পর্ব ২৫+২৬
#ভালো তোকে বাসাতেই হবে ❤️
#পরিধি রহমান বিথি🍁
#পর্ব-২৫
,,”তুমি কাঁদছো?? তুমি কেঁদো না সোনাই,, প্লীজ তুমি কেঁদো না। আমি যে তোমার কান্না সহ্য করতে পারি না।””
❤️
আমার কেন জানিনা খুব কষ্ট হচ্ছে। ওনার এমন একটা অবস্থা আমি মেনে নিতে পারছিলাম না। আমার কান্না কিছুতেই থামছে না। কান্না জড়িত গলায় ফুঁপিয়ে উঠতে উঠতে বলছি,,
,,”এ,এ, এক্ষুনি নিনিচে চলুন ।”
উনি আবার দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,,
,,”সোনাই ,, প্লীজ এভাবে আমাকে কষ্ট দিও না। তুমি কান্না বন্ধ কর,, প্লীজ প্লীজ,,!!”
বাম হাতের কনুই দিয়ে চোখের জল মোছার প্রয়াস করছি।আর আমতা আমতা করে বলছি,,
,,”আআমি কাঁদদছি না।আপপনি প্লীজ চচলুন নিচে। রক্ত বন্ধ করা দরকার। চলুন!”(বলেই ডান হাত দিয়ে ওনার ক্ষত হাত ধরলাম আর বাম হাতে ওনার হাতের কনুই ধরে টানাটানি করতে লাগলাম,,)
যতই টানাটানি করি ওনাকে এক ইঞ্চি ও নড়াতে পারলাম না। পরক্ষনেই রাত ভাইয়া নিজ থেকেই উঠে আসলেন আমার সাথে। যেহেতু সবাই মেহেন্দির অনুষ্ঠানে আর অনুষ্ঠান হচ্ছে নিচে হলে।তাই এই সময় উপড়ে কেউ নেই। সোজা রাত ভাইয়াকে নিয়ে জেরিনের রুমে ঢুকে পড়লাম। জেরিনের বাসায় আমার অহরহ যাতায়াত তাই ওর রুমের কোন জিনিস কোথায় থাকে সে বিষয়ে আমার যথেষ্ট ধারণা আছে।আগে গিয়ে উত্তর কোনার কর্ণার টেবিলের ড্রয়ার থেকে ফাস্ট এইড বক্স বের করলাম। যদিও আমি ডাক্তার নই কিন্তু এটুকু করার অভিজ্ঞতা আমার আছে।আগেও কারো কেটে ফেটে গেলে আমিই হ্যান্ডেল করেছি। ভাইয়ার কাটা জায়গাটা পরিস্কার করে নিলাম হেক্সিসল দিয়ে। তারপর মলম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলাম। এসবের মাঝে একটু সময়ের জন্য ও আমার চক্ষু থেকে জল পড়া বন্ধ হয়নি।সে তো বহমান ঝর্নার মতো ঝরছে।রাত ভাইয়া কোনো কথা বলছেন না শুধু ফেলফেল করে তাকিয়ে থেকে দেখছেন পুরোটা।ওনার হাত ব্যান্ডেজ করে কি শেষ। আমি ওয়াশরুম থেকে হাতে মুখে পানি দিয়ে ধুয়ে রুমে প্রবেশ করলাম ।রাত ভাইয়া বিছানায় বসে আছে। আমার এখন বিরক্ত লাগছে । আমি মন থেকে ওনাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলাম তারপরও এসবের কোনো দরকারই ছিল না। এতটা অনুতপ্ত হওয়ার মতো কি ছিল??সে যাই হোক আমি এখন ওনার সাথে কথা বলব না।