ভালোবাসি হয়নি বলা পর্ব ৩৩

#ভালোবাসি হয়নি বলা
#সাদিয়া নওরিন

পর্ব— ৩৩

মিতা সবকিছু ঠিক করে বসতেই ইফ্ফাত আর তামান্না ছোট একটা ডালা কলাপাতা দিয়ে মুড়িয়ে নিয়ে এলো.. মিতা অবাক চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে বলল– এইটা কি??
তামান্না মুচকি হেসে কলাপাতা সরাতেই দেখলো.. কাচা হলুদ পেস্ট আর এর একপাশে আবার চন্দন!! মিতা অবাক চোখে তাকিয়ে বলল– এইসব??
তামান্না— আসলে আন্টি আমাদের ওইদিকে হলুদে এইসব দেয়.. তাই ভাবলাম…
মিতা মুচকি হেসে তামান্নার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল— খুব ভালো করেছ নিয়ে এসে.. আগের যুগে এইসব দিত.. আমরা ও দিয়েছি এখন তো যতো রকম নতুনত্ব এনে পুরাতন নিয়মই চলে গেছে… এই বলো তিনি ডালাটা নিয়ে চলে গেলেন… ইফ্ফাত মুচকি হেসে ইফতির দিকে তাকিয়ে বলল– আরেক পয়েন্ট.. নতুনত্ব… টিম ওয়ার্ক…
ইফতি ব্রু উঁচিয়ে ইফ্ফাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে ওইখান থেকে প্রস্হান করলো…
সানিয়া অবাক হয়ে ভাবলো এদের প্লেনটা কি??

মিতা হলুদের কথা সবাইকে বলতেই সবাই খুশিতে একমত হয়ে গেল… ইফতির আম্মু মুচকি হেসে বলল– তামান্না মেয়েটাকে খুব বেশি ভালো লাগে আমার।।
রাহা চোখ টিপ মেরে বলল– তাহলে ছেলের বৌ করে রাখ…
মায়া— অন্য ড্রিসটিক তো..
ইফতির আম্মু দিনা মাথা কাত করে বলল– আইডিয়াটা মন্দ না.. ইভানের জন্য ঠিক করে রাখতেই পারি… মেয়ে ভালো হলে চাদের দেশ থেকে আনতেও আমার আপত্তি নেয়…
সবাই হু হু করে হেসে দিল…

মুনিরা সবটা শুনে একছোটে সবার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো… আর সবটা জানালো.. ইফ্ফাত ব্রু নাচিয়ে তামান্নার দিকে তাকাতে তামান্না লাজুক হাসি দিল…

মিতা হলুদ কোথায় লাগাবে সেইটা ভাবছে.. হঠাৎ ইফতি আর ইশান তার,সামনে এসে দাড়ালো…তারপর তাকে নিয়ে গিয়ে ছাদের এক কোনায় দেখালো তারা… সেখানে কলাপাতা দিয়ে ঘেরা করা দুইটি রুম বানিয়েছে তারা… চারপাশে ফেইরী লাইট দিয়ে সাজানো… মিতা সবাইকে ঢেকে এনে সবটা দেখালো… আর সবাই ভিন্ন রকম ডিজাইনে সাজানোর জন্য তাদের কেও পয়েন্ট দিয়ে দিল… সানিয়া নাক ফুলিয়ে বলল– ডান্স বাকি…
ইশান প্রতিউওরে মাথা দুলিয়ে হেসে দিল…

