ভালোবাসি বলেই তো পর্ব -১০+১১

#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ১০

মেডিক্যাল এর পার্কিং লর্ডে গাড়ি পার্ক করে আবরন গাড়ি থেকে নেমে পূর্ণতা কে হাত ধরে নামালো । পূর্ণতার হাত আবরন এভাবে ধরায় ও অনেকটা ইতস্তত বোধ করছে । তারপর মনে মনে ভাবল ,

– এমনিতে তো সাহস করে কত কথা উনাকে বলি , কিন্তু উনি আমার খানিকটা কাছাকাছি থাকলে আমার অন্য রকম অনুভূতি হয় , আমার ভিতরটা কাপাতে থাকে । কেন ? কেন এমন হয় ?

আবরন ওর হাত ধরে হেঁটে হেঁটে মেডিক্যাল এর গেইট থেকে ১০ পা দূরে থাকতেই হাত ছেড়ে দিয়ে বলল ,

– আমি জানি , তোমার ভয় লাগছে ! এত ভয় পেয়ো না , এই ভয় কিভাবে ভাঙ্গাতে হয় সেই ট্রেনিং টা একদিন সময় বুঝে দিয়ে দিব …. মিস কান্নাপরী ।

এই বলে আবরন হেঁটে সামনে এগিয়ে যেতেই ফাহিম , আয়মান আর তাসিন এসে ওর উপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল । আর ভার্সিটির মেয়েরা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে আর যেন নতুন করে ক্রাশ খাচ্ছে ।

পূর্ণতা কিছুক্ষণ চুপচাপ সেখানে দাঁড়িয়েই আবরনের বলা কথা গুলো ভাবছিল । তখন‌ই জল এসে ওকে পেছন থেকে ডেকে বলল ,

– পূর্ণতা জামান !!

পূর্ণতা পেছনে ফিরে ভ্রু কুচকে তাকালো ।
জল ৩য় বর্ষের ছাত্রী বলে ওর সিলেক্টেড কালার সবুজ । সবুজের সাথে হলুদের মিশ্রনে শাড়ি পড়ে পূর্ণতার দিকে এক গাল হেসে জল মুড দেখিয়ে বলল ,

– ভালোই তো দেখছি হাত করে ফেলেছো আবরনকে । তা কি পড়া পানি খাইয়েছো আমাকে যদি বলতে আমিও একটু ট্রাই করতাম ।

পূর্ণতা কিছু না বলে ওকে ইগনোর করে চলে যাচ্ছিল কিন্তু জল পেছন থেকে ওকে বলল ,

– তোমার চরিত্র এতো নগন্য তা তো জানা হয়ে গেল !! এখনো ক্লাস শুরু হয় নি আর এর মধ্যেই আবরনের পার্সোনাল কারে তোমার জায়গা হয়ে গেল ?? ছি ছি ছি !! শেইম অন ইউ । তুমি বরং আর এই ভার্সিটিতে না এসে রাস্তায় গিয়ে নিজের সৌন্দর্য দেখিয়ে ঘুরে বেড়াও । কারন এটা পড়াশোনার জায়গা , তোমার মতো মেয়েদের জায়গা এই মেডিক্যাল এ নেই । এখন আমি একা বলছি , যখন ভার্সিটি ওপেন হবে তখন সবাই বলবে ।

এই বলে জল চলে গেল ।

পূর্ণতা এতক্ষন চুপচাপ দাঁড়িয়ে শুনছিল কিন্তু হজম করতে পারছিল না তখন ওর পাশে প্রেনা এসে দাঁড়িয়ে কাধে হাত রেখে বলল ,

– তুই এভাবে আমাকে রেখে চলে এলি যে ?? কার সাথে এসেছিস ?

পূর্ণতা কাধ থেকে প্রেনার হাত নামিয়ে দিয়ে বলল ,

– ইচ্ছা , তাই একা এসেছি ।

এই বলে গেইটে প্রবেশ করতেই দেখল আজকে অনেক জাক জমকপূর্ণ ভাবে সাজ সজ্জা করা হয়েছে ক্যাম্পাসের ।

আজকের স্টেজ টা ও সেই কৃষ্ণচূড়া গাছ টার নিচে করা হয়েছে , তবে আজকে নাচ গান থাকায় স্টেজ আরো অনেক বড় করা হয়েছে ।

পূর্ণতা দাঁড়িয়ে পুরো ক্যাম্পাস টা দেখার চেষ্টা করছিল , কিন্তু এত বড় ক্যাম্পাসের সাজ সজ্জা কি আর এক জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখা যায় ?

এসব ভেবে মন খারাপ করে চারপাশের মানুষজন দেখতে মনোযোগ দিল পূর্ণতা । বিশেষ করে বেশির ভাগ মেয়েরা ই এত সাজা সেজেছে যে সবার থেকে নিজেকে খুব নগন্য মনে হচ্ছিল পূর্ণতার । অনুষ্ঠান এখনো শুরু হয় নি বলে পূর্ণতা গ্যালারির দিকে যাচ্ছিল এক জায়গায় বসবে বলে । ভিতরে যেতেই দেখল একদম সামনের ডান কোনায় সব কালো লাল পরিধানকারীরা বসেছে । পূর্ণতা সেদিকে এগিয়ে গিয়ে বসতেই কিছু মেয়ে ওকে দেখে বলল ,

– বাহ , তোমার শাড়িটা তো খুব সুন্দর ।

আরেকজন বলল ,

– হ্যা , অনেক ইউনিক । খেয়াল করে দেখো সবাই শুধু লাল কালো রং এর শাড়ি পড়েছে , কিন্তু তোমার শাড়িতে সোনালি কাজ ও আছে । অনেক সুন্দর লাগছে তোমাকে ।

– আমরা এত সেজেও আমাদের সুন্দর লাগছে না ।

পূর্ণতা কি উত্তর দিবে ভেবে না পেয়ে বলল ,

– এভাবে বলো না , তোমাদের সুন্দর লাগছে ।

ওরা হেসে বলল ,

– নতুন কিনেছো নাকি আগের‌ই ছিল শাড়িটা ??

