েন ।
প্রেনা অবাক হয়ে বলল ,
– লাইক সিরিয়াসলি ? তুই এত কিছু খেয়েছিস ?
পূর্ণতা বলল ,
– হ্যা , আমিই তো খেয়েছি , বাকিরা সবাই চেয়ে চেয়ে দেখেছে ।
এই বলে সেখান থেকে হেঁটে বেরিয়ে যেতে লাগল , ওকে বেরোতে দেখে আবরন সবাইকে বলল ,
– আমি গেলাম । আমার কাজ আছে ।
আল্লাহ হাফেজ ।
সবাই “আল্লাহ হাফেজ ” বলতেই আবরন কিছুটা দৌড়েই পূর্ণতার পিছু পিছু গেল ।
ওরা চলে যেতেই ফাহিম বলল ,
– এদিকে তোদের জল গড়িয়ে গিয়েছে আর ওদিকে আবরন পূর্ণতার জল গড়িয়েও গড়াচ্ছে না ।
সবাই ওর কথা শুনে হাসল ।
………………………………………………..
আবরন গাড়ি ড্রাইভিং করতে করতে পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে বলল ,
– কেমন ছিল সারপ্রাইজ !
পূর্ণতা বলল ,
– থ্যাংকস !
আবরন ভ্রু কুচকে বলল ,
– আমি কি জিজ্ঞেস করছি আর তুমি কি উত্তর দিচ্ছ !
পূর্ণতা বলল ,
– ওদের খুব মানিয়েছে তাই না ?
আবরন বলল ,
– হ্যা ।
– আচ্ছা , ওরা বিষয়টা না লুকালে হয়তো আমরা আজকের মজাটা পেতাম না তাই না ?
আবরন হেসে বলল ,
– তুমি তো আয়মান কে সেই বাঁশ দিয়েছো !!
পূর্ণতা হাসল ।
আবরন ওর দিকে একনজর তাকিয়ে আবার ড্রাইভিং মনোযোগ দিয়ে বলল ,
– তোমার কোনো সিক্রেট রিলেশন আছে নাকি ?
পূর্ণতা বলল ,
– উহু ।
– কেন ? কাউকে ভালোবেসে তাকে বিয়ে করে সুখি হতে চাও না ?
পূর্ণতা বলল ,
– হ্যা চাই , কিন্তু আমি বিয়ের আগে কাউকে ভালোবাসতে চাই না ।
– কেন ?
– কারন বিয়ের আগে ভালোবাসা টা আজকাল সিম্পল , পছন্দের কাউকে মনে মনে রেখে তাকে যদি বিয়ের পর ভালোবাসতে পারি তাহলে সেটা হবে ইউনিক ।
আবরন বলল ,
– চিন্তা ভাবনা ভালো । তা কেমন ছেলে পছন্দ ?
পূর্ণতা বলল ,
– কোনো পছন্দ নেই , যে ভাগ্যে আছে তাকেই আলহামদুলিল্লাহ বলে মেনে নেব ।
– তুমি এই যুগের মেয়ে ??
– না , আমি তো প্রাচীন যুগের । বাই দ্য ওয়ে , আমরা এখন কোথায় যাচ্ছি ?
আবরন বলল ,
– সারপ্রাইইইইইজ !!
পূর্ণতা হাসল ।
…………….…………………………………..
আবরন পূর্ণতাকে একটা বাসার গেইটের সামনে নামিয়ে বলল ,
– ওয়েট , আমি গাড়িটা পার্ক করে নিই ।
পূর্ণতা মাথা নেড়ে চারপাশটা দেখতে লাগল ।
আবরন গাড়ি পার্ক করে আসতেই পূর্ণতা বলল ,
– এটা কাদের বাসা ?
আবরন বলল ,
– গেলেই দেখতে পাবে ।
এই বলে পূর্ণতার গলায় পেচানো ওরনাটা ঘাড়ের উপরে থেকে নিয়ে ওর মাথা ঢেকে দিল ।
পূর্ণতা ওর আচরনে বিষম খেয়ে বলল ,
– এটা কেন পড়ালেন ?