তাই পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছি। আমার এখানে দম বন্ধ হয়ে আসছে।দু পা এগোতে না এগোতে রাত ভাইয়া আমার ডান হাত টেনে ধরলেন। আচমকা টেনে ধরায় আমি একটু শিউরে উঠলাম। আমার দুচোখের ঝড় এখনো থামেনি। পেছন থেকে হাত টেনে ধরে হেঁচকা টান দিয়ে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিলেন আমাকে। আমি ফুঁপিয়ে উঠলাম।পেছন থেকে দু হাতে আমার গলা জড়িয়ে ধরলেন।রাত ভাইয়ার চোখগুলো লাল হয়ে আছে। মানুষ খুব শক্ত । আমার সামনে নিজেকে দুর্বল প্রকাশ করতে নারাজ তিনি। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমাকে নিজের দিকে ঘোরালেন। আমার কান্না এখন দিগুন বেগে বাড়ছে। তবে রাত ভাইয়া মুচকি হাসির সুরে বলছেন,,
,,”এই সোনাই,,?? আমি তো এখন পুরো ভালো আছি । সম্পূর্ণ সুস্থ। তুমি আর কেঁদো না।”(আলতো হাতে সযত্নে আমার চোখের জল মুছে দিচ্ছেন।)
আমি কান্না থামাতে চেষ্টা করলেও কান্না আমার নিজের নিয়ন্ত্রণে নেই।চোখ দিয়ে পানি না পড়লেও ফোঁপানি এখনো কমেনি।গুনে গুনে ত্রিশ সেকেন্ড পরপর একটু কেঁপে উঠছি। রাত ভাইয়ার মুখে এখন শুধুই খুশি। হয়তো ম্যাচ আমার থেকে সকল কষ্ট লুকিয়ে রাখতে এই হাসির প্রতিফলন।রাত ভাইয়া আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে আলতো করে ওনার ঠোঁট ছুঁয়ে দিলেন রাত ভাইয়া। আমি শিহরিত হলাম। অন্যরকম এক ছোঁয়া,,একেই হয়তো বলে ভালোবাসার স্পর্শ। এইটুকু ভালোলাগার কাছে হয়তো বাকি সব মিথ্যে । মিষ্টির মতো মধু , লবণের মতো নোনা, তেঁতুলের মতো টক,,এর স্বাদ ঠিক কেমন তা বোঝানোর ক্ষমতা আমার নেই। আমি বাকি সব চিন্তা ভুলে গেলাম।ফুপানিটাও কমেছে। কষ্টের ছায়া বিলিন করে ভালোবাসার আলো ছড়িয়ে দিলেন। বৃষ্টির হালকা হাওয়ায় ভালোবাসার গন্ধ মিশিয়ে দিলেন। বদ্ধ ঘরের নিস্তব্ধতায় মিশিয়ে দিলেন ভালোবাসার শব্দ। সন্ধ্যের মিটমিট আলোয় ভাসিয়ে দিলেন প্রেমের ভেলা। লজ্জায় চোখ লুকিয়ে মাথা নিচু করলাম আমি।উনি অস্থির এক হাসি দিয়ে ভ্রু কুঁচকে বলেছেন,,,
,,”ওইহোই,,, এভাবে লজ্জা পেয়ো না সোনাই,,(ডান হাত দিয়ে বুকের বাম পাশে হালকা স্পর্শ করে) এখানে ক্ষতবিক্ষত হয়ে যায়।আর সেই ক্ষতের মেডিসিন হিসেবে তোমাকে চায়।”
।
।