পূর্ণতা উত্তর দেওয়ার আগেই মাইকে কথা বলে উঠল আবরন ।

ওর কন্ঠস্বর শুনেই সবাই ওর দিকে মনোযোগ দিতে শুরু করল ।

আবরন বলল ,

– আর অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে ই আমাদের অনুষ্ঠান শুরু হতে যাচ্ছে , সবাই সবার আসন গ্ৰহন করুন । কেউ গ্যালারিতে হাঁটাহাঁটি না করে যার যার আসন গ্ৰহন করুন , ধন্যবাদ ।

এই বলে আবরন স্টেজ থেকে নামতে নামতে এক পলক পূর্ণতার দিকে তাকিয়ে এক গাল হাসল ।পূর্ণতা আবরনকে খেয়াল করে মনে মনে ভাবছে ,

– আপনি কি শুধু আমার সাথেই এত কথা বলেন ?? আর কারো সাথে কি কথা বলেন নি ?? আপনি কি জানেন আপনার জন্য আমাকে কত কথা শুনতে হয় ??

এখন থেকে আপনাকে এড়িয়ে চলবো , হুহ ।

এসব ভাবতেই হঠাৎ ফোন থেকে টুং টাং করে অনেক গুলো ম্যাসেজ টিউন ভেসে আসতে লাগল ।

পূর্ণতা ব্যাগ থেকে ফোনটা বের করতেই আগের মতো without lock এর অপশনে ফোন খোলার চেষ্টা করতেই ফোনে password চাইলো ।
পূর্ণতা কিছুটা বিরক্ত হয়ে কি বোর্ডে “kauwa” টাইপ করতেই লক খুলে গেল । তারপর নটিফিকেশন বার এ যেতেই দেখল “Abaran” লেখা নামে whatsapp এ ম্যাসেজ এসেছে । ম্যাসেজে ক্লিক করে ভিতরে ঢুকতেই দেখল ,

– মিস. কাউয়্যার ব‌উ । তোমার তো সাহস কম ।

– তাই সাহসিকতা বাড়াতে আমি তোমার নাম গানের লিষ্টে দিয়ে দিয়েছি ।

– আয়মানকে পাঠাচ্ছি , ও তোমাকে আনতে যাচ্ছে। চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মতো চলে এসো ।

ম্যাসেজ পড়ে শেষ করতে না করতেই আয়মান গিয়ে পূর্ণতার সামনে হাজির ।

পূর্ণতা বলল ,

– লাইক সিরিয়াসলি ? আমাকে যাচাই বাছাই না করে কি করে গানে নাম দিয়ে দিল !!

আয়মান দাঁত কেলিয়ে বলল ,

– এই ক্ষমতা আমাদের আবরন রাখে । জাষ্ট বাঁ হাতের খেলা । এখন চলো ।

পূর্ণতা গাল ফুলিয়ে আয়মানের সাথে গেল।

প্রেনা পূর্ণতার দুই লাইন পেছনে বসেছিল । পূর্ণতা কে আয়মানের সাথে
যেতে দেখে নিজেও জায়গা থেকে উঠে সেদিকে গেল ।

………………………………………………..

আবরন স্টেজের পেছনের সিক্রেট গ্যালারিতে একটা চেয়ারে বসে যারা আজকের অনুষ্ঠানে অংশগ্ৰহন করবে তাদের সাথে কথা বলছিল ।

এই গ্যালারিটা শুধু মাত্র যারা অনুষ্ঠানে পার্টিসিপেইট করবে তাদের জন্য তৈরি । সবাই তৈরি হচ্ছে অংশগ্রহণ এর জন্য ।

আয়মান পূর্ণতা কে গ্যালারিতে নিয়ে গিয়েই আবরন কে বলল ,

– আমার কাজ শেষ , আমি গেলাম । আমার ঐ দিকটায় কাজ আছে ।

আবরন বলল ,

– যা ।

পূর্ণতা চুপচাপ গিয়ে আবরনের থেকে ২-৩ হাত দূরে দাঁড়িয়ে বলল ,

– এসবের মানে কি ?

আবরন বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল ,

– এখন থেকে সাহস না করলে যখন ডাক্তার হবে তখন বড় বড় কনফারেন্সে স্টেজে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিতে হবে , তখন কি করবে ?? এখন থেকেই অভ্যাস করো বুঝলে !!

পূর্ণতা কাদো কাদো ফেস করে বলল ,

– কিন্তু আমি তো গান গাইতে জানি না ।

– হয়েছে , তোমাকে বলেছি না আমার সাথে মিথ্যা বলবে না , তাহলে শাস্তি পেতে হবে । শাস্তি তো পরে আমি দিবোই কিন্তু তুমি কি জানো জিব্রান ভাইয়া ও এখানে এসেছে শুধুমাত্র তুমি গানে পার্টসিপেইট করবে বলে ।

পূর্ণতা ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খেয়ে বলল ,

– মানে !!