– কারন , এখন তোমাকে দেখতে পারফেক্ট লাগছে ।
এই বলে ওর হাত ধরে নিয়ে গেল দোতলায় ।
দরজায় বেল দিতেই পূর্ণতা স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়িয়ে আবরনকে বলল ,
– কি যে সারপ্রাইজ দেবেন আল্লাহ জানে !
আবরন হেসে আবার কলিং বেল বাজাতেই আধিরা আনজুম এসে দরজা খুলে দাঁড়াতেই পূর্ণতা আবরনের দিকে একবার তাকিয়ে আবার আধিরা আনজুমের দিকে তাকিয়ে বলল ,
– আসসালামু আলাইকুম ।
আধিরা আনজুম বললেন ,
– ওয়ালাইকুমুসসালাম আম্মু । এসো এসো ভেতরে এসো ।
পূর্ণতা ভেতরে যেতে যেতে আবরনের দিকে তাকিয়ে ইশারা করতেই আবরন ব্যাপারটা বুঝে আধিরা আনজুমকে জড়িয়ে ধরে বলল ,
– এটা আমার আম্মুজান ।
আধিরা আনজুম হেসে বললেন ,
– আমার পাগল ছেলে । যা ফ্রেশ হয়ে নে ।
আবরন বলল ,
– যাচ্ছি ।
তারপর পূর্ণতা কে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– তুমি আম্মুর সাথে কথা বলো আমি আসছি । আর ভয় পেয়ো না ।
আধিরা আনজুম বললেন ,
– ভয় পাবে কেন ? আমি কি ভুত না পেত্মী ?
পূর্ণতা হাসল ।
আবরন বলল ,
– না ,ও আবার একটু ভীতু ।
পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে হাসি দিয়ে মনে মনে একশ একটা গালি দিল ।
আবরন বিষয়টা বুঝে দাঁত কেলিয়ে হেসে ফ্রেশ হতে নিজের রুমে চলে গেল ।
আধিরা আনজুম পূর্ণতা কে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– এসো আমরা কথা বলি ।
পূর্ণতাকে আধিরা আনজুম নিজের রুমে নিয়ে গিয়ে বসালেন ।
– তোমার বাসায় কে কে আছে আম্মু ?
পূর্ণতা হালকা হেসে উত্তর দিল ,
– আম্মু আর ভাইয়া । আর বাবা ফ্রান্স এ থাকে । ভাইয়া ও চলে যাবে কয়েকমাস পর ।
– আহারে , বাসায় তো তাহলে তোমরা মা – মেয়ে থাকবে । মাঝে মাঝে এসো মাকে নিয়ে , তাহলে ভালো লাগবে ।
পূর্ণতা মাথা নেড়ে বলল ,
– আপনিও যাবেন ।
আধিরা আনজুম হেসে বলল ,
– মেডিক্যাল কেমন লাগছে ?
– ভালোই ।
– এখন ভালো লাগবে নতুন নতুন তো ! কয়দিন বাদেই যখন পড়া লেখার চাপ বাড়বে তখন আর ভালো লাগবে না ।
পূর্ণতা বলল ,
– স্বপ্ন অনেক বড় , তা বাস্তবায়ন করতে হলে তো একটু কষ্ট করতেই হবে ।
– তা অবশ্য ঠিক । পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াবে তাহলেই নিজের পরিচয় থাকবে ।
– হুম ।
আবরন ফ্রেশ হয়ে একটা ট্রাউজার আর টি শার্ট পড়ে আধিরা আনজুমকে ডাকতে লাগল ,
– আম্মু , আম্মু !!
আধিরা আনজুম পূর্ণতার সাথে কথা বলতে বলতে ছেলের ডাক শুনে পূর্ণতা কে বলল ,
– দেখো , আমি সাড়া না দিলে ও এখন কি করবে ?
পূর্ণতা ভ্রু কুচকে এক গাল হেসে আবরন ওর মাকে কি বলে ডাকবে তা শুনতে অধির আগ্ৰহে বসে রইল ।
আবরন আধিরা আনজুমের সাড়া না পেয়ে ডাকল ,
– আধিরা আনজুম , ওও আধিরা আনজুম ।
আধিরা আনজুম হেসে পূর্ণতা কে বলল ,
– দেখেছো ? ছেলে এখন তার বাবার মতো ডাকছে !!