এই ভালোবাসা ক্রমশ কাবু করছে আমাকে। ঘোরের জগতে ডুবিয়ে দিয়েছে নানান ইঙ্গিতে। আমার হার্টবিট বাড়ছে। মুখের কথা ফুটছে না।রাত ভাইয়ার ঠোট ধীর গতিতে এগিয়ে আসছে আমার দিকে । মানুষের মনে ভালোবাসা আর দুষ্টুমি একসময় ভর করে । কারণ সবদিক থেকে সে ভালোবাসায় আচ্ছন্ন থাকে।রাত ভাইয়া ঠোঁটজোড়া আমার ঠোটের একদম কাছে আসতেই আমি খিলখিল করে হেসে দিয়ে আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালাম না। দিলাম এক দৌড়।হাসির আওয়াজ শুনে রাত ভাইয়া চোখ মেললেন । আমাকে দৌড়ে যেতে দেখে মিটমিট করে হেসে দিলেন।হাত বাড়িয়ে দিলেন আমার পানে ,, কিন্তু আমি কোথায়,,?? আমি তো বহুদূর এগিয়ে গেছি,,!!রাত ভাইয়ার নাগালের বাইরে। আমার দেখা মতে রাত ভাইয়া আর এগোয়নি শুধু মাথা চুলকে ভালোবাসা প্রকাশ করছেন।
আমি এগিয়ে গেলাম হলের দিকে । ভাইয়ার বিয়ের অনুষ্ঠানে আমি নেই এটা কি ভালো দেখায়?? ভালোবাসার সাথে সাথে সম্পর্কের মর্যাদা ও সমানভাবে বজায় রাখা উচিত। সেই তাগিদে ছুটছি।হলে সবাই খুব মজা করছে। সকলের হাতে হাত ভর্তি মেহেদী। আমি ও দিয়েছিলাম। তবে এতোক্ষণের ধস্তাধস্তিতে তার ডিজাইনের ডি ও নেই যা পড়ে রয়েছে তা শুধু একগাদা গোবরের ন্যায় মেহেদী।হাতে পরিবর্তে অন্য কোথাও পড়ে থাকলে কেউ হয়তো ঠিক করে বলতে পারত না কোনটা মেহেদী আর কোনটা গোবর।তাই ওয়াশরুমে ঢুকে ধুয়ে ফেলেছি। মোটামুটি ভালো রং হয়েছে। শুনেছি মেহেদীর রং যত গারো হয় তত বেশি ভালোবাসে স্বামী।কি আজব,,??
এক পা দু পা করে জেরিনের পাশে গিয়ে বসলাম। দুই হাতের কনুই পর্যন্ত মেহেদী পড়ে বেচারী বড্ড জ্বালায় পড়েছে। তার একটা উদাহরণ,, অনেক্ষণ ধরে দেখছি গলা চুলকানোর চেষ্টা করছে (মনে মনে হেসে) কিন্তু সকল চেষ্টা বিফল। মুখে বিরক্তর ছাপ।বিয়ে বাড়ীতে বউয়ের মুখে বিরক্ত ভালো লাগে না।তাই একটু চুলকে দিলাম । জেরিন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বললো,,
,,”কিরে কোথায় ছিলি বলতো?? আমি এখানে একা একা বসে বিরক্ত হচ্ছি। তুই থাকলেও নাহয় একটু বকবক করা যায়। ”
আমি মিষ্টি করে হেসে ওর গালে হাত দিয়ে বললাম,,
,,”আরে আমার সোনা মোনা,, এখন তো এসে গেছি , আর বিরক্ত হবি না।”(ন্যাকামু করে)
এর মধ্যে রাত ভাইয়ার হলে এসে হাজির।রাত ভাইয়ার হাতের দিকে তাকাতেই সবাই একে একে প্রশ্ন করল,,
,,কি হয়েছে??