আবরন দাঁত কেলিয়ে বলল ,

– ভাইয়া ই তো বলল তোমার গানের গলা ভালো , তাই আমিও নাম দিয়ে দিলাম ।

পূর্ণতা কপালে হাত দিয়ে বলল ,

– হায়রে , আমি তো ইংলিশ গান পারি ।
বাংলা গান তো পারি না !!

এই বলে আবার নিজেই জিব্হ কেটে বলল ,

– ইয়েমানে , এখন কি হবে !!

আবরন বলল ,

– বাংলা গান জানো না , তুমি বাংলাদেশের নাগরিক !!

পূর্ণতা বলল ,

– সব আপনার দোষ !! আমাকে জিজ্ঞেসও করেন নি !! এখন আপনিই ব্যবস্থা করবেন !

– ওকে ফাইন , তোমাকে ইংলিশ গান গাওয়ার ব্যবস্থা ই করে দিচ্ছি ।

পূর্ণতা মনে মনে ভাবছে ,

– ধুর , ভেবেছি বাংলা গান না পারলে বুঝি আমার নাম কেটে দেবে । এ তো দেখছি নাছোরবান্দা 🤦এখন কি হবে !!

আবরন বলল ,

– এখন আবার কি মতলব আটছো ??

পূর্ণতা জোড়পূর্বক হেসে বলল ,

– ইয়ে মানে !! বাংলা গান পারি না , কিন্তু হিন্দি গান পারি । সেটাতে মেল ফিমেল দুটো ভার্সন ই আছে । আমি একা গাইলে তো চলবে না ।

আবরন ঠোঁটে বাকা হাসি দিয়ে বলল ,

– আমি আছি না মেল ভার্সন গাইতে । প্রবলেম নেই , গিটারে সুর টা ও আমি তুলবো ।

গানের নাম কি বলো ?

পূর্ণতা গানের নাম বলতেই আবরন বলল ,

– এই গান আমার অনেক পছন্দের । ওকে রেডি থেকো ।

পূর্ণতা বলল ,

– আপনি গাইবেন আমার সাথে গান ?

আবরন কিছুটা ধমকের সুরে বলল ,

– অন্য কারো সাথে গাওয়ার ইচ্ছা আছে নাকি ??

পূর্ণতা বলল ,

– না মানে !

আবরন ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল ,

– এসব কথা বাদ । এদিকে এসো কয়েকবার প্র‍্যাকটিস করি ।

(At the same time)

প্রেনা সিক্রেট গ্যালারিতে প্রবেশ করতে যেতেই ফাহিম আর তাসিন ওকে বাধা দিল । প্রেনা বলল ,

– আমি পূর্ণতার সাথে দেখা করবো !

তাসিন বলল ,

– আমাদের আউট কাউকে ঢুকতে দেওয়ার পার্মিশন নেই । সরি !

এর‌ই মধ্যে আয়মান সেখানে উপস্থিত । প্রেনাকে দেখে বলল ,

– কোনো সমস্যা ?

প্রেনা কিছু না বলে রাগ করে সেখান থেকে চলে গেল । ওকে এভাবে চলে যেতে দেখে আয়মান ও ওর পেছন পেছন গেল । ফাহিম আর তাসিন হা করে ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে র‌ইল । তারপর ফাহিম বলল ,

– কেইস টা কি বলতো ?

তাসিন বলল ,

– প‌ই প‌ই করে গবেষণা করে দেখতে হবে ।

– ঐ দিকে আবরন পূর্ণতার পেছনে লেগেছে আর এই দিকে দেখছি হরতালেও ভিতরে ভিতরে টেম্পু চলছে ।

– তাই তো দেখছি ।

………………………………………………

১২:৩০ মিনিটে অনুষ্ঠান শুরু হয়েছে । আজকের উপস্থিত বক্তৃতা দিয়েছে ভার্সিটির ৪র্থ বর্ষের একজন ছাত্রী । আবরন পার্টিসিপেইটর বলে আজ এই দায়িত্ব থেকে মুক্ত ছিল । প্রায় ২ টা পর্যন্ত বক্তৃতা চলার পর লাঞ্চ ব্রেকে সবাই লাঞ্চ করে অপেক্ষা করছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হ‌ওয়ার জন্য ।

পূর্ণতা আর আবরন লাষ্ট সিরিয়ালে । প্রথমেই যেহেতু গান দিয়ে শুরু হবে তাই আবরন সবাইকে সারপ্রাইজ‌ড্ করতে শেষে নামটা রেখেছে । এতে সবাই মজা ও পাবে ।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হতেই যেন গ্যালারি গরম হয়ে উঠল সকলের হৈ চৈ তে । প্রথমে যেমন খুশি তেমন সাজো এবং মডেলিং এর পর্ব শুরু হয়েছে।
এর পর একে একে সবার গান গাওয়ার পালা শেষ হতে হতে সন্ধ‍্যা নেমে গেল । সবার গান শেষ হতেই উপস্থিত বক্তা বক্তব্য দিল যে ,

– এখন রয়েছে সবার জন্য একটা বড় সারপ্রাইজ !! আমাদের সর্বশেষ গানের পার্টিসিপেইটর যে তার নামটা আমি বলছি না !! তার নামটা বললে ভুল হবে , কারন গান গাইবে দুইজন অর্থাৎ তাদের নামটা বলছি না । আমি তাদের কে অনুরোধ করবো যেন তারা স্টেজে চলে আসে আর স্টেজের লাইট গুলো অফ করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে । লাইট অফ প্লিজ ।

