#ভালোবাসি হয়নি বলা
#সাদিয়া নওরিন
পর্ব— ২০
রোদেলা কলেজে পৌছে হাসনাতকে খুঁজতে লাগলো।। আজ হাসনাতের পছন্দের কালারের সবকিছু পড়ে এসেছে সে..কালো আনারকলি,, কালো কালারের কাচের চুড়ি. কালো যে হাসনাতের প্রিয়. হাসনাতকে আজ মনের কথা বলার ইচ্ছা তার.. ধিমি ধিমি পায়ে হাসনাতের ক্যাবিনের দিকে এগুচ্ছে সে… দুনিয়ার সব সংকোচ যেন তার পায়ে ভর করেছে.. হাত পা কাঁপছে তার..নিজেকে পরপর কয়েকবার বুঝিয়ে হাসনাতের ক্যাবিনের দিকে হাটা ধরলো সে… হাসনাতের ক্যাবিনের সামনে দাড়িয়ে আস্তে করে টিকা দিয়ে বলল– আসবো??
হাসনাত পানি খাচ্ছিল.. হঠাৎ রোদেলার দিকে তাকাতেই তার চোখ বড় বড় হয়ে গেল. আর ফলসরুপ সব পানি হাসনাতের গায়ের ওপর… রোদেলার হাসনাতের এই অবস্হা দেখে হাসি চলে এলো.. সে স্বশব্দে হেসে দিল.. হাসনাত আরো বিমোহিত হয়ে তাকিয়ে রইলো.. রোদেলা হঠাৎ হাসনাতের চোখের দিকে তাকিয়ে চুপ হয়ে গেল.. মনে মনে বলে ওঠলো– ইশ, একটা কিউট চোখ ওয়ালা ছেলে যদি কিউট একটা মেয়ের দিকে ড্যবড্যবিয়ে তাকিয়ে থাকে মেয়েটাযে লজ্জায় আর শিহরনে মাটির নিচে লুকিয়ে পড়তে চায় সেই হিসাব কি সেই ছেলের আছে……
হাসনাতের চোখের দিকে তাকাতেই তার চোখের মায়ায় রোদেলা ডুবতে শুরু করলো.. আর বারবার সে লজ্জায় কেপেঁ ওঠতে লাগলো…
হাসনাত একপা দুপা করে সামনে আসছে আর রোদেলা পিছিয়ে দরজার সাথে মিশিয়ে দাড়িয়ে গেল . রোদেলাকে এতোটাই কিউট লাগছে হাসনাত সেদিকে তাকিয়েই রোদেলার নেশায় মজেতে লাগলো.. কোন প্ল্যান তার মাথায় আপাতত কাজ করছে না।। শুধু মাথায় ঘুরছে রোদেলা আর রোদেলা!!!. রোদেলার কম্পিত চোখের পাপড়ি যেন তাকে আরো কাছে টানছে.. হাসনাত পরম নেশা ভরাচোখ নিয়ে রোদেলার কাছে এগিয়ে গেল. রোদেলা হাসনাতের কাছে আসা দেখে নিজের আড়াআড়িভাবে রাখা হাতের একটাকে অন্যটাদিয়ে চেপে দাতে দাত খিচে দাড়িয়ে রইলো.. হাসনাতের গরম নিশ্বাস তার মুখের ওপর পড়তেই সে আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলল… আর হাসনাত তার মায়াবিনীর মায়ায় মজতে মজতে নিজের হাতটা রোদেলার মুখের ওপর রাখার জন্য যেই তুলল.. হঠাৎ কোথা থেকে মাহিয়া স্যার বলে হাসনাতের গা ঘেসে দাড়িয়ে মুচকি হেসে দিল…
রোদেলা চমকে সেদিকে তাকালো.. লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিল সে..
মাহিয়া হাসনাতের দিকে তাকিয়ে হেসে বলল– স্যার,, আপনার ক্লাস এখন.. চলেন..