যা ভাইয়া স্বাভাবিক গলায় মিষ্টি করে হেসে বলল,,
,,”ধুর ,,তেমন কিছু না সামান্য একটু কেটেছে।আই এম টোটালি ফাইন।সো চিন্তার কোনো কারণ নেই।””
সবাই মেনে নিয়ে আবার নিজের নিজের কাজে ফিরে গেলেন।রাত ভাইয়া আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছেন। কিন্তু আমি তাকাতে পারছি না কেমন যেন একটু লজ্জা লজ্জা লাগছে। জেরিন হঠাৎ বলে উঠল,,
,,”সোনু ।আজ তো আমার জন্য একটা স্পেশাল দিন।তো একটা গান তো গাইতে ই পারিস।”
আমি তো ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়ার পালা। গান মোটামুটি ভালো গাইলেও রাত ভাইয়ার সামনে গান ??(চোখ বড়বড় করে মুখ বিকৃত হয়ে আছে)। জেরিন কি বলছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।আর চাপা গলায় বললাম,,
,,”তুই কী পাগল হয়েছিস??এতো মানুষের ভীড়ে গান??আর আমি??নারে জেরি!!,, আমাকে দিয়ে হবে না।”
জেরিন আবার চোখ বাঁকিয়ে ঠোঁট উল্টে বলছে,,
,,”সোনু ,,তুই আমার এতো স্পেশাল দিনেও আমার জন্য একটা গান ও গাইতে পারবি না?(অসহায় সুরে বলছে।মনে হচ্ছে কোনো দুই বছরের বাচ্চা চকলেটের জন্য বায়না করছে)
অদূরে দাঁড়ানো রাত ভাইয়া চোখের ইশারায় গান গাইতে বলছেন। আমার আর কি ??আমি তো সেন্ডুইস হয়ে গেলাম।দু একটা কাশি দিয়ে গলা নামিয়ে গান শুরু করলাম,,
প্রান দিতে চাই,মন দিতে চাই
সবটুকু সাড়াক্ষন দিতে চাই
তোমাকে।ও,,, তোমাকে
স্বপ্ন সাজাই , নিজেকে হাড়াই
আর দুটি নয়নে রোজ নিয়ে শুতে যাই
তোমাকে।ও,,, তোমাকে।
জেনেও তোমার আঁখি চুপ করে থাকে
রোজ দুই ফোঁটা যেন আরো ভালো লাগে
গানে, অভিসারে,,চাই শুধু বারেবারে
তোমাকে।ও,, তোমাকে।
যেদিন কানে কানে সব বলবো তোমাকে,,
বুকের মাঝে জাপ্টে জড়িয়ে ধরবো তোমাকে,,
পথ চেয়ে রই,দেরি করো না যতই
আর ভোলা যাবে না জীবনে কখনো
তোমাকে।ও,, তোমাকে।
তুমি হাসলে আমার ঠোঁটে হাসি,,
তুমি আসলে জোনাকি রাশি রাশি,,
রাখি আগলে তোমায় অনুরাগে,,
বলো কিভাবে বোঝাই ভালোবাসি??
হ্যাঁ প্রান দিতে চাই,মন দিতে চাই
সবটুকু ধ্যান সাড়াক্ষন দিতে চাই
তোমাকে।ও,, তোমাকে।
স্বপ্ন সাজাই, নিজেকে হাড়াই
আর দুটি নয়নে রোজ নিয়ে শুতে যাই
তোমাকে।ও,, তোমাকে।
গানটা শেষ করতেই সবাই একসাথে তালি বাজালো। আমি আর চোখে রাত ভাইয়ার দিকে তাকালাম। মিটমিট করে হাসছে আর এক চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমার লজ্জায় এখান থেকে দৌড় দিতে ইচ্ছে হচ্ছে।
অনুষ্ঠান শেষ হলো কিছু ক্ষণ আগে। এখন শোয়ার জায়গায় নিয়ে কাড়াকাড়ি। তার মধ্যে জেরিন আর আমি এক চিলতে জায়গায় শুয়ে পরলাম।এতো চাপাচাপিতো ঘুম তো দূরের কথা ঘুমের বাচ্চারাও আসছে না। তবু ও মরার মতো পড়ে আছি।
গভীর রাত,,প্রায় ঘুম চোখে বসবে বসবে এমন সময় মনে হচ্ছে কে যেন সুরসুরি দিচ্ছে।দুবার পা নাড়িয়ে আবার ঘুমে মন দিলাম কিন্তু তৃতীয়বারের বার উঠতেই হলো।
উঠে দেখি একটা ছায়ামূর্তি দাঁড়িয়ে আছে।চোখ কচলে আবার তাকালাম।না সত্যিই দাঁড়িয়ে আছে ভয় লাগছে।ভাবছি,,
কে এটা??ভুত টুত নাকি??জেরিদের বাসায় ভুত আছে বলেতো শুনিনি কখনও ।তাহলে এটা কে??