সবাই হৈ চৈ বন্ধ করে অধীর আগ্ৰহ নিয়ে অপেক্ষা করছে । স্টেজের সব লাইট অফ হতেই স্টেজে সেই ফাকে আবরন আর পূর্ণতা প্রবেশ করল । আবরন পূর্ণতা কে স্টেজে উঠার আগেই বলেছে ,

– আমি তোমার সাথে আছি । ভয় পেয়ো না প্লিজ । নিজের উপর ভরসা রেখো । দরকার হলে সামনে তাকিয়ো না , আমার দিকে দেখো তাহলে ভয় লাগবে না ।

পূর্ণতা শুধু মাথা নেড়েছিল ।

গ্যালারিতে বসা সবাই দাঁড়িয়ে আছে স্টেজে প্রবেশরত দুটি ছায়ার মুখোমুখি হতে । জিব্রান ও তাদের মধ্যে ছিল । ওর জানা ছিল যে এখন আবরন আর পূর্ণতার পালা , তাই ইচ্ছে করে পেছন থেকে উঠে একদম সামনে গিয়ে সেকেন্ড মাইকটা হাতে নিয়ে সবাইকে বলল ,

– সবার ফোনের ফ্লাশ লাইট অন করুন ।

সবাই হৈ চৈ করে একসাথে অন্ধকারে ফ্লাশ লাইট অন করতেই গিটারের হালকা টিউনের সাথে একটা অতি পরিচিত কন্ঠ ভেসে আসতে লাগল ,

Rehna tu pal pal dil ke paas
Judi rahe tujhse haar ek sans ….

এরপরেই একটা মেয়ে কন্ঠ ভেসে আসতে লাগল ,

Khud pe pehle na itna yaqeen mujhko ho paya
Mushqil si ghadiyan asaan huyi ab jo tu aaya

আলোতে সবাই আবরন আর পূর্ণতা কে জুটি গান গাইতে দেখে এক শব্দে হৈ চৈ করে উঠল ।

Ik baat kahun tujhse
Tu paas hai jo mere

Seene se tere sar ko laga ke
Sunti main rahun naam apna
Seene se tere sar ko laga ke
Sunti main rahun naam apna

Oh likh di tere naa’ jindadi zaaniye
Bas rehna tere naal ve zuriye
Rehna tu pal pal dil ke paas
Judi rahe tujhse har ik saans

Seene se tere sar ko laga ke
Sunta main rahun naam apna
Ho naam apna

Naal tere ik ghar main sochaan
Baari kholaan te chann dikh jaave
Akkhaan’ch beetan raatan saariyan
Je mann laage te akh na laage

Pyaar hi odhein te pyaar hi khaana
Vich koi aave te pyaar hi aana
Duniya de vich assi duniya ton door
Hunn naal tere mera har sapna

Seene se tere sar ko lagaa ke
Sunta main rahun naam apna o…

Teri ungliyon se aasmaan pe kheechun ek lambi laqeer
Aadha tera aadha mera iss jahaan mein hum do ameer

Koi nazar na aaye mainu
Tu duniya ton wakhri ho gayi
Uthaan tainu takkda jaawan
Tu hi meri naukri ho gayi (x2)

Dooriyan ek pal bhi na gawaara ho
Chal ghoome duniya phir sang awaara ho

Seene se tere sar ko laga ke
Sunti main rahun naam apna
Seene se tere sar ko laga ke
Sunti main rahun naam apna

Rehna tu pal pal dil ke paas
Judi rahe tujhse har ek saans
#ভালোবাসি_বলেই_তো ♥️
লেখিকা – #আদ্রিয়া_রাওনাফ
পর্ব – ১১

রাত ১২:৩০ টা ,

পূর্ণতার ঘুম আসছে না কিছুতেই । বার বার শুধু আজকের ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো মাথায় ঘুর ঘুর করছে । চোখ বন্ধ করতেই বার বার সেই এক‌ই অনুভূতি ছবির মতো ভেসে উঠছে ।

স্টেজে গান গাওয়ার প্রথম এক্সপেরিয়েন্স যে এতটা রোমাঞ্চকর হবে তা পূর্ণতা ভাবতেই পারে নি ।

পুরোটা গান ই পূর্ণতা আবরনের কথা মতো ওর দিকে তাকিয়েই গেয়েছে ।

সবার এত হৈ চৈ আর অন্ধকারে ফ্লাস লাইটের আলো সেই মূহুর্তটাকে আরো বেশি সুন্দর করেছে ।

গান গেয়ে স্টেজ থেকে নামতেই আবরন ওকে বলেছিল ,

– গানের প্রথম লাইন গুলো কিন্তু আজকের মূহুর্ত্তের জন্য সত্যি ছিল ।

পূর্ণতা শুধু হেসেছিল । জিব্রান তখন আবরনকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলেছিল এই প্রথম আমার বোনটাকে ম্যান্দা মার্কা মনে হয় নি । থ্যাংকস টু ইউ ।

আবরন তখন বলেছিল ,

– তুমি চাইলে আমি ওকে ফুল ফিল ট্রেনিং দিতে রাজি আছি ।

– হ‍্যা , কেন চাইবো না !! একমাত্র তুই ই পারবি ওকে অল ইন ওয়ান বানাতে । আমার বিশ্বাস আছে । আমি চলে গেলে ওকে দেখে রাখিস , আম্মু তো একা একা সব সামলাতে পারবে না রে ।

আবরন বলেছিল ,

– তুমি চিন্তা করো না ভাইয়া । আমি সব সামলে নেব ।

পূর্ণতা এসব কথা ই শুয়ে শুয়ে ভাবছিল । তারপর মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করল ,

– কেন এত ভাবছিস পূর্ণ ?? কেন ?? এমন তো না যে তুই ওকে পছন্দ করতে শুরু করেছিস ??