ছাদের একপাশে দাড়িয়ে সানিয়া ফটোশুট করছিল.. হঠাৎ কিছু ছেলে সানিয়া দিকে তাকিয়ে নানা রকমের কমেন্ট করতে লাগলো.. ছেলেগুলো মূলত এলাকার ছেলে.. তাদের বাবা মার কারনে তাদেরকেও ইনভাইট করা হয়েছে… সানিয়া অসস্থিকর মুখ করে যেই হাটা ধরলো.. একটি ছেলে তার সামনে এসে দাড়িয়ে গেল.. সে মুচকি হেসে বলল– এরপর তো তোমার সিরিয়াল.. আমাকেও চান্স দাও… সানিয়া তেড়ে কিছু বলার অাগে ইশান সানিয়ার সামনে ছেলেগুলোর মুৃখোমুখি দাঁড়ালো।।। ছেলেদের মধ্যে অন্যএকজন বলে ওঠলো— তুই কি হিরো নাকি রে এখানকার?? যে হিরোপান্থি করছিস??
ইশান দু হাত তুলে নিজের কলারটা ঠিক করে চোখ কুঁচকে তাকিয়ে বলল– এখানকার না.. ওর হিরো আমি.. আমার হবু বৌ ও…
সানিয়া চমকে সামনে তাকালো.. ইশানের এই লুকটা পুরো ক্রাশ খাওয়ার মতো তার কাছে.. তাইতো সে ক্রাশ খাচ্ছে।। ইশানের পুরো চেহারার মাঝে সবচেয়ে বেশি আকষর্নিয় হলো ইশানের চোখ.. ঘন পাপড়ির এমন টানা চোখ কোন মেয়ের ও থাকে না…
ছেলেগুলো সরি বলে চলে যেতেই ইশান সানিয়ার দিকে তাকিয়ে আমাতাআমাতা করে বলল– আসলে সানিয়া কিভাবে…
সানিয়ার আপাতত এতো সুন্দর কথার পর সেইটা সত্যি না এমন কথা ইশানের মুখ থেকে শোনার ইচ্ছে নেয়…সে হাত উঁচিয়ে ইশানকে থামিয়ে বলল– দেখুন,, আমি জানি আপনি আমাকে বাচাতে এইসব মিথ্যা বলেছেন… ইটস ওকে.. আমার কোন সমস্যা নেয়..

সানিয়া এইটার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না.. হঠাৎ ইশান তার হাত ধরে টানদিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল তাকে.. সানিয়া চোখ বড়বড় করে তাকালো!! ইশান সানিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল– এতো কথা কেন বল… আমি কিছুই মিথ্যা বলি নি.. যেইটা আমার শুধু সেইটাই আমার বলেছি.. আর অন্য কোন মাছি মশা আমার মিষ্টির আশেপাশে দেখতেও চায়না আমি…
এইবলে প্রস্হান করলো সে.. আর রোদেলা সেইখানেই বরফ হয়ে দাড়িয়ে রইলো…

মাহিয়ার শাড়িটা তার পায়ের সাথে বারবার আটকে যাচ্ছে.. আর সে বারবার হোচট খাচ্ছে.. সে ভাবলো নিচে গিয়ে ঠিক করে আসবে.. আর যেই নিচে নামতে যাবে শাড়ি পেঁচিয়ে পড়তে গেল সে…ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল সে.. হঠাৎ মনে হলো সে হাওয়ায় ভেসে আছে.. চোখ খুলে দেখলো একটা ছেলে তাকে ধরে রেখেছে.. মাহিয়া দেখতেই ক্রাশ খেল ছেলেটার ওপর.. ফর্সা হ্যারিপটারের মতো দেখতে একটা ছেলে!! গোল গোল চশমা পড়া.. চেহারায় ম্যাচুরিটি ভাব আছে… মাহিয়া মোহিত চোখে ছেলের দিকে তাকালো… ছেলেটা মুচকি হেসে আলতো করে ধরে তাকে সোজা করে দাড় করিয়ে দিল.. তারপর পরম যত্নে শাড়ির পারটা ঠিক করে দিল সাথে কুচিগুলো ও!! তারপর মুচকি হেসে বলল– হাই,, আমি মেহেদি.. আমার কথা পেচাতে মোটেও ভালো লাগে না.. আমি তোমাকে পছন্দ করি.. কয়েকদিন আগেও দেখেছিলাম তোমায়.. সেইদিন ক্রাশ খেয়েছিলাম.. তুমি চায়লে আমার বেপারে ভেবে দেখতে পার…
মাহিয়া অবাক হয়ে ছেলেটার দিকে তাকালো.. এভাবে কে প্রপোজ করে.. এইটা কি আদো প্রপোজ নাকি ট্রেট… ছেলেটা নিজের মতো বলে হনহনিয়ে চলে গেল আর মাহিয়া ওখানে দাঁড়িয়ে কনফিউস্ট হয়ে ভাবতে লাগলো আসলেই এইটা কি ছিল…

রোদেলা আর হাসনাতকে হলুদ মাখানো হচ্ছে.. সবাই নিজের ইচ্ছামতো হলুদ মাখাচ্ছে… হাসনাতের পান্জাবীতো হলুদে মাখামাখি কারন তার সাথেই যতো প্রকার দুষ্টমি সব করেছে সবাই.. সব শেষে দুইজনকে গোসল করাতে নিয়ে যাওয়া হলো. রাত বিধায় অনেকে মানা করতে লাগলো..কিন্তু গরম পানি দিয়ে গোসল করবে আর গীষ্মকাল বিধায় কেউ আর তেমন মানা করলো না…