#পর্ব-২৬
কে এটা??ভুত টুত নাকি??জেরিদের বাসায় ভুত আছে বলেতো শুনিনি কখনও ।তাহলে এটা কে??
❤️
কয়েকবার চোখের পাতা টিপটিপ করে ভালো করে দেখার চেষ্টা করলাম।একটু ভালো করে দেখতেই বুঝতে পারলাম এটা কোন ভুত বা জ্বীন বা অশরীরী না। এটা জলজ্যান্ত একজন মানুষ। এবার প্রশ্ন হলো এটা কে?এতো রাতে কে আমার পায়ে সুরসুরি দিতে ইচ্ছে হলো??কি অবাক কান্ড!!এতো রাতে কেউ কারো পায় সুরসুরি দাওয়ার জন্য এসেছে তাও আবার যেই সেই জিনিস দিয়ে নয়। একদম ময়ূরের পালক নিয়ে হাজির। ঘরের লাইট অফ তাই মুখটা পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে না। আমি আরো কিছু দেখার আগে লোকটা আমায় কোলে তুলে নিলেন। এই স্মেলটা আমার অতি পরিচিত,,কারণ এটা রাত ভাইয়ার । আমার তা বুঝতে আর দুমিনিট সময় লাগলো না। মনে মনে যদিও খুশি হয়েছি কিন্তু লোক লজ্জার ভয় তো আছেই ।তাই দাঁতে দাঁত চেপে ফিসফিস করে বললাম,,
,,”কি হচ্ছে কি রাত ভাইয়া ছাড়ুন। কেউ এভাবে দেখলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে। এমনিতেই বাড়ি ভর্তি মানুষ ।”
রাত ভাইয়া ভাবলেশহীন হয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলেছেন,,,
,,,”দেখলে দেখবে তাতে আমার কি??”
ওনার কথা শুনে আমি হতবাক।বলে কি??রাত ভাইয়া কি পাগল হয়ে গেলেন?? আমি উদ্বিগ্ন গলায় বললাম,,
,, আপনি কি পাগল হয়ে গেলেন নাকি?? কেউ দেখলে কি হতে পারে আপনার কোনো আইডিয়া আছে??”
রাত ভাইয়া রাগী গলায় বললেন,,
,,”আর একটা ও কথা বললে এখানেই ফেলে দেব।”
আমি আর কোন কথা বললাম না। চুপচাপ কোলে বসে আছি । অনেক কথা মনে কিন্তু বললেই পড়ে কোমড় ভাঙার ভয়। আমার মুখে একটা দুঃখী দুঃখী ভাব।রাত ভাইয়া আমার দিকে এক ঝলক তাকিয়ে মিটিমিটি করে হাসছে। আমার এবার বিরক্ত লাগছে।রাত ভাইয়ার এমন হাসি আমি মেনে নিতে পারছিলাম না।রাত ভাইয়া সামনের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে শীতল গলায় বললেন,,,
,,”বুঝলে সোনাই !!,, তোমাকে দেখতে যতটা চিকন মনে হয় তুমি ততোটা ও চিকন নও। বেশ ভাঁড় !!”