হঠাৎ ভাবনার মাঝেই পূর্ণতার ফোনটা বেজে উঠলো । ভাবনা থেকে বেরিয়ে পূর্ণতা ফোনটা বেড সাইড টেবিল থেকে নিয়ে দেখল আবরন কল দিচ্ছে ।

ফোন রিসিভ করার আগে উপরে স্ক্রিনে সময় পৌনে একটা দেখে পূর্ণতা ভরকে গেল । তারপর কল টা রিসিভ করে কানে দিতেই ঐপাশ থেকে শোনা গেল ,

– এতক্ষন লাগে কলটা রিসিভ করতে ?? আমাকে এক্সকিউজ দেবে না যে তুমি ঘুমাচ্ছিলে , কজ আই নো দ্যাট , তোমার চোখে ঘুম নেই । ফোন দেড়ি করে তুললে কেন তা বলো !!

পূর্ণতা শোয়া থেকে উঠে বসে বলল ,

– যখন আমার সব উত্তর ই আপনার জানা তাহলে নিশ্চয়‌ই এটাও জানার কথা ছিল যে আমি কেন দেড়ি করে কল টা রিসিভ করলাম ??

আবরন বলল ,

– বাদ দাও । বারান্দায় এসো একটু ।

পূর্ণতা ৪৪০ ভোল্টের ঝটকা খেয়ে চোখ বড় বড় করে বলল ,

– মানে ??

আবরন ধমকের সুরে বলল ,

– তুমি সবসময় বেশি বেশি প্রশ্ন করো !! বারান্দায় এসো !!

পূর্ণতা জলদি জলদি বিছানা থেকে নেমে বারান্দার দরজা টা খুলে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতেই দেখল নিচে রাস্তায় আবরন দাঁড়িয়ে আছে । রোড ল্যাম্পের আলোতে ওকে একটু অন্যরকম দেখাচ্ছে ।

আবরন নিচ থেকে পূর্ণতা কে দেখেই হাত তুলে “হাই ” দিল ।

পূর্ণতা দেখে বলল ,

– আপনি এত রাতে কেন এসেছেন ?

– এমনি !

– একা এসেছেন ?

– উহু , সাথে ফাহিম আর তাসিনের ঘুম নষ্ট করিয়ে ওদের নিয়ে এসেছি ।

পূর্ণতা বিরক্ত হয়ে বলল ,

– কিন্তু কেন ?? এক্ষুনি চলে যান ।

– কেন যাবো ?

– কারন আমি বলেছি ।

– তুমি বললে কেন যাবো ? কি লাগো তুমি আমার যে তোমার কথা শুনতে হবে ??

– কিছুই লাগি না । সত্যি করে বলেন তো রাত বিরাতে এমন কয়জন মেয়ের বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন ??

– একজনের ও না । এই প্রথম । আমি আবরন চৌধুরী কিনা কারো বাসার সামনে গিয়ে রাতের বেলা দাঁড়িয়ে মশার কামড় খাবো !! কি করে ভাবতে পারো তুমি এটা ?

– উউউহহহ !! হঠাৎ এত ভাব নিয়ে চৌধুরীর ছেলে আপনি তা শোনাচ্ছেন কেন ??

– তোমাকে বোঝাতে !

– কি বোঝাতে ??

– কিছু না । আমি গেলাম ।

-তো ধরে রেখেছে কে ?? যান না !

– যাবোই তো , কিন্তু শোনো !

-কি শুনবো ?

– কালকে একটা সারপ্রাইজ আছে । রেডি থেকো ।

– সেটা কি ?

– বলা যাবে না ।

– ধুর

আবরন হেসে বলল ,

– সারপ্রাইইইইজ !!

পূর্ণতা ফোন টা কেটে দিল ।

আবরন হেসে ওকে বায় দিয়ে কারে উঠে বসলো । ফাহিম আর তাসিন কারেই বসা ছিল এতক্ষন । ওরা দুইজন কারের পেছন সিটে ঘুমাচ্ছে । আবরন দুষ্টুমি করে ওদের ছবি তুলে পূর্ণতা কে পাঠালো । পূর্ণতা ছবি দেখে হাসলো । আবরনকে চলে যেতে দেখেই পূর্ণতা আবার দরজাটা লাগিয়ে রুমে চলে গেল ।

বিছানায় গিয়ে বসতেই ওর শরীর কাপতে লাগল । হার্টবিট বেড়ে গেল ।

মনে মনে ভাবছে ,

– এমন কেন হয় বার বার ? যখন কথা বলি তখন তো এসব থাকে না , পরে এমন হ‌ওয়ার মানে কি ??