পূর্ণতা হাসল ।
আবরন ওদের দুইজনকে খুঁজে পাচ্ছিল না তখন আধিরা আনজুমের গলা শোনা গেল ,
– আমি আমার রুমে আছি । এখানে আয় ।
আবরন আধিরা আনজুমের রুমে প্রবেশ করতেই পূর্ণতা আবরনকে দেখে খুবই অবাক হলো । কারনটা হচ্ছে এই প্রথম ওকে পাঞ্জাবি পাজামার বাহিরে অন্য কিছু পড়তে দেখলো ।
পূর্ণতা কে ওভাবে তাকাতে দেখে আবরন ওর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়ে আধিরা আনজুমকে বলল ,
– আম্মু জানো ! আমাদের আয়মান প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে ।
– বলিস কি ?? কার সাথে ?
– এই যে পূর্ণর বান্ধবীর সাথে , প্রেনা ওর নাম ।
– বাহ , তা তুই কি জীবনে প্রেম করবি না , নাকি ডিরেক্ট বিয়ে করে বউ বাড়ি আনবি ??
আবরন পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে আবার আধিরা আনজুমের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল ,
– না , তাকে মনে মনে ভালোবেসে যাবো কিন্তু তা বিয়ে করে তারপর প্রকাশ করবো ।
আধিরা আনজুম হেসে বললেন ,
– তুই বিয়ে করবি বুড়ো বয়সে !
– আরে না ! এম বি বি এস টা করেই বিয়ে করে ফেলবো । তারপর ডিগ্ৰি নিতে বাহিরে যাবো । সেটা পরের ব্যাপার ।
………………………………………………..
দুপুরে লাঞ্চ টাইমে আধিরা আনজুম পূর্ণতা আর আবরনকে খাবার টেবিলে বসিয়ে খাবার আনতে রান্নাঘরে গেলেন । তখন পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে বলল ,
– আমার ক্ষুধা নেই , কত কিছু খেয়েছি । এখন পেট ভরা ।
– তো আমার কি ? তুমি খেয়েছো কেন ? এখন আম্মু তো তোমাকে না খাইয়ে ছাড়বে না !!
পূর্ণতা ঠোঁট উল্টিয়ে আবরনের দিকে তাকালো , আবরন বলল ,
– ওকে , দেখছি কি করা যায় ?
আধিরা আনজুম পূর্ণতা কে খাবার বেড়ে দিতেই আবরন আধিরা আনজুম কে আলাদা ভাবে ডেকে কানে কানে বলল ,
– আম্মু ,তোমার ঘরের হবু বৌ আবার নিজের হাতে খায় না । তুমি বরং ওকে আর আমাকে এক প্লেটে দাও , আমি ওকে খাইয়ে দিচ্ছি ।
আধিরা আনজুম বললেন ,
– বিয়ে করে বৌ কে নিজের হাতে খাওয়াস , এখন আমি খাইয়ে দিচ্ছি !
আবরন বলল ,
– আম্মু , এমন করো না । তুমি খেয়ে নাও নিজে , আমি ওকে খাইয়ে দিচ্ছি ।
– আমার সামনে বসে খাওয়াবি নাকি ! ও তো লজ্জায় খাবে না ।
– তা অবশ্য ঠিক । আমি তাহলে ওকে আমার রুমে নিয়ে গিয়ে খাইয়ে দিই । তুমি টিভি দেখতে দেখতে খেয়ে নাও 😜
আধিরা আনজুম ছেলের কাধে চাপড় মেরে বললেন ,
– তবে রে !! তুই ওকে এখানে বসেই খাইয়ে দে , আমি ড্রয়িং রুমে টিভি দেখতে দেখতে খেয়ে নিচ্ছি ।
– ওকে , ডিল ।
………………………………………………..
আবরন এক প্লেট খাবার নিয়ে চেয়ার টেনে পূর্ণতার পাশে বসতে বসতে বলল ,
– অনেক কষ্টে ম্যানেজ করেছি । বলেছি তুমি কেউ খাইয়ে না দিলে খাও না !