হঠাৎ করে বলেন বলে আমি প্রথমে বুঝতে পারছিলাম না।একটু পরেই বুঝতে পারলাম উনি ঘুরিয়ে আমাকে মোটা বললেন। ওনার দিকে একপলক তাকিয়ে মুখ ফুলিয়ে বললাম,,
,,”এতোই যখন প্রবলেম তখন আমি তো আর আপনাকে কোলে নিতে বলিনি আমাকে,, নামিয়ে দিলেই পারেন।”
আমার কথা শুনে রাত ভাইয়া হাসলেন। আমি চুপচাপ মুখ ফিরিয়ে বসে আছি।রাত ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললেন,,
,,”ধুর বোকা,,আমি তো একটু মজা করলাম।রাগ করে না লক্ষ্মী সোনা।”
আমি এখনো মুখ ফুলিয়ে আছি ।আমরা ছাদের দিকে রওনা হয়েছি। আমি ফুলিয়ে আছি তাই রাত ভাইয়া আমার মুখের কাছে মুখ এনে আমার গালে নিয়ে নাক ঘষে বললেন,,
,,”প্লীজ রাগ করে না। আমি আর মজা করব না,, ওকে!!”
আমার মুখে হাসি ফুটলো। আমি মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললাম,,
,,”আচ্ছা রাত ভাইয়া আমরা ছাদের দিকে যাচ্ছি কেন?
উনি উৎসাহিত গলায় বললেন,,
,, “শোনো সোনাই ,,আমরা আজ “রাত্রি বিলাস” করব!!”
আমি লজ্জা পেয়ে ওনার বুকে মুখ লোকালাম। সঙ্গে সঙ্গে উনি ভুবন ভোলানো হাসি দিলেন। আমরা ছাদে এসে পড়েছি। অদ্ভুত সুন্দর লাগছে রাতের চাঁদকে। রাত ভাইয়া আমায় নিয়ে দোলনায় বসিয়ে দিলেন। উনি আর বসলেন না আমার কোলে শুয়ে পড়লেন। হালকা ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে । আশেপাশে কোথাও আলোর চিহ্ন ও নেই তার মধ্যে আমরা দুজন ছায়াবিথি সঙ্গে রাত। মজার একটা ব্যাপার।রাত ভাইয়া আলতো করে আমার হাতটা নিয়ে ওনার কপালে রাখলেন আর বললেন,,
,,”জানো সোনাই ,, রাতের আকাশ বড্ড সুন্দর হয়।মনে হয় এটা কোনো বিয়ে বাড়ী। বিয়েটা হচ্ছে চাঁদের।সাড়া আকাশটা হচ্ছে বাড়ি যেখানে ছোট ছোট তারাগুলো মরিচ বাতির মতো মিটমিট করে জ্বলে।আর মেঘেরা নানা আকৃতি ধারণ করেছে অতিথিদের মতো।কি অদ্ভুত না?”
আমি অবাক চোখ আকাশের দিকে তাকালাম।রাত ভাইয়ার মতো করে কেউ বা আমি অন্তত আকাশ দেখিনি।তাই আজ আকাশটাকে নতুন করে আবিষ্কার করলাম।রাত ভাইয়া উঠে বসলেন । আমার গাল টেনে বললেন,,
,,”বুঝলে সোনাই?? নাকি পুরোটাই মাথার উপর দিয়ে গেল??”
আমি উঠে দাঁড়ালাম । চারদিকে ভালো করে চোখ বুলালাম।আর রাত ভাইয়ার উদ্দেশ্যে বললাম,
,,”আমাকে যতটা বোকা ভাবেন আমি ততোটা ও বোকা না,,”।
রাত ভাইয়া উঠে আসলেন আমার কাছে ।ওনার থুতনি ঠেকালেন আমার কাঁধে আর মিষ্টি সুরে বললেন,,
,,তাই বুঝি??”