পূর্ণতা এসব ভাবতেই হঠাৎ ওর জলের বলা কথা গুলো মনে পড়ল । তারপর আবার মনে পড়ল আবরন ওকে বলেছিল , আশেপাশের কারো কোনো কথায় কান দিতে না , কারন হিংসে তারাই করে যখন কেউ তার চেয়ে উপরে উঠে যায় ।

এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে গেল ।

……….………….……………………………

আবরন গাড়িটা গ্যারাজে পার্ক করে ফাহিম আর তাসিনকে সাথে নিয়ে আস্তে করে মেইন ডোরের এক্সট্রা কি দিয়ে ডোর আনলক করে পা টিপে টিপে নিজে ঘরে ঢুকে ফাহিম আর তাসিনকে ও ঘরে ঢুকতে ইশারা করলো বিনা শব্দে । ওরা ঘরে ঢুকতেই আবরন আস্তে করে দরজাটা লক করে পা টিপেই নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল ফাহিম আর তাসিনকে নিয়ে । অন্ধকারে ওদের নিয়ে আবরন নিজের রুমে প্রবেশ করে আস্তে করে দরজা লাগিয়ে দিয়ে লাইট অন করে পেছনে ঘুরতেই তিনজনে ভুত দেখার মতো স্বজোরে চিৎকার করে উঠল । আধিরা আনজুম ঘর ঝাড়ু হাতে নিয়ে ওদের দিকে শকুনের মতো চোখ করে তাকিয়ে আছে । আবরন , ফাহিম , তাসিন এই মূহুর্তে তার শিকার । আবরন তোতলাতে তোতলাতে বলল ,

– আ আ আম্মু ।।‌‌ ত ত তুমি এত রাতে এ এ এখানে কি করছো ?

আধিরা আনজুম বললেন ,

– তোরা আগে বল কোথায় গিয়েছিলি এত রাতে চুরি ডাকাতি করতে ??

ফাহিম আধিরা আনজুমের দিকে এগিয়ে গিয়ে কাদো কাদো ফেস করে বলল ,

– আন্টি , তোমার ছেলে রাত করে আমাদের ঘুম থেকে উঠিয়ে এই হরতালেও টেম্পু চালাতে নিয়ে গিয়েছিল ।

তাসিন ও আধিরা আনজুমের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল ,

-হ্যা , আন্টি , তোমার ছেলে আমাদের ঘুম নষ্ট করে চুরি করতে নিয়ে গিয়েছিল ।

আবরন ওদের দুইজনের দিকে রাগি রাগি চোখ নিয়ে তাকাতেই ওরা বলল ,

– দেখো দেখো আন্টি !! কেমন কেমন করে তাকাচ্ছে আমাদের দিকে যেন চোখ দিয়েই আমাদের গিলে খাবে ।

আধিরা আনজুম বললেন ,

– বল কোথায় গিয়েছিলি ? কি চুরি করতে গিয়েছিলি ??

আবরন জোড়পূর্বক হেসে বলল ,

– ইয়ে মানে , মন !

আধিরা আনজুম বললেন ,

– তা আমার ছেলে কার মন চুরি করে আনলো ?

আবরন ঠোঁট উল্টিয়ে বলল ,

– আ‌জ ও পারি নি ।

– তোকে প‌ই প‌ই করে গত পরশু বলেছি আমাকে ওর সাথে দেখা করাতে , তা তো করালি ই না , কাল সারা সময় একসাথে ছিলি ,এখন আবার রাত করে গিয়েছিস ওকে দেখতে !!

– ইয়ে মানে আম্মু !! আজ সকালে ওকে আনবো , সেটাই ওকে বলতে গিয়েছিলাম যে তোমার জন্য সারপ্রাইইইইজ আছে ।

আধিরা আনজুম বললেন ,

– তোর ফোনটা দে !

– কেন ?

– দিতে বলছি দিবি !!

আবরন পকেট থেকে ফোনটা বের করে আধিরা আনজুমের দিকে বাড়িয়ে দিল ।

আধিরা আনজুম ফোনটা নিয়ে ওর দিকে এগিয়ে বলল ,

– সর , আমি বের হবো ।

আবরন সরে দাঁড়াতেই আধিরা আনজুম দরজা খুলে ওর রুম থেকে বের হয়ে যেতে যেতে বলল ,

– তোকে আর ফোন দিব না । ফোন থাকতে যখন ম্যাসেজ করে বা কল করে ওকে জানাতে পারিস নি যে সারপ্রাইজ আছে , ওর বাসার সামনে গিয়ে তোর জানাতে হলো তাহলে তোর ফোনের কি দরকার ?? এটা থাক আমার কাছেই আমানত ।

আবরন বলল ,

– লক্ষি আম্মু , এমন করে না প্লিজ 🥺

আধিরা আনজুম কথা না শোনার ভান করে নিজের রুমে চলে গেলেন ।

ফাহিম আবরনের দিকে এগিয়ে এসে বলল ,

– দোস্ত , তুই আমার ফোনটা নিয়ে নে , তবুও কাদিস না ।

এই বলে নিজের ফোনটা এগিয়ে দিল আবরনের দিকে ।

আবরন রেগে ওকে কিল ঘুষি মারতে মারতে বলল ,

– আমার নামে বিচার দিয়ে এখন আসছোস সহানুভূতি দেখাতে , তোর আজকে খবর আছে ।

তাসিন বলল ,

– ভাই , মাফ কর ভাই । এমন করিস না !!

– নে , তুই ও মাইর খা ।

এই বলে দুইজনকেই ইচ্ছামতো মারতে লাগলো ।

আবরন হয়রান হয়ে খাটে বসে যেতেই তাসিন আর ফাহিম দৌড়ে গিয়ে গেষ্ট রুমে ঢুকে পড়ল । কারন ওদের আর মাইর খাওয়ার ইচ্ছা নেই ।

………………………………………………..