পূর্ণতা রাগি রাগি ভাব নিয়ে আবরনকে ফিস ফিস করে বলল ,
– আপনি তখন থেকে আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলছেন ! তখন বলেছেন আমি নাকি ভীতু , এখন আবার বলেছেন নিজের হাতে খেতে জানি না !
আবরন হেসে বলল ,
– এখন আমি তোমাকে অল্প খাইয়ে দিব ,
আবরন পুরোটা বলে শেষ করার আগেই পূর্ণতা বলে উঠল ,
– আর নিজে বেশি খাবেন ??
আবরন বলল ,
– হ্যা ।
– দেখুন , আগেই বলছি মুখে মেখে খাওয়াবেন না , ভাইয়া সব সময় এভাবে খাওয়ায় আমার মেজাজ গরম হয়ে যায় ।
আবরন খাবার নলা করতে করতে বলল ,
– তারমানে বাসায় নিজের হাতে খাও না ?? এটা সত্যি দাড়ালো ?
– না , মাঝে মাঝে আরকি ।
আবরন কথা বলতে বলতে ইচ্ছা করে পূর্ণতার মুখ মাখিয়ে নলা মুখে দিল ।
পূর্ণতা কাদো কাদো ফেস করে খাবার মুখে নিয়ে বলল ,
– অ্যাএএএএএ !! 😭 আমার সাথেই এমন করেন কেন ??
আবরন হাসতে লাগল । 😂#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ১৩
কারাতি ক্লাস শেষ করে আবরন পূর্ণতা কে নিয়ে পূর্ণতাদের বাসায় ফিরছে । পূর্ণতা অনেক বেশি টায়ার্ড , কারন কারাতি বিগিনারদের জন্য এক্সারসাইজ গুলো কঠিন হয়ে থাকে । আর পূর্ণতার আজ প্রথমদিন ছিল । ওর হাত পা এখন প্রচুর ব্যথা করছে । এমনকি মাথাও ব্যথা করছে । পূর্ণতা গাড়ির সিটে হেলান দিয়ে চুপচাপ চোখ বন্ধ করে আছে । আবরন ওর দিকে এক বার আড়চোখে দেখে তারপর বলল ,
– খুব বেশি খারাপ লাগছে ??
পূর্ণতা মাথা নেড়ে হ্যা জানালো ।
আবরন বলল ,
– প্রথম দিন তো তাই একটু খারাপ লাগছে । রেগুলার প্র্যাকটিস করলে তখন আর খারাপ লাগবে না ।
পূর্ণতা চোখ বন্ধ রেখেই বলল ,
– আমাদের ক্লাস শুরু হয়ে গেলে কারাতিতে প্রতিদিন যাওয়া টা আমার জন্য কঠিন হয়ে যাবে মনে হচ্ছে !!
আবরন বলল ,
– তাহলে তুমি সেনসেই ( জাপানি ভাষায় শিক্ষক এর ফর্ম ) এর সাথে কথা বলে বিষয়টা ক্লিয়ার করে নিও ।
পূর্ণতা চোখ খুলে আবরনের দিকে তাকিয়ে বলল ,
– প্রথম গেলাম আর এখনই সমস্যার কথা জানাবো ? বিষয়টা খারাপ দেখাবে না ??
আবরন বলল ,
– ওকে , আমি বলে দিব সেনসেই কে । তুমি চিন্তা করো না , কারন ক্লাস শুরু হয়ে গেলে অনেক চাপ পড়বে । তবে বিকেলের দিকে ঝামেলা সেড়ে আমি তোমাকে প্র্যাকটিস এ হেল্প করতে পারবো ।
পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,
– সেটা কিভাবে ?
– তুমি বোধয় জানো না আমিও কারাতি ডিফেন্স এ যতটুকু প্রয়োজন তা জানি !
পূর্ণতা কিছুটা ভাব নিয়ে বলল ,
– বাহ ! ভালো তো ! তবে আমার আপনার হেল্পের দরকার নেই ।
আবরন বলল ,
– যেমন তোমার ইচ্ছা !!