আমি মুখ ঘুরিয়ে বললাম বললাম,,
,, হ্যাঁ,, নাহলে প্রান্ত রহমান রাত আমার প্রেমে পড়ে (চোখ চিপে)।”
রাত ভাইয়া খিলখিল করে হেসে দিলেন। রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে ওনার হাসি সব জায়গায় মম করছে। আমি বললাম,,
,,”হিসসসস,,(মুখে আঙ্গুল রেখে),,কেউ শুনতে পেলে পাগলের মতো ছুটে এখানে আসবে দেখতে।কে হাসছে এতো রাতে ছাদে।”
রাত ভাইয়া আমার হাত টেনে দোলনায় বসালেন।নিজেও বসে আমার মাথাটা রাখলেন তাঁর কোলে। আমি অবাক হয়ে বললাম,,
,,”কি করছেন রাত ভাইয়া, ,?”
রাত ভাইয়া শক্ত গলাগ বললেন,,
,,”কাল অপুর গায়ে হলুদ। সেই অনুষ্ঠানটা তো তোমাদের বাসায় হচ্ছে তাই সকাল সকাল বাসায় ফিরতে হবে।তাই তারাতারি উঠতে হবে। এখন জেগে থাকলে সকাল সকাল উঠবে কি করে।তাই তুমি আমার কোলে ঘুমাবে আর আমি রাত জেগে তোমায় দেখবো।”
রাত ভাইয়ার কথা শুনে আমি বিস্মিত কন্ঠে বললাম,,
,,”সে কি??,,তাহলে আপনি সকালে উঠবেন কি করে (অবাক চোখে)।”
উনি মিষ্টি করে হেসে বললেন,,
,,,”সে নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না ম্যাডাম।”
আমি তারপরে ও আবার মৃদু স্বরে বলে উঠলাম,,
,,”আমি ভাববো না তো কে ভাববে??”(ভ্রু নাচিয়ে)
রাত ভাইয়া আবার অমাইক হাসি দিয়ে বললেন,,
,,”বাহ,, বিয়ের আগেই কেমন যেন বউ বউ গন্ধ পাচ্ছি।”
আমি আবার লজ্জায় পড়ে গেলাম ।কি বলতে গিয়ে কি বলে ফেললাম। আমি লজ্জায় লাল নীল হয়ে যাচ্ছি।রাত ভাইয়া হাসি থামিয়ে শক্ত গলায় বললেন,,
,,”আর লজ্জা পেতে হবে না। এবার ঘুমান।”
আমি ও বুঝে গেলাম এখানে আর কথা বললে লজ্জার সমুদ্রে ডুবে মরতে হবে।আর এখনো আমার বিয়েই হলো না তাই এতো তাড়াতাড়ি মইরা আর কি হবে।তাই ঘুমিয়ে পড়লাম।
,,
সকাল ছয়টা চল্লিশ বাজে।চোখ খুলে নিজেকে রুমে আবিষ্কাকর করলাম। ভালো করে বুঝতে চেষ্টা করলাম আমি ঠিক কোথায়। এটা সিওর যে এটা আমার রুম না।বা পাশে জেরিন ঘুমাচ্ছে, বুঝলাম এটা জেরিনের রুম। কিন্তু কাল রাতে তো আমি ছাদে ছিলাম তাহলে এখানে এলাম কি করে? জেরিনকে খোঁচা দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে ও দরফর করে উঠে বসল। আমি স্বাভাবিক দৃষ্টিতে বললাম,,
,,”এই আমি এখানে এলাম কি করে?? তুই কি কিছু জানিস??”