রোদেলাকে গোসল করতে রেখে সবাই চলে এলো.. রোদেলা যেই শাড়ি খুলবে দরজায় জোরে টোকা শোনলো সে.. সে সানিয়া ভেবে দরজা খুলতেই হাসনাত তাড়াতাড়ি ভিতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল…
রোদেলা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলল– কি সমস্যা হাসনাত ?? পাগলা ষাড় দৌড়াচ্ছিল?? এতো তাড়াতাড়ি এখানে কেন ঢুকলেন??
হাসনাত একপা একপা সামনে আসতে আসতে বলল– বোকা আজিবন বোকায় রয়ে গেলি তুই… হলুদ অনুষ্টানে সবাই আমার বৌটাকে হলদে বানিয়ে দিল আর আমি তাকিয়ে তামাশা দেখলাম তারপর রোদেলার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল– নট ফেয়ার….
রোদেলা পরপর কয়েকটা ঢুক গিলে সামনে তাকালো.. সে তাড়াতাড়ি বলল– দেখুন,, কেউ দেখলে আমার ই বদনামি হবে আপনি এখন এখান থেকে জান.. হাসনাত আচমকা রোদেলার কোমড় ধরে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল তাকে… তারপর নিজের গালটা রোদেলার গালে ছোয়ে দিল.. রোদেলা তীব্র কাপুনিতে হাসনাতকে জড়িয়ে ধরলো…রোদেলার স্পর্শে হাসনাত মুচকি হেসে দিল!! নিজের গলার কাছ থেকে কিছু হলুদ নিয়ে রোদেলার গলায় ছোয়ে দিল সে… রোদেলা পরম আবেশে চোখ বুজে রইলো… হাসনাত রোদেলার হাতে নিজের হাতবুলিয়ে রোদেলার হাতটা নিজের গালের সাথে ছোয়ে দিল… রোদেলা কেপেঁ চোখ খিঁচে দাড়িয়ে রইলো.. হাসনাত মুচকি হেসে রোদেলার গালে চুমু দিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে গেল..রোদেলা নিজের গালে হাত দিয়ে ভাবলো — এতো ভালবাসেন তাহলে বলেন না কেন?? আমি যে আপনার মুখ থেকে ভালোবাসি শুনতে চায়…

মাঝখানের চেয়ার গুলো সরিয়ে ডান্সের স্টেজ তৈরি করা হলো…দুইপক্ষ ছেলে vs মেয়ে… ডান্স হবে তিনটা একটা ছেলেদের একটা মেয়েদের আর একটা হাসনাত রোদেলার… তবে হাসনাতের ইচ্ছে তাদের ডান্সটা সবার প্রথমে হবে.. বাকিগুলো এরপর.. রোদেলা নাক কুঁচকে হাসনাতের দিকে তাকালো… এমন নিলজ্জ মানুষ সে দুটো দেখে নি.. এখন সবার সামনে কি তার কাপলডান্স করতে হবে… রোদেলা নাচ ছেড়েছেই পাচ বছর হয়ে যাচ্ছে.. এখন আবার নাচ!! ভাবতেই সে কয়েকটা ঢুক গিলল…
হাসনাত পলকহীন চোখে রোদেলার দিকে তাকিয়ে আছে… রয়েল ব্রু আর রেড লেহেঙ্গা পড়েছে সে.. হাতে ঝুমকোচুড়ি!! হাসনাতের আবদার ছিল এইটা.. সে রোদেলাকে যেসব জিনিস পড়তে মানা করেছিল সব কিছু পড়িয়েই তার বিয়ের অনুষ্টানগুলো হবে।।।রোদেলার চোখ ঝলসানো রুপ যেন হাসনাতকে এফোঁড়ওফোঁড় করে দিচ্ছে…কানে ডিজের সুন্দর সুন্দর গানগুলো বাঝছে.. সে নিজে রয়েলব্লু ওপর রেড ডিজাইনের পান্জাবী পড়েছে.. সে ডিজের কাছে গিয়ে গান প্লে করতে বলল আর লাইট কমিয়ে দিতে বলল…

হঠাৎ অন্ধকার হওয়ায় সবাই অবাক হয়ে গেল.. কারেন্ট চলে গেছে ভেবে যেই শামীম দাড়ালো সাথে সাথে মাঝখানে লাইট জ্বলে ওঠলো…হাসনাত পিছন ফিরে দাড়িয়ে আছে.. আর মিস্টি একটা শাওন্ড বাঝছে…