বাসার গেইটে পূর্ণতা কে নামিয়ে দিয়ে আবরন বলল ,
– বাসায় গিয়ে আন্টিকে বলো আমার জরুরি কাজ আছে , তাই উপরে যেতে পারি নি ।
পূর্ণতা বলল ,
– আচ্ছা ।
আবরন আর কিছু না বলে গাড়ি ঘুরিয়ে চলে গেল ।
পূর্ণতা আবরনের এমন রিয়েক্ট দেখে মনে মনে ভাবলো ,
– অন্যসময় তো গাড়ি থেকে নামিয়েও পেছন থেকে ১৪ টা ডাক দেয় । আজকে হঠাৎ কি হলো ??
এসব ভাবতে ভাবতেই উপরে গিয়ে কলিং বেল চাপতেই মিলি রহমান দরজা খুলল । পূর্ণতা ভিতরে গিয়ে নিজের রুমে গিয়ে ফ্রেশ হতে লাগল ।
………………………………………………
আবরন বাসায় পৌঁছে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিং বেল বাজাতেই আধিরা আনজুম দরজা খুলে ছেলের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালেন । আবরন জোড়পূর্বক হেসে মায়ের কাধে হাত রেখে বলল ,
– চিন্তা করো না ।
এরই মধ্য আধিরা আনজুমের পেছন থেকে জল এসে আবরনকে দেখেই এক্সাইটেড হয়ে বলল ,
– তুমি এসেছো ??
তারপর কাছে এগিয়ে আধিরা আনজুম কে ক্রস করে আবরনের কাছে এগিয়ে এসে বলল ,
– তুমি জানো আমি সেই কখন এসেছি , তোমার জন্য অপেক্ষা করতে করতে বোর হয়ে যাচ্ছিলাম !!
আধিরা আনজুম ছেলের দিকে তাকিয়ে চলে গেল ।
আবরন জলকে বলল ,
– জল আমি খুব টায়ার্ড । আমাকে ভেতরে যেতে দাও । পরে কথা বলছি ।
জল আবরনের গালে হাত রেখে বলল ,
– ওকে , যাও । তুমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও ।
আবরন জলদি জলদি করে ভেতরে ঢুকে নিজের রুমে চলে গেল ।
আবরন মুখে পানির ছিটা দিতে দিতে নিজেকে একবার আয়নায় দেখে নিয়ে মনে মনে বলল ,
– সরি , পূর্ণ ! আসলে তোমাকে কারাতি ক্লাসে ঢুকিয়ে দিয়ে আমি যখন গ্যালারিতে বসা ছিলাম তখন আম্মু কল দিয়ে বলেছিল বাসায় আমার ফুপি এসেছে , আর জলকেও হোস্টেলে গিয়ে নাকি সাথে করে বাসায় নিয়ে এসেছে । তুমি তো জানো না জল আমাদের বাসায় এলে কি কি করে !! তাই আমার মুড অফ থাকায় তোমার সাথে তখন ঐরকম বিহেইভ করেছি । জানি না যে তোমার এতে কিছু যায় আসে কিনা , কিন্তু আমার খুব গিল্টি ফিল হচ্ছে ।
এসব কথা নিজের মনে রেখেই আবরন ফ্রেশ হয়ে বাথরুম থেকে বের হতেই দেখল জল ওর খাটে বসে আছে ।
আবরন জলের দিকে তাকিয়ে দেখল
জল একটা রেড টি শার্ট আর ব্ল্যাক জিনস্ পড়ে পায়ের ওপর পা তুলে মোবাইলে স্ক্রলিং করছে ।
আবরন বরাবরের মতোই ওকে ইগনোর করে রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছিল তখনই জল ওর হাত ধরে ওকে আটকিয়ে বলল ,
– কোথায় যাচ্ছো ?
আবরন জলের থেকে নিজের হাত টা ছাড়িয়ে বলল ,
– ফুপির সাথে দেখা করতে !
জল আবরনের বাহু হাত ধরে পেচিয়ে ধরতে ধরতে বলল ,
– চলো , আমিও যাবো তোমার সাথে !