জেরিন ঘুম ঘুম চোখে আধো আধো গলায় হেলে দুলে বলছে,,
,,রাত ভাইয়া শেষ রাতে কোলে করে তোকে এখানে শুয়ে দিয়ে গেলেন। তুই বেঘোরে ঘুমাচ্ছিলি তাই তোকে ডেকে তোলেন নি আর আমাকে ডাকতে বারন করলেন।তাই আমি ও আবার ঘুমিয়ে পড়লাম।”
আমি আর কিছু বললাম না। অনুষ্ঠানের বাড়ি,,একটু পরেই ওয়াশরুম নিয়ে কারাকারি শুরু হবে। আবার বাসায় ফিরতে হবে ।তাই ওয়াশরুমে ঢুকে পরলাম ফ্রেশ হতে। তাড়াতাড়ি
বেরুতে হবে জেরিন অপেক্ষা করছে।
সবাই রেডি বের হবার জন্য। জেরিনের ফ্যামিলি ও যাবে আমাদের সাথে। দুজনের হলুদ আমাদের বাসার ছাদেই হবে ,,এপাশ একজন,,ওপাশ একজন।রাত ভাইয়া কোথায় কে জানে?? সকালে উঠে একবার ও দেখা মেলেনি।সবাই গাড়িতে উঠবে উঠবে এমন সময় রাত ভাইয়া আমার পাশ কাটিয়ে হাতে অনেকগুলো ব্যাগ বয়ে গাড়ির দিকে যাচ্ছে। আমি রাত ভাইয়ার পাশের সিটে বসার আকাঙ্ক্ষায় পা বাড়াতেই এক ভূমিকম্প এসে হাজির।কি ভাবছেন??প্রিতি আপু ??না। তবে এনাকে দেখে তো আমার ভূমিকম্প বলেই মনে হচ্ছে। জেরিন অবশ্য সঙ্গে করে নিয়ে এসেছে এই ভূমিকম্প। বয়সের দিক থেকে সেঞ্চুরি করা একজন ভদ্রমহিলা কাঁপতে কাঁপতে জেরিনের সাথে আসছে। আমি আর এক পা দেব তার আগেই জেরিন ডাকল আমায়,,
,,এই সোনু দাঁড়া দাঁড়া,,।”
আমি দাঁড়িয়ে গেলাম। ভদ্রমহিলা ধীর পায়ে পাচ মিনিট পরপর এক পা দু’পা ফেলে এগিয়ে আসছে আমার দিকে। আমি বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছি,,এই বুঝি রাত ভাইয়া গাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন।”মেজাজ টাই গরম হয়ে যাচ্ছে।
মনে হচ্ছে আধা ঘন্টা পর উনি আমার সামনে এসে দাড়ালেন। যদিও আমি চাইলেই ওনার কাছে চলে যেতে পারতাম। কিন্তু যাইনি। আমি সালাম করলাম। জেরিন পরিচয় করিয়ে দিল,,
,,”সোনু ,,এই হলো আমার বাবার মায়ের খালাতো বোনের ফুপুর মায়ের বোন। বুঝেছিস তো কি হয়??”(ঠোঁটের কোনে সয়তানি হাসি হাসি টেনে )
আমার মাথাটা গোলক ধাঁধার মতো ঘুরছে কি বলল জেরিন সব কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। আমি মাথা নাড়লাম
।যার অর্থ হচ্ছে ,,”না ,, আমি কিছুই বুঝিনি।”
পাশের বৃদ্ধ মহিলা আমার হাত তার হাতে রেখে বললেন,,
,,”তুই আবাক হোস না।(মুচকি হেসে)।আমি তোর দাদিমার মতো।কারন আমি জেরিনের দাদমা হই বুঝলি??(বলেই হেসে দিলেন)
ভদ্রমহিলা শারীরিক ভাবে বার্ধক্যে পড়ে গেলেও কথায় বোঝা যায় বেশ চনমনে।একটু বাদে বুঝলাম বেশ রসিক ও। তবে এই মুহূর্তে আমার আর কথা বলার ইচ্ছে হচ্ছে না।রাত ভাইয়া হয়ত এতোক্ষণে চলে গেছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। ওনাদের সাথে পার্কিংয়ে যেতেই দেখি সত্যিই রাত ভাইয়া গাড়ি নিয়ে চলে গেছেন। আমার আর কি,,? চোখমুখ কুচকুচে টঠে বসলাম গাড়িতে। গন্তব্য বাসা,,।
চলবে,,??❤️❤️