সকাল ১০ টা ,

পূর্ণতা ঘুম থেকে উঠেই ফ্রেশ না হয়ে চোখ ডলতে ডলতে রান্নাঘরে গেল । সেখানে গিয়ে মিলি রহমানকে না পেয়ে জিব্রানের রুমটা খোলা দেখতে পেয়ে সেদিকে এগিয়ে গেল ।

জিব্রানের দরজার কাছাকাছি যেতেই হাসির আওয়াজ শোনা গেল । মিলি রহমান সেখানে আছেন বুঝতে পেরে রুমের ভিতর ঘুমু ঘুমু চোখ নিয়েই ঢুকে গেল । তারপর চোখ বন্ধ করেই বলল ,

– আম্মুউউউউ !!

মিলি রহমান তাকিয়ে বলল ,

– একি , ফ্রেশ না হয়ে চলে এসেছিস !! যা , ফ্রেশ হ ।

জিব্রান বলল ,

– তোর ছোট বেলার অভ্যাস এখনো যায় নি তাহলে । মাঝে মাঝেই এমন করিস ।

আবরন এসেছে পূর্ণতা কে ওদের বাসায় নিয়ে যেতে । তাই ও জিব্রানের রুমে বসে এই ব্যাপারেই মিলি রহমান আর জিব্রানের সাথে কথা বলছিল ।

হঠাৎ পূর্ণতা কে এমন অগোছালো চুল আর ঘুমু ঘুমু ফেস নিয়ে রুমে আসতে দেখে ওর দিকে এক নজরে তাকিয়ে ভাবছিল ,

– তুমি এত্ত কিউট কেন পূর্ণ ?? মাঝে মাঝে আমার‌ই কেন যেন জেলাস হয় !!

মিলি রহমান বললেন ,

– আবরন এসেছে তোকে নিতে !

এই কথা শুনে পূর্ণতা চোখ খুলে বড় বড় করে তাকিয়ে বলল ,

– কোথায় উনি ! কেন এসেছে ?

জিব্রান বলল ,

– তুই কি কানা ? এই যে আমার পাশে বসা !!

পূর্ণতা ওর দিকে তাকাতেই আবরন দুষ্টুমি করে সবার দৃষ্টি এড়িয়ে ওকে চোখ টিপ মারলো । পূর্ণতা এইটুকু দেখেই সেখান থেকে ছুটে নিজের রুমে চলে গেল ।

পূর্ণতা ফ্রেশ হচ্ছে আর আবরনের চৌদ্দ গোষ্ঠি উদ্ধার করছে । ফ্রেশ হয়ে বের হতেই মিলি রহমান ওর রুমে এসে বলল ,

– আবরন তোকে এক জায়গায় নিয়ে যাবে , সুন্দর করে রেডি হয়ে নাস্তা খেতে আয় ।

পূর্ণতা মুখ টাওয়াল দিয়ে মুছতে মুছতে বলল ,

– আম্মু একটা কথা বলি !

মিলি রহমান ভ্রু কুচকে বলল ,

– বল !

– তোমরা কি উনাকে একটু বেশি ই ভরসা করছো না ? এগুলো কি না করলেই নয় ??

মিলি রহমান বললেন ,

– কেন তুই করিস না ভরসা ?

পূর্ণতা চুপ করে র‌ইল । ওর মুখ থেকে উত্তর না পেয়ে মিলি রহমান হালকা হেসে বললেন ,

– আমাকে আর জিব্রানকে বিশ্বাস করিস তো ??

পূর্ণতা হ‍্যা সূচক মাথা নাড়ল ।

মিলি রহমান বললেন ,

– ছেলেটা ভালো , ওর ভবিষ্যত ও ভালো । তোকে কেয়ার করে খুব । আমাদের সম্মান করে । আর কি লাগে বল ? দেখতে ও তো মাশাআল্লাহ !! একটা পারফেক্ট ছেলের মধ্যে যা যা থাকা দরকার সব‌ই তো ওর আছে । যেমন নম্র – ভদ্র , তেমনি অহংকার বোধ বিহীন । ওর ওপর আস্থা করা যায় । তুই চাইলেই পারিস । এখন এসব কথা বাদ দিয়ে , তৈরি হয়ে নে ।

মিলি রহমান চলে যেতেই কথা গুলো ওর কানে বার বার বারি খেতে লাগল । আনমনে আলমারি থেকে একটা সাদা চিকেন কাপড়ের গোল ফ্রক আর সাদা চুরিদার পায়জামা পড়ে একটা মাল্টি কালারের হাফ সিল্কের চুন্ডি ওরনা পড়ে নিল । তারপর মুখে একটু হালকা পাউডার লাগিয়ে একটা বেবি পিংক কালারের লিপ গ্লোজ দিয়ে নিল । তারপর চুলটা ফ্রান্স বেনী করে নিয়ে হ‍্যান্ড ব্যাগ নিয়ে নিজের রুম থেকে বের হয়ে ডায়নিং রুমে গেল ।

জিব্রান আর আবরন বসার ঘরে বসে আড্ডা দিচ্ছিল । পূর্ণতার খেতে দেড়ি হবে বলে মিলি রহমান ওকে নিজের হাতে জলদি জলদি খাইয়ে দিয়ে বললেন ,

– যা । আর সাবধানে থাকিস ।

পূর্ণতা মাথা নেড়ে শু র‍্যাক থেকে এক জোড়া সাদা জুতো হাতে নিয়ে বসার ঘরের সামনের ডোর দিয়ে বের হতে লাগল । আবরন ওকে দেখে জিব্রানের সাথে কথা শেষ করে নিজেও বের হতে লাগল । জিব্রান পূর্ণতা কে বলল ,

– ওর সাথেই কারাতিতে চলে যাস !!