আবরন কিছু বলতে পারলো না । মনে মনে নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে গেল গেষ্ট রুমের দিকে ।
– ফুপি , কেমন আছো ?
শাকিলা ইয়াসমিন নিজেদের কাপড় চোপড় ব্যাগ থেকে বের করছিলেন । আবরনের গলা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে শাকিলা ইয়াসমিন কিছুটা ভাব নিয়ে কাপড় গুছিয়ে আলমারিতে রাখতে রাখতে বললেন ,
– তা জেনে আর কি করবি ?? জীবনে তো ফোন দিয়ে একটা খোঁজ নেস না ?
আবরন বলল ,
– তুমি তো জানো ই আমি কি পরিমাণে বিজি থাকি !! আমি তো কারো খোঁজ রাখারই সময় পাই না !!
– হ্যাঁ তা পারবি কেন ?? পরের মেয়েকে নিয়ে তো ভালোই হাত ধরে ঘুরতে পারিস !
আবরন ভ্রু কুচকে বলল ,
– কি বলছো এসব ফুপি ??
– হ্যা , এখন তো সত্যি কথা বললে গায়ে লাগবেই !!
আবরন জলের দিকে রাগি রাগি চোখে তাকাতেই জল শাকিলা ইয়াসমিনকে উদ্দেশ্য করে বলল ,
– আম্মুউউউ !! তুমি আবরনকে এভাবে কেন বলছো ?? ওর কি খারাপ লাগে না ??
শাকিলা ইয়াসমিন জলকে ধমক দিয়ে বলল ,
– তুই থাম !! তেলে মাথায় তেল দিস না !! ডাক্তারি পড়ে একদম উল্টিয়ে ফেলছে আর মেয়েদের হাত ধরে , তাকে গাড়িতে উঠিয়ে ঘুরে বেড়ানো !! এই উনার ব্যস্ততা , যত্তসব !
আবরন রেগে কিছু না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল আধিরা আনজুমের রুমে । জলও ওর পেছন পেছন যাচ্ছিল , কিন্তু আবরন আধিরা আনজুমের রুমে ঢুকেই ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে দিল যার কারনে জল ভেতরে ঢুকতে পারলো না ।
আবরনের এমন আচরনে আধিরা আনজুম ভয় পেয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন ,
– কিরে ? কি হয়েছে ?
আবরন আধিরা আনজুমের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললেন ,
– এসব কি হচ্ছে আম্মু ?
– কি হয়েছে বলবি তো !!
আবরন আধিরা আনজুমকে ওর সাথে ওর ফুপির হওয়া কথোপকথন সব খুলে বলল । আধিরা আনজুম সব শুনে বলল ,
– তোর বাবা আসলে ব্যাপার টা খোলাসা হবে !! এর আগ পর্যন্ত চুপ চাপ থাক ।।
– বাবা কখন আসবে ?
– রাতে ।
আবরন বলল ,
– কি যেন হতে যাচ্ছে !! আমার মাথা ব্যথা করছে । তুমি জানো , এই কারনে আজকে আমি পূর্ণর সাথেও ঠিক বিহেইভ করি নি , মাথার মধ্যে তুমি কল দেওয়ার পর থেকে শুধু একটা চিন্তাই ঘুর ঘুর করছে , কোন ঝড়ের পূর্বাভাস যেন আসতে চলেছে !!
আধিরা আনজুম ছেলের কাধে হাত রেখে বললেন ,
– তোর বাবা তোর পাশে না থাকলেও আমি আছি তোর পাশে । তুই চিন্তা করিস না ।
আবরন মাথা ঠান্ডা করে আধিরা আনজুমের হাত ধরে বলল ,
– আম্মু , সত্যি করে বলবে !! পূর্ণতা কে তোমার কেমন লেগেছে ??
– খুব ভদ্র । একদম সাদা মাটা । তোর জন্য পারফেক্ট । আমি সব সময় আল্লাহর কাছে তোর জন্য এমন একটা বউ ই চেয়েছি । দেখ , আল্লাহ আমার কথা ফিরিয়ে দেন নি । কারন , আমি তো মা , আমি তো মনে থেকে চেয়েছি । আমার দোয়া তাই কবুল হয়েছে ।
আবরন হেসে বলল ,
– এখনো বউ হয় নি আম্মু !!