হাসনাত ইতস্ততভাবে বলল– তুমি যাও আমি আসছি…
মাহিয়া আচমকা হাসনাতের হাত ধরে টানতে টানতে বলল– নাহ স্যার আমার সাথে চলেন.. এইবলে সে হাসনাতকে নিয়ে হাটা দিল.. হাসনাত চোখ বড় বড় করে রোদেলার দিকে তাকালো.. রোদেলার চেহারা দেখে মনে হচ্ছে পারলে এখনই সে হাসনাতকে খেয়ে ফেলবে…
অন্যদিকে রোদেলা রেগে সেদিকে তাকিয়ে নিজের হাত দিয়ে অন্যহাত মচড়াতে লাগলো.. তার ইচ্ছে হচ্ছে মাহিয়াকে ধুপিঘাটে নিয়ে গিয়ে রাগড়ে রাগড়ে ধুতে.. সে বিরবিরিয়ে বলল– বজ্জাত মেয়ে,,, তুইকি শিশুতে পড়িস.. স্যারের হাত ধরে এতো টানাটানি করতে হবে কেন তোর… শাঁকচুন্নি তোকে তেতুলগাছে বেধে দিয়ে আসবো আমি দেখিস.. আর শালা হাসনাত বজ্জাত ইতর.. ঐ মেয়ে টানলে কি তোর যেতে হবে.. এইসব বলতে বলতে রেগেমেগে বেরিয়ে গেল সেইখান থেকে…
//
হাসনাতকে মাঝখানে দাড় করিয়ে সবাই আশেপাশে দাড়িয়ে আছে.. সানিয়া,, মুনিরা, তামান্না আর মাহিয়া…হাসনাত মাথা নিচু করে সুবোধ বালকের মতো দাড়িয়ে আছে…
হঠাৎ সানিয়া বুকের ওপর হাত গুঁজে দাড়িয়ে বলল– কি করতে গেছিলেন এখন?? আমাদের সব প্ল্যানের বারোটা বাজানোর এতো শখ কেন আপনার..
হাসনাত আমাতাআমাতা করে বলল– আরে,, আমি তো জাষ্ট কথা বলতে গিয়েছিলাম…
তামান্না কোমড়ে হাত দিয়ে তাকিয়ে— একদম মিথ্যা বলবেন না।। স্যার.. তারপর মুনিরার দিকে তাকিয়ে বলল– ঐ হাসনাত কই রে.. আগের হিটলার.. আমি তো ভাবছিলাম সেই হাসনাত হবে এইটা.. ভালো করে চেক করে দেখছিস তো এইটা আসল হাসনাত কিনা…
হঠাৎ একটা স্বর বলে ওঠলো– রক্ত ঠান্ডা হয়ে গেছে এইটার.. বয়স তো আর কম হয়নি…
হাসনাত চমকে পিছনে তাকালো আর মুচকি হেসে বলল– ইফতি!!!!
পাশে ইফ্ফাত দাড়িয়ে.. শাড়িতে অনেকটা কিউট লাগছে ওকে.. হাসনাতের কাছে এসে ইফতি ওকে জড়িয়ে ধরলো.. আর ইফ্ফাত তার বোনদের সাথে গল্পে লেগে গেল…
ইফতি— কি ভাই,,, এতো নরম হয়ে গেছেন কেন???
হাসনাত — শালা আমার ওপর ধকল দেখলে বুঝতি.. আট বছর কম লাগে তোর.. তুমি তো মিয়া মজায় ছিলা।। এই বলে ইফ্ফাতকে চোখ টিপ দিয়ে দিল.. আর ইফ্ফাত লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল।।।
তারপর মৃদু হেসে বলল — .. আরো একটু অভিনয় করেন ভাই মজা পাবেন….আর রোদেলাকে বলবেন আজকে থেকে আপনি ওকে আর জ্বালাবেন না.. আরো কিছু বানিয়ে বলে দিবেন..
হাসনাত ফ্যাকাসে মুখ করে — তোরা সবাই মিলে আমাকে কেন খারার নিচে পাটাচ্ছোস.. তোরা সবকয়টা আমার লাইফের জন্য স্টার প্লাসের ভিলেন হয়ে গেছোস..আর আমার লাইফটা বার্বিকিউফ্রাই করতেছোস.. সব না ইনসাফি শুধু আমার জন্য কেন…
ইফতি— ধূর ভাই.. এইসব রোদেলা বলতো.. আপনি কখন থেকে রোদেলা হয়েছেন…
হাসনাত মুখ ছোট করে — যখন থেকে রোদেলা হাসনাত হয়ে গেছে তখন থেকে.. সবাই খিলখিলিয়ে হেসে ওঠলো…
হাসনাত সবাইকে বাই বলে যেই সামনে এগুবে হঠাৎ দেখলো রোদেলাকে কিছু ছেলে টিচ করছে.. হাসনাত রোদেলার পিছনে দাড়িয়ে ছেলেগুলোর দিকে এ্যাঙ্গি লুক দিল.. আর হাত ইশারা করে দেখালো.. সাথে সাথে ছেলেগুলো দৌড়ে পালালো..
রোদেলা অবাক হয়ে পিছনের দিকে তাকিয়ে হাসনাতকে দেখে হেসে দিল.. তারপর গুটিগুটি পায়ে হাসনাতের দিকে এসে বলল– হাসনাত ভাই…
হাসনাত রোদেলাকে থামিয়ে দিয়ে বলল– রোদেলা,, আমি অনেক ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি.. তোমাকে আর জ্বালাবো না. তুমি তোমার মতো হ্যাপি থাকো.. আমি আর তোমার লাইফে ইন্টারফেয়ার করবো না.. এইবলে হাসনাত পিছনে ঘুরে হাটা ধরলো.. হাসনাতের বুকের ভিতর জোরে হাতুড়ি দিয়ে বাড়ি দিচ্ছে.. আর কিছুখন থাকলে হাসনাত হয়তো সত্যিটাই বলে দিতো রোদেলাকে..