“”হুয়হে আজ পেহেলিবার যো এসে মুসকোরারেহিহো,, তোমে দেখাতো জানা এ কিউ দুনিয়ামে আয়া হো
((হাসনাত ডান্স করতে করতে রোদেলার হাত ধরে তাকে মাঝখানে লাইটে নিয়ে গেল আর সবার করতালি…
কাপল ডান্সে হাসনাতের হাত রোদেলার কোমড়ে, পিঠে আর হাতে স্লাইড করতে লাগলো.. আর রোদেলা বারবার কেপেঁ ওঠতে লাগলো..))””” মে তোমসে ইস্ক করনেকি ইজাজত রবসে লাইয়াহো…””

“”জমিনসে আসমানতাক হাম ডুনকে আয়ে যা সারা.. বানা নাহি আবতাক খোদা তোমসে পিয়ারা”” ((হাসনাত রোদেলার চোখের দিকে তাকিয়ে রোদেলাকে কোলে তুলে নিল))

“” বাততো মে তেরি হে বাদমাশিয়া, সাব বেভোজাকিহে তারিফিয়া ,,

(হাসনাত রোদেলার হাত ধরে টেনে রোদেলার পিটটা নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিল..রোদেলা আবেশে চোখ অফ করে রইলো)
“”মে লিখদো আসমাপার ইয়ে কে পারলে যাহা সারা..

“”তোমসে ইসক করনেকি ইজাজত রবসে লায়াহো..””

ডান্স শেষ হতেই সবাই করতালি দিয়ে তাদের অভ্যর্থনা জানাতে লাগলো… রোদেলা এদিকে ওদিকে তাকিয়ে লজ্জায় লাল হয়ে ওঠলো…

মেয়েদের ডান্সের সময়.. তাদের মধ্যে ফিসফিসানি বাড়তে লাগলো… কিছুখন পর সবকয়টা উধাও.. ছেলেরা চোখ বুলিয়ে খুজতে লাগলো..খোজা শেষে ইফতি কোমড়ে হাত দুহাত দিয়ে দাঁড়িয়ে বলল– ইশ,, মেয়েগুলো কি প্লেন করছে আল্লাহ মালুম…

হঠাৎ ভারী আওয়াজের সাথে মাঝখানে লাইট জ্বলে ওঠলো.. সবকয়টা বাসন্তি কালার লেহেঙ্গা পড়ে দাড়িয়ে আছে… আর সাওন্ড শুনে ইশান আর ইভান পরপর কয়েকটা ঢুক গিলল.. এরা কি এখন এইটা নাচবে… একেকজন একেক পজিশনে দাড়িয়ে গান শুরু হলো…

“”মে তেরি আখোকা সাহিল, মে তেরি দিলকি কাতিল,, তো মোসাফির মে তেরা মানজিল…
ইসকা কি দারিয়াহে বেহেতা….””

((ইফতি আর ইশানের মনে হচ্ছে হার্টবিট ই বন্ধ হয়ে যাবে.. আর বাকিদের অবস্হা ও খারাপ তারা চোখ পিটপিট করে তাকালো…))

“ও সাকি সাকি রে সাকি সাকি,,আ পাস ই আ রেহে নে জা কই খোয়াস বাকি””

মেহেদি গানটা অফ করে দিল.. মুচকি হেসে বলল– এই বার আমরা… সে হাসতেছে ঠিকই কিন্তু সে জানে তার ভিতরে কতোটা জ্বলছে। । চোখ কটমটিয়ে মাহিয়ার দিকে তাকালো সে.. মাহিয়া তাড়াতাড়ি ইফ্ফাতের পিছনে লুকিয়ে গেল…

এরপর ছেলেরা “”কোমমারিয়া”” সং এ ডান্স করলো.. কিন্তু মাঝখানে মেয়েরা ফ্লায়িং কিস দিয়ে তাদের ডান্সের অবস্হায় খারাপ করে দিল.. ইভান আর ইশান আর ডান্সই করতে পারে নি.. যার কারনে মেয়েরাই জিতে যায়।।।

মেয়েরা আঙ্গুল দেখি লুজার বলতেই ইফতি নাক ফুলিয়ে বলল– চিটিং করেছ তোমরা… আর তখন ই সানিয়া মুচকি হেসে বলে… প্রেম আর যুদ্ধে সব জায়েজ…
ইশান বিরবিরিয়ে বলল– ওকে তাহলে খেলা কাল হবে….

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here