আধিরা আনজুম হেসে বলল ,
– হতে কতক্ষন ??
মা – ছেলে একসাথে হাসতে লাগল ।
……………………………………………..
সন্ধ্যা ৭:৩০ টা ,
পূর্ণতা মিলি রহমানের রুমে গিয়ে মিলি রহমান কে জিজ্ঞেস করলো ,
– আম্মু , ভাইয়া কোথায় ?
– কোথায় যেন কাজে গিয়েছে !
– কখন আসবে জানো কিছু ??
– বলেছে তো সন্ধ্যায় চলে আসবে । কেন , কোনো দরকার ?
– না , এমনি । একা একা ভালো লাগছে না । ভাইয়া থাকলে অন্তত ঝগড়া করে সময় কাটাতে পারতাম !
মিলি রহমান হেসে বললেন ,
– যা , তেলের বোতল টা নিয়ে আয় , তোর চুলটা ম্যাসেজ করে দিই ।
পূর্ণতা বলল ,
– আসলেই , মাথাটা ব্যথা করছে । দাঁড়াও নিয়ে আসি ।
মিলি রহমান পূর্ণতার চুলের গোড়ায় গোড়ায় তেল ম্যাসেজ করে দিতে দিতে বলল ,
– এখন জিব্রান আছে বলে ওর সাথে ঝগড়া করিস । চলে গেলে কি করবি ?
পূর্ণতার এই কথা শুনে মন খারাপ হয়ে গেল । তারপর বলল ,
– বাবার সাথে কথা বলে দেখবো আমি !! ভাইয়া না গেলে কি এমন হবে ?
– লাভ নেই ।
এর মধ্যেই কলিং বেল বেজে উঠলো । পূর্ণতার বুঝতে বাকি রইল না জিব্রান এসেছে । দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলতেই জিব্রান বলল ,
– কিরে , পুচকি ! কারাতি ক্লাসে গিয়েছিলি ?
– হা , আগে ভেতরে এসো । ফ্রেশ হয়ে নাও তারপর কথা বলছি ।
জিব্রান ভিতরে ঢুকে বলল ,
– আচ্ছা ।
রাতে ডিনারের পর জিব্রান পূর্ণতার রুমে গিয়ে বলল ,
– একটা খবর আছে !
পূর্ণতা বলল ,
-কি খবর ?
জিব্রান পূর্ণতার বিছানায় বসে বলল ,
– আমার জুলাই মাসে ফ্লাইট । ফ্রান্সের ভিসা হয়ে গিয়েছে । আর বাবা সব কাগজ রেডি করে ফেলেছে । আমার এদিকের কাগজও সব রেডি ।
পূর্ণতার আবারো মন খারাপ হয়ে গেল ।
জিব্রান বলল ,
– ভেবেছি কোথায় তুই খুশি হবি !! উল্টো মন খারাপ করছিস !!
– এমনিতেই সারাদিন একা থাকি , যখন তুমি থাকবে না তখন তো আমি আরো একা হয়ে যাবো !
– একা কেন হবি ! বিয়ে করবি , হাজবেন্ড ওয়াইফ একসাথে পড়াশোনা করবি !
– তারমানে কি তুমি এই ৫ মাসের মধ্যে যাওয়ার আগে আমাকে সত্যিই বিয়ে দিয়ে যাবে ??
– তা ই ভেবেছি । তবে একটা কথা বল !আমাকে তো বিশ্বাস করিস তাই না ?