অন্যদিকে রোদেলা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে হাসনাতের যাওয়ার দিকে..
এই হাসনাত ভাই দু লাইন বেশি বোঝে কেন… আজব!!! এই ছেলেটাকে একদিন ব্লান্ডারে জুস,বানিয়ে খেয়ে নিব আমি..এইসব বিরবির করতে পাশে তাকিয়ে দেখলো তামান্না রোদেলার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
রোদেলা মেকি হাসি ঝুলিয়ে —-আমার চেহারা দিয়ে মধু ঝরে পড়তেছে??
তামান্না অবাক হয়ে– নাতো?? কেন?
রোদেলা— তাহলে হা হয়ে তাকিয়ে আছস কেন.. সর যাব আমি.. এইবলে সে হনহনিয়ে প্রস্হান করলো… তামান্না হেসে বলল– কিয়া করো হা এ.. কুচকুচ হোতা হে….
রোদেলা হাটতে হাটতে হঠাৎ দেখলো হাসনাত সিড়ি দিয়ে ওপরের দিকে ওঠছে.. আর মাহিয়া নিজে পিছলে পড়তে চাচ্ছে যাতে সে হাসনাতের গায়ের ওপর পড়ে. রোদেলা সে দিকে তাকিয়ে তাড়াতাড়ি দৌড়ে গিয়ে মাহিয়াকে ধরে দাড় করিয়ে দিল তারপর তার দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো..
হঠাৎ হাসনাতের আসার দিকে তাকিয়ে আহ করে ওঠলো সে.. মাহিয়া অবাক হয়ে তাকালো…. হাসনাত দৌড়ে এসে রোদেলাকে সিড়িতে বসে থাকতে দেখে উদ্ধেগের সাথে বলল– কি হয়েছে তোমার?? তারপর পায়ে হাত দিয়ে বলল– পায়ে কি হয়েছে??
রোদেলা জোরে জোরে মেকি কান্না করতে করতে বলল– আমার পা শেষ হাসনাত ভাই.. আহ্ ব্যাথা…
হাসনাত তাড়াতাড়ি রোদেলাকে কোলে তুলে নিল…
রোদেলা অবাক হয়ে হাসনাতের মুখের দিকে তাকালো.. হাসনাত মুচকি হেসে দিল.. আজকে প্রথম হাসনাত তাকে এইভাবে ছোয়েছে.!!! আর এই ছোয়া রোদেলার মাঝে বারবার শিহরন জাগাচ্ছে.. এর আগে কখনো এতো কাছথেকে হাসনাতকে দেখেনি রোদেলা.. হাসনাতের বুকের কাছের তিলটা যেন রোদেলার মাঝে ঝড় তুলছে.. রোদেলা হাসনাতের শার্ট আকড়ে ধরলো.. আর তার বুকে মাথা রাখলো…
হাসনাতের অবস্হা আরো খারাপ.. এই সানিয়াকে এখন তুলে আছাড় দিতে ইচ্ছে হচ্ছে তার.. ফাজিল মেয়ের ফাজিল প্ল্যানের জন্য দূরে থাকতে হচ্ছে রোদেলা থেকে… আর রোদেলাকে এতোটা কাছ থেকে অনুভব করে নি সে কখনো.. রোদেলার চুলের মাতাল করে স্মেল হাসনাতকে অস্হির করে তুলছে.. রোদেলার ঠোটের কর্নারের তিলটা যেন হাসনাতের জন্যই তৈরি.. এই মেয়েটা যেন চুম্বক যা হাসনাতকে শুধু কাছে টানে.. নিজেকে সংযত করা হাসনাতের পক্ষে কষ্টদায়ক.. সে তামান্নাকে দেখে রোদেলাকে সেইখানে নামিয়ে দিয়ে চলে যায়.. আর রোদেলা মুখ ফুলিয়ে বসে পড়ে.. এই হাসনাতটাকি কিছুই বুঝেনা….
কিছুখন পর হঠাৎ রোদেলার মুখের রাগ ভাব কেটে একঝটকা হাসি বেরিয়ে এলো..তামান্না অবাক হয়ে বলল– এতো ভ্যাটকাচ্চোস কেন?? পাগল হয়ে গেলি নাকি
।
রোদেলা রহস্যময় হাসি হেসে বলল– কালকে পিকনিকে যাব না আমরা.???.. দেখে থাক কি কি হয়।।। এই বলে সে চোখ টিপ দিল তামান্নাকে.. আর তামান্না হতবাক হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলো।।।
চলবে