পূর্ণতা মাথা নাড়ল ।

আবরন পূর্ণতা কে উদ্দেশ্য করে বলল ,

– চলো ।

জিব্রান আর মিলি রহমান দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলল ,

– আল্লাহ হাফেজ ।

– আমার বোনটার খেয়াল রাখিস আবরন ।

আবরন নিচে নামতে নামতে বলল ,

– চিন্তা করো না ।

নিচে নেমে পূর্ণতা গাড়িতে উঠে বসতেই আবরন‌ও ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে ডোর লক করে সিট বেল্ট বেধে পূর্ণতার দিকে তাকালো । পূর্ণতা সিট বেল্ট না বেঁধে চুপ চাপ বসে আছে ।

আবরন ওর দিকে এগিয়ে ওর সিট বেল্ট টা বেঁধে দিয়ে বলল ,

– মুড অফ ??

পূর্ণতা আবরনের দিকে তাকিয়ে বলল ,

– আপনি কি আমাকে নিয়ে একটু বেশিই চিন্তা করছেন না ? আই মিন , বেশি কেয়ার করছেন না ?? আপনি তো নিজেই বলেন যে আপনার কাউকে নিয়ে ভাবার এত টাইম নেই বা কোনো মেয়েকে এত কেয়ার করার সময় নেই !! তাহলে আমার বেলায় ঠিক এর উল্টোটা কেন বলবেন ??

আবরন কিছুক্ষণ ওর দিকে তাকিয়ে চুপ করে থেকে একটু মুচকি হাসার চেষ্টা করে বলল ,

– উত্তরটা আমার নিজের‌ই জানা নেই । হয়তো সময়ের সাথে সাথে এর উত্তরটা জেনে যাবো , তখন তোমাকে জানাতে সক্ষম হবো ।

পূর্ণতা কিছু বলল না ।

আবরন ড্রাইভিং করতে করতে কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করল । পূর্ণতা ও চুপ ছিল । তবে আড় চোখে কয়েকবার আবরনকে খেয়াল করেছিল । পূর্ণতা কিছু একটা ভেবে আবরনকে নিজ থেকেই জিজ্ঞেস করল ,

– আমার জন্য যে সারপ্রাইজ টা রেখেছেন সেটা কখন দিবেন ?

আবরন ওর দিকে না তাকিয়েই বলল ,

– ধৈর্য্য ধারন করো !!

পূর্ণতা বুঝল যে কোনো কারনে আবরনের মুড ও এখন অফ হয়ে গিয়েছে । পূর্ণতার নিজের‌ই গিল্টি ফিল হচ্ছে । আবরনকে আবার আগের মুডে আনতে পূর্ণতা ইচ্ছে করেই বলল ,

– এই যে মিঃ কাউয়্যা !! আমাকে ড্রাইভিং শেখাবেন বলেছিলেন !!

আবরন কিছু বলল না । পূর্ণতা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে সাহস করে নিজের কাপা কাপা হাতটা আবরনের গিয়ার কনট্রোলারের উপর থাকা হাতটার উপর রাখলো ।

আবরন ওর দিকে কিঞ্চিত ভাব নিয়ে তাকিয়ে বলল ,

– সূর্য কোন দিকে উঠলো বলোতো ?

– কেন !! প্রতিদিন যেদিক দিয়ে উঠে !

আবরনের রাগ অভিমান সব ধুয়ে গিয়েছে পূর্ণতার এমন বিহেইভে । মনে মনে ভাবল ,

– মিসঃ কাউয়্যার ব‌উ , আমার মান অভিমান তোমার ভালো লাগে না , তা আজ প্রমান করে দিলে !! সময় হলে বুঝিয়ে দেব প‌ই প‌ই করে যে তুমি আর আমি একে অপরের জন্য তৈরি ।

এসব ভেবে নিজের হাতটা পূর্ণতার হাতের উপর রেখে ড্রাইভিং শুরু করল ।

কিছুক্ষণ পরে আবরন একটা রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি টা থামালো । পূর্ণতা ভ্রু কুচকে বলল ,

– এখানে কেন এলাম !!

আবরন গাড়ি থেকে নেমে পূর্ণতা কে নামতে বলে বলল ,

– ভেতরে চলোই না আগে !!

পূর্ণতা আবরনের সাথে গিয়ে রেস্টুরেন্টের গেইটের সামনে দাঁড়াতেই পূর্ণতা দেখল সেখানে ফাহিম আর তাসিন ও আছে । পূর্ণতা ভ্রু কুচকে আবরনের দিকে তাকিয়ে বলল ,

– এখানেই কি আমার সারপ্রাইজের এরেঞ্জ করা হয়েছে ?

আবরন ঠোঁটে বাকা হাসি দিয়ে বলল ,

– তোমার ভাগ্য ভালো ! আমি তোমার জন্য ১ টা সারপ্রাইজের ব্যবস্থা করেছিলাম কিন্তু প্রকৃতি চাইলো আজ তোমাকে আরো একটা সারপ্রাইজ দিতে । অর্থাৎ , তোমার জন্য দুটো সারপ্রাইজ ওয়েট করছে ।

পূর্ণতার ভাবনার শেষ নেই । ও যেমন এক্সাইটেড তেমনি কিছুটা ভীত । আবরন ওর হাত ধরে রেস্টুরেন্টের ভিতরে প্রবেশ করতেই ……………….

#চলবে ♥️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here