পূর্ণতা বলল ,
– হুম ।
– তাহলে ভরসা রাখ , আমি যা করবো তোর ভালোর জন্যই ।
পূর্ণতার চোখ গড়িয়ে এক দুই ফোঁটা জল নিচে পড়ল ।
জিব্রান বলল ,
– কাদিস না ।
পূর্ণতা জিব্রানকে জড়িয়ে ধরে কান্নার বেগ বাড়িয়ে দিল ।
মিলি রহমানও দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে ভাই বোনের কথোপকথন শুনে চোখের জল আটকে রাখতে না পেরে নিজের রুমে ছুটে গেল একটু মন খুলে কাদবে বলে ।
………………………………………………
রাতে ডিনার শেষে শাদমান চৌধুরী বাসায় উপস্থিত সবাইকে ড্রয়িং রুমে ডাকলেন বিশেষ জরুরি কিছু কথা বলতে ।
শাকিলা ইয়াসমিন , জল সোফায় বসলেন শাদমান চৌধুরীর পাশে । আধিরা আনজুম আর আবরন বসল অপর পাশের সোফায় ।
শাদমান চৌধুরী বলতে শুরু করলেন ,
– আগামি কাল আমাদের উত্তরার বাংলোতে আমার জল মামনির জন্মদিন বড় করে উদযাপন করা হবে ।
জল খুশি হয়ে শাদমান চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরে বলল ,
– থ্যাংকস মামা ।
– মাই প্লেজার মামনি । আর তোমার জন্য আমি অনেক বড় সারপ্রাইজ রেখেছি , কাল যথা সময়ে পেয়ে যাবে ।
আর সবাই ব্যাগ গুছিয়ে নাও । কাল সকালে নাস্তা খেয়ে আমরা রওনা হবো । অনেক অনেক কাজ বাকি । তবে সবাইকে ইনভাইটেশন এর কাজ আমি আরো আগেই সেড়ে ফেলেছি ।
আবরন বলল ,
– কিন্তু বাবা , আমার তো কাল কাজ আছে ।
শাদমান চৌধুরী বললেন ,
– যত কাজই থাকুক , কাল তুমি কোথ্থাও যাবে না । এটাই আমার লাষ্ট এন্ড ফাইনাল ডিসিশন । আমি আর কোনো মন্তব্য শুনতে আগ্ৰহী না । যার যার ব্যাগ গুছিয়ে ফেলো ।
এই বলে শাদমান চৌধুরী নিজের রুমে চলে গেলেন । আবরনও আধিরা আনজুমের দিকে এক পলক দেখে রেগে চলে গেল । আর এদিকে শাকিলা ইয়াসমিন আধিরা আনজুমকে বলল ,
– ভাবি , আমার মেয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে কিন্তু কোনো কিছুর অভাব চাই না । তুমি একটু সব দিকটা সামাল দিও কেমন ?
আর তোমার ছেলেকে বলো যেন আমার মেয়ের সাথে কালকের দিনটা থাকে । আমি কালকের দিনটা অন্তত আমার মেয়েটার মুখে হাসি দেখতে চাই ।
জল ও আধিরা আনজুমের দিকে হেসে তাকালো ।
আধিরা আনজুম মুখে জোড়পূর্বক হাসির রেখা টেনে বলল,
– জলকে তো আজ পর্যন্ত কখনো কাদতে দেখলাম না শাকিলা !! তুমি যেভাবে বলছো , আমি তো মনে করেছি তোমার মেয়ে বুঝি প্রতিদিনই কাদে তাই কালকের দিনটা তুমি ওর মুখে হাসি দেখতে চাও ।
এই বলে আধিরা আনজুম নিজের ঘরের দিকে চলে গেলেন ।
শাকিলা ইয়াসমিন গাল ফুলিয়ে মেয়ের হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজেদের রুমের দিকে গেলেন ।
……………………………………………..
রাতে শুয়ে শুয়ে পূর্ণতা নীরবে চোখের জল ফেলছে , ওর কষ্টে ঘুম আসছে না । জিব্রানের বলা কথা গুলো বার বার ওর মনে নাড়া দিচ্ছে ।
এদিকে আবরন শাদমান চৌধুরীর কথা কোনো ভাবেই মেনে নিতে পারছে না । তার এত কঠোরতা আবরনকে বার বার দুশ্চিন্তায় ফেলে দিচ্ছে । ওর বার বার মনে হচ্ছে , কাল কোনো না কোনো অঘটন ঘটতে যাচ্ছে ।
#চলবে ♥️